অবশেষে তুমি পর্ব-১৭+১৮

0
456

#অবশেষে তুমি
#লেখিকা-Nazia Shifa
#পর্ব -১৭
——————–
একটু বাদেই নূর কাব্যের দিকে ঘুরলো তারপর বললো-
-শুনছেন

-বলো

-আপনি ঘুমাননি?

-ঘুমন্ত মানুষকে জাগিয়ে জিজ্ঞেস করছো ঘুমিয়েছি কিনা,, আজব

-সরি ঘুম ভাঙিয়ে দিলাম,, ঘুৃমান।

-হয়েছে,, বলো ঘুমাই নি।
নূরের দিকে ঘুরতে ঘুরতে বললো।

-কিছুনা।একটা প্রশ্ন ছিলোে

-কি?

-আচ্ছা আপনার কি সত্যি মনে হয় যে রিয়া সত্যি কথা বলেছে সেদিন?আসলেই চেন্জ হয়ে গেছে ওও?

-হ্যা ঘুমাও রাত হয়ে গেছে।

-আগে বলুন।

-ঘুমাও এসব নিয়ে তোমাকে মাথা ঘামাতে বলিনি।

-কিন্তু

-নূর…

চুপ হয়ে গেলো নূর।এখন কিছু বললেও কাব্য কানে নিবেনা তা সে ভালো করেই জানে।অগত্যা চুপচাপ পাশ ফিরে শুয়ে রইলো।খানিকবাদেই কাব্য পেছন থেকে জরিয়ে ধরলো নূরকে।মুচকি হাসলো নূর।
.
.
সকাল আটটা প্রায়।ড্রয়িং রুমে সোফায় বসে আছে নূর।মুখে রাগ,অভিমান স্পষ্ট।কোনো রা নেই।তার এমন গম্ভীর মুখশ্রীতে অসহায়ভাবে তাকিয়ে আছে শাওন।নূর অসুস্থ হওয়ার পরে নূরের বাবা আফজাল হোসেন দুই দিন তাকে দেখতে আসলেও শাওন আসেনি।একয়দিন প্রচুর কাজের চাপ ছিলো তার।আসবে আসবে বলেও আর আসতে পারেনি।তাই আজ সকাল সকাল এসে পড়েছে।কিন্তু আসার পর থেকেই বেচারা এভাবে বসে আছে।কথা বলছেনা নূর।এবার আর না পেরে নিজেই বললো শাওন-

-আর কতক্ষণ বসে থাকবি এভাবে।সরি তো,,প্লিজ রাগ করিসনা।আমার পরী বোনটা আমার সাথে কথা বলবি না?চলে যাবো?

এবার মুখ ঘুরিয়ে শাওনের দিকে তাকালো নূর। চোখে অশ্রু টলটল করছে।শাওনকে ঝাপটে ধরে শব্দ করে কেঁদে দিলো নূর।আর নাক টেনে বলতে লাগলো-

-তুই অনেক পঁচা ভাইয়া।তুই জানিসনা আমি তোকে কত ভালোবাসি।তোকে কত মিস করি জানিস।তবু তুই একদিন আমাকে কল দেসনি।অনেক পঁচা তুই বিয়ে দিয়ে আমাকে পর করে দিয়েছিস।

নূরের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে শাওন বলল-

-কে বলেছে পর করে দিয়েছি। আমার কলিজা বোন তুই।তোকে নিজের হাতে খায়িয়ে দিয়েছি, ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছি।আমার পরীকে পর করে দিবো আমি,,তাহলে আমি থাকবো কিভাবে?যাক এখন কান্নাকাটি বন্ধ কর নাহলে কিন্তু চলে যাবো আমি।যাবো?

