অরুণিকা পর্ব-৯+১০

0
387

#অরুণিকা
#লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ
||পর্ব-০৯||

১৬.
অরুণিকা আর শতাব্দী পাশাপাশি বসে তাহমিদের বানানো সন্দেশ খেয়ে যাচ্ছে। আর তাদের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তাহমিদ, আহনাফ, আরাফ ও ইমন। অরুণিকা শতাব্দীর দেখাদেখি হাত চেটেপুটে খাচ্ছে। তা দেখে তূর্য মুখ চেপে হাসছে আর ইভানের চোখে মুখে বিরক্তি। শতাব্দী এই নিয়ে মোট আটটা সন্দেশ খেয়েছে। ইভান এবার ভ্রূ কুঁচকে বলল,
“তুমি কি আজ বাড়িসুদ্ধ মানুষের খাবার খেয়ে ফেলবে নাকি! এভাবে কেউ খায়?”

শতাব্দী আরেকটা সন্দেশ মুখে নিয়ে বলল,
“আমি সন্দেশ এতো ভালোবাসি, এতো ভালোবাসি যে এখনি পুরো বাজার সামনে এনে দিলেও আপত্তি নেই।”

আহনাফ অরুণিকার পাশে এসে বসলো। তারপর তার হাতটা ধরে বলল,
“তুমি আর খেও না।”

অরুণিকা মাথা নেড়ে বলল,
“অনেক মজা। আমি আরো খাবো।”

“এতো মিষ্টি খেলে তুমি অসুস্থ হয়ে পড়বে।”

আহনাফ সন্দেশের বাটিটি সরিয়ে টেবিলের উপর তুলে রাখলো। অরুণিকা এবার টেবিলের কাছে গিয়ে পা উঁচিয়ে বাটিটি খুঁজতে লাগলো। অনেক দূরে সরিয়ে রাখায় সে আহনাফের দিকে ক্ষুব্ধ দৃষ্টিতে তাকালো। আহনাফ চোখ গরম করে তাকানোর সাথে সাথে সে মুখ ফুলিয়ে শতাব্দীর পাশে এসে দাঁড়ালো। শতাব্দী হেসে বলল,
“আমি ভাগ দিচ্ছি।”

শতাব্দী তার ভাগের সন্দেশ অরুণিকাকে খাইয়ে দিতে যাবে তখনই ইভান সেই সন্দেশ নিয়ে বলল,
“তুমি বরং বাকি সন্দেশ নিজের বাড়ি গিয়ে খাও। এখন আমাদের বাসা বের হও।”

শতাব্দী তূর্যের দিকে তাকিয়ে বলল,
“দেখেছ, তোমার বন্ধু আমাকে জোর করে তাড়িয়ে দিচ্ছে।”

আহনাফ বিরক্তির সুরে বলল,
“তো তুমি কি এখানেই থেকে যাবে নাকি!”

শতাব্দী মিষ্টি হেসে বলল,
“আমার ছোট সখী এখানে, আমার কি এখন ঘরে মন বসে?”

অরুণিকা শতাব্দীকে ঝাপটে ধরে বলল,
“শতু আপু, তুমি যেও না। আমার সাথে এখানে থাকো।”

অরুণিকা তার বিছানার কাছে গিয়ে বলল,
“এখানে আমি থাকি, আমার পাশে তুমি থাকবে।”

শতাব্দী হেসে বলল,
“সখী, তুমি বরং আমার বাড়ি চলো। আমরা একসাথে ঘুমাবো।”

আহনাফ এবার ক্ষুব্ধ চোখে শতাব্দীর দিকে তাকালো। আহনাফের দিকে চোখ পড়তেই শতাব্দী হেসে বলল,
“জানি জানি থাকতে দেবে না। এমনিতেই বললাম। তবে আজ চলি। আবার আসবো।”

শতাব্দী বের হতেই অরুণিকা তার পিছু পিছু যেতে লাগলো, তখনই ইমন খপ করে অরুণিকার হাত ধরে বলল,
“তুমি কোথায় যাচ্ছো বাবু! যা মিষ্টি খেয়েছ! সারারাত তো ঘুমাতে পারবে না। এখন যাও ঘুমিয়ে পড়ো।”

অরুণিকা ইমনের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,
“আমি ঘুমাবো না।”

শতাব্দী বের হতেই গেইটে তালা লাগিয়ে আহনাফ দরজা বন্ধ করে দিলো। তারপর তাহমিদকে বলল,
“এই মেয়ে এত্তোগুলো সন্দেশ খেলো!”

তাহমিদ বিষ্ময়কর কন্ঠে বলল,
“এতো মজাও হয় নি, তবুও খেয়ে যাচ্ছিলো। অদ্ভুত মেয়েটা!”

