অরুণিকা পর্ব-১৩+১৪+১৫

0
368

#অরুণিকা
#লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ
||পর্ব-১৩||

২৫.
ঋতুর পরিবর্তনে সবাই অসুস্থ। প্রথম দিন থেকেই ইমন আর তূর্যের জ্বর। তারা টানা দুইদিন স্কুলে যায় নি, আর তূর্য তার থিয়েটারেও যাচ্ছে না। গতকাল থেকে আহনাফের জ্বর জ্বর লাগছে। প্রচন্ড মাথা ব্যথার জন্য সে বিছানা ছাড়তে পারছে না। তবুও সে অসুস্থ শরীর নিয়ে দোকানে গিয়েছিল। দোকানের মালিক ভালো লোক। তিনি আহনাফকে কিছুদিন ছুটি দিয়ে দেন। এদিকে আজ সকাল থেকেই অরুণিকা অসুস্থ। সে একদম চুপচাপ হয়ে গেছে। তার নুইয়ে পড়া দেখেই সবাই বুঝে গেছে, এই ভাইরাস জ্বর এবার তাকেও ধরেছে। সবারই ওষুধ চলছে। আপতত আরাফ আর ইভান সম্পূর্ণ সুস্থ আছে। তাহমিদেরও শরীর তেমন ভালো যাচ্ছে না। এর মধ্যে পুরো রাত বসে বসে নাস্তা বানিয়ে, সে সকালে স্কুলের পর তার দোকান খুলতে গেছে। এতোদিন ইমন তার সাথে ছিল। এখন ইমনের শরীর ভালো নেই, তাই সে একাই এসেছে। আজ রোদটাও খুব অসহনীয় লাগছে। তাহমিদের মাথাটাও ভারী হয়ে আছে। ক্রেতাকে ডাকার মতো তার কোনো শক্তিই নেই। সে শুধু একটা দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তখনই শতাব্দী তার বান্ধবী স্রেয়ার সাথে নৃত্যের ক্লাসে যাচ্ছিল। তাহমিদকে দেখেই সে দাঁড়িয়ে গেল।

স্রেয়া শতাব্দীকে বলল,
“তাড়াতাড়ি চল। দাঁড়িয়ে গেলি কেন?”

শতাব্দী অন্যমনস্ক হয়ে বলল, “মিষ্টি মশাই।”

স্রেয়া ভ্রূ কুঁচকে বললো,
“কি বললি? বুঝি নি তোর কথা।”

শতাব্দী তাহমিদের সামনে এসে দেখলো তার একটা মিষ্টিও আজ বিক্রি হয় নি। তাহমিদও মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। শতাব্দী তাহমিদের পাশে এসে বলল,
“মিষ্টিমশাই। কি করছো এখানে?”

শতাব্দীর কন্ঠ শুনে তাহমিদের ঘোর কাটলো। সে এতোক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঝিমুচ্ছিলো।

তাহমিদ শতাব্দীর দিকে তাকিয়ে বলল, “তুমি!”

“হ্যাঁ, নাচ শিখতে যাচ্ছি, দেখলাম তুমি এখানে।”

তাহমিদ কাঁপা কন্ঠে বললো,
“মিষ্টি বিক্রি করতে এসেছি।”

তাহমিদের শুকনো মুখটা দেখে শতাব্দীর কষ্ট হলো। সে তাহমিদের কপালে হাত রেখে বলল,
“এমা, অনেক জ্বর এসেছে।”

তাহমিদ হালকা হেসে বলল,
“আরেহ না। প্রচন্ড রোদ তাই শরীর গরম হয়ে গেছে।”

“হয়েছে। এই রোদে তোমার সুন্দর চেহারাটা পুড়িয়ে ফেলতে হবে না। বাসায় যাও। দেখো তোমার পুরো মুখ লাল হয়ে গেছো। মনে হচ্ছে কেউ তোমার পুরো মুখে শুধু চড় দিয়ে গেছে।”

তাহমিদ ভ্রূ কুঁচকে শতাব্দীর দিকে তাকালো। শতাব্দী বলল,
“মা, যখন পুচকিকে মারে, তখন এভাবেই গাল লাল হয়ে যায়। তবে আমি কখনো মার খাই নি।”

তাহমিদ হাসলো। শতাব্দী বলল,
“মিষ্টিগুলো আমি খেয়ে ফেলি?”

তাহমিদ আহত দৃষ্টিতে তার দিকে তাকালো। শতাব্দী তাহমিদের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,
“আরেহ মিষ্টিমশাই, কিনে নেবো তো। এমনিতে দিতে বলছি না।”

এবার তাহমিদ মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করলো,
“ক’টা লাগবে?”

“সব দাও।

“সব?”

“হ্যাঁ। সব। তুমি তো জানোই, আমার মিষ্টি অনেক প্রিয়।”

“তোমার তো সবই প্রিয়।”

শতাব্দী হালকা হেসে বলল,
“মিষ্টিমশাই যা বানায়, তাই আমার প্রিয়। সবই না।”

কথাটি শুনে তাহমিদ এক নজর শতাব্দীর দিকে তাকিয়ে মিষ্টিগুলো প্যাকেটে ঢুকাতে লাগলো।

এদিকে শতাব্দী সব মিষ্টি কিনে নিয়ে চলে গেলো। আর তাহমিদ বাসায় এসে ধপাস করে মেঝেতে শুয়ে পড়লো। শরীরের ভার ছেড়ে দেওয়ায় সে মেঝেতে পড়ে হালকা ব্যথাও পেয়েছে। এদিকে বাসায় আরাফ আর ইভান নেই। ইমন আর তূর্য ঘুম। আহনাফের প্রচন্ড জ্বর। সেও আধোঘুমে আছে।
তাহমিদ অনেক কষ্টে মাথা তুললো। এই মুহূর্তে তার শরীরে বিন্দুমাত্র শক্তি নেই। কিভাবে বাসা অবধি এসেছে সে নিজেও জানে না।
এদিকে অরুণিকা বসে বসে খেলছিল। সে তাহমিদকে কাঁপতে দেখে তার কাছে এসে বসে বলল,
“তাহমিদ, তোমার কি হয়েছে?”

তাহমিদ কাঁপা কন্ঠে বললো,
“ওপাশ থেকে একটা বালিশ এনে দাও তো।”

অরুণিকা বালিশ এনে তাহমিদের মাথার নিচে দিয়ে বলল,
“আমি তোমার মাথায় হাত দেবো?”

“না, তুমি আমার জন্য একটা কাঁথা এনে দাও।”

অরুণিকা আশেপাশে কাঁথা খুঁজতে লাগলো। বাসায় মাত্র দুটি কাঁথা ছিল। একটা এখন ইমন আর তূর্য ভাগাভাগি করে নিয়েছে। আরেকটা আহনাফের দখলে। অরুণিকা বিছানায় উঠে আহনাফকে কয়েকবার ডাকলো। আহনাফ হুম, হুম শব্দ করে আবার ঘুমিয়ে গেলো। অরুণিকা এবার টেনেটুনে কাঁথাটা আহনাফের কাছ থেকে নিয়ে তাহমিদের উপর চড়িয়ে দিলো। তাহমিদ একপাশে জড়োসড়ো হয়ে শুয়ে রইলো। কিছুক্ষণ পর আহনাফ ঠান্ডায় কাঁপতে লাগলো। সে বিড়বিড় করে কিছু বলার চেষ্টা করছে। অরুণিকা আবার আহনাফের কাছে গিয়ে বলল,
“তুমি কি বলছো? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।”

অরুণিকা একদম আহনাফের মুখের কাছে কান লাগিয়ে দিলো। এবারও সে কিছু বুঝলো না। তাই সে আবার আহনাফকে ডাকলো।

“এই আহনাফ, উঠো। কি বলছো?”

