অরুর সংসার পর্ব-১১

0
1142

#অরুর_সংসার
#পর্ব-১১
#লেখিকা-নিশিকথা
__________________

অরু ওজু করে বের হয়ে ভাবছে…
অরু : ডাকবো উনাকে??
না থাক যদি বকে
না ডাকা আমার দায়িত্ব
কিন্তু!!ডাকার অধিকার? সেটা কি আছে???

অরু সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে ডেকেই ফেলল অয়নকে

অরু: এই যে শুনছেন??
ওঠেন!!! নামায পড়বেন না??
শুনেছেন? মাত্র ২-২চার রাকায়াত তো! ওঠেন না!!
ওঠেন প্লিজ।
(অয়ন চোখ মুখ কুচকে একবার কোনমতে তাকিয়ে কি মনে করে অন্যপাশ ফিরে শুয়ে পড়লো
অরু: হুম। আমার ডাকা দায়িত্ব ছিল ডেকেছি। একবার না তিন তিন বার! না উঠলে কি করবো!

(অরু নামাযে দাড়িয়ে গেল। নামায শেষে আল্লাহ এর কাছে অনেক কান্নাকাটি করলো অরু! কেন তিনি অরুর সাথে সব সময় এমন করেন??
সেই ছোট বেলা থেকে অরু কষ্ট পেয়ে আসছে! অল্পবয়সে মাকে হারালো, বাবার স্নেহ বঞ্চিত হল, সৎ মা এর গালমন্দ, খারাপ কথা শুনে বড় হল…লেখাপড়াটা কম্পলিট করতে পারলো না।খুব কষ্টে ১২ ক্লাস পর্যন্ত পড়ালেখা করেছিল অরু! তারপর জোড় করেই বিয়ে দিয়ে দিল ওকে! অরু শুধু বলেছিল এইচ এস সি পরীক্ষা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে! তাও করলো না! মা নয় সৎ ছিল কিন্তু বাবা? এতই কি বোঝা হয়ে গেছিলো অরু তাদের কাছে???
না অরুকে বোঝা কিভাবে বলতে পারে তারা? অরু তো বাসার সব কাজ করতো! এইটুক বয়সে কাজের মেয়ের মত সারা বাড়ীর কাজ, রান্নাবান্না করতো অরু! আর নিজের পড়ালেখার খরচ ও নিজেই চালাতো একটা টিউশুনি করে! তাহলে কেন?? কেন অপেক্ষা করলো না তারা???
এই তো আজ করোনা ভাইরাসের প্রকপ না হলে এইচ এস সি পরীক্ষা হত সামনে মাসে! কিন্তু তাতে কি অরুকে তো তার আগেই বিয়ে দিয়ে দিলো!
বিয়ের পর এই বাড়ীর সবাই ওকে ভালবাসলেও আসল মানুষটার মন ই পেল না অরু!!! তার স্বামি যে তাকে ভালই বাসে না!
কিন্তু অরু যে তাকে এইকয় দিনে প্রচন্ড ভালবেসে ফেলেছে!! কি করবে সে এখন??? কিভাবে অয়নের মনের এক কোণে নিজের জন্য একটুখানি জায়গা তৈরী করবে?? )

নামায শেষে অরু অয়নের পাশে গিয়ে শুয়ে রইলো! কাঁদতে কাঁদতে চোখ বেশ ফুলে গেছে…চোখজোড়া বেশ ভার ভার লাগছে অরুর।একসময় ঘুমিয়ে গেল সে।
ঘুম ভাঙলো যখন তখন বাজে সকাল ৭:১৫!

