অ্যাডিক্টেড টু ইউ পর্ব-১৫+১৬

0
704

#অ্যাডিক্টেড_টু_ইউ
#অরনিশা_সাথী
#পর্ব_১৫

‘Tere ghar aaya mein aaya tujhko lene
Dil ki badle mein dil ka nazraana dene
Meri har dhadkan kya bole hai
sun sun sun
Sajan ji ghar aaye, Sajan ji ghar aaye
Dulhan kyon sharmaaye
Sajan ji ghar aaye’
আদ্র এই গানে ডান্স করতে করতে এন্ট্রি নিচ্ছে। আদ্রর দুই সাইডে মাইশা, তিন্নি এবং পেছনে উনার পুরো বন্ধুমহল নাচ করছে। দুহাতে মুখ ঢেকে অবাক চোখে দেখছি উনাকে। মেরুন কালার পাঞ্জাবির উপর সিলভার কালার কটি পড়েছেন। গলায় সানগ্লাস ঝুলানো, হাতে ব্ল্যাক ওয়াচ। জাস্ট চোখ সরানো যাচ্ছে না উনার থেকে। উনি নাচতে নাচতেই স্টেজে উঠে এলেন। আর বাকী সবাই স্টেজের সামনেই নিচে দাঁড়িয়ে নাচ হই হুল্লোড় করছে৷ এখানে উপস্থিত সকলে বেশ ইঞ্জয় করছে। কেউ সিটি বাজাচ্ছে কেউ হাত-তালি দিচ্ছে। আদ্র আমার চারিপাশ ঘুরে নাচতে শুরু করলো। মাঝে মধ্যে আমাকে নিয়েও নাচতে লাগলো। নাচ শেষে আদ্র আমার সামনে হাটু গেড়ে বসে পড়লো৷ আমার ডান হাত উনার হাতে নিয়ে বললো,
–“তোমাকে পাওয়ার জন্য আংকেলের পেছনে তিনটা বছর ঘুরেছি৷ এট লাস্ট আংকেল যখন রাজি হলো তখন তোমাকে মানানোর কথা বা তোমাকে নিয়ে আমি ঠিক কি ফিল করি সেইটা তোমাকে জানানোর কথা একদমই খেয়াল ছিলো না আমার৷ আংকেল রাজি হইছে মানে তুমি আমার। সেই খুশিতে আশেপাশের সবকিছু ভুলে গেছি। তোমাকে মনের কথাটা অব্দি জানাতে পারিনি। তোমার অজান্তেই সবটা করেছি আমি৷ তোমার অজান্তেই তোমাকে নিজের করে নেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি আমি। এক দেখায় আমার মনে গেঁথে গিয়েছিলে তুমি। আমার রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছিলে। আমার ভালো থাকা ভালো লাগা সবকিছু তোমাতে সীমাবদ্ধ হয়ে গেছিলো। তোমাকে ছাড়া কিছু ভাবতেই পারছিলাম না আমি৷ আমার ভালো থাকার জন্য, আমার অশান্ত মনকে শান্ত করার জন্য শুধু তোমার প্রয়োজন ছিলো৷”

চুপচাপ আদ্রর কথা শুনছিলাম আমি। অবাক চোখে উনাকেই দেখছি৷ এখনো একটা ঘোরের মাঝে আটকে আছি আমি। নিমিষেই মন খারাপ হলো এত কিছুর পরও উনি আমাকে ভালোবাসি বলছে না। আমার মন খারাপের কারনটা বোধহয় উনি বুঝতে পারলেন। তাই মুচকি হেসে বললো,
–“সেদিন বড্ড ইচ্ছে করছিলো তোমাকে ভালোবাসি কথাটা বলার৷ কিন্তু বলার মুড ছিলো না। কয তোমাকে ভালোবাসি এটা সব্বাই জানে, সব্বাই বুঝে। তাহলে তুমি কেন বুঝলে না? সেদিন অবুঝের মতো কেন জিজ্ঞেস করেছিলো আমি তোমাকে ভালোবাসি কিনা? তোমার এই প্রশ্নটার জন্যই সেদিন আর ভালোবাসি বলিনি। বলেছি ভালোবাসি না তোমাকে৷ কথাটা শোনার পর তোমার মন খারাপটাও চোখে পড়েছে। কিন্তু সেসময় আর মন ভালো করতে ইচ্ছে হয়নি। ভাবলাম দুদিন পর তো বিয়েই। এই সময়টা না হয় একটু মন খারাপ থাক। একেবারে হলুদের দিন ভালোবাসি বলে চমকে দিবো।”

আমি উৎসুক দৃষ্টিতে আদ্রর দিকে তাকিয়ে আছে। উনি ভালোবাসেন আমায়? চাতক পাখির মতো উনার থেকে ভালোবাসি কথাটা শোনার জন্য অধীর আগ্রহে তাকিয়ে আছি। উনি মৃদু হেসে বললেন,
–“আচ্ছা বলো তো, আমি যদি তোমাকে ভালো না বাসি তাহলে তিনটে বছর কেন নষ্ট করবো তোমার পিছনে? ভালো যদি না-ই বাসি তাহলে তোমাকে পাওয়ার জন্য এত মরিয়া হয়ে উঠবো কেন? ভালো না বাসলে নেশাটা আসবে কোত্থেকে? ভালোবাসি বলেই তো তোমাকে পাওয়ার এত্ত নেশা কাজ করে আমার মধ্যে। ভালোবাসি বলেই, আ’ম অ্যাডিক্টেড টু ইউ।”

উনার মুখ থেকে কথাগুলো শুনে ভিতরটা শীতল হয়ে গেলো। তবুও সরাসরি ভালোবাসি কথাটা শোনার জন্য গোমড়া মুখে বললাম,
–“এখনো সরাসরি বলেননি, আমি সরাসরি আপনার মুখ থেকে ভালোবাসি শুনতে চাই।”

আমার এমন বাচ্চামো কথায় আদ্র ক্ষানিকটা শব্দ করেই হাসলেন। বললেন,
–“এতভাবে বোঝানোর পরও ভালোবাসি বলতে হবে?”

