অশান্ত বসন্ত পর্ব-১৩+১৪+১৫+১৬

0
284

#অশান্ত বসন্ত
(ত্রয়োদশ পর্ব)
জয়া চক্রবর্তী
***********************
‘কিগো শিউলী ফোন ধরলো বহ্নি?’,শিউলী আঁচল দিয়ে নিজের চোখ মুছে বললো,’নাগো রনির মা সেই কখন থেকে ফোন করে চলেছি।বেজে বেজে নিজে থেকেই কেটে যাচ্ছে ফোনটা’।

‘খবরটা কি তাহলে দিতে পারোনি?’,রনির মায়ের কথায় শিউলি বললো,’না না প্রথম যখন ফোনটা ধরেছিলো,তখনই তো জানালাম।শুনেই এমন কাঁদতে শুরু করলো যে,কেটে গেলো ফোনটা’।

একটু থেমে বলে,’মনে হয় রাস্তায় ছিলো মেয়েটা।গাড়ির আওয়াজ পাচ্ছিলাম।ভগবান করে ওর আবার যেন কিছু না হয়’।

‘শিখা কিছু খেয়েছে গো?’,কমলার প্রশ্নের উত্তরে শিউলি বললো,’ও মেয়ে তো কেঁদেই চলেছে সমানে।ওঠানোই যাচ্ছেনা মায়ের কাছ থেকে’।

রনির মা বললো, ‘ওদের বাবা তো এখন বিদেশে থাকে।করুনার সাথে শুনেছি ভালোবাসাবাসির বিয়ে ছিলো। মুখটা দেখলে বোঝাও যেতোনা ধড়িবাজ লোক,তলে তলে এদিকে অন্য মেয়ের সাথে…. ‘রনির মায়ের কথা শেষ না হতেই সায় দিলো কমলা।
শিবানী বলে উঠলো,’তা আর বলতে।ঘরে সুন্দরী বৌ,দুটো বড়ো মেয়ে ফেলে তুই কোন আক্কেলে যাস বিয়ে করতে!তাও শুনেছি নিজের বড়ো মেয়েটার বয়েসী মেয়ের সাথে বিয়ে করেছে!’

শিউলি চোখ মুছে বলে,’এসব বরের মুখে নুড়ো জ্বেলে দিতে হয়।আমিই তো করুনাকে সব জানাই’।
শিবানী বললো,’শুধু ভাবি কেমন করে ঠকাচ্ছিলি ওই ভালো মানুষ বৌটাকে!’।

রনির মা বললো,’মেয়েটা নাকি এক অফিসেই চাকরি করতো অর্নবদার সাথে।আমায় রনির বাবা বলেছে,সেই থেকেই লটরপটর’।
শিবানী বললো,’আমি তো শুনেছি অর্নবদা প্রায় প্রতিদিনই অফিস ফেরত, মেয়েটার ফ্ল্যাটে গিয়ে সময় কাটিয়ে তবে বাড়ি ফিরতো’।
কমলা ভালোমানুষি মুখ করে বললো,’আমি বাজে দেখতে হলেও তোমাদের নন্দদা কিন্তু আমায় ছেড়ে কোথাও কখনো যায়নি’।
রনির মা বললো, ‘কি জানো রাখতে জানতে হয় বেঁধে। বোঝোনা পুরুষ মানুষের ওমন একটু ছুকছুকে বাই থাকেই’।
কমলা বললো,’ঠিক বলেছো,বৌদের দায়িত্ব সব কিছু নজর করে রাখা’।
শিবানী বললো,’করুনাতো ওর মেয়েদের নিয়েই ব্যস্ত থাকতো।আর ওই দিকে বর কেষ্ট লীলা চালিয়ে যাচ্ছিলো’।

রনির মা বললো,’সেটাই, পুরুষ মানুষকে বিশ্বাস করেছো তো ঠকেছো।ব্যাটাদের গাছের ওপরেরটাও চাই আবার তলানিটাও,সবাই তো আর রনির বাবা নয়’।

কমলা বললো,’করুনাদির বাপের বাড়ি কোথায় জানো?সেখানে কেউ নেই?একটা তো খবর দিতে হতো।মেয়েটা তো সেই পরে পরে কাঁদছে।এই সময় জ্ঞাতি গুষ্টি লাগে।আমরাই বা কি করতে পারি’।

শিবানী বললো,’সেই কখন এসেছি,রাতের রান্নাটাও চাপাইনি’।

রনির মা বললো,’আমি তো রনিকে বলেছি ক্লাবে গিয়ে কথা বলতে।পাড়ার লোকজনের থেকে চাঁদা তুলে দাহটা করিয়ে দিতে,নাহলে বরফ চাপা দিয়ে রাখতে’।
কমলা বললো,’এতো সময় এইভাবে তো আর বডি ফেলে রাখা ঠিক নয়। তবে একটা পার্মিশন নিতে হতো মেয়েটার,নাহলে পরে আমাদের ওপরেই দোষ চাপাবে’।

