অবশেষে তুমি আমার পর্বঃ৩১

0
4017

অবশেষে_তুমি_আমার
পর্বঃ ৩১
#তাসনিম_রাইসা

– আনিশা আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। এই কথা বলেই রাজ শুয়ে পড়লো। আনিশা রাজের কপালে হাত রাখতে পারছে না এতো জ্বর। তাড়াহুড়া করে মাথায় জলপট্টি দিয়ে দেয়। সারারাসাসত এভাবেশ্রই পাশে থাকে। আনিশার খুব টেনশন হচ্ছে। সে জানে না সে নিজের অজান্তেই রাজের মায়ায় পড়ে গেছে।

– এদিকে দু’দিন পর রাজ হসপিটাল থেকে বাসায় ফিরছিল। হঠাৎ রেস্টুরেন্টে ত্রিয়ামিনী আর তিয়াসকে দেখে চমকে গেল। দু’জন দুজনের খুব কাছাকাছি বসে আছে! রাজ দু’জনকে এভাবে বসে থাকতে দেখে চমকে যায়। ত্রিযামিনী কিভাবে তিয়াসকে চিনে। ত্রিযামিনী তিয়াসের হাতটা শক্ত করে ধরে কি যেন বলছে। রাজের আর বুঝতে বাকি রইল না এ দু’জনে মিলেই অধরাকে তার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। রাজের খুব রাগ হচ্ছে। কিন্তু না তারা কি বলছে সেটা শুনতে হবে। রাজ একটা ক্যাপ পরে তিয়াস আর ত্রিযামিনীর আড়ালে তাদের পিছনের চেয়ারটাতে বসে যায়। যেখান থেকে তিয়াস আর ত্রিযামিনীর কথা স্পর্ষ্ট শুনা যায়।

– রাজ ওয়েটারকে ইশারা করে বললো, একটু কোল্ড কফি দিয়ে যেত। ওয়েটার কোল্ড কফি দিয়ে যেতেও ওপাশ থেকে স্পর্ষ্ট শুনা গেল, ‘ ত্রিযামিনী আপনার সাথে এর আগে কোনদিন কথা হয়নি। আপনি আমার অফিসে গিয়েছিলেন, তারপর এখানে। তবে একটা কথা কি জানেন? আপনি যেটা চাচ্ছেন সেটা কোনদিনই সম্ভব না। আপনাকে কিছুটা ভালো মনে করেছিলাম। কিন্তু আপনি নিজের ভালোবাসা পাওয়ার জন্য এতটা নিচে নামবেন ভাবতেও পারিনি। অধরার সাথে কি আচরণ করেছেন? একটা মেয়ে হয়ে পারলেন এভাবে অত্যাচার করতে? রাজ তো করতোই সাথে আপনিয়ো? মেয়েটা তো গর্ভবতী ছিল। আপনিও তো মেয়ে। শুনেছি মেয়েদর মনে মায়া-মমতা বেশি । কিন্তু আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে আমি ভুল শুনেছি। অধরার কাছে আপনাদের অত্যাচারের সব কথা শুনেছি। কতগুলো বলতে গিয়ে কতটা কেঁদেছে সেটা আপনাকে বলে বুঝাতে পারবো না।

– ভাইয়া প্লিজ আমি আমার ওসব কাজের জন্য অনুতপ্ত। আর আমি যা করেছি সব রাজকে পাওয়ার জন্যিই করেছি। যাই হোক আপনার কাছে করজুড়ে অনুরোধ করছি যেভাবেই হোক রাজকে আমার চাই। আমি ওকে ছাড়া যে বাঁচবো না। ওই আমার জীবনের প্রথম পুরুষ যাকে দেখে আমার কিশোরী মনে প্রথম ভালোবাসার দোলা জাগে।

– আচ্ছা আপনি কি চান রাজ ভালো থাকুক?

– আমি কেন চাইবো না? সবাই তো নিজের ভালোবাসার মানুষটার হ্যাপিনেসটাই চাই। আমিও চাই রাজ সবসময় ভালো থাকুক।

– তাহলে কেন রাজকে কষ্ট দিচ্ছেন?রাজ তো আপনার সাথে হ্যাপি না সে অধরাকে ভালোবাসে।
আপনি যেমন রাজকে ছাড়া বাঁচবেন না তেমনি রাজও অধরাকে ছাড়া বাঁচবে না।