আহনাফ ভ্রূ কুঁচকে চোখ খুলে অরুণিকাকে দেখে বিরক্তির সুরে বলল,
“কি সমস্যা তোমার? যাও এখান থেকে।”

“তুমি কি বলছো?”

আহনাফ ধমক দিয়ে বলল,
“আরেহ যাও বলছি। যাও।”

অরুণিকা এক ধমকে চুপ হয়ে গেলো। আহনাফ কিছুক্ষণ পর হালকা চোখ খুলে দেখলো, অরুণিকা ঠোঁট ফুলিয়ে তার দিকে তাকিয়ে বসে আছে। আহনাফ হালকা হাসলো। অরুণিকাকে টেনে বুকের উপর বসিয়ে বলল,
“অরু, আমার শরীর ভালো না। একটা কাজ করবে?”

অরুণিকা মাথা নেড়ে বলল, “কি কাজ?”

“একবার আমার বাম পায়ে হাঁটবে, আরেকবার ডানপায়ে। এরপর দুই হাতে। তারপর মাথার চুলগুলো একটু পর পর টেনে দেবে। তারপর মাথায় আর কপালের দুই দিকে একটা মাসাজ করে দেবে। মনে থাকবে তো? আর আমি ঘুমাচ্ছি, আমাকে কিছুক্ষণ পর পর ডাকবে না। ঠিক আছে?”

অরুণিকা আহনাফের কথা মতো তার হাত পায়ে হাঁটাহাঁটি করতে লাগলো। আর কিছুক্ষণ পর পর তার চুল টেনে দেওয়ার পাশাপাশি মাথাটাও টিপে দিতে লাগলো। কয়েকবার এমন করার পর, অরুণিকার বেশ মজাই লাগছিল। আহনাফের পা দুটি তার কাছে রেল লাইনের লোহার পাতের মতো মনে হচ্ছে। সে দেয়াল ধরে ধরে সেই পায়ের উপর হাঁটছে আর লাফাচ্ছে। এদিকে অরুণিকাকে কাজ দিয়ে আহনাফ আরাম করে ঘুমাচ্ছে।

প্রায় আধাঘন্টা পর অরুণিকা ক্লান্ত হয়ে আহনাফের পায়ের উপরই ঘুমিয়ে পড়লো। আরাফ আর ইভান বাসায় এসে দেখলো সবাই ঘুমাচ্ছে।
তারা দু’জনই সবার জ্বর মাপলো। ইমন আর তূর্যের আপতত ১০০ ডিগ্রি। আহনাফের ১০২। আর তাহমিদের ১০৩ হয়েছে। তবে অরুণিকার জ্বর নেই। আরাফ আর ইভান তাড়াতাড়ি তাহমিদকে ধরে বিছানায় শুইয়ে দিলো। ইভান ফার্মেসি থেকে ওষুধ এনে আহনাফ আর তাহমিদকে খাইয়ে দিলো। বাকী রাত আরাফ আর ইভান দু’জনই তাদের মাথায় জলপট্টি দিয়ে গেলো। সকালে সুরাইয়া আলেয়া খালাকে দিয়ে তাদের ব্যবহারের জন্য পানি আনালেন, আর ঘরটাও পরিষ্কার করিয়ে দিলেন। সকালের নাস্তা আর দুপুরের খাবারটা সুরাইয়া রেঁধে দিয়ে গেলেন।

সন্ধ্যায় শতাব্দী বাসায় এলো। বাসায় এসে দেখলো আহনাফ আর তাহমিদ ঘুমাচ্ছে। বাকীরা বসে আছে। ইমন শতাব্দীকে জিজ্ঞেস করলো,
“তুমি হঠাৎ?”

“হুম, তোমার শরীর ভালো?”

“হুম, এখন ভালো আছি। কিন্তু ভাই একটু অসুস্থ।”

“গায়ক সাহেব কোথায়?”

“ওর শরীর ভালোই আছে। রাতের খাবার কিনতে গেছে।”

“আরেহ, এখন বাইরে বেরুতে গেলো কেন? আরো কিছুদিন বিশ্রাম কর‍তে পারতো?”

আরাফ বলল,
“ওর বাসায় ভালো লাগছিল না, তাই। ওকে তো বললাম আমিই গিয়ে নিয়ে আসি। কিন্তু আমাকে যেতে দেয় নি।”

“ওহ, মিষ্টিমশাই কি ঘুমোচ্ছে?”

“হুম।”

শতাব্দী পা উঁচিয়ে তাহমিদের ঘুমন্ত মুখটা দেখার চেষ্টা করছিল। কিন্তু তাহমিদ উল্টোদিকে ফিরে ঘুমাচ্ছিল, তাই আর দেখা সম্ভব হয় নি। এবার শতাব্দী বলল,
“কাল থেকে আমাদের পূজা শুরু। এখন তো স্কুলও ছুটি। সবখানেই তো ছুটি, কাজেও যেতে হবে না। শুনো, মা বলেছে তোমাদের দাওয়াত করতে। তাই সবাইকে দাওয়াত দিতে এসেছি। তোমারও এসো। খালাদের কতোবার বলি, ওরা আসে না। দূর থেকেই দেখে।”

আরাফ বলল,
“আমরাও দূর থেকেই দেখবো না হয়। সবাই তো এখন অসুস্থ।”

“আচ্ছা, সমস্যা নেই। আমি সব বুঝি। তোমাদের ধর্মে বারণ আছে। পূজোয় যাওয়া যায় না। থাক, তোমাদের ধর্মের নিয়মগুলোকে আমরাও সম্মান করি। মাও তো বুঝে। কিন্তু ওই যে সবাইকে বলার একটা রীতি আছে। থাক, না এলে আসবে না। তাও আমরা সবাইকে দাওয়াত দেই। বাসায় অতিথি এলে অনেক ভালো লাগে।”

শতাব্দী থেমে বলল,
“আরেকটা কথা, মিষ্টিমশাই সুস্থ হলে কিন্তু ভালোই হতো। মিষ্টান্নভোজন কিন্তু ভালোই চলতো।”

ইমন বলল,
“হুম, কাল এই বিষয় নিয়েই কথা হচ্ছিল। থাক, সমস্যা নেই। এই মুহূর্তে ওর সুস্থতায় গুরুত্বপূর্ণ।”

“আমি সৃষ্টিকর্তাকে বলবো, যাতে এই ঘর থেকে সব রোগ কেটে যায়।”

আরাফ বলল, “ইনশাআল্লাহ।”

“কি বললে এটা?”

