অবশেষে তোমাকে পাওয়া পর্ব-১২

0
558

#অবশেষে_তোমাকে_পাওয়া(স্পেশাল পর্ব-চার)
#পর্ব_বারো
#তারা ইসলাম
—————————————————————-
রাত তখন কয়’টা বাজে জানা নেই।আমি আপাতত উনার হাতে একটা শক্ত চ*ড় খেয়ে তপদা মে’রে ফ্লোরে বসে বসে কান্না করছি।উনি আমাকে অনেক সময় ধমকালেও কখনো গায়ে হাত ধুলেন’নি!কিন্তু আজ হুট করে এভাবে চ*ড় মা’রায় আমি তাজ্জব বনে গেলাম।তারপর এক-প্রকার ফ্লোরে বসে কান্না করে দিলাম।উনি আমার পাশেই বসে নিরবতা পালন করছেন।

~ নিরবতা ভেঙ্গে উনি কঠোর কন্ঠে বললেন- ধের্য্য নেই তোমার নূর?তুমি এত অধের্য্য কেন বলবে আমায়?একটুও কি বুদ্ধিশুদ্ধি নেই তোমার?আমি যে এত তোমার কেয়ার করি”তোমার না বলা কথা গুলা বুঝে যায়।তোমাকে এত স্নেহ করি এইগুলা কেন করি?শুধুমাত্র বউ হিসেবে?কিছুদিন যাবত যে আমি তোমার সাথে অন্য-রকম বিহেভ করছি তাতে কি তুমি বুঝতে পারছো না কিছু?নাকি বুঝেও না বুঝার বান করছো?

“আমি এবার কান্না করতে করতে বললাম- গতরাতেও তো বললেন আপনি আমাকে ভালোবাসে না?

“উনি এবার রেগে আমার মুখ চেপে ধরে বললেন- সে আমার মুখের কথা নিয়েই ম’র তুই।বলেছিলাম তো?মুখে বললেই সব হয়’নাকি তোকে যে আমি ভালোবেসে ফেলেছি সেটা আমার মুখে বলা লাগবে কেন?তারপর আবার চিল্লিয়ে উঠে বললেন- বল কেন লাগবে?তুই বুঝে নিস’নি কেন?বলেই আমার মুখ থেকে হাত সরিয়ে নিলেন।

“আমি এবার কান্না বন্ধ করে উনার দিকে এক-মনে তাকালাম।আর ভাবতে লাগলাম- উনি কি বললেন আমাকে ভালোবাসেন?

আমি উনাকে কান্নারত গলায় বললাম- আপনি আমার সাথে মজা করছেন তাইনা?আপনি যদি ভালোবাসেন তাহলে কাল ওমন বলেছিলেন কেন?

“উনি আমার কথা শুনে রেগে উনার চুল টেনে ধরে বললেন- আল্লাহ তোর মতো একটা গা*ধা*কেই কেন আমার কপালে রেখেছেন কে জানে?তারপর নিজেকে শান্ত করে বললেন- দেখো কালকে চাইলেই আমি তোমাকে আমার মনের সব কথা বলে দিতে পারতাম।কিন্তু বলি’নি কারণ আমি তোমাকে সারপ্রাইজ করতে চেয়েছিলাম।তাই তো এত আয়োজন তুমি কি ভেবেছো এমনে এমনে তোমাকে এখানে আ’না?না একদমই না আমি তোমাকে আমার মনের সব অনুভূতি বুঝানোর জন্যই এখানে এনেছি।এ’জে হাসবেন্ড হিসেবে তোমাকে প্রপোজ করার জন্যই এনেছিলাম।

