অবশেষে তুমি পর্ব-৫+৬

0
648

#অবশেষে_তুমি (পর্ব ০৫)
#Mohua_Afrin_Mim
·
·
·
ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখি উনি আমার বইগুলো দেখছেন। আমাকে দেখে বলে উঠলো

— তুমি কি বই পড়ো নাকি!!

— জ্বী।।

— এই সবগুলো বই কি তোমার!!

— জ্বী।। আমি বই পড়তে ভালোবাসি।।

— আপনিও তো বই পড়তে ভালোবাসেন।।

— তুমি জানলে কি করে!!!

— আপনার রুমের বুক সেল্ফ দেখেই বুঝা গিয়েছে যে আপনি বই পড়তে ভালোবাসেন।।

— হুম।। আমি বই পড়তে আর collect করতে ভালোবাসি।। আমার বই collection এর প্রতি অনেক ঝোঁক।।

— হুম।। ভালো।। আপনি ফ্রেশ হয়ে নিন।।

— ok

রাতে সবাই একসাথে ডিনার করি।। আম্মুর সাথে কিছুক্ষণ গল্প করে ঘুমাতে আসি।। রুমে এসে দেখি উনি মোবাইল চালাচ্ছেন।। তাই আমি আর কিছু না করে একটা গল্পের বই পড়া শুরু করি।। অনেক্ষন হয়ে গেছে উনি উনার মতো কাজ করেই যাচ্ছে।। এর মাঝে উনি একটুও কথা বলেনি…..আর আমিও না।। বই পড়া শেষ করে লাইট অফ করে ঘুমিয়ে পড়ি।।

সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি উনি ঘুমাচ্ছেন।। ঘুমালে উনাকে অনেক কিউট লাগে।। উনার দিকে কতক্ষণ তাকিয়ে থেকে উনার কপালে আলতো করে ঠোঁট ছুইয়ে দেই।। ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে ফজরের নামাজ পরে নেই।।

রুম থেকে বের হয়ে আম্মুকে নাস্তা বানাতে সাহায্য করি।। তারপর সবাই ঘুম থেকে উঠে গেলে একসাথে নাস্তা করে নেই।।

আজকে আমরা চলে যাবো।। বিকালে আব্বু আম্মুর থেকে বিদায় নিয়ে বাসার বাহিরে এসে দাড়ালে দেখি উনি গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসছেন।। তা দেখে আমি গাড়ির পিছনের সিটে বসতে নিলে বলে উঠেন

— পিছনে বসছো কেনো!!

— তাহলে কোথায় বসব!!

— তোমার কি মনে হয় আমি ড্রাইভার!!

— আমি তা কখন বললাম!!

— তাহলে পিছনে না বসে সামনে এসে বসো।।

— হুম।।

বাসায় এসে ডুকলে মাকে দেখে সালাম দিয়ে বলি

— মা কেমন আছেন!!!

—ভালো মা।। তুমি কেমন আছো!!

— জ্বী ভালো।।

অর্ণব বলে উঠলো

— মা আমাকে তো কিছু জিজ্ঞেস করলে
না!!! নাকি নতুন বউ পেয়ে আমাকে ভুলে গিয়েছো!!

— তোকে কি করে ভুলি।। তুই তো আমার একমাত্র ছেলে।।

— হয়েছে হয়েছে আর বলতে হবে না।।

— ওলে আমার বাবুটা রাগ করেছে।। রাগ করেনা বাবু।। এইবার হয়েছে!!

— মা তুমিও না।।

আমি উনাদের কাহিনি দেখে হাসতে থাকি।। রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে আমার সব জিনিস কাবার্ডে গুছিয়ে রাখি।। ডিনারের সময় সবাইকে খাবার বেড়ে দিতে থাকলে মা বলেন

— তুমি খাবেনা!!

— পরে খাবো।।

— পরে খাবে কেনো!! এখনি খাবে….বসো আমাদের সাথে।।

— ঠিক আছে।।

রাতে রুমে বসে বসে মোবাইল চালাচ্ছিলাম অর্ণব রুমে এসে বলে

— কাল থেকে আবার অফিস যাওয়া শুরু করছি।।

— অহ্।।

— তোমার কোনো কিছুর প্রয়োজন হলে মাকে জানাবে।।

— ঠিক আছে।।
আমার সাথে মানিয়ে নেয়ার কোনো নাম নেই আসছে আমার প্রয়োজন মেটাতে……. হুহ্।। (মনে মনে)

— কি এতো ভাবছো!!!

