#আকাশেও_অল্প_নীল
#পর্বঃ১৩
#আর্শিয়া_ইসলাম_উর্মি
৩৬,
রাইমাদের বাসার ড্রইং রুমে বসে আছে স্নেহা, মাহাদ, দিগন্ত। সাথে আছে রাইমার বাবা আজাদ সাহেব। আরফান ড্রইং রুমের এক কোণায় টুল পেতে বসেছে। মাহাদের আনা চকলেটের বক্স থেকে চকলেট সাবার করতে ব্যস্ত সে। শাহনাজ বেগম ট্রে তে করে নাস্তা, ফলমূল সাজিয়ে এনে তাদের সামনে সেন্টার টেবিলো সাজিয়ে রাখলেন। এরপর স্বামীর পাশেই বসে পরলেন৷ এতোক্ষণ ওরা সব টুকটাক ভালোমন্দ খোজ খবর নিয়ে গল্প করছিলো। এছাড়াও স্নেহা আর দিগন্ত প্রথম বার আসায় আজাদ সাহেবের সাথে পরিচিত হলো ওরা। শাহনাজ বেগম রান্নাবান্না করতে উদ্দ্যত হতে আজাদ সাহেবকে বাজারে পাঠাতে চেয়েছিলো, কিন্তু স্নেহা বুঝতে পেরে তাদের থামিয়ে দেয়। জানান দেয়, জরুরী কথা আছে। সকালবেলায় ভাইয়ের মতামত পেয়ে সে মাহাদের সাথে কথা বলে বিকেলেই এসেছে বিয়ের কথাবার্তা আগাতে। রাইমাকে তো আগে থেকেই দেখে আসছে। নতুন করে দেখার আর কিছু বাকি নেই। তাই বিয়ের মূলকথা সারতেই তাদের আগমন। শাহনাজ বেগম সবার দিকে নাস্তা এগিয়ে দিয়ে বললেন,
“বসে আছো কেনো? একটু নাস্তা টেস্ট করো।”
স্নেহা উত্তরে বললো,
“জ্বি খাচ্ছি আন্টি।”
“আমায় দেখে আবার লজ্জা পেয়ো না মা৷ প্রথম বার দেখলে বলে যে আংকেলের সামনে লজ্জায় খাবেনা, এমনটা যেনো না হয়৷ বাবা না হলেও বাবার মতোই তো। লজ্জা না পেয়ে খেয়ে নাও। তোমার আন্টির হাতের রান্না বেশ ভালো।”
আজাদ সাহেব স্নেহার অসস্তি ভাব বুঝতে পেরে হেসে কথাটা বললেন। দিগন্ত উনার কথার উত্তরে মুচকি বললো,
“লজ্জা কেনো পাবো আংকেল! পর মানুষের বাসায় তো আসিনি। বাবা মায়ের কাছেই এসেছি।”
“এই তো বাবা বুঝেছে।”
দিগন্ত আজাদ সাহেবের এক পাশেই ছিলো। উনি দিগন্তের পিঠে চাপড় দিয়ে কথাটা বললেন। স্নেহা আর মাহাদ দুজন দুমাথার সিঙ্গেল সোফায় বসা। সবাই একটু নাস্তা মুখে দেয়। মাহাদ নাস্তা খেতে খেতে নিরবতা ভেঙে বললো,
“স্নেহা, এবার তো মূল ঘটনা বলো। আমায় জোড় করে এই অবেলায় এখানে আসলে। যেখানে বিয়ের শপিং করার কথা। সেখানে আন্টির কাছে টেনে আনলে৷”
“হ্যাঁ মা, কি বলবে বলো এবার। বাজারেও যেতে দিলে না কথাবার্তা বলাী জন্য।”
স্নেহা একটু অসস্তি নিয়ে ভয় নিয়ে আজাদ সাহেবের দিকে তাকায়। আজাদ সাহেব শাহনাজ বেগমের কাছে দিগন্ত আর রাইমার বিয়ে সম্পর্কে আভাস পেয়েছিলেন। তাই স্নেহার ভয় কা”টাতে কথাটা বললেন। স্নেহা কণ্ঠ খাদে নামিয়ে শ্রদ্ধা সহিত বললো,
“আমি আন্টির কাছে আগেও কথাটা একবার বলেছিলাম আংকেল। এবার আপনার কাছে আবদার করে আপনার রাজকন্যাকে আমার ভাইয়ের জন্য চাইতে এসেছি। আপনি যদি সম্মতি দিতেন, তবে কথাবার্তা আগাতে পারতাম।”
“তা না হয় বুঝলাম মামনি। কিন্তু আমার ছোট্ট রাজকন্যা রাজী কিনা! তার মতামত তো আমাদের জানা হয়নি মা! কি করে কি সিদ্ধান্ত নিবো! বুঝতে পারছিনা।”
আজাদ সাহেব উত্তর দিলেন। শাহনাজ বেগম বললেন,
“যদিও রাইমা আমাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই বিয়ে করতে চেয়েছে। কিন্তু তবুও পাত্র কে! পাত্রর পরিচয় জেনে কি মতামত হবে! এটা বলেনি।”
“তা তোমার ঢঙী কই আন্টি! ডাকো, আমাদের সামনেই যা বলার বলুক। আসার পর থেকে একবারও তার ছায়া দেখলাম না। বাসায় নেই নাকি!”
মাহাদ বললো কথাটা। দিগন্ত মনে মনে ভাবছে, রাইমা যেনো প্রতিবারের ন্যায় ঝগড়া করে বিয়েটা ভেঙে দেয়। অন্য যেকোনো মেয়েকে বিয়ে করতে সে রাজী! তবে শান্ত হতে হবে। এই ধানী লঙ্কার ঝাঁজ প্রতিটা দিন সহ্য করা অসম্ভব।
৩৭,
মাহাদের কথার উত্তরে শাহনাজ বেগম বললেন,
“রাইমা আসলেই বাসায় নেই। নয়তো স্নেহা এসেছে জেনেও আড়ালে থাকতো কি?”
“কোথায় গেছেন উনি?”
