আকাশেও অল্প নীল পর্ব-২২+২৩+২৪

0
201

#আকাশেও_অল্প_নীল
#পর্বঃ২২
#আর্শিয়া_ইসলাম_উর্মি

৬৭,
বাসর ঘরের দরজা আটকে বসে আছে রাইমা, শার্লিন সহ বাকি কাজিন’স-রা। রাইমার কোলে আরফানও বসে আছে এই মুহুর্তে। কয়েকটা দিন হলো এতো মানুষ দেখে আরফান মায়ের আচল ধরেই ঘুরঘুর করলেও আজ বোনের সাথে বউ নিয়ে আসার পর থেকে ঘুরঘুর করছে। চেষ্টা বোনের সাথে থেকে নতুন বউয়ের সাথে ভাব জমানো। তাতে বেশ সফলও হয়েছে আরফান। তাই বোনের কোল থেকে আর নামেনি। এখানে কি হবে, তা আগ্রহ নিয়ে দেখছে। সাত বছরের একটা বাচ্চাকে কোলে নিয়ে বসে থাকতে যদিও রাইমার কষ্ট হচ্ছে! তবুও সে ভাইকে কোলে নিয়ে বসেই আছে। বিয়ের ব্যস্ততায় কয়েকটা দিন হলো ভাই টাকে সে কাছে পায় না। অনেক আগেই বউ বরণ, বাকি সব নিয়ম শেষ করে আধ ঘন্টা হলো স্নেহাকে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে বাসর ঘরে। এর মাঝেই মাহাদ, মেসবাহ, ইফরাদ সেখানে উপস্থিত। মাহাদকে রুমে ঢুকিয়ে দেওয়ার জন্য মেসবাহ আর ইফরাদ সাথে এসেছে। সেখানেই রাইমা আর শার্লিন টাকার দাবী করে বসে আছে দরজার সামনে চেয়ার নিয়ে। বাকিরা ওদের ঘিরে দাড়িয়ে আছে। টাকা না দিলে তারা উঠবে না। রাইমা আর শার্লিন সবার বড়ো হওয়ায় ওর সাপোর্টেই সব মেয়েরা টাকার জোড় দাবী জানিয়ে সমানে চেচিয়ে যাচ্ছে। মাহাদ বুকে হাত বেঁধে চুপচাপ দাড়িয়ে সবার তামাশা দেখছে। তার কথা বিয়ে বাড়িতে এতো টাকা ফুরিয়ে এসেছে। এখন কোনো টাকা দিতে পারবেনা। ইফরাদ আর মেসবাহও ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে দাড়িয়ে আছে মাহাদের দুই পাশে। রাইমা এবার বিরক্ত হয়ে মাহাদকে বললো,

“এতো কিপ্টা কবে থেকে হতে ধরলেন মাহাদ ভাই? এতো কিপ্টামির কি আছে? টাকা দেন, দরজা ছাড়ি। এমনিতেও ভাবী ক্লান্ত, সাথে আমরাও। ভাবী আর কতোক্ষণ ক্লান্তি নিয়ে আপনার অপেক্ষা করবে? আর আমরা কতোক্ষণই বা টাকার জন্য বসে থাকবো? ঐ বাড়িতে টাকা তো আপনার শ্যালক-শালীকা নিয়েছে আমরা বোন রা তো নিইনি?”

“তাছাড়া মাহাদ ভাই, যতো লেইট করবেন, ভাবীও ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পরবে। আর আপনার বাসর হবে ঘুমময়, রোমান্সময় নয়।”

শার্লিন রাইমার কথা শেষ হতেই চট করে কথাটা বলে। ইফরাদ কপালে চাপড় দেয় শার্লিনের কথা শুনে। উপস্থিত সকলে হাসলেও মাহাদের মুখ গোমড়া হয়ে যায়। এই মেয়েটা ঘুরেফিরে তাকে লজ্জায় ফেলে। মেসবাহ জিভে কামড় দিয়ে উল্টো দিকে ফিরে দাড়ায়। বড়ো ভাই উপস্থিত, সেখানে এই মেয়ের কথাবার্তার লাগাম নেই! রাইমা বেশ খানিকটা সময় নিয়ে শার্লিনের হাতে চিমটি বসায় সবার অলক্ষ্যে। শার্লিন হাত ঝটকা মে”রে সরিয়ে রাইমার দিকে তাকিয়ে বলে,

“আমার মতো ইনোসেন্ট মেয়েরে তুই পিপড়ার মতো চিমটি দেস কেন?”

“এখানে বড়ো রাও আছে মুখ সামলা। আর পিপড়া চিমটি দেয়না, কাম”ড় দেয়।”

শার্লিনও মাহাদেরও মতো রাইমার কথা শুনে মুখ গোমড়া করে। মাহাদ বুঝতে পারে টাকা না দিলে এরা দরজা ছাড়বেনা। রাইমাদের দাবী মতো সে পকেটে হাত ঢুকিয়ে কড়কড়ে এক হাজার টাকার পাঁচ টা নোট বের করে রাইমার হাতে ধরিয়ে দেয়। কাজিন’স বেশি। এজন্য টাকার পরিমাণ বেশি। রাইমা টাকা হাতে পেতেই সব খুশিতে লাফিয়ে উঠে। এরপর দরজা ছেড়ে সরে দাড়ায়। সব সরতেই মাহাদকে ধাক্কা দিয়ে ঢুকিয়ে দেয় ইফরাদ আর মেসবাহ। বাইরে থেকে দরজা লাগিয়ে দেয়। ইফরাদ রাইমার দিকে লক্ষ্য করে বলে,

“আমাদের ভাগ টা কোথায়? আমরা চাইলেই পারতাম তর্কাতর্কি করতে। কিন্তু নির্দ্বিধায় মাহাদ ভাইকে টাকা দিতে দিয়েছি।”

“তোমার ভাগ তো আমি বুঝাবো চান্দু। আপাতত দরজা ছেড়ে সব চলো। নিউ কাপলের দরজার সামনে থাকতে হয়না। চলো সব।”

শার্লিন কথাটা বলে তাড়া দেখায়। ইফরাদ অসহায় চোখে শার্লিনের দিকে তাকায়। কি এক মাইয়ারে ভালোবাসলো সে! সব কথায় সব জায়গায় তার মানসম্মানের ফালুদা বানিয়ে দেয়। সে চান্দু! লাইক সিরিয়াসলি! শার্লিনের তাড়ায় সবাই যে যার মতো রেস্ট নিতে চলে যায়। ইফরাদও নিজের চিন্তা ভাবনা রেখে মেসবাহর সঙ্গে নিজের বাড়ির উদ্দ্যেশে বাইক নিয়ে বেরিয়ে পরে।

