অবশেষে তুমি আমার
পর্বঃ ২৪
তাসনিম রাইসা
– মিসেস রাহেলা অধরার ডান হাত দেখে বললো,’ আল্লাহ হাতের কি অবস্থা হয়েছে। দাঁড়াও আজ তোমার মা তোমাকে খাইয়ে দিবে।অধরা বিছানায় বসে আছে। মিসেস রাহেলা বিষ মেশানো খাবার অধরার সামনে রেখে বসলো। অধরার চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে।মায়ের কথা বারবার মনে পড়ছে। মিসেস রাহেলা অধরার চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো, কোন অজুহাত চলবে না সব খাবার খেতে হবে। আমি খাইয়ে দিচ্ছি। এই বলে পানি আনতে যখন যায়। তখন বিড়ালে খাবার ফেলে দেয়!
– মিসেস রাহেলা মনে হয় মেনু স্টক করবে এমন ভাব নিল! হায় হায় বিড়ালে খাবারটা নষ্ট করে দিলো।
– ত্রিযামিনী ঘরের বাহিরে রাগে ফুঁসছে শুধু।
– মা হয়তো খাবারটা আমার রিযিকে ছিলো না। এমন সময় রাজ এসে পড়লো। রাজ অধরার দিকে তাকাতেই বুঝতে পারলো কিছু একটা হয়েছে।
-অান্টি অধরার কি হয়েছে?
” আর বলো না বাবা। রান্না করতে গিয়ে তেলের ছিটা হাতে ফুসকা পড়ে গেছে।
”ওহ্ আচ্ছা! এতে আধিক্ষেতা দেখানোর কি আছে?
– তুমি যাও নিজ হাতে খেতে পারলে খাবে নয়তো খাবে না।
– অধরা কিছু না বলে রুম থেকে বের হয়ে গেল। রাজ ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে অধরাকে বললো,’ চল আমার সাথে।”
– এভাবে?
– হুম তবে শাড়ি পড়ে নে।
– শাওয়ার নেয়নি তো।
– ত্রিশ মিনিট সময় যেভাবে পারিস রেডি হয়ে নে। জরুরী কাজ আছে।
– অধরা কোনরকম শাওয়ার নিয়ে বের হলো। শরীরে ঠিকমতো তোয়ালেটাও প্যাঁচাতে পারেনি। এখনো অসহ্য ব্যথা করছে। ভেজা চুল থেকে এখনো টপটপ করে পানি পড়ছে।
– রাজ রুমে ডুকেই ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দেয়।
-অধরা খানিকটা ভয় পেয়ে যায়। রাজ অধরার কাছে এসে আরেকটা তোয়ালে দিয়ে অধরার শরীর মুছে দেয়।
– অধরা লজ্জামাখা ভঙিতে বলে উঠে রাজ আমি পারবো। ”
– হ্যাঁ কি পারবে তা বুঝতেই পারছি। হাত দিয়ে কিছু স্পর্শই করতে পারছো না। এখান চুপ-চাপ থাকো। আমি তোমার স্বামী। সো ড্রেস চেঞ্জ করার অধিকারটা আছে।
– অধরা রাজকে বুঝতে পারে না। হঠাৎ মানুষটাকে খুব আপন মনে হয়। আবার কখনো কখনো মনে হয় কত দূরের!
রাজ ড্রয়ার থেকে সবুজ রঙা একটা শাড়ি বের করে নিজ হাতে শাড়ি পরিয়ে দেয়। রাজের প্রতিটা স্পর্শে অধরা নিজেকে হারিয়ে ফেলে।
-অধরার খুব লজ্জা করছে। লজ্জার তাকাতে পারছে না পর্যন্ত! রাজ অধরার চুলগুলো শুকিয়ে ঘাড়ের নিচে চুমু এঁকে দেয়। অধরা খানিকটা খেই হারিয়ে ফেলে রাজকে আষ্টে-পৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে। রাজ অধরাকে জড়িয়ে ধরে সদ্য নিজ হাতে দিয়ো দেওয়া লিপস্টিকের উষ্ণ স্বাদ অনুভব করে।অধরার মনে ভালোবাসার ঢেউ স্পর্শ করে যায়। আর মনে মনে বলে এভাবে প্রতিটা দিন যদি রাজ আমাকে শাড়ি পরিয়ে দিয়ে লিপস্টিক নষ্ট করতো। তাহলে শতবার নিজ ইচ্ছায় হাত পুড়াতাম!
