অষ্টপ্রহরে পেয়েছি তোমায় পর্ব-০৮

0
376

#অষ্টপ্রহরে_পেয়েছি_তোমায়🥀
#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_৮

বাসায় এসে পৌঁছাতে পৌঁছাতে আমাদের রাত ১২ টা বেজে গেল।আমি এসেই নিজের রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লাম। আয়াজও নিজের রুমে গিয়েছেন ফ্রেশ হতে।কিছুক্ষন বাদেই উনি এসে আমায় টেনে তুললেন।আমি বিরক্তি নিয়ে আয়াজের দিকে তাকালাম।উনি আমায় ওয়াশরুমের ভিতরে ঢুকিয়ে দিয়ে বললেন,,,

“জানতাম আমি ফ্রেশ না হয়ে শুয়ে পড়বে।যাও ফ্রেশ হয়ে এসে ঘুমিয়ে পড়।আমিও গেলাম।”

উনি কথাগুলো বলেই চলে গেলেন।আমি ফ্রেশ হয়ে এসে আমার ছোট্ট বারান্দাটায় চলে গেলাম।আকাশে কালো মেঘের আনাগোনা চলছে।হয়তো বৃষ্টি নামবে।হঠাৎ বিদ্যুৎ চমকালো।আমি কানে হাত দিয়ে চিৎকার করলাম।আমি বজ্রপাতে অনেক ভয় পাই।আমি দৌড়ে আয়াজের রুমের কাছে চলে আসলাম।আবার বিদ্যুৎ চমকালো।আমি আবারও কানে হাত দিয়ে চিৎকার করলাম।উনি দ্রুত দরজা খুললেন।এর ভিতরে আবারও বিদ্যুৎ চমকাালো।আমি হুট করে ওনাকে জড়িয়ে ধরলাম।এমন সময় কারেন্ট ও চলে গেছে।

আমি উনাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছি।আয়াজ আমাকে নিয়ে সোফায় বসে বলেন,,”ছাড়ো মোমবাতি জ্বালিয়ে দেই”

আমি আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলি,,,”উহু লাগবে না আপনি আমাকে ছেড়ে যাবেন না ভয় লাগে”

আয়াজ আর গেলেন।উনাকে জড়িয়ে ধরে কখন ঘুমিয়ে গেছি জানি না।ঘুম ভাঙ্গতে দেখলাম বেডে উনাকে জড়িয়ে ধরে আজকেও ঘুমিয়েছিলাম।আমি তাড়াতাড়ি করে উঠে গেলাম।আমি আমার রুমে চলে আসলাম।এই নিয়ে দু’বার আমি উনার সাথে একই বেডে ঘুমিয়েছি।একটু আগের কথা ভেবে লজ্জায় লাল নীল হচ্ছি।ফ্রেশ হয়ে আসলাম।কি করা যায়!ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম ৭ টা বাজে।আমি দ্রুত রান্না ঘরে গেলাম আজকে আমিই না হয় রান্না করি।প্রতিদিন তো উনিই করেন।

আমি নাস্তা রেডি করতে লাগলাম।ডিম বাজি আর রুটি বানালাম।প্রথম দিনের কথা মনে পড়ে গেল।কি করেছিলাম সেদিন এক ডিম বাজতে গিয়ে।আমি রান্না শেষ করে চলে গেলাম রুমে।রুমে এসে আবারও ফ্রেশ হলাম।ফ্রেশ হয়ে এসে বারান্দায় দাঁড়িয়ে বাতাস খেতে লাগলাম।কালকে রাতের বৃষ্টির পর আজ একটু ঠান্ডা পড়েছে।এখনো আকাশে মেঘের আনাগোনা সাথে ঠান্ডা হাওয়া দিচ্ছে।আজকের আবহাওয়াটা সুন্দর।আমি কিছুক্ষণ বারান্দায় থেকে আয়াজের রুমের সামনে গেলাম।উনি এখনো ঘুমাচ্ছেন।

আমি রুমের ভিতরে ঢুকলাম।তারপর উনাকে আস্তে আস্তে করে ডাকতে লাগলাম।উনি আস্তে আস্তে চোখ খুললেন।আমি উনার সদ্য ঘুম থেকে উঠা মুখের দিকে তাকিয়ে আছি।কাউকে ঘুম থেকে উঠলেও এতো ভালো লাগে।উহু উনাকে না দেখলেতো জানতে পারতাম না।

আমি সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে উনাকে বললাম,,,”তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আসেন।অফিসে যাবেন না!”

