আনন্দধারা বহিছে ভুবনে পর্ব-২০

0
217

#আনন্দধারা_বহিছে_ভুবনে (পর্ব ২০)
নুসরাত জাহান লিজা

সারারাত অয়ন আর অবন্তী কারোরই চোখে ঘুমকুমার ভর করল না। কাক ডাকা ভোরে যখন দুজন মুখোমুখি হলো তখন দুজনের চোখেই ঘুমহীনতার ক্লান্তি বিদ্যমান। সবে পাঁচটার কাঁটা পেরিয়েছে তখন ঘড়িতে। সবার চোখ এড়িয়ে দু’জন বেরিয়ে এলো বাইরের মুক্ত আকাশের নিচে। অয়ন বেরুনোর সময় কী মনে করে পিস্তলটা সাথে নিল। অবন্তী আশেপাশে থাকলেই সে খুব ভয় পায়। জুনায়েদ ফিরে আসায় সেই ভয়টা ক্রমাগত বেড়েই চলছে। তবে এরপর থেকে বাকি দায়িত্ব শাফিনের, ভাবতেই কিছুটা স্বস্তির সাথে সাথে টনটনে ব্যথা হলো বুকে, সব হারানোর ব্যথা।

বাইরে তখন অন্ধকার কেটে মিষ্টি একটা ভোর অপেক্ষা করছিল। ঠান্ডা শিরশিরে একটা বাতাস গায়ে এসে ধাক্কা দিল। কুয়াশা ঢাকা সকালটা শীতের আগমনী বার্তা ছড়াচ্ছে। অয়নের মাথা ঝিম ধরে আছে। অবন্তীর মুখটাও থমথমে, প্রগাঢ় একটা বিষাদের আঁকিবুঁকি সেখানটায়। কেউ কোনো কথা বলল না, হেঁটে নদীর পাড়ে এসে পাশাপাশি বসল। মাঝে আধ হাতের মতো দূরত্ব হলেও ওরা নিজেরা জানে আসলে এতটা কাছে বসলেও দুজনের অবস্থান পরস্পরের চাইতে এক আলোকবর্ষ দূরে। চাইলেও যাকে নিজের মানুষ ভেবে আঁকড়ে ধরা যায় না। যার কাঁধে ভর দিয়ে অশ্রু বিসর্জন করা যায় না, পার্থিব সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে আড়ি করে কষ্ট-যন্ত্রণায় যার বুকে নির্ভরতার আশ্রয় খোঁজা যায় না। সে তো পাশে বসেও লক্ষ-কোটি যোজন দূরের মানুষ। মন বাড়িয়ে চাইলেও সে ডাক তার কর্ণকুহরে প্রবেশ করে না, কেননা সেভাবে ডাকার মতো গলার জোর সঞ্চিত করা যায় না অধিকার নেই বলে।

প্রথমে অবন্তীই মুখ খুলল, “তোর মনে আছে অয়ন, আমরা দুই জন ছোটবেলায় ভোর হওয়া দেখার জন্য কতদিন এখানে এসে বসতাম?”

অয়নের মানসপটে সবটুকু স্মৃতি যেন জীবন্ত হয়ে ভেসে উঠল। কেমন ভাবালুতা পেয়ে বসেছে, সে উদাস গলায় বলল, “তখন তোর সাথে সবসময় আমার ঝগড়া লেগে যেত। আমাদের বেশিরভাগ দিন শুরু হতো ঝগড়া দিয়ে।” ম্লান হাসি ফুটল অয়নের মুখে।

এখন মনের সব আড়াল সরে গেছে বলে অয়ন এবার প্রশ্ন করল, “আমি তো সারাক্ষণ তোর পিছে লাগতাম৷ তাও আমারে কী দেখে ভালোবাসলি?”

