অরুর সংসার পর্ব-৭+৮

0
1234

#অরুর_সংসার
#পর্ব-৭+৮
#লেখিকা-নিশিকথা

_________________

অয়নের ইমেইল!!!!!!!

জয়া কিছুক্ষন অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিল। খুশিতে তার নাচতে ইচ্ছা করছে! মিনিটেই যেন তার সব ক্লান্তি দুর হয়ে গেল।……

কিন্তু জয়ার এই খুশি যে বেশিক্ষনের স্থায়ী না!……

জয়া ইমেইল অপেন করলো……………. তাকিয়ে আছে জয়া লেপটপ এর দিকে। তাকিয়েই আছে………….. চোখ থেকে দু ফোটা তিন ফোটা করে পানি পরছে তারর….কিছুক্ষন বাদে চোখ জোরা ঝাপসা হয়ে আসলো জয়ার……
কেবল ই তো ভালবাসার বিশার প্রাচীর গড়ছিল জয়া তার মনে…. হুট করেই দমকা হাওয়া এসে তার ভালবাসার প্রাচীর গুড়িয়ে দিল!!! বলতেও তো পারলো না অয়নকে তার মনের কথা! …… বলতে পারলো না যে ♥♥ভালবাসি ♥♥….
বড্ড বেশি ভালবাসি..।।।

জয়ার বুক টা ফেটে যাচ্ছে! ছোট বেলা থেকে যা চেয়েছে তাই পেয়েছে জয়া! ।।।।।। এই প্রথম যাকে চেয়েছিল তাকে পেল না… আর আজ যা পেল না তা জয়াকে পুরো শূন্য করে দিয়ে গেল।
ভালবাসার মানুষকে না পাওয়া এত কষ্টকর জানা ছিল না জয়ার……..

জয়া বেশ শক্ত মেয়ে.. চাপা স্বভাবের ও বটে…… সহজে কঁাদে না সে……. কিন্তু আজ তার খুব কান্না পাচ্ছে!! পাবেই বা না কেন আজ পর্যন্ত তো কখনও নিজেকে এত নিঃস্ব মনে হয় নি…..

ডুকরে কেঁদে উঠলো জয়া……………….
বাস্তবতা হয়তো এমন ই। কথায় আছে না ‘কারো পৌষ মাস তো কারো সর্বনাশ ‘
আজ তেমন ই হয়েছে এদের জীবনে……..

★একদিকে জয়া সারারাত ডুকরে ডুকরে কেঁদেছে আরেকদিকে অয়ন সারারাত অরুর সাথে সুখের মিলনে লুপ্ত অবস্থায় কাটিয়েছে ★

সকাল…………..

অরুর ঘুম ভাংলো ভোর ৬ টায়। অয়নের গায়ে চাদর টেনে দিয়ে নিজেকে দ্রুত গুছিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল। লম্বা শাওয়ার নিয়ে একটা হাল্কা পেস্ট কালারের সুতির শাড়ি পরে বের হল অরু।ভেজা চুল পিঠে ছড়িয়ে দিল। নিচে নেমে সোজা রান্নাঘরে চলে গেল। অরু রান্নাঘরে যেয়ে দেখে মিনু চা বিস্কিট নিয়ে খেতে বসেছে। অরুকে দেখে সেনিলা, মিনু সবাই অবাক।মিনু বলল..
মিনু : আরে নতুন বউ এখানে?
অরু: আটা ময়দা এগুলা কোথায় খালা?
মিনু : কেন কেন? আপনি কি করবেন ওগুলা নিয়া?
অরু : কি করবো মানে? নাস্তা বানাবো
মিনু: দরকার নাই। কেউ সক্কালে এত ভারী খাওন খায় না
অরু : আপনি বলেন কোথায় আছে ওসব…. আমি আজ থেকে রান্না করবো প্রতি বেলায়, আপনি আমাকে সহায়তা করবেন! সবাই খাবে না খাবে আমি বুঝবো
মিনু : মিনু তো রাগে একাকার ! গজগজ করতে করতে সব বের করে দিল।
(অরু মিনুকে বলল সব্জি গুলা কেটে দিতে,মিনু তাই কেটে দিল! মিনু শত রাগ বলেও কিছু বলার উপায় নাই)

অরু এক এক করে সবার জন্য পরোটা, আলু গাজর সিম মিক্সড একটা সবজি, মুরগী ছোট ছোট পিস করে ভুনা করলো… মিস্টান্ন হিসেবে সেমাই রেঁধে ফেলল। জুস আর চা বাকি এখন শুধু।

বুয়ারা সবাই অবাক। অরু একা হাতে দের ঘন্টার মধ্যে সব রেঁধে ফেলল!!! আর অরুর কাজ খুব ই নিট এন্ড ক্লিন! কারো খুত ধরার সাধ্য নেই !!….