তূর্য মুচকি হেসে বললো,
“অদ্ভুত মেয়েগুলোকে আমার বেশিই ভালো লাগে।”

তূর্যের কথায় তাহমিদ আর আহনাফ ভ্রূ কুঁচকে তার দিকে তাকালো।

এদিকে রাত ১টায় অরুণিকার কান্নার শব্দে ইভানের ঘুম ভেঙে গেলো। বাকীরা বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। ইভান বিছানা ছেড়ে উঠে তাড়াতাড়ি বাতি জ্বালালো। দেখলো অরুণিকা পুরো বিছানায় বমি করে দিয়েছে। তার মুখটাও শুকিয়ে গেছে। ইভান তাড়াতাড়ি মশারী উঠিয়ে বাকীদের ডাকতে লাগলো। অরুণিকার জামা, বিছানা, বালিশ সব নোংরা হয়ে গেছে। তাহমিদ অপরিচ্ছন্নতা একদমই সহ্য করতে পারে না, কিন্তু অরুণিকার মুখের দিকে তাকিয়ে তার মাথাটাই পুরো এলোমেলো হয়ে গেছে। সে কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। এর আগে কখনো বাচ্চাদের বমি পরিষ্কার করার মতো দায়িত্ব তাদের কাঁধে আসে নি, এখন এই কাজটা তাদের জন্য মারাত্মক কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আরাফ কাছে এসে অরুণিকাকে তুলতে যাবে সে আবার গলগল করে বমি করে দিলো। ইভান ব্যস্ত কন্ঠে বলল,
“এতো রাতে চাচা-চাচীকে ডাকলে ভালো দেখাবে?”

আরাফ বলল,
“আমি তো দেখছিই। ওদের কেন ডাকবো?”

আহনাফ রাগী কন্ঠে বললো,
“সব ওই বদমাশ মেয়েটার জন্য হয়েছে। নিজে তো এত্তোগুলো সন্দেশ খেয়েছে, অরুকেও খাইয়েছে।”

তাহমিদ চুলায় গরম পানি বসিয়ে দিয়েছে। আরাফ অরুণিকার মুখ মুছিয়ে দিচ্ছে। অন্যদিকে ইভান আর তূর্য বিছানাপত্র উঠাতে লাগলো। আহনাফ পানিতে লেবু আর লবণ মিশিয়ে অরুণিকার কাছে এসে বসলো। অরুণিকার চোখে মুখে রাজ্যের ক্লান্তি। সে মাথা ফেলে দিতেই আহনাফ ভীত কন্ঠে বললো,
“ভাই, ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবি?”

ইমন বলল,
“আরেহ বদহজমই হয়েছে। চিন্তা করিস না। আর এতো রাতে ওকে নিয়ে বের হওয়াটাই খুব ঝুঁকিপূর্ণ হবে। রাস্তায় ডাকাত পড়লে?”

আহনাফ অরুণিকার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর লেবু পানি খাইয়ে দিচ্ছে। পানি গরম হলে আরাফ নিজেই অরুণিকাকে পরিষ্কার করিয়ে দিলো। তারপর তাকে কোলে নিয়ে পুরো ঘর হেঁটে বাকি রাত পার করলো। রাতে আর কারোই ঘুম হয় নি। অল্প কিছু পানিই ড্রামে অবশিষ্ট ছিলো তা দিয়ে ঘর পরিষ্কার করা মোটেও সম্ভব না। তাই তাহমিদ না চাইতেও শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে ছিলো।

সকালে উঠেই আরাফ আর ইভান অরুণিকাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলো। সেখানেই অরুণিকাকে স্যালাইন দেওয়া হলো। যদিও এটা খুবই সাধারণ অসুস্থতা। তবুও অরুণিকার প্রতি ছ’জনের চিন্তা দেখেই সালেহ আলী দেরী করেন নি। এরপর ডাক্তার জানিয়েছেন, ফুড পয়জনিং হয়েছে। তারপর প্রয়োজনীয় ওষুধ লিখে দিয়েছেন। মোট তিনদিন পর অরুণিকা একটু শক্ত হয়েছে। আবার আগের মতো কথা বলছে, হাসছে, খেলছে। এতোদিন শুধু বিছানায় শুয়ে শুয়ে ফোনে কার্টুন দেখেই সময় পার করেছিল।