অবন্তীর মুখ তখনও বিষাদ ঘেরা, বিমূঢ় হয়ে বলল, “তুই যখন পুরোপুরি ক্রিকেট ছাড়লি তখন তুই খুব ভেঙে পড়ছিলি। তখন তোর ভেতরের অন্য একটা অয়ন যেন আমার চোখে অকস্মাৎ ধরা পড়ল, মনে হলো তুই ভীষণ একা। খুব মায়া হলো, জানিস? তখন থেকেই কীভাবে কীভাবে যেন একটা মায়াটাও ছাপিয়ে অন্য এক অনুভূতির জন্ম হলো। সেটা ভালোবাসা কিনা পরে বুঝছি, কিন্তু তখন থেকেই মনটা একটু একটু করে তোর দিকে চলে যাচ্ছিল।”

অয়নের মনে হচ্ছিল, দু’জনের জন্য দু’জনের মনে এত ভালোবাসা জমে ছিল, সেটা বড্ড অসময়ে দৃষ্টিগোচর হলো। সহসাই ভীষণ লোভ হলো, খুব কী ক্ষতি হবে দু’জন পালিয়ে গেলে? নিজের জন্য কুড়িয়ে পাওয়া আরাধ্য ভালোবাসাটুকু হাত বাড়িয়ে লুফে নিলে অন্যায় হবে কেন? যা কিছু হয়ে যাক, অবন্তীর হাত দুটো ধরে সকলের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেলে খুব বেশি কি ক্ষতি হবে? কিন্তু পরক্ষণেই নিজের এমন ভাবনায় নিজেকেই ধিক্কার দিল। কেমন স্বার্থপরের মতো কেবল নিজের ভাবনাটাই ভাবছে! অবন্তীর একটা সুন্দর গুছানো জীবন প্রাপ্য। সেটা ধ্বংস করার মতো কোনো স্পর্ধা দেখানোর মতো দুঃসাহস অয়নের নেই। তাছাড়া পরিবারের বাকিরা কেউই এই সিদ্ধান্তে সম্মত হবে না, সব ছারখার হয়ে যাবে।

ছোটচাচির বলা কথাটা মাথায় এলো, তিনি হুট করে একদিন অয়নের ঘরে এলেন। তখন সবে অবন্তীর বিয়ের কথা চলছিল প্রায় বছর তিনেক আগে। অয়নের সেদিনের কথা এখনো স্পষ্ট মনে আছে। ছোটচাচী মুখাবয়বে ফুটে উঠা উৎকণ্ঠা চাপা দেবার কোনো চেষ্টা করেননি। এসে অয়নের হাত ধরে বলেছিলেন,

“অয়ন, শোন না, বাপ আমার। তোরে আমি যে অনেক পছন্দ করি এইটা তো তুই জানোস। কিন্তু অন্তিরে নিয়ে যদি কিছু ভাবস তাইলে সেটা ভুলে যা। অন্তিটা বড্ড অবুঝ রে। তোরে কিছু বললে বা পাগলামি করলে একটু বুঝাইস ওরে। তুই বুঝতে পারছিস কী বলসি?”

অয়ন এমনিতেও আগে থেকেই নিজের জায়গাটা অনুধাবন করতে পারে, অবন্তীর প্রতি অনুভূতি তাই এতদিন ভেতরে চেপেই রেখেছিল খুব করে। সেদিন অবন্তীর অনুভূতিটাও চাচীর কথায় কিছুটা হলেও আঁচ করতে পেরেছিল। মুহূর্তের খুশিটা নিমেষেই বাষ্পীভূত হয়ে গিয়েছিল, এটা তো শুধু একটা মরীচিকা সেটা ভেবে। প্রাপ্তির ফানুস আকাশে উড়তে না উড়তেই বাস্তবতার কঠিন মাটিতে আছড়ে পড়েছিল মুহূর্তেই। যাকে ভালোবাসে তাকে নিজের এই বৈঠা হারিয়ে পথ হাতড়ে ফেরা নৌকায় সহযাত্রী করতে চায় না। তবুও যা একটু আধটু সংশয় ছিল অবন্তীকে চাইবার বা এড়িয়ে যাবার, সেদিন চাচীর কথায় সেটুকুও প্রাণপণে চাপা দিয়ে দিল। চাচির হাতটা শক্ত করে ধরে আশ্বাস ভরা গলায় সে কেবল বলেছিল,

