অবশেষে ভালোবেসে পর্ব-০১

0
1713

#অবশেষে_ভালোবেসে ❤
পর্বঃ ০১
লেখিকাঃ মেহেরুন নেসা
.
– what!?? আবার সেক্রেটারি চেঞ্জ?? এই নিয়ে চার মাসের মধ্যে ছয় জন সেক্রেটারি চেঞ্জ করতে হচ্ছে?? তোমরা সবাই কি মজা করছো আমার সাথে? ফোনে কথা বলতে বলতে গাড়ি থেকে নামলেন মি. খন্দকার
ফোনের ওই পাশ থেকে কি যেনো শুনলেন এবং আবার বলে উঠলেন

– আমি জানি না আমি আমার ছেলের জন্য আমি একটা পারফেক্ট সেক্রেটারি চাই যে আমার ছেলের দিকে নজর না দিয়ে আমার ছেলের ক্যারিয়ারে নজর দিবে,,, After all she has to be committed to her work. বলেই ফোন রেখে সামনেই একটি ফ্যাশন হাউজ এ ঢুকে পরলেন তার সবচেয়ে পুরনো এবং প্রিয় বন্ধু এর সাথে দেখা করতে।

তার পরিচয়! সে হচ্ছে দেশের স্বনামধন্য একটি প্রাইভেট কোম্পানির মালিক। আর তার ছেলের কাজের এতো চাপ থাকে তাই সামলাতে রেস্পন্সিবল সেক্রেটারি খুজছেন।
.

কথা শেষ এ মি.খন্দকার এর ফ্রেন্ড এর ই ফ্যাশন হাউস এ ঢুকলেন আর এর পিছনেই একটা মেয়ে ও ভিতরে আসলো কাকে যেনো ফোন দিচ্ছে,, ফোন টা রিসিভ হতেই

– হ্যাঁ, কোথায় তুই?

-………..

– ওকে আসছি এখনি।

এই হলো সানভি, ওর ফ্রেন্ড আবার এই ফ্যাশন হাউজ এ কাজ করে, ওর সাথেই কিছু কথা বলার জন্য এসেছে সানভি। সানভির মা ওকে জন্ম দিতেই মারা গিয়েছেন, বাবা ই খুব যত্নে বড় করেছেন। সেই বাবা ও ব্যবসায় লস হওয়ায় নেশা করতে করতে ছয় মাস আগে একটা এক্সিডেন্ট এ মারা গিয়েছেন তারপর থেকেই শুরু হলো একে একে সব দুর্দিন একে এই পরিস্থিতি তে নিজেকে সামলানো কষ্টের আর একদিকে ওর বাবার বড় একটা লোন, যা তিনি নিয়ে ছিলেন ব্যবসায় করতে ব্যবসা তে ক্ষতি হয়েছে আর এদিকে অর্ধেক এর বেশী ই লোন পরিশোধ করা বাকি। যা এখন পূরণ করতে ও হিমসিম খাচ্ছে, তাই নিজেই সময় চেয়ে বলেছে ও সব লোন পরিশোধ করে দিবে। তারই জন্য অনার্স এর লাস্ট ইয়ার এর এক্সাম না দিয়ে চাকরির জন্য ছুটাছুটি করছে তাই এখানে এসেছে যদি কোনো কাজ পায়।

সানভি কে দেখতে পেয়েই ওর ফ্রেন্ড ইলা ওর দিকে এগিয়ে এসেই ওকে জরিয়ে ধরলো।

– সানু, কতোদিন পর তোকে দেখলাম। ( ইলা)

– হ্যাঁ ইলি, কেমন আছিস….
দুইজনের মধ্যে এই টুকটাক কথা চললো তারপর হটাৎ করেই ইলা বলে উঠলো

– জানিস রকস্টার নির্ভান এর নেক্সট লাইভ কনসার্ট এর ডেট দেয়া হয়েছে।। উফফ আমি তো খুব এক্সাইটেড এবার তো আমি যাবোই এবং আমার সাথে তুই ও জাবি।

– নাহ আমি যাবোনা। আমার তোর ওই রকস্টার নির্ভান এর গান মোটেও পছন্দ না।

– আহ রকস্টার নির্ভান এর গান তোর পছন্দ না!!!

– নাহ।

– আচ্ছা তোর এই টা তে একটু ও আগ্রহ নেই?? এতো হ্যান্ডসাম একটা ছেলে তাও??