– কিন্তু আমি যে রাজকে ছাড়া কিচ্ছু ভাবতে পারি না। সত্যি বলতে স্কুলে যখন পড়ি তখন মা বলতো রাজের সাথে মিশতে। তার কাছাকাছি থাকতে। রাজকে বিয়ে করতে পারলেই সব সম্পত্তি আমাদের। আমিও সেটা ভেবেছিলাম তখন। কতবার রুমের দরজা লক না করেই ড্রেস চেঞ্জ করেছি। বাট রাজ একটিবারো ফিরে তাকায়নি। এখনো মনে আছে আম্মু একদিন বাসায় ছিল না। জান্নাতকে নিয়ে এক জায়গায় গিয়েছিল। আর আমি রাতের বেলা ভয় করে কথা বলে রাজের রুমে আসি। আর লজ্জা সরমের মাথা খেয়ে বলি তার সাথে থাকবো। তাকে আকর্ষিত করার জন্য। কিন্তু পারিনি। সে বিছানা ছেড়ে নিচে চাদর বিছিয়ে শুয়েছিল। মাঝ রাতে আমি তাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ি। আর রাজ সেটা বুঝেই ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। সেদিনের থাপ্পরটা আমার আজও মনে আছে। যেকোন ছেলে থাকলেই সেদিনের সুযোগ মিস করতো না। কিন্তু সে সুযোগটা না নিয়ে আমার হৃদয়ের পুরোটা জায়গাই নিয়ে নিছে। কিভাবে ভুলব আমি?

– ত্রিযামিনী প্লিজ কান্না করো না। আশে-পাশের মানুষ দেখছে। শোন তুমি যেমন রাজকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসো। তেমনি আমিও অধরাকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি। ভালোবাসি বলেই কাজের মেয়ে জেনেও তার বাড়িতে মা’কে কত কষ্ট করে রাজি করে বিয়ের প্রস্তাব পাঠায়। আমি জানতাম না অধরা বিবাহিত। জানলে ভালোবাসলেও সেটা হৃদয়ে দাফন করে দিতাম। যেমনটা এখন দিচ্ছি। আমি চাইলেই অধরাকে আপন করে নিতে পারি। তুমি যে সুযোগ রাজকে দিতে চেয়েছিলে আমি চাইলেই ওমন সুযোগ তৈরী করে নিতর পারতাম। একটা বদ্ধ ঘরে অধরা আর আমি ছিলাম তবুও ওর সতিত্বে একটা আঁচড় দেয়নি। কেন দেয়নি জানো শুধু ওকে ভালোবাসি বলে। আমি সবসময় ওর ভালোটাই চাই। ও যার কাছেই থাকুক যেন ভালো থাকে। আমি জানি রাজ ভাইয়া আর অধরা একে অপরকে ভালোবাসতো। এখন অবশ্য অধরা রাজকে ঘৃণা করে। তবুও তাদের দু’জনের জন্য হলেও আমাদের এ সামান্য সেক্রিফাইজ যে করতেই হবে।

– ত্রিযামিনী কিছু না বলেই রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে চলে গেল।
– এমন সময় তিয়াসের ফোনটা বেজে ওঠল!

– তিয়াস ফোন রিসিভ করেই বললো,’ হ্যালো কে?”

– ওপাশ থেকে কোন আওয়াজ আসছে না। তিয়াস আবার বললো কে বলছেন? ক্ষানিক পর মুচকি হেসে বললো,’ কি পরীক্ষা করছিলে আমাকে? আমি জানতাম তুমিই হবে। কারণ এ নাম্বার তোমাকে ছাড়া কাউকে দেয়নি। আচ্ছা কেমন আছো? ভালো তো?
– জানো তোমাকে না অনেক মিস করছি। মনে হচ্ছে সবকিছু থেকেও নাই।
– আচ্ছা তাহলে আমিও যাচ্ছি লন্ডন। আর একটা কথা রাজ ভাইয়ার মুখের দিকে তাকানো যায় না। লোকটাকে আরেকবার সুযোগ দেওয়া যায় না?

– প্লিজ এসব বললে তোমার সাথে কোনদিন আর কথা বলবো না। তুমি রাজ নামক পশুটার কথা বললে আমার মরা মুখ দেখবে?

