অষ্টপ্রহরে পেয়েছি তোমায় পর্ব-১২

0
390

#অষ্টপ্রহরে_পেয়েছি_তোমায়🥀
#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_১২

আমাদের পৌঁছাতে পৌঁছাতে সকাল হয়ে গেল।আমরা রাতে রওনা দিয়েছিলাম।নির্দোষ প্রমান না করা পর্যন্ত উনি আমাদের বাড়ি যাবেন না বলে রাতে রওনা দিয়েছেন।

আমরা এখন দাঁড়িয়ে আছি গ্রামের স্কুল মাঠে।আব্বু আম্মু গ্রামের মুরব্বি সবাই ই উপস্তিত আছে।উনি উনার কয়েকজন লোককে ইশারা দিলেন কিছু।তারা একটা লোককে নিয়ে আসল।আমি লোকটাকে দেখে চমকে উঠলাম!এই লোকটা তো আব্বুর কাছে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল।আব্বু আমায় এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে দিবে না আরও লোকটা নে’শা করত তাই না করে দেয়।পড়ে আমাকে ডি’স্টার্ব করেছিল বলে আমি থা’প্পড় মে*রেছিলাম।তারপর থেকে আমি আর লোকটাকে দেখেনি কিন্তু এ এখানে কেনো!

আমার ভাবনার মাঝেই আয়াজ বলতে শুরু করলেন,,

“সেদিন আমি কাজের জন্য এসেছিলাম খুলনায় কিন্তু এই গ্রামের সামনে আসতেই আমার গাড়িটা খা’রাপ হয়ে যায়।আমি একাই ফিরছিলাম।তার ভিতরে আবার বৃষ্টি হচ্ছিল অনেক।তাই আমি আশ্রয় নেওয়ার জন্য আশেপাশে বাড়ি খুঁজছিলাম।গ্রামের ওইদিকটায় কোনো বাড়ি ছিলো না কিন্তু একটা ভাঙা একটা বাড়ি পেয়েছিলাম।আমি দৌড়ে সেখানে গিয়ে আশ্রয় নেই।তখন বাজে হয়তো ৯টার মতো।কয়েকটা ছেলে মিলে একটা মেয়েকে নিয়ে ভাঙা বাড়িটার ভেতরে ঢুকছে।আমি ওদের দেখে লুকিয়ে পড়ি দেখতে থাকি ওরা কি কি করে।মেয়েটাকে ওখানে ফেলে রেখে ওই রিহান ছাড়া বাকি সবাই চলে গেল।রিহান ইশার দিকে হাত বাড়ানোর আগেই আমি ওকে ধরে ফেলি।একটা ঘু*সি মা/রি।ও ঘু*সি খেয়ে পড়ে যায়।ইশার কাছে যেতেই রিহান পা’লিয়ে গেল।ইশা ততক্ষণে অ’ঙ্গান হয়ে গেছে।আমি ওকে ডাকতে থাকলাম।ও চোখ খুলে আমাকে দেখে ভয় পায়।আমি ওর সাথে কথা বলে ওর ভয় কাটিয়ে দেই।বৃষ্টি হচ্ছিল তাই তখন ওকে বাড়ি দিয়ে আসতে পারিনি।আমি আর ইশা রাতটা ওখানেই পার করি ও না ঘুমিয়ে বসে ছিল সারারাত।আমিও ঘুমাইনি।সকাল বেলা এই রিহান আবার গ্রাম থেকে লোক পাঠলো ইশাকে ব’দনাম করার জন্য আপনারা সবাই ভুল ভেবে নিলেন।ভাবলেন আমি আর ইশা নো*রামি করেছি।আপনারা আমাদের জোড় করে বিয়ে দিয়ে দিলেন।আমাদের কথা শুনলেনই না।যাই হোক এবার আপনাদের সবাইকে কিছু কথা বলি,সবকিছু না জেনে শুনে কাজ করবেন না।চোখের দেখাও সব সময় ঠিক হয় না।”

আয়াজ কথাগুলো বলে থামলেন।আমায় ইশারা করে নিজের কাছে ডাকলেন।তারপর বললেন,,”তোমাকে কিভাবে ওখানে নিয়ে গেছিল সেটা বলো”

