#অর্ধাঙ্গিনী (An Ideal Wife)
#পার্ট১৯+২০
#আফরিন_ইনায়াত_কায়া
.
.
বক্সিং ব্যাগে ইচ্ছে মতো ঘুষি মারছে মেঘ।রাগে গা ফাটে যাচ্ছে।বক্সিং ব্যাগের যায়গায় আয়াজকে মারতে পারলে প্রচন্ড শান্তি পেত সে। হঠাত করে রোদের চেহারাটা মনে পরতেই থেমে গেল সে।বক্সিং ব্যাগটাতে বারি খেয়ে ধুপ করে মাটিতে বসে পড়ল সে।রোদের চেহারাটা বার বার তার চোখে। ভাসছে।কি মাসুম বাচ্চাটা।ছোট ছোট হাত পা ছুরে বেশ হেসে খেলে বেরাচ্ছিল সে।আজকে যদি বৃষ্টি তার সাথে থাকতো তাহলে হয়তো তারও রোদের মতো একটা কিউট বাচ্চা থাকতো। রোদকে দেখে খুব ইচ্ছে হচ্ছিল তার সঙ্গে খেলার।তার গাল দুটো হালকা করে টেনে দেওয়ার।কিন্তু সব ইচ্ছা পূরন হয় না। চাইলেও আমরা করতে পারি না।
.
.
-Sir I am here.where to meet?
-At the farmhouse.
-Got it sir.
কান থেকে ফোনটা নামিয়ে উঠে পড়ল মেঘ।
প্রায় ২০ মিনিট ধরে রিসিপশনে বসে আছে মেঘ।অলিভিয়া বেশ কয়েকবার মেঘকে ঘুরে আসার জন্যে সেধেছে।কিন্তু মেঘ রোবটের মত বসে কি জানি ভাবছে।কিছুক্ষন পর একজন সুন্দরী রমনী এসে তাদের মিটিং রুমে যেতে বললেন।মেঘ হালকা বিরক্তি নিয়ে এগোতে লাগল।মিটিং রুমের দরজা খুলে ঢুকতে যাবে তখনি থমকে গেল হালকা মিষ্টি একটা গন্ধে।চোখ তুলে তাকাতেই যেন সে চমকে গেল।হালকা ব্লু শাড়িতে অসম্ভব সুন্দর লাগছে তাকে।নিজেকে সামলে নেয় মেঘ।বৃষ্টির বেশ অস্বস্তি লাগছে মেঘকে দেখে । ওলিভিয়া এগিয়ে গিয়ে বৃষ্টির সাথে কথা বলতে লাগল। মেঘ চুপচাপ একটা চেয়ারে বসে পড়ল।তার চোখ দুটো বৃষ্টিতে নিবদ্ধ।ওলিভিয়া বৃষ্টিকে প্রেজেন্টেশন দেখাচ্ছে।কথার ফাকে বৃষ্টি মেঘের দিকে বারবার নজর দিচ্ছে। প্রেজেন্টেশন শেষে বৃষ্টি ডিল ফাইনাল করল।ওলিভিয়া বেশ খুশি।এই ডিলটা থেকে তাদের কোম্পানি অনেক লাভ করতে পারবে।কিন্তু মেঘ এক ঘেয়ে বসে আছে।
.
.
-ওলিভিয়া হাত ধরে টানছে মেঘকে উঠার জন্য। মেঘ চোখ তুলে তাকাতেই ওলিভিয়া হাত ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে দাড়াল।মেঘ কি জানি ভেবে ওলিভিয়ার কোমড়ে হাত দিয়ে পেচিয়ে নিল।মুহুর্তেই বৃষ্টির মুখটা মলিন হয়ে গেল।ঠোটের কোন তবুও যথাসাধ্য হাসি ধরে রেখেছে সে।মেঘ বের হতে যাবে তখন রোদ দৌড়ে এসে পাপা পাপা বলে দু হাত মেঘের দিকে বাড়িয়ে দিল।মেঘ নিজেকে আটকাতে পারল না।টুপ করে রোদকে কোলে তুলে নিয়ে আদর করতে লাগল। রোদও মেঘের কোলে উঠে দুষ্টুমি করতে লাগল।আধো আধো বোলে কথা বলছে আর খিলখিল করে হাসছে।তা দেখে মেঘও হাসছে।বৃষ্টির ঠোটে অজান্তেই হাসি ফুটে উঠল।
ওলিভিয়ার দিকে তাকাতেই দেখল সে ভ্রু কুচকে মেঘ আর রোদকে দেখছে।বৃষ্টি এগিয়ে গিয়ে রোদকে মেঘের কোল থেকে নামিয়ে নিল।মেঘ বেশ বিরক্ত হলো ব্যাপারটাতে।কিন্তু বৃষ্টিকে দেখে সেখান থেকে বের হয়ে চলে গেল।ওলিভিয়াও ছুট লাগালো মেঘের পিছে পিছে।মেঘ চলে যেতেই বৃষ্টি রোদকে কোল থেকে নামিয়ে বলল
-উনাকে আর পাপা বলবে না রোদ।
-বাট মাম্মা…
-নো
-ওকে মাম্মা।
রোদ মুখ ঝুলিয়ে সেখান থেকে চলে গেল।
বিছানায় বসে টেবল ল্যাম্প অন অফ করছে মেঘ।রোদের কথা ভাবছে সে।কত কিউট বাচ্চাটা!যখন সে তার ছোট ছোট হাত দুটো দিয়ে মেঘের গাল ছুয়ে দিচ্ছিল একটা অন্যরকম অনুভুতি কাজ করছিল তার মাঝে।ইচ্ছে করছিল পুচ্চিটাকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে রাখতে।
.
