অবশেষে_তুমি_আমার
পর্বঃ৩০
তাসনিম_রাইসা
– রাজ অসহায় দৃষ্টি নিয়ে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে অধরার দিকে। অধরা আর কিছু না বলে ভেতরে চলে গেলো। বিমানে বসে আছে অধরা। চোখের পানি কোন বাঁধা মানছে না।
– পাশ থেকে ইশু বললো,’ আপু শুনেছিস রাজ ভাইয়া নাকি ছাঁদ থেকে লাফ দিয়েছে। মনে হয় বাঁচবে না।
– কি বলছিস ইশু! রাজ সত্যি ছাদ লাফ দিয়েছে। ভর্য়াত কণ্ঠে বললো অধরা!
– হুম কেন তোমার তো খুশি হওয়ার কথা আপু! তোমার জন্যই ছেলেটা আজ মরতে বসেছে! আসার সময় এমন অপমানটা না করলেও পারতি।
– অধরা ইশুকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো।
– কি হলো কাঁদছিস কেন? এখন কান্না করার সময়? বিমানের অন্য যাত্রীরা দেখ কিভাবে তাকিয়ে আছে? আপু কাঁদিস না প্লিজ। তুমি কাঁদলে যে আমারো কষ্ট হয়।
-ইশু তুই লন্ডন যা আমি যাবো না। আমি রাজের কাছে গেলাম।
– অধরা যখন সিট থেকে উঠতে যাবে এমন সময় ইশু অধরার হাতটা ধরে ফেলল!
– হাত ধরলি কেন আমাকে প্লিজ যেতে দে। আমি ওকে যতই ঘৃণা করি কিন্তু ওর কষ্টের কথা শুনলে নিজেকে ঠিক রাখতে পারি না।
– আপু এখন বিমান থেকে নামা যাবে না। এখন কিছু করার নেই।
– ইশু আমাকে প্লিজ যেতে দে।
– শোন আপু রাজ মরলেও তোমার কিছু যায়
আসে না। রাজ মরে গেলে তোমাদের পথের কাঁটা দূর হবে। তিয়াস কিন্তু সত্যিই তোমাকে অনেক ভালোবাসে আপু।
– অধরা ঠাস করে ইশুর গালে চড় বসিয়ে দেয়। জীবনের প্রথম অধরা ইশুর গায়ে হাত তুলল। মা মরার পর অধরায় ইশুকে মায়ের স্নেহে বড় করেছে।
– আপু তুমি আমাকে মারলে?
-মেরেছি বেশ করেছি। তুই অলক্ষণে কথা বলিস কিভাবে? আর তিয়াসকে কখনো ভালোবাসতে পারবো না। মনের সবটা আসন একজনকেই ছোটবেলা দিয়ে দিয়েছি। ইশু আমাকে ক্ষমা করে দিস। আমি আসি। লন্ডন যাবো না।
– ইশু এবার হেসে দিয়ে বললো,’ আপু আমি তোমার সাথে মজা করেছি। রাজ ভাইয়ার কিছুই হয়নি। রাস্তায় আসার সময় বললে না রাজকে তুমি ঘৃণা করো। একটুও ভালোবাসো না। আর তিয়াস খুব ভালো। ভালোবাসতে হয় কিভাবে জানে।তাই একটু মজা করলাম রাজ ভাইয়াকে নিয়ে। কিন্তু তুমি তো দেখছি মুখে একটা বলো মনে আরেকটা। তবে কেন নিজেকে কষ্ট দিচ্ছো আপু? আর হ্যাঁ আপু আই এম এক্টেমলি সরি আপু তোমাকে মিথ্যা বলে কষ্ট দেওয়ার জন্য।
– মানে তুই এতক্ষণ মিথ্যা বললি আমার সাথে? কাঁদো কাঁদো কন্ঠে!