শিউলি বললো,’বহ্নির ফোনটা এখন নন রিচেবেল বলছে,কি যে করি!’
তারপর শিখার কাছে গিয়ে ইশারাতে বোঝাতে চেষ্টা করলো আর কোনো ফোন নাম্বার কি আছে!
শিখা নিজের মতো করে কথাটা বুঝে উঠে দাঁড়ালো।তারপর তোষক তুলে একটা কার্ড এগিয়ে দিলো শিউলি মাসির দিকে।শিউলি দেখলো কার্ড টা ওদের বাবার।সেখানেই ফোন করলো।

অর্নব খবরটা জানার সাথে সাথেই মাথায় হাত দিয়ে মেঝেতে বসে পরলো।
ভাবতেই পারছেনা, করুনা নেই। ওর অন্যায়ের খেসারত দিতে হলো করুনাকে।
কোনোরকমে বললো,বডিটা পাঠিয়ে মর্গে দিয়ে প্রিজার্বড করতে।জানালো যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফ্লাইট ধরবার চেষ্টা করছে।
রনির একাউন্ট নাম্বার জেনে ওর একাউন্টে টাকা ও ট্রান্সফার করে দিলো।
রাস্তায় এক জায়গায় জটলা দেখে পল্লব গাড়ি থেকে নেমে এগিয়ে যায়।গিয়ে দেখে বহ্নি পরে আছে অজ্ঞান হয়ে।
সবাইকে সরিয়ে বহ্নিকে কোলে তুলে গাড়ির পিছনের সিটে শুইয়ে দিয়ে তাড়াতাড়ি গাড়ি চালিয়ে পরিচিত ডাক্তারের চেম্বারের দিকে রওনা হলো।

বহ্নি কফি শপ থেকে বেরিয়ে আসার পর বেশ কিছু সময় ওই কফি শপেই বসে কাটিয়েছিলো পল্লব।তারপর অফিসের পার্কিং এ গিয়ে ধীরেসুস্থে গাড়িটা নিয়ে বেরিয়েছিলো।

এখন এতো বেশি হাঁত কাঁপছে যে স্টিয়ারিং সোজা ভাবে ধরে রাখতে পারছেনা।কোনো ভাবে তাও ডাক্তার চ্যাটার্জি কে ফোনটা লাগায়। উনি জানান চেম্বারেই আছেন।
ইতিমধ্যে বহ্নির জ্ঞান ফিরে আসে।বহ্নি ধড়ফড় করে উঠে বসে।’কে আপনি,গাড়ি থামান শিগগিরই’।

পল্লব সাইড করে গাড়ি থামাতেই বহ্নি গাড়ির দরজা খুলে বেরিয়ে ছুটতে থাকে।
পল্লব ও বাধ্য হয়ে বেরিয়ে ওর পিছু নেয়।বহ্নির পথ আগলে কারন জানতে চাইতেই বহ্নি হাউহাউ করে কেঁদে ফেলে।বলে,’ও আপনি!জানেন আমার মা মারা গেছে।আমাকে এক্ষুনি কাঁথি যেতে হবে’।

পল্লব এতোক্ষণে পুরো ব্যাপারটা বুঝতে পারে।বহ্নির হাত ধরে বলে, ‘কাঁথি কি সামনের মোড়ে?যে এক দৌঁড়ে চলে যেতে পারবেন?প্লিজ আমায় ভরসা করে গাড়িতে উঠুন।আমাকে সামলাতে দিন ব্যাপারটা।বয়েসে আর অভিজ্ঞতায় দুটোতেই আমি বড়ো আপনার থেকে।প্লিজ প্লিজ আমার কথাটা শুনুন,গাড়িতে বসুন’।

বহ্নি কাঁদতে কাঁদতে বাধ্য মেয়ের মতো গাড়িতে উঠে বসে।পল্লব গাড়িতে না উঠে ফোন থেকেই টিকিট আছে কিনা ঘেটে দেখে, তারপর রাত সাড়ে দশটায় এয়ার এশিয়ার দুটো ফ্লাইটের টিকিট বুক করে।
গাড়িতে উঠে বহ্নিকে বলে,’এখানে কোথায় থাকেন আপনি, আগে সেটা জানান’।বহ্নি কোনোরকমে হোস্টেলের ঠিকানাটা বুঝিয়ে দেয়।

দশ মিনিটের মধ্যে বহ্নির হোস্টেলের নীচে পল্লবের গাড়িটা থামে।পল্লব নিজেই গাড়ির পিছনের দরজা খুলে হাত ধরে বহ্নিকে নামায়।
তারপর বলে,’যান তিরিশ মিনিটের মধ্যে রেডি হয়ে আসুন, সাড়ে দশটায় ফ্লাইট ।আর যেখানে যেখানে ফোন করবার প্রয়োজন মনে হয় করে নিন,আমি নীচে আছি’।