দিগন্ত প্রশ্ন করে। শাহনাজ বেগম বললেন,
“শার্লিনের বাসায়। ওকেও বিয়ে দিতে উঠেপরে লেগেছে ওর বাবা মা। পাত্রপক্ষ আজ দেখতে আসবে। তাই ওখানে গিয়েছে শার্লিন ডাকায়।”
“যাক বাবা, এজন্য বাড়িটা নিরব। নয়তো দুই পাগ”ল এখানে থাকলে আমি আধপাগ”ল হয়ে যেতাম।”
দিগন্ত বিরবির করে বললো কথাটা। মাথা নিচু করে থাকায় বিষয়টা কারোরই নজরে পরলো না। আজাদ সাহেব বললেন,
“দেখো স্নেহা মা। তোমার ভাইকে অপছন্দ করার মতো কোনো কারণ দেখছিনা। শাহনাজের মুখে যা শুনেছি আমার মেয়ে সুখে থাকবে। আর প্রতিটা বাবাই চায় তার মেয়ে সুখে থাকুক। আর বিয়েটা যেহেতু আমার মেয়ে করবে, তাই ওর থেকে হ্যাঁ বা না মতামত নিয়েই তো কথা আগানো উচিত বলো! তাছাড়া ও যদি রাজীও হয়! একদিনে দুই বিয়ে! বুষয়টা সামলানো একটু কঠিন হবে মা। তাছাড়া আমার মেয়ে, আমাদের বংশের বড়ো মেয়ে। ওর বিয়ে ওর দাদা, দাদী, চাচা, ফুফুর স্বপ্ন আছে আনন্দ করার ইচ্ছে আছে। বিয়ে উপলক্ষে আমাদের তিন ভাইবোনের একত্রিত হওয়ারও একটু ইচ্ছে আছে। আমার একটা ভাই আর একটা বোনই, তাদের আদরের ভাতিজীকে তারা আনন্দ, হাসিতে শ্বশুর বাড়িতে বিদায় দিবে! এই আশায় আছে, তাদের আশাটা নষ্ট করি কি করে বলো মা? যদি রাইমা রাজী হয়, তোমাদের কাছে অনুরোধ ছোট্ট করে হলেও একটু অনুষ্ঠান করতেই হবে। আর বিয়েটা সম্পূর্ণ আমাদের গ্রামেই হতে হবে। তোমরা গ্রামে যাবে কিনা তোমাদের সিদ্ধান্ত। চাইলে তোমরা তোমাদের গ্রাম থেকে বরযাত্রী নিয়ে রওনা হয়ে বউ নিয়ে আসতে পারবে। তোমার আর মাহাদের বিয়েটা হওয়ার দেড় বা দুমাস পর দিগন্ত আর রাইমার বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করা যায় তবে । যদি বিয়ে নিয়ে কথা আগাতে চাও, তবে আমার মতামত এটাই।”
উপস্থিত সকলে আজাদ সাহেবের কথা মনোযোগ সহকারে শুনলো। স্নেহা সব কথার উত্তরে বললো,
“আমার আপত্তি নেই আংকেল। তবে এবার রাইমাকে মানানোর বিষয়টা আপনাদের উপর ন্যস্ত করলাম আমি।”
“তবে আমার এই বিষয়ে একটু আপত্তি আছে আপা।”
দিগন্ত কথার মাঝখানে কথাটা বলে উঠে। মাহাদ বিস্মিত কণ্ঠে জিগাসা করে,
“কি আপত্তি দিগন্ত?”
“হ্যাঁ বাবা, কি আপত্তি বলো!”
শাহনাজ বেগম বললেন কথাটা। দিগন্ত ইতস্তত কণ্ঠে বললো,
“বিয়ের বিষয়ে রাইমা উনাকে কোনো প্রেশার দিবেন না। উনি স্ব-ইচ্ছেয় বিয়েতে রাজী হলে বিয়েটা হবে। নতুবা নয়। আপনারা কেউ জোড় করে রাজী করাবেন না। আর উনার মতামতটা আমার সামনে বললেই আমি একটু নিশ্চিত হতাম। আপনারা কোনো ভাবে উনাকে ডেকে পাঠাতে পারবেন?”
সবাই সস্তির নিশ্বাস ফেললো। দিগন্ত আবার না বেঁকে বসে! কি না কি ভেবে ফেলেছিলো স্নেহা। আজাদ সাহেব দূরে বসে চকলেট খাওয়ায় ব্যস্ত আরফানকে ডাকলেন। আরফান চকলেট খাওয়া বাদ দিয়ে বাবার কাছে এসে জিগাসা করলো,
“কি বাবা?”
“শার্লিনের বাসায় গিয়ে তোমার আপুকে ডেকে নিয়ে আসো তো। বলবে আব্বু ডাকছে, জরুরী দরকার। তাড়াতাড়ি যেনো আসে।”
“আচ্ছা বাবা।”
আরফান ছুট লাগায় শার্লিনদের বাসার উদ্দেশ্যে। সবাই রাইমার আসার অপেক্ষায় মশগুল হয়ে পরে অন্যান্য বিষয় নিয়ে গল্প করতে।
৩৮,
“আংকেল একটু আপনার রুমে আসবেন! একটু দরকার ছিলো।”
ড্রইং রুমে দাড়িয়ে পাত্রপক্ষ কতোদূর এই খোজ নিচ্ছলেন শার্লিনের বাবা শাহীন সাহেব। শার্লিনের মা শিরিনা বেগম অতিথি আসা উপলক্ষে রানৃনাবানৃনা করে ডাইনিং টেবিলে ভরিয়ে ফেলেছেন। আর শার্লিনের বড়ো ভাই মেসবাহ মায়ের হাতে হাতে সাহায্য করছে। মায়ের হাতে হাতে কাজ করে এগিয়ে দিতে মেসবাহ একটু বেশিই ভালোবাসে। ছেলেরা মায়ের হাতে হাতে বা বিয়ের পর বউয়ের হাতে হাতে কাজ করে এগিয়ে দিলে মানুষ দেখলে বলে ঘরকুনো মা ভক্ত বা বউভক্ত ছেলে। কিন্তু এই টুকটাক কাজ করে এগিয়ে দিতে পারলে যে কতোটা শান্তি লাগে তা একমাত্র সেই ছেলেরাই বুঝবে, যারা এরকম করে। রাইমা একঝলক মা আর ছেলের কাজ করা দেখে নেয়। মেসবাহর এই গুণটা তার কাছে বরাবরের মতো ভালোই লাগে। কিন্তু সামান্য পাত্রপক্ষ আসায় এতো আয়োজন কে করে? তাটা কি পরিচিত কেউ নাকি! নতুবা এতো আয়োজন কেনো? রািমা আনমনে দাড়িয়ে এটাই চিন্তা করছে। শাহীন সাহেবের কথা ফুরোতেই তিনি রাইমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলেন,
“কিছু বলছিলে মা? কথা বলছিলাম দেখলেই৷ খেয়াল করিনি সেভাবে।”
“আপনি একটু আমার সাথে আপনার রুমে যেতে পারবেন আংকেল?”
“কোনো বি’পদ হয়েছে মা? তোমায় এতো হাইপার লাগছে কেনো?”
“কিছু হয়নি আংকেল। আপনি শুধু একটু রুমে চলুন।”
শাহীন সাহেব কথা বাড়ালেন না। রুমের দিকে ইশারা করে বললেন,
“চলো মা।”
রাইমা উনার সাথে রুমে এসে হাত ধরে বসিয়ে দেয় বিছানায়। এরপর নিজেও মুখোমুখি বসে বলে,
“আমায় তো আপনার মেয়ের মতোই দেখেন তাইনা আংকেল?”
শাহীন সাহেব অবাক হোন আচমকা রাইমার এমন প্রশ্নে। তিনি মাথা হেলিয়ে জবাব দেন,
“আমি তোমায় আগেও বলেছি মা, তুমি আর শার্লিন দুজনের কাউকে আমি আলাদা চোখে দেখিনা।”
“দেখুন আংকেল, আপনি আপনার মেয়ের সুখের আশায় এমনি এক জায়গায় আপনার মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার পর আপনার মেয়ে যদি ভালোই না থাকে, সুখেই না থাকে! তবে এতো আয়োজন করে দুটো মানুষকে এক করে বিয়ে দিয়ে একটা সম্পর্কে জড়িয়ে দিয়ে লাভটা কি বলুন? আপনার মেয়ে তো তাকে ভালোই বাসতে পারবেনা। আর যেখানে ভালোবাসা থাকবপনা, সেখানপ আপনার মেয়ে কি করে ভালো থাকবে? একবার তো বোঝার চেষ্টা করুন। বিয়ে দিলেই যদি সবাই ভালো থাকতো! সুখে থাকতো! তবে চারদিকে এতো বিচ্ছেদের বিচরণ থাকতো না আংকেল। ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড, প্লিজ। আমায় তো আপনি আপনার আরেক মেয়ে বলে মানেন, তবে আপনার মেয়ের কথা আপনি রাখবেন না?”