ওই সময়ের মাঝে যে অরু শুধু নাসতা করেছে তা কিন্তু নয়!!!! অরু অয়ন, বাবা আর অহনার জন্য দুপুরের লাঞ্চ তৈরীর প্রস্তুতিও করছে!

সকাল ৮ টার এলার্ম বাজাতে ঘুম ভাংলো অয়নের। খুব ভাল ঘুম হয়েছে তার তাই মেজাজ টাও ফুরফুরে তার। টাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুমে গেল অয়ন শাওয়ার নিতে।………….

৮:১০ বাজে অরু বুঝলো অয়ন উঠে গেছে। বুয়াদের টেবিল রেডি করতে বলে অরু উপরে গেল। অয়ন এখনো শাওয়ার নিচ্ছে …

অরু আলমারি থেকে অয়নের শার্ট, সুট, প্যান্ট, টাই, ওয়ালেট, বেল্ট, রুমাল মানে যাবতীয় সব প্রয়োজনীয় জিনিস বের করে রাখলো………

♣হ্যা অরু নিজের সংসার আজ থেকে নিজের মত করে গুছিয়ে নিতে শুরু করেছে… এটা তো অরুর ই সংসার,…..
.অরুকেই সব দিক সামলাতে হবে ♣

অরু রুম থেকে যেই বের হয়ে গেল। তার যে অনেক কাজ!!

অয়ন ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে তো অবাক! তার প্রয়োজনীয় সব জিনিস তার হাতের নাগালে রেখে গেছে!!!

কে???

অরু???

অয়ন বাকা হাসি দিয়ে বলল বাহ ♥ এমন হলে আজ থেকে আর ১০ মিনিট বেশি ঘুমানো যাবে……..

প্রতিদিনের মত সবাই ৮:৩০ এ নিজ নিজ রুম থেকে বের হয়ে নিচে গেল।
নিচে নেমে সবাই অবাক!! বিশেষ করে অয়ন।কত বছর পর যে এমন টেবিল ভর্তি খাবার দেখলো তাও আবার ঘরের তৈরি….

বাবা: সেকি!!! এত কিছু কে করলো।
সেলিনা : সাহেব নুতন বউ এইসব রানছে তাও একা একাই
বাবা: কি!! অরুমা এসব কি? ১দিন কেবল হয়েছে এই বাড়ীতে এসেছো আর আজই রান্নাঘরে ঢুকলে!”! আমি বলেছিললাম বটে যে তোমার হাতের রান্না খাবো তবে আজ ই!!!!
অয়ন:…….
অরু: বাবা আপনি ই তো বলেছেন এটা আমার সংসার!! তাহলে আমাকেই তো সামলাতে হবে!
(অয়ন,অহনা আর তাদের বাবা খেতে বসলো টেবিলে)(অরু সবাইকে খাবার বেড়ে দিল)
(এতক্ষনের আরোহীও চলে এসেছে! অরু আরোহী কে বসতে বলল)
বাবা: অরুমা আমাদের সাথে বস!
অরু : না বাবা আমি একটু পরে খাবো!
আরোহী : কেন? এখনই বস!!!
অরু: না আপু পরে প্লিজ! আপনারা খেয়ে বলুন কেমন হয়েছে…
অহন: ওয়াও!!! ভাবি ভাজি টা জি ইয়াম্মি হয়েছে!! আর চিকেন টাও জাস্ট ওয়াও
অরোহী অরুকে ইশারা করলো অয়ন কে সব বেড়ে দিতে! অরু অয়নকে পরোটা আর ৩ ড়া বাটিতে সব্জি, চিকেন, সিমাই বেড়ে দিল..
(অয়ন চুপচাপ খাচ্ছে নিচের দিকে তাকিয়া)

আরোহী, অহনা আর বাবা তো অরুর রান্নার প্রশংসায় পঞ্চমুখ!!!

