আজও বৃষ্টি নামুক পর্ব-১৬+১৭

0
240

#আজও_বৃষ্টি_নামুক❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ১৬
_________________

বেশ ভাবনা নিয়েই নিজের রুমে দাঁড়িয়ে আছে অপূর্ব। চোখে মুখে অশেষ বিষন্নতার ছোঁয়া। অপূর্ব সত্যি বুঝচ্ছে না SA আর এই শাহরিয়ার আদনান আসলেই কি একজন মানুষ নাকি দুজন আলাদা ব্যক্তি। অপূর্ব তার ফোনটা বের করলো কল করলো আকিবের নাম্বারে। দু’বার রিং হতেই ফোন তুললো আকিব। বললো,

‘ জ্বী ভাই বলুন,

আকিবের কন্ঠ কানে আসতেই বললো অপূর্ব,

‘ আকিব আমার একটা লোকের ফুল বায়োডাটা চাই।’

উওরে বেশ বিস্ময় নিয়েই বললো আকিব,

‘ কার ভাই?’

আকিবের কথা শুনে বেশি না ভেবেই বেশ গম্ভীর কণ্ঠে বললো অপূর্ব,

‘ শাহরিয়ার আদনান।’
____

রাতের নিকষ কালো অন্ধকারের ঘেরা চারপাশ। গাছের পাতাগুলো নড়ছে আনমনে, বেলকনি বেয়ে হাল্কা হিমশীতল বাতাস আসছে। দরজা জুড়ে সাদা পর্দাগুলো নড়ছে আপনমনে। আর এসবের মাঝে রান্নাঘরে চা বানাচ্ছে প্রিয়তা। তন্দ্রা দাদিমা রুমে বসে টিভি দেখছেন। আজ প্রিয়তাই ইচ্ছে পোষণ করলো যে সন্ধ্যার পরের চা টা সেই বানাবে দাদিমাও শুনলো, অনেকদিন তো হলো নিজ হাতের চা খাওয়া আজ নয় ওই অল্প বয়সী যুবতী মেয়ের হাতে চা খাওয়া যাক। প্রায় আধ ঘন্টা পর গরম গরম দু’কাপ দুধ চা বানিয়ে রুমে ঢুকলো প্রিয়তা তারপর গ্র্যান্ডমার দিকে এক কাপ চা এগিয়ে দিয়ে বললো,

‘ খাও দাদিমা।’

দাদিমাও নিলেন খুশি হলেন খুব। তারপর চায়ের চুমুক দিয়ে বললো,

‘ বাহ নাতনি তো দেখি খুব ভালোই চা বানাতে পারে।’

মুচকি হাসে প্রিয়তা। বলে,

‘ তোমার ভালো লেগেছে দাদিমা,

উওরে দাদিমাও মাথা নাড়িয়ে বলে,

‘ হুম খুব, তা আজকে কেমন কাটলো দিন। ভার্সিটি ভর্তি হতে পেরেছো তো?’

‘ হুম দাদিমা।’

‘ খুব ভালো কাল থেকেই ভার্সিটি যাবে তো?’

‘ হুম।’

বলেই চা খেতে খেতে গল্প জুড়ে দেয় দুজন। হঠাৎই প্রিয়তা বলে,

‘ দাদিমা তোমার মোবাইলটা একটু দিবে,

দাদিমাও শুনলো বিছানার উপর থেকে নিজের ফোনটা এনে প্রিয়তার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,

‘ হুম নেও কাউকে ফোন করবে বুঝি?’

উওরে খানিকটা নিরাশ হয়ে বললো প্রিয়তা,

‘ হুম বুবুকে আজ কতদিন হলো বুবুর সাথে কথা হয় না।’

প্রিয়তার মন খারাপ দেখে ওর মাথা হাত বুলাতে বুলাতে বললো গ্র্যান্ডমা,

‘ মন খারাপ করো দিদিভাই ফোন করে কথা বলে নেও,

প্রিয়তাও শুনলো চোখের ভিড়ে খানিকটা পানি আসায় সেটা মুছে নিজের রুমের উদ্দেশ্যে দৌড়ালো প্রিয়তা। তারপর ডাইরির পৃষ্ঠার থেকে বোনের নাম্বারটা লিখে কল করলো তক্ষৎনাত। পর পর তিনবার কল করলো প্রিয়তা, কিন্তু হতাশার বিষয় হলো প্রেমা ফোন তুললো না। প্রিয়তার চোখে পানি চলে এলো আবার। কান্না ভেজা কন্ঠ নিয়েই বললো,

‘ তুই ফোন কেন তুলছিস না বুবু?’