৬৮,
মাহাদ রুমে ঢুকেই দেখে স্নেহা সত্যি ক্লান্তিতে বিছানার বোর্ডের সাথে হেলান দিয়ে আধশোয়া হয়ে আছে। হয়তো ঘুমও এসেছে, মুখের উপর ঘোমটা থাকায় বুঝতে পারলো না মাহাদ। সে আলগোছে স্নেহার সামনে বসে স্নেহার মুখের উপর থেকে ঘোমটা সরায়। স্নেহা সত্যি সত্যি ঘুমিয়ে পরেছে। ঘুমন্ত স্নেহাকে প্রথম বার এতো কাছ থেকে দেখছে। ঘুমন্ত মুখটায় মেকআপের ভারী প্রলেপ। গরমে ঘেমে তৈলাক্ত ভাব ধরেছে। মানুষ যে বলে ঘুমালে নাকি বাচ্চাদের মতো লাগে মেয়েদের!কই না তো! তাদের মুখেও তৈলাক্ত ভাব রয়ে যায়। বয়সের ছাপ টাও স্পষ্ট হয়। চিন্তিত ভাবনায় ঘুমালে সেই চিন্তার ভাজটাও কপালে ভেসে থাকে। এই যে এতো শতো খুঁত রয়েছে! এই খুঁতগুলোয় যে মুগ্ধতা খুজে পাবে! সেই তো ভালোবাসে। ভালোবাসার সঙ্গা কি জানা নেই মাহাদের। সে শুধু জানে এই সবকিছু মিলিয়ে সে মেয়েটাকে ভালোবাসে। তাকে ভালো রাখতে হবে এটুকু জানে। মাহাদ ঘুমন্ত স্নেহার কপালে চুমু খায়। কপালে কারোর স্পর্শ পেয়ে হালকা চমকে ঘুম ভাঙে স্নেহার। ক্লান্তিতে একটু চোখ লেগে এসেছিলো তার। কখন যে এভাবে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পরেছে জানেনা স্নেহা। তার তো সবথেকে বড়ো বদঅভ্যেস বিছানায় মাথা ঠেকালে তার ঘুম এসে যায়। এটাকে অবশ্য বদঅভ্যেস বলা চলে না। কারণ বেশিরভাগ মানুষ তো এই ঘুমের জন্য কম চেষ্টা করে না! স্নেহা ঘুম ভাঙতেই মাহাদকে এতেটা কাছে দেখে একটু ভড়কে যায়। পরক্ষণে মনে হয় সে তো এখন মাহাদের স্ত্রী। কয়েক ঘন্টা সময়ের ব্যবধানে সে একটা মানুষের অর্ধাঙ্গিনী। কি অদ্ভুত নিয়ম এই দুনিয়ার। মাহাদ নিষ্পলক বিব্রত পরিস্থিতিতে পরা স্নেহাকে দেখতে ব্যস্ত। স্নেহা নিজেকে সামলে মাহাদের দিকে তাকায়। ভ্রু নাচিয়ে জিগাসা করে,

“কি এতো দেখছেন স্যার!”

“আমার ঘরে তাজা গোলাপ এসেছে, তাকে দেখছি। পুরো খাটে সাজানো গোলাপগুলো তো শুকিয়ে যাবে, কিন্তু এই গোলাপ টা তো সারাজীবন আমার ঘর টাকে সুগন্ধ ময় করে রাখবে।”

“এতো প্রশংশা করা লাগবেনা স্যার। সরেন সামনে থেকে, আমার ফ্রেশ হওয়া জরুরী।”

“হুম, আমি হেল্প করি চলো।”

“তুমি কি হেল্প করবে?”

“জুয়েলারি গুলো এট লিস্ট খুলতে হেল্প তো করতেই পারি!”

“ওকে। তো দাও খুলে।”

মাহাদ স্নেহার ঘোমটার পিন খুলে দিয়ে গলার, কানের জুয়েলারি খুলতে হেল্প করে। স্নেহা নিজের পাঠিয়ে দেওয়া লাগেজ থেকে একটা সুতির শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পরে। দীর্ঘসময় নিয়ে ফ্রেশ হয়ে শাড়ি পরে বে একেবারে অযু করেই বের হয়। স্নেহা বের হয়েই মাহাদকে ফ্রেশ হতে বলে। অযু করেই বের হতে বলে। মাহাদ স্নেহার কথা শুনে মাহাদ ফ্রেশ হতে ঢুকে পরে। সে ফ্রেশ হয়ে বেরুনোর পর দুজনে একসাথে নামাজ আদায় করে রবের কাছে শুকরিয়া আদায় করে। নামাজ শেষে মাহাদ স্নেহাকে একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। স্নেহা নিজেও মাহাদকে আকড়ে ধরে। দীর্ঘ আট বছরের অপেক্ষা শেষে এক পূর্ণতা। এই পূর্ণতায় যা শান্তি! বলে বোঝানোর মতো না৷ মাহাদ চোখ বন্ধ করে কয়েক ফোঁটা অশ্রু ফেলে। স্নেহার ঘাড়ে গরম অশ্রু পরতেই সে মাথা তুলে মাহাদের মুখের দিকে তাকায়। চোখ বন্ধরত মাহাদের চোখের কোণে অশ্রু দেখে মাহাদের বুকে আস্তে আস্তে হাত দিয়ে আঁকিবুঁকি করে। নরম সুরে জিগাসা করে,

“কাঁদছো কেনো?”

“তোমায় হারানোর ভয়ে যে অবস্থা হয়েছিলো আমার! প্রতিটা মুহুর্ত আমায় কুড়েকুড়ে খেয়েছে যে, হারিয়ে না ফেলি! এতো সাধনার প্রাপ্তী তুমি আমার। আনন্দেই চোখে পানি এসেছে।”

স্নেহা মুচকি হাসে। পুরুষ মানুষের সত্যিকারের ভালোবাসা ভয়ংক’র সুন্দর। তা আজ প্রমাণ সহ বুঝতে পারলো। স্নেহা নিজের লাজ লজ্জা ভুলে মাহাদের সাথে এতোদিনের করা অন্যায়! এই যে বিয়েতে অমত প্রকাশ করে তাকে কষ্ট দেওয়া! সব দাগগুলো মুছে সম্পর্কটাকে পরিপূর্ণ পূর্ণতা দিতে বলে,

“আমাদের প্রাপ্তী টাকে আরও একটা পূর্ণতা দিবে না? নাকি কেঁদেই সকাল করে ফেলবে!”

মাহাদ বুঝতে পারে স্নেহার কথার ইঙ্গিত। সে মৃদু হাসে স্নেহার দিকে তাকিয়ে। স্নেহা নিজের লজ্জা পুরো কাটাতে পারেনি। লজ্জায় মুখ গুজে দেয় মাহাদের বুকে। মাহাদ নিজেই স্নেহাকে কোলে তুলে বিছানার দিকে অগ্রসর হয়। হোক না হয় একটা পূর্ণতার রাত। অবসান ঘটুক দীর্ঘ এক অপেক্ষার। পরিপূর্ণতায় ছেয়ে যাক প্রতিটা ভালোবাসা।

৬৯,
মাঝখানে কেটে যায় প্রায় বেশ কিছুদিন। সবাই বেশ ব্যস্ত তাদের জীবন নিয়ে। রাইমা আর শার্লিন নিজেদের পড়াশোনা নিয়ে। ইফরাদও নিজের কাজ, পরিবার সামলাতে ব্যস্ত। সাথে তো শার্লিনকে সামলানোর প্যারা আছেই। দিগন্ত নিজের স্কুল নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরেছে। বোনের বিয়ের চক্করে অনেক কাজ পিছিয়ে ছিলো। সেগুলোর গ্যাপ পূরণ করতে করতে হাঁপিয়ে উঠেছে। এরসাথে তো আছেই রাইমার সাথে নিয়ম করে দেখা করা আর দিনশেষে রাতে একটু কথা বলা। সব মিলিয়ে সবার জীবনই নিজ ছন্দে চলছে। সোমবার দিন আজ। রাইমা ভার্সটি শেষে এসে বাসায় ঢুকতেই আরফান ছুটে এসে বোনকে জড়িয়ে ধরে। আরফানকে আচমকা এরকম জড়িয়ে ধরতে দেখে রাইমা নিচু হয়ে বসে আরফানের গালে হাত দেয়। বাচ্চাটা কাঁদছে। রাইমা অবাক নয়নে আরফানকে দেখে জিগাসা করে,

“ভাই আমার, তুই কাঁদছিস কেন?”