অরু বলল…
অরু: বাবা দুপুরে লাঞ্চে কি খাবেন? বললে ভালো হত
বাবা: কেন মা? তুমি লাঞ্চ ও বানাবে? আমরা তো বাইরে খেয়ে নেই তাউ প্রয়োজন নেই
অরু: এতদিক খেয়েছেন বাবা! এখন থেকে আর না! আমি রোজ আপনাদের ৩ জনের লাঞ্চ পাঠিয়ে দিব! বাইরের খাবার স্বাস্থের পিক্ষে ভাল না।
অয়ন:……..
অহনা : ওকে ভাবি আজ গরুর মাংস ভুনা খাব।
বাবা: আচ্ছা মা তুমি ভাত আর মাংস দিয়ো
অয়ন:………

খাওয়া শেষে অয়ন অহনাকে বলল…

অয়ন: অহন! চল তোকে কলেকে ড্রেপ করে দেই ”
অহনা : কেন ভাই! তোমার অফিস আর আমার কলেজ তো অপসিট রাস্তায়
অয়ন: ব্যাংকে কাজ আছে চল
অহনা : ওকে। আমি ব্যাগ নিয়ে আসছি
অয়ন: হুম
……..

(অয়ন অরুর রান্না ভাল হয়েছে কি না কিছুই বলল না! অরুর মন খারাপ হয়ে গেল)
আরোহী : ভাইয়া বললি না তো অরুর রান্না কেমন হয়েছে???
(অয়ন অরুর দিকে তাকিয়ে বলল….
অয়ন: খাওয়ার মত হয়েছে…..
এই বলে অয়ন বের হয়ে গেল)
(অরুর মুখটা কালো হয়ে গেল)
আরোহী সেটা খেয়াল করে বলল..
আরোহী : আরে অয়নের খুব পছন্দ হয়েছে তোমার রান্না! দেখলা না কি গপাগপ খেল!! ৪ তা পরোটা!! ভাবা যায়!! অয়ন কে আমি অনেক দিন পর এত খেতে দেখলাম
(অরুর মুখে এবার বিশ্বজয়ের হাসি)

অরু নাস্তা খেয়ে নিল। বুয়াদের ও নাস্তা সাজিয়ে দিল। বুয়ারা অবাক!
কিন্তু খুব খুশি হল সবাই

আজ অয়নের মন টা ভাল সকাল থেকেই! হবেই বা না কেন সামনের উপর আজ সব প্রয়োজনীয় জিনিস গুছানো পেয়েছে, তার কষ্ট করে খোজা লাগে নি… আর আজকের নাস্তা টা সেই ছিল অয়নের কাছে!
আজ কতদিন পর যে এমন পেট পুরে সে খেল!!!! রোজ রোজ ব্রেড, জেলী, বাটার খেয়ে খেয়ে অয়ন ছিল ফেড আপ। আর আজকে বেস্ট এর উপর বেস্ট ছিল অরুর হাতের চা।যেন চা তে চুমিক দেওয়ার সাথে সাথেই মন প্রফুল্ল হয়ে গেছিল, এরকম এক কাপ চা যে কোন মানুষের সব ক্লান্তি দুর করতে সক্ষম।।।

অয়ন অহনাকে ড্রপ করে ব্যাংকে গেল। হাসপাতালের সকল ডাক্তার + স্টাফদের বেতন তুলে হাসপাতাল এর উদ্দেশ্য নিয়ে রওনা হল………………..

♣♣♣♣♣♣♣♣♣
ওদিকে অনিকের মন টা খুব খারাপ! নিজেকে বড্ড পাষান মনে হচ্ছে তার! সে তার সব থেকে কাছের মানুষ টার গায়ে হাত দিয়েছে!! ১টা মাস ধরে তার কলিজার টুকরো কে কষ্ট দিয়েছে!!!
নিজেকে অনেক একা লাগছে তার!!! নিঃস্ব হয়ে গেছে সেই আজ
….
♣♣♣♣♣♣♣♣♣

চলবে…….

