অবশেষে তুমি পর্ব-১৯+২০

0
528

#অবশেষে তুমি
#লেখিকা-Nazia Shifa
#পর্ব -১৯
——————————
সিক্রেট রুমে কাব্যর মুখোমুখি বসে আছে ঈউশা।তার কাব্যর পাশে দাড়িয়ে আছে রিদ।

-তুমিই সেদিন নূরের ব্যাগ টা পেয়েছিলে তাই না

-জ্বি।কিন্তু ভাইয়া আমাকে এখানে কেন নিয়ে এসেছেন?

-প্রশ্ন করবো কিছু।সঠিক জবাব দিবে।না হলে,,,,তোমার ছোট বোন আছেনা একটা এবার এস.এস.সি ক্যান্ডিডেট যে

-ভাইয়া প্লিজ ওকে কিছু করবেন না।যা প্রশ্ন আছে করুন।

-Good you are smart enough.এখন কথা হচ্ছে তুমি ওই দিকে গিয়েছিলে কেন? আমার জানা মতে ওইদিকটাতে কেউ যায় না সচারাচর তাহলে তুমি কেন গিয়েছিলে?

-হ্যা ওইদিকে কেউ যায়না সচারাচর আমারও যাওয়ার কোনো দরকার ছিলো না।গিয়েছিলাম লিসা আপুর সাথে।লিসা আপু আমাদের সিনিয়র নূর আপুদের সাথেই পড়ে তবে অন্য ডিপার্টমেন্টের।উনি ই আমাকে নিয়ে গিয়েছিলেন।

-কেন?

-ওনার নাকি কি দরকার ছিলো,কেউ একজন দেখা করতে আসবে সেখানে।কয়েকবার জিজ্ঞেস করার পরও বলেননি কে আসবে শুধু বলছিলেন গেলেই দেখতে পাবে তাই আর জিজ্ঞেস করিনি।কিন্তু সেখানে যাওয়ার পর দেখলাম কেউ নেই। ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখলাম লিসা আপুও নেই। কয়েকবার ডাকার পরও সাড়া পাই নি। তাই চলে আসছিলাম আর তখনই দরজার সামনে নূর আপুর ব্যাগটা চোখে পড়ে কিন্তু তখন জানতাম না যে আপুকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না।ভার্সিটির মাঠে ভিড় দেখে সামনে এগিয়ে গেলাম একজনকে জিজ্ঞেস করলে বললো আপুর কথা।ভিড় ঠেলে সামনে গিয়ে দেখলাম তন্নী আপুকে।তারপর তো সব জানেনই। ভাইয়া আমি এতটুকুই জানি আর না এসবের মধ্যে আমার হাত আছে।আমার বোনকে কিছু করবেন না ভাইয়া প্লিজ।

-হুম

কাব্য চেয়ার থেকে উঠে রিদের উদ্দেশ্যে বললো-

-যেখান থেকে নিয়ে এসেছো সেখানে সেফলি দিয়ে আসো।আর ওর একাউন্টে টাকা দিয়ে দিও ওর আম্মুর চিকিৎসার জন্য।

-জ্বি স্যার।

রিদের সাথে কথা বলে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়লো কাব্য।অনেক বেশি দেরি হয়ে গেছে তারওপর নূর বলেছিলো তাড়াতাড়ি ফিরতে।

‘কি এক কপাল এই প্রথম বউ আদর করে তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে বলেছিলো আর আজকেই দেরি করে ফেলেছিস। জীবনেও ভালো হবি না আজ আর মেডিসিন পাওয়া লাগবেনা তোর। ‘
ড্রাইভ করতে করতে নিজেই নিজেকে বলছে কাব্য।

এদিকে কাব্যর অপেক্ষা করতে করতে নূর রেগে মেগে শেষ।রাগারই কথা সেই দুপুরে ফোন দিয়ে বলেছিলো একটু তাড়াতাড়ি বাসায় আসতে তখন তো ঠিকই বলেছিলো যে হ্যা আসবো।আসলো তো নাই ফোন দিয়ে ও বললো না। আবার ফোন ও তুলছেনা।এখন বাজে রাত আটটা।ভেবেছিলো তাড়াতাড়ি বাসায় আসলে পরিমাণের চেয়ে বেশি সেবা করে কাব্যকে পটিয়ে গ্রামে যাওয়ার কথা বলবে।এত সুন্দর করে কথাগুলো গুছিয়ে ছিলাম কিন্তু নাহ এত সুন্দর প্ল্যান টা আমার ভেস্তে গেলো।আজকে আর এক ঘন্টার আগে দরজা খুলবোনা বাইরে থাকুক তার শাস্তি এটা।জিজ্ঞেস করলেই এত্তগুলা এক্সকিউজ দিয়ে চুপ করিয়ে দিবে।

