অল্প থেকে গল্প পর্ব-২৪+২৫

0
527

অল্প থেকে গল্প🍁
অরিত্রিকা আহানা
পর্ব:২৪

ভার্সিটির কাছাকাছি একটা রেস্টুরেন্টে শুদ্ধ গাড়ি পার্ক করে। রেস্টুরেন্টের ভেতরে ঢুকলো ওরা।ছবিকে কে জিজ্ঞেস করে খাবারের অর্ডার দিয়ে দিলো শুদ্ধ।বোঝাই যাচ্ছিলো তার ভীষণ ক্ষিদে পেয়েছে।
পাঁচমিনিটের ভেতর খাবার চলে এসেছে।সেট মেন্যু;ফ্রাইড রাইস,চিকেন কারী,কাবাব,ভেজিটেবল আর সফট ড্রিংকস।
খাওয়ার সময় ছবি আড়চোখে একটুপরপর শুদ্ধকে দেখছে। শুদ্ধর চোখ পড়তেই বলল,
—কি হলো ছবি খাচ্ছো না কেন? খাবার ভালো লাগছে না?
—কই না খাচ্ছি তো।
—তাড়াতাড়ি শেষ করো,তোমাকে নিয়ে একজায়গায় যাবো।
—কোথায়?
—খাওয়া শেষ করে বলি?
ছবি মাথা নাড়িয়ে সায় দিলো।
খেতে খেতে ছবিকে বাসার কথা বলল শুদ্ধ।বাসায় আনোয়ারা বেগম নেই।শুদ্ধর এক চাচার বাসায় গেছেন উনার অসুস্থ স্ত্রীকে দেখতে।উপল গতকাল অফিসের কাজে ঢাকার বাইরে।ফিরতে ফিরতে আজকে সন্ধ্যা হয়ে যাবে।বাসায় মেহমান এসেছে।নিহাল ভাই আর উনার স্ত্রী এসেছেন জারাকে ডাক্তার দেখাতে।সপ্তাহখানেক হয়েছে এসেছে।জারার শ্বাসকষ্ট।শুদ্ধ পরিচিত এক ডাক্তারকে দেখাতেই উনাদের ঢাকায় আসা।ডাক্তার দেখানো হলেই চলে যাবেন।জারার স্কুলের এডমিশন আছে।আরো টুকটাক ককথাবার্তা হলো দুজনের।
খাওয়া শেষে বিল পে করে ছবিকে নিয়ে বেরোলো শুদ্ধ।গাড়িতে উঠে ছবি বললো,
—কোথায় যাচ্ছি আমরা?
—বাসায়!
—আপনি যে বললেন আমাকে নিয়ে কোথায় যাবেন?
—হুম।নাহিদের বিয়ে।তোমাকে নিয়ে যেতে বলেছে।ওদের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা।আমরা কালকে সকালে রওনা দেবো।আজকে যাবো ভেবেছিলাম।কিন্তু টায়ার্ড লাগছে প্রচন্ড!
নাহিদদের বাড়িতে যেতে হবে শুনে ছবির অস্বস্তি হচ্ছে।সরাসরি না হোক, নাহিদ যে ছবিকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিয়েছিলো সে কথা তো ছবির অজানা নয়!
ওকে অন্যমনস্ক দেখে শুদ্ধ বললো,
—অকওয়ার্ড ফিল করার কিছু নেই ছবি, তুমি আমার স্ত্রী হিসেবে সেখানে যাচ্ছো,সো বি ইজি!
—কালকে কখন যাচ্ছি আমরা?
—ভোর বেলায়।

বাসায় পৌঁছে ছবি নিহাল আর তার স্ত্রীর সাথে দেখা করলো।কুশল বিনিময় করে ওয়াশরুমে ঢুকলো ফ্রেশ হতে।অনু এসে তাড়া দিয়ে বের করলো।গোছগাছের ব্যাপার আছে।তাই আগে থেকেই সব রেডি করে রাখতে বলল।বিয়েতে কি পরবে সেটাও ঠিক করতে হবে।শাড়ি পরার পরামর্শ দিলো।ছবি দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকলেই শেষমেশ শাড়ি পরারই সিদ্ধান্ত নিলো।

পরেরদিন সকালে খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠলো ছবি। শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে আলমারি থেকে শাড়ি বের করে নিলো।রূপালী রংয়ের হাইনেকের ফুলহাতা ব্লাউজের সাথে মিষ্টি কালারের বেনারসি কাতান শাড়ি।
শাড়িটা পরে বেরোতেই অনুর হাসি শুরু হলো।হাসতে হাসতে বলল,
—তুই তো কুচি উলটো দিকে দিয়েছিস!
ছবি বুঝতে পারলো না,কুচির আবার উল্টো-সিধা দিক থাকে নাকি?
—আয় আমি পরিয়ে দেই।

