আকাশেও অল্প নীল পর্ব-১১+১২

0
212

#আকাশেও_অল্প_নীল
#পর্ব:১১
#আর্শিয়া_ইসলাম_উর্মি

২৯,
“এলাকা কি আপনার নামে দলিল করা যে আসা যাবে না?”

রাইমার প্রশ্নে গা ছাড়া ভাবে উত্তর দিলো দিগন্ত। রাইমার মেজাজ খারাপ হয়ে দিগন্তের গা ছাড়া ভাবে। সে তিরিক্ষি মেজাজে বললো,

“এলাকা আমার নামে দলিল করা নয়। কিন্তু দুজন মানুষের মাঝে কথা তো আমাদের ব্যক্তিগত। কথার মাঝে নাক কে গলায়?”

“রাস্তায় ফাটা বাঁশের মতো অন্য একজনের পার্সোনালিটি নিয়ে বিনা মাইকে চিল্লালে তো তার নাক গলাতেই হয়। অস’ভ্য মেয়ে নামটা বিফলে যায়নি।”

দিগন্ত কথাটা বলেই হনহন করে হাঁটা ধরে রাইমা আর শার্লিনকে ছাড়িয়ে। রাইমা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে দিগন্তের যাওয়া দেখছে। শার্লিন রাইমার হাত চেপে ধরে বলে,

“এরকম বোবা হয়ে গেলি কেনো?”

“আরেক দিনও এই লোক আমাদের মহল্লায় এসেছিলো। আজও এসেছে। এই লোকের আত্মীয় স্বজন ঢাকায় আছে বলে তো শুনিনি৷ তবে এখানে আসে কোথায়? আরেকদিন গাড়ি সাথে ছিলো, আজ হেঁটেই যাচ্ছে! কি এমন গুরুত্বপূর্ণ কাজ চিন্তা করছি। উনাকে ফলো করবো আমি, তাতে যা হবার হবে।”

রাইমা উত্তর দিয়েই হনহনিয়ে হাঁটা ধরলো দিগন্তের পিছু পিছু। শার্লিন আহাম্মকের মতো ওদের দুজনের যাওয়া দেখছে। কি হচ্ছে এসব মাথায় ঢুকছেনা তার। যতক্ষণে দেখলো রাইমা কিছু টা দূরে চলে গিয়েছে, সেও ছুট লাগায় রাইমার পিছু। রাইমার পাশাপাশি হতেই সে জিগাসা করে,

“যেভাবে হাঁটছিস, কখন জানি দিগন্ত ভাই থেমে দুজনকে ধমক দেয়। ভয় করছে তো! আস্তে হাঁট মহিলা।”

“আপনারা আমার পিছনে আসছেন কেনো?”

শার্লিনের বলতে দেরি, দিগন্ত দাড়িয়ে পিছন ফিরে কথাটা বলতে দেরি নেই। রাইমা থতমত খেয়ে যায়। এই লোক এতো তাড়াতাড়ি তাদের ধরে ফেলবে বুঝতে পারেনি৷ রাইমা খানিকটা তুতলিয়ে বলে,

“আমরা আপনার পিছনে যাচ্ছিনা। এই রাস্তার শেষে একটা মাঠ আছে। সেখানে যাচ্ছি আমরা। সেই একই পথে আপনিও যাচ্ছেন। সেখানে আমাদের কি দোষ?”

দিগন্ত গম্ভীর চাহনীতে দুই বান্ধবীকে পর্যবেক্ষণ করলো। রাইমা তা দেখে বিরক্তি নিয়ে বললো,

“আপনি আবার আমাদের স্ক্যানিং করছেন?”

৩০,
দিগন্ত উত্তর দিলো না। সে নিজের কাজে চলে যেতে পা বাড়ালো৷ রাইমাও এবার ধীর কদমে দিগন্তের পিছু ছুটলো। শার্লিনের মন টানছেনা যেতে, না যেয়েও উপায় নেই৷ সেজন্য রাইমার এক হাত আকড়ে হাঁটছে সে। প্রায় ৭-৮মিনিট হাঁটার পর দিগন্তও মাঠের এক কিনারায় থামলো, রাইমা আর শার্লিনও দিগন্তের বিপরীত পাশে দাড়ালো। মাঠে বাচ্চারা ছুটছে, খেলছে। বড়ো বড়ো ছেলেরা ক্রিকেট খেলছে। হইচই মুখোর পরিবেশ৷ রাইমা মুক্ত বাতাস পেয়ে দীর্ঘ ভাবে নিঃশ্বাস নিলো চোখ বন্ধ করে। দিগন্ত একবার আড়চোখে রাইমাকে দেখলো। যাক প্রথমবারের মতো কোনো শান্ত মেয়ের প্রতিচ্ছবি দেখলো এই মেয়ের মাঝে। এছাড়া তো যখনই দেখে হয় রাগী নয়তো তেজী। এই মেয়ে যে কি! দিগন্তের মাথায় ঢোকে না। সে চারদিক টা একটু দেখে নিয়ে মাঠ ছাড়িয়ে নতুন তৈরি হওয়া একটি বাড়ির মূল ফটক পেরিয়ে বাড়ির ভেতর ঢুকে গেলো। রাইমা তাকিয়ে দেখলো, কিন্তু একটা বাড়ির ভিতর কি করে ঢুকবে? তাছাড়া বাড়িটাও বা কার? সে শার্লিনের দিকে তাকিয়ে বললো,

“এটা কার বাড়ি রে শালু! অনেকদিন ধরে দেখলাম তৈরি হচ্ছে। এখন দিগন্ত সাহেব এসে ঢুকে পরলো। কার বাসা জানিস কিছু? ”

“আমার জানা নেই। চল গিয়ে দেখি!”