নূরের ভাবনার মাঝেই গাড়ীর আওয়াজ পেলো।এক প্রকার দৌড়েই ব্যালকনিতে গেলো।গেট দিয়ে কাব্যর গাড়ি ঢুকছে।গাড়ী থেকে বেড়িয়ে কাব্য সোজা ব্যালকনির দিকে তাকালো।কাব্যর চোখে চোখ পড়তেই নূর মুখ ভেঙিচিয়ে সেখান থেকে সরে আসলো।নূরের কান্ডে থতমত খেয়ে গেলো কাব্য।

কাব্য রুমে এসে দেখলো নূর ব্যালকনিতেই দাঁড়িয়ে আছে। কাব্য যেয়ে নূরকে পেছন থেকে জরিয়ে ধরলো।নূরকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে তার গালে আর কপালে চুমু খেলো।কিন্তু নূরের মধ্যে কোনো ভাবান্তর নেই।সে শক্ত হয়ে দাড়িয়ে আছে। দৃষ্টি তার ফ্লোরে নিবদ্ধ।নূরের কোনো প্রতিক্রিয়া না পেয়ে নূরের ঠোঁটের কিনারায় সময় নিয়ে চুমু খেলো কাব্য। এবারো কোনো রিয়েক্ট করলো না নূর।তবে ভেতরে ভেতরে তো সে জমে বরফ হয়ে গেছে একেবারে।প্রশান্তির ঢেউ উঠলো মব গহীনে।কিন্তু বাইরে বিন্দুমাত্র প্রকাশ করলো না সেই অনুভুতি।এবার আর কিছু না ভেবে এক ঝটকায় নূরকে কোলে নিয়ে রুমের দিকে রওনা হলো কাব্য। আর বললো-

-বুঝেছি তোমার বাসর করার ইচ্ছা জেগেছে। এতগুলা চুম্মা চাট্টিহ দেয়ার পরও যেহেতু কিছু বললে না তাহলে শুভ কাজটা সেরেই ফেলি।

নূরকে বেডে শুয়িয়ে দিয়ে শার্টের ওপরের বোতামগুলো খুলতে খুলতে বললো-

-নূর আমি কিন্তু সত্যি বলছি।

নূর শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে।নূরের এমন অদ্ভুত ব্যবহারে ভড়কে গেলো কাব্য।

-আচ্ছা।(স্বাভাবিক স্বরে বললো)

হতাশ হলো কাব্য। হাত থেমে গেলো তার।ধপ করে বসে পড়লো নূরের পাশে।নূর একটু সরে গিয়ে জায়গা করে দিলো কাব্যকে বসতে।লম্বা শ্বাস ফেলে নূরের দিকে ঘুরলো কাব্য।

নূর তাকে উদ্দেশ্য করে বললো-

-কেউ একজন কি যেন করবে বলছিলো,,তার কাজ কি শেষ নাকি শুধু বলতেই পারে।

-কি হয়েছে এমন অদ্ভুত বিহেভ করছো কেন

-জানেন না কি হয়েছে

মিনমিন করে কাব্য বললো-

-হ্যা বিশ্বাস করো আমি এসেই পড়েছিলাম তখনই তোমার ভাই এসে বললো ইম্পরট্যান্ট মিটিং আছে তাই…

-জানিনা আমি সরুন।আগামী দুইদিন আপনার সাথে কথা বলবোনা,যখন ইচ্ছা বাসায় আসবেন কিছু বলবোনা।

-আমি শুধু অবাক হচ্ছি নূর।তোমার সাহস দিনকেদিন বাড়ছেই।আমাকে শাস্তি দিবে তুমি।

-আপনার কি হ্যা।আমার জামাই যা খুশি করবো।আজকে এই মুহূর্ত থেকে আপনার সাথে কথা বলবো না।Time start now.তবে,,

-তবে কি?