৩৯,
সাহস করে শাহীন সাহেবকে কথাগুলো বললো রাইমা। শাহীন সাহেব মুখটা গম্ভীর করে ফেলেন। রাইমা ভীতু চাহনীতে তাকিয়ে আছে৷ উত্তর টা যে কি হবে কে জানে? তখনই শিরিনা বেগম রুমে এসে রাইমার দিকে তাকিয়ে বলেন,
“রাইমা মা, তোমায় আরফান ডাকতে এসেছে। ড্রইং রুমে বসে আছে। বলছে তোমার বাবা নাকি খুব জরুরী দরকারে তোমায় বাসায় যেতে বলেছে।”
“ওহ খোদা, এক কাজের মাঝে আবার আরেক প্যাঁচ।”
রাইমা বিরক্ত হয়ে মনে মনে ভাবে কথাটা। রাইমা নিজের বিরক্তি চেপে বলে,
“ওকে দুমিনিট বসতে বলেন আন্টি। আমি আসতেছি।”
“আচ্ছা, তবে তোমরা কি খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু আলোচনা করছো নাকি?”
শিরিনা বেগম শাহীন সাহেব আর রাইমাকে একত্রিত বসে থাকতে দেখে প্রশ্নটা করলেন। শাহীন সাহেব গম্ভীরমুখেই বললেন,
“আহ শিরিনা! তোমার সব বিষয়ে এতো প্রশ্ন। যাও তো নিজের কাজ করো।”
শিরিনা বেগম স্বামীর কথায় চলে যায়৷ তিনি চলে যেতেই রাইমা ব্যস্ত হয়ে ফের প্রশ্ন করে,
“বলেন না আংকেল! আপনার মতামত কি? শার্লিন তো ইফরাদ ভাইকে ভালোবাসে আপনাদের বলেও দিয়েছে মেয়েটা। তবুও জোড় করে অন্য জায়গায় বিয়ে দিচ্ছেন! কারণ কি আংকেল?”
“দেখো রাইমা মা, ইফরাদ ছেলেটাকে নিয়ে আমার সমস্যা নেই। সমস্যা এখানে, ওরা আমাদের থেকে একটু বেশিই উচ্চবিত্ত। আমি খোজ নিয়ে দেখেছিলাম। যখন শার্লিন বললো ছেলেটার কথা, আমি সব জেনে নিয়ে খোজ নিয়েছিলাম। সব জেনেশুনেই আমি পাত্রপক্ষকে আসতে বলেছি।আর পাত্রপক্ষ আমার অফিস কলিগ। আর আমি তাদের কথা দিয়ে ফেলেছি। কথার বরখেলাপ করি কি করে?”
“আংকেল আপনার কথা দেওয়ার থেকেও জরুরী আপনার মেয়ের জীবন৷ কোনো কথার মূল্য শার্লিনের জীবনের থেকে জরুরী নয়। আর ইফরাদ ভাই উচ্চবিত্ত এটায় সমস্যা কি আংকেল! সব বাবা তো চায় তার মেয়ে ভালো সংসারে ভালো অবস্থা সম্পন্ন জায়গায় বিয়ে হোক। আপনি উল্টোটা চাচ্ছেন। আমার মাথায় ঢুকছেনা আংকেল।”
“দেখো মা, মেয়ের শ্বশুর বাড়ি যদি তার বাবার বাড়ি থেকে একটু উচ্চবিত্ত হয়, সেখানে গেলে এমন আচরণ করা হয়, যেনো মেয়েকে ফাঁকি দিয়ে পাঠিয়েছি। মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার বদলে মনে হয় বিক্রি করে দিয়েছি। কিছু দিতে চাইলে আমার মেয়েকে বা মেয়ে জামাইকে, তাদের সাধ্যের মাঝে দিতে পারবোনা। এটা নিয়েও সমস্যা হবে। আমি চাইনা আমার মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে আমাদের সম্মান টা এরকম নিচু অবস্থানে থাকুক।”
“সবাই এক হয়না আংকেল। আমি চিনি ইফরাদ ভাইকে, তার পরিবারকে। আমি কথা দিচ্ছি আংকেল, আপনাদের সাথে এমন কিছু কখনও হবেনা। এটার দায় দায়িত্ব আমি নিলাম।”
“সে না হয় বুঝলাম মা, কিন্তু ইফরাদ ছেলেটার পরিবার! তারা কি মানবে? আমাদের অবস্থা দেখে মেনে নিতে পারবে?”
“সেটাও আমি দেখবো আংকেল। শুধু আমায় ভরসা করে আপনি বিয়েটা ভেঙে দেন। উপরওয়ালা সহায় থাকলে আপনার মেয়ে ইফরাদ ভাইয়ের সাথে ভালো থাকবে আংকেল। আই প্রমিজ।”
“আচ্ছা আজ অন্তত দেখে যাক। এরপর না হয় কোনো এক বাহানায় আমি বিয়ে ভেঙে দিবো মা। তোমার বান্ধবীকে কোনো রকম দুষ্টমি বা বিয়ে ভাঙতে উল্টাপাল্টা কাজ করতে বারণ করে যাও। তোমার বাবা ডাকছেন তোমায়।”
“জ্বি আংকেল, আমি এখুনি বলে যাচ্ছি।”
রাইমা হাসিমুখে শেষের কথাটুকু বলে। অবশেষে শার্লিনের বাবাকে মানাতে পেরেছে সে। সে খুশিমনে চলে যেতে উঠে দাড়ায়। দু পা বাড়াতেই শাহীন সাহেব কিছু একটা ভেবে রাইমাকে ডাক দেন। রাইমা পিছন ফিরে ঠোটে হাসি ফুটিয়েই জিগাসা করে,
“কিছু বলবেন আংকেল?”
“আমি ধুমধাম করে, হাসিমুখে ইফরাদের সাথে শার্লিনের বিয়ে দিবো মা৷ আমার একটা শর্ত আছে এখানে। নতুবা আমি বিয়েটা ভাঙবোনা৷”
রাইমার মুখের হাসি মুহুর্তে মিলিয়ে যায়। চিন্তিত স্বরে জিগাসা করে,
“কি শর্ত আংকেল?”
“মেয়েকে বিয়ে দিয়ে আমার ঘরটা ফাঁকা ফাঁকা হয়ে যাবে মা। কথা ছিলো কলিগের ছেলের সাথে মেয়েকে দিয়ে, তার মেয়েকে আমার ছেলের জন্য বউ করে আনবো। বেশি মানুষের সাথে আত্মীয়তা করবোনা। কোন পরিবার কেমন হয়! শেষে দেখা যাবে ছেলেমেয়ে সুখের বদলে অ-সুখে আছে। এই চিন্তায় এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। মেয়েকে যখন ওখানে দিবোই না, তখন তোমাকেই আমার ছেলের বউ হয়ে আমার ঘরে আসতে হবে৷ বলো রাজী এই শর্তে?”