“চাচী, তুমি চিন্তা কোরো না। অন্তি যাকে জীবনে পাবে, তার সাথে অনেক সুখী হবে। ও আমাকে নিয়ে কী ভাবে আমি জানি না, কিন্তু আমি তেমন কিছু ভাবি না।”

“তুই আমাকে বাঁচাইলি অয়ন।” মুখে এটা বললেও তার অভিব্যক্তি বলে দিচ্ছিল অয়নের কথায় তিনি ভরসা করতে পারেননি। অয়ন মিথ্যেটা বোধহয় গুছিয়ে বলতে পারেনি৷

এমনিতেও অবন্তী আর অয়ন এক হবার নয়। মহিউদ্দিন ভাইয়ের দলেও কিছুদিন অয়ন কাজ করেছে, নিজের ব্যর্থতার জ্বালা মিটিয়ে বাবাকে হারিয়ে দিতে। একইসাথে জুনায়েদের হঠকারিতার বিরুদ্ধে একটা ছোট্ট নিরাপত্তার অনুসন্ধানে, যার মূলে রয়েছে ওর পাশে বসে থাকা আরাধ্য রমণীটি।

“তুই সত্যিই আর দেশে ফিরবি না, তাই না?” অবন্তীর ভেজা গলায় সচকিত হলো অয়ন।

“তেমন কিছু ভাবি নাই। তুই তো জানিস আমি কখনো ভেবে কিছু করি নাই, যখন যা মনে হইসে করছি। বেহিসেবী হতে হতে কবে যে বেপরোয়া হয়ে গেছি বুঝতেই পারি নাই।” অয়নের বুক বেয়ে একটা গাঢ় দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো।

“এতটা বেহিসাবি কেন হইলি অয়ন? তাহলেই আমরা একসাথে থাকতে পারতাম হয়তো, তোর সঙ্গে একসাথে বুড়ো হবার স্বপ্নটা পূরণ হতো। আমাদের ঝগড়া আর খুঁনসুটির সাথে ভালোবাসা মিশে ভীষণ আনন্দময় একটা সংসার হতো!” স্বপ্ন ভাঙার বেদনা অবন্তীর গলায়।

“সেটাও যে বড্ড লাগামহীন স্বপ্ন ছিল। তুই স্বপ্ন ভাঙার ব্যথা কেমন হয় জানিস খুন্তি? ছোটবেলা থেকে যাই ভালো লেগেছে, ভালোবেসে করতে চাইছি সেটাই হারিয়ে গেছে। একফোঁটা স্বাধীনতা পাইনি। সব কেড়ে নেয়া হইছে আমার কাছ থেকে। তারপর যে একটু সান্ত্বনা পাব, সেইটাও পাইনি কোথাও। বাবার সাথে মা তাল মিলিয়ে গেছে সবসময়। ধীরে ধীরে কেমন হয়ে গেলাম, কিছুতেই যেন আর কিছু যায় আসে না। মনে হলো যে সফলতার চেষ্টা আমাকে চাপিয়ে দেয়া হইছে, সেখানে আমি বিফল হব। তাইলেই বুঝি আমি জিতে যাব।কিন্তু আজ শেষে এসে এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে দেখলাম, তারা হয়তো কিছুটা হেরেছে ঠিকই, কিন্তু সবচেয়ে বড় হারটা আসলে আমারই হইসে। আমি একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেছি রে!”

