অবশেষে তুমি পর্ব-১৬

0
423

#অবশেষে_তুমি (পর্ব ১৬)
#Mohua_Afrin_Mim
·
·
·
ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে সোজা ফারিয়ার কাছে গিয়ে ফারিয়াকে বললাম

নিসাঃ ফারিয়া আমি বাসায় চলে যাচ্ছি।। তুই কি যাবি আমার সাথে!!

ফারিয়াঃ কি বলছিস এখনই চলে যাবি!! কি হয়েছে তোর!!

নিসাঃ না কিছু না।। তুই না গেলে থাক আমি চলে যাচ্ছি।।

ফারিয়াকে আর কিছু বলতে না দিয়ে চলে এলাম।।

অর্ণব ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে নিসাকে খুঁজছে কিন্তু পাচ্ছেনা।। নিসাকে না পেয়ে ফারিয়াকে দেখে বললো

অর্ণবঃ ফারিয়া নিসাকে কি দেখেছো??

ফারিয়াঃ হ্যা ভাইয়া।। ও তো মাত্রই চলে গেলো।। কি যেনো হয়েছে!! কিছু না বলেই চলে গেলো!! আপনি কি কিছু জানেন??

অর্ণবঃ না কিছু জানিনা।।

মেয়েটা চলে গেলো এভাবে!! নিসা তো আমাকে ভুল বুঝেই যাচ্ছে।। ও কি আমাকে বুঝবে না!! আজব মেয়েরে বাবা কি এমন বললাম যে এতো রিয়েক্ট করা লাগবে!! কি এমন অপরাধ করলাম ভালই তো বেসেছি তাই বলে এমন করবে!! কিন্তু আমিও নাছোড়বান্দা আমি তোমাকে আমার করেই ছাড়বো যেভাবেই হোক।।

এদিকে নিসা বাসায় এসে ওর মাকে কিছু না বলেই রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো।। নিসার মা তো নিসার এমন কাজে অনেক অবাক।। কেননা নিসা বাসায় এসে সবার আগে ওর মাকে জড়িয়ে ধরে কিন্তু আজ নিসা ওর মাকে কিছু না বলেই রুমে চলে গেলো।। নিসার মা ভাবছে হয়তো কিছু হয়েছে আর নয়তো মন খারাপ।। তাই নিসাকে আর ডাক দিলোনা কিছু বললোও না।।

রুমে ঢুকেই একটা লম্বা শাওয়ার নিলাম।। শাওয়ার নিয়ে রুমে এসে শুয়ে পরলাম।। শুয়ার সাথে সাথেই রাজ্যের ঘুম চলে এলো চোখে।।

কারো ফোনে ঘুম থেকে উঠলাম।। ফোনটা বেজেই চলছে।। তাই বিরক্তি নিয়ে দেখলাম কে ফোন দিয়েছে…….. দেখলাম অর্ণব ফোন দিয়েছে।। দেখেই ফোনটা কেটে দিলাম কিন্তু আবারো ফোন দিলে কেটে দিলাম।। কিন্তু ফোন দিয়েই যাচ্ছে।। এক সময় ফোনটা ধরে বললাম

নিসাঃ এই তোমার সমস্যা কি হে!! দেখছো না বার বার কেটে দিচ্ছি তাও ফোন করেই যাচ্ছো।। সমস্যাটা কোখায়!!

অর্ণবঃ………….

নিসাঃ এখন কথা বলছো না কেনো??

অর্ণবঃ নিসা তুমি আমার উপর রেগে আছো কেনো??

নিসাঃ রাগ করবো না কেনো!!