–“হ্যাঁ অবশ্যই।”

আমার গোমড়া মুখে কথা বলার ধরন দেখে এবার উনি শব্দ করেই হেসে দিলেন৷ তারপর বললেন,
–“যদিও বা আমাদের রেজিস্ট্রি হয়ে গেছে। আবার কাল পুরোপুরি ভাবে তোমাকে পেয়েও যাবো৷ তারপরও বলছি, উইল ইউ ম্যারি মি বউ?”

আমার চোখে জল মুখে হাসি। চোখে পানি নিয়েই মুচকি হেসে বললাম,
–“ইয়েস, আই উইল।”

আমি কথাটা বলার সাথে সাথেই উনি উঠে সবার সামনেই আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন। আমি দিক বেদিক না ভেবে জাপ্টে ধরলাম উনাকে। উনি আমাকে নিজের সাথে একদম মিশিয়ে নিয়ে বললো,
–“ভালোবাসি, বড্ড বেশিই ভালোবাসি আমি আমার বউকে। ভালোবাসি বউ, ভালোবাসি।”

উনার মুখ থেকে ভালোবাসি কথাটা শুনে এবার উনাকে জড়িয়ে ধরেই কেঁদে ফেললাম আমি। চারিদিকে সকলে হই হুল্লোড় করছে, সিটি বাজাচ্ছে। উনি আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে,
–“হুশ, কাঁদে না পাগলি৷ ভালোবাসি না ভেবে এ ক’দিন অনেক কেঁদেছো, গোমড়া মুখে থেকেছো। উদাসীন ভাবে আকাশের দিকে তাকিয়ে উল্টাপাল্টা চিন্তা ভাবনা করেছো। এখন আর তা কিচ্ছু হবে না। তোমার চোখের পানি আমি দেখতে পারি না। তোমার চোখের একেকটা পানি ঝড়ার সাথে সাথে আমার হৃদয়ে রক্ত ক্ষরণ হয়।”

আমি ছেড়ে দাঁড়ালাম উনাকে। আশেপাশে সবাইকে দেখে লজ্জা পেলাম ক্ষানিকটা। উনি আমার দিকে ঝুকে আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো,
–“ভালোবাসি বলবে না?”

চমকে চোখ তুলে তাকালাম উনার দিকে৷ উনি তখনো ওভাবেই আমার দিকে ঝুকে আছে। আমি লজ্জায় মাথা নামিয়ে নিলাম। আমার পুরো কাজিন মহল এসে ঘিরে দাঁড়িয়েছে আমাদের। রুপ ভাইয়া আদ্রকে কৌতূক করে বললো,
–“অনেক তো হলো রুহিকে দেখছিস। এবার তো চোখ সরা ভাই, কাল সারা-রাত সময় পাবি ওকে দেখার।”

রুপ ভাইয়ার কথায় ভীষণ লজ্জা পেয়ে গেলাম আমি। দৌড়ে স্টেজ থেকে নেমে যেতে চাইলেই শান ভাইয়া আমার হাত ধরে ফেলে৷ শান ভাইয়া আমাকে নিয়ে ডিভানে বসিয়ে দিলো৷ মুগ্ধ ভাইয়াও আদ্রকে নিয়ে আমার পাশে বসিয়ে দিলো। শুরু হলো আমাদের হলুদ পর্ব। আব্বু আম্মুর পর আদ্রই প্রথম আমার গায়ে হলুদ লাগায়৷ কাঁপা কাঁপা হাতে আমিও উনার গায়ে হলুদ লাগিয়ে দেই৷ একে একে আমাদের বাড়ির আদ্রদের বাড়ির সকলেই হলুদ লাগায় আমাদের। হলুদ পর্ব শেষ হতে নাচগান শুরু হয়৷

বিয়ের জন্য আজ কমিউনিটি সেন্টার বুকড্ করা হয়েছে। সকল অতিথি সরাসরি সেখানেই পৌঁছে গেছে। হিমাদ্রি ওরা সেজেগুজে সেন্টারে চলে গেছে অনেক আগেই। আমার বউসাজ মাত্র শেষ হলো। ফারাবী ভাইয়া বাহিরে বাইক নিয়ে অপেক্ষা করছে আমার জন্য। আমি পার্লার থেকে বেরোলেই আমাকে নিয়ে এখান থেকে সোজা কমিউনিটি সেন্টারে যাবে। আয়নায় নিজেকে একবার দেখে নিলাম। গাঢ় লাল রঙের ব্রাইডাল লেহেঙ্গা সাথে ব্রাইডাল মেকআপে নিজেই যেন নিজেকে চিনতে পারছি না। তাহলে আদ্রর কি অবস্থা হবে? উনি কি চোখ ফেরাতে পারবে আমার থেকে? শুনেছি আমাদের বিয়ের যাবতীয় কেনাকাটা আদ্র একা নিজের পছন্দ মতো কিনেছে। আমার এসব ভাবনার মাঝেই ফারাবী ভাইয়ার ফোন এলো। তাই দ্রুত পার্লার থেকে বেরিয়ে গেলাম। ফারাবী ভাইয়া বেশ প্রশংসা করলো আমার। লজ্জায় গাল দুটো লাল হয়ে উঠলো ভাইয়ার প্রশংসা শুনে। পার্লার থেকে ফিরে সোজা সেন্টারের ভিতর একটা রুমে নিয়ে বসানো হয় আমাকে। আপু ওরা সবাই মিলে আমার সাথেই ছিলো। রুপ ভাইয়া রুমে এসে জানিয়ে গেলো বরযাত্রী এসে পড়েছে। তাই আপি হিমাদ্রি ওরা সকলেই আমাকে একা বসিয়ে রেখে গেট ধরতে চলে গেলো।