চোখ মুছতে মুছতে নূর বললো-

-মাইর খাবি তাহলে

নূরের কথা শুনে হাসলো শাওন।তারপর বললো-

-থাক ভাই সকাল সকাল মার খাওয়ার শখ নেই।যাবোনা আমি।

-এইতো লাইনে এসেছিস।বলেই দুজন একসাথে হেসে উঠলো।রান্নাঘর থেকে দুই ভাইবোনের খুনশুটি দেখছিলো মিসেস রেহেনা।তার চোখেও পানি চিকচিক করছে।এদিকে কাব্যও সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে সবটা দেখেছে।কিন্তু নূর বা শাওন কেউই দেখেনি।শাওনের সামনে যেয়ে সালাম দিয়ে কাব্য জিজ্ঞেস করলো-

-আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া,, কেমন আছেন?

-ওয়া আলাইকুমুস সালাম,আলহামদুলিল্লাহ তুমি কেমন আছো?

-আলহামদুলিল্লাহ ভালো।

কাব্য আর শাওন কথা বলছে। নূর রান্নাঘরে চলে গিয়েছে।না জানি আবার শাওনের কাছে তার নামে বিচার দেয় তাই আগেই কেটে পরেছে।
.
.
শাওন চলে গেছে প্রায় দুই ঘন্টা।কাব্যও অফিসে গিয়েছে আজকে।কাভার্ডের জামাকাপড় গুছিয়ে রাখছিলো নূর।মিসেস রেহানা রুমের দরজার সামনে দাড়িয়ে জিজ্ঞেস করলেন –

-নূর আসবো?

-আরে মামনি তুমি।জিজ্ঞেস করছো কেন,,ছেলের রুমে আসতে বুঝি পারমিশন লাগে,আসো।

মৃদু হেসে রুমে প্রবেশ করলেন মিসেস রেহেনা। বেডে বসে নূরকে বললেন-

-ছেলের সাথে তো এখন ছেলের বউও থাকে পারমিশন তো লাগবেই।যাক এদিকে আয় বোস।

নূর কাছে যেয়ে বসলো।মিসেস রেহানা বললেন-

-তন্নীকে দেখতে আসবে আজকে।তোর বাবার পরিচিত ছেলে।ছেলেটা নাকি অনেক ভালো।তন্নীকে নাকি দেখেছে আগে।পছন্দ হয়েছে তার এখন ফ্যামিলি নিয়ে দেখতে আসবে বলছে।

-তন্নীকে বলেছো?

-নাহ বলিনি।তুই ওকে বলবি। আমি বললে রাজি হবেনা

নূর ইতস্তত করে বললো-

-কিন্তু মামনি তন্নী তো এখন বিয়ে করবেনা।তাহলে…

-বিয়ে করতে কে বলেছে শুধু দেখতে আসবে।

-দেখতে আসবে আর পছন্দ ও হবে।তখন তারা যদি বিয়ের কথা বলে তখন?

-সেটা পরে দেখা যাবে কিন্তু ওর মতের বাইরে তো কিছু করবো না।

-ঠিক আছে আমি বলছি।কখন আসবে?

-বিকেলের দিকে।

-আচ্ছা।

-হুম শোন কাব্যকে তো বলেছি।কিন্তু ও আসে কি না দেখতো ফোন দিয়ে

-হুম।

-আচ্ছা আমি তাহলে গেলাম।

-হুম।

মিসেস রেহেনা রুম থেকে বেরিয়ে গেলে নূর ফোন হাতে নিয়ে কাব্যর নাম্বারে ডায়াল করলো রিং হচ্ছে কিন্তু কেউ রিসিভ করছে না।তৃতীয় বার কল করার পর ফোন রিসিভ করা হলো-

-হ্যালো,,কি হয়েছে ফোন রিসিভ করছিলেন না কেন?

ওপাশ থেকে মেয়েলি কণ্ঠে কেউ বললো-

-স্যার বিজি আছেন।বারবার ফোন দিয়ে ডিস্টার্ব করছেন কেন

-কাব্য ভাইয়ের ফোন আপনার কাছে কেন?