“আল্লাহ যদি চায়, তবে অবশ্যই হবে।”

শতাব্দী মুচকি হেসে বললো,
“আসি তাহলে।”

২৬.

ছ’জন অরুণিকাকে হন্যে হয়ে খুঁজছে। প্রায় পাঁচ ঘন্টা হতে চললো অরুণিকাকে পাওয়া যাচ্ছে না। আজ ছিল হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দূর্গা বিসর্জন। রাস্তায় মানুষের ঢল নেমেছে। বাঁধনকে বাসায় আটকে রাখা দায়। সে তার বন্ধুদের সাথে দেবী বিসর্জন দেখতে চলে গেছে। সাথে নিয়ে গেছে অরুণিকাকে। এখন বাঁধন ফিরে এসেছে, কিন্তু অরুণিকাকে হারিয়ে ফেলেছে। এদিকে আরাফ আর ইভানের ১০৩ ডিগ্রি জ্বর। তারা দু’জনই বিছানা ছেড়ে উঠতে পারছে না। ইমন আর তূর্য পুরোপুরি সুস্থ হয়ে গেছে। আহনাফ এখনো দুর্বল, আর তাহমিদের জ্বর ওঠানামা করছে।

অসুস্থতা, দুর্বলতা সব ভুলে এখন ছ’জনই দিশাহারা হয়ে গেছে। তারা পাগলের মতো ছুটোছুটি করছে তাদের অরুকে একনজর দেখার জন্য।

অনেকক্ষণ খোঁজার পর আরাফ ক্লান্ত হয়ে মাটিতে বসে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। তূর্য একপাশে বসে বার-বার মনকে বোঝাচ্ছে, তার টুইংকেলকে সে এখনই ফিরে পাবে। এদিকে ইভান জ্বরের ঘোরেই বাঁধনকে দুটো চড় বসিয়ে দিয়েছে। বাঁধনের ফুঁপোনো দেখে সুরাইয়া ছেলেকে আর বকলেন। তিনিও আলেয়া খালাকে নিয়ে আশেপাশে খুঁজতে লাগলেন। আহনাফ আর তাহমিদ অনেক দূরে চলে গেছে। কিন্তু কোথাও অরুণিকাকে পায় নি। শতাব্দীদের পরিবার বাসায় ফেরার পর সব শুনে অনেক ভয় পেলো। কারণ বিসর্জনের সময় পদদলিত হয়ে অনেকেই আহত হয়। বাচ্চাদের ওইসময় দূরে রাখা হয়। অরুণিকা যদি ভীড়ের মধ্যে পড়ে, তাহলে হয়তো কোনো অঘটন ঘটে যাবে।

আহনাফ এসব শুনে আবার ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। এবার সে একাই বেরিয়েছে। যেই দিক দিয়েই অরুণিকার যাওয়া সম্ভব, সেই দিক দিয়ে হেঁটে নদীর ঘাট পর্যন্ত গিয়েছে। নদীর ঘাটের কাছে এসেই আহনাফ সেখানেই বসে পড়লো। তার মাথাটা ভো ভো করছে। ইচ্ছে করছে বাঁধনকে বেধড়ক পেটাতে। তখনই পেছন থেকে দুটি হাত তার গলা জড়িয়ে ধরলো। সেকেন্ডের জন্য আহনাফ থমকে গেলো। পেছন ফিরে দেখলো, অরুণিকা কান্নাভেজা চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। আহনাফ বসা থেকে উঠে অরুণিকাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। অরুণিকা আহনাফের গলা জড়িয়ে ধরে বলল,
“আমি অনেক ভয় পেয়েছি, জানো? ওরা অনেক পঁচা।”

আহনাফ অরুণিকাকে ছেড়ে দিয়ে তার মুখের দিকে তাকালো। কাঁপা কন্ঠে বললো,
“কার কথা বলছো?”

“দু’টো আংকেল।”

আহনাফ ব্যস্ত কন্ঠে বললো,
“কি করেছে তোমার সাথে?”

তখনই সামনে একজন দম্পতি এসে দাঁড়ালো। তাদের দেখে আহনাফ দাঁড়িয়ে গেলো। অপরিচিত মহিলাটি বললেন,
“ও তোমার কে হয়?”

“আমার চাচাতো বোন। আপনাদের পরিচয়?”

“আমরা এখানে বিসর্জনের সময় এসেছিলাম। তারপর একপাশে দাঁড়িয়ে গল্প করছিলাম। তখন দেখলাম দু’জন মাঝবয়সী লোক ওকে নিয়ে যেতে চাইছে। কিন্তু ও বারবার হাত ছোঁড়াছুড়ি করছিল, যেতে চাইছিল না। আমার সন্দেহ হলো, তাই আমি আমার স্বামীকে বললাম। তারপর ওকে নিজেদের কাছে রাখলাম। এতোক্ষণ আশেপাশে খুঁজছিলাম যদি কেউ নিতে আসে। আমাদের বাড়ি কাছেই। তাই ওকে বাসায় নিয়ে গেলাম। ও অনেক কান্নাকাটি করছিল। এখন থানায় যাওয়ার আগে আরেকবার এলাম এদিকটাই। তারপর ও তোমাকে দেখেই দৌঁড়ে এলো।”

আহনাফ অরুণিকাকে কোলে নিয়ে বলল,
“আপনাদের অনেক অনেক ধন্যবাদ। আপনারা আমাদের জীবন ফিরিয়ে দিয়েছেন। ওর কিছু হলে, আমাদের কি হতো ভাবতেই পারছি না।”

সেই দম্পতি হাসিমুখে বিদায় নিলো। আহনাফ ফোন বের করে বাসায় জানালো অরুণিকাকে পাওয়া গেছে। তারপর অরুণিকাকে কোলে বসিয়ে কিছুক্ষণ নদীর ঘাটে বসলো। তার শরীর এখনো কাঁপছে। তার হাতের মুঠোয় অরুণিকার হাত। অরুণিকার চোখেমুখে এখনো ভীতি। কিন্তু ভীতির মাঝে থেকেও সে বুঝে গেছে, সে এই মুহূর্তে নিরাপদ স্থানেই আছে, তাই তো এতো শান্ত হয়ে বসে আছে। তার চোখে ভয় থাকলেও একটা আলাদা প্রশান্তির রেশ ফুটে উঠেছে। এই চাহনির ব্যাখ্যা দেওয়া সম্ভব নয়। তবে এক বাক্যে বলা যায়, এক অবুঝ বালিকা বেলাশেষে ফিরে পেয়েছে তার শান্তির ঠিকানা।

আহনাফ অরুণিকার ছোট্ট হাতে তার ঠোঁট চোয়ালো, আর ফুঁপিয়ে উঠলো। অরুণিকা আহনাফের দিকে তাকালো। আহনাফের চোখ ছলছল করে উঠলো। বলল,
“অরু, খুব ভয় পেয়েছিলাম। মনে হয়েছিল, সেই ভয়ংকর মুহূর্তটা আবার ফিরে এসেছে। মনে হচ্ছিল সব মুহূর্তেই শেষ হয়ে যাবে।”