রাইমা হতভম্ব হয়ে শাহীন সাহেবের দিকে তাকিয়ে আছে। সে কাঁপা স্বরে বলে,
“এটা কেমন শর্ত আংকেল?”
চলবে?
#আকাশেও_অল্প_নীল
#পর্বঃ১৪
#আর্শিয়া_ইসলাম_উর্মি
৪০,
“তুমি কি রকম জানি স্বার্থপর হয়ে গিয়েছো বাবা।”
রাইমার প্রশ্ন শেষেই মেসবাহর কণ্ঠস্বর শুনে দরজার দিকে তাকায় রাইমা এবং শাহীন সাহেব। মেসবাহ দরজার সামনেই দাড়িয়ে আছে। শাহীন সাহেব ছেলেকে দেখে বললেন,
“তুমি? কি সব বলছো মেসবাহ?”
মেসবাহ রুমে ঢুকতে ঢুকতে বললো,
“মেয়ের ভালোবাসা একটা লেইম এক্সকিউজে মানছো না। তোমার৷ মেয়ের ভালোবাসার থেকে বড়ো তোমার ইগো, তোমার সম্মান বড়। ছেলে হয়ে এমন কথা বলতে বাধ্য হচ্ছি, মাফ করো আমাকে। আল্লাহর সৃষ্ট এই রঙ তামাশার দুনিয়ায় তোমার আমার হায়াত কতোদিন আমরা জানিনা। হয়তো তোমার আগেই দেখা গেলো আমাদের রব আমাদের নিয়ে গেলেন! কিন্তু আমরা একটা ধারণা রাখি, যাদের বয়স হয়েছে তারা আগে মা”রা যাবেন। তোমার মেয়ে একজনকে ভালোবাসে বাবা। সাহস করে বলেওছে। সে পরিবার আর ভালোবাসা দুজনকে নিয়েই থাকতে চায়। আর তুমি কি করছো মানতে নারাজ হয়ে অন্য একটা মেয়ের উপর জোড় করে শর্ত জুড়ে দিচ্ছো রাজী হওয়ার নাম করে৷ তোমার হায়াত কতোদিন এটা তো তুমি আমি কেউ জানিনা৷ নারী জাতী, পরিবারের মুখের দিকে তাকিয়ে হয়তো নিজের ভালোবাসা টুকু বিসর্জন দিয়ে বেইমান উপাধীটা অনায়সে হজম করে নিতে পারবে! কিন্তু ঐ যে একটা ছেলের জীবনের সাথে জড়িয়ে দিবে, সেই ছেলেকে সময়ের সাথে মানিয়ে নিলেও দিনশেষে একটা করে দীর্ঘশ্বাসের সাথে নিজের কষ্টগুলোও হজম করার চেষ্টা করবে। সফলও হয় হজম করতে! কিন্তু তুমি সেই নারীর পিতা হয়ে তার দীর্ঘশ্বাসের কারণ হবে? তোমরা কিছু কিছু বাবা-রা মনে করো এটা করলে সন্তানের ভালো হবে! একবারও এটা চিন্তা করো না এতে সন্তানের ভালো লাগবে কিনা! কিছু কিছু সময় আসে বাবা, যেই সময়টায় সন্তানের কথা, ইচ্ছেকেও মূল্যায়ন করতে হয়। জোড় করে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিও না। অনুরোধ রইলো। আমি রাইকে বিয়ে করবো না। আমি শার্লিন আর রাইয়ের মাঝে পার্থক্য করিনি কখনও৷ তুমি বলতে রাই তোমার বড় মেয়ে, আমিও সেই কথা মেনে ভুল নজরে কখনও দেখিনি। তাই রাইকে বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব না বাবা। পাত্রপক্ষ এসে বসে আছে। সেজন্য আমি ডাকতে এসে তোমার শর্তের কথা কানে পরায় আমি থেমে গিয়েছিলাম। আর পাত্রপক্ষকে আমিই বিয়েতে না করে দিবো। একজন বড় ভাই হিসেবে আমি আমার বোনের পাশেই থাকবো। তোমার পরে আমারই দায়িত্ব হবে ওকে আগলে রাখার। আমার বাবা যখন ভুল করছে, তখন সেই দায়িত্ব একটু আগেই না হয় নিলাম। শার্লিন যদি ভুল মানুষকে চয়েজ করতো, আমি মানতাম না। কিন্তু একজন সঠিক মানুষকেই বেছে নিয়েছে ও, নিজের জন্য। তো আমি ওর পাশেই দাড়ালাম। তোমার যদি আপত্তি থাকে, আমরা দুই ভাইবোন বাসা ছেড়ে চলে যেতেও রাজী আছি।”
মেসবাহ কিছুক্ষণ সময় নিয়ে চলে যায় সেখান থেকে। রাইমা কৃতঙ্গতার দৃষ্টিতে তাকায় মেসবাহর দিকে৷ এই লোকটা গম্ভীর, যতোটা পারতো তাকে এড়িয়ে চলতো। শার্লিনকেও শাসন করতো বলে রাইমা কমই সহ্য করতে পারতো তাকে। অথচ সে আজ কতো বড় একটা বি”পদ থেকে বাঁচিয়ে দিলো। বিয়ে বন্ধন টা এক দুদিনের নয়। সারাজীবনের। মেসবাহর মতো সে-ও তো মেসবাহকে ভাই বলেই মানতো! তাকে বিয়ে করতে হবে! তারমাঝে তার মা-ও বিয়ের জন্য পাত্র ঠিক করেছে। এখন কি করে গিয়ে মা-কে বলতো সে অন্য কাউকে বিয়ে করবে! এটা ভেবেই রাইমার গায়ে কা”টা দিচ্ছিলো। রাইমা আনমনে এটাই ভাবছিলো এতোক্ষণ। পরে মনে হলো আরফান ডাকতে এসেছে। সে ছুট লাগায় বাইরের দিকে। ড্রইং রুমে এসে সোফায় বসা পাত্রপক্ষের দিকে এক নজর তাকিয়ে শার্লিনের রুমে যায়। আরফান শার্লিনের কাছেই বসেছিলো। শার্লিন রাইমাকে দেখেই উঠে দাড়ায়। ব্যস্ত হয়ে জিগাসা করে,
“বাবা কি বললো! বিয়ে দিবেনা বলেছে তো?”