অর্ণবঃ নিসা প্লিজ বোঝার চেষ্টা করো আমি সত্যিই তোমাকে ভালোবাসি।। আমি তোমাকে কখনো কষ্ট দিতে চাই না।। তোমাকে খুশি দেখার জন্য আমি সব করতে রাজি।।

নিসাঃ আমি তোমার সাথে কোনো কথা বলতে চাই না।। আর ফোন দিবা না।।

কথাটা বলেই ফোনটা কেটে দিলাম।। অর্ণব ফোন দিয়েই যাচ্ছে।। তাই ওর নাম্বারটা ব্ল্যাক লিস্টে ফেলে দিলাম।। ভালো লাগছে না কিছুই।। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি রাত আটটা বেজে গেছে।। আম্মু আমাকে ডাকেনি কেনো এখনো!! রুম থেকে বের হয়ে আম্মুর কাছে গিয়ে বললাম

নিসাঃ আম্মু এতো রাত হয়ে গেছে আমাকে ডাকোনি কেনো??

আম্মুঃ ভাবলাম তোর শরীর খারাপ তাই আর ডাকিনি।।

নিসাঃ অহ্।।

রাতের খাবার খেয়ে রুমে এসে ভাবছি অর্ণব কি আসলেই আমাকে ভালোবাসে।। কেনো যেনো কোনো ছেলেকেই বিশ্বাস হয় না।। ছেলেটা অবশ্য মন্দ না।। এতো দিন হয়েছে ওর সাথে মিশছি ভালোই তো মনে হয়েছে………. কখনো খারাপ ব্যবহার করেনি, খারাপ কিছু করেনি, সবসময় খেয়াল রাখে আমার।। আর পছন্দ না হওয়ার মতো ছেলে ও না।। যে কেউ প্রথম দেখাতেই পছন্দ করে ফেলবে ওকে।। তবুও কেমন যেনো মনে হচ্ছে।। দেখি আর কতো দিন ঘুরতে পারে……….. একটু যাচাই বাছাই করে নেই তারপর চিন্তা করা যাবে।।

পরেরদিন আর কলেজে গেলাম না।। ভালো লাগছে না যেতে।। ফারিয়া ফোন দিয়েছিলো যাওয়ার জন্য কিন্তু মানা করে দিয়েছি।।
.
.
.
.
.
.
.

তিনদিন হলো কলেজে যাই না।। ফারিয়া অনেকবার ফোন দিয়ে বলেছে যেতে।। কিন্তু বলে দিয়েছি যে যাবো না।। ফারিয়া অনেক কিছুই জিজ্ঞাসা করেছে কেনো যাচ্ছি না কোনো সমস্যা আছে কিনা আমি বলেছি এমনি যাই না ভালো লাগে না তাই।।

এদিকে নিসা কলেজে আসছে না দেখে অর্ণবের অবস্থা খারাপ।। নিসা ওর নাম্বার ব্ল্যাক লিস্টে রেখে দিয়েছে তাই ফোন ও করতে পারছে না ওর কোনো খবরও পাচ্ছেনা।। অর্ণব প্রায় পাগল হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা।। ঠিক মতো খায় না ঘুমায় না নিজের যত্ন নেয় না নিসার জন্য।। কারন ও নিসাকে একদিনও না দেখে থাকতে পারেনা।। সেখানে তিনদিন হয়ে গেছে নিসাকে দেখে না ওর কোনো খোজ খবর পায় না।। ফারিয়াকে অনেক বার জিজ্ঞাসা করেছে নিসা কেনো কলেজে আসছে না ওর কোনো খোজ খবর আছে কিনা।। ফারিয়া বলেছে ও নিসাকে জিজ্ঞাসা করেছিলো কিন্তু নিসা কিছুই বলে না শুধু বলে এমনি ভালো লাগে না তাই আসেনা।।

আজকে ফারিয়া আমাদের বাসায় এসেছে আমাকে কলেজে নিয়ে যাওয়ার জন্য।। আজকে আর কলেজে না গিয়ে পারলাম না।। কারন ফারিয়া যেভাবে জোরাজোরি করলো তাতে আর কিছু হলো না যেতেই হলো।।