অনু শাড়ি পরিয়ে দিচ্ছিলো ছবিকে।শাড়ির আঁচল বুকের ওপর ছড়িয়ে দিয়ে দিয়ে কুচি দিচ্ছিলো,এমন সময় শুদ্ধ এসে ভেতরে ঢুকলো।জারা তার চশমা নিয়ে দুষ্টুমি করছিলো সেটা খুঁজতেই ঘরে ঢুকেছিলো সে।
—ভাবী আমার চশ…
বাকি কথাটা শেষ করতে পারে নি সে।ছবিকে এই অবস্থায় দেখে দ্রুত বেরিয়ে গেলো।ছবি লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললো।অনু মুখটিপে হাসছে।একটু পর জারা এসে বললো,
—চাচ্চুর চশমা দিতে বলেছে।
অনু হেসে কুটিকুটি হয়ে বলল,
—তোর চাচ্চুকে গিয়ে বল নিজে এসে নিয়ে যেতে।
—আহ!আপু কি শুরু করলে তুমি?
জারা একদৌড়ে বেরিয়ে যেতে নিলে ছবি আটকে দিলো।শুদ্ধর চশমাটা ওর হাতে পাঠিয়ে দিলো।
শাড়ি পরানো শেষে অনু সুন্দর করে ছবিকে সাজিয়ে দিলো।সাজগোজ শেষে ড্রয়িংরুমে এসে দেখলো শুদ্ধ সোফায় বসে কথা বলছে।তার কোলে বসে জারা গেমস খেলছে।অনু এগিয়ে গিয়ে বলল,
—ছবি রেডি শুদ্ধ!
শুদ্ধ ফোনে কথা বলা অবস্থায়ই ওর দিকে তাকালো।অনুর পাশে ছবি দাঁড়িয়ে আছে।শুদ্ধফোন কেটে হাসিমুখে উঠে দাঁড়ালো।বলল,
—রেডি? আর কিছু বাকি নেই তো?
অনু বলল,
—একবারে রেডি।আর কিছু বাকি নেই! কেমন লাগছে ওকে?
শুদ্ধ ছবির দিকে তাকালো। পকেট থেকে রুমাল বের করে ছবির কপালের ঘাম মুছে দিলো।ঠোঁটের কোনে
মিষ্টি হাসি ফুটে উঠেছে তার।ওর সেই হাসিতে, একঝলক চাহনিতে যেই পবিত্র মুগ্ধতা ছিলো তার কাছে পৃথিবীর অন্য যে কোন নেশাতুর দৃষ্টি হার মানায়!একমুহূর্তেই বসন্তের মাধুরী মেশানো শিরশির বাতাস এসে ছুয়ে দিলো ছবির সমস্ত শরীর।শরীরের প্রতিটি রক্তকনা অনুভব করলো সে পবিত্রতা।শুদ্ধ পকেটে রুমাল ঢুকিয়ে নিয়ে বলল,
—এসো!
তারপর অনুকে উদ্দেশ্যে করে বলল,
—আসছি ভাবি!
অনু হাসিমুখে বলল,
—এসো।
জারা এখনো গেমস খেলায় ব্যস্ত।খুব মনোযোগ দিয়ে খেলছে সে।শুদ্ধ একটু ঝুঁকে জারার গালে একটা চুমু খেয়ে বলল,
—আসি মামুনি।
প্রতিউত্তরে জারা তার নরম তুলতুলে বাচ্চা বাচ্চা হাতদুখানা দিয়ে শুদ্ধর গলা আঁকড়ে ধরলো।শুদ্ধ আকেরটু ঝুঁকে ওর হাতের ওপর হাত রেখে বলল,
—আসার সময় তোমার জন্য কি আনবো?
জারা ওর গালে চুমু খেয়ে কানে কানে কি বললো শোনা গেলো না।শুদ্ধ হেসে উঠে বলল,
—আচ্ছা ঠিক আছে।

সকাল সাড়ে এগারোটায় ওরা নাহিদদের বাড়িতে পৌঁছালো।নাহিদদের বিল্ডিং এর সামনের উঠোনে প্যান্ডেল করা হয়েছে।প্যান্ডেলর সামনেই নাহিদ,মৌনতা,সালমান,মেহেদীর সাথে দেখা হয়ে গেলো।নাহিদের দাদুর ইচ্ছেতেই বিয়ের অনুষ্ঠান গ্রামের বাড়িতে করা হচ্ছে।সেজন্যই সকলের গ্রামে আসা।
গ্রামের বাড়িতে বিয়ে মানে বিরাট হৈচৈ ব্যাপার। সবকিছু আত্মীয় স্বজন বন্ধুবান্ধবদেরই করতে হয়!ক্যাটারিং এর লোকজন থাকলেও খাওয়ার অনুষ্ঠানে আত্মীয়স্বজন সবাই সামিল হয়।তাই নাহিদ,মেহেদী সালমান সবাই হাতে হাতে কাজে লেগে পড়েছে।