বহ্নি এবারো বাধ্য মেয়ের মতো রুমে ঢুকে যায়।প্রথমেই শিউলি মাসিকে ফোন করে।শিউলি মাসি জানায়, বডি ওরা মর্গে দিয়েছে।কারন ওদের বাবার সেটাই ইচ্ছে।উনিও কানাডা থেকে রওনা দিচ্ছেন’।
বহ্নির বাবার কথায় মুখটা তেতো হয়ে গেলো।এই বাবার জন্যই সব কিছু ধ্বংস হয়ে গেলো ওদের।না কোনো দিন ক্ষমা করতে পারবেনা বাবা নামের লোকটাকে।

বহ্নি এরপর মলের মালিককে ফোন করে জানায়,সঙ্গে কলেজের প্রফেসরদের।কারন ওর ফিরতে সময় লাগবে।
এবার বাথরুমে গিয়ে কোনোরকমে চোখে মুখে জল দিয়ে বেরিয়ে এসে ব্যাগটা গুছিয়ে নেয়।সব কিছু মাত্র কুড়ি মিনিটেই সেরে বেরিয়ে আসে।

পল্লব বলে,’দশ মিনিট রেস্ট নিয়ে নিতে পারতেন।সময় ছিলো কিন্তু, ফ্লাইট তো সেই সাড়ে দশটায় ।বহ্নি জানালো,সে এয়ারপোর্টেই গিয়েই অপেক্ষা করতে চায়।
পল্লব গাড়ির সামনের দরজা খুলে দেয়।বহ্নি কথা না বাড়িয়ে সামনের দিকেই উঠে বসে।পল্লবের গাড়ি এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে ছোটে।

(চলবে)

#অশান্ত বসন্ত
(চতুর্দশ পর্ব)
জয়া চক্রবর্তী
(প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য)
**********************
মা বলতো,’বিপদেরা আমাদের আশেপাশেই ঘুরে বেড়ায়।কখনো বা জানিয়ে আসে, কখনো না জানিয়ে।কিন্তু যখন আসে সব কিছু ভাসিয়ে দিয়ে যায়।বিপদে কখনো ভেঙে পরবে না। শক্ত মনে মোকাবিলা করবে’।

বহ্নি বিপদের ভয়ে পিছিয়ে পরা মেয়ে ছিলোনা।বরাবরই করুনার কাঁধের সাথে কাঁধ মিলিয়ে যাবতীয় বিপদের মোকাবিলা করে এসেছে সে।কিন্তু আজকে যেন বিপদের পাহাড়টাই আচমকা ভেঙে পরেছে ওর মাথায়।মায়ের এইভাবে আভাস না দিয়ে চলে যাওয়াটাকে সে আর কি বলতে পারে।

বহ্নির ইচ্ছে করছে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে মাকে ডাকতে।কিন্তু পরিবেশ পরিস্থিতি দুটোই তার বিপক্ষে।চোখের জল যদিও বাঁধ মানছেনা,ঝরেই যাচ্ছে অবিরাম।নিশ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে বহ্নির।

এদিকে মেঘেদের বুক চিরে এগিয়ে যাচ্ছে ওদের আকাশ যান। বহ্নির চোখ দুটো সেই মেঘেদের মধ্যেও মাকেই খুঁজে চলেছে।

মা ছোটোবেলাতে দুষ্টুমি করলে বলতো,ওদের দিম্মা নাকি মেঘেদের আড়ালে থেকে ওদের দেখে।যখন ওরা মায়ের কথা শোনেনা,দিম্মার চোখের জল তখন বৃষ্টি হয়ে ঝরে পরে।আর যখন ওরা দুষ্টুমি করেনা তখন দিম্মার খুশি রোদ্দুর হয়ে হাসি বিছিয়ে দেয়।

বহ্নির শিশু মন এই বিশ্বাসটাকে আঁকড়ে নিয়ে বড়ো হয়েছে।যতই সিলেবাসের বই গুলো বৃষ্টি হওয়ার সাইনটিফিক রিজন দেখাক না কেন,বহ্নির ভাবতে ভালো লাগে,কোথাও না কোথাও আমাদের প্রিয় মানুষেরা রয়ে যায়।আমাদের খুশিতে তারা খুশি হয়,আমাদের দুঃখে তারাও কষ্ট পায়।

মেঘগুলো বহ্নির হাতের নাগালে।মেঘের মধ্যেও খুঁজে পাচ্ছেনা মাকে।বহ্নি অস্ফুটে বলে ওঠে,’মা মাগো,আমি যে আর পারছিনা’,পল্লব বহ্নির হাতের আঙ্গুল গুলো নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে জোরে চাপ দিলো।বহ্নি এবার একটু আওয়াজ করেই কেঁদে উঠলো।

কোনোভাবেই মানতে পারছেনা বহ্নি ওর মা আর ওদের সাথে নেই।অবশ্য হঠাৎ মানাটা সম্ভব ও নয় আর স্বাভাবিক ও নয়।আছের থেকে নেই হয়ে যাওয়াটা মাত্র এক চুল ব্যবধান। কিন্তু নেই এর মধ্যে যে হাহাকার লুকিয়ে আছে,সেটা সেই বোঝে যার প্রিয় মানুষ হঠাৎই আছে থেকে নেই হয়ে যায়!