এদিকে অরুণিকা অসুস্থ হওয়ার পর থেকেই ইভান শতাব্দীকে ঘরে ঢুকতে দেয় নি৷ শতাব্দীও মলিন মুখে নিজের ঘরে বসে ছিল। সে জানতো না যে তার ছোট সখী অসুস্থ হয়ে যাবে। সে মায়ের কাছে কান্নাকাটি করে অনেকবার বলল অরুণিকাকে দেখবে, কিন্তু ইভান কিছুতেই অনুমতি দেয় নি। উল্টো শতাব্দীর মাকেই বলে দিয়েছে, যাতে শতাব্দীকে একটু নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করে। নয়তো হাত ফসকে বেরিয়ে যাবে। এসব শুনে শতাব্দীর মা মেয়ের উপরই রেগে গেলেন। একটা অপরিচিত ছেলে এসে যদি এভাবে তার মেয়েকে নিয়ন্ত্রণ আর শাসনের মধ্যে রাখতে বলে, তার রাগ হওয়াটাই স্বাভাবিক। তবে মাস্টারমশাই ইভানের পক্ষ নিয়েই স্ত্রীকে বললেন,
“ওদের বোন ওরা চিন্তা করবেই। আজ শতাব্দী যদি অতিরিক্ত সন্দেশ খেয়ে অসুখ বাঁধিয়ে ফেলতো, তুমি কিন্তু তাহমিদের উপরই দোষটা চাপিয়ে দিতে। ও যে মিষ্টি দেখে লোভ সামলাতে পারে না, তা আর মাথায় আসতো না।”

এরপর অরুণিকা সুস্থ হওয়ার পরও শতাব্দী আর সে বাড়ি যায় নি। বাইরেই এসে দাঁড়িয়ে থাকতো। তূর্য ছাড়া আর কারো সাথেই সে কথা বলে নি। তবে প্রয়োজনে আরাফের সাথে কথা বলেছিল।

১৭.

দুই মাস পর-
মহল্লায় সাজ সাজ রব। কারণ এই মহল্লায় অনেক বছর পর বিয়ের আয়োজন হচ্ছে। মহল্লার মেয়ে সিনথিয়ার বিয়ের তারিখ দু’মাস পিছিয়েছিল। এখন সেই বিয়ের তারিখ সন্নিকটে এসেছে। বিয়ের যে কতো আয়োজন থাকে, তা সিনথিয়ার বিয়ে না দেখলে জানা যেতো না। এদিকে অরুণিকাও বিয়ে উপলক্ষে নতুন বান্ধবী জুটিয়েছে। সিনথিয়ার অনেক কাজিনই অরুণিকার সমবয়সী, তাদের সাথেই ছুটোছুটি করে তার সময় পার হচ্ছে। অন্যদিকে সিনথিয়ার এনগেজমেন্টের দিনটাও খুব ধুমধাম করে হয়েছিল। আর সেদিনই তূর্য অনেক মাস পর খোলা গলায় অনেকের সামনে গান গাওয়ার সুযোগটাও পেয়ে যায়। আর তার কন্ঠে গান শুনে পুরো মহল্লার মানুষজন মুগ্ধ হয়ে পড়লো। সেই সাথে তূর্যের স্বপ্নটাও চমৎকার হাতের স্পর্শ পেলো। সিনথিয়ার খালা তূর্যকে আলাদাভাবে এসে সব অনুষ্ঠানে গান করার নিমন্ত্রণ দিয়েছেন, সাথে পারিশ্রমিকও ধার্য করলেন। এমন প্রস্তাব শুনে তূর্যসহ তার বাকী পাঁচ বন্ধুও অবাক। সিনথিয়ার খালা নিজেও একজন সঙ্গীতশিল্পী ছিলেন। কিন্তু ভোকাল কর্ডে সমস্যা হওয়ায় তাকে গান ছাড়তে হয়েছিল। এরপর হলুদ অনুষ্ঠানের দিন তিনি নিজের হারমোনিয়ামটি তূর্যকে সবার সামনে উপহার দিলেন। আর তূর্যকে সোশ্যাল মিডিয়ায় তার গানগুলো ছাড়ার উপদেশ দিলেন। তাছাড়া তিনি তূর্যকে গান শেখানোর প্রশিক্ষণেও ভর্তি করিয়ে দেওয়ার ইচ্ছে দেখালেন। তিনি আশা দিলেন, সিনথিয়ার বিয়ের পরই তিনি এই দায়িত্ব নেবেন।