— না কিছু না।।

সকালে ঘুম থেকে উঠে নামজ পড়ে নিচে চলে যাই।। রান্নাঘরে গিয়ে ভাবতে থাকি কি বানানো যায়।। তারপর সার্ভেন্টের সাহায্য নিয়ে নাস্তা বানানো শুরু করি।। কাজের মাঝে রুমে গিয়ে উনার প্রয়োজনীয় জিনিস মানে উনার কাপড়,ওয়ালেট, ঘড়ি সব বিছানায় রেখে আসি।।

অর্ণব ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখে ওর সব প্রয়োজনীয় জিনিস বিছানায় রাখা।। এটা দেখে অর্ণব মুচকি হেসে দেয় আর ভাবতে থাকে –” এখন থেকে আর কষ্ট করে কিছু করতে হবে না আর অফিসে তাড়াতাড়ি যাওয়া যাবে”

সবাই একসাথে নাস্তা খেতে বসলে বেড়ে দিতে থাকি।। মা বাবা নাস্তা খেয়ে আমার রান্নার অনেক প্রশংসা করতে থাকে।। কিন্তু উনি কিছুই বলেন না।। চুপচাপ খেয়ে অফিসে চলে যায়।।

দুপুরে উনার খাবার ড্রাইভারকে দিয়ে পাঠিয়ে দেই।। ড্রাইভার এসে অর্ণবকে খাবার দিয়ে যায়।। অর্ণব খাবার খেতে খেতে মনে মনে বলতে থাকে আর যাই হোক মিমের রান্নার প্রশংসা করতে হয়।।

রাতে মা উনার রুমে আমাকে যেতে বলেন……. জরুরী কথা আছে নাকি আমার সাথে।। আমিও ভাবতে থাকি কি এমন জরুরী কথা আছে আমার সাথে।। সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে মার রুমের সামনে গিয়ে বলি…………
·
·
·
চলবে……………………..

#অবশেষে_তুমি (পর্ব ০৬)
#Mohua_Afrin_Mim
·
·
·
মার রুমের সামনে গিয়ে বলি

— মা আসতে পারি??

— হ্যাঁ আসো আসো।।

— মা আমাকে ডেকেছিলেন কথা বলার জন্য।।

— হ্যাঁ তোমার সাথে আমার কিছু দরকারি কথা আছে।।

— জ্বী বলুন।।

— দেখো মা আমার ছেলেটা একটু অন্যরকম……বলতে গেলে খুবই চাপা স্বভাবের।। আমি জানি অর্ণব তোমাকে অনেক কথাই বলেছে।। তুমি ওর কোনো কথায় কষ্ট পেয়ো না মা……ওর সাথে মানিয়ে চলার চেষ্টা করো।। ও না আগের মতো নেই আগে ও খুব স্বাভাবিক ছিলো।। সব সময় হাসিখুশি থাকতো সবার সাথে মিশতো।। কিন্তু হঠাৎ করে ও এরকম চুপচাপ হয়ে গেছে।। আমি জানি তুমিই পারবে ওকে ঠিক করতে……স্বাভাবিক করতে।।

— ……….

— বলো মা তুমি পারবে না??

— জ্বী মা পারবো।।

বারান্দায় দাড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি।। ভাবছি যে মা কেনো এই কথাগুলো বললো।। কি এমন কারন আছে যার জন্য উনি আমাকে মেনে নিতে পারবেন না।।। আবার আগের মতো স্বাভাবিক নেই।। উনাকে কি জিজ্ঞাসা করবো উনার কোনো সমস্যা আছে কিনা?? না না উনাকে জিজ্ঞাসা করা যাবে না……..জিজ্ঞাসা করলে আবার কিনা কি মনে করে!! উনি না বলেছিলো উনার কোনো ব্যাপারে না থাকতে।। কিন্তু আমি জানি একদিন না একদিন উনি আমাকে ঠিকই মেনে নিবেন।।

অনেক্ষন ধরে এসব ভাবছি।। কয়টা বেজে গেছে তার কোনো খবর নেই।। হঠাৎ অর্ণব এসে বললো

— এখানে দাড়িয়ে দাড়িয়ে কি এতো ভাবছো???

— হঠাৎ উনার কথায় চমকিয়ে যাই।।
না কিছু না।।

— অনেক রাত হয়েছে ঘুমাবে না??

— হুম।।

আর কিছু না ভেবে রুমে এসে ঘুমিয়ে পরি।।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
আজ আমাদের বিয়ের পনেরো দিন হলো।। উনি আমার সাথে প্রয়োজন বাদে কথা বলে না…….আর আমিও না।। আজকে সকালে অর্ণবের প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো রাখতে এলে উনি বলেন

— মিম শুনো!!

— জ্বী বলেন।।

— আজকে সন্ধ্যায় রেডি থেকো।।

— কেনো??