শার্লিনের ভেতর জানার আগ্রহ তৈরি হওয়ায় সে রাইমার হাত ধরে হেঁচকা টান দিয়ে হাটা ধরে। রাইমার জবাবেরও অপেক্ষা করেনা৷ দুজনে মিলে বাড়ির মূল ফটক খোলা থাকায় হনহনিয়ে ঢুকে পরে। কিন্তু বাসায় ঢুকতেই দু’জনেই বিস্ময়ে স্তব্ধ হয়ে চারদিক দেখতে থাকে৷ বাড়ির ভেতরে অনেক বড়ো ফাঁকা জায়গা মতোন, সেখানে অনেকগুলো বাচ্চা ছুটোছুটি করছে। আর দিগন্ত তাদের মাঝে দাড়িয়ে হাসছে। দিগন্তকে ঘিরে কতোগুলো বাচ্চা প্রশ্নের ফোয়ারা বইয়ে দিয়েছে৷ দিগন্ত হেঁসে হেঁসে তাদের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে৷ রাইমা অবাক হয়ে তুতলিয়ে শার্লিনকে জিগাসা করে,

“এই লোক হাসতেও পারে রে শালু! আমি যা দেখছি, তুইও কি তাই দেখছিস?”

“তোর চোখও দুটো, আর আমারও। তাহলে এখানে তুই যা দেখছিস, আমি তার থেকে বেশি কিছু দেখবো নাকি?”

“ধুর, তুই সবসময় মুড স্পয়েল করিস আমার৷”

“এটা আমি ভালো পারি।”

শার্লিন আর রাইমার দুজনে যখন নিজেদের মাঝে কথা বলতে ব্যস্ত, তখনই সামনের দিকে নজর বুলাতেই দেখে দিগন্ত দুজনের সামনে বুকে হাত বেঁধে ভ্রুকুটি করে তাকিয়ে আছে। রাইমা দিগন্তের দিকে তাকিয়ে কয়েকটা ফাঁকা ঢোক গিলে। এই লোক কিছু বলবে নাকি আবার! ধুর কি বলবে! তারা তো কোনো অন্যায় করেনি যে ভয় পাচ্ছে। শুধু অনুমতি ছাড়াই বাসায় ঢুকে পরেছে এই যা। রাইমা আনমনে এসবই ভাবছে।রাইমা আর শার্লিন দুজনেই দিগন্তের চাহনী অনুসরণ করে মুচকি হাসার চেষ্টা করে। দিগন্ত গলার স্বরটা একটু ভারী ভাবে প্রশ্ন করে,

“এই নাকি আমাকে ফলো করছেন না! আবার এখানে কি?”

“আসলে নতুন বাসা দেখে আগ্রহ হলো, কার বাসা জানার জন্য।”

শার্লিন হেঁসে উত্তর দেয়। দিগন্ত উল্টোদিক ফিরে যাওয়ার জন্য পা বাড়িয়ে উত্তর দেয়,

“সাহস ভালো, অতিরিক্ত সাহস ভালো নয়। কারোর ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে ঘাটাঘাটি না করাই বেটার।”

“এখানে ব্যক্তিগত কি দেখলেন?”

রাইমা চেঁচিয়ে প্রশ্ন করে৷ দিগন্তর পা থেমে যায় রাইমার প্রশ্নে। পিছন দিকে তাকিয়ে উত্তরে বলে,

“আমি কি করতে আসছি, এটা জানার জন্যই আপনাদের এখানে আসা। আর আমি কি করতে আসছি, এটা আমার ব্যক্তিগত বিষয়। আপনি মাহাদ ভাইয়ের খালামনির মেয়ে না হলে বা আপনার মা আমার মাথায় মায়ের পরশ না ছোয়ালে আপনাদের এতোক্ষণে হাত পা ভে’ঙে বাইরে ফেলে আসতে বলতাম। আমি আমার ব্যক্তিগত বিষয়ে বাইরের মানুষের নাক গলানো পছন্দ করিনা।”

দিগন্ত কথাটা বলেই বাসার উত্তর দিকে শেষ রুমটায় ঢুকতে দেখে। রাইমা নিস্তেজ হয়ে দাড়িয়ে বাচ্চাদের দেখছে। মানলো তারা ভুল করেছে, তাই বলে এভাবে অপমান করবে!শার্লিন রাইমার উদ্দেশ্যে বলে,

“এখানে এতো বাচ্চা কেনো রাই? কিছু তো বুঝতে পারছিনা।”

