অবশেষে_তুমি_আমার
পর্বঃ ৪৪
তাসনিম_রাইসা
– এদিকে পরের দিন রাজ অফিস থেকে ফিরছিল সাথে অনুত্রিয়ো ছিল। হঠাৎ আচমকা একটা মেয়ে গাড়ির সামনে এসে পড়ে। রাজ ব্রেক কষতে কষতে মেয়েটা গাড়ির সাথে এসে ধাক্কা খায়। গাড়ি কন্টোলে নিয়ে নেওয়াই তেমন কোন বড় ধরনের আঘাত লাগে না। বাট সেন্সলেন্স হয়ে যায় মেয়েটা। রাজ গাড়ি থেকে নেমেই, ‘ চমকে যায়। অনুত্রি গাড়ি থেকে নেমে মেয়েটাকে দেখেই বলে,’ মম! আল্লাহ আমার মমকে ফিরিয়ে দিয়েছে।
– রাজ গাড়ি থেকে নেমে চমকে যায়। আনিসা কিভাবে বেঁচে আছে। নিজ হাতে যাকে দাফন করেছে। না কিছু ভাবতে পারছে না ।
– বাবাই মম কথা বলছে না কেন? মমকে হসপিটালে নিয়ে যাও না প্লিজ। ও মম কথা বলো। আমি জানতাম আল্লাহ আমার কথা ঠিক শুনবে। আমার মমকে ফিরিয়ে দিবে। রাজ অনুত্রির দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
– রাজ তাড়াহুড়া করে মেয়েটাকে গাড়িতে তুলে হসপিটালে নিয়ে যায়। হসপিটালে নিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই জ্ঞান ফিরে। জ্ঞান ফিরতেই অনুত্রি রাজকে ডাক দিয়ে বলে বাবাই দেখে যাও মম এর জ্ঞান ফিরেছে।
-মেয়েটা অনুত্রির কথায় চমকে যায়! মেয়েটা তাকে কেনন মম ডাকছে! কিছুই বুঝতে পারছে না।
-রাজ মেয়েটার মাথার কাছে এসে বললো,’ আপু এখন কেমন আছেন?
– জ্বি ভালো। তবে আমি এখানে কিভাবে?
– আপনার ধাক্বা লেগেছিল আমার গাড়িতে। তারপর সেন্সলেস হয়ে গেলে হসপিটালে নিয়ে আসি।
– ওহ্। আচ্ছা আমি মোনালিসা। বাংলাদেশ থেকে এখানে পড়তে এসেছি।
– ওহ্ গুড! আমি রাজ। এখানেই ব্যবসা করি। আর এই আমার মেয়ে অনুত্রি।
– খুব কিউট তো।
– মম তুমি আমাকে চিনতে পারছো না?
– আশ্চর্য তুমি আমাকে মম ডাকছো কেন?
– বাবাই দেখ মম আমাকে চিনতে পারছে না? মম তুমি আমাকে চিনতে পারছো না কেন? আমি তোমার অনুত্রি। আল্লাহকে বলেছিলাম আমার মমকে যেন ফিরিয়ে দেয়। আল্লাহ তোমাকে ফিরিয়ে দিয়েছে। আমার কথা শুনেছে।
– মিঃ রাজ আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।
– মোনালিসা কিছু মনে না করলে আপনি আমাদের বাসায় চলেন। রাজ মোনালিসা আর অনুত্রিকে নিয়ে বাসায় ফিরে। বাসায় ঢুকেই মোনালিসা চমকে যায়। তার ছবি এ বাসায় কেন?