গেটের টাকা নিয়ে প্রচন্ড কথা কা/টা/কা/টি হচ্ছে। কনে পক্ষ ত্রিশ হাজারের নিচে ঢুকতে দিবে না আর বরপক্ষ পনেরো হাজারের এক টাকা বেশি ও দিবে না। হিমাদ্রি ক্ষেপে গিয়ে বললো,
–“আদ্র ভাই, আপনি বরং চলেই যান। আজকে আর সাথে করে বউ নিয়ে বাড়ি ফিরতে হবে না। আপনার বন্ধুরা যা শুরু করেছে এতে মনে হয় না এরা কেউ চায় আপনি আজকে ভিতরে আসুন।”

কথাগুলো হিমাদ্রি আদ্রকে উদ্দেশ্য করে বললেও নিশাদের দিকে তাকিয়ে বলেছে। নিশাদ হলো আদ্রর ফ্রেন্ডের ছোট ভাই। তাই বরপক্ষ হিসেবে উনিও এই বিয়েতে উপস্থিত আছেন৷ হিমাদ্রির কথার জবাবে নিশাদ ভাইয়া বললেন,
–“কে কি চায় তা আমরা খুব ভালো করেই জানি। আদ্র ভাই, তুমি একদম চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকো। বাকীটা আমরা দেখে নিচ্ছি। আমরাও দেখবো কিভাবে আমাদের ভিতরে যেতে দেয় না।”

এক কথায় দু কথায় শুরু হয় দু পক্ষের টাকা নিয়ে তর্কাতর্কি। শেষে আদ্র বললো,
–“এনাফ, কি শুরু করলি তোরা? ভাই ওরা যা চাইছে তাই দিয়ে দে না। তোদের ভাবীকে পাওয়ার জন্য সাড়ে তিন বছর ওয়েট করছি। এখন তোদের এই কথা কা/টা/কা/টি/র জন্য আরো লেট করতে পারবো না আমি।”

আদ্রর কথায় সবাই হেসে উঠলো ওখানে। কিন্তু আদ্রর সেদিকে কোনো হেলদোল নেই। ও সবার সামনেই অ/ক/প/টে নিজের মনের কথা বলে ফেললো। আরো কিছু সময় দুই দলের মধ্যে যুদ্ধ চলার পর অবশেষে বরপক্ষ হার মেনে নিয়ে ত্রিশ হাজার টাকা বের করে দিলো। সব ভাইয়ারা মিলে আদ্রকে নিয়ে স্টেজে রাখা বড় চেয়ারে বসিয়ে দিলো। বরপক্ষের সকলের খাওয়া-দাওয়ার পর্ব শেষ হতেই আপি ভাইয়ারা এলো আমাকে স্টেজে নেওয়ার জন্য।

ব্রাইডাল এন্ট্রি ডান্স হবে এখন। আমার সব কাজিন একে একে নাচতে নাচতে স্টেজের দিকে আগাবে। ওরা সকলে সিরিয়াল ভাবে দাঁড়িয়ে আমাকে সবার শেষে দাঁড় করালো। কারন সবার লাস্টে আমার এন্ট্রি হবে। আর পুরো নাচটা ভিডিওম্যান ক্যামেরা বন্দী করবে। রুমের দরজা থেকে স্টেজ অব্দি যাওয়ার রাস্তায় লাল কার্পেট বিছানো। কার্পেট মাঝে রেখে রুম থেকে স্টেজ অব্দি দুই সাইডে আপু ভাইয়া দের বন্ধুবান্ধব এবং আরো অনেক অতিথি দাঁড়িয়ে আছে।

প্রথমেই ‘Kala Chasma’ গানে শান ভাইয়া আর রুশাপু নাচতে নাচতে এন্ট্রি নিলো। প্রথমেই এদের নাচ দেখে সবাই খুশিতে চেঁচিয়ে উঠে। শান ভাইয়া আর রুশাপু কিছুক্ষণ নাচ করে সাইডে সরে দাঁড়ায়।

এরপর মুগ্ধ ভাইয়া আর আপি ‘tu mera hero number one’ গানে নাচতে নাচতে এন্ট্রি নেয়। এদের পারফর্ম দেখে সবাই সিটি বাজিয়ে উঠে।

‘Aankhen khuli ho ya ho band, Deedar unka hota hai, kaise kahoon mein o yaara yeh, pyar kaise hota hai’ গানে নাচতে নাচতে এন্ট্রি নিলো রুপ ভাইয়া আর ফাইজা। সকলের পারফর্ম খুব সুন্দর হচ্ছে। সারা সেন্টার জুড়ে আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠেছে সকলে।

‘oh oh jaane jaana, dhoonde tujhe dewanaa, sawpne mein rooj aye, ay zindagi main aana sanaam’ এই গানে নাচতে নাচতে এন্ট্রি নেয় ফারাবী ভাইয়া আর হিমাদ্রি। সকলেই খুব ভালো পারফর্ম করেছে। পরপর চারটে এন্ট্রিই খুব সুন্দর হয়। অবশেষে এবার আমার এন্ট্রির পালা। সাউন্ড বক্সে গান বেজে উঠলো,

‘Hai woh handsome sona sabse
Mera dil ko gaya lekar
Meri neend churali usne
Aur khwaab gaya dekar

Aab ye naina bole yaar
Bole yeh hi lagataar
Koi chaahe…
Kitna rokee…
Karungi pyaaar…
Mere saiyaan superstar,
O mere saiyaan superstar
Main fan hui unki
O mere saiyaan superstar…….