এমন সময় হঠাৎই যেন অপূর্ব তার পাশে এসে দাঁড়ালো। বললো,

‘ এভাবে কেঁদো না মেয়ে, তুমি কাঁদলে যে একদমই সুন্দর দেখায় না।’

প্রিয়তা যেন চমকালো,পাশ ফিরে তাকালো তক্ষৎনাত কিন্তু আশেপাশে কাউকেই দেখলো না। সে কি ভুল শুনলো, কেন যেন মনে হলো অপূর্ব তাকে কিছু বললো তাকে কাঁদতে বারন করলো। কিন্তু এটা কি করে সম্ভব অপূর্ব এখানে কি করে আসবে। হয়তো তার মনের ভুল।’
____

পরেরদিন দুপুরের কড়া রোদ্দুরে আচ্ছন্ন চারপাশ পাশ। টিভি রুমের সোফায় বসে আছে অপূর্ব। গা জুড়ে থাকা কালো শার্টটা ঘেমে লেপ্টে আছে শরীরের সাথে। আজ একটা ছেলের সাথে তুমুল বেগে ঝগড়া হয়েছে অপূর্বের, ইলেকশনের মিটিং নিয়ে কিছু একটা ডিসকাস হচ্ছিল সবার সাথে তখনই অপূর্বকে নিয়ে উল্টো পাল্টা কথা বলায় রেগে যায় অপূর্ব। আর রেগে গিয়ে গায়ে হাতও তুলে বসে সে। আজ আকিব ছিল না অপূর্বের সঙ্গে তাই তাকে দমানোরও কেউ ছিল না। শেষে অপূর্ব সবাইকে উপেক্ষা করে চলে আসে বাড়ি। আজ যেন মাথাটা একটু বেশিই গরম হচ্ছে অপূর্বের। একই তো শাহরিয়ার আদনানের বায়োডাটার কোনো খবরই এখন পর্যন্ত আকিব কিছু দিতে পারছে না তাকে তারপর দলের মানুষের উটকো ঝামেলা। অপূর্ব জোরে জোরে নিশ্বাস ফেললো এমন সময় বাড়ির ভিতর উৎকন্ঠা অবস্থা নিয়ে দৌড়ে আসলো আকিব। চুলগুলো এলেমেলো, চোখে মুখে বিষন্নতা। আকিব হতভম্ব হয়ে দৌড়ে আসতে গিয়ে সোফার সাথে উস্টা খেয়ে উল্টে পড়লো সোফার ওপর তারপর বললো,

‘ অপূর্ব ভাই,

অপূর্ব চোখ খুলে তাকালো শান্ত গলাতেই বললো,

‘ তুমি আজও ঠিকভাবে হাঁটা শিখলে না আকিব।’

উওরে আকিব বললো,

‘ ওসব বাদ দিন ভাই আগে টিভিতে নিউজের চ্যানেলটা দেখুন,

‘ কেন কি দেখাচ্ছে নিউজে,

আকিব বললো না, নিজেকে সামলিয়ে তক্ষৎনাত সোফা থেকে উঠে অপূর্বদের টিভিটা ছাড়লো। অপূর্বও তাকালো টিভির পর্দায়। আকিব নিউজের চ্যানেলটা ধরতেই এক ভদ্র মহিলা বলছে,