আজ সিনথিয়ার বিয়ে। সকাল থেকেই অরুণিকা শতাব্দীর বাড়িতে বসে আছে৷ নিজের জামা-কাপড় নিয়ে সেই যে তৈরী হতে গেছে, এখনো বাসায় আসে নি। শতাব্দী খুব যত্নের সাথে অরুণিকার হাতে মেহেদী লাগিয়ে দিলো। তাকে লাল লেহেঙ্গা পরিয়ে হাতে চুড়ি পরিয়ে দিলো। অরুণিকার চুলগুলো কাঁধ ছাড়িয়েছে। শতাব্দী চুলগুলো পুরো পিঠে ছড়িয়ে দিলো। তবে এখনো অরুণিকার কান ছিদ্র করানো হয় নি। তাই সে পাথরের টিপ অরুণিকার কানে লাগিয়ে দিয়ে বলল,
“এখন মনে হচ্ছে টপ পরেছো। বোঝায় যাচ্ছে না এগুলো কপালে লাগানোর টিপ।”

শতাব্দী এবার অরুণিকার কপালে একটা কালো টিপ বসিয়ে তাকে হালকা সাজিয়ে দিলো। এবার বলল,
“ছোট সখী, এখন দেখো তোমাকে কিন্তু পরীর মতো লাগছে।”

অরুণিকা আয়নায় তাকিয়ে হাতের চুড়িগুলো নাড়ালো। লেহেঙ্গা ছড়িয়ে দিয়ে এপাশ-ওপাশ হয়ে নিজেকে দেখলো। তারপর শতাব্দীর কাছে এসে বলল,
“আমি চলে যাবো এখন? আমাকে সাজিয়ে দিয়েছ?”

“হ্যাঁ, এটাকেই তো সাজগোজ করা বলে। এরচেয়ে বেশি সাজলে মনে হবে আজ তোমার বিয়ে।”

“আমার বিয়ে কখন হবে?”

শতাব্দী হেসে বলল, “যখন তুমি বড় হবে।”

“তোমার মতো?”

“আমার চেয়েও বড় হতে হবে।”

“তোমার বিয়ে কখন হবে?”

“যখন আমি সিনথিয়া দিদির মতো বড় হবে তখন।”

“তুমি কখন বড় হবে?”

শতাব্দী মুচকি হেসে বলল,
“যেদিন তুমি আমার সমান হবে, তখন আমি অনেক বড় হবো। তারপর আমার বিয়ে হবে তোমার দাদার সাথে।”

অরুণিকা কিছুক্ষণ ভেবে বলল,
“আরাফ বলেছে দাদা অনেক দূরে চলে গেছে। আর আসবে না।”

শতাব্দী মলিন মুখে বলল,
“আরেহ তোমার দাদাভাইয়ের কথা বলছি না। আমার বরের কথা বলছি। আমার বর তো তোমার দুলাভাই হবে, তাই না? দুলাভাইকে আমরা দাদা বলি।”

“দুলাভাই কে?”

শতাব্দী দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“এখন বাড়ি গিয়ে ভাইয়াদের জিজ্ঞেস করে এসো, তোমার দুলাভাই কে হবে! আমি এখন একটু তৈরী হয়ে নেই। যাও সখী, এখন আমাকে বিরক্ত করো না।”

অরুণিকা দৌঁড়ে ঘরে চলে এলো। লোহার দরজা অরুণিকার জন্য খোলা রাখা ছিল। সে ঘরে ঢুকতেই আরাফ তার দিকে তাকিয়ে বলল, “কে এটা?”

আরাফের কথায় বাকিরাও অরুণিকার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলো। আরাফ তার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বলল,
“অরু তোমাকে দেখতে তো একদম রাজকন্যার মতো লাগছে।”

অরুণিকা আরাফকে বলল, “আমার দুলাভাই কে হবে?”

ইভান ভ্রূ কুঁচকে বললো,
“এটা আবার কেমন প্রশ্ন!”

“শতু আপু বলেছে আমার দুলাভাই কে তোমাদের কাছে জিজ্ঞেস করতে। তোমরা জানো দুলাভাই কে? শতু আপুর যখন বিয়ে হবে তখন আমি আপুর মতো বড় হয়ে যাবো। এরপর আমারও বিয়ে হবে।”

আহনাফ অরুণিকাকে কোলে নিয়ে বলল,
“তোমার মাথায় এসব উদ্ভট কথাগুলো কে ঢুকিয়ে দিয়েছে?”

“উদ্ভট কথা কি!”