এই গানে নাচতে নাচতে আমার এন্ট্রি হলো৷ আদ্রর দিকে খেয়াল করলাম মুগ্ধ দৃষ্টিতে আমাকে দেখছে। হয়তো উনার কল্পনার থেকেও বেশি সুন্দর লাগছে আমায় বধূ বেশে। রুপ ভাইয়া গিয়ে আদ্রকে এনে আমার দিকে ঠেলে দিলো। আদ্র আর আমি দুজনেই একসাথে ব্রাইডাল ডান্স করছি। গান শেষ হওয়ার কিছু সময় আগে আপি, রুশাপু, হিমাদ্রি, ফাইজা, শান, মুগ্ধ, রুপ, ফারাবী ভাইয়া এবং আদ্রর ফ্রেন্ড সার্কেলের সকলেই তাল মেলায় আমাদের সাথে। পুরো গানে সকলে একসাথে নাচ করা হয়। নাচ শেষে চারিপাশ থেকে সকলের হাত তালি আর সিটির বাজানোর শব্দে মুখরিত হয় সবদিক। আদ্রকে দেখে আবোর কিছু সময়ের জন্য আমার চোখ আটকে যায়৷ আমার লেহেঙ্গার সাথে ম্যাচ করে শেরওয়ানী পড়েছে উনি। ফর্সা গায়ে গাঢ় লালের মধ্যে গোল্ডেন সুতোর কাজ করা শেরওয়ানীতে অসম্ভব সুন্দর লাগছে। আদ্র আমার হাত ধরে স্টেজের দিকে এগিয়ে যায়। আমি অন্যহাতে লেহেঙ্গার নিচের পার্ট কিছুটা উঁচু করে উনার সাথে এগিয়ে যাচ্ছি। আদ্র প্রথমে স্টেজে উঠে আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়। আমি উনার হাত ধরে স্টেজে উঠি। নিচের পার্ট খুব বড় হওয়ায় ফ্লোরের সাথে একদম লেপ্টে আছে৷ স্টেজে উঠার পরও কিছু অংশ ফ্লোরে থাকায় উনি নিজেই সেটা উঠিয়ে দেয়। আমি সামনে দুহাতে লেহেঙ্গা উঁচু করে স্টেজে রাখা চেয়ারের দিকে যাচ্ছি। আমার পেছনেই উনি লেহেঙ্গা আর উড়নার কিছু অংশ উঁচু করে ধরে আমার পিছন পিছন আসছে।

পাশাপাশি চেয়ারে বসে আছি দুজনে। মিনিট পাঁচেক আগেই কাজি আর হজুর এসে আবারো বিয়ে পড়িয়ে গেলেন। এখন থেকে আমি সম্পূর্ণ ভাবে আদ্রর হয়ে গেলাম। আদ্র আমার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বললেন,
–“আজ থেকে তোমার আব্বুর রাজকন্যার পাশাপাশি আমার রাজরানীও হয়ে গেলে। মিস থেকে মিসেস হলে। এখন সবার কাছে মিসেস মুশফিকান আদ্র নামে পরিচিত হবে তুমি।”

উনার গরম নিঃশ্বাস ঘাড়ে পড়ায় মৃদু কেঁপে উঠলাম আমি৷ কিন্তু উনি তখনো সরে যাননি। আবারো নেশা জড়ানো কন্ঠে বললেন,
–“আমার নেশা কাটানোর মেডিসিনটা আজ থেকে প্রতি মূহুর্ত আমার সাথে থাকবে। আজ থেকে আর নিজেকে পাগল পাগল লাগবে না আগের মতো৷ আজ আমি আমার নেশা কাটাবো, বি রেডি মিসেস মুশফিকান আদ্র।”

লাস্ট কথাটা উনি এমন ভাবে বললেন যে আমার ভিতর শুদ্ধ কেঁপে উঠলো। কি বলে লোকটা? কথাটা বলেই উনি সরে গেলেন৷ আমি চমকে চোখ তুলে তাকালাম উনার দিকে৷ উনি দিব্যি পাশ ফিরে বন্ধুদের সাথে খোশগল্পে মেতে উঠেছেন।