‘ ব্রেকিং নিউজ! আশকোনার ছাত্রদলীয় নেতা আবু তালেবের ছেলে শাহরিয়ার আদনান আজ সকালে নিজ বাড়িতে খুন হয়েছে, কি করে কি হলো কেউ কিছু বলতে পারছে না। কোনো এক বিশেষ কারনে বাড়ির সবাই গিয়েছিলেন তাদের এক আত্মীয়ের বাড়ি। শাহরিয়ার আদনানেরও নাকি সকালের দিকে যাওয়ার কথা ছিল ওখানে কিন্তু উনি না যাওয়ায় এবং ফোন করলে ফোন না তোলায় কেমন সন্দেহ লাগে সবার। পরে দুপুরের দিকে বাড়ি এসে তাকে খুন হতে দেখা যায় বাড়িতে, মুখটাকে পুরো থেতলে দিয়েছে খুনি। ঘটনা স্থলে পুলিশও পৌঁছে গেছেন ইতি মধ্যে। তদন্ত চলছে,

বলেই আদনানের মৃতদেহের মুখটা ফ্যাকাসে করে দেখাতে লাগলো টিভিতেই। আদনানের মা বাবার সাথেও কথা বলা হচ্ছে এমনটাও দেখাচ্ছে টিভিতে।’

অপূর্ব যেন দু’মিনিটের জন্য পুরো থমকে গেল এটা কে করলো। অপূর্বের ভাবনার মাঝেই আকিব বললো,

‘ ভাই খবরাখবর বের করতে গিয়েই এই নিউজটা চোখে পড়ে। কে বা কারা করেছে জানা নেই। আপনার কি এখনো মনে হয় ভাই শাহরিয়ার আদনানই এস এ।’

উওরে আকিবের দিকে তাকিয়ে বললো অপূর্ব,

‘ আদনানকে কে মারতে পারে আকিব?’

‘ জানি না তো ভাই।’

‘ জানতে হবে আকিব।’

‘ ঠিক আছে ভাই পুলিশ তো তদন্ত করছে।’

‘ পুলিশের আশায় বসে থাকা যাবে না আকিব, এ নিশ্চয়ই কোনো বড় ধরনের ষড়যন্ত্র চলছে।’

‘ হতে পারে ভাই।’

অপূর্ব কিছু বলে না। গভীর ভাবনায় মগ্ন হয়। টিভির পর্দায় দৃষ্টি রাখলো আবার। আদনানের দেহটা চোখে পড়লো। না যা হলো একদমই ঠিক হয় নি, একদমই না। কিন্তু আদনানকে মারলো কে এই ‘এস এ’। না এখনও এস এর চাপ্টার ক্লিয়ার হয় নি। এই এস এ কে জানতেই হবে, আদনান যদি এস এ হয় তাহলে নিশ্চয়ই এস এর ওপর আরো কোনো বড় মাথা আছে যে আড়াল থেকে এসব করছে, কিন্তু তার সাথে এই আদনানের কি শত্রুতামি থাকতে পারে, আদনান তো এখন পর্যন্ত রাজনীতির দলেই যুক্ত হয় নি, দলে যুক্ত হওয়ার আগেই, না আর ভাবা যাচ্ছে না। অপূর্ব তার চোখ বন্ধ করে ফেললো। এস এর বিষয়টাকে ঠিক যতটা সহজভাবে নিয়েছিল অপূর্ব বিষয়টা ততটাও সহজ নয়। আবার সবকিছু জট পাকিয়ে গেল, কে হতে পারে এই শাহরিয়ার আদনানের খুনি? কে?’
____

অন্ধকার বদ্ধ রুমে টিভি চলছে একটা। টিভিতে আদনানের খুনের নিউজ দেখাচ্ছে। সোফার ওপর পায়ের পা রেখে বসে আছে এক সুদর্শন যুবক। টিভির চ্যানেলের দিকে তাকিয়ে ভয়ংকর এক হাসি দিয়ে বললো সে,

‘ এবার কি করে SA কে খুঁজে বের করবে অপূর্ব? এবার তো আরেক ঝামেলা এসে মাথায় ঝট পাকালো এবার কি হবে?’