-আমার একটা শর্ত আছে যদি রাজি থাকেন।

-তোমার আবার শর্ত বাচ্চাদের মতো আবদার করা ছাড়া আর কি পারো।যাই হোক বলো।

-😒

-বলো।

-আ,,আসলে,,

-তোতলাচ্ছো কেন আজিব।কাহিনি কি বলোতো

-কোনো কাহিনি নেই। শুনুন না

-কান খোলা ই আছে বলো।

-মামনি বলছিলো আপনার দাদু বাসা থেকে ফোন দিয়েছে। দাদি আপনার বউ মানে আমাকে দেখতে চায়।তাই আমাকে নিয়ে গ্রামে যেতে বলেছে।

এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে দম নিলো নূর।কাব্যর দিকে তাকাতেই দেখলো সে তীক্ষ্ণ নজরে তাকিয়ে আছে তার দিকে।শুকনো ঢোক গিললো নূর।

-তুমি যেটা ভাবছো তেমন কিছুই হবেনা।এখন কোথাও যাওয়া যাবেনা

-প্লিজ না করিয়েন না।এক সপ্তাহের ব্যাপার ই তো।তন্নী আর আমিতো সেই কবে প্ল্যান করেছিলাম পরীক্ষা শেষ হলে সবাই মিলে ঘুরতে যাবো কিন্তু আমার জন্য তন্নীরও যাওয়া হলো না।এখন যেহেতু সুযোত হয়েছে তাহলে সমস্যা কি।বিয়েটাও কেমন পরিস্থিতিতে হলো রিসেপশনও করতে দেন নি এখন এখানেও যেতে দিবেন না।কেন?কি সমস্যা আমি আপনার বউ এটা জানাতে চান না নাকি(মুখ ছোট করে মন খারাপ করে বললো)

নূরের মুখটা
দু’ই হাতের আজলে নিয়ে কাব্য বললো-

-মোটেও এমন না নূর।দুনিয়া জানুক আর না জানুক তুমি আমার অর্ধাঙ্গিনী এটা আমি জানি আর মানিও।তাই কে কি জানলো আর না জানলো সেটা দিয়ে আমার কিছু যায় আসেনা।কেউ জানলেও তুমি আমার আর না জানলেও তুমি আমারই থাকবে।তাই এমনটা মনে করবে না কখনো।সময় হোক সবাইকে জানাবো।

-তার মানে যেতে দিবেননা?কিছু হবে না টেনশন করিয়েন না আপনি তো আছেনই।আপনি সামলে নিবেন সব।প্লিজ।

এমন ভাবে বললে কি আর সেই আবদার ফেলা যায় ? যায় না।কাব্যও পারলো না রাজি হয়ে গেলো।নূরতো সেই খুশি।এতই খুশি যে তার বহিঃপ্রকাশ করতে যেয়ে নিজ থেকেই কাব্যকে জড়িয়ে ধরলো।কাব্য তো থ হয়ে গেলো।মেয়েটার আচরণ আজকাল এমনই হুটহাট জড়িয়ে ধরা,কাব্য ঘুমিয়ে থাকলে টুপ করে তিন চারটা চুমু খেয়ে ফেলা।সে তো জানে কাব্য ঘুমিয়ে আছে কিন্তু নাহ কাব্যতো ঘুমানোর ভান ধরে নিজের অর্ধাঙ্গিনীর স্পর্শ গুলো অনুভব করে।নিজের মানুষটার আদর লুকিয়ে পাওয়ার মধ্যেও আলাদা প্রশান্তি আছে।

-আমার প্রেম প্রেম পাচ্ছে নূর ছাড়ো।নাহলে সত্যি সত্যি ই হয়ে যাবে কিছু।

কাব্যর কথা কানে পৌছাতেই লজ্জায় মুখখানি লাল হয়ে গেলো। তবুও ছাড়লোনা কাব্যকে।লজ্জা মিশ্রিত কণ্ঠে বললো -আমি জানি আমার অনুমতি ছাড়া আপনি এমন কিছুই করবেন না।বিশ্বাস আছে আমার।

শব্দহীন হাসলো কাব্য।এটাইতো চেয়েছিলো সে।তার প্রিয় মানুষটার বিশ্বাস অর্জন আর পেরেছেও সে।

কাব্যর ভাবনার মাঝেই হুট করে কাব্যকে ছেড়ে দিলো নূর।তারপর বললো-

-তন্নীকে খবরটা দিতে হবে।আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন খাবার দিচ্ছি আমি।

একপ্রকার দৌড়ে ই রুম থেকে বেরিয়ে গেলো নূর। নূরের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললো নূর।
.
.
‘শুনলাম কাব্য আর তার ফ্যামিলি নাকি চট্টগ্রাম যাচ্ছে।

-শিওর?