“এটা দিগন্ত সাহেবের বানানো এতিমখানা। যতোদূর আমি গেইজ করতে পারলাম, এটাই হবে। ৮দিন পর মাহাদ ভাই আর স্নেহা আপুর বিয়ে, আগামী শুক্রবারে। এই বাচ্চাগুলো অন্য জায়গায় ছিলো, সেখান থেকে এই এতিমখানা তৈরি হয়ে যাওয়ায় হয়তো বাচ্চাদের শিফট করে নিয়েছেন ইনি। আর এই কারণেই হয়তো উনাকে সেইদিন আমাদের এলাকায় দেখেছিলাম। মানুষ টা রাগী, গম্ভীর হলেও বাচ্চাদের সাথে একদম বাচ্চা। দেখে যতোদূর বুঝলাম এটাই মনে হলো।”

৩১,
শার্লিন রাইমার কথার জবাবে জিগাসা করে,

“সবই বুঝলাম, কিন্তু আচমকা বাচ্চাদের এখানে শিফট করলো বুঝলাম না! আগে কোথায় ছিলো বাচ্চাগুলো?”

রাইমা দিগন্তের মায়ের বিষয়ে সবকিছু খুলে বলে শার্লিনের প্রশ্নের উত্তরে। সব শুনে শার্লিন দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। কাঁপা স্বরে বলে,

“জীবন টা এমন না হলেও পারতো।”

“মা মানুষ টাই এমন রে শালু, সন্তানকে গড়ে নিতে পারেন, বিপথেও চালাতে পারেন। মায়ের যখন প্রয়োজন ছিলো উনার, উনি তা পাননি। বদমেজাজি হয়ে গেছেন। মা বিহীন দুনিয়া সবথেকে কঠিন। কঠিন দুনিয়ার সাথে লড়তে গিয়ে বদমেজাজির খোলশ টা ধারণ করেছেন উনি।”

রাইমা মৃদু হেসে দিগন্ত যেই রুমে গিয়েছে, সেদিকে লক্ষ্য করে কথাগুলো বললো। শার্লিন রাইমার কাঁধে হাত রাখে। এক সারি করে শার্লিন গুনে দেখলো ২০টা রুম বানানো হয়েছে। সবগুলো রুমে বাচ্চাদের যা যা প্রয়োজনীয় অনেকগুলো লোক মিলে গুছিয়ে দিচ্ছে। বাচ্চারা অবাক নয়নে রাইমা আর শার্লিনকে দেখছে, কিন্তু কাছে ঘেষছেনা। হয়তো চিনেনা, এজন্য কাছে আসছেনা। রাইমা হাতের ইশারায় একটা বাচ্চা মেয়েকে ডাকলো। মেয়েটা ছোট্ট কদমে তার দিকে আসলে সে হাটমুড়ে বসে নরম সুরে জিগাসা করে,

“তোমার নাম কি পিচ্চি?”

“মিত্যিয়া।”

“ইশ কি কিউট নাম। আমার একটা সাহায্য করতে পারবে?”

“কি সাহায্য?”

“তোমাদের দিগন্ত ভাইয়াকে একটু ডেকে দিবে?”

মিত্যিয়া মেয়েটা জবাব না দিয়ে দৌড়ে গিয়ে কয়েক মুহুর্তের মাঝে দিগন্তের হাত ধরে টেনে এনে রাইমার সামনে দাড় করিয়ে দেয়। রাইমা মেয়েটা চলে যেতেই উঠে দাড়িয়েছিলো। দিগন্ত আসতেই সে দিগন্তকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই বলে,

“আ’ম এক্সট্রিমলি স্যরি৷ আপনার অনুমতি ব্যতিতই এখানে ঢুকে পরেছিলাম। একচুয়ালি জানার আগ্রহ ছিলো অনেক। আগ্রহের বশবর্তী হয়ে আপনার ব্যক্তিগত বিষয়ে নাক গলিয়ে ফেললাম। মাফ করবেন আমায়।”

রাইমা দিগন্তের জবাবের অপেক্ষা করে না। শার্লিনের হাত ধরে বেরিয়ে যায় এতিমখানা থেকে৷ দিগন্ত অবাক নয়নে তাকিয়ে রইলো রাইমার যাওয়ার পানে। আনমনে ভাবলো,

“নারী চরিত্র, বড়ই বিচিত্র। কখন কি মনে হয়, ঠিক নেই। এই চরিত্রকে বুঝতে গেলে জীবন পেরিয়ে যাবে, তবু বোঝা দায়।”