অরু: এই যাহ! এত সময় ঘুমালাম! উনার তো অফিস আছে!
( দ্রুত পায়ে অরু ফ্রেশ হয়ে নিচে গেল)
কেউ ওঠে নি এখনো ঘুম থেকে! সবার ছুটি যে!!
অরু দেখলো সেলিনা আর মিনু ২জন আটার রুটি, ডিম, ভাজি নিয়ে আরামে খাচ্ছে আর গল্প করছে!! অরুকে দেখে ২জন ই দাড়িয়ে গেল।
অরু ফ্রিজ থেকে মাংসের বাটি বের করতে করতে বলল..
অরু : আরেহ আপনারা দাড়িয়ে গেলেন কেন??? বসে খেয়ে নিন
সেলিনা : এমা নুতন বউ কি লাগবে কউ আমি কইরে দিচ্ছি। অই মিনু কো, সাহাইয্য কর।
মিনু : কউ বউ কি করুম?
অরু : আগে আপনারা খেয়ে নিন। আমি ততক্ষনের চালের গুড়ি রেডি করি। আজ চালের রুটি বানাবো। আপনাদের খাওয়া শেষ বলে বরং আমাকে একজিন রুটি সেকে দিয়েন আর একজন তরকারী কেটে দিয়েন
মিনু, সেলিনা : আইচ্ছা
অরু ৮:৩০ এর মধ্যে চালের রুটি তৈরী করলো ,গরুর মাংস ভুনা রাতে উঠিয়ে রেখেছিল গরম, করলো, ভাজি করলো গতকালের মত ফোরং দিয়ে,ক্ষীর ও তৈরী করলো!! জুস, চা তো আছেই। শুধু অয়ন তো না বাড়ীর জামাই আসছে, ভাল মন্দ না করলে হয়!!!
৮:২৫ এর দিক রুম থেকে রেডি হয়ে বের হল অয়ন। অরু রুম থেকে বের হবার আগে অয়নের প্রয়োজনীয় সব সামনে রেখে গিয়েছিল তাই অয়নের রেডী হতে খুব সুবিধা হয়েছে।
ইদানিং অয়নের আরাম। অরু তাকে সব এগিয়ে দেয়,তার কষ্ট কম হয়।

অয়ন রুম থেকে বের হয়ে নিচে নামার পথে অহনার রুমের সামনে দিয়ে থেমে গেল।
অহনা ফোনে কথা বলছে যানো কার সাথে।
অহনা : জি আমি জানি। আমার ও আপনার কথা খুব মনে পরে
_ _ – – _ _
না না আমি কথা বলবো তো বাপীর সাথে। একটু সময় দিন।
_ _- -_ _
না না আমি ভাইয়ার সাথে কথা বলতে পারবো না! খুব ভয় লাগে।।।।।

অয়নের সন্দেহ হচ্ছে অহনাকে!!! গতকাল যখন অয়নের সাথে কলেজে দিয়েছিল অনেক বা কল আসছিল অহনা!!! অহনা বারবার কেটে দিচ্ছিল!!
এর মানে কি অহনা??????
অয়নের মেজাজ খারাপ হয়ে গেল!!!!
আজ যদি অয়নের সন্দেহ ঠিক হয় তাহলে অয়ন অহনাকে ছেড়ে কথা বলবে না! বোন হয়েছে তো কি?????

অয়ন আর অপেক্ষা না করে ঘটঘট করে নেমে এলো। নেমে এসে দেখে অরু ছাড়া কেউ নেই । আজ থেকে তো আবার সবার ছুটি।
অরু নাস্তা সাজিয়ে অপেক্ষা করছিল অয়নের যেই না চোখ পরলো অয়নের দিকে অরু হা।
এত সুন্দর কোন পুরুষ হয়? তার এটিটিউট তো অরুকে খুনই করে ফেলবে!!
তার উপর অয়নের পরনে ব্লাক প্যান্ট আর হাল্কা পেস্ট কালারের একটা শার্ট!!!ব্লাক সুট টা পাশে রেখে বসলো অয়ন।
অয়ন: এভাবে তাকিয়ে কি দেখছো বোকার মত?
(অরু সাথে সাথে মাথা নামিয়ে খাবার বেড়ে দিল অয়নকে)
অয়ন: এত কিছু !! কখন করলে???
অরু : সকালে
অয়ন :এত ফাস্ট !! বাহ।
ঘরের কাজে তো দেখি তোমার হাত সেই ফাস্ট চলে!!
অরু : আমার অভ্যাস আছে, আমাদের বাসায় তো সব কাজ আমিই করতাম।
অয়ন :ওহ! ভাল। এমনিও সব কাজের তোমার হাত পা দ্রুত চলে শুধুমাত্র আমার কাছে আসা ছাড়া!!
অরু :সেটার অভ্যাস তো আবার আমার নেই
(অরু কথা টা বলে সাথেসাথে জিহ্বয় কামড় দিল)
(অয়ন ভ্রু উচু করে তাকিয়ে আছে অরুর দিকে…অরু চলে যেতে নিলে অরুর হাত ধরে ফেলল অয়ন! টান দিয়ে নিজের কোলে বসালো অরুকে!! ♥♥♥
অরু চোখ খিঁচে বসে আছে!
অয়ন অরুর কাঁধে ঠোট
বুলিয়ে বলল…….
অয়ন: সেটার অভ্যাস টা এবার দ্রুত করে ফেল |
♥♥♥♥♥♥♥♥♥
অরু :ছাড়েন প্লিজ
অয়ন: কি বললে?
অরু : বা মানে
অয়ন: হুম মানে?
[অয়নের ছোঁয়ায় অরুর পাগলপ্রায় অবস্থা, নিঃশ্বাস ঘন হয়ে আসছে তার!