সবশেষে এবার বিদায়ের পালা। বুকটা ভারী হয়ে আসছে৷ কান্নাগুলো সব গলায় এসে আটকে আছে৷ এ বাড়ি আব্বু আম্মু সকলকে ছেড়ে অন্যের বাড়ি চলে যেতে হবে আজ। নিজের পরিচিত বাড়িতে নিজের পরিচিত সবকিছুতে এখন থেকে আমার অধিকার কিছুটা হালকা হয়ে গেলো। নিজের বাড়িতে কাল থেকে অতিথি হয়ে আসতে হবে আমায়। আব্বু আমাকে আদ্র আর পাপা (আদ্রর বাবা) এর হাতে তুলে দিলেন৷ সেই মূহুর্তে আব্বুকে জাপটে ধরে কান্না করে দিই আমি৷ বাবা মেয়ে দুজনেই কাঁদছি। কেউ কাউকে ছাড়ছি না। শান ভাইয়া এক প্রকার জোর করেই আব্বুর থেকে ছাড়িয়ে নেয় আমায়। আম্মুর সামনে গিয়ে দেখি আম্মু আঁচলে মুখ গুজে কাঁদছেন। আম্মুকেও জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলাম। আব্বু এসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন৷ একে একে সবার থেকে বিদায় নেওয়া হলো৷ গাড়িতে উঠার আগে আবারো দৌড়ে আব্বু আম্মুর কাছে গিয়ে দুজনকে একসাথেই জড়িয়ে ধরলাম। ফারাবী ভাইয়া ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই কান্নারত কন্ঠে বললাম,
–“য্ যাবো না আমি। কোত্থাও যাবো না___”

এরপর আর কি হয়েছে মনে নেই। শুধু পুরোপুরি সেন্সলেস হওয়ার আগে এইটুকু বুঝতে পারলাম কেউ একজন আমাকে কোলে তুলে নিলো।

চলবে~

#অ্যাডিক্টেড_টু_ইউ
#অরনিশা_সাথী
#পর্ব_১৬

সেন্স ফিরতেই আমাকে মাইশা আর তিন্নির ঘরে আবিষ্কার করলাম। আমাকে উঠে বসতে দেখে তিন্নি আমার গাঁ ঘেঁষে বসে বললো,
–“যাক, ফাইনালি তোমার সেন্স ফিরেছে।”

তিন্নির কথার প্রত্যুত্তরে কিছু না বলে আশেপাশে তাকালাম। রুমে আমি তিন্নি আর দুজন মেয়ে ছাড়া অন্য কেউ নেই। তিন্নি আমার হাত ধরে বললো,
–“কিছু লাগবে ভাবী? কাউকে খুঁজছো?”

–“ক’টা বাজে?”

আমার প্রশ্নে তিন্নি ফোনে সময় দেখে বললো সাড়ে দশটা বাজে। আমি তিন্নির কাছে একগ্লাস পানি চাইতেই ও বেড সাইড টেবিল থেকে পানির গ্লাস এগিয়ে দিলো। ক্ষানিকটা পানি খেয়ে গলা ভিজিয়ে নিয়ে গ্লাসটা আবার রেখে দিলাম। তারপর আশেপাশে আরো একবার চোখ বুলিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
–“আমাদের বাসা থেকে কেউ আসেনি তিন্নি?”

–“হিমাদ্রি আপুরা বলেছিলো আসবে৷ কিন্তু এখনো আসেনি।”

আমাদের বাসা থেকে কেউ আসেনি কথাটা শুনতেই মন খারাপ হয়ে গেলো। এক মূহুর্তেই পর হয়ে গেলাম? সব্বাই না এত ভালোবাসে আমাকে? তাহলে আদ্রর সাথে আমাকে একা কি করে পাঠিয়ে দিলো? কেউ কেন এলো না সাথে? আমার এসব চিন্তা ভাবনার মাঝেই আদ্র রুমে এলেন৷ উনার পেছন পেছন আমার পুরো কাজিন মহল। সকলকে দেখে নিমিষেই মন খারাপ ভাবটা উবে গেলো৷ ঠোঁটের কোনে এক চিলতে হাসির রেখা ফুঁটে উঠলো। রুপ ভাইয়ার ফোন দিয়ে বাড়িতে আব্বু আম্মুর সাথে কথা বললাম বেশ কিছুক্ষণ।

প্রায় আধ ঘন্টা বাদে মামুনি (আদ্রর মা) সকলকে ডাক পাঠালেন। আমার সব কাজিন এবং আদ্রর সব ফ্রেন্ডরা মিলে চলে গেলো খাওয়ার ওখানে। এখানে শুধু আমি তিন্নি মাইশা আর আদ্র আছে। মাইশা উনাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
–“ভাইয়া, সবাই তো চলে গেলো তুমি যাচ্ছো না কেন?”

–“সবাই চলে গেলেও আমার বউ এখানেই আছে। তোরা যাচ্ছিস না কেন?”

–“আমরা ভাবীর সাথেই থাকবো৷ তুমি বের হও এখান থেকে।”

তিন্নির কথায় আদ্র ওদের দুজনের মাথাতেই গাট্টা মারলেন। তারপর দুজনকে উদ্দেশ্য করেই বললেন,
–“খেয়াল রাখিস ওর উপর। আর মাইশু ওর খাবারটা রুমে এনেই খাইয়ে দিস।”

মাইশা সম্মতি জানাতেই উনি চলে গেলেন। ডাইনিং থেকে মামুনি তিন্নিকে ডাকতেই তিন্নি দ্রুত কদম ফেলে চলে গেলেন। মাইশা তখন ফোনে কিছু একটা করছিলো। একটু বাদেই তিন্নি খাবার প্লেট হাতে রুমে এলো৷ খেতে না চাইলেও তিন্নি একপ্রকার জোর করেই কয়েক লোকমা খাইয়ে দিলো। মাইশা আর তিন্নি দুজনে আমার দু পাশে বসে রাজ্যের গল্প জুড়ে দিয়েছে। হঠাৎই মাইশা বললো,
–“আচ্ছা ভাবী একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?”

আমি চোখ তুলে তাকালাম মাইশার দিকে। তারপর ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানাতেই মাইশা আমার আরো কাছ ঘেঁষে বসে বললো,
–“ইরান ভাইয়া তোমায় পছন্দ করতো?”