কলেজে গিয়ে দেখি অর্ণব দাড়িয়ে আছে।। কি অবস্থা করে রেখেছে নিজের।। চোখের নিচে দাগ পরে গেছে।। দেখেই বুঝা যাচ্ছে এই কয়দিনে ভালো করে ঘুমায়নি আর চোখ ফোলা দেখে বুঝা যাচ্ছে কান্না করেছে অনেক।। চুলগুলো উস্কো হয়ে আছে।। দেখে মনে হচ্ছে দেবদাস হয়ে গেছে কারো জন্য।। পাগল হয়ে গেলো নাকি!! এই অবস্থা করে রেখেছে কেনো নিজের!! আজব তো!!

নিসাকে আসতে দেখে অর্ণবের মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো।। নিসাকে দেখে ও অনেক খুশি হয়েছে।। নিসা যখন অর্ণবের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো অর্ণব আগ্রহের সাথে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই নিসা ওর পাশ কাটিয়ে চলে গেলো।। আর অর্ণব হা করে তাকিয়ে আছে।।

নিসা এখন প্রতিদিন কলেজে আসছে ঠিকই কিন্তু অর্ণবকে ইগনোর করে চলছে।। অর্ণবের সাথে কোনো কথা বলছেনা।। অর্ণব অনেকবার চেষ্টা করেছে কথা বলার কিন্তু নিসা কোনোমতেই কথা বলছে না।। নিসা কথা বলছে না দেখে ফারিয়া বললো

ফারিয়াঃ নিসা তুই অর্ণব ভাইয়ার সাথে কথা বলছিস না কেনো?? ভাইয়া তোর সাথে কথা বলতে এলে তুই এড়িয়ে চলে যাস।।

নিসাঃ আমি এই ব্যপারে কোনো কথা বলতে চাইনা।।

ফারিয়াঃ তুই কি জানিস তুই তিনদিন কলেজে আসিসনি তাই ভাইয়া তোর খবর আমার থেকে নিয়েছে।। আর তুই আসিসনি বলে ভাইয়া নিজের কি হাল করেছে তুই কি জানিস।। ভাইয়া আসলেই তোকে অনেক ভালোবাসে।। তুই কেনো ভাইয়াকে এইভাবে কষ্ট দিচ্ছিস!! ভাইয়া তো কোনো দিক দিয়েই খারাপ না তাহলে তুই কেনো রাজি হচ্ছিস না আমি বুঝলাম না!!

নিসাঃ আরো কিছুদিন ঘুরুক।। দেখি কতো ঘুরতে পারে।। তারপর না হয় কিছু করবো।।

নিসা একদিন ওর ক্লাসের ফ্রেন্ড আবিরের সাথে বসে গল্প করছিলো।। হঠাৎ করে ঠাসসসসসস করে উঠলো।। তাকিয়ে দেখি অর্ণব আবিরকে থাপ্পর মেরেছে।। আমি বসা থেকে উঠে দাড়ালাম।। আর অর্ণব আবিরের কলার ধরে বলে উঠলো

অর্ণবঃ আর কোনোদিন যদি নিসার আসেপাশে তোকে দেখেছি তাহলে তোর অবস্থা আরো খারাপ হবে।। আর এখন এখান থেকে চলে যা।।

আমার মাথায় আগুন ধরে গেলো।। আমি জিজ্ঞাসা করলাম

নিসাঃ এই আপনারর সমস্যা কি!! আপনি ওকে থাপ্পর মারলেন কেনো!! গুন্ডামি শুরু করেছেন নাকি!!

অর্ণবঃ আসলে তোমাকে ওর সাথে দেখে আমার রাগ উঠে গিয়েছিলো।। তাই রাগ কন্ট্রোল না করতে পেরে থাপ্পর দিয়েছি।।

নিসাঃ তাই বলে মারবেন!!

অর্ণবঃ…………….
·
·
·
চলবে………………………