অরুণিকা আহনাফের চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল,
“আমি আর তোমাদের না বলে বের হবো না। তোমাদের সব কথা শুনবো।”

আহনাফ মুচকি হেসে বলল,
“আরাফ, ইভান, ইমন, তাহমিদ আর তোমার রকস্টার তোমার জন্য বসে আছে। চলো বাসায়।”

আহনাফ অরুণিকার হাত ধরে তাদের গন্তব্যে ফিরে যাচ্ছে। সূর্যও অস্তগামী হচ্ছে। অস্তগামী সূর্যের রক্তিম আভায় আকাশটা লালচে হয়ে গেছে। অরুণিকা সেই আকাশের দিকে তাকিয়ে হাঁটতে লাগলো, আর আহনাফকে প্রশ্ন করতে লাগলো, আকাশ এতো বড় কেন? আকাশ লাল হয়ে গেছে কেন? আকাশ নীল হয় কেন? আকাশ কিভাবে ধরা যাবে? ইত্যাদি ইত্যাদি অনেক প্রশ্ন। আহনাফ কিছু প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে, আবার অজানা প্রশ্নগুলোকে পাশ কাটিয়ে প্রসঙ্গ পালটে দিচ্ছি। এভাবেই তারা গল্প করতে করতে বাসায় চলে এলো।

চলবে-

#অরুণিকা
#লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ
||পর্ব-১৪||

২৭.
মাওশিয়াতের দৃষ্টিতে অস্থিরতা। আর ইমনের দৃষ্টি মাওশিয়াতের দিকেই স্থির। তাদের শ্রেণিকক্ষে তিনটি সারি। মাওশিয়াত সবসময় শুরুর সারিতে প্রথম বেঞ্চেই বসে। আর ইমন মধ্যের সারিতে তৃতীয় বেঞ্চে আহনাফ আর তাহমিদের সাথে বসবে। এটাই তাদের প্রতিদিনকার বসার নিয়ম। তবে ইভান আর আরাফ মধ্যের সারিতে প্রথম বেঞ্চে বসবে, আর তূর্য একদম শেষ বেঞ্চে। আজ প্রথম বেঞ্চে অন্য কেউ বসেছে। কারণ আরাফ আর ইভান স্কুলে আসে নি। শুধু ইমন আর তূর্যই এসেছে। আর ইভানকে না দেখেই মাওশিয়াতের দৃষ্টিতে এমন অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। ক্লাস শেষে মাওশিয়াত ইমনের সামনে এসে দাঁড়ালো। ইমন চুলে হাত চালাতে চালাতে বলল,
“অনেকদিন পর দেখা হলো।”

মাওশিয়াত মুচকি হেসে বলল,
“হুম, শুনলাম তুমি অসুস্থ ছিলে! এখন কেমন আছো?”

“একদম ফিট।”

“আচ্ছা, ইভানকে দেখছি না!”

“ভাই অসুস্থ, তাই আজ আসে নি।”

মাওশিয়াত চিন্তিত কন্ঠে বলল,
“কি হয়েছে ইভানের?”

“জ্বর ছিল। তবে আজ একটু কমেছে। আরাফও অসুস্থ। ওরও জ্বর। আহনাফ হয়তো কাল থেকে আসবে।”

“ওহ।”

মাওশিয়াত অন্যমনস্ক হয়ে ইমনকে পাশ কাটিয়ে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই ইমন বলল,
“চলো, এখন তো ব্রেক আছে। একটু বসি কোথাও।”

“না, আমার এখন কথা বলতে ইচ্ছে করছে না।”

মাওশিয়াত চলে গেলো। আর ইমন মলিন মুখে তার যাওয়া দেখছে। বাসায় এসেই ইমন ইভানকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“ভাই, আমি যখন অসুস্থ ছিলাম মাওশিয়াত আমার কথা জিজ্ঞেস করেছিল?”

ইভান সেই মুহূর্তে খাচ্ছিলো। সে খাওয়া বাদ দিয়ে ইমনের দিকে ভ্রূ কুঁচকে তাকালো। ইমন বলল,
“এভাবে দেখিস না। তাড়াতাড়ি আমার প্রশ্নের উত্তর দে।”

ইভান কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো। ইমন তাড়া দিয়ে বলল,
“এতো ভেবে উত্তর দিচ্ছিস কেন?”

ইভান বলল,
“আগে এটা বল, তোর মাওশিয়াতের ব্যাপারে এতো আগ্রহ কেন?”

“তুই প্রসঙ্গ পাল্টাচ্ছিস কেন? আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দে।”

“হ্যাঁ, করেছিল।”

ইমন কথাটি শুনে এক গাল হেসে বলল,
“আচ্ছা আমি গোসল সেরে আসছি। আমার জন্য খাবার তুলে রাখিস।”

ইভান ইমনকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“মাওশিয়াতের ব্যাপারে ওতো ঘাঁটাঘাঁটি করিস না। ও তোর জন্য ভালো হবে না।”

ইমন ইভানের দিকে ভ্রূ কুঁচকে তাকালো। ইভান ইমনের দিকে তাকিয়ে বলল,
“দেখ, মেয়েটাকে আমার সুবিধার মনে হয় না। ও স্বার্থ দেখে বন্ধুত্ব করে। আর প্রচন্ড অহংকার ও জেদ নিয়ে চলাফেরা করে। তুই ওকে নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট করিস না।”

এবার তূর্য বলল,
“আমি তো ইমনকে বলেছি, মেয়েটাকে আমার মোটেও ভালো লাগে না। কারো সাথেই কথা বলে না। ইভানের সাথে ভাব জমিয়েছে ও ভালো ছাত্র তাই।”

তাহমিদ বলল,
“তাহলে ইমনের সাথে বন্ধুত্ব করেছে কেন?”

“হয়তো ইভানের সাথে ভাব জমানোর জন্য।”

ইমন কথাগুলো শুনেই দমে গেল৷ সে তাড়াতাড়ি কাপড় বের করে ওয়াশরুমে চলে গেলো।

বিকেলে গেইটে শব্দ হওয়ায় দরজার কাছে গিয়ে ইমন অবাক হলো। মাওশিয়াত হাত নাড়িয়ে বলল,
“বাসায় ঢুকতে দেবে না?”

ইমন গেইট খুলে মাওশিয়াতকে ভেতরে আনলো। ঘরে ঢুকেই মাওশিয়াত পুরো ঘরে চোখ বুলিয়ে নিলো।

মনে মনে বলল,
“এইটুকু ঘরে ছ’জন!”

বাম পাশের খাটে আরাফ ঘুমাচ্ছে। আর তার পাশেই শুয়ে শুয়ে ফোন চালাচ্ছে তূর্য। ডান পাশের খাটে অরুণিকা ঘুমাচ্ছে। আর মেঝেতে বেড বিছিয়ে ঘুমাচ্ছে ইভান। তাহমিদ বসে বসে পড়ছে। তার অনেক দিনের পড়া জমে গেছে। এতোদিন অসুস্থ থাকায় একটুও পড়া হয় নি। তাই আপতত দোকান না খুলে সে পড়াতেই মনোযোগ দিয়েছে। আর আহনাফ সেই মুহূর্তে বাসায় ছিল না। সে দোকানে গিয়েছিল।

মাওশিয়াতকে দেখে তূর্য বিছানা ছেড়ে উঠে বসলো। এরপর ইমনের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকালো। মাওশিয়াত আশেপাশে তাকিয়ে তাহমিদকে পড়তে দেখে বলল,
“এই বেলায় কেউ পড়ে?”