মাইশার মুখে এহেন কথায় ভড়কে গেলাম। মাইশা তখনো উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমি আমতা আমতা করে বললাম,
–“আ্ আমি ঠিক জা্ জনিনা।”

তিন্নি আমাকে ওর দিকে ঘুরিয়ে বললো,
–“এই সামান্য কথাটা বুঝতে পারোনি তুমি? নীলাদ্রি আপুর হলুদে ছেলেটার চাহনী দেখেই কিন্তু আমরা বুঝতে পেরেছিলাম উনি তোমাকে পছন্দ করে। তারপর বিয়ের দিন দেখলে না? কিভাবে একটা সুযোগ পেতেই তোমাকে বিয়ে করার কথা আংকলকে বলে ফেললো। এতকিছুর পরও বুঝতে পারোনি তুমি?”

আমি বোকার মতো ওদের দিকে তাকিয়ে আছি। আমার দু ব্যাচ জুনিয়র হয়েও ওরা বুঝে ফেললো আর আমার মাথায় কিনা এটা ঢুকলো না? যাই হোক, এসব নিয়ে মাথা ঘামিয়ে লাভ নেই। ওরা দুজন আরো কিছু বলতে চাচ্ছিলো, কিন্তু তার আগেই আদ্র এসে পড়ে৷ উনি এসে সোজা আমার কোলের উপর মাথা দিয়ে শুয়ে পড়ে। ওদের সামনে এমনটা করায় লজ্জায় মাথা নিচু করে নিলাম। তিন্নি আর মাইশা দুজনেই হাসছে। আদ্র চোখ রাঙিয়ে তাকালে দুজনেরই হাসি বন্ধ হয়ে যায়। তিন্নি বললো,
–“আমরা এখানে মেয়েরা মেয়েরা কথা বলছিলাম, তুমি ছেলে হয়ে এখানে আসলে কেন?”

–“আমার বউ যেখানে থাকবে আমিও সেখানেই থাকবো৷ তোদের ভালো না লাগলে ওদিকে দরজা খোলা আছে আসতে পারিস।”

–“এটা আমাদের রুম, সো আমরা থাকবো। তুমি বের হও।”

মাইশার কথায় আদ্র চট করেই উঠে বসলো। তারপর আমার হাত ধরে বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ালো৷ মাইশা আর তিন্নি দুজনেই দৌড়ে আমাদের কাছে এসে বললো,
–“এই এক মিনিট, ভাবীকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছো? আমরা তোমাকে যেতে বলেছি।”

–“এটা যেমন আমার রুম না, তেমনি রুহির রুমও না। সো আমার সাথে ও যাবে৷ আর আজ আমাদের স্পেশাল একটা রাত, এখানে বসে বসে আমরা আমাদের এত সুন্দর রাতটা কেন স্পয়েল করবো?”

তিন্নি আর মাইশা আটকাতে চাইলেও আদ্র থামলেন না। একটানে আমাকে কোলে তুলে নিয়ে হাঁটা দিলেন উনার রুমের দিকে। তিন্নি আর মাইশা দৌড়ে আমাদের আগেই উনার রুমের সামনে গিয়ে দরজা আটকে দাঁড়ালো। তিন্নিকে দেখলাম কাউকে ফোন করে এখানে ডাকলো৷ মিনিট দুই গড়াতেই আদ্রর ফ্রেন্ড সার্কেল এবং কাজিনরা সকলে এসে হাজির হলো আদ্রর রুমের সামনে। আদ্র ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
–“কি ব্যাপার সবাই এখানে এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?”

আদ্রর বেস্ট ফ্রেন্ড, রাফিন ভাইয়া কোনো ভনিতা ছাড়াই বললেন,
–“টাকা দিবি তারপর বউকে নিয়ে বাসরঘরে ঢুকবি।”

–“আমার রুম, আমার বউ৷ সুতরাং আমি কেন তোদের টাকা দিবো?”

আদ্রর বুকে মুখ গুজে আছি। লজ্জা লাগছে অনেক৷ এভাবে সবার সামনে কেউ কোলে নিয়ে দাঁড়ায়? আমি কোল থেকে নামতে চাইলাম, কিন্তু উনাকে আরো শক্ত করে ধরে বললো,
–“তুমি নড়ছো কেন? যেভাবে রেখেছি চুপচাপ সেভাবেই থাকো।”

উনার এহেন কথায় সকলেই মৃদু শব্দ করে হাসলো। লজ্জায় মুখ লুকালাম আমি। আদ্রর ফ্রেন্ড তামিম বললো,
–“দেখ ভাই, তোরও টাইম লস হচ্ছে সাথে আমাদেরও, সো টাকাটা দিয়ে দে আমরাও দরজা খুলে দেই আর তুইও ভাবীকে নিয়ে রুমে যা।”

–“এই লজ্জা করছে না? ভিক্ষুকদের মতো সবাই মিলে আমার রুমের দরজা আটকে দাঁড়িয়ে আছিস টাকার জন্য।”

–“তুই ভিক্ষুক বলে শান্তি পাইলে আমরা তাই৷ এখন টাকা দিয়ে ভিক্ষুকদের বিদায় কর।”

উনার ফ্রেন্ড সৌমি আপুর কথায় সবাই হেসে দিলো শব্দ করে৷ আদ্রর আরেক ফ্রেন্ড তুশি আপু হাসি থামিয়ে বললো,
–“গেট ধরার সময় তো শালিকা/শালা দের সাথে সাথেই টাকা বের করে দিলি। এখন আমাদের বেলায় ভিন্ন হবে কেন? দ্রুত টাকা বের কর।”

আদ্র নিরুপায় হয় বললো,
–“কত টাকা চাই?”

