অবশেষে_তুমি_আমার
পর্বঃ৪৩
তাসনিম_রাইসা
– সেই দিনের পর থেকে, ‘ অনুত্রিকে নিজের মেয়ের মতো বড় করছি। যখন তোমাদের কথা মনে হতো তখন খুব কান্না পেত। ইচ্ছা হতো ছোটে যায় তোমার কাছে। কিন্তু যেতে পারেনি, কারণ তুমি তো তিয়াসের সাথে সুখেই ছিলে। তোমাদের বিয়ের কাপল পিক গুলো দেখে ভালোবাসার ইচ্ছাটা মরে গেছে।
– রাজ কি বলছো এসব? আমি কেন তিয়াসকে বিয়ে করবো? আমি তখন ঘৃণা করলেও তোমাকেই ভালোবাসতাম।
– হাহা ভালোবাসলে সবার সামনে চড় দিতে পারতে না। পারতে না মৃত বলে সবাইকে জানাতে। তোমার জন্য তিয়াসই পারফেক্ট। আমি তোমাকে ভালোই বাসতে পারিনি। পারিনি সুখী রাখতে।
– রাজ প্লিজ এভাবে বলো না । আমি আর তোমাকে কষ্ট দিবো না। আমি বুঝে গেছি তুমি শুধু আমার ভালোবাসা না আমার কলিজার টুকরা। যে আমার নিঃশ্বাসের সাথে মিশে গেছে।
– অধরা প্লিজ তুমি চলে যাও। আমি একাই অনেক ভালো আছি। তাছাড়া আনিসার ভালোবাসা আমার সাথেই আছে।
– রাজ প্লিজ!
– এমন সময় অনুত্রি ঘুম থেকে জেগেই, ‘বাবাই বাবাই বলে কান্না করতে লাগল। একাই রুম থেকে বের হয়ে ড্রয়িংরুমে অধরা আর রাইমাকে দেখে বললো,’ বাবাই ও বাবাই আমার না ভয় করছে।
– কি হয়েছে আমার মা টার? কেন ভয় করছে?
– অনুত্রি রাজকে জড়িয়ে ধরে বললো,’ বাবাই তুমি আমাকে ছেড়ে যেয়ো না। আমি কিছুক্ষণ আগে দেখলাম তুমি আমাকে একা রেখে চলে গিয়েছ। বাবাই তুমি আমাকে রেখে চলো যেয়ো না। তুমি ছাড়া আমার কেউ নেই। বলো আমাকে ছেড়ে কোথাও যাবে না। সবসময় আমার সাথেই থাকবে?
– রাজ অনুত্রিকে কুলে তুলে নিয়ে কপালে চুমু দিয়ে বললো,’ মামনি আমি তোমায় ছেড়ে কোনদিন কোথাও যাবো না।
– তাহলে আমার মাথা ছুঁয়ে প্রমিজ করো?
– আচ্ছা প্রমিজ। আমি আমার রাজকন্যাকে ছেড়ে যাবো না।
– অনুত্রি রাজের গালে চুমু দিয়ে বললো,’ আমার লক্ষী বাবাই। আমার বাবাই সবচেয়ে ভালো।
– হঠাৎ অনুত্রির চোখ গেলো ড্রাইনিং টেবিলের উপরে ঢেকে রাখা খাবারের উপর!
– ঢেকে রাখা খাবার দেখেই বললো,” বাবাই তুমি এখনো খাওনি? আমি ঘুমানোর আগে বলেছো খাবে। এখনো খাবার ওমনি? তুমি এতো পঁচা কেন? একটা কাজো বকা খাওয়া ছাড়া করো না। আমার বাবাইটা কেয়ারলেস!
– হুম তোমার বাবাইটা পচা তাই না মামনি।
– চুপ তুমি কোন কথা বলবে না। আমার বাবাই বলো। আমি বাবাইকে খাইয়ে দেয়?
– আচ্ছা। ফ্রেশ হয়ে এসো।
– আচ্ছা যাচ্ছি!
– বাবাই উনি কে?