এক সময় কেউ আসছে এমন আভাস পেয়ে অয়ন অরুকে ছেড়ে দিল….

অরু এখনো অয়নের কোলে বসা! চোখ বন্ধ করে চোখমুখ সেই একি ভাবে খিচে বসে আছে… ]

অয়ন : কি হল? এভাবে দিন দুপুরে আমার কোলে বসে থাকবে নাকি? আজিব। কেউ দেখলে কি ভাববে?
(অরু এবার চোখ বড়বড় করে তাকালো!! বলে কি লোক টা। সামনে তাকিয়ে দেখে সিড়ি বেয়ে অহনা নামছে মোবাইল এর দিক তাকিয়ে…. মেয়েটা মোবাইলের মাঝে এতই বিজি যে সামনে ঘটে যাওয়া একজোড়া দম্পতির রোমান্স তার চোখে এখনো পরে নি।
অরু অহনাকে দেখে এবার এক দৌড়………………
রান্নাঘরে যেতে হাপাচ্ছে অরু!!! )

অহনা : গুড মর্নিং ভাই
অয়ন : গুড মনিং! ( অয়নের একটু আগের কথা মনে পরে গেল…. অহনা কি তাহলে অয়ন যার কথা ভাবছে তার সাথে কথা বলছিল!অয়ন আর কথা বাড়ালো না, চুপচাপ খেয়ে চলে গেল! এর মাঝে অহনা এটাওটা নানান কথা বলেছে অয়নের সাথে , অয়ন শুধু হু হা বলে উত্ত্রর দিয়েছে! তবে পেট ভরে খেয়ে বের হয়েছে সে।আসলে অরুর হাতের খাবার অনেক মজা!
আর অরুর হাতের চায়ের তো জবাব ই হয় না।এক কাপ চা খেলে আর সারা দিনে চায়ের দরকার হয় না! আর সেটা এখন অয়ন ও স্বীকার করতে বাধ্য! কারন গতকাল অয়ন অরুর হাতের চা খেয়ে আর সারাদিনের চা খায় নি, যেখানে হাসপাতালে তার ৪,৫ বার চা খাওয়া লাগতো আগে )
(ওর পর আর অরু অয়নের সামনে আসে নি লজ্জায়। বুয়াদের হাতে সব যা লাগে পাঠিয়েছে)

অয়ন গেলে অরু গুটিগুটি পায়ে ডায়নিং টেবিলে এলো!
অহনা : কই ছিলা তুমি?
অরু: ওই একটু কাজ। করছিলাম
অহনা : এত কি কাজ! আমি একা খাবো নাকি, এসো একসাথে খাই ভাবি
অরু : কিন্তু, বাবা, আপুরা তো এখনো এলো না
অহনা : দেড়ী আছে! ছুটি পেয়েছে না সবাই!
আচ্ছা তোমার বরটা এমন কুমড়ার মত মুখ করে গেল কেন?
অরু : …….. কই??
অহনা: ওই তো!
আচ্ছা ভাবি চাইনিজ রান্না করতে পারো???
অরু: হ্যা
অহনা : রিয়েলি??? খাবো ভাবি প্লিজ
অরু: আজ???
অহনা : ইয়েস আজই ই।প্লিজ প্লিজ ভাবি! জিজুও আছেন। প্লিজ
(এতক্ষনে সবাই নেমে এলো)
বাবা: কি বায়না করছিস আবার?
অহনা : চাইনিস খাবো ভাবির হাতে
আরোহী : পারো তুমি?
অরু: জি
অনিক : তাহলে তো আমিও খাবো। ভাবি বানাও
(অরু মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিল)
/
//
///
//
/
লাঞ্চ টাইম হল! গতকালের মত আলমগির হাজির! অয়নকে লাঞ্চ দিয়ে চলে গেল সে!
আলমগির : নেন ভাই। ভাবি একা হাতে সব রান্না করে গরম গরম পাঠিয়েছে!
টাইমিং দেখছেন? রাইট টাইমিং নাং?
অয়ন: হুম