৩২,
মাঝখানে কেটে যায় আরও দুটি দিন। এক সুন্দর রবিবারের সকাল। হ্যাঁ রাইমার কাছে তো সুন্দরই লাগছে। ব্যালকনিতে দাড়িয়ে এক মগ গরম ধোয়া উঠা কফি, সকালের ঠান্ডা পরিবেশ। মনটা সতেজতায় ভরে উঠেছে রাইমার। সকাল সকাল ফজর নামাজ পর মায়ের হাতে হাতে নাস্তা বানাতে সাহায্য করে কফির মগ নিয়ে সে দাড়িয়েছে স্নিগ্ধ সকাল উপভোগ করতে। কফির মগে চুমুক দিচ্ছে, আর ব্যলকনিতে থাকা গোলাপ গাছটায় হাত বুলাচ্ছে রাইমা। কয়েকটা কলি এসেছে গাছে, ফুটে যাবে৷ কয়েকদিনে৷ বসন্তও যে এসে গেছে। প্রকৃতি নানান রঙে মেতে উঠবে দুদিন পর৷ রাইমা কফি খাওয়া শেষ হতেই রুমে আসে ভার্সিটির জন্য তৈরি হবে বলে। তখনই শাহনাজ বেগম রাইমার ঘরে আসেন। রাইমা মাকে দেখে প্রশ্ন করে,

“কিছু বলবে মা?”

শাহনাজ বেগম মেয়ের হাত ধরে খাটে বসিয়ে দেন। রাইমা মায়ের এহেন আচরণে একটু অবাক হয়। কোনো গুরুত্বপূর্ণ কথা থাকলেই তা মা এরকম হাত ধরে কথা বলতে বসেন। রাইমা মায়ের চোখের দিকে তাকিয়ে জিগাসা করে,

“কোনো সিরিয়াস ইস্যু মা?”

“আচ্ছা রাইমা, আমি আর তোমার বাবা যদি তোকে এখন বিয়ে দিতে চাই? তুমি বিয়ে করবে?”

রাইমা অবাক হয় মায়ের প্রশ্ন শুনে। ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায় সে। মায়ের প্রশ্নের পিঠে উত্তর না দিয়ে সে-ই প্রশ্ন করে বসে,

“এটা কেমন কথা মা? তোমরা যদি বিয়ে দিতে চাও, আমার সমস্যা নেই। বিয়ের উপযুক্ত যখন হয়েছি, বিয়ে দিতেই পারো। কিন্তু কোনো পা’গল-ছা”গলকে ধরে এনে বিয়ে দিয়ে দিও না। আমায় বুঝবে অন্তড এমন একজনকে এনে দিও। ঠিক বাবার মতো, বাবা যতোটা তোমায় বুঝে, ঠিক ততোটা বুঝলেই চলবে।”

“পাত্র এমন পেয়েছি রাইমা। কিন্তু তোমার মতামত জানা জরুরী ছিলো।”

“পাত্র টা কে? সন্ধান কে দিলো?”

রাইমা মায়ের কথায় প্রশ্ন করে। মা মেয়ের কথা চলাকালীনই শার্লিন রাইমার রুমে প্রবেশ করে। অসময়ের শার্লিনকে দেখে ফের অবাক হয় রাইমা। শাহনাজ বেগম কথা বললেন না আর। শার্লিনকে দেখে বিধ’স্ত লাগছে একটু। কেমন একটা মনম’রা। শাহনাজ বেগম বুঝলেন শার্লিন দরকারী কোনো কাজেই এসেছে রাইমার কাছে৷ উনি শার্লিনকে দেখে মেয়েকে ছেড়ে উঠে এসে শার্লিনের গালে হাত দিয়ে জিগাসা করেন,

“শার্লিন মা, তোমায় এমন ক্লান্ত লাগছে কেনো? রাতে ঘুম হয়নি?”

“আন্টি এক কাপ কড়া লিকারের চা হবে? আমার মাথা ব্যথা করছে।”

শার্লিন ক্লান্ত ঘুম জড়ানো কণ্ঠে শাহনাজ বেগমকে বললেন। উনি মুচকি হেসে বললেন,

“ফ্রেশ হও। দেখেই বোঝা যাচ্ছে ফ্রেশ হওনি। আমি চা করে আনছি।”

শাহনাজ বেগম চলে গেলেন। রাইমা চট জলদি বিছানা ছেড়ে শার্লিনকে ধরে বিছানায় বসিয়ে দিলো। শার্লিনের তাতে হেলদোল নেই। সে নিস্তব্ধ হয়ে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে আছে। রাইমা চিন্তিত স্বরে প্রশ্ন করে,

“কি হয়েছে তোর! এই অবস্থা কেনো তোর? ঘুমাসনি রাতে?”

“না রে ঘুমাইনি। চিন্তায় ঘুম আসেনি।”

শার্লিন রাইমার কথার উত্তর দিয়েই রাইমাকে হুট করে জড়িয়ে ধরে কেদে দেয়। রাইমা বিস্মিত হয় শার্লিনের এই অবস্থা দেখে। বুঝতে পারে সিরিয়াস কিছু। সে শার্লিনের পিঠে হাত রেখে শার্লিনকে শান্ত করার জন্য বলে,

“কি হয়েছে আমায় বল?”

“আজ আমায় পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে রাই?”

“মানে?”

“মানে যা শুনলি তাই। আমায় পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে। অবশ্যই সেই পাত্রপক্ষ ইফরাদ নয়। আর আমি ইফরাদকে ছাড়া কাউকে বিয়ে করতে পারবোনা রাই।”

“তুই ইফরাদ ভাইয়ের কথা বলিসনি আংকেল কে?”