ছবিকে মৌনতার সাথে ভেতরে ঢুকিয়ে দিয়ে শুদ্ধও ব্যস্ত হয়ে পড়লো।যাওয়ার সময় মৌনতার ঝুঁটি ধরে টেনে দিলো।মৌনতা রাগী গলায় বললো,
—তোর বউ কিন্তু আমার হেফাযতে!মনে রাখিস!
শুদ্ধ ছবির দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বেরিয়ে গেলো।
মুক্তা ছবিকে দেখে প্রায় চিৎকার দিয়ে বলল,
—ছবি! তোমাকে তো দারূন লাগছে!একেবারে পুতুলগিন্নি!
ছবি মুচকি হাসি দিয়ে বলল,
—আপনাকেও খুব সুন্দর লাগছে,মুনা আপুকেও।
মৌনতা ভ্রু নাচিয়ে বলল,
—আমাদের কথা বাদ!শাড়িতে তোমাকে দারূণ মানিয়েছে।এইজন্যই তো বলি শুদ্ধ আমাকে পাত্তা দেয় না কেন?
ওছবির চিবুক তুলে ধরে মিষ্টি হেসে বলল,
—এমন টুকটুকে বউ থাকলে কি আর অন্য দিকে মন যায়? এই ছবি শুদ্ধ তোমাকে রোজ কয়বার চুমু খায়, বলোনা?
মুক্তা দুষ্টু হাসি দিয়ে বলল,
—কী অসভ্যরে তুই মুনা?ও বুঝি এখন তোকে বলবে যে ওর বর ওকে কয়টা চুমু খায়?
—বললে কি হয়?
মেহেদী এদিক দিয়েই যাচ্ছিলো,মৌনতার কথা শুনে ওকে ধমকে উঠে বলল,
—কি সব উল্টোপাল্টা কথা বলছিস তুই?বেচারি তো লজ্জায় লাল হয়ে গেছে।
—তুই তোর কাজে যা।
—শুদ্ধ শুনলে তোর খবর আছে।ও কাছে নেই বলে তুই তার বউকে এভাবে জ্বালাবি? আমি গিয়ে এক্ষুনি বলছি!
মুক্তা হাসতে হাসতে বলল,
—যতই হোক ক্রাশ এর বউ তো,তাই জ্বলছে!
মৌনতা সেদিকে পাত্তা না দিয়ে বলল,
—বলো না ছবি শুদ্ধ তোমাকে রোজ কয়টা চুমু খায়?
ছবি লজ্জায় কুটিকুটি হয়ে যাচ্ছে ওদের কথা শুনে।ভাগ্যিস শুদ্ধ সামনে নেই।থাকলে যে কি হতো? ছবি তো লজ্জায় মরেই যেতো!
মুক্তা ছবির অবস্থা দেখে হেসে উঠে বলল,
—ছাড় মুনা।বেচারি কে আর লজ্জা দিস না।দেখছিস তো চোখমুখ লাল হয়ে গেছে।
মৌনতা ছবির দিকে ফিরে বলল,
—তুমি কি লজ্জা পাচ্ছো ছবি?
ছবি জবাব দিতে পারলো না।মুক্তা বলল,
—আবার জিজ্ঞেস করছে,সবাই কি তোর মতো?
—আমার তো বিয়েই হয় নি,চুমু খাবো কি করে?
—সালমান ভাইয়ের মাথাটা তো খাচ্ছিস?
—ওর নাম আমার সামনে মুখে নিবি না।ওর সাথে আমার ব্রেকাপ হয়ে গেছে!
—কতক্ষনের জন্য?
—এইবারই শেষ!আর প্যাচ আপ করছি না।
মৌনতা মুখ ঝামটা মেরে বেরিয়ে গেলো।ছবি অবাক হয়ে মুক্তাকে জিজ্ঞেস করলো,
—কি হয়েছে আপুর?
মুক্তা হেসে উঠে ওকে পুরো কাহিনী খুলে বলল।
নাহিদদের বাড়িতে আসার সময় সালমানের সাথে মৌনতার ঝগড়া হয়েছে।বিয়ে উপলক্ষে মৌনতা খুব ফুর্তি নিয়ে হালকা গোলাপি রংয়ের শাড়ি পরে সুন্দর করে সেজেছে।তার সাথে ম্যাচ করে সালমানের জন্যেও গোলাপি রংয়ের একটা পাঞ্জাবী বানিয়েছিলো।সালমানকে সেটা দিতেই চোখমুখ উল্টে বলল,
—এটা কি মুনা?
—কি আবার? পাঞ্জাবি!
—আমার জন্য?
—তো কি আমার জন্য?
সালমান উল্টেপাল্টে দেখে আবারও গোলগোল চোখে তাকালো মৌনতার দিকে।সন্দিগ্ধ কন্ঠে বলল,
—আর ইউ সিউর?
—ড্যাম সিউর!
—কিন্তু এই কালারের পাঞ্জাবী আমি পরবো না।এটা তো মেয়েদের কালার!
—কে বলেছে তোমাকে?
—কেউ বলা লাগে না।এগুলো ট্রেন্ড!
—আমি এতকিছু জানি না,তুমি পাঞ্জাবিটা পরবে।
—বোঝার চেষ্টা করো মুনা,আমার কলিগরা আছে।তারা দেখলে কি ভাববে?
—তোমার কলিগরা এখানে এলো কোথা থেকে?
—এখানে নয়।তবে তুমি যখন একগাদা ছবি আপলোড দিয়ে আমাকে ট্যাগ দিবে তখন তো ওরা দেখবে।আমার একটা ইমেজ আছে।
—আশ্চর্য আমার থেকে তোমার কলিগরা তোমার কাছে বড় হয়ে গেলো?
—তুমি আমার কথা বুঝতে পারো নি মুনা,আমি বলতে চাইছি..
ব্যস!আর কোন কথা শুনে নি মৌনতা।সালমানের কাছে থেকে পাঞ্জাবিটা ছিনিয়ে নিয়ে গটগট করে চলে এলো।
তারপর থেকেই দুজনের কথা বন্ধ।সালমান অবশ্য দুএকবার উঁকিঝুঁকি দিয়ে গেছিলো।মৌনতার কাছে পাত্তা না পেয়ে প্যান্ডেলের দিকে চলে গেছে।তবে মৌনতার রাগ কতক্ষন টেকে সেটাই দেখার বিষয়!এক ঘুম দিয়ে উঠলেই সব ভুলে যায়।তবুও বেচারা সালমান অস্থির হয়ে যায়।আসলে মৌনতা ছোটছোট বাচ্চামি গুলো ওকে ভীষণভাবে টানে।ভীষণ ভালোবাসে মৌনতাকে সে।
মুক্তার মুখের পুরোটা শুনে ছবি খিলখিল করে হাসছে।ওদের কথা শেষ না হতেই সালমান এসে ভেতরে ঢুকলো।গায়ে গোলাপি পাঞ্জাবি।পাঞ্জাবিটা দলামোচড়া করে গাড়িতে রেখে ছিলো মৌনতা।ওকে ম্যানেজ করার জন্য সেই দলামোচড়া পাঞ্জাবিটাই পরে এসেছে সালমান।হাতে কচি ডাব।মুক্তাকে দেখে কাচুমাচু চেহারা নিয়ে বলল,
—মুনা কোথায় মুক্তা?
—বাইরে গেছে।
—কই বাইরে তো দেখলাম না।আমি তো বাইরে থেকেই এলাম। ওর জন্য অনেক কষ্টে ডাব জোগাড় করেছি।নাহিদদের কাছের কচি ডাব!
—ডাব কি আপনি পেড়েছেন ভাইয়া?
সালমান কিছু বলার জন্য মুখ খুলছিলো মৌনতা এসে ভেতরে ঢুকলো।সালমানকে দেখে উল্টোদিকে মুখ ঘুরিয়ে বেরিয়ে গেলো।সালমান ডাব হাতে নিয়েই ওর পেছন পেছন ছুটলো।
ছবি আর মুক্তা একসঙ্গে হেসে দিলো ওদের কান্ডে।
.
.
চলবে