– নাহ কেনো হবে? এভাবে ওর গান আমার পছন্দ না। আর ওর ওই কনসার্ট এর কথা ভেবে লাফালাফি করলে তো আর আমার এতো যে লোন আছে তা চুকে যাবে না, আর নাই আমি আমার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারবো।

[তখনি ওই জায়গা দিয়ে যাচ্ছিলেন মি. খন্দকার এই কথা শুনেই দাঁড়িয়ে গেলেন। ওরা সেটা খেয়াল করেনি।]

– সানু আমি তো জাস্ট চাইছিলাম তোর মুড টা একটু ভালো করতে।

– বাদ দে তুই বল এখানে কাজের কোনো পোস্ট খালি আছে?

– নাহ রে এখন কোনো পোস্ট খালি নেই। কিন্তু আমি দেখছি আর ভাইয়ার অফিসে বলে রেখেছি ভাইয়া আর ও……

– Sorry girls I am interrupting you. Ahm.. Ms. Sanu?? ( মি.খন্দকার)

– জ্বি আমি। (সানভি)

– সরি, আমি এখান দিয়ে যেতে সময় তোমাদের কিছু কথা শুনলাম। আসলে আমার ছেলের জন্য একটি সেক্রেটারি দরকার যে নিজের কাজের প্রতি খুবই কমিটেড থাকবে এন্ড আমার ছেলের ক্যারিয়ারের প্রতি খেয়াল রাখবে।

– তো আমি. How can I help you sir?

– তুমি যদি চাও তাহলে আমার অফিসে এসে আমাকে কালকে সেক্রেটারির পোস্টের জন্য একটা ইন্টারভিউ দিতে পারো। And Here’s my business card, I am Azizur Khandaker the CEO and owner of this company.

সানভি কার্ড টা হাতে নিয়ে দেখে একটু অবিশ্বাস করলেও বললো

– সেক্রেটারি!?

– হ্যাঁ কোনো সমস্যা?

– নাহ স্যার, আমি অবশ্যই আসবো।

– By the way whats your name?

– I am Sanvi, Sanvi Ibnat Karim.

– So, Ms.Sanvi I will wait for you tomorrow sharp at 10:30 with the preparation of your interview. Is that okay??

– Yes sir but.

– But?

– আমার কোয়ালিফিকেশন টা তো…

– ইটস ওকে ওইটা নিয়ে আমরা কালকে কথা বলে নিবো সেটার টেনশন করো না।

– ঠিকাছে স্যার, থ্যাংক ইউ।

– থ্যাংক ইউ টা কালকের জন্য রেখে দাও।
বলেই মি. খন্দকার চলে গেলেন। উনি চলে যেতেই ইলা ওকে বললো

– এভাবে কেউ জব অফার করে? আমার তো ফ্রড মনে হচ্ছে। তুই কি যাওয়ার কথা ভাবছিস?

– যেয়ে দেখি, অফিস না হলে তো আর যাচ্ছি না এটুক সিওর থাক তুই।

– কিন্তু…

– জানি ইলু তুই আমার জন্য চিন্তা করিস বাট তাও ট্রাই করে দেখি এটাই যদি আমার টার্নিং পয়েন্ট হয়ে থাকে! এভাবেই আমার কাছে হারানোর কিছু নেই, চাইলে কিছু পেতে পারি,, সো প্লিজ যাই?

– ওকে যা বাট টেক কেয়ার সানু।।

– হ্যাঁ অবশ্যই। তুই তো জানিস এখন আমার কাজ পাওয়া টা কত জরুরী। ইন্টারভিউ এর জন্য আমার ফাইল সব গুছিয়ে প্রস্তুতি নিতে হবে আমি যাই রে।

– কিন্তু তুই কি সেক্রেটারির পোস্ট এ কাজ করতে পারবি?