বলেই উচ্চ স্বরে হাসলো যুবকটি। ঘর কাঁপানো এক ভয়ংকর হাসি।’
____

বিকেলের ফুড়ফুড়ে বাতাস। মাথায় ওড়না মুড়িয়ে বাড়ি থেকে সল্প খানিকটা দূরত্বে একটা টিউশনি পড়াতে যাচ্ছে প্রিয়তা। আজই প্রথম দিন তার টিউশনির। টিউশনটা বাড়ির কাছাকাছি হওয়ায় বোরকা পড়েনি প্রিয়তা তবে মুখে ভালোমতো ওড়না মুড়িয়ে যাচ্ছে সে। কাল ভার্সিটি থেকে ফিরেই গ্র্যান্ডমা তাকে নিয়ে যায় স্টুডেন্টের বাড়ি, কথাও হয়েছে ফ্যামিলির সাথে। বাসায় গিয়ে পড়াতে হবে এমনটাই বলেছে তারা প্রিয়তারও টিউশনিটা খুব দরকার ছিল তাই রাজি হয়ে যায় আর স্টুডেন্টের বাড়িটাও খুব কাছে হওয়ায় খুব বেশি অসুবিধা হবে না বলে মনে করে প্রিয়তা। প্রিয়তা আনমনাই এগিয়ে চললো সামনে। এমন সময় একটা টেক্সি গাড়ি এসে থামলো প্রিয়তার সামনে। তারপর গাড়ির ভিতর থেকে একটা উঁচা লম্বা চুড়া উজ্জ্বল শ্যামবর্নের একটা ছেলে বের হয়ে বললো তাকে,

‘ এক্সকিউজ মি মিস আপনি কি বলতে পারবেন এখানে তন্দ্রা বিলাস নামের আলিশান একটা একতলা বাড়ি কোথায় আছে? আমি অনেক দূর থেকে এসেছি আপনি যদি জেনে থাকেন তাহলে একটু বলবেন প্লিজ।’

প্রিয়তা ভড়কালো, চমকালো, অবাক হলো খুব। এই ছেলে গ্র্যান্ডমার বাড়ির কথা জিজ্ঞেস করছে কিন্তু কে এই ছেলে, সে তো জানে গ্র্যান্ডমার এখানে চেনা কেউ নেই তাহলে। প্রিয়তার ভাবনার মাঝেই আবারও বললো ছেলেটি,

‘ কি হলো মিস আপনি জানেন তন্দ্রা বিলাস কোথায় আছে?’

প্রিয়তা নিজের ভাবনা থেকে বের হয় তারপর মাথা নাড়িয়ে বলে,

‘ হুম চিনি,

প্রিয়তার কথা শুনে ছেলেটির মুখে যেন হাসি ফুটে উঠলো। পাক্কা তিনঘণ্টা যাবৎ এই তন্দ্রা বিলাস খুজে চলেছিল ছেলেটি কিন্তু কিছুতেই খুঁজে পাচ্ছিল না। যাকেই জিজ্ঞেস করেছে কেউ বলতে পারে নি। যাক ফাইনালি কেউ তো বললো সে জানে এই তন্দ্রা বিলাস সম্পর্কে। ছেলেটির হাসি মাখা মুখ দেখেই বললো প্রিয়তা,

‘ আপনার কি কাজ তন্দ্রা বিলাসে?”

‘ কাজ তো একটা আছেই যাই হোক আপনি শুধু বলুন বাড়িটা কোথা থেকে কোথায় গেলে পাবো।’

প্রিয়তা বেশি ভাবলো না। বললো,

‘ এখানে থেকে সোজা গিয়ে ডানে যাবেন তারপর দুটো মোর পেরোলেই তন্দ্রা বিলাস বাড়ি। তবে ডানে যাওয়ার পর কিন্তু আপনি এই গাড়িতে যেতে পারবেন না আপনাকে হেঁটেই যেতে হবে রাস্তা ছোট কি না।’

ছেলেটি খুশি হলো। বললো,

‘ থ্যাংক ইউ মিস ভালো থাকবেন।’

বলেই ছেলেটিও তার টেক্সি গাড়িতে উঠে ছুটলো তন্দ্রা বিলাসের উদ্দেশ্যে। আর প্রিয়তা কিছুক্ষন ছেলেটির যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে বেশি না ভেবে ছুটলো নিজের কাজে। কিন্তু তারপরও মনে প্রশ্ন একটা রয়েই গেল, কে এই ছেলে? কি সম্পর্ক এর সাথে গ্র্যান্ডমার?’