-আমার কাছে রেখে গিয়েছেন তাই।আপনি কে? স্যারকে দিয়ে কি কাজ?

আর কিছু না বলে খট করে ফোন রেখে দিলো নূর।মেয়েটার শরীর জ্বালানো উত্তর শুনে মেজাজ গরম হয়ে গেছে তার।ফোনটা হাত থেকে বিছানায় ছুড়ে ফেলে রুম ত্যাগ করলো।

তন্নীর রুমে দরজার সামনে দাড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো-

-আসবো?

-তুই আবার কবে থেকে পারমিশন নেওয়া শুরু করলি।আয় তাড়াতাড়ি।

-এমনেই,,তন্নী?

-হ্যা বল।

-আসলে,,

-আসলে কি?

-আসলে তোকে আজকে ছেলেপক্ষ দেখতে আসবে।

-ওহ,কিহ?

-হ্যা।দেখ মাথা গরম করিসনা শুধু দেখতে আসবে বলেছে ব্যস আর কিছুই না।

-কেন?কেন দেখতে আসবে আমি বলেছি না আমি এখন বিয়ে করবোনা তাহলে কেন দেখাদেখির প্রসঙ্গ আসলো।আমি যাবোনা নূর তুই আম্মু কে যেয়ে বলে দেয়।

-তন্নী প্লিজ এমন করিসনা।বাবার পরিচিত ছেলে। অনেক ভালো নাকি।তোকে দেখেছে আগে পছন্দ হয়েছে তাই দেখতে আসবে পরিবার নিয়ে।ব্যস আর তোর মতামত ছাড়া কেউ কিচ্ছু করবেনা।আর কাব্য ভাই তো আছেই। চিন্তা করিসনা শুধু যেয়ে একটু কুশল বিনিময় করবি।তারা দেখবে, খাবে, চলে যাবে।তুই রিজেক্ট করে দিবি শেষ কাহিনি। তবু তুই এত হাইপার হইসনা প্লিজ বইন।

-কিন্তু যদি বাবা পছন্দ করে ফেলে যদি বিয়ে ঠিক হয়ে যায় তখন?তখন কি করবো আমি?