বিশেষ করে সেই মানুষটি যদি মা হয়।তাহলে তো হাহাকারের আর সীমা পরিসীমা থাকেনা।পল্লব অনেক চেষ্টা করেও বহ্নিকে কিছু খাওয়াতে পারেনি।জলটাও গলা থেকে নামায়নি মেয়েটা।ফ্রুট জুস খাওয়াবার চেষ্টা করেছিলো,কিন্তু মুখটা খোলাতেই পারেনি।

বহ্নি সেই গাড়িতে বসা থেকে ফ্লাইটে বসা সব কিছুই পল্লবের কথায় যন্ত্রবৎ করে গেছে।শুধু এই একটা কথাই শোনেনি।পল্লব নিজেও সে কারনে কিছু খেতে পারেনি।মাথাটা ওর ও ভার হয়ে আছে।কড়া করে এক কাপ কফি দরকার ছিলো।কিন্তু মেয়েটা কিছু মুখে দিচ্ছেনা,সেখানে কি করে ও কিছু মুখে দেয়।অগত্যা সেও না খাওয়া অবস্থাতেই বসে।

দমদম থেকে কাঁথি যাওয়ার জন্য একটা গাড়ি বুক করে নিতে হবে।পল্লব মনে মনে এটাই ভেবে নেয়।
ফ্লাইট ল্যান্ড করতে আর বেশি সময় নেই।পল্লব নিজের সাথে বহ্নির সীট বেল্টটা ও লাগিয়ে দেয়।
বহ্নি শূন্য দৃষ্টিতে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।আর মাঝেমধ্যে ডুকরে ডুকরে কেঁদে উঠছে।

বহ্নিকে এভাবে দেখতে হবে ভাবেনি পল্লব।অবশ্য এমন অদ্ভুত কথা ভাবার কথাও নয়।
এতো যে কষ্ট পাচ্ছে মেয়েটা অথচ চাইলেও এই কষ্টের ভাগীদার সে হতে পারছেনা।আসলে যে হারায় সেই শুধু উপলব্ধি করতে পারে হারানোর যন্ত্রণাটা, বাকিরা তো শুধু শুকনো শান্তনাই দিতে পারে।

পল্লব এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে আসলো বহ্নিকে সাথে করে।কিছুক্ষণের মধ্যে কাঁথি পর্যন্ত যাওয়ার জন্য একটা ট্যাক্সি ও বুক করে নিলো।
ড্রাইভার এর পাশে বসতেই পারতো পল্লব,কিন্তু বহ্নির বর্তমান পরিস্থিতি পল্লবকে বহ্নির পাশেই বসালো।

বহ্নির শরীর ছেড়ে দিয়েছে ট্যাক্সিতে বসে।ঘাড়টা একদম এলিয়ে গেছে।পল্লব ব্যস্ত হাতে বোতল থেকে জল বের করে বহ্নির চোখে মুখে ছিটিয়ে দিতে থাকলো।বহ্নি জলের ছিটেতে চোখ মেললো। রুমালটা বের করে যত্নের সাথে বহ্নির মুখ মুছিয়ে দিলো পল্লব।বহ্নি পল্লবের হাত ধরে হাউহাউ করে কেঁদে উঠলো।

ট্যাক্সি খালি রাস্তা দিয়ে জোরে চলছে।বহ্নির মাথাটা টেনে নিজের কাঁধে রাখলো পল্লব।বললো,’আর কেঁদোনা এবার একটু শক্ত হও।জেনে রাখো আমি তোমার সাথে সবসময় আছি,থাকবো’।

বহ্নি এটা বুঝতে পারছে যে,পল্লব না থাকলে কোনোভাবেই এতো তাড়াতাড়ি পৌঁছোনো সম্ভব হতো না। সন্ধ্যে বেলাতে যার বন্ধুক্তের হাতকে উপেক্ষা করে বেরিয়ে এসেছিলো ক্যাফে থেকে।রাতে তার হাত ধরেই এতোটা পথ পাড়ি দিয়েছে।

ওর দিদিয়া এখন কার কাছে আছে!কি করছে!হঠাৎ দিদিয়ার কথা ভেবে ভীষণ অস্থির হয়ে উঠলো বহ্নি।দিদিয়া যে মা আর বহ্নি ছাড়া কারো সাথেই থাকেনি কখনো।হ্যান্ড ব্যাগ হাতড়ে ফোনটা বের করে শিউলি মাসিকে ফোন করলো বহ্নি।নিশ্চিন্ত হলো যে শিউলি মাসি তাদের বাড়িতে দিদিয়ার কাছেই আছে।