উনি উত্তরে হ্যাঁ বলে ফ্রেশ হতে চলে গেলেন।আমিও রান্নাঘরে চলে আসলাম।রান্নাঘর থেকে খাবার নিয়ে টেবিলে রাখলাম।আয়াজও কিছুক্ষনের ভিতরে চলে আসলেন।উনি খাবার দেখে অবাক হলেন যা আমি তার রিয়াকশন দেখি বুঝতে পারছি।আর একটু পরে যে আমাকে বকা খেতে হবে সেটাও বুঝতে পারছি।

আমি উনার দিকে তাকিয়ে বোকা বোকা হাসি দিয়ে বললাম,,”বসে পড়ুন”

উনি এবার আমায় জিজ্ঞেস করলেন,,”রান্না কি সব তুমি করেছ?”

আমি মাথা নেড়ে হ্যা বললাম।উনি সাথে সাথে আমাকে টান মেরে দাঁড় করিয়ে হাত-পা চেক করতে লাগলেন।উনাকে এমন করতে দেখে আমি বললাম,,,”কি করছেন আপনি এগুলো?”

উনি রেগে আমার দিকে তাকিয়ে বলেন,,,”তুমি রান্না করেছ কেনো?তোমাকে না রান্না ঘরে যেতে বারন করেছিলাম,তুমি তাও গিয়েছো।তুমি কি আমার কোনো কথা শুনবে না”

আমি কথা বললাম না।উনাকে খাবার বেড়ে দিতে লাগলাম।উনি খেয়ে চলে গেলেন।আমিও খেয়ে নিলাম।আয়াজ হয়তো অফিসে যাবেন।আমি রুমে গেলাম,রুম থেকে ফোন এনে সোফায় বসলাম।উনি বের হলেন,প্রতিদিন আমায় বলে যান কিন্তু আজকে আমার দিকে না তাকিয়ে চলে গেলেন।আমি দরজা লক করে দিলাম।

সোফায় গিয়ে বসলাম। ভাবতে লাগলাম উনার প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সব কিছু।আমার এতো খেয়াল রাখা আরো অনেক কিছু।আমাকে নিয়ে যেদিন উনি উনার বাসায় গেছিলেন সেদিন উনার দাদী আমায় বলেছিলেন,উনি নাকি বদমেজাজি আর রাগ উঠলে কাউকে মানে না। কিন্তু আমার সাথে প্রথম দিনই এমন ব্যাবহার করেছিলেন আর তো করেননি।আচ্ছা উনি কি আমায় ভালোবাসে!আজকে বাসায় আসলে উনাকে জিজ্ঞেস করবো।কিন্তু আমার তো লজ্জা লাগবে।ধূর কি যে করি!

আমি ওইসব নিয়ে আর ভাবলাম না।ভাবলে কেমন লজ্জা লাগে।আমি এবার সেই পেইন্টিং এর রুমে ঢুকলাম।রুমটায় একটা ছোট আলমারি আছে। আলমারিটা লক করা নেই।আমি আলমারিটা খুললাম,খুলে আমি অবাক হয়ে গেছি।এর ভিতরে অনেক পেইন্টিং আছে।আমি আস্তে আস্তে সব বের করলাম।

নিচে রেখে বসে পড়লাম। একেক করে পেইন্টিং গুলো দেখতে লাগলাম।পেইন্টিং গুলো দেখছিলাম আর অবাক হচ্ছিলাম।একটা মেয়েকেই আঁকানো সব পেইন্টিং এ।কিন্তু একটাতেও মুখ দেখা যাচ্ছে না।কিন্তু প্রতিটা পেইন্টিং এ তারিখ দেওয়া ছিল।মেয়েটাকে আমার চেনা চেনা লাগছে।মনে হচ্ছে কোথাও দেখেছি।আমি ফোনটা বের করে ফটাফট পেইন্টিংগুলোর ছবি তুলে নিলাম।

বের হয়ে আসতে যাবো তখন আরেকটা পেইন্টিং আমার চোখে পড়ে।আমি সেটার সামনে যাই। আমি পেন্টিংটা দেখে অবাক হয়ে যাই।কারণ মেয়েটাকে দেখে মনে হচ্ছে মেয়েটা আমি।মেয়েটা ঘুমিয়ে আছে গাড়ির ভেতরে মেয়েটার মুখের উপর চুলগুলো পড়ে আছে।মেয়েটার ঠোঁট আর এক চোখ দেখা যাচ্ছে।চাঁদের আলো মেয়েটার মুখের উপর পরছে।আমি নিজেকে ভেবেছি একটা জিনিস দেখে।

মেয়েটার ঠোঁটের নিচের তিলটা দেখে বুঝেছি এটা হয়তো আমি।আবার আমি নাও হতে পারি।কারণ ঠোঁটের নিচে তিল অনেকেরই আছে।আমি এই পেইন্টিং টারও ছবি তুলে নিলাম।বের হয়ে এলাম রুম থেকে।