“বলেছি। বাবা মানবেনা।”

শার্লিনের কান্নার দমক বেড়ে দমক বেড়ে যায়৷ রাইমা ব্যস্ত হয়ে শার্লিনকে থামাতে ফের প্রশ্ন করে,

“কি জন্য মানবেন না আংকেল? কোনো কারণ বলেছেন উনি?”

“বলেছেন তো! অনেক বড়ো কারণ বানিয়ে ফেলেছেন বাবা ছোট্ট একটা বিষয়কে। সেদিন তোকে ডেকে এমনি এমনি কাঁদিনি। বাবা সেদিন গিয়ে আগে পাত্রপক্ষের ঠিকুজি গুস্টি দেখে পছন্দ করে এসেছেন। আজ উনারা এসে আমায় দেখে পছন্দ করলেই বিয়ে। ইফরাদের কথা সাহস করে বললাম, এমন কারণ বললেন না মানার জন্য! আমার রাগে কষ্টে কান্না করে মাথা ব্যথা ধরে গেছে। তুই তো জানিস আমি কাঁদতে পারিনা। কাঁদলে আমার মাথা ব্যথা করে।”

শার্লিন নাক টেনে টেনে কথাগুলো বলে। রাইমা চট করেই সব বুঝে যায় সেদিন শার্লিনের কান্নার কারণ, আর তাড়াতাড়ি তার কাছে যেতে বলার কারণ টাও৷ সেসব পরে ভাবা যাবে, আগে কি কারণে ইফরাদ ভাইকে মানবেন না আংকেল সেটা জানা জরুরী। রাইমা এই ভেবে শার্লিনকে প্রশ্ন করে,

“ইফরাদ ভাইকে মেনে না নেওয়ার কারণটা বলতো!”

চলবে?

#আকাশেও_অল্প_নীল
#পর্বঃ১২
#আর্শিয়া_ইসলাম_উর্মি

৩৩,
ব্রেকফাস্ট সেরে স্নেহার রুমের দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে দিগন্ত। নক করে দরজায়। স্নেহা বিছানায় বসে ফোন দেখছিলো। দিগন্তকে দেখে ফোন রেখে বলে,

“আয় ভেতরে আয়।”

দিগন্ত রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলে,

“তোর সাথে কথা ছিলো আপা। একটু আর্জেন্ট। ফ্রি আছিস?”

“হ্যাঁ, বোস এখানে।”

স্নেহা ইশারা করে তার পাশে বসতে। দিগন্ত স্নেহার পাশে গিয়েই বসে। স্নেহা দু পা ঝুলিয়ে বসে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলে,

“বল কি কথা?”

“বিয়ের আর বাকি আছে চারদিন। কেনাকাটা, আয়োজনের ব্যাপার স্যাপার আছে। আমি তো এতোদিক একা সামলাতে পারবো না। ফুফু আর চাচ্চুকে আসতে তো বলে দিয়েছি। উনারা বুধবার আসতে চেয়েছে। বিয়েটা যেহেতু তোর, বিয়ে নিয়ে তো সব মেয়েরই ছোটোখাটো স্বপ্ন থাকে। তোর স্বপ্ন গুলো যদি বলতি, তো আমি সেই অনুসারে আয়োজন করতাম।”

স্নেহা মুচকি হাসে ভাইয়ের চিন্তা দেখে। মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,

“বড্ড বড় হয়ে গেলি, এতো তাড়াতাড়ি! আমার ছোট্ট ভাইয়ের মাথায় কতো শতো চিন্তা আমায় নিয়ে। সময় কতো দ্রুত চলে যায় তাইনা! একদিন তোকে নিয়ে আমি চিন্তা করতাম, এখন তুই আমায় নিয়ে চিন্তা করিস। তুই বড় হলি কেনো বলতো? সেই ছোট্টটি থাকতি, তোকে আকড়ে থেকে যেতাম নিজের বাড়িতে। কিন্তু ঐ যে হয়েছি মেয়ে, বাবার বাসায় আজীবন থাকার নিয়মটা নেই।”