#চলবে…..

#আজও_বৃষ্টি_নামুক❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ১৭
_________________

বেশখানিকটা চিন্তিত মাখা মুখ নিয়ে স্টুডেন্টকে পড়াচ্ছে প্রিয়তা। মনোযোগ দিয়েছে ঠিকই তবে মস্তিষ্ক আটকে রয়েছে তখনকার শ্যামবর্নের ছেলেটার ওপর। ছেলেটা কে ছিল, আর তন্দ্রা বিলাসে কাজ কি তার। প্রিয়তা নানা কিছু ভাবলো পরমুহূর্তেই মাথা থেকে সবটা ঝেড়ে ফেলে দিয়ে মনোযোগ দিলো স্টুডেন্টের পড়ার দিকে।’

পাক্কা এক ঘন্টা দশ মিনিট পর স্টুডেন্টকে পড়িয়ে বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হলো প্রিয়তা। আজ প্রথম দিন থাকায় সেই হিসেবে খারাপ কাটে নি বিকেলটা। প্রিয়তা এগিয়ে চললো, হাঁটতে হাঁটতে যখন এসে তন্দ্রা বিলাসের পৌঁছালো সে বাড়ির সদর দরজা ছিল খোলা প্রিয়তা সদর দরজা দিয়েই ঢুকলো ভিতরে, ভিতর থেকে কথা বলার আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল খুব তবে কি ছেলেটা এখনো দাদিমার কাছেই আছে। প্রিয়তা কৌতুহলী এগিয়ে গেল, মেইলি কন্ঠই কানে আসছে তার। প্রিয়তা এগিয়ে গিয়ে দাঁড়ালো গ্র্যান্ডমার রুমের সাদা পর্দাটার আড়াল করে এরই মাঝে গ্র্যান্ডমা তাকালো দরজা দিকে প্রিয়তাকেও দেখলো সে। সাথে বললো,

‘ তুমি এসেছো প্রিয়তা? ভিতরে আসো তোমার সাথে আয়মানের পরিচয় করিয়ে দেই।’

হুট করেই গ্র্যান্ডমার মুখে কোনো মেয়েকে উদ্দেশ্য করে কিছু বলা শুনতেই আয়মান তাকালো পিছনে। আসার পথের সেই এড্রেস বলে দেওয়া মেয়েটাকে দেখে চরম অবাক হলো সে। আয়মান তক্ষৎনাত বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললো,

‘ আরে আপনি এখানে?’

প্রিয়তাও তাকালো ছেলেটার দিকে। তার ধারনাই ঠিক হলো৷ এই ছেলে সেই ছেলেই। প্রিয়তা এগিয়ে গেল গ্র্যান্ডমার দিকে। এরই মাঝে গ্র্যান্ডমা আয়মানের দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ তুমি ওকে চেনো আয়মান?’

উওরে আয়মানও বললো,

‘ হা, তোমায় বলেছিলাম না গ্র্যান্ডমা আসার সময় একটা মেয়ে রাস্তা না দেখিয়ে দিলে আমি আসতে পারতাম না সে তো এই মেয়েই।’

‘ ওহ,

গ্র্যান্ডমা আর আয়মানের কথা শুনে এবার প্রিয়তা গ্র্যান্ডমাকে প্রশ্ন করলো,

‘ উনি কে দাদিমা?’