– রাজ অধরাকে নিয়ে নদীর পাড়ে যায়। নদীর পাড়ের শুভ্র কাশফুলগুলো ভালোবাসা বিলিয়ে দিচ্ছে। রাজ সন্ধ্যার আগে, অধরাকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে যায়। রেস্টুরেন্টে খাবার অর্ডার করে নিজ হাতে অধরাকে খাইয়ে দেয়।
-রেস্টুরেন্টের সবাই রাজ আর অধরার দিকে তাকিয়ে আছে। অধরার খাওয়া শেষ হলে রাজ একটা টিস্যু দিয়ে অধরার মুখটা মুছে দেয়।
– রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে, অধরা রাজকে নিয়ে হসপিটালে যায়।
– অধরা হসপিটালের গেটে দাঁড়িয়েই চমকে যায়। দু’জনেই বসে আছে ডাক্তার অরিনের সামনে। মিসেস অধরা আপনি কি সত্যিই এর্বারশর করতে চান?
– কি বলছেন এসব? আমি এর্বারশন করবো কেন?
– মিঃ রাজ তো তাই বললো!
– অধরা এখন বুঝতে পারলো কেন তাকে এতো ভালোবাসা দেখানো হলো। বেবি নষ্ট করার জন্যই এতো আদর।
– রাজের প্রতি অধরার ঘৃণা হচ্ছে বড্ডবেশি ঘৃণা হচ্ছে! মানুষ কতটা নীচ হলে নিজের সন্তানকে এর্বারশন করতে চায়।
– কি হলো কিছু বলছেন না যে?
– আপু আমি এর্বারশন করবো না।
– কি বলছো এসব? আচ্ছা ডক্টর আমরা কাল আসছি।
– রাজ অধরাকে নিয়ে বাসায় এসে পড়লো। বাসায় এসেই বললো,’ তুমি বেবি এর্বারশন করবে না?”
– না এর্বারশন করবো না। বেবি তোমার না আমার। আমার বেবি জানবে সে বাবা ছাড়া হয়েছে।
– পাগলের মতো বকছো কেন? বড় হলে দেখা যাবে ঠিকই ছেলেকে নিয়ে সম্পদ দখল করতে আসছো।
– কোনদিনই না। তোমার মেন্টালিটি এতো লো কেন?
– শোন আমার শর্ত দুইটা হয় বেবী এর্বারশন করতে হবে। নয়তো এই চুক্তি নামায় স্বাক্ষর করতে হবে। তোমার গর্ভের বেবীটা বাবা আমি না। এজন্য বেবির ভরষ পোষণ বাবদ দশলাখ টাকাও দেওয়া হবে।
– অধরা মনে মনে ভাবলো, ‘ এর্বারশনের চেয়ে চুক্তিটাই ভালো। তবুও আমার ভেতরে থাকা সত্ত্বাটা বেঁচে যাবে। অধরা কাগজটা নিয়ে সাইন করে দিলো। রাজ একটা হাসি দিয়ে কাগজটা নিয়ে চলে গেল।
– রাজ চলে গেলেই অধরা পেটে হাত রেখে বললো,’ কিরে মন খারাপ? মন খারাপ করিসনা তোকে যে পৃথিবীতে আসতেই হবে। বাবার জন্য মন খারাপ করিস না। কিরে তুই কান্না করছিস? কই দেখ আমি কান্না করছি না তো। কান্না করবি না একদম। তুই যে আমার কলিজার টুকরা। অধরা একা একাই কথা বলতে বলতে ফুঁপিয়ে কান্না করে দিলো।
– দেখতে দেখতে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে আসছে। আর সপ্তাহখানেক বাকি আছে। দিন যাচ্ছে অধরার উপর নির্যাতন বৃদ্ধি পাচ্ছে। রাজ সবটা দেখেও না দেখার ভান করে। প্রতিটা রাত যায় কষ্টের একটা রাতও রাজের জন্য শান্তিতে ঘুমাতে পারে না। সারা রাত তার শরীরটাকে কুড়ে কুড়ে খায়। মনে হয় এর চেয়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গণ করাও উত্তম। তিয়াস ছেলেটা দূর থেকেই ভালোবাসে। তিয়াসের ভালোবাসার মাঝে কোন খাঁত নেই এসব ভাবতে ভাবতে অধরার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে। রাত প্রায় নয়টা এখনো রাজ বাসায় আসেনি। হঠাৎ ফোনটা ক্রিং ক্রিং করে বেজে উঠলো।
– অধরা ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে তিয়াস বললো,’ অধরা প্লিজ ফোন কাটবে না। একটু ব্যালকণিতে আসবে?