দিগন্ত বোনের কথাগুলো শুনে একটু দুর্বল হয়ে পরে। বুকের মধ্যে কেমন একটা মোচর দিয়ে উঠে। আর পাঁচটা দিন, এরপর ফজরে কেউ তাকে ঘুম থেকে উঠিয়ে নামাজ পড়তে বলবেনা, নাস্তা বানিয়ে টেবিলে ডাকবেনা। দুপুরে কেউ স্কুলে লাঞ্চ সাজিয়ে নিয়ে কাজের প্রেশার দেখলে বকা দিয়ে খাইয়ে আসবেনা, রাতেও তো কেউ ডিনার সাজিয়ে অপেক্ষা করবেনা। রাতে ঘুম না ধরলে কেউ এসে বলবে না, তোর মন খারাপ! আয় মন ভালো করে দিই! কারোর কোলে মাথাও রাখা যাবেনা। পুরো একটা বাসা, সে একা থাকবে। ইশ কি নিদারুণ যন্ত্র’ণা। এই যন্ত্র’ণা মেনে নেওয়া যায়! তার একাকিত্বের জীবনে মেঘ শেষে বর্ষণ হয়েও কেউ নামবে না। আচ্ছা যেই বোন মায়ের পরের স্থানে থাকে, তাকে কেনো মায়ের মতো সাথে রাখা যায় না! দিগন্ত আর ভাবতে পারলো না। বোনকে জড়িয়ে বাচ্চাদের মতো হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো। স্নেহা অবাক হলো দিগন্তকে কাঁদতে দেখে। সেই ছোট্টবেলায় মা যখন ছেড়ে গিয়েছিলো! মায়ের আঁচল টেনে কেঁদে মাকে বলেছিলো, যেয়ো না মা। এরপরও যখন মা চলে গেলো, দিগন্ত সেদিন থেকেই কেমন একটা গম্ভীর হয়ে থাকতো! বাকি ১০টা সাধারণ বাচ্চার মতো হাসতো না, খেলতো না। চুপচাপ থাকতো, কাঁদতোও না। কখনও অসুস্থ হলে যেখানে বাচ্চা ছেলেরা কেঁদে মা’কে খুজে, দিগন্ত তখনও কাদতো না। হয়তো সে বুঝে গিয়েছিলো, কাদলেও আর মা আসবেনা। সেই ছেলে আজ কাঁদছে! মানতে একটু কষ্টই হচ্ছে স্নেহার। স্নেহা ছোটো থেকে বড়ো হয়েছে বাবার তাদের দুই ভাইবোনকে নিয়ে করা লড়াই দেখে আর ভাইকে আদরে আকড়ে রাখার লড়া’ই করে। বয়সটা তখন কম থাকলেও কষ্টের সময় গুলো মানুষ বেশি মনে রাখে, সেই নিয়মের স্রোতে স্নেহারও প্রতিটা কষ্টের জার্নির কথা পুরোদস্তুর মনে না থাকলেও একেবারেও সে ভুলে যায়নি। দিগন্তও হয়তো ভুলেনি। সেই ভাইকে একা রেখে চলে যেতে হবে! হয়তো সেজন্য কাঁদছে। তারও তো মনের মধ্যিখানে অসহনীয় কষ্ট হচ্ছে। স্নেহা নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না। ভাইকে ধরে নিজেও কেঁদে ফেলে। দিগন্ত নিরব হয়ে এসেছে। হয়তো ছেলেদের এভাবে কান্না করা সাজে না বলে চুপ হয়ে গেলো। তবে চোখের জল গড়িয়ে স্নেহার কাঁধ ভিজিয়ে দিচ্ছে, এটা স্নেহা উপলব্ধি করতে পারলো। ভাইকে একটু পর ছাড়িয়ে চোখের জল মুছে দিলো। কপালে চুমু খেয়ে বললো,

“পাগল ছেলে। এভাবে কেউ কাঁদে! আমি তো একেবারে ম”রে যাচ্ছি না। মনে পরলেই গিয়ে দেখে আসবি।”

স্নেহার মুখে মৃ”ত্যুর কথা শুনে চমকে উঠে দিগন্ত। বোনের মুখ হাত দিয়ে চেপে ধরে বলে,

“একদম ম”রণের কথা বলবি না আপা। আমি বাঁচবো না আর।”

৩৪,
স্নেহা বিস্মিত হলো দিগন্তের কথায়। তার গম্ভীর, বদ মেজাজি ভাইয়ের মাঝেও যে বাচ্চা স্বভাবের সত্ত্বাটা রয়ে গেছে বুঝতে পারে। শুধু অনুভূতিরা মৃ’ত প্রায়। জীবিত করার চেষ্টার অভাবে দিগন্তের জীবনে চঞ্চলতা নেই৷ স্নেহা আদুরে স্বরে ভাইকে জবাব দেয়,

“ওটা তো শুধু কথার কথা। এতো সিরিয়াস হচ্ছিস কেনো?”

“বাবা মা”রা যাবার পর তুই আমার দুনিয়া আপা। তোর কিছু হলে আমার দুনিয়া উলোটপালোট হয়ে যাবে। আমার বড্ড কষ্ট হচ্ছে আপা। পুরুষ মানুষ বলে দেখ কাঁদতে গিয়েও কাঁদতে পারলাম না। আমাদের দুই ভাইবোনের জীবনটা এমন হলো কেনো আপা! বাবা-মা, তুই, আমি সুন্দর একট পরিবার হতে পারতো তো আমাদের! হলে কি খুব ক্ষতি হতো আপা! উপরওয়ালা মা’কে দূরে নিয়ে গেলেন৷ বাবাকে একেবারে নিয়ে নিলেন, তোকেও আমার থেকে দূরে যেতে দিতে হচ্ছে। আমার জীবনটা এমন এলেমেলো কেনো আপা! আমি কাউকে ভালোওবাসতে পারলাম না। কোনো মেয়েকে বিশ্বাস করতে পারিনা তুই ছাড়া। মনে হয় আমার মায়ের মতো, বাবা যেমন বি’পদে পরেছিলো বলে মা ছেড়ে গিয়েছিলো, আমারও তেমন কিছু হলে ছেড়ে যাবে। ভয় লাগে আপা বড্ড ভয় লাগে। কষ্ট হচ্ছে আপা, আমি তোকে ছাড়া থাকবো কি করে?”