“তুই আমাদের ছেড়ে চলে যাবি আপা?”

“ছেড়ে যাবো মানে? কোথায় যাবো?”

“শ্বশুর বাড়িতে! আজ মাহাদ ভাই, স্নেহা ভাবী, আর দিগন্ত ভাই এসেছে। এরপর বাবার সাথে কি সব আলোচনা করে চলেছে। মাহাদ ভাইকপ জিগাসা করলাম, কি নিয়ে এতো কথা হচ্ছে! ভাইয়া উত্তর দিলো, স্নেহা ভাবীকে যেমন সে বিয়ে করে নিজের কাছে এনেছে। পাশের বাসার মিলি আপুকেও তো দেখেছি বিয়ে করে সেই যে চলে গেছে, এরমাঝে হুটহাট ঘুরতে আসতে ছাড়া আগে যেমন সবসময় দেখতাম, তেমন থাকে না। তুইও তার মানে এমন করে আসবি আর দুদিন থেকেই চলে যাবি! তাইনা আপা? আমি তোকে ছাড়া থাকতে পারবোনা আপা। কার সাথে ঝগড়া করবো আমি তুই চলে গেলে!”

রাইমার বুকের ভেতর মোচর দিয়ে উঠে। ছোট্ট এক আদরের ভাই তার। বয়সের অনেক ফারাক দুজনের মাঝে। সে হওয়ার পর নাকি তার মায়ের সন্তান হওয়ারই সুযোগ ছিলো না জরায়ু জনিত সমস্যার কারণে। মায়ের কাছেই এসব গল্প শুনেছিলো রাইমা। কিন্তু রাইমা তো তার খেলার সাথী চাইতো বাবা মায়ের কাছে। সেই চাওয়া টা কতো সাধনার পর পূরণ হয়েছে। ভাইয়ের সাথে যতো ঝগড়াই করুক সে, আরফান তো তার প্রাণের অংশ। মায়ের কোলে যেদিন ছোট্ট ছোট্ট হাত পায়ের অধিকারী আরফানকে কোলে নিয়েছিলো, সেদিনই ছিলো রাইমার কাছে সেরা খুশির দিন। যে তার খুশির কারণ! নিয়তির লিখনে তাকেও ছেড়ে যেতে হবে! তা এই ছোট্ট বাচ্চা বুঝেও কেঁদে দিয়েছে। রাইমা ভাইকে বুকের মাঝে লুকিয়ে নিয়ে নিজেও কান্না জুড়ে দেয়। আজাদ সাহেব ড্রইং রুমে বসা ছিলেন। শাহনাজ বেগম স্নেহা, মাহাদ আর দিগন্তকে ডাইনিং টেবিলে খাবার খাওয়াতে ব্যস্ত বিধায় এদের দুজনের দিকে ধ্যান নেই। আজাদ সাহেব এগিয়ে এসে দুই ছেলেমেয়েকে কাঁদতে দেখে বললেন,

“কি ব্যাপার! দু ভাইবোন ঝগড়া বাদ দিয়ে কাঁদছো যে!”

রাইমা বাবার গলার স্বর শুনে ভাইকে ছেড়ে উঠে দাড়ায়। বাবার সামনে গিয়ে দাড়িয়ে বাবার হাত দুটো আকড়ে ধরে জিগাসা করে,

“বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করতে ভাবী এসেছে বাবা?”

“হ্যাঁ রে মা৷ সামনে তো রমজান মাস আসছে। স্নেহা মা চাচ্ছে তার আগেই তোর আর দিগন্তর বিয়েটা হয়ে যাক।”

রাইমা ফোঁস করে দম ফেলে। বাবার হাতের আঙুলে নিজের আঙুল আঁটকে এরপর বলে,

“এই আঙুল গুলো ধরে বোধ হয় ছোট্টবেলায় হাঁটা শিখেছিলাম। আজ এমন সময়ে এসে দাড়ালাম, সেই আঙুল গুলোই আমায় অন্য ছেলের হাতে তুলে দিবে! একটা মেয়ে রাত দিন ২৪ঘন্টা ২৩টা বছর যে ঘরে থেকেছে, সে মেয়েটা সেই ঘরেই অতিথি হয়ে বেড়াতে আসবে। কথাগুলো খুব সাধারণ কিন্তু বুকের ভিতর তীড়ের মতো বিঁধছে কেন বাবা? আমার না ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।”

আজাদ সাহেব মেয়ের কথা শুনে কিছু বলবেন! সেই ভাষাও হারিয়ে ফেলেছেন যেনো। সত্যি তো এ কেমন নিয়ম এই দুনিয়ার! যে হাত চলতে শেখায়, সেই হাতই অন্য কারোর হাতে আদরের রাজকন্যাকে তুলে দেয়। মা তার নাড়িছেড়া ধনকে দিয়ে দেয় অন্য এক ছেলের ভরসায়। মেয়েটার আনাগোনায় মুখরিত বাড়িটা তার শূণ্যতায় খা খা করে, অপেক্ষা করা হয় কবে মেয়েটা একবার বাড়ি আসবে! বাড়িটা আবারও কলরবে মুখরিত হবে! আজাদ সাহেব দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মেয়েকে বুকে জড়িয়ে কেঁদে দেয়। আরফানের মাথায় বাবা আর বোনের শক্ত কথা গুলোর মানে ঢুকলো না। শুধু দেখলো তার বোন আর বাবা কাঁদছে, এতে তারও যেনো কষ্ট হচ্ছে। সে তার ছোট্ট দুটো হাত দিকে বাবা আর বোনকে আঁকড়ে ধরে চোখ বন্ধ করে দাড়িয়ে রয়।

শাহনাজ বেগম দিগন্ত, মাহাদ আর স্নেহাকে খাওয়ানো শেষে একসাথে সবাই ড্রইং রুমে আসে। এসেই বাবা আর ছেলেমেয়ের এমন কান্নারত মুহুর্ত দেখে থমকে দাড়ায়। সবার মনেই প্রশ্নের আনাগোনা! এরা কাঁদছে কেন?

চলবে?