উওরে গ্র্যান্ডমাও হাল্কা হেঁসে বললো,

‘ ও আমার নাতি প্রিয়তা কিছুদিনের জন্য আমেরিকা থেকে এখানে থাকতে এসেছে আমার সাথে।’

এবার যেন আরো অবাক হলো প্রিয়তা। এর মানে এই আয়মান ছেলেটি গ্র্যান্ডমার ছেলের ছেলে। অতঃপর প্রিয়তা আর বেশি ভাবলো না। খানিকটা ক্লান্তমাখা গলায় বললো,

‘ ওহ, আচ্ছা দাদিমা আমি আমার রুমে গেলাম তোমরা কথা বলো,

‘ ঠিক আছে।’

উওরে আর কিছু না বলে চলে গেল প্রিয়তা। আর আয়মানও কিছুক্ষন প্রিয়তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে কথা বলতে ব্যস্ত হলো গ্র্যান্ডমার সাথে।’
___

রাত আটটার কাঁটায় ছুঁই ছুঁই। নিজের রুমের পড়ার টেবিলে বই পড়ছিল প্রিয়তা এমন সময় হঠাৎই তার রুমের বেলকনি বেয়ে বিকট এক শব্দ আসতেই চমকে উঠলো প্রিয়তা ঘাবড়েও গেল খানিকটা। কিন্তু পরক্ষণেই নিজেকে সামলে কৌতুহলী এগিয়ে গেল সে বেলকনির দিকে বেলকনির দরজা খুললো আস্তে আস্তে হঠাৎই প্রিয়তা দেখলো একটা বড় লাল রঙের বড় এক টুকরো ইটের সাথে একটা চিরকুট পেঁচানো প্রিয়তা এদিক সেদিক তাকালো কিন্তু না কেউ নেই আশেপাশে প্রিয়তা এগিয়ে গিয়ে ইট সমেত চিরকুটটা নিয়ে সোজা ঢুকে পড়লো রুমে তারপর বেশি না ভেবেই চিরকুটটা বের করলো সে। চিরকুটের ভাজটা খুলতেই গোটা গোটা অক্ষরে লেখা দেখলো প্রিয়তা। কেউ লিখেছে তাকে,

‘ প্রথম দিন বোরকা ব্যতিত বাসা থেকে বের হয়েছো মেয়ে আমি মেনে নিয়েছি কিন্তু নেক্সট এমন ভুল করলে তোমার কিন্তু ক্ষতি হবে।’

প্রিয়তা অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো চিরকুটটার দিকে। এমন থ্রেট জনিত কথা কে লিখতে পারে তাকে। প্রিয়তা চরমভাবে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো চিরকুটটার দিকে আবারও চিরকুটের লেখাটা পড়লো সে। এ কেমন কথা? কিন্তু চিরকুটটা লিখলো কে?’
____

ঘুটঘুটে অন্ধকারে ঘেরা বাড়ির চারপাশ। আজ আবার ডিনার সেরে বাড়ির ছাঁদে উঠেছে অপূর্ব। ঘড়িতে তখন প্রায় বারোটা ছাড়িয়ে। মাথার মধ্যে নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে অপূর্বের। এস এ কে? শাহরিয়ার আদনানকে কে মারলো? কেন মারলো? কারন কি। কেউ কি আছে যে তাদের দলে থেকে বিশ্বাস ঘাতকতা করছে। না হলে কাল আকিবকে আদনানের খবর আনতে বললো আর আজই ওর মৃত্যুর খবর আসলো। কি করে কি সম্ভব? আচ্ছা আদনানের মৃত্যুর সাথে এস এর কি কোনো সম্পর্ক ছিল বা আছে। অপূর্ব ভাবছে অনেক কিছু ভাবছে সে, হঠাৎই কি ভেবে কাকে একটা ফোন করলো সে। তারপর বললো,

‘ কোনো খবর পেয়েছো বা কোনো হদিস আমাদের দলেই কি কেউ বিশ্বাসঘাতক আছে।’

উওরে অপরপ্রান্তের ব্যক্তিটি বললো,

‘ একটা ভিডিও পেয়েছি ভাই কিন্তু ব্যক্তিটিকে দেখলে আপনি বিশ্বাস করতে চাইবেন না।’

‘ খুব কাছের কেউ?’