আমি মাথা নেড়ে বলতে লাগলাম,,, “আমি ওইদিন শিরিন আপুর কাছ থেকে পড়ে বাড়ি ফিরছিলাম।আম্মু সেদিন আমায় আনতে যায়নি।আমি একা একাই বাড়ি যাচ্ছিলাম।হুট করে পেছন থেকে কেউ মুখ চেপে ধরে ঝোপঝাড় এর পেছনে নিয়ে গেল তারপর ৯ টার দিকে আমাকে ওখান থেকে বের করে ভাঙা বাড়িটাতে নিয়ে গেল।রাত ৯টা মানে গ্রামে অনেক বড় ব্যাপার।তখন বৃষ্টি ও পড়ছিল কেউ বের ও হবে না এই সুযোগে ওরা আমাকে নিয়ে গেছিল।”

আয়াজ রিহানের সামনে গিয়ে ওকে কয়েকটা থাপ্পড় মা’রল।তারপর ওকে সব শিকার করতে বলল।রিহান গড়গড় করে সব বলে দিল।যে সত্যিই ও করেছে এইগুলো সব।সবাই রিহানকে পুলিশের হাতে তুলে দিল।সবাই আমাদের কাছে ক্ষমা চাইল।আস্তে আস্তে ভরা মাঠ খালি হয়ে গেল।আয়াজ পুলিশদের সাথে কথা বলছেন।এর মাঝেই আম্মু এসে আমাকে জড়িয়ে ধরল।

আয়াজ আমার কাছে এসে বলল,,”বাসায় যেতে হবে আমাদের চলো”

আম্মু আমাকে ছেড়ে দিয়ে বলল,,,”বাবা কয়েকটাদিন থেকে যাও।”

আয়াজ কিছু বলবে তার আগে আব্বু আয়াজের কাছে এসে হাত ধরে বললেন,,”বাবা আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি,প্লিজ কয়েকটা দিন থেকে যাও মেয়েটাকেও
আজ অনেক দিন ভালোভাবে দিখিনি কথাও বলিনি”

আয়াজ থাকার জন্য রাজি হলেন।আমি এখন গ্রামের সব জায়গায় ঘুরে বেড়াতে পারব কি মজা।আব্বু আমাদের পাঠিয়ে দিয়ে বাজারে চলে গেলেন।আম্মুর বাড়ি যেতে যেতে বললো,,,

“সেদিন তোরা চলে যাওয়ার পর তোর আব্বু আমার হাত ধরে কেঁদেছিল।এই প্রথম আমি উনাকে ওভাবে কাঁদতে দেখেছিলাম।আমাকে বলছিল তোদের যদি ওভাবে না যেতে বলত তাহলে গ্রামের লোকেরা তোদের দেখে অনেক কথা বলত আর যা তুই বা আয়াজ কেউই সয্য করতি পারতি না। আরও তোরা তখন নির্দোষ প্রমান হসনি।তোর বাবা আরও বলছিল,তোর সাথেই কেনো এমন হলো।”

আম্মু থেমে আবার বলল,,,”বাড়ি গিয়ে তোর আব্বু আসলে কিন্তু কথা বলবি”

আমি মাথা নাড়ালাম।আয়াজ আহিনের সাথে কথা বলতে বলতে আসছেন।আমি আর আম্মু গল্প করতে লাগলাম।প্রায় দুপুর হয়ে গেছে।বাড়ি এসে রেস্ট নিলাম।দুপরের খাবার খেতে খেতে ৩ টা বেজে গেছে।আব্বু বাসায় আসলে আব্বুর কাছে গিয়েছিলাম।আব্বু আমাকে অনেক কথা বলল।আমি আর আয়াজ এখন গ্রাম ঘুরতে যাবো। আয়াজকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সব দেখাচ্ছি।

আমি আর আয়াজ ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত হয়ে গেছি তাই আমরা এখন আমাদের এইখানের একটা পুকুরের কাছে বসে আছি।গল্প করছি দু’জনে।হুট কেউ এসে পেছন থেকে চোখ ধরে ফেলল।
আমি চমকে গিয়ে বললাম,,,”কে কে?”

আয়াজও কথা বলছেন না।হুট করে চোখটা ছেড়ে দিল,পিছনে ঘুরে ফারিনকে দেখে চিৎকার করে বলি,,”ফারিননননননন!কবে এসেছিস তুই?”

