অবশেষে_তুমি_আমার
পর্বঃ৪৫( অন্তিম)
তাসনিম_রাইসা
– হঠাৎ তার ফোনটা ক্রিং ক্রি করে বেজে উঠলো,’ ফোনটা রিসিভ করতেও ওপাশ থেকে মেয়েলি কন্ঠে বললো,’ হসপিটাল থেকে বলছি। আপনি কি মিঃ রাজ?
– হ্যাঁ বলেন।
– আপনির ওয়াইফ একসিডেন্ট করেছে। ওয়েস্টান হসপিটালে আছে। অবস্থা আশঙ্কাজনক।
– কি বলছেন এসব? রাজ অরিত্রিকে নিয়ে হসপিটালে চলে যায়। অপারেসন থিয়েটারের বাহিরে রাইমা বসে কাঁদছে। রাজকে দেখেই রাইমা জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে বললো,’ বাবাই মমকে বাঁচাও। আমি মমকে ছাড়া বাঁচবো না। ডাক্তার অপারেসন থিয়েটার থেকে বের হতেই রাজ বললো,’ ডাক্তার আমার ওয়াইইফের কি অবস্থা?
– রোগীর এখনো জ্ঞান ফিরেনি। আগামী ১২ ঘন্টার মাঝে যদি জ্ঞান না ফিরে তাহলে হয়তো আর কখনো জ্ঞান ফিরবে না। কারণ মাথায় আঘাতটা গুরুতর।
– ডক্টর আমি কি আমার স্ত্রীর সাথে দেখা করতে পারি?
– নাহ্! ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেন। রোগীকে বিশেষ অবজারভেশনে রাখা হয়েছে। সেখান থেকে ফিরে আসার সুযোগ খুব কম। ঈশ্বরকে ডাকেন।
– কথাগুলো বলে ডাক্তার ফিলিপস চলে গেল। রাজ কি করবে বুঝতে পারছে না। বারবার অধরার কথা গুলো মনে পড়ছে। এখনো কানে বাজছে সে কথাগুলো, ‘রাজ আমি তোমাকে ছাড়া সত্যি বাঁচবো না। ” নাও না সব অপরাধ ভুলে বুকে। আমার বুকটা কষ্টে ফেটে যাচ্ছে। জানো রাজ তোমার বুকে একটু ঠাঁয় পাবো বলে নিজের অট্রালিকা ছেড়ে ছিলাম। তোমার রক্ষীতা হয়েছিলাম। সে পোড়াদাগ গুলো এখনো আমার শরীরে রয়ে গেছে। তবুও তোমার পায়ের নিচেই পড়েছিলাম। কারণ আমি যে আমার কলিজাটাকে অনেক বেশি ভালোবাসতাম। ও আমার কলিজা একটু বুকে নাও। আমি সত্যি সত্যিই তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না। তুমি যে আমার রক্তকণিকার সাথে মিশে রয়েছো। আমাকে অনুত্রি আর রাইমার মা হয়ে বেঁচে থাকতে দাও। ” কথাগুলো রাজকে আরো বেশি কষ্ট দিচ্ছে। রাজের ভেতরটা কষ্টে ফেঁটে যাচ্ছে। খুব করে দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে অধরাকে। অপরেশন থিয়েটারে জানালার দিয়ে ভেতরে তাকাতেই রাজের বুকটা ছ্যাঁত করে উঠলো। অধরার মুখে অক্সিজেন মাস্ক লাগানো। চাঁদের মতো জোছনা দেওয়া মুখটা অম্যাবসার মতো হয়ে আছে। মন চাচ্ছে অধরাকে গিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরি। রাজ আর পারছে না চোখের পানি ধরে রাখতে। মনে মনে আল্লাহ তায়ালাকে বারবার স্মরণ করছে। দেখতে দেখতে বারো ঘন্টা পার হয়ে গেল এখনো অধরার জ্ঞান ফিরছে না। রাজ আসরের নামায পড়ে, পরম করুণাময় আল্লাহ তায়ালার দরবারে সিজদায় পড়ে গিয়ে বলতে লাগল,’ হে পরম করুনাময় আল্লাহ। এ বিশ্বজাহানের অধিপতি!তুমি আমার স্ত্রীকে সুস্থ করে দাও। আর কত পরীক্ষা নিবে আমাদের। আমরা যে আর পারছি না। অবুঝ শিশুরে কি বুঝাবো গো আল্লাহ। ও আমার আল্লাহ তুমিই তো যাকে ইচ্ছা সুস্থ করতে পারো। যাকে ইচ্ছা অসুস্থ। আমার কলিজার টুকরাকে আমার বুকে ফিরিয়ে দেও না গো আল্লাহ। আমার যে আর মাথা গুজার কেউ নেই অধরা ছাড়া। রাজ এই বলে কাঁদতে কাঁদতে মোনাজাত শেষ করে অধরার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। অধরা চোখ খুলছে না। ডাক্তার শুধু কাঁধে হাত দিয়ে বললো,’ মিঃ রাজ আমরা আমাদের চেষ্টার সর্বোচ্চটা করেছি। কিন্তু পারিনি।
– কথাটা বলে ডাক্তার ফিলিপ চলে গেলো।
– রাজ অধরার হাতটা ধরে বলতে লাগলো! খুব ধীরে ধীরে, ‘ কলিজার টুকরা চোখ খুলো। আমি আর তোমাকে কষ্ট দিবো না। সবসময় আমার বুকে রাখবো। ও কলিজা। কলিজা বুকে আসবে না। দেখ তোমার রাইমা আর অরিত্রিও কাঁদছে।