অয়ন বড় করে একটা শ্বাস টানল, নদীর পাড়ের এই হিম বাতাস ওর মনের দহন নিভিয়ে দিতে পারল না। আবারও মুখ খুলল, “প্রতিশোধ প্রতিশোধ খেলায় আমি গোঁ হারা হেরে গেছি রে। আমার জীবনটাই ভুলে ভরা। সবচাইতে বড় ভুল করে ফেললাম কখনো পাব না জেনেও তোকে ভালোবেসে ফেলে। আমি ভুলে গেছিলাম সবার ভালোবাসতে নেই। তোকে কখনো এতটা চাইব এটা যদি আরও আগে বুঝতে পারতাম, তাইলে হয়তো সব অন্যরকম হতো।”

“এত কীসের দ্বিধা তোর অয়ন? তোর তো অনার্স শেষ, তাইলে? এমন না যে তুই মূর্খ কেউ। আমরা পরস্পরকে ভালোবাসি। তাও কেন ফিরিয়ে দিলি? শাফিনরে তাইলে আর হ্যাঁ বলতাম না। এই দোটানায় পড়তাম না।”

“তোকে চাইতে পারার জন্য যতটা মনের জোর চাই সেটা আমার নাই। বললাম তো, আমি স্রোতের টানে ভেসে গেছি। তীরে ফেরার কোনো পথ নাই। যদি ন্যুনতম কোনো সম্ভাবনা দেখতাম তবুও তোকে জড়িয়ে নিতাম।”

বহুক্ষণ কেউ কোনো কথা বলল না, টলটলে নদীতে যেটুকু পানি, সেটা বড্ড বেশি শান্ত। মৃদুমন্দ বাতাসটা ভীষণরকম শীতল। গায়ে কাঁপন ধরে যাচ্ছে। এখন মনে হলো শীতের কাপড় নিয়ে আসা উচিত ছিল, বোকামি হয়ে গেছে।

“আমারে হাসিমুখে বিদায় দিস খুন্তি। তোর হাসিটা আমার খুব ভালো লাগে, প্রাণটা শীতল করে দেয়। প্রশান্তি দেয়। হাসবি একটু? তোকে এভাবে দেখতে আমার ভালো লাগে না, অসম্ভব যন্ত্রণা হয়।”

অবন্তী তবুও বিমর্ষচিত্তে বলল, “অথচ একসময় তুই আমায় ইচ্ছে করে কাঁদাতি। আমি ভাবতাম সেটাই বুঝি তুই, তোকে ভালোবেসে ফেলায় নিজের উপরেই রাগ হতো। মনে হতো, যে আমাকে এত জ্বালায় তার জন্য আমি এতটা তৃষিত হয়ে থাকি কেন? বিশ্বাস কর, নিজেকে বেহায়া মনে হতো। এখন মনে হয় তোর মধ্যে অদ্ভুত একটা ভালোবাসার শক্তি আছে, যেটা আমার বা তোর অগোচরেই আমাকে তোর দিকে টেনে নিয়ে গেছে। কথাগুলো হয়তো বোকা বোকা শুনাইতেসে, কিন্তু এটাই সত্যি।”

এবার ম্লান একটা হাসি ফুটিয়ে অবন্তীর বলল, “এতটা ভালোবাসার মতো শক্তি কী করে পেলি অয়ন? পেয়েও সেটাকে হারিয়ে ফেলার ভয়ংকর শক্তি? আমি তো পারছি না, বারবার ভেঙেচুরে যাচ্ছে ভেতরটা। আমি হাসি মুখে তোকে বিদায় জানাতে পারব না রে, আমি তোর মতো অভিনয় করতে পারি না। আর চাইলেও সবসময় হাসি আসে না। তোকে আমি কোনো মেকি হাসি দিয়ে বিদায় দিতে চাই না, মন থেকে যদি কান্না উথলে আসে তবে কান্নার জলেই নাহয় বিদায় দেব।” এক সমুদ্র নীল নীল বিষাদী জল উথাল-পাতাল ঢেউয়ের তালে দুজনের চোখ বেয়েই গড়িয়ে পড়ছে। এটুকু দৃশ্যমান, কিন্তু মনের উত্তাল সমুদ্র অগোচরেই রয়ে গেছে। সেই চাপা যন্ত্রণা একাই সহ্য করতে হয়, বড্ড নিভৃতে ।

“আমি নিজেকে সামলে নিচ্ছিলাম, তুই আমার ডায়েরি কেন পড়লি খুন্তি?”