♦ফোনে প্রব্লেম হয়েছিল বলে গতকাল গল্প দিতে পারি নি। আজ সন্ধার পর ফোন ঠিক হয়েছে….. কাল চেস্টা করবো বড় করে দেওয়ার। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃস্টিতে দেখবেন♦
.
#অরুর_সংসার
#পর্ব-৮
#লেখিকা-নিশিকথা
_________________

অনিককে বেশি খানিকক্ষণ ধরে লক্ষ্য করছে রিটা।
মেজাজ টা তার চরম খারাপ হচ্ছে অনিকের আরোহী আর রুশার প্রতি এত ভালবাসা দেখে।।।
কত না চেস্টা করলো অনিককে পাওয়ার। পেল না।অনিকের মন প্রানে শুধু একমাত্র আরোহী কে ভালবাসে কেন যেন সেতা মেনে নিতে পারে না রিটা।।।।।।

(রিটা অনিকের বসের মেয়ে।প্রথম দেখাতেই অনিককে ভালবেসে ফেলেছিল… তার পর থেকে অনিকের পিছু ছাড়ছে না….অনিক কে পাওয়া টা রিটার কাছে একটা নেশা!! আর এই নেশায় তার মাথায় প্রখর ভাবে সেদিন থেকে চড়ে বসেছে যেদিন রিটা জানতে পারে অনিক বিবাহিত এবং তার একটা মেয়ে আছে!!!! এটা জানার পর থেকে যেন রিটা অনিক আর আরোহীর সম্পর্ক ভাংগার পিছে মরিয়া হয়ে উঠেছিল….. কিন্তু কিছুতেই অনিকের মন গলাতে পারে নি সে….. এলের পর এক চেস্টা ব্যর্থ যাবার ফলে রিটা একদিন এমন নিচে নেমে যায় যা কল্পনার বাহিরে….. )

ওদিকে অনিক ভাবছে সেই কথা!!! ১ দেড় মাস আগের কথা……….
সেদিন অনিক তার বসের রুমে ঢুকে বস কে পায় নি!! কিন্তু অনিককে তো বলা হয়েছিল যে বস তাকে ডেকেছে!!! সারা কেবিন ভালবাবে দেখে বস কে না পেয়ে অনিক বের হতে নিবে কেউ তার হাত ধরে ফেলে!!

সে আর কেউ না রিটা!

রিটা তখন অনিকের সামনে অর্ধউলঙ্গ অবস্থায় দাড়ানো ছিল। অনিক কে টেনে জরিয়া ধরলো রিটা!! অনিক ধরে নি!!
অনিক রিটার এমন বিহেভিয়ার এ বড় রকম ঝাটকা খেয়েছিল!
অনিক : what the f**k!! how dare you Rita!!!
রিটা : i love you Anik
অনিক:are you mad?? তুমি জানোনা আমি মেরিড! আমার একটা মেয়ে আছে?
রিটা : জানি তো কি? আমি ভালবাসি তোমায় অনিক”” আমি তোমার ভালবাসা চাইই , তোমার ছোঁয়া চাই!!! একটা বারের মত অনতত “””<অনিককে শক্ত করে জরিয়া >
<অনিকে রিটাকে জোরে ধাক্কা দিল রিটা নিচে পড়ে গেল>
অনিক : You are just disgusting! nonsense
(অনিক বের হতে নিলে এবার রিটা অনিককে জোর করে টেনে নিজের গায়ের উপর ফেলল…অনিককে কিস করতে চাইলো। অনিক তখন রিটার এমন অসভ্যতামি দেখে জোরে ওর গালে চড় বসিয়ে চলে গেল…. )
ব্যাস…….
সেদিনে কিছু moment এর pick wrong angel এ তুলিয়েছিলো রিটা তার বান্ধুবিকে দিয়ে!!! সেটা নিয়েই রোজ রিটা অনিককে ব্লাকমেইল করে।যেদিন এই ঘটনা ঘোটে সেদিন থেকেই অনিক চেঞ্জ বিহেব করা শুরু করেছিল… আর যেদিন পিক গুলা দিয়ে রিটা তাকে ব্লাকমেইল শুরু করে সেদিন ই বাসায় ফিরে রুশার সাথে খারাপ বেহেভ করেছিল অনিক!!!
রোজ রাতে রিটাই অনিককে ফোন দেয়! ঘন্টার পর ঘন্টা আটকে রাখে!!!!