“আংকেল কি করবে জানিনা, তবে মেসবাহ ভাই তোর বিয়েটা ভাঙবে। চিন্তা করিস না। আমি বাসায় যাচ্ছি। রাতে কল করবো, তখন সব বলবো।”
রাইমা উত্তর দিলো। এরপর আরফানের হাতটা খপ করে ধরে বললো,
“বাবা বাসায় জরুরী ভাবে ডেকেছেন। কেন ডেকেছেন জানিনা, লাগার কথা দুমিনিট। সেখানে আধঘন্টা লাগিয়ে দিলাম। চিন্তা করিস না, বিয়েটা হচ্ছেনা। আরফান চল।”
শার্লিন আটকায় না রাইমাকে। সস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বসে বিছানায়। এতোক্ষণ চিন্তায় পাগ’ল পা’গল লাগছিলো নিজেকে৷ রাইমা যখন একবার বলেছে বিয়েটা হবেনা। তারমানে হবেই না। শার্লিন খুশিতে ইফরাদের কাছে ফোন দেয়।
৪১,
রাইমার জন্য অপেক্ষা করতে করতে বিরক্ত হয়ে গিয়েছে দিগন্ত। আসার কথা ১০মিনিটে। সেখানে প্রায় ৪০মিনিট হয়ে আসলো৷ এজন্য এই মেয়ের প্রতি তার বিরক্ত বোধ হয়। কোনো টাইম সেন্স বা কমন সেন্স টুকু নেই। অস”ভ্য শব্দটার সাথে মেয়েটাকে সভ্য ভাবেই মানিয়ে নিয়েছে। রাইমার আসতে এতো দেরি দেখে শাহনাজ বেগম উঠে কিচেনে চলে গিয়েছেন রান্না করবেন বলে। উনার জিদ দেরি যখন হয়েইছে, তো খাওয়া দাওয়া করিয়ে তবে ছাড়বেন। স্নেহা উনার হাতে হাতে সাহায্য করতে জিদ ধরে সেও কিচেনে চলে গিয়েছে। আজাদ সাহেব নিজের রুমে চলে গিয়েছেন। মাহাদ আর দিগন্তই ড্রইং রুমে বসে আছে। মাহাদ বোর হয়ে ফোন ঘাটতে ব্যস্ত হয়ে পরেছে। দিগন্ত বসে বসে রাগে ফুসছে, নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করছে। একটা মেয়ে এতোটা সেন্সহীন কি করে হয়! মানা যায় বান্ধবীকে পাত্রপক্ষ দেখতে এসেছে, তাকে তো আর দেখতে আসেনি। ওখানে এতো করছেটা কি! ভেবে পেলোনা দিগন্ত। অধৈর্য হয়ে মাহাদকে লক্ষ্য করে বললো,
“মাহাদ ভাই! আপনার অ’সভ্য বোনটা ওখানে গিয়ে কি নিজেই পাত্রপক্ষের সামনে বসে পরেছে। এখনও আসছেনা যে!”
মাহাদ ফোন থেকে চোখ তুলে দিগন্তের দিকে তাকালো। অবাক নয়নে জিগাসা করলো,
“আমার বোনটাকে কি আগে থেকে চিনতে নাকি শালা বাবু? সভ্য না অ’সভ্য কি করে বুঝলে না চিনলে?”
“চেনা অচেনার ইতিহাস না হয় আপনার বোনের থেকেই জেনে নিয়েন। আপাতত দয়া করে কল করবেন একটা! কোন জায়গায় বসে কার মাথা নষ্ট করছে একটু শুনুন তো।”
“আমি কার মাথা নষ্ট করতে যাবো? সবার মাথার কি আপনার মতো তারছিড়া? যে সামান্য কিছুতেই পাগ’ল হয়ে যাবে?”
রাইমার কণ্ঠে কথাটা শুনে চোখ ঘুরিয়ে বাসার দরজার দিকে তাকায় মাহাদ আর দিগন্ত। রাইমা চোখ দুটো ছোটো ছোটো করে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে। বাসার দরজা একটু চাপিয়ে দেওয়া ছিলো। সেজন্য ঢুকতে কলিং বেল বাজাতে হয়নি। বাসায় ঢুকেই দিগন্তের মুখে কথাটা শুনে বুঝতে পারে কথাটা তাকে উদ্দেশ্য করেই বলেছে লোকটা। যেহেতু মাহাদের আর ভাইবোন নেই। তাই বোন বলতে তো তাকেই বুঝিয়েছে। এই বুঝে রাইমা কথাটা বললো। দিগন্ত রাইমাকে দেখেই কপালে তর্জনী আঙুল দিয়ে ঘষতে ঘষতে বিরবির করে বললো,
“এসে গেছেন মহারানী। এখন তার ভাষণে ভালো মানুষের মাথারও তাড় সব ছিড়ে যাবে। এরপরও নিজেকে কি করে যে সুস্থ দাবী করেন উনি। মাথায় ঢুকেনা।”
“কি বিরবির করছেন আপনি?”
দিগন্তকে বিরবির করতে দেখে প্রশ্ন করে রাইমা। মাহাদ দুজনের ঝগড়া হবে এমন আভাস বুঝতে পেরে দুজনের মাঝখানে ফোড়ন কে”টে বলে,
“রাই বোন আমার! আমি তোমার ভাইও এখানে আছি। আমায় একটু পাত্তা দাও।”
রাইমা সোফায় বসতে বসতে বলে,
“দিলাম পাত্তা। বাবা তবে তোমরা এসেছো বলেই এতো জরুরী তলব করলো?”
“জ্বি আপা।”
“আপনি আমার বড়, আমাকে আপা বলে আমায় কি আপনার বড় প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন মাহাদ ভাই?”
“না বোন আমার! তুমি আমার বড় হলে কি যে হতো আমার! কল্পনা করাও কঠিন। ছোটো থেকেই যে বাঁদর নাচ নাচাও। বড় হলে না জানি কি করতে!”
“এই লোক এখানে! তারমানে স্নেহা ভাবীও এসেছে। ভাবী কোথায় মাহাদ ভাই?”
দিগন্ত চুপচাপ দুই ভাইবোনের আলোচনা শুনছিলো৷ রাইমার মুখে এই লোক শব্দটা শুনে সে বললো,
“এই লোক! এটা কেমন শব্দ! কথাগুলো কি আর একটু সম্মান দিয়ে বলা যায়না? যেমন ইনি এখানে! এভাবেও তো বলা যায়।”
“আপনার ইগোতে লেগেছে শব্দটা? আমারও লাগে, যখন আপনি অকারণে আমায় অস”ভ্য বলেন।”
রাইমা মুখ ভেঙচিয়ে উত্তর দিলো৷ তখনই স্নেহা কিচেন থেকে ড্রইং রুমে আসে। রাইমা তাকে দেখে লাফ দিয়ে দাড়ায়। স্নেহাকে জড়িয়ে ধরে খুশিতে আহ্লাদ করে বলে,
“সূর্য আজ কোনদিকে উঠেছিলো? চাঁদ আজ আমার বাসায়! খুশি হয়ে গেলাম ভাবী।”
“পাগলি মেয়ে একটা৷ অকারণে আসেনি তোমার চাঁদ। দরকার আছে বলেই এসেছে।”
মাহাদ পিছন থেকে কথাটা বললো। দিগন্ত বসে বসে রাইমার কান্ড দেখছে। রাইমা স্নেহাকে ছাড়িয়ে থুতুনিতে আঙুল রেখে বলে,
“কি এতো জরুরী দরকার! যে চাঁদ বিয়ের আগেই খালা শাশুড়ীর বাড়িতে হাজির!”
চলবে?