বহ্নির মনে পরে গেলো,বাবা নামের সেই লোকটাও কানাডা থেকে রওনা দিয়েছে।যতই হোক মাকে ছুঁতে দেবেনা বহ্নি।যার খামখেয়ালীপানায় তাদের জীবনে এতো বড়ো ঝড় উঠেছিলো,তাকে কিছুতেই কাছে ঘেষতে দেবেনা মায়ের।বহ্নির চোয়ালটা শক্ত হয়ে গেলো,চোখ দুটো যেন জ্বলে উঠলো।পল্লব বহ্নির মুখের ভাবান্তর দেখে একটু অবাক হলেও মুখে কিছুই বললোনা।

ট্যাক্সি তার নিজের বেগে ছুটতে থাকলো।ধীরে ধীরে আলোতে ভরে গেলো চারিদিক।পল্লবের পারমিশন নিয়ে গাড়িটা রাস্তার পাশে দাঁড় করিয়ে ড্রাইভার চা খেয়ে আসলো।চা টা পল্লব কেও টানছিলো খুউউব।কিন্তু বহ্নিকে চায়ের জন্যও রাজি করানো গেলোনা বলে পল্লব ও আর চা খেলোনা।

‘মা আর একটু অপেক্ষা করতে পারলেনা?আমি যে তোমার স্বপ্ন পূরণ করাকেই নিজের স্বপ্ন বানিয়ে নিয়েছি।তুমি চেয়েছিলে,দিদিয়াও কথা বলবে,দিদিয়ার ও স্বাভাবিক জীবন হবে।আমিও তো ঠিক এটাই চাই মা।আমি তো এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি।যতো টাকাই লাগুক, আমি ব্যবস্থা করে অপারেশনটা করাবোই।
তুমি দেখবে না মা তোমার শিখাও কথা বলছে…’,মনে মনে আরো হাজারো কথা একনাগাড়ে বলে যাচ্ছে বহ্নি।ওর বন্ধ চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে যাচ্ছে।

পল্লব সেই দিকেই হা করে তাকিয়ে আছে।আর ভগবান কে বলছে,’বহ্নিকে শক্তি দাও’।

(চলবে)

(( পঞ্চদশ /ষোড়শ পর্ব ))
**********************************************

#অশান্ত বসন্ত
(পঞ্চদশ পর্ব)
জয়া চক্রবর্তী

********************
‘ স্বপ্ন গুলো বাস্তবায়িত করবার আগেই জীবন প্রদীপ নিভে গেলো মায়ের’,এই ব্যাপারটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না বহ্নি।
একটুখানি সুখের মুখ দেখতে পেলো না মা। ধারাবাহিক বঞ্চনাই যেন ছিলো মায়ের জীবনযাপনের স্বরলিপি।

ট্যাক্সি কাঁথির রাস্তা ধরে নেওয়ার পর থেকেই,পল্লব কিছুটা রাস্তা গাইড করেছে ড্রাইভারকে।
কিন্তু বহ্নির বাড়ির গলি তো চেনেনা পল্লব। তাই বাধ্য হয়েই বহ্নিকে ডাকলো।তবে পল্লবের ডাক বহ্নির কানে আদৌ পৌঁছোচ্ছিলো না।বাধ্য হয়েই বহ্নিকে ঝাঁকিয়ে দিয়ে ডাকলো পল্লব।

বহ্নি তাকিয়ে দেখলো আর দুটো মোড় ঘুরেই ওর বাড়ি।সেই হিসেবে ড্রাইভার কে ইন্সট্রাকশন দিয়ে আবার চোখ বুজলো।

সাতসকালে বহ্নিদের বাড়ির সামনে ট্যাক্সির হর্ন শুনে আশেপাশের বাড়ি থেকে উৎসাহী চোখ গুলো উঁকি দিলো।’ওমা সাথে আবার ছেলেটা কে!,নিজের মনেই আওড়াল রনির মা।

ওই দিকে শিবানীর বর শিবানীকে বলছে,’দেখেছো কান্ড!বাপ এখানে রাসলীলা সেরে কানাডায় নতুন খেলা খেলতে গেছে,আর মেয়ে পড়াশোনার নাম করে….হে হে হে হে সিঙ্কিং সিঙ্কিং ড্রিঙ্কিং ওয়াটার,বুঝলে না?’,শিবানী বিরক্ত মুখে বললো,’থামো তো তুমি,মেয়েটার এই শোকের সময়টাতেও বিষ উগড়াচ্ছ’,কথাটা বলেই এগিয়ে গেলো।

ততোক্ষনে বহ্নি ঘরে ঢুকে বিছানায় আছড়ে পরে কাঁদতে শুরু করে দিয়েছে।শিউলি মাসি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলছে,’কি আর করবি মা,তোকে তো শক্ত হতেই হবে।ওই দ্যাখ শিখাটা কেমন করছে,মেয়েটার তো মুখে ভাষাও নেই,কতো কষ্ট পাচ্ছে দ্যাখ একবার’,শিউলি মাসির কথায় ধীরে ধীরে বহ্নি উঠে বসে।