– ইশু মুচকি হেসে বললো,’ আপু তোমার ভালোবাসার পরীক্ষা নিলাম। ‘আচ্ছা আপু এতই ভালোবাসো তাহলে চলে যাচ্ছো কেন? যার জন্য এত পথ পাড়ি দিয়ে আসছিলা। আজ সে কাছে থাকতেও দূরে রেখে চলে আসলে। সবকিছু মেনে নাও না।
– অধরা এবার চোখের পানি মুছে বললো,’ জানিস ইশু যেখানে ভালোবেসে একজন আরেকজনের কাছে থেকেও অপ্রিয় হয়ে উঠবে । সেখানে দূরে গিয়ে প্রিয় থাকাই শ্রেয়। কিছু কথা আজ তোকে বলা উচিত। রাজ আমাকে কষ্ট দিয়েছে সেটা আমি মেনে নিয়েছি। রাতের পর রাত চুক্তি করে আমার শরীরটাকে খুবলে খেয়েছে। তবুও আমি বাঁধা দেয়নি। কারণ আমি সেই ছোটবেলা থেকেই স্বামীর আসনে তাকে বসিয়েছি। আর সে কী জায়গায় বসিয়েছিল জানিস? স্রেফ একজন পতিতার জায়গায়। বলতো কোন ছেলটা নিজের ব্যবসার জন্য নিজের স্ত্রীকে বিদেশী ক্লাইন্টদের সাথে হোটেলে রেখে আসবে?
– কোন ছেলে কি পারবে নিজের গর্ভবতী স্ত্রীকে রেখে অন্য মেয়ের সাথে রাত কাটাতে? মেয়ে মানুষ পৃথিবীর সব ভাগ দিতে পারলেও একটা জিনিসের ভাত কখনো দিতে পারে না। সেটা হলো স্বামীর ভাগ। আর রাজ আমারি চোখের সামনে আনিশাকে নিয়ে সারারাত একই রুমে কাটিয়েছে। সেদিন মনস্থির করেছিলাম সুসাইড করবো! কিন্তু পারিনি আমার ভেতরে বেড়ে উঠা আরেকটি প্রাণের জন্য। একটা মেয়ে কতটা অসহায় হলে আরেকটা মেয়ের পায়ে পড়ে জানিস? আমি পড়েছিলাম আনিশার পায়ে কিন্তু রাজ আমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। আনিশা আমারি চুখের সামনে রাজকে জড়িয়ে ধরে।
– সবকিছু মেনে তার পায়ের কাছেই পড়ে ছিলাম। কিসের জন্য জানিস? একটু ভালোবাসার জন্য। কিন্তু আমি পায়নি। পেয়েছি চরিত্রহীনের ট্যাগ।সকলের অত্যাচার। জায়নামাযে গরম চায়ে জ্বলসে যাওয়া শরীর। পরিশেষে ডির্ভোস। রাজের সব ভুল ক্ষমা করতে পারলেও ও যখন আমাদের সন্তান নিয়ে সন্দিহান করেছে। এবং বাবার পরিচয় দিতে বারণ করেছে সে অপরাধ ক্ষমা করতে পারবো না। দোষ করলে আমি করেছিলাম। আমাদের সন্তান কি ভুল করেছে? ওকে কেন দুনিয়ার আলো দেখার আগে এবার্রশন করতে বললো? তারপরেও বল আমি সবটা ভুলে রাজকে কিভাবে কাছে টেনে নেয়। তারপরেও ওর কিছু হলে নিজের খুব কষ্ট হয়।
– ইশু কাঁদছে। একপ্রকার ফুঁপিয়েই কাঁদছে।
– এই ইশু কাঁদছিস কেন? কি হলো এভাবে কাঁদলে মানুষ কি বলবে?
-আপু তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমি জানতাম না সবাই তোমাকে এতো কষ্ট দিয়েছে। সত্যিই তুমি যা করেছ সব ঠিক করেছো। রাজকে কোনদিন ক্ষমা করো না। ও তোমার ভালোবাসার যোগ্যই না। ও এখন তোমার সম্পত্তির কথা শুনে এমন করছে। যেন হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হতে পারে। সরি আপু তুমি মন খারাপ করো না। আর কোনদিন রাজের কথা তোমাকে বলবো না।
– আপু আরেকটা কথা বলি?
– হ্যাঁ বল।
– আপু সত্যি বলতে তিয়াস ভাইয়াকে অনেক ভালোলাগে। কি সুন্দর এতিম বাচ্চাদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে। তোমাকে এতটা ভালোবাসার পরও রাজ আর তোমাকে এক করার জন্য কত চেষ্টায় না করেছে। জানো তিয়াস ভাইয়া তোমাকে আর রাজ ভাইয়াকে এক করার জন্য কত প্ল্যান করেছে? আমাকেও বলেছিল। তার কথামতোই তো রাজ ভাইয়ার ছাদ থেকে লাফ দেওয়ার কথা তোমাকে বলেছিলাম। আগে যদি জানতাম ওই ছোটলোকটা তোমার সাথে এতকিছু করেছে তাহলে ওটাকে বাসাতেই ঢুকতে দিতাম না। আপু আমি বলি কি তুমি জীবনটাকে নতুন করে সাজাও তিয়াসস ভাইয়ায় সাথে। আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি তুমি হ্যাপি হবা। লোকটা তোমাকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসে।
– ইশু থামবি তুই?
