#অপূর্ণতা❤️
#লেখক_Ananta Sanny(স্বপ্নচোর)
#পর্ব_৫
অনন্ত কে চমকে উঠতেই দেখে বললো….
– অনন্ত, তুমি বেঁচে আছো?
” অনন্ত কিছু বলার আগেই জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করলো। অনন্ত কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না।
অনন্ত নিজেকে সামলে নিয়ে বললো….
– চাচা, আপনি? এখানে…
– হে বাবা। আমার ছেলের প্রায়শ্চিত্ত করতে এসেছি।
– কিসের প্রায়শ্চিত্ত?
” অনন্তর কথা শুনেই চোখের পানি মুছে বলতে শুরু করলো…..
” রিমা মামুনি কে আমার ছেলে পছন্দ করতো। তবে রিমা রাজি না হওয়াতে সেদিন তুলে নিয়ে যায়। বন্ধুদের সাথে নষ্ট করে। মারা যাওয়ার আগে আমার কাছে ক্ষমা চেয়ে যায়। যেনো তোমার কাছে ক্ষমা চেয়ে রিমার কবর টা দেখে শুনে রাখি। তুমিও হারিয়ে গেলে আর ক্ষমা চাইতে পারেনি।
“রিফাত…….
চাচার কথা শুনেই হতবিহ্বল হয়ে পড়ে। কি বলবে বুঝতে পারছে না।
যে রিফাত কে সবসময়ই বন্ধু ভেবেছিল সেই রিফাত। যাকে বিশ্বাস করেছিল তাঁর বিশ্বাসের প্রতিদান এমন ভাবে দিলো। এতো বছর পার হয়ে গেলেও কখনো জানতে পারেনি। তাঁর মানে রিফাত জিসান। যাকে হন্ন হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছিল।
– রিফাতের কি হয়েছিল?
– গাড়ি এক্সিডেন্ট পঙ্গু হয়ে যায়। পঙ্গুত্ব জীবন থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আত্মহত্যা করে।
” চাচার মুখে সব কথা শুনে কি ভাবে শাত্বনা দিবে ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না। রিমা কে হারিয়ে সেই এলাকা ছেড়ে অন্য এলাকায় চলে আসে। রিমা অনন্তর প্রথম ভালবাসা ছিলো। তবে তা আড়ালেই রয়ে যায়। কিছু অতীত মনে না করাই ভাল। কেনো না কিছু স্মৃতি শুধু কষ্ট দিয়ে যায়। যতই দূরে থাকা যায় ততোই ভালো।
” আজ অনেকদিন পর কিছু সত্য সামনে আসে। যা অনন্ত কে ঘুমাতে দেয়নি। দুজন পাপী শাস্তি পেয়েছে। একজন অনন্তর কাছে অন্য জন্য প্রকৃতির কাছে।
চাচা চোখের অশ্রু গুলো মুছে অনন্তর দিকে তাকিয়ে বলল…..
– অনন্ত তুমি রাইসাকে কেনো কষ্ট দিচ্ছো? জানো মেয়েটা তোমার জন্য দিন রাত চোখের পানি ফেলে। কেনো নিজেকে সবার কাছ থেকে আড়াল করে রাখতে চাইছো?
” তাঁর চাচার কথা শুনেই অনন্ত বললো….
– রাইসার প্রাপ্য তাই রাইসার থেকে নিজেকে আড়াল করে রেখেছি। রাইসা বুঝুক সেদিন আমি কতটা কষ্ট পেয়েছিলাম।
অনন্তর কথা শুনেই শুনেই তাঁর চাচা বললো….
– কিসের প্রায়শ্চিত্ত করতে বলছো?
– সে কিছু না। তুমি কাউকে বলো না আমি বেঁচে আছি। খবু তাড়াতাড়ি আমি রাইসার কাছে ফিরে আসবো।
অনন্ত কথা গুলো বলেই চোখের পানি গুলো মুছে চলে গেলো। অনন্তর পথের দিকে তাকিয়ে রইলো তার চাচা। কি বলবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না।
“রাইসা তাঁর আব্বুর ভালবাসায় নিজেকে অনেক সামলে নিয়েছে। যখন মন থাকে একা লাগে তখন বই পড়ে। মাঝে মাঝে রাইসার বান্ধবী এসে গল্প করে। সেদিন রাইসাকে বাজে ভাবে ইঙ্গিত করেছে শুনে তাঁর বান্ধবী বললো….