সত্যিই তো তার দিদিয়া তো স্বাভাবিক নয়।দিদিয়ার তো মাকে ছাড়া এক মুহুর্ত ও চলতোনা।খাটের কোনায় দিদিয়াকে দাঁড়িয়ে থাকতে উঠে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো বহ্নি।শিখা ও আঁকড়ে ধরলো বহ্নিকে।
দুই বোনের চোখের জল মিলেমিশে একাকার হয়ে যেতে থাকে।ওদের দেখে কেউ কেউ নিজেদের চোখের জল মুছছে আবার কেউ কেউ আঁড়চোখে পল্লবকেই দেখে যাচ্ছে।

ব্যাপারটা ভালোই খেয়াল করে পল্লব।
কিন্তু বুঝতে পারেনা এই মুহূর্তে ঠিক কি করা উচিত ওর।তবে একেই তো এরা পাড়াগাঁয়ের লোকজন।তার ওপর ওদের দুজনকে একসাথে নামতে দেখেছে ট্যাক্সি থেকে।নিজেদের মধ্যে ওদের নিয়ে একটা রসালো গল্প তো ফাঁদবেই।

অবশ্য শুধু পাড়া-গাঁ বলে নয় শহরের কিছু লোকজনের মানসিকতা ও এখনো প্রায় এদের মতোই।মুখে যতই শিক্ষার বড়াই করুক না কেন মনে মনে এখনো সেই একই অশিক্ষিত মনোভাব।

পল্লব ঠিক করে ফুলমানির বাড়িতে চলে যাবে।সেই মতো বহ্নির ফোনে একটা মেসেজ ছেড়ে যায়।লেখে, যে কোনো প্রয়োজনে ওকে ডেকে নিতে,ও ফুলমানির বাড়িতেই থাকবে।বহ্নি চাইলে ওরা একসাথেই ফেরত যাবে।

ভ্রুক্ষেপহীন খাপছাড়া চেহারা নিয়ে চুপচাপ মেঝেতে বসে আছে অর্নব।গোটা বাড়িটা যেন গিলে খেতে চাইছে ওকে।গতকালই বহ্নি শিখাকে সাথে নিয়ে চলে গেছে।
একটা ছেলে এসেছিলো ট্যাক্সি নিয়ে।ছেলেটাকে অর্নব চেনেনা।আর বহ্নিকে জিজ্ঞেস করবার সাহস ও হয়নি।

তবু বলেছিলো,অন্তত করুনার কাজ অবধি থেকে যেতে।উত্তরে বহ্নি বলেছে,’মানুষ বেঁচে থাকতেই দায়িত্ব কর্তব্য ভালোবাসা দেখাতে হয়,মৃত্যুর পর এসবের কোন মূল্যই নেই’।

এছাড়াও বলেছে’,আপনার যদি লোক দেখানো কাজ করতে হয় সেটা আপনি করতেই পারেন,তাতে আমার কোনো আপত্তি নেই।কিন্তু ডিভোর্স হওয়ার পর আপনার আর পারলৌকিক কাজ করবার অধিকার আছে কিনা সেটা একটু জেনে নেবেন।আর আপনার বাড়িটা আপনারই রইলো,আমরা চললাম’।

কতো বড়ো হয়ে গেছে মেয়েটা।কতো সহজেই বাপের কাটা গায়ে নুনের ছিটে দেয়।অর্নবের চোখে জল চলে এসেছিলো।ভগবানকে প্রার্থনা করে অর্নব, যাতে কারোর ওর মতো করুন অবস্থা না হয়।

এখন অর্নবের নেই কোনো সামাজিক দায়বদ্ধতা, নেই কোনো উদ্দেশ্য, নেই ভালোবাসার মানুষগুলোর সাথে হাসি কথার জলতরঙ্গ।তবুও রক্তক্ষরন চলছে ছিঁড়ে যাওয়া ধমনীর ভিতর।
এখন নিজেই যেন সে ছায়াহীন প্রেতাত্মা।

না আর কানাডায় ফিরে যাবেনা অর্নব।এখানেই কাটিয়ে দেবে বাকি জীবনটা।কি হবে টাকার পিছনে ছুটে!কাদের জন্য রোজগার করবে!ব্যাঙ্কে যা আছে তা দিয়ে তার একার জীবনটা ভালো মতোই কেটে যাবে।দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে অর্নব।

মাত্র একটা ভূলের মাশুল গুনে চলেছে সে এতোকাল।ভেবেছিলো করুনা আর বাচ্চাদের ঝেড়ে ফেলে অদ্রিজার সাথে সুখে জীবন কাটাবে।
এখন সেই নিজেকে উজাড় করে দিয়ে ভালোবাসার মতো করুনাও নেই আর ভালোবাসার অভিনয় করা অদ্রিজাও নেই।

মনে মনে করুনাকে বলে,আমি আমাদের ঘর ভেঙে অদ্রিজার বুকে প্রেম খুঁজছিলাম,আর তুমি জ্বলছিলে আমারই প্রনয় পিলসুজে।
সে কারনে সন্তান থাকবার পরেও আজ আমি সন্তানহীন।