#আকাশেও_অল্প_নীল
#পর্বঃ২৩
#আর্শিয়া_ইসলাম_উর্মি

৭০,
নিজের রুমের বারান্দার গ্রীল ঘেষে চুল ছেড়ে আকাশের দিকে নির্লিপ্ত চাহনীতে তাকিয়ে আছে রাইমা। সবাই যখন ওদের বাবা আর ছেলেমেয়ের মিষ্টি মুহুর্তগুলোয় এসে শামিল হলো! সময়টা বেশিক্ষণ দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। রাইমা ফ্রেশ হওয়ার কথা বলে রুমে আসে। গোসল দিয়ে আর বেরোয়নি সে। গোসল দেওয়ার ফলে চুল ভেজা ছিলো রাইমার।সেজন্যই চুলগুলো ছেড়ে দেওয়া। দিগন্ত রাইমার থেকে দু হাত দূরত্বে দাড়িয়ে আছে। দৃষ্টি রাইমার হাতের দিকে নিবদ্ধ। রাইমার অনামিকা আঙুলে জ্ব”লজ্ব”ল করছে সিম্পল ডিজাইনের স্বর্ণের আংটি। যেটা একটু আগেই পুরো পরিবারের সামনে দিগন্ত রাইমার হাতে পরিয়ে দিয়েছে। তাদের সম্পর্কের শুভ সূচনার শুরু হয়ে গেলো আজ হতে। বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক হয়ে গেলো আজ। রমজান মাস আসতে বাকি আছে আর ১১দিন৷ তাদের বিয়েটা হবে আগামী সোমবার। রবিবারে গায়ে হলুদ সোমবার বিয়ে। বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করতেই স্নেহা রাইমার জন্য ছোট্ট একটা উপহার স্বরুপ আংটি এনেছে। যেটা স্নেহা সবার সামনে দিগন্তকেই পড়িয়ে দিতে বলে। সবাই যখন গল্পগুজব করতে ব্যস্ত, তখন মাহাদই রাইমা আর দিগন্তকে আলাদা করে কথাবার্তা বলার সুযোগ করে দেয়। যেনো বিয়ে নিয়ে রাইমার কি ইচ্ছে, অনিচ্ছে সেসব রাইমা নির্দ্বিধায় দিগন্তকে বলতে পারে। দিগন্ত বেশ খানিকক্ষণ ধরে রাইমাকে চুপ থাকতে দেখে নিজেই মুখ খুললো, বললো,

“টিয়াপাখি আজ এতো চুপ যে!”

রাইমা চকিতে দিগন্তের দিকে তাকায়। টিয়াপাখি ডাকটা সোজা হৃদয় বরাবর লেগেছে রাইমার। এই ডাকটা যে তার খুব প্রিয় মানুষ টা ডাকতো! তার কথা মনে আসতেই রাইমার মনের মাঝে হুহু করে উঠে। চোখের কোণে জল জমে। রাইমা দিগন্তের সামনে নিজের দুর্বলতা প্রকাশ করতে চাইলো না। চট করে অন্যপাশ ফিরে চোখ মুছে নেয়। কিন্তু বিষয়টা দিগন্তের দৃষ্টি অগোচর রইলো না। সে রাইমার দু-বাহুতে হাত রেখে একবার রাইমাকে নিজের দিকে ফিরাতে চাইলো! পরে নিজের অনুভূতি সংযত করেই সে রাইমার উদ্দেশ্যে বললো,

“আমার কোনো আচার-আচরণে আপনি কি কষ্ট পেয়েছেন? কথাও বলছেন না, চোখে জল আসছে! আমি খুব খিটখিটে মেজাজের মানুষ রাই৷ অন্যের ফিলিংস বুঝতে পারিনা। অজান্তেই কষ্ট দিই৷ কিন্তু তাতে আমার কিছু যায় আসে না কখনও। কিন্তু আপনার বেলায় তো সেই নিয়ম খাটবে না। আমার আপনার বেলাতেই এই বিষয়টা নিয়ে অনেক কিছু যায় আসে। আপনি প্লিজ আমার কোনো কথায় কষ্ট পেলে সরাসরি বলবেন। আমি নিজেকে শুধরে নিবো। কিন্তু চুপচাপ থাকবেন না৷ আমার আপনাকে চুপচাপ দেখতে একদমই ভালো লাগে না৷”

রাইমা দিগন্তের হন্তদন্ত অবস্থা দেখে আড়ালে মুচকি হাসলো। কে বলবে? এই লোকটার সাথে তার দেখা হলেই একসময় শুধু ঝগড়াই হতো! মাত্র কিছুদিনের ব্যবধানে এই লোকটার কাছে তার নিরবতা ভ’য়ংকর হয়ে উঠেছে। বিয়ে নামক শব্দটা তবে ভীষণ জাদুকরী৷ প্রতিটা মানুষের জীবনের গতিই পাল্টে দেয়। ভবিষ্যতে যে কি হবে! এই লোককে কি করে সামলাবে? রাইমা ভেবে পেলো না। দিগন্ত এতোগুলো কথা বলার পরও যখন রাইমার কোনো উত্তর পেলো না! সে একটু ঝাঁজালো স্বরেই বললো,

“আমার ধৈর্যের বাঁধ খুব নড়বড়ে মিস রাইমা খন্দকার। আপনি সেই ধৈর্যেরই পরিক্ষা নিচ্ছেন! চুপ করে না থেকে কিছু তো বলুন!”

রাইমা এবার দিগন্তের দিকে ফিরলো। এরপর চমৎকার ভাবে একটু মুচকি হেসে বললো,

“আপনার পাগলামি গুলো বড্ড সুন্দর মি: দিগন্ত আহসান। আমি চুপ থাকলে আপনি এভাবেই ননস্টপ কথা বলে যাবেন। আমার ভালো লাগে।”

৭১,
এতোগুলো কথার পর রাইমার এই ছোট্ট একটা উত্তরে দিগন্তের মন ভরলো না। সে বাচ্চাদের মতো গাল ফুলিয়ে অভিযোগের সুরে বললো,

“এতোগুলো কথার এই ছোট্ট জবাব? আমায় টেনশনে রেখে কি শান্তি পেলেন?”

“দেখলাম, আমার নিরবতা কাউকে পো’ড়ায় কিনা!”

“কিন্তু আপনার চোখে জল আসলো কেনো?”

“টিয়াপাখি ডাকটা আমায় আমার বড্ড প্রিয় একজন ডাকতো জানেন?”

প্রিয় একজন শব্দটা শুনে দিগন্তের বুকের মাঝে এবার ছ্যাত করে উঠলো। তবে কি রাইমার জীবনে কেউ জড়িয়ে ছিলো? দিগন্ত কি তাদের মাঝে ৩য় ব্যক্তি হয়ে এসেছে? কিন্তু রাইমা যে বলেছিলো তার জীবনে কেউ ছিলো না! তবে এই প্রিয় মানুষ টা কে? দিগন্ত রাইমার দিকে প্রশ্নাত্মক চাহনী নিক্ষেপ করতেই রাইমা নিজ থেকেই বলে উঠে,

“আমার বেস্টফ্রেন্ড ছিলো সে। নাম মাহিশা, মিষ্টি করে ডাকতাম মাফিন। কেকপাগলী ছিলো তো এজন্য। সে ডাকতো আমায় টিয়াপাখি। নামটা শুনে একটু তার কথা মনে পরতেই কান্না আসতে চাইছিলো। আমার বিয়ে নিয়ে আমার থেকে বেশি স্বপ্ন ওর ছিলো। এটা করবে, ওটা করবে! কতো প্ল্যান’স। আজও সব স্বপ্ন স্মৃতি হয়ে বেঁচে আছে। শুধু সে কোথায় আমি জানিনা। কিন্তু আমি ঠিক আছি।”

“তো আপনার সেই বান্ধবী কোথায়? এটা জানেন না আপনি?”