-জ্বি কাব্য স্যারের বোন থেকে খবর পেয়েছি।একদম সঠিক

সামনের লোকটার চোঙ রাঙানো দেখে আবার বললো-

-মানে কাব্যর বোন থেকে খবর পেয়েছি।সরি।

-গুড যাও।তোমাকে কিছু করতে হবে না যা করার ও করবে আমি শুধু দেখবো কাব্যর আহাজারি।
পৈশাচিক হাসির ঝংকার উঠলো রুম জুড়ে।

#চলবে

#অবশেষে তুমি
#লেখিকা_Nazia Shifa
#পর্ব-২০
——————-
সকাল সাতটা।আয়নার সামনে দাড়িয়ে রেডি হচ্ছে নূর।পরনে তার বেগুনি আর সবুজ রঙ মিশ্রিত শাড়ি।মিসেস রেহানা ই কালকে দিয়েছিলো তাকে।বলেছিলো-

-নূর এটা আমার শাড়ী।আমার শাশুড়ী মানে কাব্যর দাদী বিয়ের প্রথম দিন দিয়েছিলেন আমাকে।তার শাশুড়ী আবার দিয়েছিলেন তাকে।এটা তাদের নিয়ম।আর সেই নিয়ম অনুযায়ী এখন আমার দায়িত্ব এটা আমার ছেলের বউকে দেয়া।এখন থেকে এটা তোর।যত্নে রাখবি।আর নিয়ে যাবি এটা,প্রথম দিন পড়বি।কালকেই পরতে বলতাম কিন্তু কালকে তো জার্নি করে যেতে হবে সামলাতে পারবি না।

-সমস্যা নেই মামনি আমি পারবো।

-যেই গরম আর রাস্তার যে অবস্থা দরকার নেই।

-কিছু হবে না মামনি তুমি টেনশন নিয়োনা আর আমি এমনিতেও শাড়ী পড়ার চিন্তা ভাবনা ই করছিলাম।

-ঠিক আছে পড়িস।
.
ডানকানে ঝুমকো টা পড়তে পড়তে বেডের দিকে এগিয়ে গেলো নূর।উদ্দেশ্য কাব্য কে ঘুম থেকে উঠানো।সে কখন থেকে ডাকাডাকি করছে কিন্তু তার ওঠার খবর ই নেই।কাব্যর দিকে ঝুঁকে তার বাম বাহুতে আলতো ধাক্কা দিয়ে ডাকলো নূর-

-শুনছেন?উঠুন দেখুন সাতটার বেশি বাজে।লেট হয়ে যাবে।উঠুন না

কাব্য ওঠা তো দূরে থাক ডাকের সাড়া ও দিলো না।উল্টো নূরের হাত জড়িয়ে ধরে আর একটু আরাম করে শুয়ে রইলো।হুট করে হাতে টান পড়ায় দাঁড়ানো থেকে বসে পড়লো নূর।সে পড়লো অারেক মুশকিলে।এবার নিজেকে প্রস্তুত করলো নূর।তার কানের সামনে যেয়ে জোরে চিল্লিয়ে বললো-

-কাব্য উঠুনননন

ধরফর করে উঠে বসলো কাব্য।ইতিমধ্যে চোখ থেকে ঘুম উবে গেছে তার।নূরকে কিছু বলতে তার দিকে তাকাতেই থমকে গেলো সে।নিজের অজান্তেই বলে ফেললো –

-সুন্দর,,

কাব্যর মুখ থেকে নিঃসৃত এই ছোট্ট একটা শব্দতেই রাজ্যের লজ্জা এসে ভর করলো নূরের চেহারায়।হলদেটে মুখশ্রীটায় লাল আভা ধারন করেছে লজ্জায়। নূরের দিকে এক পলক তাকিয়ে বেড থেকে উঠে দাড়ালো কাব্য।নূরের সামনে যেয়ে তার মুখটা দুই হাতের মাঝখানে নিয়ে কপালে সময় নিয়ে উষ্ণ স্পর্শ দিল।ডান হাতের বুড়ো আঙুল গালে বুলাতে বুলাতে বললো –

-একরাশ মায়ায় মোড়ানো টুকটুকে বউ আমার।

নূর কাব্যর দিকে তাকিয়ে ঠোঁট উল্টে বললো-

-সোনায় মোড়ানো হয় ওটা।

-উহুম,,মায়ায় মোড়ানো।তোমার মুখে মায়া টা সবসময় বিরাজমান তাই মায়ায় মোড়ানোই বলবো

-হ্যা বুঝলাম এখন যান সময় নষ্ট করিয়েন না।সব বের করে রেখেছি নিয়ে দৌড় দেন ওয়াশরুমে আর উদ্ধার করুন আমায়।ক’টা বাজতে চললো সে খেয়াল আছে।

কাব্য মুখ বাঁকিয়ে বেড থেকে তোয়ালে আর জামাকাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।
.
..
টানা ৬ঘন্টা জার্নি শেষে চট্টগ্রাম পৌছালো সবাই।তন্নী আর নূর এত করে বলার পরও কাব্যকে বাস দিয়ে আসার জন্য রাজি করাতে পারেনি।তন্নী তো কাঁদো কাঁদো ভাব করে বলেছিলো-