তাহমিদ মেয়েলী কন্ঠ শুনে বইয়ের পাতা থেকে চোখ তুলে মাওশিয়াতকে দেখে চমকে উঠলো। অবাক কন্ঠে বললো, “তুমি এখানে?”

মাওশিয়াত তার কাঁধের ব্যাগ থেকে একটা থলে বের করে বলল,
“তোমাদের দেখতে এলাম।”

এরপর সে ইমনের হাতে থলেটা ধরিয়ে দিয়ে তাহমিদের দিকে এগিয়ে এসে বইটা দেখে বলল,
“বাহ! সবই তো পড়ে ফেলছো! তবে তোমার আগে আরো অনেকেই আছে।”

তাহমিদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“অনেকদিন অসুস্থ ছিলাম, তখন একটুও পড়াশুনা হয় নি। তাই এখন একটু পড়তে বসলাম। সামনে তো বার্ষিক পরীক্ষা।”

মাওশিয়াত পাশ ফিরে অরুণিকাকে দেখে ভ্রূ কুঁচকে বললো,
“এটা আবার কে?”

কাছে গিয়ে অরুণিকার মুখের উপর থেকে কাঁথাটা সরিয়ে বলল,
“এই পিচ্ছিটা কে?”

তূর্য বলল,
“আমার টুইংকেল।”

“টুইংকেল! তোমাদের বোন?”

তাহমিদ তূর্যের দিকে শীতল দৃষ্টিতে তাকালো। ইমন বলল,
“হ্যাঁ, আমাদের বোন।”

মাওশিয়াত ভ্রূ কুঁচকে বলল,
“আমি তো কথার কথা বলেছি। কিন্তু তোমাদের বোন কিভাবে হলো? তুমি আর ইভানই তো আপন ভাই। বাকিরা তো তোমাদের বন্ধু। তাহলে এ মেয়ে কার বোন? তোমাদের নাকি..”

তাহমিদ বলল,
“আমার বোন। আমার আপন বোন।”

হঠাৎ আরাফ নড়েচড়ে তূর্যকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলল,
“বকবক করছিস কেন? চুপ কর, মাথা ব্যথা করছে।”

তূর্য বলল, “মাওশিয়াত এসেছে।”

আরাফ তূর্যের দিকে তাকিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে বসলো। মাওশিয়াত অরুণিকার পাশে বসে আরাফের দিকে তাকিয়ে বলল,
“কেমন লাগছে এখন?”

আরাফ বলল, “মোটামুটি।”

“আচ্ছা। ইভান নিচে ঘুমাচ্ছে কেন? ওর ঠান্ডা লাগবে না?”

তাহমিদ বলল, “নিচে বেড আছে।”

“তা তো দেখছিই। আচ্ছা, তোমরা রাতে কোথায় ঘুমাও?”

“এখানেই।”

“তুমি তোমার বোনের সাথে থাকো, তাই না?”

আরাফ ভ্রূ কুঁচকে মাওশিয়াতের দিকে তাকালো। তূর্য আরাফের কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলল,
“তাহমিদ ওকে বলেছে টুইংকেল ওর আপন বোন।”

আরাফ বিড়বিড় করে বলল,
“এই মেয়ে এখানে কেন এসেছে? ও তো জানে আমরা আপন ভাই না। আর এলাকার সবাই জানে আমরা ভাই ভাই। এখন সত্যটা জানাজানি হয়ে গেলে?”

“ধুর, ও কি মাইক নিয়ে বলবে নাকি আমরা আপন ভাই না। ও এসেছে, আবার চলেও যাবে।”

“রাস্তায় কেউ যদি ওকে দেখে জিজ্ঞেস করে?”

“চিন্তা করিস না। ওকে আমি নিজেই গাড়িতে তুলে দেবো। এই মহল্লা থেকে বের না হওয়া অবধি ও আমার নজরে থাকবে। দেখছিস না, এখনই এসে জিজ্ঞেস করছে টুইংকেল কার বোন!”

“এই মেয়ের এতোকিছু জেনে কি হবে?”

“আল্লাহই জানে। আমাদের উপর পি.এইচ.ডি করে ফেলবে মনে হয়।”

মাওশিয়াত ইভানের ঘুম ভাঙার অপেক্ষায় ছিল। ইভান উঠতেই সে ইভানের পাশে বসে বলল,
“ইমন বলল তুমি অসুস্থ। তাই আমি তোমার জন্য ফলমূল নিয়ে এসেছি।”

এবার তূর্য বলল,
“শুধুই কি ইমন অসুস্থ? আরাফও তো অসুস্থ। এখন ফলগুলো কি শুধু ইভানই খাবে?”

“আরেহ না। তোমরাও খাবে। আমি তো এমনিতেই বললাম।”

অরুণিকা অনেকের কন্ঠ শুনে ঘুম থেকে উঠে বসলো।মাওশিয়াত তার দিকে তাকিয়ে হাত নাড়িয়ে বলল,
“হাই, কেমন আছো বাবু?”

অরুণিকা মাওশিয়াতের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে বিছানা ছেড়ে নেমে আরাফের কাছে ছুটে গেলো। এটা অরুণিকার প্রতিদিনকার অভ্যাস। সে ঘুম ভাঙলেই আরাফের কোলে উঠে বসে থাকবে। আর তার কোলেই বাকি ঘুম কাটিয়ে সে নেমে পড়বে। এই কাজটা তার বাবার ছিল। এখন সেই কাজটা আরাফের উপর এসেছে।

মাওশিয়াত আরাফকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“মনে হয়, তাহমিদের চেয়ে ও তোমার প্রতি একটু বেশিই দুর্বল।”

ইমন বলল,
“আরেহ, তাহমিদ সকালে ওকে বকেছিল। তাই তাহমিদের সাথে রাগ করেছে।”

“ওহ আচ্ছা, তাই বলো।”

মাওশিয়াত অরুণিকার কাছে এসে বলল,
“হাই, বাবু কথা বলবে না?”

অরুণিকা মাথা নেড়ে না বললো। আরাফ অরুণিকার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে মাওশিয়াতকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“ও ঘুম থেকে উঠলে কারো সাথে কথা বলে না।”

“ওহ আচ্ছা। কি নাম ওর?”

“অরুণিকা।”

তাহমিদ তূর্যকে ইশারায় বললো, মাওশিয়াতকে তাড়াতাড়ি পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে। তূর্যও কথার ফাঁকে বলল,
“আমি এখন বের হচ্ছি। মাওশিয়াত, চলো তোমাকে গাড়িতে উঠিয়ে দেই।”

মাওশিয়াত বসা থেকে উঠে ইভানের দিকে তাকিয়ে বলল,
“তুমি ক্লাসে কখন আসবে?”