অল্প থেকে গল্প🍁
অরিত্রিকা আহানা
পর্ব:২৫

আসার পর থেকে আর শুদ্ধর দেখা পায় নি ছবি। কোনার একটা রুমে বসে আছে সে।বসে থাকতে থাকতে ঝিমুনি ধরে গেছে।সেই সকাল সাড়ে ছয়টায় রওনা দিয়েছে।উঠতে হয়েছে আরো আগে।ঘুমঘুম রেশ নিয়ে বসে রইলো সে। এদিকে লোকজনের আসা যাওয়া কম।সামনের রুম গুলোতে মেহমানরা জোট বেধে গল্প করছে।তাদের হাসি ঠাট্টার আওয়াজ এখান পর্যন্ত আসছে।

মৌনতা বিভিন্ন পোজে ছবি তুলছে আর একটু পর পর ডিলিট করছে।আবার তুলছে,আবার ডিলিট করছে।মেয়েটা খুবই শৌখিন,আর বাচ্চা স্বভাবের।সালমানের সাথে বনিবনা হয়েছে কি না কে জানে? মুড দেখে তো মনে হচ্ছে এখনো হয় নি।সুন্দর সুন্দর ছবিগুলো ডিলিট করে দিচ্ছে।ছবি চুপচাপ বসে ওকে পর্যবেক্ষণ করছে।