– এখন তো যেকোনো অফিসের সবচেয়ে নিম্নপদে কাজ করাও আমার জন্য অনেক আর এখানে তো সেক্রেটারি হয়ত অনেক প্রেসার হবে কিন্ত আমার পারতেই হবে।

– ওকে বেস্ট অফ লাক বেস্টি।।

– থ্যাংক ইউ। বলেই সানভি ওর বাসার দিকে রওয়ানা হলো। বাসায় ফিরলেই নিজেকে অনেক একা লাগে সানভির, বাবার একমাত্র মেয়ে আদরের একমাত্র ভাগিদার আর মা কে তো পায়নি আর বাবা ও এখন আর নেই।

অনেক রাত পর্যন্ত সানভি মি.খন্দকার এর গ্রুপ টা নিয়ে রিসার্চ করলো কোম্পানি টার রেটিং ভালো, নাম ও ঠিক আছে, তাই ইন্টারভিউ এর জন্য প্রস্তুতি ও নিলো। রাতে ঘুমাতে দেরি হওয়ায় আজ ওর উঠতে দেরি হয়ে গেলো। উঠেই দেখে নয় টা বাজতে আর কিছুক্ষন ই বাকি তাই তারাতারি উঠে ওয়াশরুম এ চলে গেলো গোসল করতে সাথে রাতেই রেডি করে রাখা ড্রেস টাও নিয়ে নিলো আজকের মিটিং টার জন্য লাইট পিংক কালারের একটা ড্রেস চুজ করেছে সানভি।

কিছুক্ষনের মধ্যেই বের হয়ে আসে সানভি, গিয়ে দারালো আয়নার সামনে মোটামুটি ভালো ই ফর্সা সানভি সাজতেও খুব পছন্দ ছিলো ওর কিন্তু এখন যেন সেসব ভুলেই গিয়েছে তবুও আজকে কিছুটা কাজল ও হালকা একটু লিপস্টিক ইউজ করলো। চাকরি টা ওর খুব দরকার আর নিজেকে ভালো ভাবে প্রেজেন্ট করাও একজন ভালো ক্যান্ডিডেট এর গুন।

ঘড়ির দিকে তাকাতেই দেখে সাড়ে নয়টা বেজে গেছে তাই আর দেরি করা যাবে না নাস্তা ও এখনো বানানো হয়নি তাই তারাতারি নাস্তা না করেই বের হয়ে গেলো সানভি। নিচেই ও এই বিল্ডিং এ থাকে একটা মহিলার সাথে দেখা হলে তিনিও এটা সেটা আস্ক করে একটু দেরি করিয়ে দিলো। তবুও তারাতারি করলো সানভি, অফিসে পৌছে গেলেও সব ইনফরমেশন নিয়ে মিটিং এর জন্য আর মাত্র পাচ মিনিট বাকি তাও এখন আর তারাতারি করলো না কারন ও প্যানিক করতে না চায় না।

মি. খন্দকার এর রুমের ঠিক বাহিরে দারিয়ে সানভি আবার নিজেকে একটু সময় দিলো তারপর আত্নবিশ্বাস নিয়ে রুম এ নক করতেই ভিতর থেকে ” come in.”

– Good morning sir. ( সানভি)

– Good morning, good morning. Come sit. ( মি. খন্দকার)

সানভি বসতেই মি.খন্দকার বলে উঠলেন

– তুমি আমাকে তোমার ফাইল গুলো দাও আমি দেখতে থাকি ততক্ষণে আমার ছেলেও এসে পরবে। ও আসলেই ইন্টারভিউ স্টার্ট করবো।

– ঠিকাছে। বলেই সানভি ওর সাথে থাকা ফাইল টা এগিয়ে দিলো।
উনি ফাইল গুলো দেখা শেষ করলেন কিন্তু এখনো তার ছেলে আসেনি। তাই তিনি এতোক্ষণ এ সানভি কে বলতে থাকলেন

– দেখো মিস. সানভি আমি জানি হয়তো তুমি একটু অবাক হয়েছো যে আমি এভাবে কিভাবে জব অফার করলাম আসলে আমার ছেলের খুব অল্প সময় এ কয়েক জন সেক্রেটারি চেঞ্জ হয়েছে, চিন্তা করো না আমার ছেলের ক্যারেক্টর এর জন্য নয়। ওর আসেপাশে আসলে ও তো….

মি. খন্দকার এর কথায় বাধা পরলো কারণ তখনই গেইট এ নক পরলো তিনি কথা থামিয়ে ” come in ” বলতেই

– ওহ ওইতো আমার ছেলে এসে পরেছে।

এটা শুনে সানভি “good morning ” বলবে বলে দাঁড়িয়ে পেছনে ফিরে যেন ও থমকে গেলো, নিজের চোখ কেই বিশ্বাস করতে পারছে না সানভি……
.
.
.
চলবে।