#আকাশেও_অল্প_নীল
#পর্বঃ১৫
#আর্শিয়া_ইসলাম_উর্মি
৪২,
“তোমার ভাবী তোমাকে তার ছোটো ভাইয়ের স্ত্রী হিসেবে প্রস্তাব নিয়ে এসেছে রাইমা।”
আজাদ সাহেব ড্রইং রুমে রাইমার কথা কানে আসায় কথাটুকু বললেন। রাইমা বাবার মুখে কথাটা শুনে একদম স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে পরে। চোখ ঘুরিয়ে দিগন্তের দিকে তাকায়। দিগন্ত নিশ্চুপ হয়ে সোফায় বসে নিজের ফোন দেখছে। যেনো এই জগতেই সে নেই। চারপাশে কি হচ্ছে সেসব নিয়ে তার পরোয়া নেই। রাইমা স্নেহার সামনে শান্ত রাখতে চাইলো নিজেকে। স্নেহার দিকে তাকিয়ে বলে,
“এটা কেমন কথা ভাবী! বাবা কি সত্যি বলছেন? নাকি মজা করছো।তোমরা?”
“না মিষ্টি মেয়ে, আমি সত্যি তোমায় আমার ছোটো ভাইয়ের স্ত্রী রুপে দেখতে চাচ্ছি। যদি তুমি রাজী থাকো তবে?”
স্নেহা রাইমার গালে হাত রেখে আদুরে গলায় কথাটুকু বললো। মাহাদ উঠে এসে স্নেহার পাশে দাড়ালো। রাইমার মুখটা দেখার মতো হয়েছে। চুপসে একটুখানি হয়ে গিয়েছে। আজাদ সাহেব সোফায় বসলেন। আরফান দৌড়ে এসে বাবার কোলে বসে। এতোক্ষণ দাড়িয়ে দাড়িয়ে সবার কথা শুনছিলো সে। অচেনা মানুষ বাসায় আসলে সে চুপচাপ ভদ্র বাচ্চা হয়ে থাকে। কিন্তু বোনের বিয়ের কথা শুনে সে নিজের কৌতূহল দমাতে আজাদ সাহেবকে দিগন্তের দিকে আঙুল তাক করে জিগাসা করে,
“বাবা, উনার সাথে কি আমার আপাকে বিয়ে দিবে?”
“যদি তোমার আপার মতামত থাকে তবে দিবো বাবা ”
আজাদ সাহেব উত্তর দিলেন। বাবার কথা শুনে রাইমা আজাদ সাহেবের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করলো,
“বাবা, তুমি আর মা কি এই সমন্ধটিতে রাজী?”
“আমরা তো রাজী মা। বাকিটা আল্লাহ ভরসা এরপর তুমি ভরসা। যদি তোমার মত না থাকে তবে আমরা মানা করে দিতে পারি। তবে দিগন্ত বাবাকে আমার আর তোমার মায়ের বেশ পছন্দ হয়েছে। তুমি বলেছিলে আমরা যেনো পছন্দ করে তোমায় বিয়ে দিই। তাতে তোমার আপত্তি থাকবেনা। কিন্তু আমাদের পছন্দের উপরও তো তোমার মতামত বলে একটা বিষয় আছে। এখন আমরা আমাদের পছন্দ জানালাম। তুমি মতামত জানাও। এরপর সমন্ধটি হবে কি হবে না সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
রাইমা আরও চুপসে যায়। আড়চোখে দিগন্তের দিকে তাকায়। দিগন্তও রাইমার মতামত কি হয় জানতে রাইমার দিকে তাকিয়ে ছিলো। রাইমা তাকাতেই দুজনের চোখাচোখি বেশ ভালো ভাবেই হয়ে যায়। রাইমা চোখ সরিয়ে নেয়। কিন্তু দিগন্ত তার দৃষ্টি সরায় না। রাইমা ফের তাকিয়ে বিষয়টা দেখে, আনমনে ভাবে, কি নির্লজ্জ লোক। সবার মাঝে কেমন ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। রাইমা বিরক্তিতে চোখ নামিয়ে নেয়। মাহাদ আর স্নেহাও করুণ চাহনীতে রাইমার উত্তরে আশায় তাকিয়ে আছে। মাহাদ রাইমার মাথায় টোকা দিয়ে বলে,
“ভাবুক রানী! কিছু তো বলো! তোমার মতামত জানতে আমরা অধীর আগ্রহে বসে আছি।”
“কিন্তু আপনি তো স্নেহা ভাবীর পাশে তালগাছের মতো দাড়িয়ে আছেন মাহাদ ভাই।”
রাইমা মাহাদের কথার উত্তরে কথাটা বলে। স্নেহা আর আজাদ সাহেব হেসে একত্রে রাইমার কথায় হেসে উঠে। আরফান উঠে নিজের রুমে দৌড় দেয়। বড়দের মাঝে থাকতে তার অসস্তি হচ্ছে। মাহাদ চুপ হয়ে যায়। সিরিয়াস মুহুর্তেও এরকম মজা করার মানে হয়! দিগন্ত বিরবির করে বলে,
“আস্তো ষ্টুপিড, আর আপা আমার গলাতেই এই ষ্টুপিডকে ঝুলিয়ে দিচ্ছে।”
৪৩,
স্নেহা হাসি থামায় এবার। আগের মতোই রাইমার গালে হাত রেখে বলে,
“দয়া করে রাজী হয়ে যাও রাই, বোন আমার। আমিও তোমার ভাইয়ের সংসারে এসে পরবো! আমার ভাইটার খেয়াল রাখার জন্য, তাকে ভালোবেসে আগলে রাখার আবদার নিয়ে তোমার কাছে এসেছি। হাতের কাছে মেয়ে থাকতে বাইরে কোথায় খুঁজতে যাবো বলো! তারমাঝে এখন কোন মেয়ে কেমন! কার মনের মধ্যে কি চলছে বোঝা দায়! মানুষের মাঝে আজকাল অন্য মানুষ বাস করে, যার উপরে এক। ভেতরে আরেক। মানুষের ভেতরে ঢুকে মানুষকে তো যাচাই করা যায়না বলো! তোমায় চিনি, তুমি মেয়েটা কেমন এটাও জানি। তোমার ভাইয়ের সাথেও তো আমার বিয়ের দেরি নেই। আমি চলে আসার পর আমার ভাইটাকে কে দেখবে বলো তো! এমনি নিজের ভেতরে একাকিত্বের হাজারও দীর্ঘশ্বাস জমিয়ে রেখে নিজেকে গম্ভীর করে ফেলেছে। তুমি যদি আমার ভাইয়ের অর্ধাঙ্গিনী হও, অন্তত আমি নিশ্চিন্ত হয়ে আমার নতুন জীবন সাজাতে পারবো। তোমায় জোড় করছিনা আমি, শুধু অনুরোধ রইলো। এখন আমার অনুরোধ রাখবে কি রাখবেনা৷ তোমার উপর ছেড়ে দিলাম।