“জানলে সে আপনার সামনে থাকতো। সে এতোটা পাগলাটে স্বভাবের ছিলো যে কখনও আমায় একা ছাড়তো না। ও তো মাঝে মাঝে মজা করে বলতো তোর বাসর ঘরে দুলাভাইয়ের বদলে আমিই থাকবো। তাতে যা হয় হবে। কিন্তু তোরে আমি একলা ছাড়বো না।”

পুরোনো কথা মনে পরতেই রাইমা একটু ইমোশনাল হয়ে গেলো। লম্বা লম্বা শ্বাস নিয়ে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করলো। দিগন্ত বুঝতে পারলো হয়তো রাইমার পুরোনো স্মৃতি মনে পরে কষ্ট লাগছে! তাই সে টপিক পাল্টাতে বললো,

“আচ্ছা সেসব থাক, আপনার বিয়ে নিয়ে কি কোনো প্ল্যান নেই! যে বিয়েতে এটা ওটা কিছু করবেন?”

“আছে তো, ছোটো ছোটো স্বপ্ন আছে। মা জানেন সব, আমিও এটা জানি মা সব আমার ইচ্ছে মতোই করবে।”

“আমাকেও বলুন, কি সেই স্বপ্ন গুলো!”

“সারপ্রাইজ থাকুক। বিয়ের সময় টের পাবেন।”

রাইমা কথাটা বলতেই দিগন্তের ডাক পরে। স্নেহা তাকে ডাকছে। দিগন্ত রাইমার দিকপ তাকিয়ে মৃদু হেসে বললো,

“আজ তবে যাওয়ার পালা। রেডি হোন, সেইদিনের জন্য, যেদিন আমি একা নয়, আপনাকে সাথে নিয়ে যাবো।”

দিগন্ত আলতো হেসে চলে গেলো। রাইমা দিগন্তের যাওয়ার পানে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। যে মানুষ টা জীবনে আসতে চলেছে! তার সাথে অন্তত সে যেনো ভালো থাকে, এই আশা নিয়েই রাইমা আকাশের দিকে তাকালো। আকাশেও আজ অল্প নীল, তারমাঝে স্বছ সাদা মেঘের টুকরো ভাসছে। ইশ কতোটা সুন্দর লাগছে এই আকাশকে দেখতে। মনে হচ্ছে মেঘের মাঝে রোদ হাসছে। দিগন্তও তার জীবনে আকাশের অল্প নীলের মতো হয়ে থাকুক। নীল বিষাদের রঙও বটে, তার জীবনের সব বিষাদের মাঝে সে রোদ হাসার মতো সব রাঙিয়ে রাখুক। নিজের অগোছালো চিন্তাভাবনায় নিজেই অবাক হলো রাইমা। কি সব আবোল তাবোল ভাবছে সে! বাড়ির সামনে রাস্তায় গাড়ির হর্ণে নিচ দিকে তাকালে রাইমা। দিগন্ত গাড়িতে উঠে বসছে। রাইমা সেদিকে এক পলক তাকিয়ে বিরবির করে বললো,

“আপনি আমার জীবনে সত্যিই আকাশের ঐ অল্প নীলের মতোই হয়ে থাকুন। সব বিষাদের মাঝে এক টুকরো প্রশান্তি হোন রোদের মতো।”

৭২,
পরেরদিন ভার্সিটি শেষে রাস্তার পাশ ঘেষে হাঁটছে শার্লিন আর রাইমা। উদ্দেশ্য একটা ক্যাফেতে বসা। শার্লিন রীতিমতো বিরক্ত বোধ করছে। সে রিকশায় উঠবে, অথচ রাইমা হেঁটেই চলেছে। সে নিজের ব্যাগ খুলে রাইমার দিকে এগিয়ে দেয়। রাইমা দেখে ভ্রুকুটি করে তাকায় শার্লিনের দিকে। শার্লিন রাইমার চাহনী লক্ষ্য করে বলে,

“কি! এমনে দেখোস কেন? তোর হাঁটার শখ, আমার ব্যাগ টা নিয়াও হাঁট। আমার হাঁটতে মন চাইতেছে না।”

“সামান্য একটু পথ হাঁটতেই হাঁপিয়ে গেছোস! খেয়ে খেয়ে দিনদিন হাতির মতো হচ্ছিস! নড়ে চড়ে চল একটু। স্লিম থাকবি।”

“একদম বডি শেমিং করবি না। শুটকি একটা। আমার খাওয়া দেখে তোর হিংসে হয় তাইনা?”

“ক্ষমা চাই বইন আমার। রাস্তা এটা, থাম অন্তত। ১০টাকা রিকশা ভাড়ার পথ। হাটতে আর কতোক্ষণ লাগে বল!”

“আমারে কোলে নে! আমি আর হাটমু না। যে গরম রে বইন। বসন্ত পেরিয়ে গ্রীষ্ম না আসতেই গরম তার যে তেজ দেখাতে শুরু করেছে! না জানি গরম আসলে বাংলাদেশ সৌদি আরব না হয়ে যায়! হলে উট কিনবো ইফরাদের টাকা মে’রে দিয়ে।”

শার্লিন মুখটা বাচ্চাদের মতো ইনোসেন্ট করে কথাগুলো বললো। রাইমা তা দেখে খিটখিটে গলায় বললো,

“সবটা সময় শুধু ফাজলামি। ভালো তো এজীবনে হইবি না।”

এরপর শার্লিনের মুখে ইফরাদের নামটা শুনে রাইমার মনে ইফরাদের নামটা আসতেই সে ফের বলে,

“ইফরাদ ভাইকে আসতে বলছিস তো?”

“না আসতে বললে ক্যাফেতে যাচ্ছি কেনো?”

“ঠিক আছে, পা চালিয়ে হাটা ধরতো একটু। সময় কম। আবার বাসায় ফিরতে হবে।”

“কিন্তু কি নিয়ে তোরা আলোচনা করবি বলতো?”

“গেলেই টের পাবি। আয় তো।”