— আজকে একটা পার্টি আছে।। সেখানে যেতে হবে।। সময়মতো রেডি হয়ে থেকো।।

— ঠিক আছে।।
আমি ভাবতে লাগলাম উনি কি আসলেই আমাকে নিয়ে যাবেন পার্টিতে।।

কথাটা শুনে মিম অনেক খুশি।। খুশি হবেই বা না কেনো যেই মানুষটা ওর সাথে ভালো করে কথাই বলে না সেই মানুষটা ওকে নিয়ে পার্টিতে যাবে।।

সন্ধ্যায় তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিলাম বলা যায় না আবার কখন কি কথা শুনায়।। আজকে কালো জরজেটের শাড়ি পরেছি আর সাজ বলতে শুধ লাল লিপ্সটিক হালকা অরনামেন্টস আর চুলগুলো হাত খোপা করে নিয়েছি।। নিচে যাওয়ার পর মা আমাকে দেখে বললেন

— বাহ্ আজকে তো আমার বৌমাকে অনেক সুন্দর লাগছে।।

— thank you মা।।

—আর অনেক খুশি খুশি লাগছে।। আমার ছেলের সাথে ঘুরতে যাবে বুঝি তাই এতো খুশি!!

— আমি মার কথা শুনে লজ্জায় লাল গেলাম।।

— হয়েছে হয়েছে আর লজ্জা লজ্জা পেতে হবে না।। সাবধানে যেয়ো।।

— ঠিক আছে মা তাহলে আসি।।

বাহিরে গিয়ে দেখি অর্ণব গাড়ির সামনে দাড়িয়ে আছে।। আজকে উনাকে অনেক সুন্দর লাগছে।। কালো স্যুট পরেছে, হাতে ব্র্যান্ডের ওয়াচ, মুখে খোচা খোচা দাড়ি, চুলগুলো বাতাসে উড়ছে।। পুরাই ডেশিং লাগছে।। ঠিক ঘায়েল করার মতো লুক নিয়ে দাড়িয়ে আছে।।

মিমকে আসতে দেখে অর্ণবের যেনো নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে।। মিমকে এতোটাই সুন্দর লাগছে যে অর্ণব মিমের দিকে পলকহীন ভাবে তাকিয়ে আছে।। কালো শাড়িতে মিমকে অনেক বেশি মানিয়েছে।। তার মদ্ধে ওর ওই টানা টানা চোখ যেনো অর্ণবকে আরো বেশি ঘায়েল করেছে।। মিমের এই লুক অর্ণবকে অনেক বেশি টানছে।। আর এইদিকে অর্ণবের এইভাবে তাকিয়ে থাকা দেখে মিম লজ্জায় পুরা লাল হয়ে গেছে।। গাল দুটো লাল টুকটুকে হয়ে গেছে।। মিমের এই লজ্জা মাখা মুখ দেখতে অর্ণবের আরো বেশি ভালো লাগছে।। মনে হচ্ছে সময়টা থাকুক না থেমে আর আমিও ওকে ভালোভাবে দেখি।।

মিমের কথায় ধ্যান ভাঙ্গে অর্ণবের—“দেড়ি হয়ে যাচ্ছে তো যাবেন না!!”

অর্ণব হঠাৎ অমার চুলগুলো খুলে দেয়।। আমি চোখ বড় বড় করে উনার দিকে তাকালে উনি বলেন

— খোলা চুলে তোমাকে বেশি সুন্দর লাগে।।

কথাটা বলে উনি গাড়িতে উঠেন।। আমিও একটা মুচকি হাসি দিয়ে গাড়িতে উঠি।।

পার্টিতে সবাই শুধু আমাদেরকে দেখছে।। আমি বুঝলাম না আমাদেরকে এইভাবে দেখার কি আছে…….আমরা কি এলিয়েন নাকি!!

একজন লোক এসে উনাকে বললেন

রাজঃ হ্যালো মি. অর্ণব চৌধুরী।।

অর্ণবঃ হ্যালো মি. রাজ।।

রাজঃ উনি কি মিসেস চৌধুরী।।

অর্ণবঃ জ্বী।।

রাজঃ হ্যালো মিসেস চৌধুরী।। কেমন আছেন???

মিমঃ জ্বী ভালো।। আপনি??

রাজঃ এইতো আছি।।

রাজঃ You are looking so beautiful. মিসেস চৌধুরী।।

মিমঃ Thank you.

রাজঃ আপনাদের দুজনকে অনেক সুন্দর লাগছে এবং দুজনকে একসাথে অনেক মানিয়েছে।।

অর্ণবঃ Thank you.

পাশের অনেকেই বলাবলি করছে — ” মি. অর্ণব চৌধুরীর বউ অনেক সুন্দরী।। আর উনাদের একসাথে অনেক মানিয়েছে।। মি. চৌধুরীর কপাল অনেক ভালো এতো সুন্দরী বউ পেয়েছেন।”
ওদের দুজনকে মানাবেই না কেনো অর্ণব যেমন উচা লম্বা সুন্দর মিমও ঠিক তাই।।

পার্টি শেষের দিকে হঠাৎ অর্ণব বলে উঠলো……
·
·
·
চলবে……………………..