-এমন কিছু হবে না।

-তোর ওপর বিশ্বাস করে রাজি হচ্ছি।বুঝিস।

-আচ্ছা।
.
.
বিকেল চারটা। ছেলেপক্ষ চলে এসেছে।ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে আছে সবাই।কাব্য ও এসেছে ঘন্টা খানিক আগে।নূর কাব্যর সাথে কথা বলেনি এখনো।একটু আগেই তন্নীকে এখানে নিয়ে এসেছে নূর।তন্নী হালকা বেগুনি রঙের শাড়ী পড়েছে তার সাথে ম্যাচিং করা হিজাব।সাজগোজ বলতে শুধু কাজল আর লিপস্টিক।ব্যস এতটুকুই। নূরের মতো তন্নী ও সাজগোজ করা পছন্দ করে না।যা-ই হোক ছেলের বাবা-মা আর ছেলেই এসেছে দেখতে।ছেলের নাম জাবির।দেখতে তো মাশা আল্লাহ।সবদিক থেকেই পারফেক্ট মেয়ে বিয়ে দেয়ার জন্য। তন্নীর বাবা-মার তো ছেলে পছন্দ হয়েছে অনেক।তন্নীকেও পছন্দ হয়েছে ছেলের বাবা-মার।তবে তন্নীর মতামত জানতে চান তারা তাই সময় দিয়েছে তাকে।পরে জানাতে বলে সেদিনের মতো চলে গেলো তারা।
.
.
সব ঝামেলা শেষ করে রুমে এসে কাভার্ড থেকে একটা টি-শার্ট আর প্লাজু নিয়ে সোজা ওয়াশরুমে ঢুকলো নূর। যা গরম পরেছে শাড়ী পরে ঘুমানো তো অসম্ভব।কাব্য বেডেই বসে ছিলো কিন্তু নূর একবারের জন্যও তার দিকে তাকায়নি যেন তার উপস্থিতি টেরই পায় নি সে।তবে সে অবাক হলো না কারণ এমন ব্যবহারের কারণটা সে জেনেছে।এখন অপেক্ষায় আছে কখন তার বউপাখি ওয়াশরুম থেকে বের হবে আর সে কখন তার মাথা থেকে এসব উল্টাপাল্টা ধারনা বের করে ছুড়ে ফেলবে।মেয়েটা যে তাকে নিয়ে এত বেশি জেলাস হবে এটা বিশ্বাস করতে পারছেনা কাব্য। তবে সে খুশি কারণ নূর তাদের সম্পর্কটাকে সিরিয়াসলি নিচ্ছে।তার ভাবনার মাঝখানেই নূর ওয়াশরুম থেকে বের হলো।ব্লু কালার প্লাজু আর পিংক কালার টি-শার্ট পরেছে নূর।শাওয়ার নিয়েছে সে ভেজা চুল মুছতে মুছতে কাব্যকে পাশ কাটিয়ে ব্যালকনিতে চলে গেলো সে।টাওয়ালটা মেলে দিয়ে আবার রুমে আসলো।কাব্য সেখানেই দাড়িয়ে আছে।সেম পজিশনে।চোখ এখনো নূরের ওপরই আটকে আছে তার।তাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে গলা খাঁকারি দিলো নূর। হুঁশ আসলো কাব্যর যখন বুঝতে পারলো তখন নিজেই নিজেকে বেহায়া বলছিলো কিন্তু পরে নিজেই আবার ভাবতে লাগলো সব পুরুষই তার বউর কাছে বেহায়া আর বেশরম তুইও হলি সমস্যা কি ব্যাপার না।এতোকিছুর মাঝে আসল কথাই ভুলে গিয়েছিলো কাব্য। মনে পরতেই সে বললো-

-নূর?

-বলুন।

-ফোন দিয়েছিলে?

-কেন জানেন না

-হ্যা আসলে।

-কিছু বলতে হবে না আসলে আমি সরি ফোন দিয়ে ডিস্টার্ব করার জন্য।

-নূর ওইটা আমার এমপ্লয়ি তানহা,,নতুন এসেছে। আমি মিটিংয়ে ছিলাম।ও ফাইল দিতে এসেছিলো কেবিনে তখন ফোন বাজছিলো বারবার রিং হওয়ায় ও রিসিভ করে ফেলেছে কৌতুহল বশত।ব্যস অন্যকিছু না।
এক নিঃশ্বাসে বললো কাব্য।

-বিশ্বাস করতে বলছেন আমাকে?

-অবশ্যই কারণ সত্যি ই বলছি আমি।

-আচ্ছা ঠিক আছে।

-আর শোনো তোমাকে দুই দিনের সময় দিলাম।এই দুই
দিনে আমাকে শুধু কাব্য বলা শিখবে। খবরদার যদি কাব্য ভাই বলেছো।

-ছিহ কি বলছেন আপনি আমার বয়সে বড় আর আমি আপনাকে নাম ধরে ডাকবো এটা অসম্ভব।

-আমি এতকিছু জানি না।এটাই ফাইনাল।পথেঘাটে নিজের বউকে বোন বানাতে পারবোনা আমি। তাই যেটা বলেছি মাথায় রাখো।

-মানে বুঝলাম না।

-মিটিং শেষে কেবিনে আসার পর তানহা আমাকে বলছিলো যে-স্যার আপনার ছোট বোন কল দিয়েছিলো।ভেবেছিলাম তন্নী কিন্তু নাহ কিসের তন্নী আমিতো ভুলেই গিয়েছিলাম আমার বিবাহিতা স্ত্রী সে যে আমাকে এখনো ভাইয়া ভাইয়া বলে তো মানুষতো বোন বানাবেই।দেখো নিজের বরকে ভাই বললে বউরা কালো হয়ে যায় বুঝেছো তাই শুধু নাম ধরে ডাকবা।

