অবশেষে তুমি পর্ব-২৪

0
447

#অবশেষে_তুমি (পর্ব ২৪)
#Mohua_Afrin_Mim
·
·
·
সকালে ঘুমের মদ্ধে বুঝার চেষ্টা করছি যে আমি কোথায় আছি।। মনে হচ্ছে কোনো আবদ্ধ জায়গায় আটকে আছি।। ভালো করে তাকিয়ে দেখি অর্ণব আমাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে।। এখন বুঝলাম কেনো এমন লাগছিলো।। আস্তে করে নিজেকে উনার থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে উনার দিকে ঝুকে উনাকে দেখছি।। এই লোকটাকে ঘুমের মদ্ধে যে কি সুন্দর লাগে তা বলার বাহিরে।। উনার কপালে আলতো করে ভালোবাসার পরশ একে দিয়ে যেই চলে যেতে নিলাম ওমনি উনি আমার হাত খপ করে ধরে ফেললেন।। আমি পিছন ফিরে উনার দিকে তাকালে উনি বললেন

অর্ণবঃ লুকিয়ে লুকিয়ে আদর পেতে কিন্তু ভালোই লাগে।।

আমি উনার দিকে রসগোল্লার মতো চোখ করে তাকালে উনি বললেন

অর্ণবঃ এইভাবে তাকিয়ে আছো কেনো!! তুমি যে লুকিয়ে লুকিয়ে প্রতিদিন আমাকে আদর করো সেটা কিন্তু আমি জানি।।

এইবার আমার চোখজোড়া বের হয়ে যাওয়ার উপক্রম।। কি বললেন উনি এটা!! উনি জানেন যে আমি উনাকে প্রতিদিন লুকিয়ে লুকিয়ে আদর করি!! ইয়া খোদা উনি এসব কি বলেন!! তার মানে উনি সব জানতেন।। আর উনি জেনেও চুপ করে থাকতেন কিছু বলতেন না।। কতো বড় খারাপ মানুষ।। আমি এখন কি বলবো!! অর্ণব বললো

অর্ণবঃ কি এতো ভাবছো!! এতো কিছু ভেবে আর লাভ নেই।। আমি এখন সব জানি।। বুঝছো।।

মিমঃ লুকিয়ে লুকিয়ে আদর পেতে লজ্জা করে না??

অর্ণবঃ হায় হায় কি বলো এসব!! তুমি লুকিয়ে লুকিয়ে আদর করতে পারবে আর আমি আদর নিতে পারবো না!! আর কি বললে আমার লজ্জা করে না!! আমার তো মনে হয় লজ্জা তোমার থাকার উচিত।। কারণ কাজটা তুমি করেছো আমি না।। আমি তো আর যেচে আদর পেতে যাই নি।।এখন যখন জেনেই গিয়েছি তাহলে এখন সজাগ অবস্থায় দাও।।

অর্ণব উনার গালের দিকে ইশারা করছেন।।আমি উনার দিকে চোখ পাকিয়ে তাকালে উনি একটানে আমাকে উনার বুকের উপর ফেলে দিলেন।। আর বললেন

অর্ণবঃ আরেকটু শুয়ে থাকো না আমার সাথে।।তোমার সাথে থাকতে ভালোই লাগে।।

মিমঃ আমি এখানে আপনার সাথে শুয়ে থাকলে রান্না করবে কে?? আর আপনি অফিসে যাবেন না!!

কথাটা বলেই উনার পাশ থেকে উঠে চলে আসি।।

শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে চুল মুছছিলাম।। এমন সময় অর্ণব পেছন থেকে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন।। আমি উনাকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছি কিন্তু উনি ছাড়ছেন না।। উনি বললেন

অর্ণবঃ তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে।। তোমাকে এই অবস্থায় দেখে এখন নিজেকে উন্মাদের মতো লাগছে।।

মিমঃ হয়েছে হয়েছে এখন ছাড়ুন আমি নিচে যাবো।।

অর্ণবঃ ছাড়ার জন্য তো ধরিনি।।

আমি উনার দিকে ফিরে উনাকে জিজ্ঞাসা করলাম

মিমঃ আচ্ছা আজকে যে আমার বার্থডে আপনি জানলেন কি করে!! নীল কালার আমার ফেভারিট আর আমার নীল কালারের শাড়ী পড়ার ইচ্ছা ছিলো সাথে যে এনে দিবে সেও নীল কালারের পাঞ্জাবী পড়বে এসব আপনি জানলেন কি করে?? আমি তো কখনো বলিনি আপনাকে।।

অর্ণবঃ আসলে তোমার ডায়েরি পড়ে জেনেছি।।

আমি গম্ভীর স্বরে বললাম

মিমঃ মানুষের পারসোনাল ডায়েরি তাকে জিজ্ঞাসা না করে পড়া যে কোনো ক্রাইমের থেকে কম কিছু না সেটা কি আপনি জানেন??