– মামনি উনি তোমার আন্টি হয়। সালাম দাও।
– অনুত্রি অধরার দিকে মায়াবতীর মতো চেয়ে বললো,’ আন্টি আসসালামু আলাইকুম। আপনিও ফ্রেশ হয়ে আসেন। সবাই এক সাথে খাবো।
– অধরা মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছে। এতটুকু একটা মেয়ে কিভাবে এতটা নম্র -ভদ্র হয়। সবাই ড্রাইনিং এ খেতে বসেছে। রাইমা আর অনুত্রি এক সাথে বসেছে। দু’জন খুব তাড়াতাড়ি বন্ধুত্বে পরিণত হয়েছে।
– অনুত্রি রাজকে খাইয়ে দিচ্ছে। অধরা অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
– রাইমা খাবার মুখে দিতে গিয়েও দিলো না। রাজ আড়চোখে রাইমার দিকে তাকালো।
– রাইমা নিজের মুখে দেওয়ার আগে খাবার টা রাজের মুখে তুলে দিল। রাজের চোখ থেকে টপটপ করে কয়েকফোটা জল গড়িয়ে পড়লো। রাইমার দিকে চেয়ে আছে। ছোট্ট মেয়েটার চোখেও পানি। রাজের বুকের ভেতরটা তুলপাড় হয়ে যাচ্ছে। রাইমা অদ্ভূত ক্ষমতা নিয়ে জন্মেছে। যেদিন প্রথম রাইমাকে কুলে নিয়েছিল,সেদিনই কান্না বন্ধ করে রাজের দিকে অপলক দৃষ্টিতে চেয়েছিল সে কথা এখনো ভুলতে পারে না সে।
– কি হলো বাবাই কাঁদছো কেন?
– না তো মামনি, চোখে ময়লা গিয়েছিল!
– আচ্ছা খাও।
– এদিকে খাওয়া শেষ হলে রাজ অনুত্রিকে বললো,’মামনি তুমি তোমার রুমটা রাইমাকে দেখাও গিয়ে।
– অনুত্রি রাইমাকে নিয়ে তার রুমে চলে গেলে রাজ অধরাকে বললো,’ অধরা আই বিশ্বাস করি তুমি আমায় ভালোবাসো এখন। আমিও তোমাকে ভালোবাসি। আগে যেমন ভালোবাসতাম এখনো ঠিক তেমনি ভালোবাসি। কিন্তু না চাইলেও আমাদের মাঝে এক অদৃশ্য দেয়াল তৈরী হয়েছে। জানো তিয়াস যদি চিটার না হতো তাহলে তুমি কোনদিন আমাকে ফিল করতে পারতে না। আমি সব শুনেছি, ‘ আমি আসার পর তুমি তিয়াসকে বিয়ের কথা বলতেই তার বাসাতেই গিয়েছিলে । আর সেখানে গিয়েই তিয়াসের আসল রুপ দেখতে পারো। একটা কথা মনে রাখবে,’সত্যি কখনো গোপন থাকে না। আরেকটা কথা আমি এমনটি চাইনি বিশ্বাস করো। তুমি কারো কাছ থেকে প্রতারণার স্বীকার হয়ে আমার ভালোবাসা উপলব্ধি করো। জানো মানুষ সবার আঘাত সহ্য করতে পারে কিন্তু প্রিয় মানুষটির আঘাত সহ্য করতে পারে না। সেদিন পার্টিতে কেন গিয়েছিলাম জানো? আমার কলিজার টুকরাকে দেখতে। আর সেদিন তুমি বলেছিলে আমি তোমার সম্পত্তির জন্য ভালোবাসা দেখাতে গিয়েছিলাম। আমি ফকির। সেদিনের অতগুলো মানুষের সামনে তোমার দেওয়া থাপ্পরের দাগ হয়তো গাল থেকে মুছে গেছে। বাট হৃদয়ে যে আঁচল কাটছিল তা কোনদিন মুছবার নয়। আরে তুমি নিজের অজান্তেই তিয়াসকে ভালোবেসে ফেলেছিলে। তাই তার মুখোশ পড়া চেহারাটা ধরতে পারোনি। আমি শতবার কসম করার পরেও বলেছো আমি চরিত্রহীন। যাই হোক তুমি আর কখনো আমার সামনে এসো না। তুমি আর আমার আগের অধরা নও। আরেকটা কথা তোমাকে ভালোবাসতাম বলেইর,’ টাকা অযুহাতে তোমাকে এ বুকে রেখেছিলামম। যতটা কষ্ট তোমাকে দিয়েছিলাম তার চেয়ে বেশি কষ্ট নিজেকে দিয়েছি। পারিনি একটি রাত শান্তিতে ঘুমাতে। তুমি আর আমার সামনে এসো না। আমি সেদিন তোমার বাসা থেকে কাঁদতে কাঁদতে বের হয়েছিলাম। অনেক কাঁদিয়েছো তবুও দিনশেষে তোমার দেওয়া পুতুলটার সাথে কথা বলতাম। কিন্তু যেদিন ডির্ভোস পেপারে সাইন করেছি সেদিন থেকে ভুলে গেছি অধরা নামে কেউ আমার জীবনে ছিল। তুমি আমার কেউ না। বলেছিলাম না এমন একদিন আসবে আমার ভালোবাসা তোমাকে ঘুমাতে দিবে না তোমাকে কাঁদাবে। বড্ডবেশি যন্ত্রণা দিবে যতটা কষ্ট আমি পেয়েছি তার চেয়ে শতগুণ কষ্ট তুমি পাবে।