-কিসব বকছেন কেমন লজিক এটা বরকে ভাই ডাকলে বউরা কালো হয়ে যায়।মাথাটা কি গেছে।

-হ্যা গেছে।অনেক কথা হয়েছে যেটা বলেছি সেটাই এখন আসো আমার মাথা টিপে দাও মাথা ব্যথা করছে।

-হুম।

নূরের কোলে মাথা রেখে ডান হাত দিয়ে তার কোমর জরিয়ে ধরে শুয়ে আছে কাব্য।তার মাথায় নূরের নরম আঙুলগুলো ছোটাছুটি করছে একবার ডান পাশে তো আর একবার বাম পাশে ।নূরের হাতের স্পর্শ পেয়ে মাথা ব্যথা কমে গেছে অনেকটা তাই কাব্য নূরের কোল থেকে মাথা উঠিয়ে বললো-

-মাথা ব্যথা কমে গেছে বউ।এখন ঘুমাবো।

-কমেছে?

-হ্যা।আসো

নূরের কপালে চুমু খেয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে পাড়ি দিলো ঘুমের রাজ্যে।

.
.
ভোরের আলো ফুটতেই ঘুম ভেঙে গেল কাব্যর।চোখ খুলতেই ছোটখাটে একটা শক খেলো কাব্য।

#চলবে

#অবশেষে তুমি
#লেখিকা-Nazia Shifa
#পর্ব -১৮
———————-
ভোরের আলো ফুটতেই ঘুম ভেঙে গেল কাব্যর।চোখ খুলতেই ছোটখাটো একটা শক খেলো সে।তার পাশে নূর নেই।একটু ঝুঁকে নিচে তাকাতেই দেখলো নূর ফ্লোরে হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে আছে।কিন্তু সে তো বেডে ছিলো ফ্লোরে কিভাবে গেলো?তাহলে কি বেড থেকে পড়ে গেছে?মনে মনে এসব ভাবছিলো কাব্য।তাড়াতাড়ি করে বেড থেকে নেমে নূরের কাছে গেলো কাব্য।পাশে বসে ঝুকে নূরকে ডাকা শুরু করলো সে।

-নূর,ওঠো।নূর?

নূরের সাড়া নেই।আবার ডাকলো-

-নূর ওঠোওও।

এবার ঘুম ভেঙে গেল নূরের।তড়িঘড়ি করে উঠতে নিলে কাব্যর নাকের সাথে বারি খেলো কপালে।

-আহহ,,নাক না লোহার টুকরা।কপালটা শেষ।কি হয়েছে সাত সকালে ষাড়ের মতো চিৎকার করছেন কেন।

-আমি ষাঁড়ের মতো চিৎকার করছি?সাহস বেড়ে গেছে দেখা যায়।

-হ্যা তো বাড়লে বেড়েছে এখন মাথা না খেয়ে বলেন কি হয়েছে।(হামি দিতে দিতে)।

-কোথায় শুয়ে ছিলেন আপনি?

-কেন রুমে।

-রুমের কোথায়?

-এটাও জানেন না।মানুষ বেডে ঘুমায়।আমিও বেডেই ঘুমিয়েছি।এই প্রশ্ন করতে ঘুম ভাঙিয়েছেন আমার।

– তাকিয়ে দেখেন।

-দেখার কি আছে আমিতো বে,,,এতক্ষণে নূর খেয়াল করলো সে ফ্লোরে বসে আছে।তাই কথা শেষ করার আগে মুখ বন্ধ হয়ে গেছে।

-কি?তুমিতো?

-আবব,ইয়ে মানে আসলে

-ফ্লোরে পরে গেলে কিভাবে?