রাইমা আর শার্লিন দুজনই পা চালিয়ে হাঁটা ধরে। আসলে রাইমা-ই একটু দরকারে শার্লিনের কাছে বলেছিলো যেনো ইফরাদকে একটু দেখা করতে বলে। দরকার আছে তার। ইফরাদের এতো বছর যোগাযোগ না থাকায় তার সাথে এখন কথা বলতেও কিছু টা অসস্তি লাগে রাইমার। আর কেউ না জানুক! উপরওয়ালা আর রাইমা তো জানে, ইফরাদ ও তার পরিবার ঠিক কি অবস্থা করেছিলো রাইমার! রাইমা কিছুই ভুলেনি। সে পারতো সবকিছু ইগনোর করে নিজের মতো থাকতে! কিন্তু যার জন্য এতো ঘটনা! তাকেই একবার খুজে বার করার চেষ্টা টুকু করবেনা? এর আগেও সে চেষ্টা করতে চেয়েছিলো! কিন্তু ইফরাদ থামিয়ে দিয়েছিলো। এরপর তো তারা চলেই যায় নিখোঁজ হয়ে। আবারও সেই তিক্ত মানুষগুলোর মুখোমুখি সে হলো চারটা বছর পর। চাইলেই হয়তো পারতো শার্লিনকে বুঝিয়ে ইফরাদের সম্পর্ক টা ভাঙতে! কিন্তু যতো অঘটন তো রাইমার সাথে ঘটেছে। শার্লিনের সাথে তো নয়! তাই রাইমা চেষ্টা করেছে ভালোবাসার মানুষগুলো ভালো থাকুক। এবার শুধু তারে খুজে পেলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। রাইমা আনমনে এসব ভাবতে ভাবতেই দুজনে ক্যাফেতে পৌছে যায়। পুরো ক্যাফেতে দৃষ্টি বুলিয়ে ক্যাফের এক কর্ণারে ইফরাদকে বসে থাকতে দেখে ওরা। ইফরাদের দিকে পা বাড়াতেই অপর দিক থেকে দিগন্তকেও ইফরাদের পাশে বসতে দেখতে পায় শার্লিন এবং রাইমা। ঐদিকে ক্যাফের ওয়াশরুম ছিলো দিগন্ত সেখান থেকেই বের হলো। তার মানে দিগন্ত আগেই এসেছে এখানে। রাইমা এটাই ভাবলো। শার্লিন আর রাইমা হাটা থামিয়ে ওদের দুজনের দিকেই তাকিয়ে আছে। থাকার কথা একজনের, আছে দুজন। শার্লিন রাইমার হাত ধরে নিচ দিকে টান দিয়ে বললো,

“কিরে বইনে! তোর পিস টা এখানে আবার কি করে আসলো!”

“চল গিয়ে বসি। এরপর না জানতে পারবো।”

রাইমা উত্তর দিলো, এরপর দুজনে পা বাড়ালো ওদের বসা টেবিলের দিকে।

চলবে?

#আকাশেও_অল্প_নীল
#পর্বঃ২৪
#আর্শিয়া_ইসলাম_উর্মি

৭৩,
দিগন্ত আর ইফরাদের মুখোমুখি বসতে বসতে রাইমা ইফরাদকে জিগাসা করলো,

“এই লোককে কোথায় পেলেন ইফরাদ ভাই? আমি তো শুধু আপনাকে আসতে বলেছিলাম!”

“রাস্তায় কুড়িয়ে পেয়েছি রাই। তাই উনার গাড়িতে ঝুলে চলে আসলাম।”

“আমার জানামতে তো দুলাভাই বাস ড্রাইভার নয়। তাহলে গাড়িতে ঝুললেন কি করে?”

শারিন ইফরাদের উত্তর শুনে কথার মাঝে ফোড়ন কেটে প্রশ্ন টা করে। দিগন্ত হেসে ফেলে শার্লিনের কথায়। রাইমা শার্লিনের প্রশ্ন শুনে ওর হাতে চাপর ম’রে বললো,

“তোর মুখটা কি ভালো থাকে না বইন? এতো উল্টাপাল্টা কথাবার্তা আসে কি করে তোর মাথায়?”

“আমার কি দোষ! তোর ভাই বললো কেন, আমার ভাইয়ের গাড়িতে ঝুলে আসছে! দিগন্ত ভাইয়ের তো প্রাইভেট কার আছে। আর প্রাইভেট কার এ ঝুলে কে?”

“অফ যা বইন। এনাফ বকবক করে ফেলছিস।”

রাইমা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে শার্লিনকে থামতে বলে। ভাগ্য করে বান্ধবী পেয়েছে, যাকে সবটা সময় বলতে হয়, অফ যা বইন। এতো তারছিড়া কথাবার্তা তার মাথায় আসে, খোদা। শার্লিন মুখটা কাচুমাচু করে রাইমার দিকে তাকিয়ে বলে,

“জানিসই তো আমি একটু বেশি কথা বলি। এমন করে আমায় থামিয়ে দিস কেন বইন?”

“এই যে হ্যালো! আমরাও আছি। এদিকেও একটু মনোযোগ দাও।”

ইফরাদ আর দিগন্ত যে এখানে উপস্থিত আছে, বেমালুম ভুলে বসেছে শার্লিন। রাইমা কপালে বুড়ো আঙুল ঘষে বলে,

“,আপনার হবু বউকে থামান ভাই। আমি তো পাগল হয়েই গিয়েছি। আপনার ঘরে নিয়ে আপনিও এবার পাগল হোন। আমার মুক্তি প্রয়োজন।”

দিগন্ত বসে বসে দুই বান্ধবীর কর্মকাণ্ড দেখে যাচ্ছিলো আর মিটিমিটি হাসছিলো। নিজে চুপচাপ, গম্ভীর স্বভাবের হওয়ার দরুণ পড়াশোনার পুরোটা সময় সে একা একাই কাটিয়ে এসেছে। মানুষ ধোঁকা দেয়, চলে যায়, ছেড়ে যায়, মনোবল ভেঙে দেয়, এসব ভয় থেকেই দিগন্ত সবসময় একা থাকারই চেষ্টা করেছে। স্কুল, কলেজ, ভার্সিটি লাইফে জীবনে থেকে যাওয়ার মতো ফ্রেন্ডশিপ! দিগন্তের করা হয়ে উঠেনি। ক্লাসমেইটদের সাথে টুকিটাকি যা কথা হতো পড়াশোনার জন্য! ঐ অব্দি পরিচয়। কিন্তু এখন কেনো জানি রাইমা আর শার্লিনের বন্ধুত্ব দেখে দিগন্তের আফসোস হচ্ছে। জীবনে এমন একটা ফ্রেন্ড সত্যি জরুরী, যে হু বলতেই সবটা বুঝে যাবে, আগলে রাখবে। দিগন্তের ওদের তিনজনের কথাবার্তার এই পর্যায়ে নিজের চিন্তাভাবনা রেখে গম্ভীর স্বরে বললো,

“তোমরা এবার একটু থামো। আমি স্কুলের কাজ সেরে বাসার দিকেই যাচ্ছিলাম। এরমাঝে রাস্তায় দেখি দাড়িয়ে আছে। নেমে জানতে পারি ইফরাদ রিকশার জন্য অপেক্ষা করছে। তো ইফরাদের সাথে কথা বলে ক্যাফেতে নামিয়ে দিতে চাইলাম। কিন্তু নামিয়ে দিতে এসে নিজে আর যেতে পারিনি। বললো তোমরা আসবে! তো এই কারণে আমাকেও আঁটকে দিলো।”

“হয়েছে অনেক কথা হলো, এবার কাজের কথায় আসা যাক। ইফরাদ ভাইকে ডেকে তার কাজের ঘোলা তো করে দিয়েছি। এবার কথাবার্তা শেষ করে বাসায় যাওয়া উচিত সবার। আমার এমনি ক্লান্ত লাগছে।”

রাইমা ক্লান্ত ভঙ্গিতেই কথাগুলো বললো। ইফরাদ এবার সিরিয়াস হয়ে একটু ঠিকঠাক হয়ে বসলো। দিগন্তের মাথায় চিন্তা এসে হাজির রাইমার কথা শুনে। কি কাজের কথা থাকতে পারে? শার্লিন ঐ যে চুপ হয়ে বসেছে, চুপই হয়ে আছে। ইফরাদ আগে সবার জন্য ওয়েটার ডেকে কফির অর্ডার দিলো।

৭৪,
ওয়েটার কফি দিয়ে যেতেই রাইমা কফি খেতে খেতে বললো,

“মাহিশার চিহ্ন কি জীবন থেকে মুছেই দিলেন ইফরাদ ভাই? আপনার বোন হয়। আমি না হয় কিছু হতাম না, তাই চারটা বছর একটা মেসেজ অব্দি দেননি যে, বেঁচে থাকলাম না ম”রে গেলাম। কিন্তু আপনার বোন, আপনি যে মায়ের সন্তান, সেই মায়ের সন্তান সে-ও। তার খোজ কি একবারও নেওয়ার চেষ্টা করেননি? সে বেঁচে থাকলো না ম”রে গেলো? খোজখবর খুজে বের করার চেষ্টা করেছিলেন? নাকি আমাদের থেকে দূরত্ব টানার সাথে তাকেও মনে দাফন করে ফেলেছেন?”