ফারিন আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল,,,”এইতো কালকে এসেছি”

আমি ফারিনকে ছেড়ে দিয়ে বললাম,,”তোর কিভাবে বিয়ে হলো রে”

“আরে ওই দেখে শুনে হয়েছে বাদ দে এই যে কি ভাইয়া নাকি”

আমি মাথা নাড়ালাম।আয়াজ আমাদের দিকে তাকিয়ে আছেন।ফারিন আয়াজকে বলল,,,”আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া কেমন আছেন?”

আয়াজ বলল,,”ওয়ালাইকুম আসসালাম ছোট আপু।আমি ভালো আছি তুমি”

ফারিন মুচকি হেসে বলল,,”আমিও ভালো আছি ভাইয়া”

আমরা সবাই আরো কিছুক্ষণ ঘুরলাম।সন্ধ্যা হয়ে গেছে তাই বাড়ি যেতে লাগলাম।ফারিন বলল গ্রামের শেষে নাকি একটা মেলা বসেছে।আমি তো বায়না ধরেছি মেলায় যাওয়ার জন্য,আয়াজ বলেছেন কালকে নিয়ে যাবে আমাদের সবাইকে।বাজার থেকে আয়াজ আহিনের জন্য অনেক চকলেট কিনে আনল।

বাড়ি এসে আয়াজ আহিনকে সব চকলেটগুলো দিয়ে দিল।আমি হা করে আয়াজের দিকে তাকিয়ে আছি।উনি একটা চকলেট ও আমাকে দিলেন না!আমি অভিমান করে রুমে চলে আসলাম।উনি কেনো আমাকে একটাও চকলেট দিলো না।আয়াজও রুমে আসলেন।আমি ড্রেস চেঞ্জ করে ওয়াশরুম থেকে বের হলাম উনিও ফ্রেশ হতে চলে গেলেন। ফারিন আসলো আমাদের বাড়ি ওর বরকে নিয়।আমি শোনা মাত্রই ওদের কাছে গেলাম।ফারিন আর ওর বর আব্বুর সাথে কথা বলছেন আমি ফারিনকে নিয়ে ছাদে চলে গেলাম।

আমরা অনেক সময় গল্প করলাম।ফারিনের সাথে গল্প করে জানতে পারলাম ওরাও ঢাকা থাকে।আমি শুনে লাফিয়ে উঠেছি কি মজা ওর সাথে যখন তখন দেখা করা যাবে।ফারিন বলল আব্বুই ওদের ডেকেছে।নিচে নামলাম।এখনো ফারিনের বরের সাথে আমি পরিচিত হয়নি।তাই পরিচিত হতে আসলাম।নিচে এসে দেখি আয়াজ আর ফারিনের বর হেসে হেসে কথা বলছে।

আমি ওদের কাছে গিয়ে বলি,,,,”ভালো আছেন ভাইয়া”

ফারিনের বর আয়াজের দিকে তাকিয়ে বলে,,,”এটাই আমাদের ভাবি”

আয়াজ বলল,,”হ্যাঁ এটাই তোর পিচ্চি ভাবি রাদ”

আমি আর ফারিন হা করে উনাদের দিকে তাকিয়ে আছি।আমাদের এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আয়াজ বলল,,,”আমরা কলেজ লাইফের ফ্রেন্ড ওর সাথে এতোগুলো বছর যোগাযোগ ছিল না আজকে ওকে পেয়ে গেলাম”

রাদ ভাইয়া মুচকি হেসে বলল,,,”আমি ভালো আছি ভাবি আপনি”

রাদ ভাইয়ার ভাবি ডাক শুনে আমার খুব লজ্জা লাগল।আমি ভাইয়াকে বললাম,,,”আমি ভালে আছি ভাইয়া।আর আপনি আমাকে তুমি করে বলতে পারেন”

আমরা অনেক সময় আড্ডা দিলাম।আম্মু রাতের খাবার খাওয়ার জন্য ডাক দিলেন।আয়াজ আর রাদ ভাইয়ার অবস্তা খারাপ কারণ আম্মু তাদের এতো এতো খাবার দিয়ে বলেছেন খেতে।আমি আর ফারিন ওদের অবস্থা দেখে মিটমিট করে হাসছি।আয়াজের অবস্তা বেশি খারাপ দুপুরেও উনার এতো এতো খাবার খেতে হয়েছে।উনি আমার দিকে করুন চোখে তাকালেন।আমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে খেতে লাগলাম।