-আসলে,,কিহ?ফ্লোরে পড়লাম কিভাবে মানে।পড়তে যাবো কেন আজিব। আমি কি বাচ্চা যে গড়িয়ে গড়িয়ে মাঝখান থেকে কিনারে এসে নিচে পড়ে গেছি

-পরতেই পারো স্বাভাবিক।দুই দিন পরপরই তো মাথা ঘুরে পড়ে যাও।আর তোমার যে ঘুম দিন দুনিয়ার খেয়াল থাকেনা।কেউ উঠিয়ে নিয়ে টুশ করে ফেলে দিলেও টের পাবানা।

-দেখুন বাজে বকা বন্ধ করুন।উল্টা পাল্টা কথা বললে ঠোঁট কাটা যায় বুঝেছেন তাই সাবধান।এখন সরুন সকাল টাই নষ্ট আমার।বসা থেকে উঠতে উঠতে বললো।

-হ্যা সরো,,তোমার সাথে সাথে থাকতে দিন দিন ঝগরুটে হয়ে যাচ্ছি।

-হুহ,,

নূর চলে যেতে নিলে কাব্য বললো-

-দাড়াও দাড়াও।তুমি শাওয়ার নিয়েছো?

-হ্যা তো?

-কিন্তু আমিতো কিছু করিনি।বুজলামনা বেড থেকে নিচে পড়ে গেলে, রাতে দেখলাম টি-শার্ট পড়েছো এখন দেখি শাড়ী আবার শাওয়ার নিয়েছো। কাহিনি কি?

-চৌধুরী সাহেব দিন দিন মাথা মোটা হয়ে যাচ্ছেন । শুনুন প্রথমত গরম লাগছিলো তাই শাওয়ার নিয়েছি আর শাওয়ার যেহেতু নিয়েছি টি-শার্ট তো অবশ্যই পরবো না।দ্বিতীয়ত নামায পড়ে এখানে বেডের সাথে হেলান দিয়েছিলাম আর…..

-আর ঘুমের ঘোরে ফ্লোরে গড়াগড়ি খেয়েছো তাই তো। আচ্ছা আজকের কথা বুজলাম বাট তুমিতো প্রতিদিনই সকালে শাওয়ার নাও।মানুষ দেখলে তো ভাববে আামদের মাঝখাানে প্রতিদিনই আদর আদান-প্রদান হয়।

কাব্যের লাগামছাড়া কথাবার্তা শুনে থ হয়ে গেলো নূর।

-দিনদিন যে সেই লেভেলের অসভ্য হয়ে যাচ্ছেন সে খেয়াল আছে।

-কোন পুরুষটা তার বউয়ের কাছে সভ্য আমাকে দেখিয়ো তো।

-দিনদিন বাচাল ও হয়ে যাচ্ছেন।

-তোমারই ক্রেডিট।

হাফ ছাড়লো নূর তার পক্ষে আর সম্ভব না।দ্রুত পায়ে রুম ত্যাগ করলো সে।

.
.
সকাল আটটা।রান্নাঘরে নাস্তা বানাচ্ছে নূর আর মিসেস রেহেনা।পাশেই ভাবলেশহীন ভাবে টুলে বসে আছে তন্নী।তাকে এভাবে বসে থাকতে দেখে মিসেস রেহেনা বললো-

-কিরে কি হয়েছে মুখটা এমন বাঙলার পাঁচের মতো করে রেখেছিস কেন?

-কিছুনা।

-কিছুনা বললেই হলো। দেখ তন্নী মেয়ে বিয়ের উপযোগী হলে তার জন্য সম্বন্ধ আসবেই।এটাই স্বাভাবিক।এটা নিয়ে মন খারাপ করার কিছু নেই।যার সাথে যার ভাগ্য জুড়ে আছে তার সাথে তার মিল হবেই তুই আমি না বললেই কি।এত টেনশন করে লাভ নেই।তবে ছেলে ভালো আমাদের সমস্যা নেই।আমার মনে হয় না তোর কোনো সমস্যা আছে আর তোর যদি কোনো পছন্দ থেকে থাকে সেটাও বলতে পারিস।তবে একটা কথা মনে রাখিস তোর মতামতের বাইরে কিছু হবেনা।