স্নেহা একটু ইমোশনাল হয়েই কথাগুলো বললো। রাইমা অসহায় চাহনীতে একবার বাবার দিকে তাকায়। আজাদ সাহেব মেয়েকে চোখের ইশারায় ভরসা দেন। বাবার পর মাহাদের দিকেও তাকাতে ভুলেনা রাইমা৷ বাবার পর বড় ভাই হিসেবে তাকেই তো মানে। মাহাদও চোখের ইশারায় ভরসা দেয় তার আদরের বোনকে৷ রাইমা শেষবারের মতো দিগন্তের দিকে তাকায়। দিগন্ত যেই সেই, আগের মতোই তাকিয়ে আছে। রাইমা চোখ বন্ধ করে বলেই দেয়,
“আমি রাজী।”
উপস্থিত সকলে আলহামদুলিল্লাহ বলে। দিগন্ত রাইমার দিকে তাকিয়েই বিরবির করে বলে,
“হয়ে গেলো, জীবন ত্যানা ত্যানা করে আমার বাসা মোছার জন্য সেই ত্যানার মালিক তৈরি। গড সেভ মি।”
রাইমা দিগন্তের দিকে তাকিয়েই ছিলো। বিরবির করতে দেখে ভাবে,
“আমায় কথায় কথায় অস’ভ্য বলা তাইনা! এই অস’ভ্য মেয়েকে সারাজীবন সহ্য করতে হবে। বলেছিলাম শোধ তুলবো, এবার ঘরে ঢুকেই এমন বাঁদর নাচ নাচাবো যে, আমি রাইমা খন্দকার এটা জীবনেও ভুলবেন না৷”
রাইমা ঠোঁট ভেঙচে দিগন্তের থেকে চোখ ফিরিয়ে নেয়। দিগন্ত তা দেখে কপালে তর্জনী আঙুল দিয়ে স্লাইড করতে করতে ভাবে,
“এখনই যে এটিটিউড দেখাচ্ছে, বিয়ের পর আমার বাসায় প্রধানমন্ত্রীর মতো কর্তৃত্ব ফলাবে নিশ্চিত। সুখে থেকে কোন ভুতের কি’ল খেয়ে যে রাজী হয়েছিলাম৷ উপরওয়ালা দেখে রেখো আমাকে।”
রাইমা সবাইকে বলে স্নেহাকে পাশ কাটিয়ে নিজের রুমের দিকে চলে যায়। স্নেহা আর আজাদ সাহেব বিয়ের দিনতারিখ নিয়ে আলোচনা শুরি করে। এই ফাকে মাহাদ দিগন্তের পাশে বসে কানের কাছে ফিসফিস করে বলে,
“বেস্ট ওফ লাক ব্রো। অগ্রিম জীবন কচু পাতা হওয়ার জীবনে প্রবেশ করার জন্য শুভকামনা।”
দিগন্ত মাহাদের কথা বুঝতে না পেরে ভ্রুকুটি করে তাকায়। অবাক হয়ে মাহাদের মতো করেই জিগাসা করে,
“মানে?”
“কচু পাতা দেখেছো? পানি দিলে কচু পাতা ভিজে না। আর রাইমার যা স্বপ্ন আছে বিবাহিত জীবন নিয়ে, স্বামী নিয়ে। তাতে একজন পুরুষ আধপা”গল হবে নিশ্চিত। তো তাতে কি দাড়ায়? কচুপাতায় পানি দিলে যেমন ভিজে না, রাইমাও তোমায় যতোই আধপা”গল হোক না তুমি ছাড়তে পারবে, না তোমায় ছাড়তে দেবে। তোমাদের জুটি হবে টম এন্ড জেরি। বিষয়টা সুন্দর।”
৪৪,
মাহাদ মিটমিটিয়ে হাসে। দিগন্ত লম্বা করে শ্বাস নেয়। এরপর মাহাদের উদ্দেশ্যে বলে,
“আমাকে কি গে মনে হয় মাহাদ ভাই? না আমি গে, না তো আমি কোনো ছেলেকে বিয়ে করছি, আগামাথা পুরোটাই মেয়ে সে। আর টম এন্ড জেরি দুজনেই ছেলে৷ সো আমাদের সম্পর্ক টম এন্ড জেরির মতো কখনও হবেনা৷”
মাহাদ দিগন্তের লজিক দেখে পুরোই তব্দা খেয়ে যায়। সে বললো কি লজিকে! আর দিগন্ত কোন লজিক বুঝিয়ে দিলো! সে তো ঝগ”ড়ার কথা বলেছে। আর কেউ না জানুক, সে তো জানে রাইমার বিয়ে নিয়ে কতো স্বপ্ন সাজানো। যেনো তেনো স্বপ্ন না স্বামীকে বাঁদর নাচ নাচানোর স্বপ্ন। সে তো এই ভেবেই কথাটা বলেছে দিগন্তকে। আর দিগন্ত এটা কি বললো! দুজনই একই ধাচের মানুষ। কথায় আছে যে যেমন, কপালে জুটেও তেমন। রাইমা আর দিগন্ত কেউ কারোর থেকে কম নয়। এরা দুজন একত্র হলে বাসার কি অবস্থা হবে? মাহাদ কল্পনা করতে গিয়েও করলোনা। এতো ভয়ংক’র কল্পনা করা সম্ভব না। দিগন্ত কথাটুকু বলেই নিজের ফোনে ব্যস্ত হয়ে পরেছিলো। এরপর শাহনাজ বেগম টেবিলে খাবার সাজিয়ে সবাইকে হাক ছেড়ে ডাক দেন। উনার ডাকে সবাই খাবার টেবিলে এসে পরে। স্নেহা, মাহাদ, রাইমা, দিগন্ত টেবিলের দুপাশে মুখোমুখি হয়ে বসে। আজাদ সাহেব মেয়ের পাশেই বসেন। আরফান আসেনি খেতে। শাহনাজ বেগম গিয়ে দেখে ঘুমিয়ে পরেছে বাচ্চাটা। শাহনাজ বেগম সার্ভ করে দাড়িয়ে থাকতে চাইলেও স্নেহা জোড় করে বসিয়ে দেয়। খাবার সময় দিগন্তের সাথে বেশ ভালো ভাবেই বেশ কয়েকবার চোখাচোখি হয়ে যায় রাইমার। খাবার বসে হয়না একটা ব্যাপার! খাচ্ছি, সেই সময় কেউ তাকিয়ে খাওয়া দেখছে কিনা! খেতে বসে হা করছে কতো বড়! এটা কেউ নোটিশ করছে কিনা! এই সন্দেহ থেকেই দুজনেই চেইক করতে তাকাতেই চোখাচোখি হয়ে যাচ্ছিলো। নিজের এই উদ্ভট চিন্তার জন্য দিগন্তের সাথে চোখাচোখি হওয়ায় বিরক্ত হলো রাইমা। মাথা নিচু করে মনোযোগ দিলো খাওয়া দাওয়ায়।
খাওয়া শেষে দিগন্ত, মাহাদ আর স্নেহা বিদায় জানিয়ে চলে যায়। তারা চলে যেতেই রাইমা রুমের দিকে পা বাড়াবে এমন সময় সোফায় বসা আজাদ সাহেব মেয়েকে ডেকে পাশে বসান। রাইমা বাবা কি বলে এটা বোঝার চেষ্টায় আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে বাবার দিকে। আজাদ সাহেব মুখ খুললেন, বললেন,
“রাইমা মা আমার! আমরা কি তোমার উপর আমাদের পছন্দ চাপিয়ে দিচ্ছি! তোমার মন থেকে এই বিয়েতে মতামত আছে তো? নাকি আমাদের কথা ভেবে মেনে নিয়েছো?”