– থামতে পারি এক শর্তে?
– কিসের শর্ত বল আমাকে?
– তুমি এভাবে মন খারাপ করে থেকো না। একটু হাসো।
– অধরা মুচকি হেসে বললো, ‘পাগলী বোন আমার। সিট বেল লাগা।
– বিমান আকাশে ডানা মেলল। অধরা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। সাথে অতীতের স্মৃতিগুলোকে নিজের মন থেকে মুছে ফেলল! যদিও স্মৃতি মুছা যায় না তবুও ব্যর্থ চেষ্টা!
– এদিকে রাজ বাসায় এসে অধরার ছবিটা বুকের সাথে জড়িয়ে স্মৃতিগুলো মনে করছে আর চোখের পানি ফেলছে। আনিশা রাজকে কাঁদতে দেখেই পাশে এসে বসলো।
– রাজ কিছু বলছে না ছবিটা বুকের সাথে জড়িয়ে রেখেই কাঁদছে।
– রাজ এভাবে ছোট্ট বাচ্চার মতো কাঁদলে চলবে? আজ সারাদিন তো কিছুই খাওনি? এভাবে না খেয়ে থাকলে তো মরে যাবে।
– হুম আমি তো মরতেই চায়। কার জন্য বাঁচবো? যাকে এতটা ভালোবাসলাম সেই বুঝলো না আমাকে?
— রাজ একটা থাপ্পর দিবো বাজে বকলে। এখন কান্না করো না। আমি খাবার নিয়ে আসছি।
– রাজ কিছু বললো না আনিসাকে। আনিশা একটু পর খাবার নিয়ে রাজের রুমে ডুকল।
– রাজ খাবে না তবুও জোর করে আনিশা রাজকে খাইয়ে দিচ্ছে। রাজের চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে। না জানি অধরা কি করছে। সেও তো অধরাকে এভাবে খাইয়ে দিয়েছে অধরা কি সব ভুলে গেছে?
– আনিশা রাজকে খাইয়ে দিয়ে কপালে হাত দিতেই চমকে উঠলো! এত্তোজ্বর! জ্বরে তো গা পুড়ে যাচ্ছে। এই রাজ তোমার জ্বর তবুও আমাকে বলোনি। জ্বরে তো শরীর পুড়ে যাচ্ছে।
– আনিশা তোমার না বিদেশে চলে যাওয়ার কথা ছিল। কবে যাবে?
– যাবো না।
– যাবে না মানে?
– সেটা তোমার জানতে হবে না। শুধু এটুকু মনে রেখো আমি তোমাকে এ অবস্থায় রেখে কোথাও যাবো না।
– আনিশা পাগলামী করো না।
– রাজ আমি না তোমার বন্ধু তোমার এ বিপদে আমি কিভাবে তোমাকে ছেড়ে চলে যায়? তুমি কান্না করো না। তোমাকে নিয়ে আমি দরকার হলে লন্ডনে যাবো। অধরা আপুকে সব খুলে বলবো। এখন ঘুমাও।
– আনিশা আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। এই কথা বলেই রাজ শুয়ে পড়লো। আনিশা রাজের কপালে হাত রাখতে পারছে না এতো জ্বর। তাড়াহুড়া করে মাথায় জলপট্টি দিয়ে দেয়। সারারাত এভাবেই পাশে থাকে। আনিশার খুব টেনশন হচ্ছে। সে জানে না সে নিজের অজান্তেই রাজের মায়ায় পড়ে গেছে।
– এদিকে দু’দিন পর রাজ হসপিটাল থেকে বাসায় ফিরছিল। হঠাৎ রেস্টুরেন্টে ত্রিয়ামিনী আর তিয়াসকে দেখে চমকে গেল। দু’জন দুজনের খুব কাছাকাছি।
– চলবে”””””