অনিকের ভয় এটা না যে আরোহী এসব দেখলে তাকে ভুল বুঝবে!!! অনিকের ভয়
নিজের চাকরী নিয়ে!!! চাকরী টা ৫ বছরের আগে সে ছাড়তে পারবে না,কোন কারনে ছাড়লে তাকে মোটা অংকের জরিমানা দিতে হবে ! আর রিটা পিকগুলা দেখালে অনিকের মান ইজ্জত কিছুই থাকবে না…… নানান চিন্তায় অনিকের মাথা ইদানিং ঠিক থাকে না!!!!! কিন্তু অনিকে যেটা করেছে সেটা অপরাধ…… চরম অপরাধ!!! সে তার স্ত্রির গায়ে তার তুলেছে”!!

অনিক উঠে দাড়ালো…… না আর এভাবে বসে থাকলে হবে না! আর অন্যায়ের সাথে আপোষ করবে না সে……….

অনিক গাড়ি নিয়ে আরোহীদের বাড়ীর উদ্দ্যশ্যে রওনা হল…….

♣♣♣♣♣♣♣♣♣

সকালে নিজের মায়ের ডাকে ঘুম ভাংলো জয়ার।।।। সারারাত কেঁদে ভোরের দিকে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল সে!

মা: কিরে আজ এতক্ষন ঘুমুচ্ছিস!!! হাসপাতালে যাবি না?
জয়া: হুম
মা: কি হল নিচে তাকিয়ে আছিস কেন!??
জয়া: কিছুনা
মা: এই তোর গলা এমন ভাড় ভাড় কেন? কিছু হয়েছে??? এই তাকা আমার ফিকে!!
জয়া!!!!!!
(এর ই মাঝে জয়ারর বাবাও রুমে এলো….তিনি কাধে হাত রাখতেই জয়া তাকিয়ে আবার কেঁদে দিলো)
মা- বাবা: কি হয়েছে তোরর???বল না মা??
জয়া: বাবা আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি!!! আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি বলে হুহু করে কেঁদে দিল
বাবা: কি হয়েছে আমাকে বল
জয়া: অয়ন স্যারের বিয়ে হয়ে গেছে বাবা।কিভাবে উনি পারলেন এভাবে এগিয়ে যেতে??? আমি তো তাকে অনেক ভালোবাসি বাবা। বলা ও তো হল না!!!! আমি যে তাকে কত বেশি ভালবাসি আমাকে সেটা বলার সুযোগ ও দিল না………………..
বাবা: জয়া!! শক্ত হও মা! এভাবে ভেংগে পরলে হবে না!!! আর তুমি তাকে ভালবাসতে সেটা তো তুমি তাকে বলোইই নি!! আর এখন সে বিবাহিত! “” আর বলেও লাভ নেই
জয়া : না বাবা আমি উনাকে বলবো!! উনাকে আমি জানাতে চাই!!! বাবা উনি আমার ভালবাসার গভীরতা জেনে যদি আমাকে ভালবাসে???? হতেও তো পারে!!!
মা: জয়া!!! একজন ডাক্তার হয়ে এমন ভিত্তিহীন কথা বল না!!!
জয়া: বাবা আমি তো আজ পর্যন্ত যা চেয়েছি তোমার কাছে তুমি দিয়েছো!!! বল আমাকে দাও নি??? তাহলে আজ আমার এই চাওয়া টা তুমি পুরন করে দাও বাবা। নাহলে তোমার মেয়ে বাঁচবে না!!!
বাবা: জয়া “!! এমন অন্যায় আবদার কর না মা।অয়ন যদি বিবাহিত না হত তাহলে ও তোমাকে ভাল না বাসলেও আমি অয়নকে যে করি হোক তোমার কাছে এনে দিতাম কিন্তু মা সে যে বিবাহিত! “!!!
জয়া:……………..
বাবা??? বিয়ের জোড় কি এতই?????
বাবা: হ্যা মা
জয়া: (আমি তাও একটা বার অয়নকে নিজের মনের কথা বলবো বাবা) মনে মনে বলব জয়া