ইভান বলল, “যখন সুস্থ হবো।”

“আমি চাই, তুমি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ক্লাসে আসো।”

কথাটি বলে মাওশিয়াত মুচকি হেসে বিদায় নিলো। ইভানও সৌজন্যমূলক হাসি ফেরত দিলো। আর ইমন তাদের দুইজনের দিকে চেয়ে রইলো।

রাতে খাবারের সময় সবাই গোল হয়ে বসে খাচ্ছিলো। তখনই ইমন ইভানকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“একটা বিষয় বুঝলাম না। আমি যখন অসুস্থ ছিলাম, তুই মাওশিয়াতকে বলেছিস। তবুও ও আমাকে একবারও দেখতে এলো না। অথচ তোকে দেখতে এলো। কেন ভাই? তোর সাথে তো ওর তেমন বন্ধুত্বও নেই।”

ইভান ইমনের দিকে ভাবুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
“জানি না। আমি কিভাবে বুঝবো? আমার ওকে মোটেও পছন্দ না।”

“তোর তো কোনো মেয়েই পছন্দ না। মনে আছে, মা কি বলতো? মা বলতো তুই নাকি বউ মেরে আসামী হবি।”

ইভান দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
“আমি রাগী স্বভাবের, তাই বলতো।”

“ভাই, আমি চাই না মাওশিয়াত তোকে বেশি গুরুত্ব দিক। তুই ওর থেকে একটু দূরে থাকিস।”

আহনাফ খাওয়া বাদ দিয়ে বলল,
“তোর মনে ভালোবাসার ফুল ফুটেছে নাকি? ইমন, তুই কিন্তু আমাদের ছোট!”

“তো, তাও একবছরের। কিন্তু এখন তোরা সবাই আমার ক্লাসে পড়ছিস।”

তাহমিদ বলল,
“ওটা পরিস্থিতির জন্য হয়েছে। আর একমাস পর আমাদের এস.এস.সি পরীক্ষাটা ছিল। কিন্তু তখনই দেশ ছাড়তে হয়েছে। নয়তো এতোদিনে আমরা কলেজের সিনিয়র হতাম।”

ইমন বলল,
“থাক, বয়স অনুসারে আমরা ঠিকই আছি।”

তাহমিদ আবার জিজ্ঞেস করলো,
“আচ্ছা, তোদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি? কি করবি এরপর?”

আরাফ বলল,
“মেডিক্যালের জন্য পড়াশুনা করবো।”

আহনাফ বলল,
“আমার তো টাকা প্রয়োজন। ভাবছি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হয়ে টেকনিক্যাল কাজগুলো শিখবো। এটা আমায় কাজ দেবে, অভিজ্ঞতাও হবে।”

ইমন বলল,
“আর আমার ফুটবল খেলার স্বপ্ন কি পূরণ হবে না?”

আহনাফ বলল,
“আগে স্কুলের ফুটবল ম্যাচে অংশগ্রহণ কর। যদি জিততে পারিস। সব সেট হয়ে যাবে।”

তূর্য বলল,
“ওহ, হ্যাঁ, আমাদের তো আগামী সপ্তাহ থেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন হবে। আমি তো ভাবছি গানে দেবো।”

ইভান জিজ্ঞেস করলো,
“তাহমিদ, তুই কি দিবি?”

“খাবার তৈরী করার প্রতিযোগিতা থাকলে অবশ্যই দিতাম। কিন্তু এখন পড়াশুনা করতে হবে। পরীক্ষা ভালো না হলে, আরেক ঝামেলা। আর্থিক সহযোগিতার জন্য একটা আবেদন পত্র লিখবো। তাই আমাকে ভালো একটা নম্বর তুলতে হবে।

আরাফ অরুণিকার দিকে তাকিয়ে বললো,
“আগামী বছর অরুকে স্কুলে দেবো।”

অরুণিকা আরাফের দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমি তোমাদের মতো স্কুলে যাবো?”

“হ্যাঁ।”

“আমার ব্যাগ লাগবে, ড্রেসও লাগবে। কার্টুন বক্স লাগবে।”

ইভান বলল,
“হয়েছে, তার সব লাগবে। শুধু পড়াশুনা করতে বসলেই যতো অসুস্থতা!”

অরুণিকা মলিন মুখে ইভানের দিকে তাকালো। আরাফ তার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
“এখন পড়তে হবে না। খেয়ে নাও।”

অরুণিকা আরাফের কানের কাছে এসে বলল,
“আরাফ, তুমি ওই পঁচা ছেলের সাথে কথা বলবে না। কেমন?”

“আচ্ছা, বলবো না।”

ইভান ভ্রূ কুঁচকে বলল, “কি বললো ও?”

অরুণিকা মুখ বাঁকিয়ে বলল,
“তোমাকে বলবো না। এটা আমার আর আরাফের সিক্রেট।”

চলবে-

#অরুণিকা
#লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ
||পর্ব-১৫||

২৮.
ইমনকে দেখেই মাওশিয়াত তার সামনে ভ্রূ কুঁচকে দাঁড়ালো। মাওশিয়াত বুকে হাত গুঁজে বলল,
“আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না তুমি খেলায় নাম দিয়েছ।”

ইমন হেসে বলল,
“বিশ্বাস না হওয়ার কি আছে?”

“আমার মনে হয় না তুমি ফুটবল খেলতে পারো।”

“মনে না হওয়ার কারণ কি?”

“তোমাকে দেখে মনে হয় না।”

আহনাফ ইমনের কাঁধে হাত রেখে মাওশিয়াতকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“মানুষের দক্ষতা তার চেহারার মধ্যে থাকে না। এই দক্ষতা বোঝার জন্য উদার মন দরকার। আর তোমার মন-মানসিকতা একটুখানি। তাই তোমার হয়তো মনে হয় না।”

মাওশিয়াত তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আহনাফের দিকে তাকিয়ে রইলো। ইমন আহনাফের কথা কাটিয়ে দেওয়ার জন্য বলল,
“আরেহ আহনাফ, সবসময় মজা করিস কেন?”

আহনাফ বাঁকা চোখে মাওশিয়াতের দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমাকে কিন্তু ইমন ভালো করেই চিনে। আমি সবসময় সিরিয়াস কথা বলি। মজা করার মতো মন-মানসিকতা আমার নেই।”

কথাটি বলে আহনাফ চলে গেলো। ইমন আহনাফের পিছু পিছু এসে বলল,
“তুই মাওশিয়াতকে এভাবে অপমান করেছিস কেন?”

আহনাফ ইমনের সামনে হাত নাড়িয়ে বলল,
“তোর মাথা নষ্ট হয়ে গেছে নাকি? ওকে আমি অপমান করেছি? বোকা ছেলে, ও তোকে অপমান করছিল। আমি শুধু ওকে ওর মানসিকতার সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি।”

ইমন চুপ করে রইলো। আহনাফ বলল,
“মনে হচ্ছে তুই মাওশিয়াতের ব্যাপারে খুবই সেনসিটিভ। প্লিজ ইমন, আমি চাই না তুই মানসিকভাবে কষ্টে থাক। ও তোকে নিয়ে ওভাবে চিন্তা করছে না। করবেও না।”

“কেন করবে না?”

