অবান্তর চিরকুট পর্ব-১৪

0
315

#অবান্তর_চিরকুট (পর্ব-14)

♡আরশিয়া জান্নাত

“নিন গরম গরম চা খান। সারারাত যে যুদ্ধ করেন আপনি আল্লাহ!”

সিতারা গাল ফুলিয়ে বললো, আমি যুদ্ধ করি? কি করেছি আমি হু?

“নাহ না এ তো যুদ্ধ না মহাযুদ্ধ। এমনভাবে ঘুমান যেন স্বপ্নে রেসলিং খেলছেন। এতো অস্থির আপনি! হাতপা যেভাবে ছুঁড়েছেন আমি তো ধড়ফড়িয়ে উঠেছি।”

“উহু মিথ্যা কথা। আমি অনেক ভালো করে ঘুমাই অযথা মিথ্যা বলছেন কেন?”

“ঠিকাছে ভিডিও রেকর্ড করে রাখবো। এখন নিন চা টা শেষ করুন।”

“আপনি আর্লি রাইজার বলে দিলেই হতো। আমি থাকতে আপনি চা করলেন কেন?”

“কেন করা নিষিদ্ধ নাকি?”

“না তবুও,,”

“শুনুন সংসারে তোমার কাজ আমার কাজ বলে কিছু নেই। সব কাজ দুজনেরই,যে যেটা করতে ইচ্ছে করবে।”

“আচ্ছা বেশ। সকালের নাস্তায় কি খাবেন তা বলুন?”

“অনেকদিন রুটি খাইনা। ওটা করতে পারেন,তা রুটি গোল হয়তো?”

“কি ভাবেন পারিনা?”

“সেটা না। সাফা প্রথম প্রথম রুটি বানাতে পারতোনা,ওর জন্য সবচেয়ে কঠিন কাজ ছিল রুটি গোল করা।”
বলেই চুপ হয়ে গেল রাফসান।

“চলেন টেস্ট দেই।”

“টেস্ট দিতে হবেনা। চলুন আমিও হেল্প করবো।”

রাফসান আর সিতারা রুটি বানানোতে ব্যস্ত হয়ে গেল।

আফসানা ব্যাগপত্র গুছিয়ে নিচ্ছে তাহজীব দেখেও না দেখার মতো করে অফিসে চলে গেল। আফসানাকে থামানো তো দূর জিজ্ঞাসা করারও প্রয়োজনবোধ করলো না। তাঁর এমন অবজ্ঞায় আফসানার চোখে পানি থামছিল না।
“এ কেমন লোককে বিয়ে করেছি আমি। দোষ করেও এমন ভাব যেন আমি অন্যায় করেছি সে না!”

“এ কি আফসানা কোথায় যাচ্ছ?”

“বাসায় যাচ্ছি মা”

“তাহজীব জানে? ও আটকায় নি?”

আফসানা চুপ করে রইলো। তাহজীবের মা আফসানার মাথায় হাত রেখে বললো, ওর স্বভাবটাই এমন। কোনোকিছুরই তোয়াক্কা করেনা, তুমি কোথাও না গিয়ে বরং এখানে থেকেই ওকে পানিশ করো। ও যেই ভুলেও তোমায় আনতে যাবেনা।

আফসানা ভেবে দেখলো কথাটা ভুল না। তাহজীবের ঘাড়ের রগ ত্যাড়া এ তো সে জানেই। কিন্তু এখানে থেকে কি আসলেই কিছু করা যাবে??
______________

নগরীর রাত ১০টা অদ্ভুত এক সময়। এ সময়টাতে তাহজীবের আজকাল একটুও ভালো লাগেনা। অফিসে ইচ্ছে করে বসে থাকে, কাজ না থাকলেও কাজ তৈরি করে নেয়। বাসায় ফিরতে ইচ্ছে হয় না।
সিতারার নাম্বার আনব্লক করলেও টেক্সটগুলো স্পামে পড়ে আছে। এক বছরে জমা পড়েছে শ’খানেক মেসেজ। সেইসব দেখার সাহস হয়না তাঁর। নিজেকে কেমন ছদ্মবেশী ডেভিল মনে হয়। সিতারাকে সে কখনওই ভুলতে পারেনি, পারবেওনা হয়তো। অথচ আফসানার সঙ্গে কি সুন্দর অভিনয় করেছে। নাহয় সদ্য পরিচিত হওয়া মেয়েটাকে বিয়ে করা এটা জেদ নয়তো কি? ভেবেছিল সিতারার চেয়ে দ্বিগুণ রুপবতী কাউকে জীবনে জড়ালে সিতারার মনপ্রাণ জ্বলে যাবে। কত্ত পৈশাচিক চিন্তাভাবনাই না তাঁর!! সে যেন ভুলেই বসেছিল দিনশেষে সিতারার জন্য মন ব্যাকুল হবে।