ইফরাদ অপরাধ বোধে মাথা নিচু করে রাইমার কথা শুনে। শার্লিন আর দিগন্ত তো রাইমার কথার আগামাথা কিছুই বুঝলো না। তাই নিরব শ্রোতা হয়েই ইফরাদের উত্তরের অপেক্ষা করলো। রাইমা ইফরাদের উত্তর না পেয়ে ফের প্রশ্ন করলো,

“আমার কথাগুলোর উত্তর কি আপনার জানা নেই ইফরাদ ভাই?”

“জানা আছে রাই। তোমার বান্ধবী একটা ছেলের ভালোবাসায় এতোটা অন্ধ হয়েছিলো যে, তোমার কথা ভাবা তো দূরে থাকলো, পরিবারের কথাও ভাবেনি। ভালোবাসা মানুষকে অন্ধ করে দেয় তার জলজ্যান্ত প্রমাণ তোমার বান্ধবী। তোমার বান্ধবী ঠিক ঐ ছেলের সাথেই পালিয়েছিলো। শুধু পুলিশ কেস, আবার ওকে সহজেই পেয়ে গেলে যদি জোড় এনে বিয়ে দেই! এই ভয়ে সুন্দর একটা প্ল্যান করেছিলো মাহিশা আর ঐ ছেলেটা। মাহিশা একাই বাসা থেকে পালিয়ে ঐ ছেলেটার আত্মীয় স্বজনের বাসাতেও খোজ করা হবে! এই আইডিয়া থেকে নিজে সাহস করে ছেলেটার এক ফ্রেন্ডের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে থাকছিলো। সব থেমে গেলে, মানে আমরা থেমে গেলে ও ঠিকই বেরিয়ে আসে দুবছর পর। তা কি করে এসেছে! একেবারে বিয়ে করে বাচ্চা সহ। কি আলতু ফালতু আইডিয়া, বাচ্চার মুখ দেখলে নাকি বাবা মা মানতে নারাজ থাকবেনা আর। আর ঐ আইডিয়া টাও ঠিকই কাজে লেগেছে। বাবা মা আদরের মেয়েকে ফেরত পেয়ে দুবছরে পাওয়া কষ্ট গুলো ঠিকই ভুলে যায়। তার সাথে নাতনীর মুখ দেখে তারা খুশিতে গদগদ। মাঝখানে অপরাধ বোধে পু”ড়ে ম”রছি আমি। তোমায় তো কম অপমান করিনি। মহল্লার মানুষগুলোও তোমায় কম কথা শোনায়নি। এতো অপরাধ বোধ নিয়ে তোমার সামনে এসে দাড়ানোর ক্ষমতা আমার হয়নি রাই। জানো তো অপরাধ বোধ মানুষকে ভেতরে ভেতরে নিঃশেষ করে দেয়।”

“সবই তো বুঝলাম ইফরাদ ভাই। কিন্তু যেখানে আপনি আপনাদের এতো খোজার চেষ্টা করেও পেলাম না! মাহিশা কি করে খুজে পেলো? আপনারা তো পুরাতন সব কন্টাক্ট নাম্বার, ভার্চুয়ালি খুজে পাওয়ার রাস্তা সব বন্ধ করে ফেলেছিলেন? সেখানে মাহিশা কি করে পেলো?”

“তোমার বান্ধবী তোমার থেকে সবসময় বেশি বুদ্ধিমতী আমি আগেও বলতাম রাই। বুদ্ধি তো তার কম নেই! সেই বুদ্ধি কাজে লাগিয়েছে।”

“মানে?”

“তুমি তো আমার পরিবারের প্রতিটা মানুষের সব সীমের নাম্বার জানতে না। সবসময় যেগুলো ইউজ হতো, সেগুলোরই নাম্বার জানতে। বাবার যে কর্মক্ষেত্রে ব্যবহৃত সীম! ওটা তো আর পাল্টানো যায়নি। কারণ বাবার ব্যবসা ক্ষেত্রে সবার সাথে কথা বলতে হতো। মাহিশা তো ঘরের প্রতিটা নাম্বার মুখস্ত রেখেছিলো। আবার নোট করেও রেখেছিলো কাছে। বাবা তো তার মেয়ের গলা শুনেই গলে গিয়ে মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে মেয়েকে দেখে মানিয়ে বাসায় আনে। ছেলেটা ছিলো বড়লোক বাবার আদুরে দুলাল। ছেলের পছন্দ তার বাবা মা ফেলেনি। আমার বাবা আর কি ফেলবে বলো!”

“বাহ ইফরাদ ভাই। মাঝখানে এতে ঘটনা হলো, আমি রাইমা সবকিছুর অনবগতই রয়ে গেলাম। শালুর সাথে আপনার সম্পর্ক না হলে বোধ হয় এসবও আমার জানা হতো না। কি সুন্দর সিনেমাটিক ঘটনা। তালিয়া জারুর বানতি হ্যায়।”

৭৫,
রাইমা কথাটা তাচ্ছিল্যের স্বরে বলে আস্তে করে কফির মগ রেখে দুই হাতে তালি বাজায়। শার্লিন এতোক্ষণ চুপ করে ছিলো। কিন্তু এবার আর চুপ থাকতে পারলো না৷ ইফরাদের উদ্দেশ্যে বললো,

“আপনার এই গুণবতী বোনের কথা তো আগে কখনও আমায় বলেননি? আমিও জানতে পারি রাইয়ের কাছে। আপনাকে বলবো বলবো করেও মাহাদ ভাইয়ের বিয়ের চক্করে বলা হয়নি। আপনার সাথে পরিচয়ের এতোদিন হয়ে গেলো! অথচ আমি তাকে দেখিইনি। আবার মাহাদ ভাইয়ের বিয়েতেও সে আসেনি, অথচ পরিবারের বাকি সবাই এসেছিলো। তখনও কেউ কিছু আমাকে না হোক, রাইকে তো জানানো যেতো! ওকেও জানাননি। আজ রাই ডেকে জানতে না চাইলে তাও তো বলতেন না। আপনার বোনের ঘটনা তো নাটকের, গল্পের ঘটনাকেও ফেইল করিয়ে দিচ্ছে। বাহ?”