‘ জ্বী ভাই।’

‘ ভিডিও পাঠাও আমি দেখবো।’

‘ আচ্ছা ভাই,

বলেই ফোন কাটলো অপূর্ব। কিছুক্ষনের মাঝেই অপূর্বের ফোনে একটা ভিডিও মেসেজ আসলো। অপূর্বও দেখলো, বেশ মনোযোগ দিয়ে দেখলো,ভিতর থেকে রাগ উঠার কথা থাকলেও চোখ মুখ রাখলো শান্ত। মোবাইলটা উল্টে রাখলো তারপর আকাশ পথে তাকালো সে। শান্ত স্বরে হাল্কা হেঁসে বলে,

‘ আবারও প্রমাণিত হলো আপন মানুষগুলোই বড্ড বেইমান হয়।’

সময় গেল পাঁচ সেকেন্ড, দশ সেকেন্ড করে সেকেন্ড পেরিয়ে মিনিটে গিয়ে থামতেই অপূর্ব আবার কাউকে ফোন করলো। অপরপ্রান্তের ব্যক্তিটি ফোনটা তুলতেই তাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই বললো অপূর্ব,

‘ ছাঁদে আসো কথা আছে?’

বলেই ফোন কেটে দিল অপূর্ব।’

কতক্ষনের মাঝেই কারো পদধ্বনি পাওয়া গেল ছাঁদে। একটু একটু করে এগিয়ে আসছে সে অপূর্বের দিকে। অপূর্ব নিশ্চুপে বসে আছে চুপচাপ, চোখ মুখ স্বাভাবিক।’

—-
‘ এত রাতে এখানে কেন ডেকেছো অপূর্ব?’

হুট করেই বাবার কন্ঠটা কানে আসতেই পাশ ফিরে তাকালো অপূর্ব। চোখ মুখ স্বাভাবিক রেখেই বললো,

‘ ভাবছি কি বাবা খুব তাড়াতাড়ি বিয়েটা করে নিবো সিঙ্গেল লাইফ আর ভালো লাগে না?’

এভাবে মাঝরাতে ছাঁদে ডেকে এনে ছেলের মুখে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত কথা শুনে ভড়কে গেল অপূর্বের বাবা। ছেলের পাশ দিয়ে বসে পড়লেন তিনি। বললেন,

‘ তোমার মাথা ঠিক আছে অপূর্ব কিসব আবোলতাবোল বকছো নেশা করে এসেছো নাকি?’

বাবার কথা শুনে ভ্রু-জোড়া কঠিনভাবে কুঁচকে বললো অপূর্ব,

‘ তোমার কি মাঝরাতে আমাকে নেশাখোর মনে হচ্ছে,

‘ চেহারা দেখে তো মনে হচ্ছে না কিন্তু কথা শুনে মনে হচ্ছে।’

‘ এটা কিন্তু ঠিক না বাবা এতদিন তুমি যখন মিঙ্গেল হওয়ার জন্য জোর করতে আমি বারন করতাম আর আজ যখন আমি মিঙ্গেল হতে চাইছি তখন তুমি বাহানা করছো?’

‘ তোমার মতো এমন রাগী রাজনীতিবিদকে বিয়েটা কে করবে? কোনো ছকিনার বাবাও তো মেয়ে দিবে না।’

‘ তুমি আমায় অপমান করছো বাবা তুমি জানো আমি রাস্তায় বের হলো কত মেয়েরা আমার জন্য পাগল হয়ে বসে থাকে,

অপূর্বের কথা শুনে নাক ছিটকানি দিয়ে বললো অপূর্বের বাবা,

‘ ছিঃ ছিঃ শেষে কি না তুমি রাস্তাঘাটে বের হয়ে পাগলদেরও খেয়াল করছো।’

বাবার কথা শুনে কি অপূর্ব ভড়কালো মটেও ভড়কালো না। উল্টো বললো,

‘ শুধু পাগল বাবা আমি তো পাগলীদের দিকে বেশি নজর দেই। আমি ভেবে রেখেছি বিয়ে করলে কোনো পাগলী মেয়েকেই বিয়ে করবো।’

অপূর্বের বাবা ভেবেছিল আজ প্রথম হয়তো ছেলের কথার মাঝে একটা ভড়কানোর মতো কথা বললো। আর অপূর্বও কথা শুনে ভড়কাবে কিন্তু তা আর হলো কই উল্টো সে নিজেই ভড়কে গেল। অপূর্ব তার বাবার দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ আহ তোমার স্টক শেষ বাবা।’

অপূর্বের বাবা জবাব দেয় না। উল্টো গম্ভীর কণ্ঠে বলে,

‘ তুমি কি এতরাতে আমার সাথে মশকরা করার জন্য ফোন করে ডেকে এনেছো অপূর্ব?’