অর্ণবঃ কিছু কিছু ক্ষেত্রে পড়লে কিছু হয় না।। এইযে যেমন তোমার ডায়েরি পড়ে তোমার সম্পর্কে এতো কিছু জানতে পারলাম সেই অনুযায়ী তোমার ইচ্ছাও পূরণ করতে পেরেছি।। এতে তো লাভই হয়েছে।। এই ক্ষেত্রে আমি কোনো ক্রাইম করিনি বরং ভালো কাজই করেছি।।

উনার এমন লজিক মার্কা কথা শুনে হেসে দিলাম।। আমি বললাম

মিমঃ যান এইবার।। আপাতত আর কোনো লজিক শুনতে চাচ্ছি না।।

কথাটা বলে নিচে চলে এলাম রান্না করার জন্য।।
রান্নাঘরে গিয়ে দেখি মা রান্নাঘরে।। আমি ভাবছি আমি কি খুব বেশি দেরি করে ফেললাম?? এমন সময় মা বললেন

মাঃ আরে মিম,আসো মা।।

মিমঃ আপনি কেন রান্নাঘরে আসতে গেলেন??আমি তো করেই নিতাম।।

মাঃ কি যে বলো!! আজকে তোমার জন্মদিন আর তুমি বসে বসে রান্না করবে?? আমি কি রান্না করতে পারি না না কি।। (বলেই হেসে দিলেন)

মাঃ না মা,তা ঠিক না।। আচ্ছা দিন আমি আপনাকে হাতে হাতে সাহায্য করে দেই।।

মাঃ একদম না।। তুমি যাও ঘরে গিয়ে দেখো অর্ণবের কিছু লাগবে কি না।।

মিমঃ আচ্ছা।।

আমি মন খারাপ করে চলে আসলাম।।
সকালে ব্রেকফাস্ট শেষ করে অর্ণব অফিসে চলে গেলো।। মা আমাকে দুপুরের রান্নাটাও করতে দিলেন না।। সারাটা দিন একরকম অলস সময় কাটলো।।

বাড়িতে আজ সব আমার পছন্দের রান্না করেছে মা।। এক অদ্ভুত ভালোলাগা কাজ করছে।।কজনের ভাগ্যে এরকম শ্বশুর বাড়ি জোটে।।
আজকে অর্ণব একটু তাড়াতাড়ি বাসায় চলে এসেছে।। আমরা মানে আমি আর অর্ণব সন্ধ্যার সময় বসে গল্প করছি।।

অর্ণবঃ আচ্ছা মিম, তুমি কখনো আমার উপর কোনো দাবী করো নি কেনো?? তোমার কিন্তু অধিকার ছিলো।। তুমি যদি তোমার অধিকার খাটাতে তাহলে কিন্তু আমার হাত-পা বাধা ছিলো।।

মিমঃ ভালবাসার উপর জোর খাটাতে বলছেন?আর জোর খাটিয়ে কে কবে কিই বা পেয়েছে!!

অর্ণবঃ তুমি বড় অদ্ভুত।। তোমাকে আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারি না।। মাঝে মাঝে মনে হয় তুমি একদম সহজ।। তোমাকে চাইলেই পাবো আমি।।আবার মনে হয় তোমার চারপাশে একটা অদৃশ্য দেওয়াল আছে।। সেটাকে চাইলেও আমি ভেদ করতে পারবোনা।

মিমমঃ আজকে পূর্ণিমা জানেন??

অর্ণবঃ কথা ঘুরিয়ে নিলে।
তুমি পুর্নিমার খবরও রাখ?? আমার তো কেন জানি এইগুলো মাথায় থাকে না।।

মিমঃ চলুন।।

অর্ণবঃ কোথায়??

মিমঃ জ্যোৎস্না বিলাস!!

