অবশেষে ভালোবেসে পর্ব-০২

0
1106

#অবশেষে_ভালোবেসে

পর্বঃ ০২

লেখিকাঃ মেহেরুন নেসা
.
‘Good morning’ বলার জন্য সানভি পেছনে ফিরেই যাকে দেখলো তা ও নিজের চোখেই বিশ্বাস করতে পারলো না। ও হা করে তাকিয়েই আছে আর ওইদিকে মি.খন্দকার এর ছেলে এগিয়ে এসে বললো

– Good morning papa.

– Good morning Nirvan. এদিকে আসো আমি তোমার নতুন এস….

তখনই নির্ভানের ফোন বেজে উঠে

– এক মিনিট পাপা আমার এই কল টা নিতে হবে।

– ঠিকাছে কিন্তু জলদি এসো। তার ছেলে চলে যাওয়ার পর তিনি বললেন,, ওকে তো তুমি চেনোই! ও ই আমার ছেলে নির্ভান আর ওর সেক্রেটারির পদ এর জন্যই তোমাকে সিলেক্ট করেছি আমি। আজকে অন্য কারো ইন্টারভিউ নেই শুধু তোমাকেই ডাকা হয়েছে।

– কিন্তু স্যার আমি একজন রকস্টার এর সেক্রেটারি কিভাবে?

– এটা একজন বিজনেস ম্যান এর সেক্রেটারির কাজ যে রকম একজন রকস্টার এর সেক্রেটারির কাজ ও সেরকমই জাস্ট একটু বেশী সাউন্ড, শো, পার্টিস রিলেটেড এইতো। আর হ্যাঁ আরেক টা বিষয় ওর এর আগে যত সেক্রেটারি ছিলো ওরা সবাই ওর উপর বেশি মনোযোগ দিতো যার কারনে কাজে একদমই মন দিতে পারতো না আর তার ফলে আমার ছেলের ক্যারিয়ারে এফেক্ট করছিলো। আর কালকে তোমার কথা শুনে মনে হলো তোমার কাজের খুব প্রয়োজন তাই ভাবলাম হয়তো তুমিই এই পোস্ট টার জন্য পারফেক্ট।

– হ্যাঁ স্যার কাজ আমার খুব প্রয়োজন তাও বুঝতে পারছি না যে কাজ টা আমি ঠিক মতো করতে পারবো কিনা!

– তার চিন্তা করো না তোমাকে সব ডিটেইলস বুঝিয়ে দেয়া হবে বাকিটা তোমার ইচ্ছা।

– স্যার আমি কি একটু সময় নিতে পারি?

– হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই। কিন্তু আবার বেশী সময়…

– আমি কালকেই জানিয়ে দিবো।

– ওহ ওকে।

– স্যার আজকে তাহলে আমি আসি!?

– কিন্তু আমার ছেলের সাথে দেখা করবে না?

– কাজ টা পেলে উনার সাথেও দেখা করা যাবে।

– এইজন্যই তো। আমি জানতাম তুমিই হতে পারবে আমার ছেলের জন্য পারফেক্ট সেক্রেটারি।

সানভি হাসি দিয়ে উঠে চলে এলো। মাথায় ওর এখন অনেক ভাবনার আনাগোনা চলছে। বুঝতে পারছে না কাজ টা খুব প্রয়োজন ওর আবার নির্ভানের মতো এমন একটা পার্সোনালিটি কে সামলানো ও খুব বড় দায়িত্বের ব্যাপার। এসব ভাবতে ভাবতেই সানভি রুম থেকে বের হয়ে গেলো আর নির্ভান ও রুমে ঢুকলো।

– এখন এই সমস্যার সমাধান একমাত্র ইলা ই দিতে পারে। বলেই সানভি ইলার কাছে যাবে বলে ঠিক করলো।

নির্ভান ওর পাপার কেবিনে গিয়ে বসলো

– হ্যাঁ পাপা বলো কি জন্য ডেকেছিলে?

– তার আগে বলো তোমার সেক্রেটারি কোথায়?

– পাপা ও তো….

– ও তো কি? তুমি আর ঠিক হলে না এভাবে এতো সেক্রেটারি চেঞ্জ করা টা কি ঠিক? এটা তে তোমার ইমেজ এ তা কতো টা ব্যাঘাত ঘটায় তা কি তুমি বুঝতে পারছো না!

– তা আমি মানছি পাপা কিন্তু আমার কি দোষ! আমি কি খারাপ বিহেভ করবো ওদের সাথে? ওরাই তো নিজেরা আমার উপর এসে এসে পরে ওহ নির্ভান ওহ নির্ভান করে! এটা আমার প্রবলেম না। পরে আমি আমার প্রবলেম ব্যাক্ত করলে ওদের ভালো লাগে না আর ওরা প্রবলেম শুরু করে তাই আমার ওদের…

– স্টপ ইট আমি আর কিছু শুনতে চাই না। আমি তোমার জন্য এবার নিজে একজন কে চুজ করেছি, ওর কোয়ালিফিকেশন ও ভালো ম্যানেজমেন্ট সাবজেক্ট নিয়ে স্টাডি করেছে যদিও স্টাডি লাস্ট ইয়ার এ কম্পলিট হয় নি কিন্তু ইংলিশ এ উচ্চারন ও পারফেক্ট। তাই আমার মনে হয় ও তোমার সব ক্লায়েন্ট ভালো ভাবেই সামলাতে পারবে। আর মোস্ট ইম্পর্ট্যান্ট ও তোমার ফ্যান না তাই আহ্লাদে আটখানা ও হবে না এবং কাজে ফোকাস করবে তোমার উপর না।