– কি হলো চমকে গেলেন? আমিও আপনাকে দেখে চমকে গিয়েছিলাম। কেননা যে আনিসাকে নিজ হাতে দাফন করেছি তাকে দেখতে পাবো কখনো ভাবিনি। অনুত্রির মা অনুত্রি যখন ছোট তখন কার একসিডেন্টে তার বাবাসহ মারা যায়
। আর অনুত্রি তার মায়ের ছবি বুকে নিয়ে কাঁদতো আল্লাহ যেন তার মাকে ফিরিয়ে দেয়। আর তাই আপনাকে দেখে ভাবছে আল্লাহ তার মমকে ফিরিয়ে দিয়েছে।
– ওহ্! শুনেছি ছোটবেলায় আমার মা আমাকে হসপিটাল থেকে চুরি করে এনেছিল। এক মহিলার টুইন বেবি হয়। মা ছিল নার্স। সেখান থেকে আমাকে নিয়ে এসে পড়ে।
– রাজের আর বুঝতে বাকি থাকে না মোনালিসা আনিসারই বোন।
– এদিকে অধরা রাজকে এক মুহূর্তের জন্যও ভুলতে পারছে না। প্রতিনিয়ত মৃত্যুর মত যন্ত্রণা তাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। রাইমার দিকেও তাকানো যায় না।
– যতই দিন পার হচ্ছে মোনালিসার সাথে অনুত্রির সখ্যতা গড়ে উঠছে। দু’জন দুজনকে ছাড়া একদমি চলে না এমন অবস্থা। অনুত্রি মোনালিসাকে মম ডাকে। মোনালিসাও অনুত্রিকে নিজের মেয়ের মতোই আদর যত্ন করে । দিনগুলো ভালোই কাটতেছিল। একদিন অনুত্রি মোনালিসা আর একসাথে বসে খাচ্ছে এমন সময় অনুত্রি বললো বাবাই মম তোমরা একসাথে থাকো না কেন?
তোমরা দুজন একসাথে থাকবা কেমন?
– অনুত্রির কথা শুনে রাজের মুখ থেকে পানি ছিটকে বের হয়। মেয়ে কি বলে এসব।
– কি হলো বাবাই? তুমি মমকে বিয়ে করে নাও।
– মোনালিসা খাবার ছেড়ে উঠে গেল যাওয়ার আগে রাজের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। পরের দিন অনুত্রিকে নিয়ে পার্কে বেড়াতে গেলে রাজ আর মোনালিসাকে এক সাথে দেখে অধরা চমকে যায়। আনিসা বেঁচে আছে?
– অধরার বুকটা ছ্যাঁত করে ওঠে। কিছু বুঝতে না পেয়ে রাজের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়!
– রাজ তুমি এতোবড় মিথ্যাবাদী? তুমি না বলেছিলে আনিসা মরে গেছে? এখন কি তাহলে আনিসা কবর থেকে উঠে আসলো? এই জন্যই তুমি আমাকে তাড়িয়ে দিয়েছো। ছি রাজ ছি। তুমি একটিবারো আমার কথা ভাবলে না? ভাবলে না আমাদের রাইমার কথা?
– রাজ ঠাস করে অধরার গালে চড় বসিয়ে দিয়ে বললো,’ লজ্জা করে না কিছু না জেনেই এসব বলা? এটা আনিসা না এটা মোনালিসা। নিজের মতো সবাইকে ভেবো না। আরেকটা কথা আমি আর মোনালিসা এ সপ্তাহেই বিয়ে করছি। আরো কিছু জানতে চাও?
– রাজ কি বলছো এসব? আমি কাকে নিয়ে বাঁচবো। প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও।
– রাজ অধরার সামনে মোনালিসার হাতটা ধরে গাড়িতে উঠে পড়ল। ড্রাইভারকে বললো গাড়ি স্টার্ট দিতে। গাড়ি চলছে আপন গতিতে। মোনালিসা রাজের দিকে বারবার তাকাচ্ছে আর মাথাটা নিচু করে ফেলছে।
– ক্ষানিক রাস্তা আসতেই রাজ মোনালিসাকে বললো,’ সরি মোনালিসা তখন তোমার সাথে বিয়ের কথা বলার জন্য। এ ছাড়া আমার কোন উপায় ছিল না। তুমি কিছু মনে করো না। আমি চাই আমার কলিজাতা আমাকে রেখে দূরে থাকুক। ভালো থাকুক।
– মোনালিসা আর কিছু বললো না।
– এদিকে অধরা বাসায় আসার পর বারবার রাজের কথাটা মনে পড়তে লাগলো। নিজের একটা ভুলের জন্য এতোবড় মাশুল দিতে হবে তাকে কোনদিন ভাবতেও পারেনি সে। রাজের দেওয়া পুতুলটা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল। ক্ষানিক পর রাইমা অধরাকে কাঁদতে দেখে বললো,” মম কাঁদছো কেন তুমি? মম কি হয়েছে তোমার?