“কিন্তু তুমি….বলেই উনি থেমে আবার বললেন- বিয়ের পর পর তোমার সাথে থাকতে থাকতে আমি তোমার মায়ায় পরে গিয়েছিলাম।তোমার প্রতি আমি আর্কষণ অনূভব করতাম।আমার বউ হিসেবে যেমন মেয়ে চেয়েছিলাম তার ঠিক উল্টো তুমি!কিন্তু তাও অন্যরকম অনুভূতি হতো তোমার প্রতি।তুমি বার বার আমার সামনে এলোমেলো অবস্থায় আসায় আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরেই তোমার মাঝে ডুব দিতাম।কিন্তু এমন না যে তোমাকে আমি অপছন্দ করতাম।বিয়ের আগেও কিন্তু আমি তোমাকে পছন্দ করতাম! কিন্তু তোমার চঞ্চলতা দেখে আমি বিরক্ত হতাম।না হলে তুমি আমার জন্য পারফেক্ট ছিলে নূর।আমি প্রথমে তোমার প্রতি থাকা অনুভূতি গুলাকে পাত্তা দিই’নি।কিন্তু ওইদিন মনে আছে বাসায় ছিলাম না।সেদিন তোমাকে আমি প্রচুর মিস করেছিলাম যাকে বলে বাড়াবাড়ি মিস।আমি কোনো ভাবেই নিজের কাজে মন দিতে পারছিলাম বার বার তোমার চেহেরা আমার চোখের সামনে ভেসে উঠতো।আস্তে আস্তে বুঝতে পারতাম আমি কাজকাতুরে থেকে নূরকাতুরে হয়ে যাচ্ছি।তাই সেদিন তোমার কান্না দেখেও ওমন বিহেভ করেছিলাম।
তারপর আমার হাত দুটো উনার হাতের মাঝে নিয়ে বললেন- নূর আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি।!আর ভালোবাসি!কিন্তু তুমি কি করলে বলেই রেগে আমার হাত ছেড়ে দিলেন।

“আমি উনার সব কথা শুনে কিছুক্ষণ থমকে বসে রইলাম।তারপর যখন বুঝতে পারলাম উনি শুধুই আমাকেই ভালোবাসেন তখন আমি শব্দ করে কেঁদে উঠলাম।কাঁদতে কাঁদতে আমার অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছিলো।

“আমার কান্না দেখে উনি বসা থেকে উঠে দাঁড়ালেন বুঝতে পারলাম উনি রুম ত্যাগ করতে যাচ্ছেন।তার আগেই আমি দৌড়ে উঠে উনার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম।

“উনি রেগে আমার অন্য-পাশ দিয়ে চলে যেতে নিলেই আমি উনার বুকে ঝাঁপিয়ে পরে উনার গলা জড়িয়ে ধরে কেঁদে কেঁদে বললাম- মির্জা সাহেব আমিও আপনাকে ভালোবাসি।

“উনি আমার হাত ছুটাতে চেষ্টা করলেন।কিন্তু আমি আরও শক্ত করে উনাকে জড়িয়ে ধরে রইলাম।উনার আর আমার মাঝে এক-প্রকার ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে গেলো।যখন দেখলেন উনার শক্তি দিয়েও আমাকে সরাতে পারছেন না উনার বুক থেকে,তখন উনি শান্ত হয়ে গেলেন তবে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন না।

“আমি এবার কান্না বন্ধ করে বললাম- স্যরি আমি কি জানতাম নাকি আপনি আমাকে ভালোবাসেন?

“উনি বললেন- মুখে বলতে হবে কেন?

“আমি এবার আদুরে গলায় বললাম- আমাকে এক’শত বার বলতে হবে নাহলে আমি বুঝবো না।

“উনি বিরক্তি নিয়ে বললেন- ন্যাকামো করো না আর ছাড়ো আমায়!তুমি এই রুমে থাকো আমি ওইরুমে থাকবো।

“আমি বললাম- আপনি না বলেছেন আজকে কোনো ছাড়াছাড়ি নেই?

“উনি একটু অভিমানি গলায় বললাম- বলেছিলাম তো কিন্তু বউ তো আমার উল্টো বুঝলো।সে তো আর আমাকে তার কাছে চাই’না।

“আমি লাজ্জুক গলায় বললাম- কে বলেছে সে চাই’না।

“উনি এবার হুট করে আমার কোমড় জড়িয়ে ধরে বললেন- চাই নাকি?

“আমি লাজ্জুক হেসে বললাম- হুম

“উনি আমাকে বললেন- এত যে মুখে মুখে তর্ক করছো ভয় লাগে না?

“আমি বললাম- ভালোবাসি তো।

“উনি আমাকে সোজা ভাবে দাঁড় করালেন তারপর উনি হাটু গেড়ে বসে আমার দুইহাত উনার হাতের মাঝে নিয়ে বললেন- মিসেস নূর জামান আমি তোমাকে ভালোবাসি।কখনো আমার মনে আ’ঘা’ত করো না।
আর আমাকে ছেড়ে যাবে না আমার বাকি জীবনটা নূরময় করে দিবে প্রমিস করো?