.
দরজায় দুটো টোকার আওয়াজ পেয়ে মাথা তুলে তাকালো মেঘ।
-পারমিশন নেওয়ার অভ্যাস কবে থেকে করলি?
-তুই যখন থেকে নিজের অস্তিত্বকে চিনতে ভুল করলি তখন থেকে।
কথাগুলো বলে ভেতরে আসল রেওয়াজ।
-মানে?
-মেঘ রোদ তোর ছেলে।
মেঘ বিছানা থেকে নেমে গিয়ে একটা বিয়ারের বোতল খুলে বেশ খানিকটা মদ ঢেলে নিল গ্লাসে।
-রোদ আমার ছেলে না রেওয়াজ । রোদ আয়াজ চৌধুরীর ছেলে।…..
চলবে
#অর্ধাঙ্গিনী (An Ideal Wife)
#পার্ট২০
#আফরিন_ইনায়াত_কায়া
.
.
-মেঘ তোর ধারনাও নেই তুই কি বলছিস?
-আছে রেওয়াজ। অনেক ভালো করেই জানা আছে।বরং এটা বলব তুই কিছুই জানিস না।
-মেঘ!!!!
-আয়াজ চৌধুরীর জিপিএস ট্রাক করে আমি সেদিন গিয়ে হাজির হই হোটেল ডায়মন্ড এ। হোটেলে পা রাখতেই চোখ পড়ে রিসিপশনের দিকে।আয়াজ চৌধুরির পারসোনাল সেক্রেটারি মি.মাহবুব বসে পেপার পড়ছেন।উনি আমাকে দেখতেই একটা নোংরা হাসি দিলেন।আমি কোন কথা না বলে আগাতে লাগলাম।
-৩০৪ নাম্বার রুম।থার্ড ফ্লোর হাতের ডানের রুম।
কথাটা শুনেই থমকে গেলাম।পেছনে ফিরে তাকাতেই একটা বাকা হাসি দিয়ে মি.মাহবুব বলে উঠল
-আই থিংক আপনি খুজে পাবেন না। আমি নিয়ে যাচ্ছি চলুন।তবে মি.মেঘ একটা জিনিস মানতেই হবে।আপনি অনেক লাকি। কারন আপনার ওয়াইফ অনেক সেন্সেবল।উনার এই স্টেপে আপনার চাকরিও বেচে যাবে আর আপনার ওয়াইফের ও সাময়িক ইঞ্জোয়মেন্ট হবে।
কথাটা শুনার পর যেকোন স্বামীর পক্ষেই সম্ভাব না নিজেকে ধরে রাখা।জোরে একটা চিতকার দিয়ে কলার চেপে ধরলাম উনার। সাথে সাথেই কয়েকজন সিকিউরিটি গার্ড এসে আমার হাত অয়া চেপে ধরল।মি. মাহবুব হাতের ইশারা করতেই আমাকে টেনে হিচড়ে ৩০৪ নং রুমের মধ্যে নিয়ে যাওয়া হল।রুমের দরজায় দুটো টোকা পরতেই আয়াজ চৌধুরী দরজা খুলে দিল।তার পরনে একটা নাইট গাউন আর হাতে ওয়াইনের গ্লাস।আরেকটু ভিতরে উকি মারতেই আমি থমকে গেলাম।আমার হাত পা অবশ হয়ে আসল।বিছানায় বৃষ্টি আধশোয়া হয়ে বসে আছে। তার পরনে স্লিভলেস ব্লাউজ আর হালকা সিল্কের শাড়ি।বৃষ্টি হয়তো আমাকে দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না।আমাকে দেখেই সে চমকে গেল।কোন রকমে সোজা হয়ে বসে সে কিছু একটা লুকানোর চেস্টা করতে লাগল।বৃষ্টির চেহারায় ভারি মেকাপ, গায়ে পারফিউমের মন মাতানো গন্ধ।যেকোন ছেলেকেই সে ঘায়েল করতে প্রস্তুত।
.