দিগন্ত চুপচাপ বসে থেকে ওদের তিনজনের কথাবার্তা শুনে ছোট্ট করে বললো,

“ইফরাদকে পুরো বিষয়টা ক্লিয়ার করতে দাও শার্লিন। এরপর না হয় যা বলার বলো। যতেটুকু জানাচ্ছে, প্রশ্নের পর প্রশ্ন আসছেই। সব ক্লিয়ার করতে দাও। ইফরাদ তুমি বলো,

“আমায় ভুল বুঝো না রাই। বোনকে না পেয়ে তখন তো কি করেছিলাম! কিছুই আশা করি ভুলোনি। তোমায় তো কম হেনস্তা করিনি। আমার বোন কোথায় আছে এটা তুমি জানতে আইডিয়া করে পুলিশের তদন্তের জন্য তোমায় তো থানা আর বাসা কম হ্যারাজ করা হয়নি! এলাকার মানুষও তোমায় কম ছোটো করেনি। তোমার সঙ্গে ঘরের মেয়ে ন”ষ্ট হয়, সঙ্গ দোষে লোহা ভাসে! এমন কথাও তোমার কম শুনতে হয়নি। এলাকায় তো একপ্রকার হইচই উঠে যায়, তুমিই আমার বোনকে পালাতে সাহায্য করে আমাদের জানাওনি! তুমি চিটারি করেছো আমাদের সাথে। বন্ধুত্বের নামে মুখোশ পরে আমার বোনের ক্ষতিই করে গেছো! এমন কি তোমার উপর হিংসার বশে আমার বোনকে খু”ন করে দিয়েছো, এমন কথাও তো বলতে বাকি রাখেনি আমার পরিবার৷ যখন সম্পর্কের কথা সবাই জানে তখনও তোমায় কম অপমান করা হয়নি যে, জেনেশুনে কেনো সম্পর্কে জড়াতে দিলে এমন কম বয়সী একটা ছেলের সাথে, যে নিজেই ম্যাচিউর নয়, আমার বোনকে কি আগলাতো। সেই অপমানের জেড় ধরে খু”ন করার মতো মিথ্যা অপবাদও তুমি শুনতে বাকি ছিলে না। আমি তো এককাঠি উপরে চিন্তা করে তোমায় কম অপমান করিনি যে, তুমি আমায় পছন্দ করো এমন একটা ধারণা থেকে তোমায় বলেছিলাম, মাহিশাকে তার ভালোবাসার মানুষকে পাইয়ে দিয়ে, মাহিশার মাধ্যমে আমায় পাবে! এমন বাজে ধারণাও পুষে তোমায় কম কথা শুনতে হয়নি, যখন এসব এলাকার মানুষ রোজকার ঝগড়া নিয়ে সব জানতে পারে, তোমার চরিত্রেও আঙুল তুলতে বাকি রাখেনি। মাহাদ ভাইয়ের এক্সি”ডেন্টের জন্য তোমাদের যেতে হলে সবাই তো বলেও দিয়েছে, পুলিশের ভয়ে তোমরা পালিয়ে বেড়াচ্ছো। এতো এতো অপমান বিনা কারণে করে, সব সত্যিটা জানার পর অপরাধ বোধে ভেতরে ভেতরে তোমার সামনে আসার সাহসটা আমার হচ্ছিলো না রাই। আমার বাবা মায়েরও সেইম অবস্থা। প্রথম ২বছর তো ধরেই নিয়েছিলাম মাহিশা আর নেই। থাকলে তো একটা খোজ অন্তত পেতাম। ঐ দু বছর এমন একটা দিন নেই তোমার প্রতি ঘৃণা আসতো না। ২বছর পর তোমায় বিনা কারণে ঘৃণা করার জন্য নিজেদের উপরই কেমন ঘৃণা জন্মে যায় যে! নির্দোষ একটা মেয়ে, তাকে তো হ্যারাজ করেইছি, সাথে তার পরিবারকেও। এই অপরাধ বোধের যে কি যন্ত্রণা! তোমায় বলে বোঝানো যাবেনা রাই। তোমার কাছে ক্ষমা চাওয়ার মুখও আমার নেই। তবুও আমি ক্ষমা চাচ্ছি রাই।”

৭৬,
সব ঘটনা শুনে শার্লিন আর দিগন্ত হতভম্ব। একটা মেয়েকে এতো বাজে ভাবে বিনা কারণে পুরো সমাজের সামনে অপমানিত হতে হয়েছে? এসব ঘা আদৌও শুকোয় তো! মনের মাঝে চাপা কষ্ট থাকে না? সেই কষ্টের ভার রাইমা বয়ে বেড়াচ্ছে কি করে? দিগন্ত বিষয়টা ভাবতেই তার কেমন একটা মনের মাঝে ধরফর অনুভূতি হয়৷ আচ্ছা রাইমাকে যে উপর থেকে দেখা যায় সে ভালো আছে! ভেতরে ভেতরে সে আদৌও ভালো আছে? চিন্তা করে কূল পেলোনা দিগন্ত। পূর্ণ দৃষ্টি মেলে রাইমার দিকে তাকালো। মেয়েটার চোখের কোণে জল ভাসছে। হয়তো অতীতের তিক্ত স্মৃতি তার চোখের পাতায় ভাসছে। দিগন্ত তাকিয়ে থাকতে থাকতেই দেখলো রাইমার চোখ ছাড়িয়ে অবাধ্য জলরাশী গাল বেয়ে নিচে পরছে। অতীতের স্মৃতিগুলো যে একটু বেশিই তিক্ত। নারীর আত্মসম্মানে দাগ লাগলে যে সে এমনিই ভেতর থেকে গুড়িয়ে যায়! সেখানে রাইমা তো নরম স্বভাবের মেয়ে। আত্মসম্মানে আঘা”ত করলে তো আ”ঘাত ফেরানো যায়! কিন্তু দাগ লাগালে সেই দাগ মোছার চেষ্টা করলেও একদল লোক বলবে, এই মেয়েটার উপর একসময় এই অপবাদ দেওয়া হয়েছিলো, সত্য মিথ্যা কেউই যাচাই করবেনা। শার্লিন রাইমার কাঁধে হাত রেখে রাইমাকে সামলানোর চেষ্টা করছে। ইফরাদ অপরাধ বোধে মাথা নিচু করে বসে আছে। রাইমা নিজেকে ধাতস্ত করার চেষ্টা করে বললো,

“আপনারা অপরাধ বোধে সামনে আসেননি ভালো কথা, আপনার বোন কেনো আসেনি ইফরাদ ভাই? ও তো জানে ও আমার কাছে ঠিক কি?”

“সে না হয় তোমার বান্ধবীর থেকেই জেনে নিও রাই। ওর সাথে আমি কথা বলিনা, আমার বোন আছে এটাও আমি ভুলতে চেষ্টা করি। ওর জন্য কম কান্না করিনি আমি, ওর জন্য তোমায় এতো অপমান করেছি, ভেঙেচুরে দিয়েছি ভেতর থেকে। একবারও বোঝার চেষ্টা করিনি, আমার পরিবার তার মেয়ে হারালে তুমিও তোমার আত্মার সাথীকে হারিয়েছিলে! এতো এতো রিজন নিয়ে আমি আজও ওর সাথে কথা বলে উঠতে পারিনি। ক্ষমাও করতে পারিনি। না নিজেকে, না ওকে।”

“ঠিক আছে ইফরাদ ভাই। ওর থেকেই সব শুনবো, আমায় ওর কাছে নিয়ে যাবেন প্লিজ?”

চলবে?