-বাস দিয়ে না গেলে আমি যাবোনা।তার কথার পৃষ্ঠে কাব্যর সোজাসাপ্টা জবাব-

-না গেলে সমস্যা নেই।একজন কম হলে একটা ঝামেলা ই কমলো।তোকে জোর করবেনা কেউ।

কাব্যর কথা শুনে বোকা বনে গিয়েছিলো তন্নী।তারপর আর কিছু বলার মতো ছিলোনা তার।কাব্যর বাবা,মিসেস রেহানা আর তন্নী এক গাড়িতে এসেছেন।তাদের সাথে রিদ এসেছে।রিদকে কাব্য ই নিয়ে এসেছে।কাব্য আর নূর এসেছে কাব্যর গাড়িতে।অর্ধেক রাস্তা ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে ই এসেছে নূর।ঘুমন্ত নূরকে সযত্নে নিজের এক হাতে জড়িয়ে রেখেছে কাব্য যাতে তার প্রেয়সীর তন্দ্রায় বিঘ্ন না ঘটে।

-কি পরিমান ট্রাফিক ছিলো দেখেছো।দুইটা তো একেবারে পাগল হয়ে যাচ্ছিলে বাস দিয়ে আসার জন্য।নিজেদের গাড়িতেই এত প্যারা নিয়ে পৌছালাম আবার বাস।অবশ্য তুমি বুঝবে কিভাবে সারা রাস্তা তো ঘুমিয়ে ই ছিলে উল্টো আমার কাধটার বারোটা বাজিয়ে দিয়েছো।

গাড়ি থামিয়ে সিটবেল্ট খুলতে খুলতে বললো কাব্য। নূর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো তার দিকে।এমনিতেই তন্দ্রা ভাব কাটেনি পুরোপুরি তার ওপর কাব্যর খোঁচা মা-রা কথা।তেতে উঠলো নূর।আঙুল উঁচিয়ে বললো-

-এই আপনার সমস্যা কি হ্যা খোঁচা মারেন কেন কথায় কথায়।কে বলসিলো আপনাকে আমাকে জড়িয়ে ধরে রাখতে রাখসেন তো রাখসেন এখন আবার সময় টিভির রিপোর্টারদের মতো নিউস দিতেসেন।যত্তসব।

নূরের এমন আচরণ এই মূহুর্তে ধারনার বাইরে ছিলো।তারওপর তার কথা বলার ধরন তো একেবারেই…
কাব্য আশ্চর্যজনিত চেহারা নিয়ে জিজ্ঞেস করলো-

-মিস-ভাবনা কুমারী তোমার ভাষা কোন অঞ্চলের ভাষায় কনভার্ট হলো হঠাৎ বুঝলামনা।

নূরের খেয়াল হলো একটু আগে সে কি বলেছে।ইনোসেন্ট ভাব নিয়ে বললো-

-ক,,কই কোন ভাষায় কনভার্ট হবে আবার ঠিক ই তো আছে।আপনার কাধ ব্যথা করছে বেশি?

-আর ব্যথা যার জন্য করলাম চুরি সে ই বলে চোর এই দুঃখ কই রাখি।

নূরের খারাপ লাগলো একটু কত কিছু বলে ফেলেছে সে।অথচ তার জন্য বেচারার কষ্ট হয়েছে।নূর কাব্যের হাত জরিয়ে ধরলো তার বুকের সাথে লেপ্টে ঠোঁট উল্টিয়ে বললো-

-সলিইই,, আসলে ঘুম থেকে জাগার ৫-১০ মিনিট পর্যন্ত মাথা ঠিক থাকেনা।তখন কারো সাথে কথা বললেই উলটা পাল্টা বকি।এখনও সেটাই হয়েছে।সলিইই।

নূরের হাতের ওপর হাত রেখে কাব্য বললো-

-ইট’স ওকে।এত সরি বলছো কেন?আমি ই তো।আর একটু আধটু বকা মাঝেমধ্যে খেতে হয়।It’s good for health.

কাব্যর কথা শুনে হাসলো নূর।কাব্য ও হেসে ফেললো।তখনই গাড়ির গ্লাসে টোকা পড়লো।নূর তড়িঘড়ি করে সরে আসলো কাব্যর কাছ থেকে।গ্লাসের ওপাশে তন্নী দাড়িয়ে। কাব্য গ্লাস নামাতেই তন্নী বললো-

-কি হলো তোমরা কি আজকে গাড়িতে থাকারই প্ল্যান করেছো নাকি?করলে অবশ্য সমস্যা নেই ভালোই হবে।দুজন না গেলে দুই টা ঝামেলা ই কমলো।তাই না কি বলো ভাইয়া?