.
আমি অবাক চোখে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে আছি।আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই বৃষ্টি বলে উঠল
-তুমি এখানে কেন মেঘ?
-কেন আমার উপস্থিত বুঝি তোমার সহ্য হচ্ছে না?
-মেঘ তোমার মাথা ঠিক নেই এখন। তুমি বাসায় যাও। আমি পরে তোমার সাথে কথা বলব?
-কথা বলার মতো কি কিছু বাচে আছ বৃষ্টি?আমার যা জানার আর বুঝার তা আমি বুঝে নিয়েছি।শুধু তোমার কাছে আমি একটা কথাই জানতে চাই আমার ভালোবাসায় কি এমন কমতি ছিল যার জন্যে তুমি আজ এই বদ্ধ ঘরে….
-দেখো মেঘ তুমি বাসায় যাও।
-তোমার কি বিবেকে একটুও আঘাত করে নি?কিভাবে পারলে তুমি?
-প্রশ্নটা তো আমার তোমাকে করা উচিত মেঘ।
আমি চোখে মুখ বিস্ময় ফুটিয়ে বললাম
-মানে?
-মেঘ তোমার স্যালারি মাত্র ৬০ হাজার টাকা যার বেশির ভাগটাই চলে যায় তোমার অসুস্থ মায়ের চিকিতসা করতে আর সংসার চালাতে।বলি আমার নিজেরো তো কিছু শখ আল্লাদ আছে। তোমার জবটা চলে গেলে তো পেটের ভাত জুটানো টাই মুশকিল হয়ে যাবে।সেই জন্যে আমি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
.
.
বৃষ্টির কথাগুলো শুনে আমি নিজের রাগ ধরে রাখতে পারিনি কষে দুইটা থাপ্পড় বসিয়ে দেই। বৃষ্টির ফর্সা গালদুটো মুহুর্তে লাল হয়ে গেল।আমি কিছু না বলে সেখান থেকে চলে আসলাম। নিজেকে প্রচন্ড ছোট মনে হচ্ছিল। ঘৃনা ধরে গিয়েছিল নিজের উপর। আমি চেয়েছিলাম মাকে নিয়ে দূরে কোথাও চলে যেতে। কিন্তু মা বৃষ্টিকে ছাড়া কোথাও যেতে নারাজ।বাধ্য হয়ে আমি নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে উড়াল দিলাম অস্ট্রেলিয়ায়।
.
.
কথাগুলো বলে চুপটি করে গেল মেঘ। চোখ দিয়ে অঝোরে পানি ঝরছে।হালকা লালচে বর্ন ধারন করে আছে চোখ দুটো।হাতের সিগারেটটা অনেক আগেই নিজেকে ছাই বানিয়ে ফেলেছে।রেওয়াজ অনেকটা নিশ্চুপ হয়ে কথাগুলো শুনছিল।
মেঘ কিছুটা সময় চুপ করে বসে ছিল।হঠাত পেছনে ঘুরে তাকাতেই রেওয়াজ প্রশ্ন করে উঠল
-তুই হুট করে জব ছেড়ে চলে আসার পরেও আয়াজ চৌধুরী তোর নামে কেস ফাইল করল না কেন?
এমন একটা প্রশ্নের জন্যে মেঘ মোটেও প্রস্তুত ছিল না।
-সবটা জানার পর তোর এই প্রশ্নটা আমার কাছে যুক্তিহীন মনে হচ্ছে রেওয়াজ।
-আন্টিই বা এখন কোথায় কেমন আছে?
-মা তো…..
-ডিল ফাইনাল না হওয়ার আগেই কেন কোম্পানি তোর রেজিগনেশন লেটার একসেপ্ট করে নিল?
কথাগুলো শুনে মেঘ বড়সড় একটা ধাক্কা খেল। কয়েকটা বছরে সে এই কথাগুলো একবারের জন্যেও ভাবে নি।ভাবেনি তার অতীতকে নিয়ে। ভাবে নি বৃষ্টিকে নিয়ে। শুধু বুকের মধ্যে যখনি ভালবাসা উদগীরণ হতো বারে গিয়ে সে মদের নেশায় বুদ হয়ে থাকত।নিজের অতীতকে সে কখনো বর্তমানে জায়গা করে নিতে দেয় নি। কিন্তু আজ তাকে কথাগুলো ভাবাচ্ছে। খুব করে ভাবাচ্ছে।…….
চলবে