“উনার বা*চ্চা*মো কথা শুনে হেসে উনাকে সেভাবেই জড়িয়ে ধরে বললাম- আমিও আপনাকে ভালোবাসি মির্জা সাহেব।আমি সারাজীবন আপনার সাথেই কাটাতে চাই।মৃ*ত্যু ছা’ড়া কখনো আপনাকে ছে’ড়ে যাবো না প্রমিস।

“সে রাত’টা আমাদের একান্ত ভালোবাসাময় ছিলো।যেখানে শুধুমাত্র ভালোবাসা ছিলো।
~~~~~~~~~~~~~~~~
দেখতে দেখতে কে’টে গেছে আরও একমাস।এই একমাস ছিলো আমার জীবনের সেরা-মাস।উনার আর আমার সম্পর্কটা অনেকটাই গাঢ় হয়েছে।কখনো বা ঝগড়া,কখনো বা মান-অভিমান,কখনো আবার ভালোবেসে এক।আমার আর মারিয়ার ২য় বর্ষের টেস্ট এক্সামটা সবেমাত্র শেষ হলো।কিন্তু এই একমাসে আমি আর মারিয়া ছিলাম জেলখানার মতো।কারণ আমাদের সাথে থাকতো প্রায় আমান ভাইয়ার ঠিক করা বডিগার্ড। সোজা ভার্সিটি টু বাসা!আর আশ-পাশ দেখার ও সুযোগ আমরা পাই’নি তবে ভালোই কাটছে দিন।

“এক্সাম শেষ হওয়ায় অনেকদিন বন্ধ থাকবে ভার্সিটি।তাই রুদ্র ঠিক করেছেন যে ক’দিন ভার্সিটি বন্ধ থাকবে সে’কদিন উনার সে ফ্ল্যাটেই থাকবো আমি।কারণ উনার বাবার বাসা থেকে উনার কাজে যেতে অনেক সমস্যা হয়।বাড়ির সবাই রাজি তাই আমিও একবার বাধ্য হয়ে রাজি হয়ে গেলাম।তবে তার মধ্যে একটা গুড-নিউজ হলো মারিয়া প্রেগন্যান্ট যাতে করে বাসার সবাই খুশি।দাদি তো এক-প্রকার লাফালাফি শুরু করে দিয়েছেন।কিন্তু যদি কেউ বেশি খুশি হয়ে তাকে সেটা হলো আমান ভাইয়া।
~~~~~~~~~~
ভাইয়া দুইমাস তো চেষ্টা করলাম তোমার কথায় রুদ্রকে ভুলতে তবে পারলাম কই।

“রেয়ান চৌধুরি বললো- আমি অনেক চেষ্টা করেছি ওদের আলাদা করতে কিন্তু এখন তারা বিয়েটাকে স্বাভাবিক ভাবে নিয়েই সংসার করছে।তাই আমি ভাই হিসেবে তোকে একটা কথায় বলবো মুভ অন কর সব ভুলে যা।বলেই রেয়ান ফারিয়ার রুম ত্যাগ করলো।