-হ্যা আর আমি ভাবছি তোকে চড়িয়ে অজ্ঞান করে গাড়িতে লক করে রেখে যাবো।যাতে একটা আপদ কমে।

-ভাইয়া,,যাহ কথা বলবি না আমার সাথে।এটুকু বলেই চলে গেলো তন্নী।
তন্নীর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে শব্দ করে হাসলো কাব্য।রাগাতে ভাল্লাগে তার আদরের পিচ্চুটাকে।যদিও পিচ্চু নেই এখন তবে সে পিচ্চু ই তার কাছে।

দোতলা বাড়িটার মেইন গেট খোলা।ভেতরে ঢুকেগাড়ি গ্যারাজে রেখে বেড়িয়ে এলো কাব্য সাথে নূর ও।বাড়ির সদর দরজার সামনে দাড়ীয়ে আছে পুরো পরিবার।কাব্যর দাদি অসুস্থ হওয়ায় রুমেই ছিলো।কাব্যর বাবারা দুই ভাই আর এক বোন।কাব্যর বাবা শহরে ব্যবসা সামলানোর জন্য চলে যান আর তার চাচা আফনান হোসেন এখানকার ব্যবসা দেখা শোনা করেন।কাব্যর বাবাও আসেন মাঝেমধ্যে ই।আফনান হোসেনের দুই মেয়ে-ঈশা আর তিশা।আফজাল আর আফনান হোসেনের একমাত্র বোন মিসেস নিয়তি।তার স্বামী মারা গেছে প্রায় তিন বছর হতে চললো।এক ছেলে আর মেয়েকে ঘিরেই তার সব কিছু।স্বামী মারা যাবার পর আর বোনকে একা থাকতে দেননি দুই ভাই।এখানে নিয়ে এসেছেন।

সবাই সবার সাথে কুশল বিনিময় করতে করতে ভেতরে প্রবেশ করলো।

ড্রয়িং রুমে সোফায় বসে কথা বলছে সবাই।বড়দের থেকে একটু দূরে নূর,তন্নী,ঈশা আর তিশা একসাথে একপাশে বসেছে।কাব্য আর রিদ বাইরে। কি জানি নিয়ে কথা বলছিলো।অফিসেরই হবে হয়তো এছাড়া আর কি কাজ।এখানে এসেও শান্তি নেই।যা-ই হোক ঈশা আর তিশার নূরের সাথে পুরো ভাব হয়ে গেছে।তাদের যে প্রথম আলাপন বা দেখা তেমন না।তারা তো পূর্ব পরিচিত।ছোট বেলায় যেহেতু নূর মিসেস রেহেনার কাছেই বেশি থাকতো সে ই সুবাদে কাব্যর দাদু বাড়ির মানুষদের সাথে মোটামুটি ভালোই পরিচয় আছে। তবে তখন আর এখনের মধ্যে যে পার্থক্য আছে।কিন্তু গত চার পাঁচ বছরে দেখা হয়নি তাদের।ঈশার থেকে তিশা মাত্র এক মিনিটের ছোট। জমজ ওরা তবে চেহারা যে হুবহু এক তেমন না।সহজেই চেনা যায় কোনটা কে।কথার মাঝে তিশা নূরকে বললো-

-নূরিপি তুমি আপি থেকে ভাবি তে কনভার্ট হয়ে গেলে। ভালোই হয়েছে এত্ত কিউট একটা ভাবি ই তো চাই আমাদের।

জবাবে কিছু বললো না নূর স্বল্প পরিসরে হাসলো শুধু।ঈশা বললো-

-হ্যা তুমি অনেক কিউট ভাবিআপু।আমি আর তিশা তো এত খুশি যে ঢাকা তেই চলে যেতাম তোমার সাথে দেখা করতে।কিন্তু যাওয়া হয় নি।তবে এখন ভালো ই হয়েছে তুমি এসেছো

নূর মুচকি হাসলো।এদিকে তন্নী গাল ফুলিয়ে বললো-

-সব এখন নূরের জন্য আর আমি কিছু না তাই না

তন্নীর কথা শুনে তিনজনই জরিয়ে ধরলো তাকে।হাসলো তন্নী।

তখনই মিসেস রাহেলা আসলেন তাদের সামনে।এসে বললেন-

-তন্নী, নূর মা যাও তো ফ্রেশ হয়ে আসো তোমরা আমি খাবার দিচ্ছি টেবিলে।একটার বেশি বেজে গিয়েছে।তিশা নূরকে রুম দেখিয়ে দেয়।তন্নী তুই ঈশার সাথে যা।

-জ্বি আন্টি।

-আন্টি কি রে।ছোট আম্মু বলবি।ঠিক আছে?