তূর্য অরুণিকার সামনে দাঁড়িয়ে বলল,
“ভাই, টুইংকেল তোর এই প্রশ্ন বুঝবে না। আমিই ওর প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দেই।”

তারপর অরুণিকাকে বলল,
“ইভান হচ্ছে তোমার দুলাভাই, বুঝেছ। আর তোমার বিয়েটা তো আমার সাথেই হবে।”

কথাটি শুনে আহনাফ রাগী দৃষ্টিতে তূর্যের দিকে তাকালো। আর ইভান বিরক্তির সুরে বলল,
“আমার নাম কেন নিয়েছিস? সারাদিন তো তুই-ই ওই মেয়ের পেছনে পড়ে থাকিস।”

তূর্য হেসে বলল,
“আরেহ, মজা করছি।”

এরপর তূর্য আহনাফকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“আর আহনাফ, তুই এভাবে আমার দিকে চোখ লাল করে তাকিয়ে আছিস কেন? আমি তোর বন্ধু। আমার বংশও খারাপ না। শুধু একটু পড়াশোনাটাই বিরক্ত লাগে, এছাড়া আমার কি কোনো দোষ আছে? সৎ পাত্র হওয়ার সব গুণ আমার মধ্যে আছে।”

আহনাফ তূর্যকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
“আমরা অরুর বিয়েই দেবো না। আর শুন, দ্বিতীয়বার ওকে নিয়ে এভাবে বলবি না। এখন ও এসব বুঝতে শুরু করেছে। তারপর দেখা যাবে, সত্যিই তোকে বর ভেবে বসে থাকবে।”

“তো সমস্যা কোথায়?”

“সমস্যা আছে। এসব মাথায় ঢুকলে ওর ভবিষ্যৎ শেষ।”

অরুণিকা একবার আহনাফের দিকে তাকায়, আরেকবার তূর্যের দিকে। একটু পর সে আহনাফের চুল টেনে ধরে বলল,
“তুমি রকস্টারকে বকছো কেন? আমি তোমার সাথে কথা বলবো না।”

আহনাফ রাগী দৃষ্টিতে অরুণিকার দিকে তাকালো। আরাফ অরুণিকার হাতের মুঠো থেকে চুল ছাড়িয়ে দিয়ে বলল,
“বড়দের চুল টেনে ধরা ভালো না। লক্ষী বাচ্চারা এমন করে না। তুমি না ভালো মেয়ে?”

“তাহলে ও রকস্টারকে বকছে কেন?”

আহনাফ অরুণিকাকে কোল থেকে নামিয়ে দিয়ে চলে গেল। তূর্য অরুণিকার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে আহনাফের পিছু পিছু গেলো।

আহনাফ চেঁচিয়ে বলল,
“আমার পিছু পিছু আসছিস কেন?”

“ভাই, আমি সত্যিই মজা করেছি।”

“তুই মজা করেছিস, আর ও আমার সাথে বেয়াদবি করেছে। আমি এটা মানতে পারছি না৷ এখন যা।”

“টুইংকেল আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ওকে ছাড়া আমার একটা দিনও চলে না। ওকে না দেখলে আমার ভালোই লাগে না। কিন্তু এটা তো ওরকম কিছুই না। ও তো বাচ্চা একটা মেয়ে! তোরা বারবার আমার কথাগুলো সিরিয়াসলি নিয়ে ফেলিস।”

“তূর্য প্লিজ, অরুকে নিয়ে এমন কথা আর বলবি না। ও এখনো ছোট। ও আরেকটু বড় হলে এভাবে থাকাটাও সুন্দর দেখাবে না। ওকে একা কোথায় রাখবো আমরা? আরাফ ওকে হোস্টেলে দেবে না বলে দিয়েছে। অন্য বাড়িতে রাখার মতো সাহসও নেই, আজকাল কি কারো বিশ্বাস আছে? ও সারাজীবন হয়তো আমাদের সাথেই এক বাড়িতে থাকবে। এমন কিছু যদি ওর মাথায় ঢুকে ওর মন-মানসিকতা কেমন হবে একটু চিন্তা কর। ইতস্ততভাব নিয়ে এক ঘরে থাকা সম্ভব না। তাই আমাদের সবাইকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকতে হবে। ওর যখন যথেষ্ট বুদ্ধি হবে, নিজে চলার মতো ম্যাচিউরিটি আসবে সেদিন এমন কথা বলিস। ততোদিনে ও সব সত্য জেনে যাবে। এখন এসব বুঝবে না। যা বুঝিয়ে দিবি, সবাইকে তাই বলবে। এখন বলছিস তুই ওর বর হবি। ধর, এই কথা ও না বুঝে পুরো মহল্লায় বলল, তারপর কেউ এসে অরুকে আমাদের থেকে আলাদা করে দিলো! এটা মেনে নিতে পারবি? মহল্লার সবাই জানে আমরা অরুর ভাইয়া। শুধু চাচা-চাচী, আলেয়া খালা আর শতাব্দীরা ছাড়া কেউই আসল সত্যটা জানে না। অরুর অভিভাবক নেই, কাজিন বা বাবার বন্ধুর ছেলেকে এই সমাজ যোগ্য অভিভাবক হিসেবে মানবে না। তখন অরুকে যদি কেউ দত্তক নিয়ে ফেলতে চায়? যেখানে আপন ভাই-বোনরাই বাবা-মার মৃত্যুর পর আলাদা হয়ে যায়, সেখানে আমরা তো ওর আপন ভাই-ই না। ওকে আমরা কিভাবে পড়াশোনা করাবো সেটাই এখনো নিশ্চিত না। ওকে নিজেদের কাছে রাখার মতো আমাদের কাছে কি আছে? কোনো যোগ্যতা আছে? এই মহল্লার সবাই জানে আমরা ওর ভাই। সালেহ চাচা আমাদের আপন চাচা। বাবা-মার মৃত্যুর পর আমরা এই দেশে এসেছি চাচা-চাচীর পাশে থাকার জন্য। এটাই আমাদের বর্তমান পরিচয়। অরুণিকা এভাবেই বড় হোক। ওকে হারিয়ে ফেলার মতো কোনো ক্ষমতা আমার নেই। সবাইকেই তো হারিয়ে ফেলেছি। আমাদের তো আর কেউ নেই। চাচ্চুর শেষ ইচ্ছেটা কি আমরা ধরে রাখতে পারবো না? সমাজ তো আমাদের অনুভূতি বুঝবে না। ওরা বাস্তবতা দেখবে। আর অরুণিকা আমাদের অনুভূতি। এই অনুভূতি আমাদের প্রতি সেকেন্ডে এই আশা দেখায় যে হয়তো একদিন আমরা আমাদের নিজ দেশে ফিরবো, নিজেদের সব অধিকার ফিরে পাবো। একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে। ও আমাদের প্রেরণা দিচ্ছে। ওর দায়িত্ব আমাদের মনকে শক্ত করছে। আমরা অনাথ কিশোর হয়েও দু’বেলা খাওয়ার মতো ক্ষমতা অর্জনের চেষ্টা করছি। ও না থাকলে আমরা আগের মতোই বেপরোয়ায় থেকে যেতাম।”