আদ্রর কাজিন আয়মান এবং আয়ুশী দুজনে একসাথে বললো,
–“বেশি না শুধু তোর কার্ড দিয়ে দিলেই হবে। বেশি না জাস্ট একটা দিন ওখান থেকে খরচা করবো আমরা।”

আদ্র ছোট ছোট চোখে মেলে তাকালো সবার দিকে। তারপর ধমকের সুরে বললো,
–“পাগলা কুকুরে কামড়েছে আমায় না? আমি কার্ড দিয়ে দিবো আর তোরা একদিনেই আমাকে ফকির বানিয়ে দিবি।”

আদ্রর কথায় সকলে দাঁত কেলিয়ে হাসলো। বললো কার্ড না দিলে কিছুতেই রুমের ভিতর যেতে দিবে না উনারা। আদ্র কিছু সময় চুপচাপ থেকে আমাকে বললো,
–“রুহি ভালো করে গলা জড়িয়ে ধরো তো।”

–“ক্ কেন__”

–“পড়ে যাবা নয়তো।”

উনার কথার বিপরীতে আর কিছু না বলে ভালো করে গলা জড়িয়ে ধরলাম উনার৷ উনি একহাতে আমায় শক্ত করে ধরে অন্যহাত দিয়ে প্যান্টের পকেট থেকে ওয়ালেট বের করে আমার কোলের উপর দিয়ে আবারো দুহাতে আকড়ে ধরলো আমায়। তারপর বললো,
–“কার্ড বের করে ওদের দিয়ে দাও।”

আদ্রর কথামতো ওয়ালেট থেকে কার্ড বের করে আয়ুশী আপুর হাতে দিয়ে দিলাম৷ কার্ড পেয়ে সকলে বেশ খুশি। চুপচাপ দরজা ছেড়ে সরে গেলো সবাই৷ যাওয়ার আগে অবশ্য ‘বেস্ট অফ লাক’ জানাতে ভুলেনি কেউ-ই। আদ্র আমাকে কোলে করে নিয়ে সোজা বিছানায় নামিয়ে দিলো। তারপর দরজা আটকে দিয়ে কাবার্ড থেকে একটা জাম রঙের সুতি শাড়ি আমার হাতে দিয়ে বললো,
–“ফ্রেশ হয়ে একেবারে উযু করে এসো।”

আমি সম্মতি জানিয়ে চলে গেলাম ওয়াশরুমে। প্রায় ঘন্টা খানেক বাদে একেবারে শাওয়ার নিয়ে বের হলাম ওয়াশরুম থেকে। আমাকে দেখে আদ্র এগিয়ে এলো। এলোমেলো আর ভেজা চুলে দেখে মৃদু হেসে বললো,
–“এখন অব্দি স্পর্শও তো করলাম না সেরকম ভাবে। তার আগেই শাওয়ার নিয়ে ফেললে?”

–“স্ সাজ তুলতে গিয়ে ভ্ ভিজে গেছিলাম, তাই___”

–“আচ্ছা ওয়েট করো একটু। উযু করে এসে একসাথে নামায পড়ে নিই আগে, তারপর বাকী কথা হবে।”

কথাটা বলেই চলে গেলেন উনি। আমি চুলটা আরেকটু ভালোভাবে মুছে নিলাম। উনি আসতেই দুজনে একসাথে নামায আদায় করে নিলাম। আদ্র নিজেই জায়নামাজ কাবার্ডে রেখে টাওয়াল নিয়ে আমার কাছে এলেন৷ আমাকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে ভালোভাবে চুলগুলো মুছে দিতে দিতে বললেন,
–“শাওয়ায় নেওয়ার পর ভালো ভাবে চুল মুছবে নয়তো ঠান্ডা লেগে যাবে।”

আমি কিছু বললাম না। চুপচাপ বসে আছি। হুট করেই উনি আমাকে কোলে তুলে নিয়ে সেই ছোট্ট রুমটার দিকে অগ্রসর হলেন। এই রুমটাও খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। তফাৎ শুধু বড় বেডরুমটাতে লাল গোলাপ বেলি ফুলের কম্বিনেশনে সাজানো হয়েছে৷ আর এই রুমটাতে শুধু সাদা গোলাপ আর মোমবাতিতে সাজানো হয়েছে। দুটো রুমই খুব সুন্দর ভাবে সাজানো হয়েছে। তবে কেন জানিনা এই রুমের সাজানোটাই আমার বেশি পছন্দ হলো৷ আদ্র আমাকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে বললো,
–“এই রুমটা আমি নিজে সাজিয়েছি, স্পেশালি তোমার জন্য। ভালো লেগেছে?”

আমি ঘাড় নেড়ে হ্যাঁ বোঝাতেই উনি বললেন,
–“আমার রুমের ভিতরেই আবার এই ছোট্ট রুমটা কেন করা হয়েছে জানো?”