“ফারিয়া কাদঁতে কাঁদতে নিচে বসে পরলো।আর মনে মনে বললো- ভাইয়া তুমি আমার জন্য অনেক করেছো কিন্তু এবার আর না যা করার আমিই করবো।রুদ্র হলে আমার হবে না হলে কারোর হবে না।আমি ওই মেয়েটাকে দরকার পরলে শেষ করে দিবো তাও আমার রুদ্রকে চাই চাই বলেই জোরে জোরে কাঁদতে লাগলো
~~~~~~~~~~~~~~~~
ম্যাডাম আমান মির্জা বহুত চা’লাক আছে।ব্যা’টা এহন তার বউ’রে বডিগার্ড দিয়া বাঁ’চা’য় বাঁ’চা’য় রাখিতেছে।আমরা কোনো ভাবেই তার বউ’রে তু’লে আ’নতে পারিতেছি না।

“শায়লা খাতুন রাসেলের দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে বললেন- আমি কিছু শুনতে চাই’না যেভাবে পারিস সেভাবেই মেয়েটাকে তুলে আন’বি।একদিন না একদিন তার ভুল হবেই হবে।

“রাসেল বললো- ম্যাডাম আরেক’টা খবর আপনের মেয়ের লগে যার বিয়া হইছে তার খবর ভালা কইরা যাইন্না আইছি।

“শায়লা খাতুন বললেন- ওর কোনো খবর আমি এখন জানতে চাইনা।আমার মেয়ে ভালো থাক সেটাই আমি চাই।ওর পিছনে আর লোক লাগাবি না ও ভালো থাকলেই হলো।

“রাসেল কিছু একটা বলতে চেয়ে আর বললো না।

“কিন্তু শায়লা খাতুন তাচ্ছিল্য হেসে বললেন- আহান চৌধুরি নাকি দেশে ফিরছেন।খেয়াল রাখবি আমার মেয়ের খুঁজ যেনো সে না পাই।

“রাসেল বললো- আপনি যা বলেন ম্যাডাম।

“শায়লা খাতুনের চোখ থেকে টপ’টপ করে পানি পরছে।আহা পুরণোদিন গুলা কতই না সুন্দর ছিলো!ভেবেই দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।
~~~~~~~~~~~~~~~~~
রাত তখন এগারো’টার কাছাকাছি আমি আর উনি উনার সে ফ্ল্যাটেই আছি।খেয়ে-দেয়ে অনেক আগেই ঘুমাতে এসেছি।কিন্তু আমি এইপাশ-ওইপাশ করছি তবে ঘুম আসছে না।আর উনি চোখে গ্লাস চশমা দিয়ে ফাইল দেখায় ব্যস্ত।

“আমাকে এমন করতে দেখে উনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন- কি সমস্যা ঘুমাচ্ছো না কেন?

“আমি এবার শুয়া থেকে উঠে বসলাম আর বিরক্তি নিয়ে বললাম- আমার ঘুম আসছে না।

“উনি শান্ত গলায় বললেন- চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করো।

“আমি বললাম- আপনি সহ্য আসুন’না।

“উনি এবার হালকা রাগ দেখিয়ে বললেন- নূর!বা*চ্চা*মো করবে না।দেখছো না আমি কাজ করছি! আর ঘুমাও একদম বিরক্ত করবা না আমায়।

“উনার কথায় আমার মন খারাপ হলো তাই অভিমান করেই আবার শুয়ে পরলাম।শুয়ে পরতেই উনার কথা গুলা মনে করে শব্দ ছাড়া কাঁদতে লাগলাম।

“তবে কিছুক্ষণ পর উনি আমাকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে বললেন- কিছু বলা যাবে না ঢং ওমনি কান্না করে দিবে।বা*চ্চা না তুমি!একদম প্যাচ প্যাচ করে কাঁদবা না।

“আমি ঝাড়া দিয়ে উনার হাত সরিয়ে বললাম- একদম আমাকে ছুবেন না!আপনি আপনার কাজ করুন।

“উনি এবার আমাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে বললেন- আচ্ছা স্যরি বাবা!তুমি ঘুমাও তারপর আমি কাজ করবো।

“উনার কথা শুনে আমি উনার দিকে ফিরে উনাকে জড়িয়ে ধরে বললাম- ভালোভাবে বললে তো আপনি কাছে আসবেন না।যে না কান্না করলাম ওমনি চলে আসলেন বলে খিলখিল করে হেসে উঠলাম।

“উনিও আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললেন- তুমি না এখন কান্না করলে আবার এখন হাসছো।এক ন্যাকা বউ পেয়েছি আমি বলেই উনিও হেসে উঠলেন।

“আমি হাসলাম তবে কিছু বললাম না।

“রুদ্রকে জড়িয়ে ধরে এক-সময় নূর ঘুমিয়ে পরলো।সে ঘুমাতেই রুদ্র ওকে ভালোভাবে শুয়ে দিয়ে আবার কাজে লেগে পরলো।

“সে মনে মনে ঠিক করলো~ থানায় যাওয়ার সময় সে সিভিল ড্রেসে যাবে আর ইউনিফর্মটা প্যাকেট করে দিয়ে যাবে।সেখানে গিয়ে না-হয় চেঞ্জ করে নিবে।এতে করে নূর কিছু বুঝতে পারবে না।মেয়েটা এমনেও আলাভোলা বোকা ভেবেই মনে মনেই হাসলো।
~~~~~~~~~~~~~~~
(চলবে)

(ভুল ক্রুটি ক্ষমা করবেন।ভুল গুলা ধরিয়ে দিবেন)