উত্তরে ছোট্ট করে শুধু -হুম বললো তন্নী।

মিসেস রেহেনা আরও কিছু বলতে চাইছিলেন কিন্তু তাদের কথার মাঝেই কাব্য রুম থেকে নূরকে ডাকলো।যার ফলে তন্নীর ব্যাপারটা চাপা পড়লো।নূর শুনেও না শোনার ভান ধরলো কিন্তু মিসেস রেহানা নূরকে বললেন-

-কাব্য ডাকছে নূর যা।

অগত্যা যেতে হলো নূরকে।পা টিপে টিপে রুমে প্রবেশ করলো নূর।আয়নার সামনে দাড়িয়ে অফিসের জন্য রেডি হচ্ছে কাব্য।পুরো ফর্মাল লুক।এই মূহুর্তে নূরের মনে ইচ্ছা জাগছে নিজের বরের ওপরই ক্রাশ খাওয়ার।হা করে তাকিয়ে আছে সে।এত সুন্দর কেন আপনি?আপনা আপনি গালে হাত চলে গেলো নূরের।এদিকে নূরের এমন চাহনি দেখে কাব্য বললো-

-ভাবনা কুমারীর আবার কি হয়েছে?আর মুখটা একটু বন্ধ করো।আমি জানি আমি অনেক হ্যান্ডসাম তাই বলে হা করে তাকিয়ে থাকতে হবে। আমারও লজ্জা বলতে কিছু আছে।

কাব্যর কথা কর্ণকুহর হতেই হুঁশ ফিরলো নূরের।তারপর বললো-

-আমার বয়েই গেছে আপনাকে দেখবো।কেন ডেকেছেন বলুন

-এদিক আসো।

নূর কাব্যর সামনে যেয়ে দাড়ালে কাব্য তার হাতে টাই টা ধরিয়ে দিয়ে বললো-

-নাও পড়িয়ে দাও।No words.চুপচাপ পড়িয়ে দাও।

-দিন,,😒

নূর হাইটে খাটো হওয়ায় সমস্যা হচ্ছিল পড়াতে।কাব্য দুই হাত নূরের কোমরের দুই পাশে রেখে একটু উঁচু করলো আর বললো –

-এবার পড়াও।

-এমনিতেই কাব্য এত কাছে তার ওপর নূরের শাড়ী ভেদ করে কাব্যর দুই হাত নূরের পেট আর কোমর স্পর্শ করছে।যার দরুন ঘনঘন শ্বাস ফেলছে নূর।আর সবসময়ের মতো বুকের ভেতর টিপটিপ আওয়াজ হচ্ছে।

-কি হয়েছে?

-ক,,কি,কিছুনা।

কাব্যর টাই বেধে দিয়ে সরে আসতে চাইলে বাধ সাধলো কাব্য।

-কোথায় যাচ্ছো?

-কাজ আছে।

-আমার মেডিসিন দিয়ে যাও

-মেডিসিন কেন কি হয়েছে আপনার?মাথা ব্যথা কমেনি এখনো নাকি অন্যকিছু্?

-আরে থামো এত উত্তেজিত কেন হচ্ছো।কিছু হয়নি আমার।
নূরের হাত টেনে নিজের আরএকটু কাছে নিয়ে আসলো কাব্য। তারপর তার দুই গালে আর কপালে চুমু খেয়ে তাকে জরিয়ে ধরলো। নূরের অবস্থা তো একেবারে শেষ।কিছুক্ষণ পর তাকে ছেড়ে দিয়ে কাব্য বললো-

-এই মেডিসিনের কথা বলছিলাম।সারাদিনের জন্য এনার্জি পাবো।প্রতিদিন যাওয়ার আগে আর ফেরার পর এটা আমার জন্য বরাদ্দ থাকবে।এখন নাস্তা পাবো নাকি আরও কয়টা উম্মাহ টুম্মাহ দিয়ে পেট ভরবো?