অর্ণবঃ তুমি সত্যিই অদ্ভুত।।

মিমঃ কি করবো বলুন।। হিমু হওয়ার যখন এত শখ তখন এইগুলো তো মাথায় রাখতে হবে।।

অর্ণবঃ (হেসে দিয়ে)চলো।

বাহিরে বের হওয়ার সময় বললাম

মিমঃ আরে কি করছেন!!

অর্ণবঃ কি করলাম আবার!!

মিমঃ জুতা কেন পরছেন??

অর্ণবঃ তাহলে?

মিমঃ উফফ, খালি পায়ে চলুন।।

একটা তৃপ্তির হাসি দিলাম মিমের কথা শুনে।।

আমরা এখন একটা নদীর পাড়ে বসে আছি।।নদীর একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য আছে।। আশেপাশে বাতাস না থাকলেও একটা শীতল প্রশান্তি বিরাজ করে।। নদীতে তখন ভরা জোয়ার।। আমি আর অর্ণব পানিতে পা ভিজিয়ে বসে আছি।।

অর্ণব বললো

অর্ণবঃ মিম!!

মিমঃ হুম।।

অর্ণবঃ ভালোবাসি।।

মিমঃ আমিও।।

অর্ণব কতক্ষণ চুপ থেকে বললো

অর্ণবঃ আমার ভাবতেই অবাক লাগে।। আমি তোমাকে এতোটা কষ্ট দিয়েছি আর তুমি কি না আমাকে আগলে রাখতে এত ব্যস্ত।। আমার পছন্দ অপছন্দ সবটার খেয়াল তুমি রাখো।।

মিমঃ আমি আপনাকে বলেছিলাম ভালোবাসা জিনিসটা একেকজন একেকভাবে মূল্যায়ন করে।। আমার কাছে কাউকে সত্যিকারের ভালোবাসতে পারাটাই অনেক বড় ব্যাপার।। আমি যাকে ভালোবাসবো তাকে আমার সবটা উজাড় করে দিয়েই ভালোবাসবো।। তার সবটাই আমার।। ভালোটাও আর খারাপটাও।। এখন অপর দিকের মানুষটাও যদি আমাকে ভালোবেসে ফেলে সেটা আমার জন্য বোনাস।।

অর্ণবঃ মীম তুমি এমন কেনো??

মিমঃ কেমন?

অর্ণবঃ তুমি এতো চাপা স্বভাবের কেনো? নিজের সমস্যার কথা কখনোই মুখ ফুটে বলো না।।সবসময় তো তোমার পাশে কেউ থাকবে না।।তোমার সবার দিকে খেয়াল আছে শুধু নিজের দিকেই নেই।।

মিমমঃ কি করলাম? আপনি সবসময় আমাকে বকেন কেনো??

অর্ণবঃ তুমি কি মনে করেছো তোমার হাত যে এতখানি কেটে গেছে সেটা আমি খেয়াল করিনি?

অর্ণবঃ ও আচ্ছা, এই কথা।। ধুর ভালো লাগে না।। বাদ দেন তো।।

অর্ণবঃ ভালো না লাগলে তো হবে না।। এখন তোমার সাথে আমার ভালোবাসা আছে সেটার তো যত্ন করতে হবে।।

মিমঃ তাই জন্যই কি এত খেয়াল আমার প্রতি??এতদিন তো খেয়াল করেন নি!! কত রাত কান্না করেছি, নির্ঘুম কাটিয়েছি খোঁজই নেন নি।।

অর্ণবঃ………………..

মিমঃ অনেক রাত হয়েছে।। এখন চলুন।।

অর্ণব আর আমি পাশাপাশি হাটছি।। আজকে আমি আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ উপহার পেয়েছি।।অথচ দুদিন আগে অবদিও আমি ভাবতেই পারি নি।।

মিমঃ রাগ করলেন??

অর্ণবঃ কেনো??

মিমঃ thank you.

অর্ণবঃ কেনো?

মিমঃ এতো সুন্দর একটা দিন উপহার দেওয়ার জন্য।।

অর্ণবঃ তাহলে তো তোমাকে অনেক গুলো ধন্যবাদ জানাতে হয়।।

মিমঃ কেনো??

অর্ণবঃ আমার এতো খেয়াল রাখার জন্য।। আমাকে এতো ভালোবাসার জন্য।। আমাকে আবার নতুন একটা জীবন দেওয়ার জন্য।।

মিমঃ থাক হয়েছে।। আর বলতে হবে না।। এবার চলুন।।

অর্ণবঃ হুম।।
·
·
·
চলবে………………………….