তূর্য আহনাফকে জড়িয়ে ধরে বলল,
“টুইংকেল আমাদের ছেড়ে কোথাও যাবে না। এতো সহজে কি কেউ ওকে আমাদের কাছ থেকে আলাদা করে ফেলবে? এতো মাস ওকে দেখে রেখেছি, বাকী জীবনও রাখতে পারবো।”

চলবে-
#অরুণিকা
#লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ
||পর্ব-১০||

১৮.
মাধ্যমিক পরীক্ষার পর নতুন শ্রেণিতে উঠতে গিয়েই সংকটে পড়তে হচ্ছে ছ’জনকে। এই মাসে সালেহ আলীর কাছে কোনো টাকা আসে নি। গতমাসের সঞ্চয় করা টাকা দিয়েই তাদের এই মাস কাটছে। রহমত চাচা কেন হঠাৎ টাকা পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছেন, সেটাই এখন ভাবনার বিষয়।

এদিকে ছ’জনের পক্ষে নতুন শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার মতো টাকা নেই। এখন পড়াশুনা ছাড়াও তাদের পক্ষে সম্ভব না। আপতত দু’জনকে ভর্তি করানো সম্ভব। তাই সিদ্ধান্ত হলো কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই বাকী টাকা জোগাড় করতে হবে, নয়তো ইভান আর আরাফই এই বছর নতুন শ্রেণিতে ক্লাস শুরু করবে।

বিকেলে সুরাইয়া তার সন্তানদের নিয়ে অরুণিকাদের ঘরে এলেন। সুরাইয়া আর সালেহ আলীর তিন সন্তান। ডুমুর তাদের বড় মেয়ে, সে শতাব্দীর বয়সী। বাঁধন অরুণিকার চেয়ে বছর তিনেক বড়। আর খোকার এক বছর পূর্ণ হয়েছে। তাহমিদ সুরাইয়ার বাচ্চাদের দিকে এক নজর তাকিয়ে একপাশে সরে দাঁড়ালো। এদিকে ডুমুর খালি পায়ে বিছানায় উঠে বসলো। তাহমিদ কিছু বলতে যাবে তার আগেই সুরাইয়া বললেন,
“শুনলাম, তোমাদের স্কুলের ভর্তির জন্য নাকি টাকা নেই!”

তাহমিদ চুপ করে রইলো। তূর্য বলল,
“হ্যাঁ, চাচী। আমাদের তো টাকার দরকার ছিল। রহমত চাচা টাকাটা পাঠাচ্ছেন না, তাই এতো ঝামেলা হচ্ছে।”

সুরাইয়া দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন,
“তোমরা রহমত ভাইয়ের ভরসায় থেকো না। উনি বড্ড ঝামেলায় আছেন। কাল তোমাদের চাচা বলছিলেন, উনার উপর নাকি হামলা হয়েছে। কে নাকি রাবার বুলেট ছুঁড়েছে।”

সুরাইয়ার কথা শুনে ছ’জনই অবাক হলো। ইভান জিজ্ঞেস করলো, “কে করেছে এমন?”