– শোন, এই সমাজে নিজেকে রক্ষা করতে হবে। কেউ কিছু বললে চুপচাপ চলে আসবি না। সাথে সাথে প্রতিবাদ করবি তাহলে দেখবি ভয় পাবে।
রাইসার বান্ধবীর কথা শুনে ভয় পেলেও মনে মনে ঠিল করে তাই করবে। আর কারো কথা মুখ বুজে সহ্য করবে না।
” রাইসা বারান্দায় বসে বই পড়ছে তখনি কেউ যেনো মাথায় এসে হাত বুলিয়ে দিলো। মাথায় হাতের স্পর্শ পেয়ে রাইসা পিছনে ঘাড় ফিরিয়ে দেখে তাঁর আম্মু দাঁড়িয়ে আছে। নিঃশব্দে কখন যে এসেছে রাইসা বুঝতেও পারেনি।
রাইসাকে তাঁর আম্মু মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো….
– রাইসা, তুই আমার প্রতি রাগ করে আছিস তাই নাহ??
“রাইসা তাঁর মায়ের কথা শুনে চোখের দিকে তাকালো। চোখের কোণে অশ্রু জমে আছে। বেশ মলিন মুখ। সেদিনের পর মায়ের সাথে ঠিক মতো কথা বলেনি।
রাইসার মাথায় হাত বুলিয়ে বলতে শুরু করে…..
– মা’ রে আমাকে তুই ক্ষমা করে দিস। সেদিন আমার ভূলের জন্য তোর সম্মানে আঘাত লাগে। কি করবো বল??
” কোন মা -বাবা চায় না তাঁর মেয়ের অশ্রু দেখতে। অনন্ত চলে যাওয়ার পর সবসময়ই মনমরা হয়ে থাকিস। সমাজে সবাই নানা রকম কথা বলতে শুরু করে। আমি মা হয়ে কিভাবে সব শুনে মুখ বুজে সহ্য করে থাকি। কত জনের মুখ বন্ধ করতে পারবো? তাই চেয়েছিলাম কারো আশ্রয়ের ছায়া তলে রাখতে যেনো এই সমাজের মানুষ গুলো চোখ তুলে তাকাতে না পারে। একটা মেয়ে যে কতটা অসহায় তা মেয়ে হয়ে না জন্মালে কেউ জানতে পারবে না। আামকে তুই ক্ষমা করে দিস।
“রাইসাকে কথা গুলো বলেই চোখের অশ্রু গুলো মুছে চলে গেলো। রাইসা তাঁর মায়ের কথা গুলো শুনে চুপ নিঃশব্দ কান্না করে। যা কেউ বুঝতে পারে না।
“রাইসা দূর আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। ভিতর টা যেনো দুমড়ে মুচড়ে ভেঙে যাচ্ছে। একটা মা কতটুকু অসহায় হলে মেয়েকে পর করে পাঠিয়ে দিতে চায় অন্যের ঘরে।
রাইসা দুটানায় পড়ে নিজেকে সামলে নিয়ে পা বাড়ায়। রান্নাঘরে আসতেই দেখে তাঁর আম্মু রান্না নিয়ে ব্যাস্ত। রাইসাকে দেখেই হাসি মুখে বলে উঠলো…..
– তোর জন্য খিচুরি রান্না করছি। যা হাত মুখে ধুয়ে তাড়াতাড়ি টেবিলে আয়। গরম গরম খিচুরি….
রাইসা নিজেকে আর সামলাতে পারে নি। তাঁর আম্মু কে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দেয়। মেয়ের কান্নায় নিজের চোখে পানি অনুভব করতে পারেন।
রাইসার আম্মু নিজেকে সামলে নিয়ে বললো…..
– এমন ভাবে কান্না করছিস কেনো?
– আম্মু, আমাকে তুমি ক্ষমা করে দাও। আমি না বুঝে অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছি তোমাকে। তুমি যদি…..
রাইসা কিছু বলার আগেই মুখে হাত দিয়ে থামিয়ে বললো….
– চুপ। একদম চুপ। মায়ের কাছে সন্তানের কিসের অপরাধ। আর কোন কথা না। যা হাতমুখ দিয়ে টেবিলে আয়। গরম গরম খিচুরি খাবি। আজ আমরা মার্কেটে যাবো। তোর প্রিয় মৌরি মরিয়ম এর প্রেমাতাল ও কনফিউশন গল্পের বই কিনতে।
” রাইসা তাঁর মায়ের কথা শুনেই হাসিমুখে জড়িয়ে ধরে। রাইসার চোখের পানি মুছে দিলো। আড়াল থেকে রাইসার আব্বু দেখে চোখের পানি গুলো মুছে ফেললো। আজ অনেক দিন পর তাঁর ছোট্ট রাজকন্যার মুখে হাসি দেখেছে।
রাইসা তাঁর আম্মুর সাথে আজ অনেক দিন পর বাহিরে ঘুরতে বের হল। সেই ছোট বেলার মত,যখন ছুটির সময় ঘুরতে নিয়ে বের হতো। আজ অনেক দিন পর মন খোলে হাসলো।
বাসায় ফেরার পথে রাইসার আম্মু সিএনজি তে আসতে চাইলে রাইসা বাসে আসার কথা বলে। বাস দাড়াতেই একটা বাসে উঠে পড়ে।
রাইসা সিট না পেয়ে পাশে দাঁড়িয়ে রইলো। তাঁর আম্মু বসতে বললেও তাঁর আম্মু কে বসতে বললো। বাসে খুব বেশি ভীড় না থাকলেও লোকটি বার বার শরীরে উপর ঢলে পড়ছে। রাইসা বেশ কিছুটা সরে দাঁড়ালেও একই কাজ করছে।
রাইসা অসহায়ের মতো চারপাশে তাকিয়ে দেখলো। সবাই ব্যাস্ত, কেউ কেউ না দেখার ভান করে আছে। তখনি তাঁর বান্ধবীর কথা মনে পড়তেই রাইসা রেগে গিয়ে বললো….