নূর লজ্জা মিশ্রিত কণ্ঠে বললো –

-আসুন দিচ্ছি।

-ইশশ লজ্জা রাঙা মুখ তার সাথে লজ্জা মিশ্রিত কণ্ঠ।হায়।(বুকে হাত দিয়ে)বলেই হাসলো কাব্য।

নূরের লজ্জার পরিমাণও বেড়ে গেলো তার সাথে।

আবারো ঠোঁট প্রসারিত করে হাসলো কাব্য। মেয়েটাকে লজ্জা দিতে তার বেশ ভালো লাগে।

-চলো।

-হুম।
.
.
দুপুর দুইটা।রুমে বসে আছে নূর। সবে গোসল সেরে বেড়িয়েছে সে।সকালে শাওয়ার কেন নিয়েছে সে কথা মনে করতেই হেসে ফেললো নূর।দিন যত যাচ্ছে এই মানুষটার মায়ায় গভীরভাবে জড়িয়ে যাচ্ছে সে।যে মানুষটাকে ভয় পেত একসময় যার কাছেও ঘেষতো না সেই মানুষটাই তার স্বামী। যাকে একমুহূর্ত না দেখলে অস্থির লাগে।যে কাছে আসলে হার্টবিট বেড়ে দিগুণ হয়ে যায়।যে সামনে থাকলে অনুভূতিরা সব প্রকাশ পেতে চায়।আচ্ছা এর নামই কি ভালোবাসা? ভালোবাসা কিনা জানেনা নূর তবে সে কাব্যর মায়া জালে জড়িয়ে গেছে।তাও এমন ভাবে যে জাল থেকে বেড়িয়ে আসার কোনো উপায় নেই।তবে নূর চায়ও না এই মায়া ত্যাগ করতে।এই মানুষটা যে এখন তার অস্তিত্বে মিশে গেছে। হ্যা অন্যান্য স্বামী স্ত্রীর মতো তাদের মধ্যে সেরকম সম্পর্ক হয়নি তবুও কাব্য তার স্বামী আর তার সাথে যথেষ্ট খুশি আছে নূর।তবে নিজেদের মাঝে এই দুরত্বটা আর বেশিদিন রাখতে চায়না নূর।খুব শীঘ্রই এই দুরত্বের ইতি টানবে সে।
আপন মনে মনে এসব ভাবছিলো নূর আর মুচকি মুচকি হাসছিলো।মিসেস রেহানার ডাকে ভাবনার সুতোয় টান পড়ল নূরের।

-বাব্বাহ কি হয়েছে মুচকি মুচকি হাসছিস যে

মিসেস রেহেনার কথায় লজ্জায় পড়ে গেলো নূর।

-ক,,কই হাসছি।তুমি রুমে আসতে গেলে কেন কষ্ট করে আমাকে ডাকতে আমি ই যেতাম তোমার রুমে।

-তো কি হয়েছে। শোন যেটা বলতে এসেছি।তোদের বিয়েতে তো কাব্যর দাদুবাড়ির আত্মীয় স্বজনরা কেউই ছিলোনা।এখন কাব্যর দাদী বলেছে তার নাত বউকে দেখবে।আর পরিবারের সবাই বলছে তোকে নিয়ে যেতে কাব্যর দাদু বাসায়।সেটা সমস্যা না যাওয়া যায় কিন্তু

-কিন্তু কি মামনি?

-সমস্যা তো কাব্য। কাব্য রাজি হবেনা আর আমার সাহস নেই ওকে বলার। তোকেই বলতে হবে।

-আমি বলতে পারবোনা মামনি।উনি রেগে যাবেন।

-একবার চেষ্টা করে দেখ

-আচ্ছা দেখবো।

-ঠিক আছে খেতে আয় এখন।

-হুম চলো।

#চলবে