“আমি তো জানি না, বাবা। তবে উনার পক্ষে এখন আর প্রতি মাসে টাকা পাঠানো সম্ভব না। এতোদিন যেই টাকা পাঠাচ্ছিল, ওগুলো কিভাবে দিয়েছেন জানি না। শুনলাম তোমাদের বাবা-চাচাদের একাউন্টে অনেক টাকা আছে। সেগুলো তোমরা ছাড়া আর কেউ উঠাতে পারবে না। এখন তোমাদের তো আর ওখানে যাওয়াও সম্ভব না।”

ইমন বলল,
“ওই টাকাগুলো উঠাতে পারলে আমাদের আর এখানেই থাকতে হতো না।”

“হ্যাঁ, ভালো বাসা নিতে পারতে। কিন্তু জীবন বাঁচানোর জন্য তো তোমাদের এখন সবকিছুই সহ্য করতে হবে। রহমত ভাই থেকে সব শুনলাম। তোমাদের পরিবারের সাথে যা হয়েছে খুব খারাপ হয়েছে। বাবুনটার জন্য বেশি খারাপ লাগে। অল্প বয়সে কতো কিছু দেখে ফেলেছে!”

সুরাইয়া কিছুক্ষণ পর আবার বললেন,
“আসল কথায় আসি, যেই কারণে আমি এখানে এলাম।”

তারা ছ’জনই সুরাইয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। সুরাইয়া বললেন,
“তোমরা চাইলে কাজ করে খেতে পারো। তোমাদের চাচা বলছে, এভাবে অন্যের ভরসায় থাকলে তোমরা সামনে এগুতে পারবে না। কারণ আগামী মাস থেকে হয়তো দু’তিন মাস পর পর রহমত ভাই টাকা পাঠাবেন। পাঠাবেন এরও কোনো নিশ্চয়তা নেই।”

আহনাফ বিরক্তির সুরে বলল,
“তাহলে উনি কেন আমাদের ভরসা দিয়েছিলেন? আমরা ছ’জন একসাথে কিভাবে পড়াশুনা করবো? তাছাড়া খাওয়ার খরচ, থাকার খরচ ছাড়াও অনেক খরচ হয়ে যাচ্ছে। অরুর এখন পাঁচ বছর পূর্ণ হয়েছে। ওকে স্কুলে ভর্তি করাতে হবে। এতোকিছু আমরা কিভাবে সামলাবো?”

সুরাইয়া ক্ষীণ কন্ঠে বললেন,
“পাশের বাড়ির মুন্নি আপার অনেক বছর সন্তান হয় না। তারা একটা সন্তান দত্তক নিতে চাইছিল!”

সুরাইয়ার কথা শুনে সবার মাথা খারাপ হয়ে গেলো। আরাফ চেঁচিয়ে বলল,
“চাচী, প্লিজ, এমন কথা আর বলবেন না।”

সুরাইয়া বললেন,
“জানি বাবা, এসব শুনে তোমাদের খারাপ লাগছে। কিন্তু তোমরা…”

আহনাফ সুরাইয়াকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
“আমরা কাজ করবো। কাল থেকেই কাজ খোঁজা শুরু করবো।”

তূর্য বলল,
“আমাকে সিনথিয়া আপুর খালা কাজ দিবেন বলেছিলেন। আমি ভালোই গান করতে পারি। হয়তো গান গেয়ে কিছু টাকা আয় করতে পারবো।”

তাহমিদ বলল,
“আর আমি তো খাবার বিক্রি করতে পারবো।”

ইভান বলল,
“আমি আমার চেয়ে ছোট বাচ্চাদের পড়াতে পারবো। আরাফও পারবে।”

ইমন কিছুক্ষণ ভেবে বলল,
“আমি তো কিছুই পারবো না।”

আহনাফ কোণা চোখে ইমনের দিকে তাকালো৷ তারপর সুরাইয়াকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“ইমনকেও আমরা একটা কাজে ঢুকিয়ে দেবো।”

অরুণিকাকে দত্তক দেওয়ার কথা উঠতেই ছ’জনের মধ্যে এক ভয়ংকর উত্তেজনা চলে এলো। সুরাইয়া তা দেখে মনে মনে হাসলেন। তিনি এটাই চেয়েছিলেন। অন্তত তাদের মাঝে যদি একটু মানসিক গতি আসে, তাহলে এই সমস্যা তারা খুব সহজে কাটিয়ে উঠতে পারবে। কারণ সুরাইয়া জানে রহমত সাহেবের পক্ষে এতোগুলো ছেলেকে পড়াশুনা করানো সম্ভব না। উনার অবস্থা এখন খুবই খারাপ৷