দুপুর হয়ে গেল।আমি কি খাবো ভাবছি।রান্নাও করিনি।কল আসলো ফোনে।আমি ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখলাম আয়াজ ফোন করেছেন।উনার ফোন দেওয়া দেখে মুচকি হাসলাম।ফোন রিসিভ করতেই উনি বললেন,,,

“দরজা খুলে খাবার নাও আমি বিল পে করে দিয়ে দিয়েছি”

আমাকে কথা বলার সুযোগ দিলেন না,ফোন কেটে দিলেন।আয়াজের কথা শুনে মনে হলো উনি খুব রেগে আছেন।আমি দরজা খুলে খাবার নিলাম কিন্তু খেতে ইচ্ছা করলো না রেখে দিলাম।বারান্দায় গিয়ে দোল খেতে লাগলাম।
|
|
সন্ধ্যা হয়ে গেল উনি এখনো আসেননি।উনার সাথে খাবো বলে এখনো খায়নি আমি।ড্রইয়িং রুমে বসে উনার জন্য অপেক্ষা করছিল।৮ টা বেজে গেছে।হঠাৎ কলিংবেল বেজে উঠল।আমি গিয়ে দ্রুত গিয়ে দরজা খুললাম।উনি হনহন করে ঢুকলেন।আয়াজকে দেখে বুঝতে পারলাম উনি রেগে আছেন প্রচন্ড।উনি সোফায় চোখ বন্ধ করে বসে আছেন মাথায় হাত দিয়ে।আমি উনার পাশে বসলাম।

উনার মাথায় হাত দিয়ে বললাম,,”জ্বর হয়নি তো তাহলে আপনি এভাবে বসে আছেন কেনো,আর রেগেই বা আছেন কেনো?”

উনি ওভাবেই বসে বললেন,,,”যাও এখান থেকে রাগ উঠিও না”

“আমি আপনার রাগ উঠাচ্ছি?”

“হ্যাঁ উঠাচ্ছো,বিরক্ত লাগছে আমার”

আমি ফুফিয়ে উঠলাম।উনার কথা শুনে আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে।আমি উনাকে বললাম,,,”আপনার আমাকে বিরক্ত লাগে?”

হুট করে দাড়িয়ে গেলেন।আমি উনার হাত ধরতেই উনি ঝাড়ি মেরে হাত ছাড়িয়ে নিলেন।দুপুর থেকে না খাওয়ার জন্য এমনিতেও দুর্বল ছিলাম। আরো ঝাড়ি মারাতে টাল সামলাতে না পেড়ে টি-টেবিলের সাথে গিয়ে বাড়ি খেলাম।চোখে ঝাপসা দেখলাম উনি চলে যাচ্ছিলেন তারপর আর মনে নেই।

যখন চোখ খুললাম তখন নিজেকে আয়াজের রুমে পেলাম।তাকাতে অনেক কষ্ট হচ্ছে।আমাকে তাকাতে দেখে আয়াজ আমার কাছে ছুটে আসলেন।আমার সারা মুখে চুমু দিয়ে ভরিয়ে দিলেন।আমি অবাক চোখে তাকিয়ে রইলাম উনার দিকে।তখনকার আয়াজের সাথে এখনকার আয়াজের কোনো মিল নেই।

উনি আমায় বললেন,,,”সরি বউ আমি বুঝিনি এমন হবে তখন আমার মেজাজ ভালো ছিলো না”

আমার খুব অভিমান হলো।আমি অন্যদিকে তাকালাম।উনি হয়তো বুঝতে পারলেন।আমি উঠে বসার চেষ্টা করলাম।কষ্ট হচ্ছিল,উনি আমায় সাহায্য করলেন।উনি আমায় হুট করে আমায় জড়িয়ে ধরলেন।কিছুক্ষণ জড়িয়ে ধরে রেখে ছেড়ে দিলেন।রুম থেকে চলে গেলেন।কিছুক্ষণ বাদেই খাবার নিয়ে আসলেন।জোড় করে খাইয়ে দিলেন।

আমাকে ঘুমাতে বলে বারান্দায় চলে গেলেন।ঘুম আসছিলো না আমার।তাই আস্তে আস্তে উঠে বারান্দায় গেলাম।উনি চোখ বন্ধ করে দোলনায় বসে আছেন।আমি গিয়ে উনার পাশে বসলাম।উনি আমার উপস্থিতি টের পেয়ে বললেন,,,

“উঠে আসলে কেনো”

“ভালো লাগছিলো না তাই।”

আমি আবারো উনাকে বললাম,,,”কি হয়েছিল আপনার যে এতো রেগে ছিলেন”

চলবে,,,,

(ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন,ধন্যবাদ)