মুক্তা খাটের ওপর শুয়ে আছে।শরীর ভালো নেই তার।গতকাল রাতেও জ্বর এসেছিলো।পাঁচমাসের অন্তঃসত্ত্বা সে।শরীর ভারী হয়ে এসেছে।হৈ-হট্টগোল একদম সহ্য হয় না।হৈচৈ থেকে বের করে এনে নাহিদ ওকে এইরুমে শোয়ার ব্যাবস্থা করে দিয়েছে।
একটুপর নাহিদের মা নাহারা সুলতানা হাতে নাশতার ট্রে নিয়ে নাহিদের ভাবি শায়লাকে নিয়ে ভেতরে ঢুকলেন।ওদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
—চারদিকের ঝামেলার জন্য তোদের খোঁজখবর নিতে পারছি না মা।কিছু লাগলে অবশ্যই আমাকে বলবি।আসলে নাহিদের বাবা গোলমাল পাকিয়ে ফেলেছে।দুই দিনে অনুষ্ঠান করলে এমন ঝামেলা হত না।আমি বারবার করে বলেছিলাম একভাগে গ্রামের সবাইকে আরেকভাগে আত্মীয়স্বজনদের খাওয়ানোর ব্যবস্থা করুন।তাহলে আর ঝামেলা হবে না।আমার কথা কানে নিলো না।এখন দৌঁড়াদৌড়ি কান্ড!এত মানুষ একদিনে সামলানো যায়?
নাহিদের বড়ভাবি শায়লা ওদেরকে নাশতা আর শরবত সার্ভ করলো।কাজের চাপে বেচারির সুন্দর মুখটা কালো হয়ে গেছে।এতগুলো লোকের আতিথেয়তা করা তো চারটেখানি ব্যাপার নয়।
তবুও মুখে হাসি রেখে ওদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করলো।
এরমধ্যেই নাহিদের ফুপাতো ভাই হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে বলল,
—মামি,মামা আপনাদের ডাকছে।তাড়াতাড়ি যেতে বলেছেন।
ব্যস্ত হয়ে বেরিয়ে গেলেন নাহার বেগম আর শায়লা।যাওয়ার সময় বারবার করে বলে গেলেন,নাশতা করে নিতে আর কোন অসুবিধে হলে উনাদেরকে খবর দিতে।
উনারা চলে গেলে ছবি উঠে গিয়ে মুক্তার পাশে বসলো।মৃদুস্বরে ডাক দিলো,
—আপু?
ছবির ডাক শুনে চোখ খুললো মুক্তা।মিষ্টি হেসে বলল,
—কিছু বলবে ছবি?
—না মানে।নাহিদ ভাইয়ের বউকে তো দেখলাম না?
—পার্লার থেকে আসে নি বোধহয়।
—উনি কি ডাক্তার?
—হ্যাঁ।আমাদের জুনিয়র ব্যাচ!গাইনোকলোজিস্ট!
—ওহ!
ছবি একটু থেমে আবার জিজ্ঞাসা করল,
—আপনারা কি সকালে এসেছেন?
—হ্যাঁ।
—হলুদে আসেন নি?
মুক্তা মুচকি হেসে বলল,
—এখন তো শুধু বৌভাত হচ্ছে।মূল অনুষ্ঠান ঢাকায় গিয়ে করবে!..নাহিদের দাদুর ইচ্ছাতেই ওর বাবা এখানে বৌভাতের আয়োজন করেছেন।
—তাহলে বিয়ে?
—বিয়ে আজকেই হবে!তবে গ্রামের বাড়িতে বিয়ে হওয়ার কারনে ওদের অনেক আত্মীয়স্বজন আসতে পারে নি।তাই ঢাকায় গিয়ে বড় করে অনুষ্ঠান করা হবে।নাহিদের বাবার তো টাকা পয়সার অভাব নেই।নাহিদ আবার পরিবারের ছোট ছেলে!তাই বেশ জাঁকজমকভাবে আয়োজন করেছেন।
—ওহ!
ওদের কথার মাঝখানে মেহেদী এসে ঘরে ঢুকলো।মুক্তার খোঁজ নিতে এসেছে সে।ছবি উঠে সরে বসলো।মুক্তা আধশোয়া হয়ে উঠে বসে বলল,
—-ওদিকের কি অবস্থা? মেহমানদের খাওয়া শেষ?
মেহেদী ওর কপালে হাত দিয়ে জ্বর আছে কি না চেক করতে করতে বলল,
—আরে না।গ্রামের লোকজনই তো এখনো শেষ হয় নি।আত্মীয়স্বজন সব রয়ে গেছে।তোমার কি ক্ষিদে পেয়েছে? কিছু খাবে?
—না,একটু আগে খালাম্মা আর শায়লা ভাবি এসে নাশতা দিয়ে গেছেন।আমার খেতে ইচ্ছে করছে না।তুমি আমাকে নিয়ে এত ব্যস্ত হয়ো না,আমি ঠিক আছি।ওদিকে যাও,আংকেল বোধহয় ঝামেলা পাকিয়ে ফেলেছেন।
—আর বলো না,আমার তো মনে হচ্ছে সন্ধ্যের আগে খাওয়াদাওয়ার পর্ব সারতে পারবে না।
—শুনেছি আমি।বউ কি এসে গেছে?
—আসে নি বোধহয়।কেন?
—না এমনি।ছবি দেখতে চাইছিলো।
—না এখনো আসে নি। ঠিক আছে আমি গেলাম।
মেহেদী বেরোনোর সময় ছবিও ওর পেছন পেছন বেরোলো।বারান্দায় কাছে এসে ডাক শুনে পেছনে তাকালো মেহেদী,ছবি ইতস্তত করে বলল,
—কিছু বলবেন ভাবি?
—ইয়ে মানে উনি কি প্যান্ডেলে?
মেহেদী ঠাট্টার সুরে বলল,
—উনি টা কে?
—না মানে শুদ্ধ ভাইয়া।
মেহেদী ফ্যালফ্যাল করে ছবির দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষন।খানিকবাদে হো হো করে হেসে দিয়ে অবাক কন্ঠে বললো,
—শুদ্ধ কি?
ছবি লজ্জায় জিভ কাটলো।ইতস্তত করে বললো,
—আপনার বন্ধু!
মেহেদী হাসি থামিয়ে বলল,
—আপনাকে একটু ধৈর্য ধরতে হবে ভাবী!তাকে তো এখন পাওয়া যাবে না।তিনি ভীষণ ব্যস্ত!