– কি হলো তুমি চুপ করে থাকবে? কথা বলবে না আমার সাথে। প্লিজ কথা বলো। দেখ তোমার কলিজা কাঁদছে। আমি না তোমার কলিজা।
– রাজ অধরার বুকে মাথা রেখে কাঁদছে। রাজের চোখের পানিতে অধরার বুক ভিজে যাচ্ছে। রাজ ছোট্ট বাচ্চার মতো ফুপিয়ে কাঁদছে আর বলছে, ‘কলিজার টুকরা আর কতো অভিমান করে থাকবে। প্লিজ কথা বলো একটু তাকিয়ে দেখো। একটু জড়িয়ে নাও না আমায়। আমার যে খুব কষ্ট হচ্ছে কলিজা। ধমঃ বন্ধ হয়ে আসছে। রাজ অনবরত কেঁদেই যাচ্ছে। সাথে রাইমা আর অরিত্রিও কাঁদছে।
– হঠাৎ রাজ বুঝতে পারলো কে যেন তাকে জড়িয়ে ধরে বলছে,’ প্লিজ কলিজা আর কান্না করো না। তোমাকে ছেড়ে আমি কোথাও যাবো না। আমার পাগলটা যে আমাকে এতটা ভালোবাসে আমি ভাবতেও পারিনি। এখন বুক থেকে মাথা সরাও ডাক্তার হাসছে। রাজ অধরার বুক থেকে মাথা তুলতেই ডাক্তার ফিলিপস বললো,’ সরি মিঃ রাজ সামান্য মিথ্যা বলার জন্য। ঘন্টাখানেক আগে মিসেস অধরার জ্ঞান ফিরলে তিনিই আপনাকে যেসব বলছি সেসব বলতে বলে। তাই আমি উনার অনুরোধ অগ্রাহ্য করতে পারিনি। আর শুনেন সপ্তাহ খানেক পর পেশেন্টকে বাসায় নিতে পারবেন। আর হ্যাঁ উনার মাথার সাথে সাথে বাম পা আর হাতটা ভেঙে গেছে। আপাদত কয়েকমাস হুইল চেয়ারে কাটাতে হবে। তাই সবসময় আপনাকে উনার পাশে থাকতে হবে।
– আচ্ছা ধন্যবাদ ডক্টর।
– সপ্তাহখানেক পর অধরাকে হসপিটাল থেকে রিলিজ দিলে রাজ অধরাকে বাসায় নিয়ে আসে। হসপিটালে সবসময় ছায়ার মতো অধরার পাশে ছিল রাজ।
– বাসার আনার পর রাত্রে যখন রাজ কুলে করে অধরাকে বিছানায় শুইয়ে দেয় তখন অধরার চোখে স্পর্ষ্ট পানি দেখতে পায়।
– রাজ অধরার চোখের পানি মুছে দিয়ে আলতো করে কপালে ভালোবাসার স্পর্শ এঁকে দিয়ে বলে,’ খুব কষ্ট হচ্ছে তোমার? কাঁদছো কেন?
– অধরা বাম হাতে টান দিয়ে রাজকে বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়ে বলে। না কলিজার টুকরা এ কান্না যে কষ্টের কান্না নয় এ কান্না যে পরম ভালোবাসার। কতদিন পর তোমার বুকে ঘুমাবো ভাবতেই অবাক লাগছে।
– তাই বুঝি?
– হুম।
– আচ্ছা রাইমা আর অরিত্রি কোথায় গেল?
– দু’বোন শুয়ে পড়েছে। তুমি যখন অফিসে ছিলে দু’বোন আমার পাশেই ছিল।
– আচ্ছা তুমি খাবে না?
– না খাবো না। তোমার লিপিস্টিক খাবো।
– যাহ্ দুষ্ট মুখে কিছু আকটায় না।
– তাই বুঝি? কে দুষ্ট বুঝায় তো যাচ্ছে। বালিশ একটা কেন রুমে?
– অধরা লজ্জামাখা ভঙ্গিতে বললো,’ আমি তোমার বুকে ঘুমাবো। তাই বালিশ একটা।
– রাজ আর কিছু বললো না অধরার কপালে ভালোবাসার স্পর্শ এঁকে দিয়ে অধরাকে বুকে জড়িয়ে নিল। সারা রাত আর দু’জন ঘুমাতে পারলো না। রাজ সারারাত অধরাকে বুকে নিয়েই পার করে দিল।
– এদিকে দেখতে দেখতে প্রায় ছয়মাস চলে যায় অধরা এখন পুরোপুরি সুস্থ। খুনশুটি ভালোবাসায় দিনগুলো মধুর হয়ে উঠছে।
– একদিন রাজ অফিস থেকে এসে অধরাকে কিচেনে লুকিয়ে আচার খেতে দেখে খানিকটা বিস্মিত হয়ে গেল। পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে কানের কাছে মুখটি নিয়ে বললো,’ কি ব্যাপার লুকিয়ে লুকিয়ে আচার কেন খাচ্ছো?
-অধরা রাজের বুকে মুখ লুকিয়ে বললো,’ আমার বুঝি লজ্জা করে না?’
– তাই বুঝি এতো লজ্জা কেন করে?
– সারা রাত দুষ্টমি করে এখন ন্যাকা সাজছো! বুঝো না তুমি বাবা হতে যাচ্ছো! আর আমি মা। কথাটা বলেই অধরা দৌড়ে ড্রয়িংরুমের দিকে যেতে লাগলে রাজ অধরাকে টান দিয়ে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বললো,’ দৌড়ে পালাচ্ছো কোথায়? এই বুক থেকে কোথাও যে আর পালাতে পারবে না!
– আমি আর পালাতে চায় ও না মশায়।
– সমাপ্ত ‘