“বয়স কত হয়েছে তোর?”

“খুব শীঘ্রই ষোলো শেষ হবে।”

“ষোলো বছর খুবই কম, ইমন। আর কিইবা আছে আমাদের? না আছে পরিচয়, না আছে নাম। এমন অবস্থায় আছি, যেখানে নিজের বংশ পরিচয় দিলেই বিপদ। সেখানে তুই প্রেম করবি? তাও আবার মাওশিয়াতের সাথে? ও এই দেশের। আর আমরা ভিনদেশি। ওর পরিবার এটা মেনে নেবে না, তারপর একটা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে। এতো ঝামেলা নিতে পারবি?”

“ভালোবাসায় সব সম্ভব।”

“তুই যেই অনুভূতিকে ভালোবাসা ভাবছিস, সেটা আসলে ভালোবাসা না।”

“যদি সত্যিই ভালোবাসা হয়? আমার তো মাওশিয়াতকে অনেক ভালো লাগে।”

আহনাফ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
“আশা করি বাইরের কারো জন্যই আমাদের ছ’জনের মধ্যে কোনো ঝামেলা হবে না।”

কথাটি বলেই আহনাফ চলে গেলো। ইমন পেছন ফিরে মাওশিয়াতের দিকে তাকালো। মাওশিয়াত তার বান্ধবীর সাথে গল্প করছে। ইমন এক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। এক মিনিট, দুই মিনিট, এভাবে অনেক সময় পার হয়ে গেলো। মাওশিয়াতও তার কথা শেষ করে ক্লাসে ঢুকে গেলো। কিন্তু তার চোখ একবারও ইমনের দিকে গেলো না। তাহলে কি আনমনেও মাওশিয়াতের দৃষ্টি ইমনকে খোঁজার চেষ্টা করে না? তাহলে এই বন্ধুত্বও কি মাওশিয়াতের কাছে মূল্যহীন?

ক্লাস রুমের সামনে খালি বারান্দায় ইমন দাঁড়িয়ে আছে। আজ তার বাবাকে খুব মনে পড়ছে। বাবা আর মা ইভানের চেয়ে তাকে একটু বেশিই ভালোবাসতো। কারণ সে বয়সে ছোট ছিল। সে কখনোই কোনো অপূর্ণতায় ছিল না। কিন্তু আজ সে যা চাইছে, তা সহজে পাচ্ছে না। এই না পাওয়ার যন্ত্রণা তাকে মনে করিয়ে দিচ্ছে সেই কালো রাতটির কথা। যদি সেদিন সেও বাবা-মার সাথে অনেক দূরে হারিয়ে যেতো? হয়তো তখন তাকে এতো আক্ষেপ করতে হতো না।

ইভানের কন্ঠে ইমনের ঘোর কাটলো। ইভানের পেছনে তাহমিদ, তূর্য, আরাফ আর আহনাফ দাঁড়িয়ে আছে। ইভান ইমনের দুই কাঁধে তার দুই হাত রেখে বলল,
“আমি জানি তোর এই সুযোগটা দরকার ছিল। তুই তো খেলতে চাস। এখন তোর স্বপ্ন পূরণের ছোট একটা পথ খুলে গেছে।”

তাহমিদ বলল,
“যারা মনে করে তোর মধ্যে কোনো ট্যালেন্ট নেই, তাদের দেখিয়ে দিতে হবে, ইমন কে!”

তূর্য ইমনের কাঁধে হাত রেখে বলল,
“শুধু পড়াশুনা করলেই সম্মানিত হওয়া যায় না। যারা সারাদিন বই নিয়ে বসে থাকে, তারাই ক্লাসে প্রথম হয়। আর যারা নিজেদের স্বপ্ন পূরণ করার জন্য সংগ্রাম করতে থাকে, তারা জীবনে প্রথম হয়।”

আরাফ বলল,
“ইমন, এখন প্র‍্যাক্টিসে যা।”

আহনাফ ইশারায় ইমনকে শুভেচ্ছা দিলো। ইমনও মুচকি হেসে চলে গেলো। এরপর এক সপ্তাহ কেটে গেলো। এক সপ্তাহ পর একাদশ শ্রেণির দুটি গ্রুপের মধ্যে ফুটবল খেলা হলো। সেই খেলায় ইমনদের দল জয়ী হলো। এভাবে দুই দিনের ব্যবধানে চারটি ম্যাচ হলো। চারটি ম্যাচে দুটি দল বাছাই করা হলো। এই দুটি দলের মধ্যেই এবার শেষ ম্যাচ হবে। যেই দল জিতবে, তাদের জন্য একটা সুযোগ থাকবে। তারা যদি ভালো খেলা প্রদর্শন করতে পারে, তাহলে তাদের অন্য স্কুলের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নিয়ে যাওয়া হবে।
শেষ ম্যাচের দিনই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। এদিকে বাছাই পর্বে তূর্যের নাম এসেছে। এখন স্কুলের পাঁচজন বাছাইকৃত শিক্ষার্থীদের মধ্যে গানের প্রতিযোগিতা হবে।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের দিন অরুণিকা আর শতাব্দীও আরাফদের স্কুলে গেলো। অরুণিকা আজ সাদা ফ্রক পরে অনুষ্ঠান দেখতে এসেছে। শতাব্দী নিজ হাতে অরুণিকাকে সাজিয়ে দিয়েছে। তাহমিদ অরুণিকার সাজ দেখে শতাব্দীকে বলল,
“একদম পুতুল বানিয়ে দিয়েছ!”

“ও তো পুতুলই।”

আরাফ অরুণিকার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বলল,
“তোমাকে আজ খুব সুন্দর লাগছে।”

অরুণিকা ফ্রক ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখিয়ে বলল,
“আমাকে কি পুতুলের মতো লাগছে?”

“হ্যাঁ, একদম পুতুল লাগছে।”

অরুণিকা মুখে হাত দিয়ে হাসলো। আহনাফ দূর থেকে সেই হাসি দেখে মুচকি হেসে ইভানকে বলল,
“আমাদের অরু বড় হয়ে যাচ্ছে, দেখ।”

ইভান অরুণিকার দিকে তাকিয়ে বলল,
“হ্যাঁ, সামনে ওর ছয় বছর পূর্ণ হবে। কিভাবে যে দুইটা বছর কেটে গেছে!”