মেহেদীর মুখে ভাবী ডাক শুনে লজ্জা লাগছে ছবির।হঠাৎ করেই ওকে আপনি বলছে!আগে তো তুমি করে বলতো! কেমন অস্বস্তিকর ব্যাপার।অবশ্য শুদ্ধর ওয়াইফ হিসেবে দেখলে সম্বোধনটা মোটেও অশোভন নয়।ছবি আর কিছু বললো না।মেহেদী মুচকি হেসে বেরিয়ে গেলো।

রুমে এসে দেখলো মৌনতা বিড়বিড় করে বিরক্তি প্রকাশ করছে।একটা ছবিও ভালো আসছে।ঘরের ভেতর কালো কালো আসছে। ছবি হাত ধরে টেনে বের করে নিয়ে গেলো সে।
ছবি তুলতে নাহিদদের বাগানে এসেছে ওরা। ইতোমধ্যে শ’খানেক তুলেও ফেলেছে মৌনতা।প্যান্ডেলের দিকে চোখ পড়লো ছবির। ভীষণ হাসি পাচ্ছে তার, বর মানে নাহিদ প্যান্ডেলে ব্যস্ত!হাতে মাংসের বাটি।টেবিলে টেবিলে সবাইকে মাংস সার্ভ করছে।আশেপাশে তাকাতেই শুদ্ধকে দেখলো।তারও একই অবস্থা!শুধু ওর নয়,মেহেদী,সালমান সবারই একই অবস্থা।

আধঘণ্টা পরে মৌনতার ছবি তোলা শেষ হলে দুজনে বেরিয়ে এলো।বিল্ডিং এর গেট দিয়ে ঢুকতে যাবে, এমন সময় শুদ্ধ হন্তদন্ত হয়ে ভেতরে ঢুকছে।তার পরনে সাদা পায়জামা পাঞ্জাবী।পাঞ্জাবী বুকের কাছে সোনালি পাথরের কাজ করা!হাতাটা কনুই পর্যন্ত গোটানো।ঘামে ভিজে পাঞ্জাবী একবারে গায়ের সাথে মিশে আছে,ভেতরের স্যান্ডো গেঞ্জি বোঝা যাচ্ছে।পাঞ্জাবির পেছন দিকে কোমরের কাছে খানিকটা ভাঁজ পড়েছে।তাতে ওর চমৎকার স্বাস্থ্য বেশ ভালোভাবে ফুটে উঠেছে।ওরা এগিয়ে যেতেই শুদ্ধ বেরোলো।গরমে ঘেমে মুখ কালো হয়ে গেছে।কপালের ওপর কয়েক গাছি চুল এলোমেলো হয়ে আছে।হাতে বড়সড় ডালের বালতি!ডাল নিতেই ভেতরে ঢুকেছিলো সে!
মৌনতাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
—কোথায় গেছিলি তোরা?
—তোর ওয়ান এন্ড অনলি ওয়াইফকে পাচার করে দিতে।
—ফেরত আনলি যে?
—তোর জন্য মায়া হলো!
শুদ্ধ চোখ পাকাতে গিয়ে হেসে ফেললো।তারপর ছবির দিকে একপলক তাকিয়ে সেই ঘায়েল করা মিষ্টি হাসিটা দিলো।তারপরই আবার প্যান্ডেলের দিকে চলে গেলো।

এদিকে আড়াইটা বেজে গেছে।ছবি সেই সকাল থেকে না খেয়ে আছে।গাড়িতে শুদ্ধ বারবার বলেছিলো কিছু খেয়ে নিতে, সে খায় নি।গাড়িতে উঠলে কিছু খেতে ইচ্ছে করে না।নাহিদের মা আর ভাবি যখন নাশতা দিয়ে গিয়েছিলো, তখনও খায় নি সে! কিন্তু এখন পেটে ইঁদুর দৌঁড়াচ্ছে!
মেহমান শেষই হচ্ছে না।নাহিদের বাবা বোধহয় পুরো গ্রামের আর কাউকে বাদ রাখেন নি।সবাইকে দাওয়াত করেছে!