– কিন্তু পাপা এটা আবার কেমন…

– নো ডিসিশন ফাইনাল, আমি আর কিছু শুনবো না।

দ্যা গ্রেট নির্ভান নিজের পাপার সাথে কিছুক্ষন তর্ক করে অবশেষে হার মেনে নিলো।।।

এদিকে সানভি ইলার কাছে পৌছে ওকে নির্ভানের সেক্রেটারির জব অফারের সব কথা বলার পর ইলা শুনে তো পুরাই অবাক আর ও যে ভাবার জন্য সময় চেয়েছে তা ভেবে তো ও আরো অবাক।।।

– তুই কি পাগল হয়ে গিয়েছিস! এরকম একটা জব এর জন্য তুই সময় চেয়ে এসেছিস? সিরিয়াসলি অন্য কেউ হলে সাথে সাথে হ্যাঁ বলে দিতো।

– আমি তো আর অন্যদের মতো না তুই জানিস। আর এই জব টা আমাকে অফার করাই হয়েছে এইজন্য যে আমি কাজ করি এই জব নিয়ে এক্সাইটেড না থাকি।

– তো কি ডিসিশন নিলি? প্লিজ নিয়ে নে আমাকে ওর গানের কনসার্ট এর সব খবর একটা অটোগ্রাফ আর একবার সামনাসামনি দেখালেই হবে।

– ইলুউউউ…..

– সানুউউউ….. যাই হোক তোর কাজের প্রয়োজন তা তুই পাচ্ছিস আর এমাউন্ট টা দেখ এই জব টা না করে দিলে তোর লোন, তুই ভেবে দেখ।

– হুমম,। আজ তাহলে যাই।

– ওকে। কিন্তু খুব তারাতারি মিষ্টি সহ দেখা করবি আসা করি।।

সানভি আর কিছু না বলে হাসি দিয়ে চলে গেলো।
বাসায় এসে সারাদিন জব টা নিয়েই ভাবলো অনেক ভেবে অবশেষে সিদ্ধান্তে পৌছালো কালকে গিয়েই জানিয়ে আসবে।

পরের দিন সকালে সানভি রেডি হচ্ছে অফিসে যাওয়ার জন্য আজ আর তারাহুরো নেই। মি.খন্দকার বলেছেন আজকে যে কোনো এক সময় গিয়ে দেখা করলেই চলবে তাও ও সকাল সকালই কাজ টা শেষ করতে চায় সামনে অনেক দায়িত্ব আছে ওর।৷

এদিকে নির্ভান ও ঘুম থেকে উঠে রেডি হচ্ছে স্টুডিও তে যাবে বলে মিউজিক এলবাম এর প্রোডিউসার এর সাথে মিটিং আছে। এই সকালে মিটিং এর জন্য রাগ হচ্ছিলো খুব কিন্তু রেডি হতে আয়নার সামনে দাড়াতেই সব ছু… হয়ে গেলো আর বলে উঠলো

– আহ নির্ভান দিস ইস আনফের কেউ এতো পারফেক্ট কিভাবে হতে পারে,, পারফেক্ট ভয়েস পারফেক্ট বডি নো স্পট। (সামনের চুল গুলো ডান হাত দিয়ে সাইড করে) হ্যান্ডসাম নির্ভান এন্ড আই লাভ দেট।

তারাতারি স্টুডিও তে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে বের হয়ে গেলো নিচে ড্রাইভার সহ কার রেডি।

অফিসে এসে আধা ঘন্টা ধরে বসে আছে সানভি কারন মি. খন্দকার একটা মিটিং এ বিজি।

কিছুক্ষন পর একটি মেয়ে এসে জানিয়ে গেলো সানভি কে তার কেবিনে যেতে। সানভি গিয়ে নক করে ভেতরে যেতেই উনি ওকে বসতে বললেন সানভি ওর উত্তর দিতেই উনি অনেক খুশী হয়ে যান কিছু বলতে নিচ্ছিলেন কি তখনই একজন লোক এসে উনাকে একটা মিটিং এর কথা মনে করিয়ে দিতেই উনি সানভির কাছ থেকে কিছুক্ষন সময় চেয়ে ওকে একটা ফাইল দেখে নিতে বলে বসিয়ে রেখে চলে গেলেন।

কোনো উপায় না পেয়ে সানভি আবার বসে রইলো, রুম টা ভালো করে লক্ষ্য করছে, ওর ও অনেক ইচ্ছে ছিলো একদিন ওর ও এমন একটা অফিস রুম হবে যেখানে ও বসে বিভিন্ন ফাইলে নাক ডুবিয়ে থাকবে, সাইন করবে, বিভিন্ন কাজের অর্ডার দিবে, মিটিংস হবে, বিভিন্ন প্রযেক্ট এ কাজ করবে!! আর এখন এখানে,,, সত্যিই বাস্তবতা বড়ই নিষ্ঠুর!

সব ভাবনা বাদ দিয়ে ফাইল টা পরছিলো তখনই রুমের গেইট খোলার শব্দে পিছে ফিরতেই দেখে…..
.
.
.
চলবে।