এবার তূর্য তার গিটার নিয়ে মঞ্চে উঠলো। অরুণিকা হাততালি দিয়ে বলল,
“দেখো, রকস্টার।”

তূর্য অরুণিকার দিকে তাকিয়ে কন্ঠে গান ধরলো,

“খোলা চোখখানা করো বন্ধ,
বাতাসের ঠাণ্ডা গন্ধ
বয়ে বেড়ায় ঘরেরও বাহিরে,
আসো ছোট্ট একটা গান করি,
যাতে ঘুম পাড়ানি মাসি এসে পাশে বসে
হাতখানা দিবে কপাল ভরে
ভয় নেই, আছি আমি পাশে
হাতখানা ধরে আছি হেসে
কোলেতে আমার মাথা তোমার।
.
অন্ধকার রাত, নিশ্চুপ সব
জোনাকির দল আজও জেগে আছে
তারা হয়তো অপেক্ষায় তোমার ঘুমের
হাতে রেখে হাত দেখে ঘড়ি
বসে অপেক্ষা করি
কবে হবে কাল, ফুটবে সকাল
.
আয়, ঘুম চুম্বন দে তার সারা কপালে
যাতে ঘুম আসে সব নিশ্চুপ হয়ে যায়
আয়, চাঁদমামা কাছে আয়
যাতে অন্ধকার না হয়
আলোমাখা কপালেতে টিপ টা দে
যাতে কিছু আলোকিত হয়
সে যাতে ভয় না পায়
.
পরি আয়, তার দুই হাত ধরে
নিয়ে যা স্বপ্নের খেলাঘরে
যেথা মিলবে তার সুখের ঠিকানায়
তারাদল ছুটে আয় এইখানে
তার ঘুমখানা যাতে না ভাঙে তাই
নিয়ে যা তাকে স্বর্গের বিছানায়
যদি দেখো সেথা আমায়
বসে গান তোমায় শোনাই
তুমি মিষ্টি এক চুমু খেয়ো মোর গালে।
.
অন্ধকার রাত, নিশ্চুপ সব
জোনাকির দল আজো জেগে আছে
তারা হয়তো অপেক্ষায় তোমার ঘুমের
হাতে রেখে হাত দেখে ঘড়ি
বসে অপেক্ষা করি
কবে হবে কাল, ফুটবে সকাল
.
আয়, ঘুম চুম্বন দে তার সারা কপালে
যাতে ঘুম আসে সব নিশ্চুপ হয়ে যায়
আয়, চাঁদমামা কাছে আয়
যাতে অন্ধকার না হয়
আলোমাখা কপালেতে টিপ টা দে
যাতে কিছু আলোকিত হয়।”

তূর্য গান গেয়ে মঞ্চ থেকে নেমে অরুণিকার গাল টেনে দিয়ে বলল,
“এই টুইংকেল, তোমাকে তো আজ পরীর মতো লাগছে।”

অরুণিকা তূর্যের গিটার ধরে বলল,
“আমাকে এটা দেবে?”

তূর্য গিটারটা সরিয়ে বলল,
“না, এটা ছোটরা ধরে না।”

শতাব্দী হেসে বললো,
“বাহ গায়ক সাহেব, একটু আগে তুমি তোমার টুইংকেলের দিকে তাকিয়ে গান করছিলে, আর এখন গিটারটাই ধরতে দিচ্ছো না! এ আবার কেমন ভালোবাসা।”

তূর্য ভ্রূ নাচিয়ে বলল,
“তুমি আমার ভালোবাসা বুঝবে না। আমার ভালোবাসা সবার চেয়ে ভিন্ন। এই ভালোবাসা দেখা যায় না।”

কথাটি বলতে বলতেই তূর্য হেসে দিলো।

শতাব্দী বলল, “হাসছো কেন?”

তূর্য ইশারায় আরাফ আর আহনাফকে দেখিয়ে দিয়ে বলল,
“পাশের দুইটা রেগে যাচ্ছে বোধহয়।”

আরাফ ইশারায় অরুণিকাকে দেখিয়ে দিলো। তূর্য অরুণিকার দিকে তাকিয়ে দেখলো সে মনোযোগ দিয়ে তার কথা শুনছে। তূর্য অরুণিকার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,
“আরেহ, আমার পিচ্ছি টুইংকেলকে আমি কত্তো ভালোবাসি, একদম ইমন, ইভান, আরাফ, আহনাফ, তাহমিদকে যেমন ভালোবাসি, ঠিক তেমনি। কিন্তু আমার গিটারের চেয়ে বেশি না। সরি টুইংকেল।”

অরুণিকা গিটারের দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমি টুন-ঝুনকে বেশি ভালোবাসি। শতু আপুকেও ভালোবাসি।”

“আমাদের ভালোবাসো না?”

“হ্যাঁ, সবাইকে ভালোবাসি। তোমরা সবাই ভালো। কিন্তু ওই ছেলেটা পঁচা।”

অরুণিকা ইভানকে দেখিয়ে দিয়ে কথাটি বলল। ইভান ভ্রূ কুঁচকে বললো,
“হ্যাঁ, আমি পড়তে বসাই তাই পঁচা হয়ে গেলাম। এখন বাকিরাও পড়াক। তারপর সবাইকে কতো ভালোবাসে, দেখবো।”

এরপর পুরষ্কার বিতরনী পর্বে তূর্য গানের জন্য প্রথম পুরষ্কার পেলো। ক্রেস্ট নিয়ে মঞ্চ থেকে নামার সময় তাদের শ্রেণি শিক্ষক তাকে একপাশে ডেকে নিয়ে গেলো। তিনি তূর্যকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
“তোমার কন্ঠে অসম্ভব মায়া। তোমার জন্য একটা ভালো খবর আছে।”

“কি খবর স্যার?”

“আমাদের অতিথি মিস্টার সুমন রায় তোমার গান পছন্দ করেছেন। তিনি তোমাকে উনার সাথে যোগাযোগ করতে বলেছেন।”

স্যার একটা কার্ড এগিয়ে দিয়ে বললেন,
“হয়তো তুমি মিডিয়ায় কাজ করার সুযোগ পাবে। কারণ মিস্টার সুমন রায় মিডিয়ার সাথেই জড়িত।”

তূর্যের চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। সে আবার মনে করার চেষ্টা করলো, সে কি গান গেয়েছিল! গানটা কি সে এতো ভালো গেয়েছে, যার জন্য তার মিডিয়ায় কাজ করার সুযোগ হয়ে যাবে?

অন্যদিকে ইমনের দল জয়ী হয়েছে। তাদের বার্ষিক পরীক্ষার পর আবার অনুশীলন করতে হবে। এবার ভালো খেলতে পারলে সে পুরষ্কার হিসেবে টাকা পাবে। এদিকে খেলা শেষ হওয়ার পর পুরষ্কার নিয়ে সে যখন বন্ধুদের কাছে আসছিল, তখনই মাওশিয়াত তার সামনে এসে দাঁড়ালো।

ইমন ক্রেস্ট দেখিয়ে বলল,
“আমি ভালো খেলি, এখন প্রমাণ পেয়েছো?”

“হ্যাঁ, ভালোই খেলেছ হয়তো। তবে আমি ফুটবল খেলা বুঝি না। সবাই তোমার অনেক প্রশংসা করছে, তাই বুঝলাম ভালো খেলেছ। তবে এসব খেলাধুলা করে তুমি বেশিদূর এগুতে পারবে না। আসল উন্নতি তো ভালো রেজাল্ট আসলেই হয়।”

ইমন মুচকি হাসলো। মনে মনে বলল,
“তোমার মনে জায়গা নেওয়ার জন্য আমি এখন থেকে খুব পড়বো। ভালো রেজাল্ট করবো। তখন হয়তো তুমি আমায় খুব পছন্দ করবে।”

চলবে-