-জ্বি ছোট আম্মু।

মৃদু হেসে বললেন –
-হ্যা এখন ঠিক আছে।

নূর তিশার সঙ্গে উপরে চলে আসলো।দোতলার ডান পাশের রুমটায় নিয়ে আসলো তিশা।

-এটা তোমাদের রুম। সবকিছু আছে রুমে তবুও কিছু লাগলে আমাকে ডেকো।তুমি ফ্রেশ হও আমি যাই।

-ঠিক আছে।
.
.
ফ্রেশ হয়ে একসাথে নিচে আসলো কাব্য আর নূর। নিচে আসতেই মিসেস রেহানা বললেন-

-নূর আয় তাড়াতাড়ি আম্মার সাথে দেখা করে নেয়।

-ঠিক আছে।

কাব্যর দাদি বিছানায় বসে তবজি পড়ছিলেন। তখনই রুমে প্রবেশ করলো নূর, কাব্য আর মিসেস রেহেনা।

-আসসালামু আলাইকুম দাদি।

-ওয়া আলাইকুমুস সালাম।কেমন আছে আমার নাতনিটা?ওহ এখন তো সাথে নাত বউ ও।

-আলহামদুলিল্লাহ,, আপনি কেমন আছেন?

-আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।নূরের থুতনিতে হাত রেখে বললেন-মাশা আল্লাহ তোকে তো অনেক সুন্দর লাগছে এই শাড়ীটায়।একদম পরী।তারপর কাব্যকে উদ্দেশ্য করে মন খারাপ করার ভান করে বললো –

-এই বুড়ি মানুষটার কথা তো তোদের মনে পড়েনা।

-কি বলো মনে পড়বে না আবার তুমি হলে আমার বড় বউ।তোমাকে ভুলি কিভাবে বলো।

-এখন কি আর এই বুড়ি বউয়ের দাম আছে এখন তো এই পরী বউকে নিয়ে ই থাকবি।(নূরের থুতনিতে হাত দিয়ে)।কয়দিন পর শুনব পুচকু কি পুচকি আসছে। তখন আমার কি হবে?

দাদির কথায় চোখ বড় বড় হয়ে গেলো নূরের।এদিকে কাব্য আর দাদি দুজনেই কথা বলছে আর হেসে কুটিকুটি হওয়ার অবস্থা। নূরতো পারলে দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়।মিসেস রেহানা হয়তো বুঝতে পেরেছেন তাই বললেন –

-নূরকে নিয়ে যাচ্ছি,,কাব্য খেতে আয়।
.
.
.
মাগরিবের আজানের মধুর ধ্বনি কানে আসতেই নড়েচড়ে উঠলো নূর।উঠে বসলো সে।মাথা ব্যথার কারণে সেই যে দুপুরে খেয়ে ঘুমিয়েছে এখন উঠলো।তাড়াতাড়ি করে উঠে ওয়াশরুমে যেয়ে ওযু করে নানায পড়ে নিলো সে।নামায শেষ হতেই তিশা রুমে আসলো।

-ঘুম ভেঙেছে তাহলে নুরিপি।

-হ্যা,,আমাকে ডেকে দিবেনা

-আমি ডাকতে চেয়েছিলাম আম্মু নিষেধ করেছিলো তাই।এখন চলো চলো নিচে চলো।

-হ্যা চলো।

নিচে যেতেই মিসেস রেহানা আর রাহেলা একসাথে প্রশ্ন করলেন-

-মাথা ব্যথা কমেছে?

নূর মুচকি হেসে জবাব দিলো –

-হ্যা কমে গেছে।

মিসেস রাহেলা বললেন-

-আচ্ছা বসো আমি চা করে দিচ্ছি।

-আমি করি?আদুরে কণ্ঠে ছোট্ট আবেদন করলো নূর।

মৃদু হেসে বললো-

-ঠিক আছে করো।

সবাইকে চা দিয়ে তন্নী,নূর,তিশা আর ঈশা ছাদে এসেছে।কাব্য ও আছে আর তার সাথে রিদ আর ইরাম ভাইয়া।ইরাম কাব্যর ফুপাতো ভাই।অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়ছে।ছাদে গোল হয় বসে আড্ডা দিচ্ছে সবাই।সবাই একসাথে থাকলে-ও কথা হচ্ছে খুবই কম।সবাই চুপচাপ।কারণ হচ্ছে কাব্য।সবাই জানে সে বেশি কথা পছন্দ করে না।তবে সবাইকে অবাক করে দিয়ে কাব্য জিজ্ঞেস করলো-

-সবাই এতো চুপচাপ কেন?কি হয়েছে?