বেশ কয়েক জায়গায় সিভি জমা দিয়েছে রাফসান।যদিও জব নিয়ে সিতারা কিছু বলেনি তবে এখন তো আর ছন্নছাড়া ভাব নিয়ে চলা ঠিক না। সংসারে যখন বাঁধা পড়েছে সবকিছুতে গুরুত্ব দিতে হবে।

“কাল আপনি ফ্রি আছেন?”

“কেন?”

“মা বলছিল বাসায় যেতে নিয়মমাফিক তো যাওয়া হয়নি”

“দেখেছেন কান্ড! ভুলেই গিয়েছিলাম, আমি খুব দুঃখিত সিতারা। আপনি আরো আগে মনে করালেন না কেন? ”

“হিহি সমস্যা নাই, এতো ফর্মাল হচ্ছেন কেন? সবে তো এক সপ্তাহ হলো,,”

“তবুও আপনাকে জিজ্ঞাসা করা উচিত ছিল,,”

“সেটা তো অবশ্যই। এখন থেকে সব জিজ্ঞাসা করবেন বুঝছেন?”

“সবসময় ফান তাই না?”

“হেহেহে কেউ ফর্মালিটি দেখালে আমার খুব মজা লাগে। হাসি আসে শুধু”

“হাসুন বেশি করে। হাসলে অবশ্য খারাপ লাগেনা,,”

“না হাসলে বুঝি লাগে?”

“নাহ সেটা বলিনি,,”

“তাহলে কি বলেছেন?”

“আপনি খুব প্যাঁচান!”

“হিহিহি। আপনি পঁচেন তাই প্যাঁচাই।”

“কি রান্না করলেন আজ খুব ক্ষুধার্ত আমি।”

“আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন। তারপর নিজেই দেখতে পাবেন,,,”

“ব্যাগটা খুলে দেখুন,,,,”

রাফসান ওয়াশরুমে চলে গেল সিতারা ব্যাগ খুলে দেখে বেলী ফুলের মালা আর চুলের কাঠি!
“বাহ! রাফসান সাহেব তো বেশ রোমান্টিক।”
চটজলদি কাঠি দিয়ে চুলে খোঁপা করে বেলীর মালা পেঁচিয়ে প্রফুল্লমনে রাফসানের জন্য খাবার পরিবেশন করতে লাগলো সিতারা। খেতে বসে রাফসান বললো,

“আজ দুপুরে বাসায় কে এসেছিল?”

“আফসানা ভাবী।”

“তিনি হঠাৎ?”

সিতারা কিছুক্ষণ থেমে বললো, সুখবর দিলো।

রাফসান আর কিছু বললো না। সিতারা নিজেই বললো, সেদিনের টেক্সটটা উনি দেখে ফেলেছিলেন। উনি মূলত এসেছেন আমাকে কনভিন্স করতে,,,

“আপনি কি ভেবেছেন? কথা বলবেন তাহজীবের সাথে?”

“হুম। এখন তো আর হেয়ালি করলে চলবেনা তাই না! জানেন ভাবীর চেহারা কেমন হয়ে গেছে। বেচারী,,,”

রাফসান মুচকি হেসে বললো, আপনি খুব মিষ্টি একটা মেয়ে,,,

” মিষ্টি বলেই কেউ বেশিদিন নিতে পারেনা,,,,,”

“আমি অনেক ঝাল খাই তো ব্যালেন্স হয়ে যাবে আশা করি,,”

“কথায় আপনি ওস্তাদ”

রাফসান মনে মনে বললো, আমি মোটেও ওস্তাদ নই। আপনার সঙ্গে কথা বলতে শুরু করলে অটোমেটিক সব কথা বের হয়। হয়তো এটা আপনারই প্রভাব,,,,,,

চলবে,,,