দিগন্তের বাচ্চাদের মতো আচরণ দেখে স্নেহা হতবিহ্বল হয়ে যায়। এই কোন দিগন্তকে দেখছে সে! যে সবসময় নিজেকে গুছিয়ে নেয়, সেই দিগন্ত আজ মিসিং। স্নেহা ভাইয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,

“মেয়েরা জানিস তো জীবনে এমন একজনকে চায়, যে তার বাবা আর ভাইয়ের মতো তাকে আগলে রাখবে। আর ছেলেরাও তেমনই, নিজের মা আর বোনের মতো একজন হলেই তাদের আর কিছু লাগবেনা। নিজেদের দিক থেকে সম্পর্ক আগলে রাখার চেষ্টা আজীবন করে যায়। আমাদের জীবনটা যেমন গড়মিলে, কোন স্রোত কোথায় গিয়ে আছড়ে পরছে ঠিক নেই, তেমনই স্রোতে ভাঁটা পরার জন্য হলেও কেউ না কেউ ঠিকই আছে। শুধু সময়ের অপেক্ষা, সে এসে পরবে। আমার জীবনে যেমন মাহাদ আসলো। হয়তো তোর জীবনেও কারোর আসার সময় হয়েছে। এখন তোর আপত্তি না থাকলে আমাদের দুই ভাইবোনের একদিনে বিয়েটা হতে পারে। তুই বউ আনবি ঘরে, আমি বউ হবো অন্য কারোর ঘরে।”

দিগন্ত বোনের শেষের কথার আগামাথা বুঝতে পারেনা। অবাক হয়ে প্রশ্ন করে,

“বউ আনবো মানে?”

“আমি তোর জন্য মেয়ে ঠিক করেছি, মেয়ের মায়ের সাথে কথাও হয়েছে। তুই হ্যাঁ বললেই, বিয়েটা হয়ে যাবে। বিয়ে নিয়ে তেমন স্বপ্ন নেই আমার। ছোটোখাটো আয়োজন, ঘরের কিছু মানুষ, আর এতিমখানার বাচ্চাদের খাওয়াবি। এইটুকু হলেই চলবে। বিয়ের নামে বাড়তি টাকা নষ্ট করার প্রয়োজন নেই। মাহাদেরও এক কথা। বড়ো করে আয়োজন করবি, মানুষ এসে সেই বিয়ে বাড়ির নামে কুট কাচালি করার জায়গা পাবে। দরকার নেই সেসবের। যেহেতু ছোটো পরিসরে আয়োজন,এজন্য তুই মতামত দিলেই বিয়েটা হয়ে যাবে। তেমন সমস্যা হবেনা।”

“মেয়েটা কে?”

স্নেহার কথার শেষে দিগন্ত প্রশ্ন করে। স্নেহা জবাব দেয়,

“রাইমা, মাহাদের খালামনির মেয়ে। দেখেছিলি তো তুই, মেয়েটিকে আমার বেশ ভালো লাগে। মাহাদের সাথে সম্পর্ক হওয়ার পর থেকেই ওর গল্প শুনতাম মাহাদের মুখে। এরপর ৩বছর যেতেই দেখা হয়েছিলো আমাদের। তখন থেকেই দেখে আসছি ওকে। মাহাদের মুখে ওর গল্প শুনতে শুনতে একসময় এমন লাগতো, মনে হতো মাহাদ আমায় না ওকে ভালোবাসে। হিংসে হতো ওকে। পরে বুঝতে পারি মেয়েটা কত্তোটা ভালো। তুই শুধু একবার হ্যাঁ বল ভাই! তোর কাছে আমার একটাই শেষ চাওয়া। আর কিছু চাইবোনা। আমার কথাটা রাখ ভাই প্লিজ!”

মাহাদ স্নেহার মুখে রাইমার সম্পর্কে কথা শুনে বিরক্তিতে ভ্রু কুচকায়। থমথমে স্বরে বলে,

“দুনিয়ায় আর কোনো মেয়ে পেলি না আপা! আর কোনো কিছু তোর শেষ চাওয়া হলো না! সব বাদ দিয়ে এটা তোর শেষ চাওয়া?”

“কেনো রাইমার মধ্যে সমস্যা কি পেলি তুই? দেখতেও বেশ ভালো, ব্যবহারও ভালো। আমায় যদি বড়ো বোন হিসেবে সম্মান দিয়ে থাকিস, তো আমার এই কথাই শেষ কথা বিয়ে হবে। ব্যস, আমি আর কোনো কথা শুনতে চাইনা।”

স্নেহার কথায় দিগন্ত বিরবির করে বলে,

“ব্যবহার ভালো না ছাই।”

স্নেহা তা দেখে বলে,

“কিছু বললি?”