– অধরা বেলকণিতে আসতেই থমকে গেল! মমবাতি দিয়ে খুব নিপুণভাবে লেখেছে, ‘ ভালোবাসি তোমায় অধরা।
– অধরা তিয়াসকে কি বলবে বুঝতে পারছে না।
– ফোন কেটে দিয়ে দরজা বন্ধ করে ফেললো। অধরা চায় না সে অন্য কারো মায়ার পড়ুক। তার জীবনটাই যে রাজের জন্য। এসব ভেবে কাঁদতে লাগলো, ঠিক তখনি একটা মেসেজ আসলো,’ প্রিয়তী ভালোবাসতে হবে না তোমায়। শুধু ভালোবাসতে দিয়ে। আমি তোমার শরীর ছুঁতে চায় না। তোমার হৃদয়টা ছুঁতে চায়। ভালোবাসি বড্ডবেশি কলিজার টুকরা♥। ”
– অধরা ফোন সুইচটপ করে রাখলো। রাত প্রায় বারোটা রাজ তখন বাসায় এসেই না খেয়েই শুরু পড়লো। আর নোংরা খেলায় মেতে উঠলো। অধরার ইদানিং নিজেকে পণ্য মনে হয়। সে একটা পুতুল রাজ যেমন পাচ্ছে তেমন করে খেলছে। চোখ বেয়ে জড় গড়িয়ে পড়ছে। রাজকে কোনপ্রকার বাধা দিচ্ছে না।
– সকালে অধরা ব্রেকফাস্ট রেডি করছে! এমন সময় ত্রিযামিনী পিছন থেকে অধরার চুলের মুঠি ধরে রাজের সামনে নিয়ে যায়।
– ত্রিযামিনী কি হচ্ছে অধরাকে এভাবে ধরে রাখছো কেন?ছাড়ো বলছি।
– রাজ এই পতিতাটা কি করছে দেখলে তুমি চমকে যাবে! এটা দেহ ব্যবসা করে বেড়ায়।
– রাজ ত্রিযামিনীর গালে ঠাস করে চড় বসিয়ে দেয়।
– ত্রিযামিনী মুচকি হেসে বলে, জানতাম বিশ্বাস করবে না। এই দেখ ভিডিওটা। মেয়েটা আর ছেলেটাকে চিনতে পারো কি না।
– রাজ ফোনটা হাতে নিয়ে ভিডিও দেখে চমকে উঠল! অধরা আর তুর্যয় রতক্রিয়ায় ব্যস্ত! দু’জনের পরণে কাপড় নেই। অধরা হাসিমুখে তুর্যয়ের আষ্টে-পৃষ্টে জড়িয়র ধরে আছে। সেইদিন অধরা যে কাপড়টা পড়ে বাসায় আসছিল। সে কাপড়টা দু’জনের পাশেই পড়ে আছে। রাজের বুক ফেটে কান্না আসছে। পায়ের তলার মাটি সরে যাচ্ছে। অধরা তার বিশ্বাস নিয়ে এভাবে খেলা করবে সে কল্পনাতেও ভাবেনি। রাজ ফোনের ভিডিওটা অধরার সামনে ধরলো।
– অধরা ভিডিওটা দেখেই রাজের দু’পা ঝাপটে ধরে বললো,’ রাজ প্লিজ আমাকে,,,
”চলবে”””””