কাব্যর প্রশ্ন শুনে একজন আরেকজনের মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো।তারপর মাথা নাড়িয়ে বলে বুঝালো কিছুনা।এবার একটু সাহস পেলো সবাই তাই কথা বলা শুরু করলো।কথা বলার ফাকে নূর কয়েকবার ই খেয়াল করেছে যে তন্নী আড়চোখে রিদকে দেখছিলো।শুধু তন্নী ই না ঈশাও দেখছিলো আর লাজুক হাসছিলো। ঘন্টা খানেক ছাদে থেকে নিচে চলে আসলো।নিচে নামার সময় নূর ঈশাকে জিজ্ঞেস করলো-

-কি নন্দিনী কাহিনি কি? আমার ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে হাসছিলে যে

-ক,,কই ভাবিআপু কি বলো আমি তার দিকে তাকাতে যাবো কেন

-দেখলাম তো আমি।আচ্ছা বাই এনি চান্স তুমি রিদ ভাইয়ার ওপর ক্রাশিত নয় তো।

ঈশা লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে বললো-হ্যা।

ঈশার মুখের দিকে তাকিয়ে হেসে দিলো নূর।
.
.
.
বারান্দায় বসে আছে নূর।সময় এখন রাত এগারোটা।আজকে সময় যেন দৌড়ে চলে যাচ্ছে। পলক ফেলতে না ফেলতেই ঘড়ির কাটায় ঘন্টা পার হয়ে গিয়েছে।তখনকার কথাটা মনে পড়লো তার।তন্নীকে জিজ্ঞেস করতে হবে।কাব্য রুমে এসে দেখলো নূর বারান্দায় বসে আছে।সে সোজা সেখানেই গেলো।যেয়েই পেছন থেকে জরিয়ে ধরলো।তার কাঁধে থুতনি রেখে নিশ্চুপ দাড়িয়ে রইলো।

কাব্যর খোচাখোচা দাঁড়ির স্পর্শে কেঁপে উঠলো নূর।কাব্যর এক হাত নূরের পেটের ওপর আর এক হাত তার গ্রিলে রাখা হাতের ওপর।নূরের হাতটা সামনে এনে অধর ছুয়ে দিলো কাব্য।তারপর নিজের দিকে ঘুরিয়ে বললো-

-দাদি কি যেন বলছিলো ক’দিন পরে পুচকু পুচকি আসবে।প্রসেসিং কি শুরু করে দিবো তাদের আনার?কি বলো?আমার সমস্যা নেই আমিতো চাই আমার ছোট খাটো একটা ফুটবল টিম থাকুক।(চোখ মেরে)
লজ্জায় রাঙা মুখখানি কাব্যর বুকে লুকালো।কাব্য ও পরম যত্নে আগলে নিলো তাকে।আবারও বললো-জড়িয়ে ধরাকে কি আমি হ্যা ধরে নিবো?

লজ্জায় খামচে ধরলো কাব্যর গায়ে জড়ানো শার্ট টা।সে তো চায় কাব্য হ্যা ধরে নেক।কিন্তু মুখের ওপর কি বলা যায় উহুম তার মধ্যে যে রাজ্যের লজ্জার বাস যা ঠেলে দূরে সরিয়ে সে বলতে পারেনা হ্যা।কিছক্ষণ পর নূরকে ছেড়ে দিলো কাব্য। বললো-

-চলো,,ঘুমাবে।

মন খারাপ হলো নূরের।মুখ লটকিয়ে কাব্যর সাথে রুমে চলে গেলো।
________________________________
সকাল নয়টা।ড্রয়িং রুমে বসে কথা বলছে কাব্যর বাবা আর ছোট বাবা।মিসেস রেহানা আর রাহেলা কিচেনে নাস্তা বানাচ্ছে। তাদের সাথে কাজে টুকটাক হাত চালাচ্ছে নূর।তন্নী,ঈশা আর তিশা তিনটাই পড়ে ঘুমাচ্ছে।ইরাম ভার্সিটিতে।সবে মাত্র ফ্রেশ হয়ে নিচে এসেছে কাব্য।আঁড়চোখে নূরকে একবার পড়খ করে নিলো কাব্য।মেরুন রঙের শাড়ী পড়েছে আজকে।তার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ই নিচে নামলো কাব্য।হুট করেই ঘটে গেলো অনাকাঙ্ক্ষিত এক ঘটনা।আচমকা এমনটা হওয়াতে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে গেলো সবাই।

#চলবে