“না বাবা, আমি মন থেকেই তোমাদের পছন্দকে মেনে নিয়েছি। তোমরা এতো কষ্ট করে আমায় বড় করলে, পড়াশোনা করাচ্ছো, আমার প্রতি প্রতিটা দায়িত্ব সুন্দর ভাবে পালন করছো। জীবনে সবকিছু আমাকেই পছন্দ করার জন্য ছেড়ে দিয়েছো। এইজন্য বোধ হওয়ার পর থেকেই এই বিয়ে নিয়ে পছন্দ টা তোমাদের উপর ছেড়ে দিবো ভেবে রেখেছিলাম। আলহামদুলিল্লাহ এই ক্ষেত্রে তোমরা ভুল কাউকে পছন্দ করবেনা, আর করোওনি, এইটা আশা আর বিশ্বাস ছিলো আমার। সেটা ভঙ্গ হয়নি। আশা রাখি আমিও বিয়ে হলে তোমাদের সম্মান নষ্ট করবোনা৷”
রাইমা বাবার কাঁধে মাথা রেখে কথাটুকু বললো। শাহনাজ বেগম থালাবাসন গুছিয়ে ড্রইং রুমে আসতেই বাবা মেয়ের সুন্দর একটা মুহুর্ত দেখে মুচকি হাসলেন। যাক মেয়েটা তাদের ভালো থাকবে৷ এটাই শোকর আলহামদুলিল্লাহ।
৪৫,
মাঝখানে কেটে যায় দুদিন, আজ বুধবার। ভার্সিটি থেকে ক্লান্ত শরীরটা বিছানায় এলিয়ে দিয়েছে রাইমা। ফ্রেশ হতেও আলসেমি লাগছে খুব। চারদিকে গরমের আগমন টের পাওয়া যাচ্ছে। বিছানায় শুয়ে রুমে ছাদে ঘুরন্ত সিলিং ফ্যানটার দিকে এক নজরে তাকিয়ে আছে রাইমা। আসার পরপর শাহনাজ বেগম বলেছেন, ফ্রেশ হয়ে খাবার খেতে যেতে। পনেরো মিনিট হয়ে গেছে অথচ তার উঠে ফ্রেশ হওয়ার জন্য মন টানছেনা। একটু ঘুমাতে পারলে! কিন্তু সময় নেই। মাহাদ ভার্সিটিতে থাকা সময়েই ফোন দিয়ে বলেছে ছুটি হলে বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে যেনো ফোন দেয়। স্নেহাকে সাথে নিয়ে শপিং এ যাবে তারা। যাবে কি যাবে না এই চিন্তায় মশগুল রাইমা। ঠিক তখুনি তার রুমে হন্তদন্ত হয়ে ঢুকে শার্লিন। মুখে আনন্দের আভাস উপচে পরছে। সে এসেই রাইমাকে শুয়ে থাকতে দেখে উপর হয়ে রাইমার উপর এক হাত দিয়ে সেও শুয়ে পরে ধপা”স করে। রাইমা ঝাঁকি দিয়ে চমকে উঠে। নিজের চিন্তায় এতোটাই মশগুল ছিলো শার্লিনের মতো জল”জ্যান্ত একটা মানুষের উপস্থিতি টের পায়নি। সে চমকে পাশে তাকিয়ে শার্লিনকে দেখে অবাক হয়ে বলে,
“তুই! এভাবে কেউ ভয় দেখায়?”
শার্লিনের হাসি হাসি মুখটায় মুহুর্তেই গাম্ভীর্যতা প্রকাশ পায়। গম্ভীর স্বরে বলে,
“আমি এসেছি, তুই টেরও পাসনি?”
রাইমা শার্লিনকে ছাড়িয়ে উঠে বসে। খোলা চুলগুলো হাত খোপা করতে করতে বলে,
“একটু অন্যমনষ্ক ছিলাম। তা তোর কি রেস্ট নেওয়া বলে কোনো বস্তু নেই? ভার্সিটি থেকে ফিরেই ফ্রেশ তো হইছিস দেখা যায়! খাইছিস কিছু? নাকি না খাইয়া দৌড়ায় এখানে আসছিস?”
“রাখ তো খাওয়া দাওয়া বইনে। একটা গুড নিউজ আছে।”
শার্লিন বাচ্চাদের মতো লাফিয়ে শোয়া থেকে বসে কথাটা বললো। রাইমা হাই তুলতে তুলতে প্রশ্ন করে,
“কি গুড নিউজ?”
“বাবা শুক্রবারে ইফরাদকে পরিবার নিয়ে বাসায় আসতে বলেছে।”
“যাক আংকেলের ছিড়া তাড় জোড়া লাগছে।”
“অল ক্রেডিট গোজ টু ইউ বান্ধবী।”
রাইমার গলা জড়িয়ে আহ্লাদী স্বরে কথাটা বলে শার্লিন। রাইমা শার্লিনের মাথায় টোকা দিয়ে বলে,
“পাগলি একটা।”
“বাবাকে বলবো আমাদের দুই বান্ধবীর বিয়ে একই সাথে দিতে। দরকার পরলে তোর গ্রামেই ১৪গুস্টি নিয়ে চলে যাবো।”
শার্লিনকে নিজের বিয়ের বিষয়ে সবকথা দুদিনে জানিয়ে দিয়ে রাইমা। সেজন্য শার্লিন ওভাবে বলে কথাটা। রাইমা শার্লিনের কথা শুনে বলে,
“দরকার নাই, তোর বিয়েতে আমি আনন্দ করবো। জামাইরে দিয়ে মোটা অঙ্কের সালামী দিয়ে টাকা খসাবো। তুই সিঙ্গেল সিঙ্গেল আমার বিয়ের দাওয়াত খা। এরপর তোর বিয়েতে আমি ডাবল ডাবল গিয়ে এটেন্ড করবো। আল্লাহ সহায় হলে ট্রিপলও হয়েও যেতে পারি। কিন্তু একলগে বিয়ে করমুনা দুইজন। নিজের বিয়েতে তো খেতে পারবোনা, অন্তত তোর বিয়েতে আমি পেটপুরে বিয়ের ভোজ খেতে চাই। জীবনে আনন্দ নাই, সব পানসে পানসে লাগে। অন্তত এই বিয়ে উপলক্ষে যদি একটু আনন্দ করা যায়।”
“আইডিয়া মন্দ না তোর। কিন্তু তোর ট্রিপল হওয়ার চক্করে আমারে আজীবন সিঙ্গেল রাখিস না। তোরা যা কাপল হবি বইন, সারাদিন করবি যু’দ্ধ। রাতে ক্লান্ত হয়ে ঘুমাবি। ট্রিপল হওয়ার কাজকর্ম করার সুযোগ আসবেনা। আর তোদের জন্য আমি সিঙ্গেল থাকতে পারবোনা।”
শার্লিন রাইমাকে ছেড়ে ঠোট টিপে কথাটা বলে৷ রাইমা রা’গ দেখিয়ে বালিশ ছুড়ে মা’রে শার্লিনের দিকে। দাঁত কটমটিয়ে বলে,
“নির্লজ্জ কোথাকার! মুখে কিছু আটকায় না।”
“না আটকায় না।”
শার্লিনের কথা ফুরোতেই দুই বান্ধবী মেতে উঠে খুনসুটিতে।
চলবে?