শুদ্ধ খালি মাংসের বাটি নিয়ে আবারও ভেতরে ঢুকেছে মাংস নিতে।এমন সময় নাহিদের মা ওর আর নাহিদের বড় ভাই নাইমের হাত চেপে একপাশে টেনে নিয়ে গেলেন।চাপা স্বরে বললেন,
—বাবা তোমার আংকেলকে বলে ভেতরে মহিলাদের খাওয়ার ব্যবস্থা করো।তারপর নাহয় আরেকদফা পুরুষদের হবে।মহিলারা বেশি নেই।বেশিক্ষণ লাগবে না।
শুদ্ধ আর নাইম একে অপরের দিকে তাকিয়ে ইশারায় কথা বলে নিলো।নাইম বলল,
—ঠিক আছে আমি আব্বাকে বলছি।

নাহিদের বাবা অমত করলেন না।মহিলা যেহেতু বেশি নেই,তাই তাদেরই আগে খাইয়ে দেওয়া হোক।
মহিলাদের সবাইকে প্যান্ডেলে ডাকা হলো মুক্তা প্যান্ডেলে যাবে না,মৌনতা সকালে একবার খেয়েছে তাই এখন সে খাবে না।ওরা খাবে না,তাই ছবিও গেলো না।ওদের সাথে বসে রুমে রইলো।
একটু পর হৈচৈ শুনে ওরা বেরোলো।বউকে পার্লার থেকে নিয়ে আসা হয়েছে।প্যান্ডেলে বসানো হয়েছে।মৌনতা আর মুক্তার সাথে বউ দেখতে বেরিয়েছিলো ছবি।এমন সময় শুদ্ধ এসে ওর হাত ধরে টেনে নিয়ে খাবার টেবিলে বসিয়ে দিল।ছবি হতবুদ্ধি হয়ে বললো,
—আমাকে টেনে নিয়ে এলেন যে?
— সকাল থেকে তো না খেয়ে আছো!..খিদে পায় নি তোমার?
—আমি আগে বউ দেখবো।তারপর মুক্তা আপুদের সঙ্গে একসাথে খাবো।
—বউ তো চলে যাচ্ছে না?খাওয়া শেষ করেও দেখতে পারবে।
—কিন্তু আপুরা?
—মুক্তা এখানে বসতে পারবে না।ওর খাবার মেহেদী নিয়ে গেছে।মৌনতা এখন খাবে না।আমাদের সাথে খাবে।তখন প্রায় বিকেল হয়ে যাবে ততক্ষন তুমি না খেয়ে বসে থাকবে?
ছবি ইতস্তত করে বলল,
—আমি তাহলে মুক্তা আপুর সাথে ভেতরে বসে খাই?
শুদ্ধ ওর একটু কাছে এগিয়ে এসে ফিসফিস করে বলল,
—মুক্তাকে মেহেদী খাইয়ে দেবে!
ছবি লজ্জায় থতমত খেলো।বিব্রত কন্ঠে বলল,
—ওহ!
মেহেদী খাবার ভর্তি প্লেট নিয়ে ফিরে এসেছে।ছবি জিজ্ঞেস করলো,
—আপু খায় নি?
—খেলো না তো।
ছবির প্লেটে সাদা ভাত দেওয়া হচ্ছে।উশখুশ করছে সে।ওকে উশখুশ করতে দেখে মেহেদী নিজে থেকেই বলল,
—আপনি খেয়ে নিন ভাবি।শুদ্ধর কাছে শুনলাম আপনি সকাল থেকে না খেয়ে আছেন।মুক্তা আর মৌনতাকে আমি আর নাহিদ মিলে আপনারা আসার আগে একবার খাইয়ে দিয়েছি।
ছবি কিছু বলার জন্য মুখ খুলছিলো এমন সময় নাহিদও বলে উঠলো,
—মেহেদী ঠিকই বলেছে ভাবী।আমাদের অনেক দেরী হবে।আপনি কতক্ষন না খেয়ে বসে থাকবেন।আমরা সকালে একবার খেয়েছি।আপনি বসে পড়ুন!
বাধ্য হয়ে ছবিকে খেতে বসতে হলো।
এরপর নাহিদ একএক করে গরু,খাসি,মাছ ডিম তুলে দিলো ছবির প্লেটে।শুদ্ধ পাশ থেকে বারণ করছে,
—দিস না এত খাবার।খেতে পারবে না।নষ্ট করবে!
নাহিদ শুনলো না।প্লেটের খাবার নিয়ে ছবির বেহাল দশা!এত খাবার সে মরে গেলেও খেতে পারবে না!
ওকে খাবার দিয়ে ওরা আবার খাবার সার্ভ করতে বেরিয়ে পড়লো।

শুদ্ধ হাতে রোস্টের বাটি ,টেবিলে টেবিলে সার্ভ করছে।ছবি যেই টেবিলে বসেছে সেই টেবিলের এসে একএক করে সবাইকে দিলো।ছবির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
—দিবো?
ছবির উত্তরের অপেক্ষা না করে শুদ্ধ এর প্লেটে একপিস রোস্ট তুলে দিলো।দেওয়া শেষে আর দাঁড়ালো না।
টেবিলে বসা বাকি মেয়েগুলো ড্যাবড্যাব করে শুদ্ধর দিকে তাকিয়ে আছে।কয়েকজন মিলে কানাকানি করছে।কেউ কেউ মুখ টিপে হাসছে।ইচ্ছে করেই শুদ্ধকে বারবার ডাকছে।ছবি চুপচাপ সব লক্ষ করছে আর মনে মনে রাগছে।ওরা ঝুমার মানে নাহিদের বউয়ের কাজিন!ছবির মন চাইছে খাবারের প্লেট থেকে এক এক করে খাবার তুলে ওদের মুখ বরাবর মারতে।