সুরাইয়া অরুণিকার পাশে বসে বললেন,
“এই বাবুন, সকালে বাড়ি এসে বাঁধনের সাথে আরবি পড়তে বসো।”

এরপর আরাফকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
“মৌলভী সাহেব খুব ভালো মানুষ। তোমাদের সমস্যার কথা বললে উনি টাকা নেবেন না। আর এখনই তো আরবি শেখার বয়স।”

ইমন বলল,
“আরবি কেন শিখতে হচ্ছে? আমি কতো আগে পড়েছি। মনেই নেই। এগুলো মনে থাকে না। আরেকটু বড় হলে নামাজ শিখলে চলবে।”

সুরাইয়া মুখে হাত দিয়ে বললেন,
“ওমন কথা বলছো কেন, বাবা? ও কি তাহলে কোর’আন শিখবে না? আর তোমরা দেখি নামাজ-দোয়াও পড়ো না। বাবুন তোমাদের দেখে কি শিখবে বলো? তোমাদের বাবা-মা নেই। ও এখন শিক্ষা-সংস্কৃতি, আদব-কায়দা সব তোমাদের দেখেই শিখবে। আমি যেহেতু তোমাদের চাচীর মতো। আমার তো এতোটুকু দায়িত্ব আছে, তাই বললাম। কিছু মনে করো না।”

তারা চুপ করে রইলো। এদিকে অরুণিকা পায়ের উপর পা তুলে বিছানায় শুয়ে শুয়ে ফোন দেখছে। এই মেয়ের অর্ধেক সময় কার্টুন দেখতে দেখতেই কেটে যায়। সুরাইয়া চলে যাওয়ার পর আরাফ এসে অরুণিকার হাত থেকে ফোনটা কেঁড়ে নিলো। অরুণিকা সাথে সাথেই ক্ষেপে উঠলো। মোবাইল নেওয়ার জন্য বার-বার আরাফের কাছে জেদ করতে লাগলো। আহনাফ বিরক্ত হয়ে এক ধমক দিতেই সে ধপ করে বিছানায় শুয়ে বালিশে মুখ গুঁজলো। এরপর তাকে টেনেও আর বিছানা থেকে তোলা গেলো না। দিন দিন অরুণিকার জেদ বাড়ছে তো বাড়ছেই। এভাবে জেদ বাড়তে থাকলে, ওকে নিয়ন্ত্রণে রাখাটাই কষ্টকর হয়ে যাবে।

দুই সপ্তাহের মধ্যেই ইভান আর আরাফ অনেক গুলো টিউশন পেয়ে গেলো। সবগুলোই শতাব্দীর বাবা খুঁজে দিয়েছেন। এখন মাস শেষ হলে এই টাকাগুলো দিয়ে তারা নতুন শ্রেণিতে ভর্তি হতে পারবে। কিন্তু তাদের কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই টাকা লাগবে, কারণ ভর্তির সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে। তাই ছ’জন মিলে সিদ্ধান্ত নিলো সালেহ আলী, মাস্টারমশাইসহ মহল্লার মধ্যে যাদের অবস্থা ভালো, তাদের থেকে কিছু টাকা ধার নেবে। কিন্তু এই ধার নিতে গিয়েই তাদের অনেক লজ্জায় পড়তে হলো। অনেকেই মুখের উপর না করে দিয়েছে, আবার অনেকে খোঁচাও দিয়েছে। কারণ কেউই বিশ্বাস করতে চাইছে না যে তাদের পক্ষে টাকাটা ফেরত দেওয়া সম্ভব। তবে যারা বিশ্বাস করে টাকা ধার দিয়েছিল, তাদের আশাহত হতে হয় নি। পরের মাসেই আরাফ আর ইভান টিউশনের পুরো টাকাটা দিয়ে তাদের ঋণ শোধ করে ফেলে। কিন্তু ঝামেলা বাঁধলো তখন, যখন দেখলো ঋণ শোধের পর তাদের হাতে আর কোনো টাকাই অবশিষ্টই ছিল না।

যেই টাকা আছে তা দিয়ে হয়তো ঘর ভাড়া দিতে হবে, নয়তো খাবারের খরচ। মাত্র তিন হাজার টাকা দিয়ে ছ’জনের পুরো মাস চালানো মোটেও সম্ভব না। এখন এই মাসে আর কি কি দেখতে হবে, সেটা ভাবতেই তাদের মাথাটা আরো এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।

চলবে-