জয়া: বাবা আমি ফ্রেশ হয়ে আসি
বাবা: ঠিক আছে মা।তুমি অনেক শক্ত কিন্তু। ভুলে যাও ওকে। জানি এত সহজ না, জানি কষ্ট হবে কিছুদিন কিন্তু পরে সব ঠিক হয়ে যাবে
জয়া : হুম
(জয়া উঠে ওয়াশরুমে চলে গেল)

♦♦♦♦♦♦♦♦♦
অয়ন সব ডাক্তার দের রিপোর্ট নিয়ে তাদের পেইমেন্ট দিল।বাকি শুধু জয়া!!!
অয়ন: Hello!! ডঃ জয়া অনুপস্থিত?? নাকি সে আমার কেবিনে এখনো আসেন নি!!! লগ বুক চেক করে জানান আমাকে
শুশান্ত : ডঃজয়া তো আসেন নি আজকে!!এটেন্ডেন্স লগ বুক এ তো উনার নাম নেই!!!

অয়ন: what!!!!! তিনি কি জানেন না আজ তার কত বড় একটা সার্জারি আছে????

শুশান্ত : OMG!!! এটা আমার মাথা থেকে বের হয়ে গেছিলো!!!!

অয়ন: Dr.Shushanto call her

শুশান্ত : Okay I will handle…… patient কি admit হয়ে গেছে??

অয়ন: জি। পেইন্ট ও ফুল দেওয়া কম্পলিট!!

(শুশান্ত ফোন রেখে জয়াকে কল করলো…. জয়া জানালো সে আসতেছে……. )
/
//
///
//
/

ওদিকে অরুর দুপুরের রান্না শেষ!! ৩ টা টিফিন বক্স গুছিয়ে অলরেডি ড্রাইভার কে কল করেছে সে।

অরু আজ লাঞ্চে বাসমতী চালের সাদা ভাত, গরুর মাংস ভুনা, তেতুল দিয়ে ডাল, চিংড়ি মাছের দোপেয়াজা করে পাঠাচ্ছে!!! অরু আরোহীর কাছে শুনেছে যে অয়ন টক ডাল পছন্দ করে, প্রতি বেলায় তার এটা চাই..তবে তেতুল দিয়ে ডাল টা অরুর নিজের ইনভেনশন! …… বেশ মজা করে রাধে অরু…….

ড্রাইভার কে দিয়ে বক্স গুলা পাঠিয়ে শান্তি হল অরুর! এখন সে গোছল করে দিবে আবার!! তাই একটা নীল রঙের তঁাতের শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল অরু!!
/
//
///
//
/

গোল টেবিলে অয়ন, শুশান্ত সহ হাসপাতালের বড় বড় ৯ জন সার্জেন্ট এর সামনে বসে আছে জয়া।।।।।।।

শুশান্ত : ডঃ জয়া আপনি এসব কি বলছেন?? মাথা ঠিক আছে আপনার??
ভাবতে পারছেন এটা আপনার ক্যারিয়ারের জন্য কত বড় একটা oppertunity!!!!!!! can you imagine /??
আর আপনি বলছেন সেই সুযোগ আপনি সেচ্ছায় হাত ছাড়া করবেন????
আর আপনি ই ৪,৫ আগে এই সা্র্জারি নিয়ে কতই না এক্সসাইটেড ছিলেন!!!!

অয়ন: প্রব্লেম টা কি হয়েছে বলবেন তো

জয়া : …………….

অয়ন: ডঃ শুশান্ত আমার মনে হয় আপনার এই কেস টা হয় ডঃ রাকিব বা ডঃফারহানা কে দেওয়া উচিৎ…..