–“ন্ নাহ__”

–“মাঝে মধ্যে আমার বউয়ের সাথে খুবই একান্তে সময় কাটানোর জন্য।”

কথাটা উনি আমার কানের কাছে মুখ এনে বললেন। কানের লতিতে কামড় বসাতেই কেঁপে উঠলাম আমি৷ উনি আমাকে ঘুরিয়ে উনার মুখোমুখি বসিয়ে গলায় ছোট্ট লকেটসহ চেইন পড়িয়ে দেয়৷ তারপর আমার হাতে একটা প্যাকেট দিয়ে বললো,
–“এতে তোমার কাবিনের সম্পূর্ণ টাকা আছে৷ এই টাকার উপর শুধুমাত্র তোমার হক। সুতরাং এই টাকা দিয়ে তুমি যা ইচ্ছে করতে পারো।”

–“র্ রেখে দিন আপনার কাছে।”

–“এটা তোমার সুতরাং তোমার কাছেই থাকবে।”

আমি আর কথা বাড়ালাম না। বালিশের পাশে রেখে দিলাম প্যাকেট-টা। আদ্র আমার আরো কাছ ঘেঁষে বসে আমার হাত উনার হাতের মুঠোয় নিয়ে কম্পিত কন্ঠে বললো,
–“রুহি।”

–“হু__”

আমার মিনমিনে কন্ঠস্বর শুনে আদ্র আমাকে উনার একদম কাছে টেনে নিলেন। লেহেঙ্গার টপস ভেদ করে উনি আমার কোমড় চেপে ধরলেন। কেঁপে উঠে চোখ খিচে বন্ধ করে নিলাম আমি৷ আদ্রর শক্তপোক্ত পুরুষালী হাত আমার গাল স্পর্শ করতেই নিভু নিভু চোখে তাকালাম তার দিকে। উনার দিকে তাকাতেই বুকটা ধক করে উঠলো আমার। উনার চোখে-মুখে স্পষ্ট ব্যাকুলতা আমাকে নিজের করে পাওয়ায়। উনার সাড়ে তিন বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে আজ আমি তার। একান্তই তার। আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছি আমাকে এতটা কাছে পেয়ে উনার নিজেকে ধরে রাখতে বেশ বেগ পোহাতে হচ্ছে। আমাকে খুব করে কাছে পাওয়ার অসহনীয় যন্ত্রণা যেন উনার সবকিছু ঝলসে দিচ্ছে। উনি কাছে চাইছে আমায়। আমার সর্বাঙ্গে উনার ভালোবাসার স্পর্শ এঁকে দিতে চাইছে। কিন্তু তবুও কোথাও যেন একটা জড়তা উনাকে আটকে দিচ্ছে বারবার।
–“রুহি আমি মানে___”

এইটুকু বলেই থেমে গেলেন উনি। জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে নিজেকে সামলানোর ব্যর্থ চেষ্টা চালালেন ক্ষানিকটা সময়। আদ্র আবারো নেশা জড়ানো কন্ঠে বললো,
–“রুহি__”

–“আপনি আমার স্বামী। আজ থেকে আপনার নামের সাথে আমার নাম জুড়েছে সম্পূর্ণ ভাবে। আমার উপর আপনার অধিকারটাও সব থেকে বেশি। আপনি চাইলে__”

এইটুকু বলে লজ্জায় মাথা নামিয়ে নিলাম আমি। আদ্র শুকনো ঢোক গিলে কাঁপা স্বরে বললো,
–“রুহি আর ইউ সিওর?”

আমি কিছু না বলে আড়ষ্ট হয়ে বসে রইলাম। আদ্র চোখ বন্ধ করে নিলো৷ তারপর জাপ্টে ধরলো আমার কোমড়। ধীরে ধীরে শুইয়ে দিতেই নিভু চোখে চোখ রাখলাম উনার চোখে। প্রথমেই বেশকিছু সময় আমার দিকে তাকিয়ে থেকে গভীর ভাবে চুমু খেলো কপালে। আলতো ভাবে দু চোখের পাতায় চুমু খেয়ে ঠোঁটে ঠোঁট ডুবালো। ভয়ংকর ভাবে কেঁপে উঠলাম আমি। সারা শরীরে অন্যরকম শিহরণ বয়ে যাচ্ছে।

রাত বাড়ার সাথে সাথে আদ্রর এলোমেলো আচরন বাড়ছে। আমার দেহের প্রতিটি ভাজে ভাজে উনার উষ্ণ স্পর্শ যেন এক অন্যরকম ঝড় তুলে দিচ্ছে। অনেক সময় নিয়ে গভীর ভাবে ঠোঁটে চুমু খেয়ে আদ্র নিজের টি-শার্ট একটানে খুলে ছুঁড়ে মারলো। তারপর আবারো পাগলপ্রায় হয়ে আমার কাছে এসে উনার ঠোঁট দ্বারা আঁকড়ে ধরলো আমার ঠোঁট৷ ক্ষনে ক্ষনে যন্ত্রণাময় সুখে কুঁকড়ে গিয়ে কেঁপে উঠছি আমি৷ আমার দেহে উনার দেওয়া প্রতিটা ভালোবাসাময় স্পর্শের বিপরীতে এলোমেলো সুখে ক্ষতবিক্ষত করে দিচ্ছি উনার পিঠ, ঘাড়, গলা। দুজনের শ্বাস-প্রশ্বাস ধীরে ধীরে বেড়েই চলছে। সারা ঘরময় দুজনের শ্বাস-প্রশ্বাস আর অসহ্য সুখে কাতর গোঙানির কন্ঠস্বর ছাড়া কিছুই শোনা যাচ্ছে না। আদ্র আজ উনার বহু অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে আমাকে সম্পূর্ণ রুপে নিজের করে নিচ্ছে৷ উনার নেশাময় ভালোবাসা দিয়ে ভরিয়ে দিচ্ছে আমার শরীর মন প্রান সবকিছু। দুটি মন দুটি দেহ মিলে শুরু হয় এক অসহ্য যন্ত্রণার সুখময় খেলা।

চলবে~