– অধরা রাইমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল।
– মম তুমি কাঁদবে না। বলো কি হয়েছে? বাবাই তোমাকে বকা দিয়েছে? মম কালকে আমি যাবো বাবাই এর কাছে। আমার কথা বাবাই ঠিক শুনবে।
– পরের দিন রাইমাকে নিয়ে অধরা রাজের বাসায় যায়।
– মোনালিসা অনুত্রিকে নিয়ে স্কুলে গিয়েছে। রাজ অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে। অধরা রাজকে দেখেই দু’ পা ঝাপটে ধরে বললো,’ রাজ আমি তোমাকে ছাড়া সত্যি বাঁচবো না। ” নাও না সব অপরাধ ভুলে বুকে। আমার বুকটা কষ্টে ফেটে যাচ্ছে। জানো রাজ তোমার বুকে একটু ঠাঁয় পাবো বলে নিজের অট্রালিকা ছেড়ে ছিলাম। তোমার রক্ষীতা হয়েছিলাম। সে পোড়াদাগ গুলো এখনো আমার শরীরে রয়ে গেছে। তবুও তোমার পায়ের নিচেই পড়েছিলাম। কারণ আমি যে আমার কলিজাটাকে অনেক বেশি ভালোবাসতাম। ও আমার কলিজা একটু বুকে নাও। আমি সত্যি সত্যিই তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না। তুমি যে আমার রক্তকণিকার সাথে মিশে রয়েছো। আমাকে অনুত্রি আর রাইমার মা হয়ে বেঁচে থাকতে দাও। তুমি ভয় পেয়ো না অনুত্রিকে রাইমার মতো করেই বড় করবো। কি হলো কথা বলছো না কেন কলিজা?
রাজ নিজের চোখের পানি ধরে রাখতে পারছে না। পারছে না ভাঙতে আনিসাকে দেওয়া মৃত্যুর আগে করা সেই প্রমিজের কথা। চোখের পানিতে বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে মনে হয়। রাইমা রাজের হাতটা ধরে বলছে ,’ও বাবাই মম কাল সারা রাত কান্না করেছে। মমকে ছেড়ে যেয়ো না। তুমি আমাদের সাথে চলো বাবাই।
– রাজ অধরাকে পা থেকে ছাড়িয়ে রাইমার কপালে চুমু দিয়ে বললো,’ মারে আমরা চাইলেই সবকিছু করতে পারি না। কথাটা বলেই রাজ অফিসে চলে গেল।
– অফিসে বসে ফেসবুকে ক্রুল করছে এমন সময় একটা নিউজ দেখে চোখটা আকটে গেল। বিখ্যাত ব্যবসায়ী তিয়াস এইডসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন। সাথে তার সহধর্মিণী মিসেস ত্রিযামিনী চৌধুরী এইচআইভি পজেটিভ। তার অবস্থাও ভালো না।
– রাজ খবরটা দেখে মনে মনে শুধু বললো, ‘ সত্যি আল্লাহ মহান। যারা টাকার জন্য এতটা নিকৃষ্ট কাজ করেছিল। আজ তাদের টাকা কোন কাজে আসলো না।
– হঠাৎ তার ফোনটা ক্রিং ক্রি করে বেজে উঠলো,’ ফোনটা রিসিভ করতেও ওপাশ থেকে মেয়েলি কন্ঠে বললো,’ হসপিটাল থেকে বলছি। আপনি কি মিঃ রাজ?
– হ্যাঁ বলেন।
– আপনির ওয়াইফ একসিডেন্ট করেছে। ওয়েস্টান হসপিটালে আছে। অবস্থা আশঙ্কাজনক।
– চলবে””””