আয়াজ আর রাদ ভাইয়ার সব খাবার খেতে হয়েছে।আমরা খাবার পরও আরো কিছুক্ষণ আড্ডা দিলাম।তারপর ফারিন আর রাদ ভাইয়া বাসায় চলে গেলেন।

আমি রুমে এসে চুপচাপ শুয়ে পড়লাম।আয়াজ এসে আমাকে টেনে তুললেন।তারপর আমাকে এক ব্যাগ চকলেট ধরিয়ে দিয়ে বললেন,,,”এই নাও পিচ্চি বউ তোমার চকলেট।সেই সন্ধ্যা থেকে আমার ওপর অভিমান করে আছো”

আয়াজ বুঝলেন কিভাবে যে আমি উনার উপর অভিমান করে আছি।আমি উনাকে জিজ্ঞেস করলাম,,”কি করে বুঝলেন আপনি”

আয়াজ মুচকি হেসে বলল,,,”তোমার চোখের ভাষা আমি পড়তে পারি।তুমি আমার ওপর অভিমান করেছ সেটা আমি বুঝতে পেরেছি।”

আমি উনাকে বললাম,,”এতো চকলেট কে খাবে?আচ্ছা শুনুন এখানে তো অনেক চকলেট আমরা বরং এগুলো গ্রামের বাচ্চাদের দি তাহলে ওরা অনেক খুশি হবে”

“আচ্ছা ঠিক আছে।তোমার চকলেট তুমি যা করবে তাই ই হবে।এবার ঘুমিয়ে পড়ো”
|
|
সাকলে উঠে খবার খেয়ে আমি আর আায়াজ বেরিয়ে পরেছি বাচ্চা চকলেট দিতে।উনি আরো একব্যাগ চকলেট কিনে নিলেন।আমরা সব ছোট বাচ্চাদের চকলেট দিলাম।ওরা সবাই অনেক খুশি হয়েছে।আমরা গ্রামের কিছু জায়গায় ঘুরে বাড়িতে চলে আসলাম।

দুপুরে আমি গোসল করতে পুকুরে চলে আসলাম।সাঁতার না পারলেও আমি পুকুরেই গোসল করি।আয়াজ আমাকে পুকুরের কাছে আসতে দেখে বলে,,,”তুমি পুকুরে যাচ্ছ কেনো”

আমি বললাম,,,”পুকুরে মানুষ কেনো যায় গোসল করতে!আমিও গোসল করতে যাচ্ছি”

আমি পুকুরে নামতে নিলেই আয়াজ আমার হাত ধরে আবার উপরে নিয়ে আসলেন।তারপর বললেন,,,”সাঁতার জানো না তাও কেনো পুকুরে গোসল করতে হবে”

“অনেকদিন পুকুরে গোসল করিনি প্লিজ আজকে দিন না আয়াজ”

“আচ্ছা ঠিক আছে কিন্তু আমার সাথে নামবে আমার সাথেই উঠবে”

উনি যে রাজি হয়েছেন এতেই অনেক।উনি আগে নামলেন।পরে আমার হাত ধরে নামালেন।এমন ভাবে নামালেন।যেনো আমি একজন ছোট বাচ্চা।আমি লাফিয়ে লাফিয়ে গোসল করতে লাগলাম।হুট করে উনি আমায় টান দিয়ে নিজের কাছে টেনে নিলেন।আমি হকচকিয়ে গেলাম।
উনি আমার কোমড় জড়িয়ে ধরে কানের কাছে ফিসফিস করে বললেন,,,”তোমায় অসম্ভব সুন্দর লাগছে।মনে হচ্ছে টুস করে খেয়ে ফেলি।”

আমি লজ্জায় ওনার দিকে তাকাতে পারছি না।আমি অস্বাভাবিক ভাবে কাঁপছি।আমার কাঁপা-কাঁপি দেখে উনি আমায় ছেড়ে দিলেন।তারপর আমাকে সাথে নিয়েই উঠলেন।

চলবে,,,,,?