অর্নব ধীর পায়ে ছাদে উঠে আসলো।গতকাল ও এসেছিলো।নক্ষত্র সজ্জায় শুয়ে থাকা আকাশ কন্যা করুনার দিকে হাঁ করে তাকিয়ে থাকে পল্লব। আসতে আসতে চোখ ঝাপসা হয়ে যায়,গলা শুকিয়ে যায়,নিশ্বাস দ্রুত হয়।আর পারেনা নিজেকে ধরে রাখতে। বুকফাটা কান্নায় ভেঙে পরতে পরতে বলে,’এতোটা শাস্তি জরুরি ছিলো কি!’
(চলবে)

#অশান্ত বসন্ত।
(ষোড়শ পর্ব)
জয়া চক্রবর্তী।

********************
অফিস থেকে বেরিয়েই বহ্নিকে একটা ফোন করে পল্লব। জানায় আধ ঘন্টার মধ্যেই ডক্টর এ.কে.গুপ্তার চেম্বারে পৌঁছে যাবে।বহ্নি হেসে জানায়, অলরেডি ও দিদিয়াকে নিয়ে চেম্বারেই বসে আছে।পল্লবের তাড়াহুড়ো করে গাড়ি চালিয়ে আসবার দরকার নেই।ধীরে সুস্থে আসলেই হবে।

পল্লব তাও চটপট গাড়ি বের করলো।ফোনের ভিতরেও বহ্নির গলায় খুশির আমেজ স্পষ্ট। এই প্রথম বহ্নিকে এতো খুশি মনে হলো পল্লবের। মনটা ভালো হয়ে গেলো।জানলার কাঁচ নামিয়ে এক ভাঁড় চা কিনলো,তারপর আয়েশ করে চুমুক দিয়ে ভাঁড়টা ছুঁড়ে ফেলে গন্তব্যের দিকে এগোলো।

আজ আর অফিস যায়নি বহ্নি।কারন অফিস থেকে বের হওয়ার আগের মুহুর্তে যদি আবার কোনো কাজের দায়িত্ব চাপিয়ে দেয় বস।সাধারণত বহ্নির ক্ষেত্রে এটাই ঘটে।তাই রিক্স না নিয়ে সকালেই মেইল পাঠিয়ে দিয়েছে,’আই কান্ট গো টু অফিস টুডে. ফিলিং সিক’।

ডক্টর এ.কে,গুপ্তার কথা পল্লবের কাছে শোনবার পর থেকে অনেকের কাছেই খোঁজ নিয়েছে বহ্নি।জেনেছে ওনার হাতে নাকি ম্যাজিক হয়।বেছে বেছে কঠিন থেকে কঠিন কেস গুলোই উনি চ্যালেঞ্জের সাথে গ্রহন করেন।এবং আজ পর্যন্ত ওনার সব অপারেশনই সাকসেসফুল।

ওনার এপোয়েনমেন্ট পাওয়াও সহজ ব্যাপার নয়।পল্লবের বন্ধুর মাস্ততো দিদির বর উনি।পল্লবের চেষ্টায় সেই বন্ধুর রেফারেন্স দিয়েই আজকের এপোয়েনমেন্টটা।

চুপচাপ বসে থাকতে গিয়ে আজ অনেক কথাই মনে পরছে বহ্নির।দেখতে দেখতে পাঁচ বছর হয়ে গেলো ও দিদিয়াকে নিয়ে ব্যাঙ্গালোরে।প্রথম ছয় মাস অবশ্য হোস্টেল ছেড়ে পল্লবের ফ্ল্যাটেই থাকতে হয়েছিলো বহ্নিদের।এছাড়া আর কোন উপায় ও তো ছিলোনা।পল্লব নিজের একটা ঘর বহ্নিদের ছেড়ে দিয়েছিলো।প্রথম দিকে অস্বস্তি লাগলেও অল্প দিনেই সেটা কেটে গিয়েছিলো পল্লবের অমায়িক ব্যবহারে।

ছয়মাস পর কলেজ ক্যাম্পাসিং এ চাকরিটা পাওয়ার পর দিদিয়াকে নিয়ে আলাদা জগৎ গড়ে তোলে বহ্নি।অবশ্য সেখানেও পল্লবের ভূমিকা অস্বীকার করবার উপায় নেই।বহ্নির অনুরোধে পল্লবই অল্প ভাড়ায় ঘর ঠিক করে দিয়েছিলো।মাঝেমধ্যে ছুটির দিনে বাজারটাও করে দিয়ে যেতো।পল্লবের কাছে বহ্নির ঋণের শেষ নেই।কিছু মানুষের কাছে বোধহয় ঋণী থাকতেই বেশি ভালো লাগে।

তবে এই পাঁচ বছর ধরে বহ্নি খুব হিসেব করে খরচ করেছে।বেশিরভাগটাই জমিয়ে রেখেছে দিদিয়ার জন্য। অপারেশনের খরচ যে অনেক হবে সেটা তো আন্দাজেই বোঝা যায়।তবে যা জমিয়েছে তাতে হয়তো হবেনা।বহ্নি ঠিক করেছে তেমন হলে বাকিটা না হয় লোন নিয়ে নেবে অফিস থেকে।