– রাজ আমাকে এতবড় শাস্তি দিয়ো না।
– তুমি যাবো? প্লিজ তুমি যদি এখান থেকে না যাও তাহলে আমার মরা মুখ দেখবে।
– রাজ আমি চলে যাচ্ছি। তবুও তুমি বাজে কথা মুখে এনো না। তোমার কিছু হলে আমি কিভাবে বাঁচবো? অধরা রাইমাকে নিয়ে চলে গেল।
– রাইমা চলে যাওয়ার আগে রাজ রাইমার কপালে ছোট্ট করে একটা চুমু দিয়ে দিল। বুকের ভেতরটা কেমন যেন করছে।
– অধরা আর রাইমা চলে গেলেই, ‘ রাজ রুমে গিয়ে দেখে অনুত্রি একা একাই কথা বলছে। রাজ অনুত্রিকে ডাক না দিয়ে পিছনে এসে দাঁড়ালো। অনুত্রি আনিশার ছবিটা হাতে নিয়ে বলছে, ‘মম সবার মম সবাইকে কুলে নেয়। আদর করে। তুমি আমাকে বুকে নিতে পারো না? বলতে পারো না অনুত্রির মম আছে। জানো মম সবাই বলে আমার নাকি মম নেই? আমি বলি আমার মম আছে। ও মম কথা বলো না আমার সাথে। আমার না খুব কষ্ট হয় মম। খুব কষ্ট হয়। তুমি কেন কথা বলো না? মম তুমি কবে আসবে বলো? তুমি যেখানে থাকো সেখান থেকে তিনদিনের ছুটি নিয়ে এসো না। আবার চলে যেয়ো মম। শুধু একবার আমাকে বুকে নিয়ে বলবে অনুত্রির মম আমি। কেউ আর বলবে না অনুত্রির মম নেই। ও মম কথা বলো। দেখ আমি কান্না করছি। ও মম আল্লাহকে বললে কি আল্লাহ তোমাকে ছুটি দিবে? তারাদের দেশ থেকে এখানে আসতে দিবে? আমি আল্লাহকে বলবো,’ আল্লাহ তুমি আমার মমকে ছুটি দাও। দেখ আল্লাহ ঠিক তোমাকে আসতে দিবে। আমাকে বুকে নিতে পাঠাবে। ঠিক বলছি না?
– রাজ কি বলবে বুঝতে পারছে না। অনুত্রির কথা শুনে রাজের চোখে পানি এসে যায়। রাজ অনুত্রির মাথায় হাত রেখে বললো,’ আমার মামনিটা কি করছে?
– বাবা চুপ! কথা বলো না। দেখ না মমের সাথে কথা বলছি।
– রাজ কিছু না বলে চুপ করে রইলো।
– আচ্ছা বাবাই সবার মম সবাইকো বুকে নেই। আদর করে, খাইয়ে দেয়। আমার মম আমার সাথে কথা বলে না কেন? তুমি না বলেছো মম আল্লাহর কাছে। আমি যদি আল্লাহকে বলি আমার মমকে ছুটি দিতে। যদি কান্না করে বলি আল্লাহ কি আমার কথা শুনবে?
-তুমি না বলেছে আল্লাহ সবার কথায় শুনে। আমার কথা শুনবে তো বাবাই? বল না বাবাই শুনবে না আমার কথা আল্লাহ ( কাঁদো কাঁদো কন্ঠে)
– রাজ মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক জবাব দিল।
– অধরা বাসায় এসে কাঁদতে লাগল। রাতে আর ঘুমাতে পারলো না। বারবার রাজের কথাগুলোই কানে বাজতে লাগল। মাঝ রাত সবাই যখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ঠিক এমন সময় অধরা ঘুম থেকে উঠে সুন্দর করে অযু বানিয়ে নামাযে দাঁড়িয়ে যায়। নামায শেষ করে আল্লাহর কাছে কান্না করে।
– এদিকে পরের দিন রাজ অফিস থেকে ফিরছিল সাথে অনুত্রিয়ো ছিল। হঠাৎ আচমকা একটা মেয়ে গাড়ির সামনে এসে পড়ে। রাজ ব্রেক কষতে কষতে মেয়েটা গাড়ির সাথে এসে ধাক্কা খায়। গাড়ি কন্টোলে নিয়ে নেওয়াই তেমন কোন বড় ধরনের আঘাত লাগে না। বাট সেন্সলেন্স হয়ে যায় মেয়েটা। রাজ গাড়ি থেকে নেমেই, ‘ চমকে যায়। অনুত্রি গাড়ি থেকে নেমে মেয়েটাকে দেখেই বলে,’ মম! আল্লাহ আমার মমকে ফিরিয়ে দিয়েছে।
– চলবে””