“না, তোর ভালো লাগলে আমারও ভালো লাগবে আই উইশ। দেখ মেয়ে রাজী থাকলে আমার সমস্যা নেই।”

দিগন্ত কথাটা বলেই উঠে চলে যায়। স্নেহা খুশিতে মাহাদের কাছে কল দেয়। দিগন্ত রুম ছেড়ে বেরিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। অস্ফুটস্বরে বলে,

“গড, মেয়েটা যেনো রাজী না হয়। যে ধানী লঙ্কা। প্রতিদিন ঝাঁজে মে”রে ফেলবে আমায়। বোনের চাওয়ার দিকে তাকিয়ে সম্মান দিয়ে হ্যাঁ তো বললাম। বাকি টা তুমি সামলে নেও খোদা।”

৩৫,
সময়টা বিকেলবেলা। শার্লিনদের বাসায় শার্লিনের রুমের বিছানায় বসে আছে রাইমা আর শার্লিন। একটুপরই পাত্রপক্ষ আসবে, সেই তোড়জোড় চলছে ড্রইং রুমে। সকালবেলায় অনেক বুঝিয়ে শার্লিনের কান্না থামিয়ে শার্লিনকে বাসায় রেখে গিয়েছিলো রাইমা। দুপুরের খাওয়া না হতেই আবার শার্লিনের কল পেয়ে আবার এসেছে ওর কাছে। দু বান্ধবীর মাঝে নিরবতা ভেঙে শার্লিন বললো,

“বিয়েটা ভাঙবো কি করে রাই? আমার ভালো লাগছেনা এরকম জোকারের মতো সেজেগুজে অন্য একটা ছেলের জন্য বসে থাকতে। ইফরাদ তো সব শুনে বলেই দিয়েছে অন্য ছেলের বউ হওয়ার উদ্দেশ্যে যেনো কারোর সামনে না যাই। কিছু একটা কর! আমার বিরক্ত লাগছে এবার।”

“যা করার আমিই করবো। এতো ভেবেচিন্তে দেখলাম, তুই আর তোর ইফরাদ, দুই বলদ আর বলদীরে দিয়ে কিচ্ছু হবে না। খ”বিশের দল, ভালোবাসতে পারে। সাহস করে পরিবার মানিয়ে বিয়ে করতে পারেনা। চুলের ভালোবাসা তোদের।”

“চু”ল না বলে সরাসরি বা* বললেও তো পারিস। চুলের হিন্দিই তো ওটা।”

রাইমা শার্লিনের আহাম্মক কথাবার্তা দেখে কটমটিয়ে তাকায় শার্লিনের দিকে। সিরিয়াস মুহুর্তেও এই মেয়ের নির্লজ্জ কথাবার্তা থামবেনা। শার্লিন মুখটা কাচুমাচু করে বলে,

“দুইটা মেয়ের মাঝে এর থেকেও কতো ভয়া”নক কথাবার্তা হতে পারে তোর কল্পনাও নেই। আমি তবু ভদ্র কথাই বলেছি।”

“তা আপনার কল্পনা কোথা থেকে হলো!”

“ফেসবুকে একটা মেয়ের সাথে পরিচয়, সে এমন সব কথা বলে, লজ্জায় আমি ব্লক করে দিয়েছিলাম।”

“তুই পাগল, যতোসব পাগল তোর কপালে জুটে।”

রাইমা কথাটা বলেই হনহনিয়ে শার্লিনের রুম থেকে বেরিয়ে যায়। শার্লিন পিছনে ছুটতে ছুটতে জিগাসা করে,

“কোথায় যাস আমায় রেখে।”

“তোমার বিয়ে ভাঙতে। দয়া করে একটু ধৈর্য ধরে চুপ করে বসে থাকো নিজের রুমে। নয়তো সিরিয়াস মুহুর্তে তোমার উল্টাপাল্টা কথা সব তলিয়ে দিবে।”

শার্লিন থেমে যায় রাইমার কথায়। নিজের জায়গায় ফিরে এসে চুপটি করে বসে। ভেতরে ভেতরে টেনশন কাজ করতে শুরু করে। কি যে হবে! উপরওয়ালা জানেন। শার্লিন উপর দিকে তাকিয়ে বলে,

“ওহ খোদা, এবারের মতো বাচিয়ে নেও। প্রমিস আমি ভালো হয়ে যাবো।”

কথাটা বলেই শার্লিন আবার জিভে কাম”ড় কাটে। নিজের মাথায় টোকা মে”রে বলে,

“আমি ভালো হবো কি! খারাপ ছিলাম কবে! ভালোই তো ছিলাম, আছি, থাকবো। ধুর কি সব বলছি। পাগ’ল হয়ে গেলাম এই বিয়ের চক্করে। এজন্য মানুষ বলে সিঙ্গেল লাইফ ইজ ঝাকানাকা লাইফ। বিয়েটা শুধু ভাঙুক, কাউকেই বিয়ে করবোনা ধুর। জীবনটা ত্যানা ত্যানা করে দিলো এই বিয়ে নামক শব্দটা।”

চলবে?

ভুলত্রুটি মার্জনীয়। আসসালামু আলাইকুম