শুশান্ত : ডঃ ফারহানা আপনি এই কেস টা নিন , আর ডঃ মাহি আপনাকে এসিস্ট করবে

(এই বলে ডঃ শুশান্ত বের হয়ে গেল রুম থেকে।আস্তে আস্তে সবাই বের হয়ে গেল রুম থেকে, শুধু জয়া বসা….. মাথা নিচু করে চোখের জল ঝড়াচ্ছে সে)

লাঞ্চ এর সময় হল…
অয়ন ফাইল পত্র রেখে ক্যান্টিনের উদ্দেশ্যে বের হতে নিবে তখনই আলমগির ভাই (ড্রাইভার) এসে হাজির বল।
আলমগির :আসসালামুআলাইকুম ভাই।
অয়ন: ওয়ালাইকুমআসসালাম
আলমগির : ভাই এইযে আপনার খাবার!! বউমনি দিছে
অয়ন: ওহ!! দেও! (অয়ন টিফিনবক্স নিয়ে আলমগিরের হাতে ৫০০ টাকা দিল )
অয়ন: তুমি কিছু খেয়ে নেও ভাই। এসময় তো তুমি বাড়ী যাও, আজ আমাকে খাবার দেওয়ার চক্করে তো তোমার যাওয়াই হল বা
আলমগির : না না ভাই দরকার নাই। বউমনি আমার জন্য ও খাবার দিছে সব! আমি এখন খাবো ভাই
(অয়ন আর কিছু বলল না।নিজের কেবিনে চলে গেল)
অয়ন ভাবছে অরুর কথা!! মেয়েটার মাথায় বেশ বুদ্ধি আর তার চেয়ে বেশি মন টা ভাল!!!!!!! ………. হয়তো!! আবার বলাও যায় না।মেয়ে তো বিশ্বাস নেই।।।।।।।।

অয়ন ওয়ার্ডবয় কে একটা প্লেট, চামচ আনতে বলল!
ওয়ার্ডবয় সব এনে দিয়ে গেলে অয়ন খাওয়া শুরু করলো।খাবার গুলা দেখেই মজাদার মনে হচ্ছে !!

অয়ন খুবই তৃপ্তি করে খেল !! প্রতিটা আইটেম খুব ই মজা হয়েছে ♥♥
আজ যে অয়ন কত বছর পর এমন তৃপ্তি করে খেল তার জানা নাই…………

অয়ন আলমগিরকে ফোন করে টিফিন বক্স নিয়ে যেতে বলল।।।।।
আলমগির বক্স গুলা নিয়ে চলে গেল।।।।
আলমগির বের হওয়ার সাথেসাথেই জয়া কেবিনের রুমে ঢুকলো
……………

(অয়ন ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে জয়ার দিকে….)

জয়া: আমার আপনার সাথে কথা আছে………
অয়ন: হুম কথা আছে তো? বলবেন কিন্তু আগে আপনি আমার কেবিনের বাহিরে যান … তারপর নক করে ঢুকেন
জয়া :………
অয়ন: যান!!!!
(অয়ন যা বলল জয়া তাই ই করলো)
অয়ন: এটা বলার কারন আছে!! কারন হল আপনি এর আগেও এমন করেছেন!!নক করে ঢোকা ভদ্রতা!!

<এবার জয়া কেঁদে দিল হাউমাউ করে >
দৌড়ে যেয়ে অয়নকে ঝাপটে ধরলো জয়া!!!!!

অয়ন বোল্ড!!! ফ্রিজেড হয়ে আছে অয়ন

জয়া : স্যার স্যার…..
।।।♥ I love you♥।।।
♥ I love you a lot♥
আমি আপনাকে অনেক ভালোবাসি.. বাচবো না আপনাকে ছাড়া “! আপনি বিয়ে করে ফেললেন?? কেন?? একটা সুযোগ ও দিলেন না আমাকে?????
একটাবার বলতেও দিলেন না যে কতটা ভালবাসি আপনাকে!!!!
স্যার বাঁচবো না আপনাকে ছাড়া!!! মরেই যাবো
(অয়ন জয়াকে যতই ছাড়ানোর চেস্টা করছে জয়া ততই অয়নকে চেপে ধরছে)……
/
//
///
//
/
কলিং বেল বাজার সাথেসাথে অরু আর আরোহী দরজার দিকে তাকালো!!”
আরোহী : হয়তো বোনু এসেছে
অরু: আমি দেখছি আপি

(অরু দরজা খুলতেই দেখলো……………. )

অরু : আপনি???
……. অনিক…….
অরু: আসসালামুআলাইকুম ভাইয়া
(অনিক সালামের উত্তর দিয়ে ভিতরে ঢুকলো)

আরোহী : …………..
অনিক: ……………….
আরাহীর চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে …………

চলবে…………