প্রতিটা টেবিলেই আলাদা আলাদা ফ্যান এর ব্যবস্থা করা হয়েছে।এদিকের বড় স্টান্ড ফ্যানটা খটখট আওয়াজ করছে।একটুও বাতাস লাগছে না।ছবির গরমে সিদ্ধ হয়ে যাওয়ার মত অবস্থা।একেবারে তালপাকা গরম পড়েছে!পাশে তাকাতেই দেখলো শুদ্ধ ফ্যানের কানেকশন চেক করছে।খাবার সার্ভ করার সময় ছবির দিকে চোখ পড়ে ওর।গরমে ঘেমে এক অবস্থা।একটুপর পর বাম হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে নাকের আর থুতনির ঘাম মুছছিলো।মাংসের বাটিটা মেহেদীর হাতে ধরিয়ে দিয়ে এগিয়ে এলো সে।ফ্যানের মুখটা ওদের টেবিলের দিকে সেট করে দিয়ে বলল,
—এবার খাও!
টেবিলের মেয়ে গুলো হাঁ করে তাকিয়ে আছে।ছবি লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললো।

কিন্তু একটু পর শুরু হলো আরেক ঝামেলা।ফ্যানের বাতাসের ছবির শাড়ির আঁচল খুলে মাথা থেকে পড়ে যাচ্ছে বারবার! এলোমেলো ভাবে একবার চুল সামলাচ্ছে তো একবার আঁচল সামলাচ্ছে।শাড়ি পরে খেতে বসে মহা মুছিবতে পড়েছে সে।শুদ্ধ ওর পাশে চেয়ার টেনে বসলো।আঁচলটা আলগোছে পিঠের ওপর দিয়ে ঘুরিয়ে চেপে ধরে মুড়িয়ে রাখলো।কাছে এসে না দাঁড়ালে কেউ বুঝতে পারবে না সে ছবির আঁচল সামলে রেখেছে, এমনভাবে বসেছে মনে যেন ফ্যানের হাওয়া খেতে বসেছে!ছবিকে ইশারা করে বললো,
—আমি ধরে রেখেছি।তুমি খাও!
হুট করে মৌনতা এসে হাজির।
—ছি!ছি!শুদ্ধ তুই ছবির আঁচল চেপে ধরে আছিস?..এ আমি কি দেখছি?..ইয়া আল্লাহ এমন দৃশ্য দেখার আগে আমি কেন অন্ধ হয়ে গেলাম না?
ছবির লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে।কিন্তু শুদ্ধর মধ্যে বিন্দুমাত্র লজ্জায় আভাস নেই।মৌনতাকে ধমক দিয়ে বললো,
—খাওয়ার সময় ডিস্টার্ব করবি না।যা ভাগ!
—যাচ্ছি।তবে তার আগে একটা ছবি তুলে নেই।শুদ্ধ তার বউয়ের আঁচল ধরে বসে আছে এমন একটা ছবি আমাকে রাখতেই হবে।
ছবি বিষম খেলো মৌনতার কথা শুনে।ঢক-ঢক করে পানি খেলো সে!নাহিদ আর মেহেদী এদিক দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলো মৌনতা ওদেরকেও ডেকে এনে বলে,
—দেখ! দেখ! শুদ্ধর অবস্থা দেখ!বেশরমের মত ছবির আঁচল ধরে বসে আছে।
মেহেদী ধমক দিয়ে বলল,
—তুই তো ভাবীকে খেতেই দিচ্ছিস না।বেচারী লজ্জায় লাল হয়ে গেছে!
নাহিদ বললো,
— সবকিছুতে বাঁ হাত না ঢুকালে তো ওর হবে না।এই তোর এখানে কি? সালমান ভাইয়ের মাথাটা তো শেষ করে দিয়েছিস একেবারে!বেচারা তোর জন্য গোলাপি রংয়ের পাঞ্জাবি পরে কাচুমাচু চেহারা নিয়ে ঘুরছে।যা ভাগ!
শুদ্ধ বলল,
—যা না এবার সালমান ভাইয়ের কাছে যা। কেন বিরক্ত করছিস!
মৌনতা ভিলেনের মত হেসে বললো,
—ভালোবাসা, বুঝলি না রে পাগলা এটা হলো ভালোবাসা।
ওর বলার ধরনে শুদ্ধ সহ বাকিরা সবাই হেসে ফেললো।শুদ্ধ হাসি থামিয়ে কপট রাগ দেখিয়ে বললো,
—আমি এক থেকে দুই গুনবো এর ভেতরে তুই এখান থেকে না গেলে ডালের বাটিতে তোর মুখ চুবিয়ে দিবো বলে দিলাম।
—বউ পেয়ে গার্লফ্রেন্ডকে ভুলে গেলি?যাহ!থাক তুই তোর বউ নিয়ে আমি গেলাম।
শুদ্ধকে ভেংচি কেটে বেরিয়ে গেলো সে,ওকে দেখতে পেয়ে সালমান ডালের বালতি রেখেই ছুটোলো ওকে ধরার জন্য।
.
.
চলবে