অপূর্ব জবাব দেয় না। হুট করেই বাবার কোলে মাথা রাখে সে। তারপর বলে,

‘ দুনিয়ায় কেউ আপন হয় না তাই না বাবা?’

হুট করেই ছেলের এমন আচরন আর কথা শুনে চমকালেন অপূর্বের বাবা। খানিকটা হতভম্ব হয়ে বললেন,

‘ কি হয়েছে অপূর্ব?’

অপূর্ব জবাব দেয় না। উল্টো বলে,

‘ আচ্ছা বাবা এই যে আপন মানুষগুলো পিছন থেকে পিঠে ছুড়ি মারে তাদের কি কষ্ট লাগে না বলো,

‘ আমি তোমার কথার আগামাথা বুঝচ্ছি না অপূর্ব।’

বাবার এবারের কথা শুনে অপূর্ব থমথমে গলায় বললো,

‘ তা বুঝবে কেন? তুমি তো শুধু বোঝো সাবানা আন্টি আর ববিতা আন্টিকে।’

‘ এবার কিন্তু বাড়াবাড়ি হচ্ছে অপূর্ব?’

‘ এখন তো বাড়াবাড়ি হবেই তুমি ওদের বুঝলে দোষ নেই আমি বললেই যত দোষ।’

‘ তুমি যে আমাকে কোনো কাজের জন্যই ডাকো নি অপূর্ব তা আমি হারে হারে বুঝেছি। তোমার মতো বজ্জাত ছেলে আমি দুটো দেখেনি। যে মাঝরাতে বাবাকে ছাঁদে ডেকে এনে মশকরা করে।’

‘ উফ মনে হচ্ছে কতদিন পর যেন তোমার গালাগাল শুনলাম কানটা যেন পরিষ্কার হলো। আচ্ছা রোজ রোজ এসে মিনিমাম দশ বারোটা গালাগালও শুনিয়ে যেতে পারো তুমি না আসলে কোনো কাজের নও।’

‘ আমি কোনো কাজের না হলে তুমি আজ আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে থাকতে বুঝি।’

‘ হুম হাঙ্গা জীবনে কাম তো ওই একটাই করছো আমারে অয়নরে দুনিয়ার আলো দেখাইছো। তাও তো তুমি দেও নি মাই তো করছে সব।’

‘ আমি কিছু করি নি তোমাদের জন্য?’

‘ কি করেছো বলো,

‘ ওই ছোট বেলায় যখন তোমাদের ডায়াপার শেষ হয়ে যেতে তখন কে কিনে আনতো।’

‘ ওরে বাবারে কি কাম করছে রে, আমার এখনও মনে আছে অয়নের বেলায় আমি নিজেই হাফপ্যান্ট পড়ে যাইতাম ওই হায়পার না ডায়াপার আনতে।’

‘ সে তো আমি অফিসে থাকলে,

‘ তো কথা তো একই হলো।’

‘ তুমি আমার সাথে এই মাঝরাতে ঝগড়া করার জন্যই ডেকেছো অপূর্ব?’

উওরে একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো অপূর্ব,

‘ ঝগড়া করতে ডেকেছি কি ঝগড়াই তো করছি?’

আর কিছু বললো না অপূর্বের বাবা। চুপ হয়ে গেলেন তিনি। এ ছেলে চরম খারাপ। একদমই কথায় পারা যাবে না এমন।’

অপূূর্বের বাবা আর মুখ খোলে নি অপূর্বও আর কিছু বলে নি। এভাবে বেশ কিছুক্ষন নীরবতা চললো দুজনের মাঝে হঠাৎই অপূর্ব বলে উঠল,

‘ কাল যদি তোমার এক বন্ধুর ছেলেকে আমি খুন করে ফেলি তবে কি তুমি খুব বেশি কষ্ট পাবে বাবা?’

#চলবে…..