অয়ন টিফিন খুলে অবাক!
ফ্রাইড রাইস, ভেজিটেবল,ক্রিস্পি চিকেন,বিফ ক্যাসুনাট কারি

অয়ন: এই মেয়ে তো দেখি সব ই পারে
(এক চামচ খেয়ে) বাহ একদম রেস্টুরেন্ট এর মত হয়েছে…….
অয়ন ভাবছে ..
মেয়েটার অনেক গুন। দেখতেও মাশাআল্লাহ্‌ ♥ । তাও কপাল টা খারাপ মেয়েটার কারন সে আমার বউ! আমি তো ওকে ভালবাসি না।একদমইই ভালবাসি না!
তবে অরুকে ভাল না বাসার কোন কারণ নেই! অরু এমন একটা মেয়ে যাকে যে কেউ ভালবাসতে বাধ্য! আমার জায়গায় অন্য কোন ছেলে থাকলে হয়তো অরুকে মাথায় করে রাখত! অরুকে নিজের সব টুক দিয়ে ভালবাসতো!
না।
না! অরু অন্য কারো কেন হতে যাবে??? অরু তো আমার…. শুধু আমার….
অরু আমার পারসোনাল প্রপার্টি! শুধু আমার।অরুর শরীরের প্রতিটা অংশ শুধুই আমার। কাউকে ভাগ দেব না আমি অরুর।
দিবই বা কেন??? অরু শুধু আমার। আমার বউ।
হোক না আমি ওকে ভালবাসি না।তাও অরু আমার।।।।।
★অয়ন নিজেই নিজের সাথে তর্ক করছে অরুকে নিয়ে.
কিন্তু তার সব কথার এক কথা যে সে অরুকে ভালবাসে না ★
/
//
///
//
/
ওদিকে অরুর সারাদিন অনেক ভাল কাটলো! রান্না করেছে আর তার দুই ননদের সাথে গল্প করেছে জুটিয়ে… একসাথে খেয়েছে, জোহরে,আসোরের নামায ও ৩ জনে একসাথে আদায় করেছে… আর অরুর চাইনিক খেয়ে তো সবাই প্রসংসায় পঞ্চমুখ!
আরোহী আর অহনা অরুকে এত আপন করে নিয়েছে আর অরু তাদের যে গল্প করতে করতে তাদের সময়ের খেয়ালই ছিল না……
সারাটা দিন ভাল কাটায় অরুর মন ও খুব ভালইই হয়ে গেছিল! বাধ সাধলো সন্ধা বেলায়!!
পেটে ব্যাথায় অরুর খুব বেশি কষ্ট হচ্ছিলো!!!
আরোহী অহনা নামাযের জন্য ডাকতে এসে দেখে অরু পেট চেপে শুয়ে আছে কুরিয়েমুরিয়ে…
আরোহী : কি হয়েছে। পেটে ব্যাথা?? কেন??
অরু :……..
অহনা: খুব কষ্ট হচ্ছে? ভাইয়াকে বলবো
অরু: না আপু। এই টাইমে আমার একটু এমন হয়
অহনা আর আরোহী অরুকে আর বিরক্ত না করে লাইট অফ করে রুম থেকে বের হয়ে গেল।।

রাত ৮ টা
অয়ন বাড়ী ফিরলো।
রুমে ঢুকে সারা রুম অন্ধকার দেখে অয়ন কিছুটা অবাক হল!
লাইট অন করে দেখলো খাটের এক কোনে অরু শুয়ে আছে!
পাশের টেবিলে রোজের মত লেবুর শরবত রাখা। কিন্তু আজ আর আগের মত অরু দাড়িয়ে নেই গ্লাস নিয়ে……….

অয়ন বাইরের থেকে এসেছে বলে আর অরুর কাছে গেল না।ওয়াশরুমে গেল ফ্রেশ হতে।

অরুকে এমন শুয়া দেখে অয়নের কেন জানি ভাল লাগছে না! যাই হোক গুটিগুটি পায়ে অয়নের আশেপাশে তো সবসময় ঘুরতে থাকে মেয়েটা। আজ এমন শুয়া! তাকালোও না অয়নের দিকে!…
আচ্ছা অরু এমন করে আছে কেন? কি হয়েছে ওর??(অয়ন শাওয়ার ছেরে দাড়িয়ে ভাবছে).
….

চলবে…….