– অধরা প্লিজ এমন কথা বলো না। আল্লাহ পাপ দিবে। এমন কথা আরেকদিন বললে সত্যি সত্যিই আমি মরে যাবো একদিন। আর তোমার জন্য কেউ কাঁদবে না।

– তিয়াস তোমার কান্না শোনার জন্য ফোন করেছি? আর হ্যাঁ তুমি এ মাসেই লন্ডনে আসো। আমারো একা একা ভাললাগছে না।

– হুম চিন্তা করো না। যেখানেই থাকি তোমার পাশেই রয়েছি।

– হিহি পাগল একটা।

– তোমার পাগল।

– তিয়াস রাখছি।

– ওকে সুইর্ট বন্ধু।

– রাজ বুঝতে পারলো তিয়াস তার কলিজার টুকরার সাথে কথা বললো। বুকের ভেতরটা কেমন যেন লাগছে। মনে হচ্ছে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসবে। অধরা কি সত্যি তাকে ক্ষমা করবে না।

– রাজ আর রেস্টুরেন্টে এক মুহূর্ত থাকলো না। রেস্টুরেন্ট থেকে সোজা বাসায় এসে পড়লো। বাসায় এসে দেখে ত্রিযামিনী আর তার মা জান্নাতকে নিয়ে কোথায় যেন বের হচ্ছে।

– আন্টি কোথায় যাবেন?
– বাবা একটু হসপিটালে যাবো। কথাটা বলতে গিয়ে মাথাটা নিচু করে ফেলল। রাজ আর কিছু বললো না। ত্রিযামিনীর কাছে গাড়ির চাবিটা দিয়ে যখন রুমে ঢুকলো ঠিক সেই মুহূর্তে ঘেমে একাকার হয়ে আনিশা রাজের সামনে দাঁড়াল।

– এই তুমি এভাবে ঘেমেছো কেন?
– রান্না করলাম।

– তুমি না রান্না করতে পারো না। তাহলে কিভাবে রান্না করলে?
– ইউটিউব দেখে দেখে রান্না করছি। নুডুলস আর বিরিয়ানি নাকি তোমার পছন্দ। তাই নুডুলস আর বিরিয়ানি রান্না করছি। টেবিলে খাবার দিয়েছি তুমি ফ্রেশ হয়ে আসো।

– আনিশার মুখের দিকে তাকিয়ে আর না করতে পারলো না যদিও খেতে ইচ্ছে করছে না। বারবার অধরা আর তিয়াসের কথাগুলো মনে পড়ছে। তবুও মুখে হাসির রেখা টেনে ফ্রেশ হয়ে খেতে বসলো। নুডুলস খেয়ে যখন বিরিয়ানি খাবে। তখন রাজ আনিশাকে বললো,’ তুমি খাবে না?’ নাকি খেয়ে নিয়েছো?
– না খায়নি ভাবছি তুমি খাওয়ার পর খাবো।

– আশ্চর্য একা একা কিভাবে খাবে? একা একা খেলে শয়তান সাথে খেতে বসে যায়।

– না তুমি খাও আমি পরে খাচ্ছি।

– তাহলে তুমি পরেই খেয়ো। এতো কষ্ট করে রান্না করলো এখন বলছে পরে খাবে। খেতে বসো।

– আনিশা খেতে বসলেই রাজ দেখতে পেল আনিশার ডান হাতে ফোসকা চামড়া পুড়ে গেছে।

– এই তোমার হাতে ফুসকা পড়লো কিভাবে? দেখি হাতটা। রাজ দেখলো হাতের অনেটা ফুসকা পড়ে গেছে।

– এই এভাবে ফুসকা ফেললে কিভাবে?

-আচ্ছা বাদ দেও।

– বলো বলছি!

– রান্না করতে গিয়ে। কোনদিন তো কিচেনে যায়নি।

– রাজ দেখলো আনিশা খেতে পারছে না। তাই নিজ হাতে খাইয়ে দিল।

– খাওয়া শেষ করে অফিসের কাজে বাহির থেকে এসে রাজ রুমে প্রবেশ করতেই বুকটা কেমন যেন ছ্যাত করে ওঠলো! ফ্লরের উপর কারো ভেজা পায়ের ছাপ! অধরা থাকলে যা প্রতিদিন দেখা যেতো। রাজ ড্রেসিং টেবিলের সামনে যেতেই দেখলো অধরা ড্রেসিং টেবিলের সামনে নীল শাড়ি পরে বসে আছে। রাজ দৌড়ে পাগলের মতো অধরাকে জড়িয়ে ধরে বলে। কেন লুকোচুরি করছো আমার সাথে। আমি জানতাম তুমি ফিরে আসবে। আর তোমাকে কষ্ট দিবো না। আর বকা দিবো না। এই বুক থেকে তোমাকে কখনো দূরে ঠেলে দিবো না। বলো আর কখনো ছেড়ে যাবে না। রাজ চোখ বন্ধ করে আছে। ভেজা চুল থেকে মাতাল করা সুবাস আসছে।

– চলবে””””