পল্লব হন্তদন্ত হয়ে চেম্বারে এসে ঢুকলো।আধ ঘন্টার জায়গায় এক ঘন্টা লেগে গেছে আসতে।রাস্তায় প্রচন্ড যানজট। বহ্নি হাত নাড়িয়ে ইশারায় পল্লবকে ডাকে।পল্লব কাছে আসতেই নিজের সীটটা ছেড়ে পল্লবকে বসতে বলে।পল্লব না চাইতেও বসে পরে।কারণ পল্লব জানে বহ্নি ওর কথা শুনিয়েই ছাড়বে।

পল্লব বসার পরেই বহ্নি এগিয়ে যায় রিসেপশনিস্ট মেয়েটার দিকে।শিখার নাম্বার কতোজনের পরে জেনে নিয়ে বেরিয়ে যায় চেম্বার থেকে।একটু পরেই ফিরে আসে হাতে পেপসির বোতল নিয়ে।ফিরে এসে পল্লবের হাতে বোতলটি ধরিয়ে দিয়ে বলে, ‘কয়েক চুমুক দিয়ে নাও, দিদিয়ার নাম্বার আরো পাঁচজনের পরে’।

বহ্নির এই ছোট্ট ছোট্ট ব্যাপার গুলো পল্লবের মন ছুঁয়ে যায় সবসময়।পল্লব জানে বহ্নিও ওকে চোখে হারায়,কিন্তু নিজের কাছে সেটা স্বীকার করতে ভয় পায়।অথচ পল্লব বহ্নির চোখে নিজের জন্য ভালোবাসাই দেখেছে।

পল্লব উঠে বহ্নিকে বসতে দিয়ে ঠান্ডা পেপসির বোতল খুলে ঢকঢক করে কিছুটা গলায় ঢালে।তারপর তৃপ্ত মুখে বহ্নির দিকে বোতলটা এগিয়ে দেয়।শিখাকে ইশারায় জিজ্ঞেস করে কেমন আছে ও?শিখার চোখ খুশিতে চিকমিক করে ওঠে।শিখা ও ওর নিজস্ব ইশারার বুঝিয়ে দেয় ভালো আছে।

শিখা সম্ভবত পল্লবেরই বয়েসী হবে।শিখার লালা ঝড়া দেখে প্রথম দিকে বেশ গা ঘিনঘিন করতো পল্লবের।সারা ঘরে কেমন চিটচিটে ভাব।মেয়েটার হাতে সবসময় রুমাল থাকলেও ঝড়ে যাওয়া লালা সারাক্ষণ মোছা তো আর সম্ভব নয়।পল্লব সেটা বুঝতে পারে।

তাছাড়া লালা শুকিয়ে যাওয়ার কারনে একটা বিশ্রী স্মেল আসতো শিখার গা থেকে।যেটাতে মনে হতো ওর অন্নপ্রাশনের ভাত ও বেরিয়ে আসবে।
প্রথম দিকে এক টেবিলে খেতে বেশ সমস্যা হতো পল্লবের।চেষ্টা করতো শুধু নিজের খাওয়ারের দিকেই মন দিতে,কিন্তু চোখটা চলেই যেতো ওদের দিকে।

বহ্নির কাছে শুনেছে,ওর দিদয়া কখনো বাবার ভালোবাসা পায়নি লালা ঝড়ার কারনে।ব্যাপারটা বেশ অদ্ভুতই লেগেছে পল্লবের।যদি ওর নিজের সন্তানের এমন হতো তাহলেও কি তাকে উপেক্ষা করে দুরে সরিয়ে রাখতে পারতো পল্লব!কি জানি!

তবে ধীরে ধীরে শিখাকে ওর খামতি সহই মেনে নিয়েছে পল্লব।আজকাল শিখার লালা ঝড়াতে ওর আর গা ঘিনঘিন করেনা।বরং চেয়েছিলো শিখার অপারেশনটা অনেক আগেই করিয়ে দিয়ে, এই লালা ঝড়ার অভিশাপ থেকে শিখাকে মুক্তি দিতে।কিন্তু বহ্নি রাজি হয়নি।ওর মায়ের স্বপ্ন নাকি ওকেই পূরণ করতে হবে।

শিখার নাম ধরে ডাকতেই বহ্নি শিখাকে নিয়ে উঠে দাঁড়ায়।কিন্তু বুকটা ধড়ফড় করতে থাকে।কুলে এসে তরী ডুববে নাতো!বহ্নির অস্থির ভাবটা চোখে পরে পল্লবের।বহ্নির কাঁধে আলতো চাপ দিয়ে বলে,’সব ঠিকঠাক মতোই হবে,ঘাবড়ানোর কিছু নেই,ভিতরে চলো’।ভরসা পেয়ে এগিয়ে যায় বহ্নি।

(চলবে)