– কি সমস্যা? বার বার এমন ভাবে গায়ের উপর পড়ে যাচ্ছেন কেনো?
রাইসার কথা শুনেই সবাই তাকিয়ে রইলো। কেউ কেউ আড়চোখে রাইসার দিকে তাকালো। রাইসার কথা শুনেই এমন ভাবে র্নিলপ্ত ভাবে তাকালো যেনো কিছুই হয়নি। রাইসাকে বললো…
– কি হয়েছে?
– কি হয়েছে মানে? এমন ভাবে গায়ের উপর পড়ে যাচ্ছেন?
– পাবলিক বাসে চলতে গেলে এমন একটু আধটু শরীরে টার্চ লাগবেই। এতো রিয়েক্ট করার কি আছে? ভালো না লাগলে নিজেদের গাড়িতে চলাচল করেন।
লোকটির চোখের চাহনী আর মুখের ভাষা শুনেই রাইসার রাগ উঠে গেলো। রাইসা রেগে গিয়ে বলল….
– এমন একটা লাথি মারবো না মেয়ে দেখলে চুলকাই নাকি। তোদের মতো নরপশুদের জন্য মেয়েরা রাস্তা ঘাটে বের হতে পারে না। নাম গাড়ি থেকে নয়তো জুতা পেটা করে নামাবো।
” রাইসার অগ্নি চোখ গুলো থেকে তাড়াতাড়ি বাস থামাতে বলে নেমে পড়লো। রাইসার প্রতিবাদ শুনেই কেউ বলে উঠলো…
– সাবাশ! আপনাদের মতো সব মেয়েরা হলে এমন বাজ ঘটনা ঘটতো না।
পাশ থেকেই আরেকজন সম্মতি জানিয়ে বললো….
– ঠিক বলেছেন দাদা। এদের মতো কিছু পুরুষের জন্য সবাইকে একরকম মনে করে।
” রাইসার আম্মু তাঁদের কথা শুনে বলে উঠলো….
– এতোক্ষণ তো চুপচাপ ছিলেন। যখন আমার মেয়েকে বাজে ইঙ্গিত করেছিলো তখন কিছু বললেন না। যখন আমার মেয়ে প্রতিবাদ করল তখন সবাই বাহবা দিতে শুরু করলেন। আসলে আগে আপনাদের মতো মানুষের মনমানসিকতা ঠিক করা দরকার। যদি চুপচাপ বসে না থেকে নিজের জায়গায় প্রতিবাদ করতেন তাহলে কোন মেয়েকে কেউ কিছু বলতে সাহস করতো না।
রাইসার আম্মুর কথা শুনে সবাই চুপ হয়ে গেলো। রাইসাকে তাঁর আম্মু বললল….
– ঠিক কাজ করেছিস। এদের মতো মানুষদের এমন টাই করা উচিত। চল…ধিক্কার জানাই এমন স্যুট কোড পড়া ভদ্র সমাজের পুরুষদের।
” রাইসার আম্মুর সাথে বাসার সামনের গলিতে আসতেই রিহানকে দাড়িয়ে থাকতে দেখলো। দূর থেকে রাইসা দেখেই কেমন দুঃচিন্তায় আছে।
রাইসা রিহানকে দেখেই বললো…..
– কি রে কিছু বলবি?
রাইসার কথা শুনে মাথা চুলকিয়ে রিহান বলল….
– আপু তোমার জন্য এটা।
– কে দিয়েছে?
” রাইসার কথা শুনেই রিহান হাত বাড়িয়ে দিয়ে দেখিয়ে বললো…..
– ওই যে,তোমার জন্য দাড়িয়ে আছে।
রাইসা রিহানের কথা শুনে তাকাতেই ঘৃণা দুচোখ পানি চলে আসে। রাইসাকে দেখে কেমন বিশ্রীভাবে হাসতে শুরু করলো।
” রাইসার আম্মু বলে উঠলো…..
– তুই এটা কেনো রেখেছিস?
– বাহ রে। ওনি তো……………………………
(চলবে)