“পড়লাম বলেই বুঝতে পারলাম আমি যাকে ভালোবাসি, সে-ও আমাকে কতটা চায়! সে কতটা মুখোশের আড়ালে নিজেকে লুকিয়ে রাখে সেটাও জানলাম। এতটা বর্ণচোরা কেন তুই, অয়ন?”

“আমাকে যতটা বেপরোয়া মনে হয়, বাঁধনহারা মনে হয়, আমি কিন্তু ঠিক ততটা নই। ভীষণ ভীতু, তোকে চাইবার সাহস নেই, আবার তোর বাঁধনে বাঁধা পড়ার ইচ্ছে হতো খুব, কিন্তু ওই যে, সাহসের অভাব। আমার সবসময় মনে হতো, এই বুঝি তুই আমাকে পড়ে ফেললি। খুব ভয় পেতাম জানিস? তাই তোকে এড়িয়ে যেতাম পরে, আগের মতো খুনসুটিও করাও বন্ধ করে দিলাম। যার সাথে খুঁনসুটি না করলে ঘুম আসত না, তার কাছ থেকে দূরে থেকে বহুদূরে পালাতে চাইছিলাম। কিন্তু ঠিকই ধরা পড়ে গেলাম। সত্য খুব কঠিন হয়, কিন্তু সেটাকে লুকিয়ে রাখা আরও বেশি দুঃসাধ্য। কোনো না কোনোভাবে সেটা এমন জ্বলজ্বলে হয়ে জ্বলে উঠে যে চাইলেও তার আলোটাকে অন্ধকারে ঢেকে দেয়া যায় না।”

আসন্ন বিচ্ছেদের ব্যথায় এতটাই কাতর যে বুঝতে পারছে না ঘুরেফিরে ওরা একই কথা বলছে। একই ভাবনা মনে ঘুরাঘুরি করছে। সেই ছেলেবেলা থেকে দুজন একসাথে জুড়ে গিয়েছিল, কত বলা না বলা কথা বাকি রয়ে গেল। একজীবনে সব কথা কি বলা যায়! একটা অপ্রাপ্তি গলায় কাঁটার মতো বিঁধে থাকে। না যায় উপড়ে ফেলা, না যায় গিলে ফেলা। যন্ত্রণাটা শুধু উপলব্ধি করা যায়।

সময় কোনদিক দিয়ে গড়িয়ে গেল কেউই বুঝতে পারল না, সময়কে যদি ধরে রাখা যেত! কেন এত দ্রুত সময় বয়ে যায়, কীসের এত তাড়া সময়ের!

“চল, ফেরা যাক।” সপ্রতিভ হয়ে বলল অয়ন। রোদ উঠে গেছে, উত্তাপ বাড়ছে, লোক সমাগম হচ্ছে কিছুটা। এদিকটায় যদিও লোকজন খুব কম থাকে।

অবন্তী যেন কলের পুতুলের মতো নির্বিকারভাবে উঠে দাঁড়াল, অয়ন শেষবার গভীর ভালোবেসে অন্যের হতে যাওয়া তার অবন্তীকে দেখল। না চাইতেও অস্ফুটস্বর বেরিয়ে এলো,
“শাফিন খুব ভাগ্যবান। তোকে ওর জীবনে পাবে।”

অবন্তীর ভাবলেশহীন মুখে আবারও বিষাদের ঘনঘটা, “আমি কতটা দুর্ভাগা সেটা বললি না?”

“তুই খুব সুখী হবি খুন্তি। তোর সুখে ভরা একটা সংসার হবে। আমাকে তোর মনেই থাকব না আর।”

অয়নের গলাটা অদ্ভুতভাবে কেঁপে উঠল। অবন্তী ভুলে গেলে সে বাঁচবে কী করে! অবন্তীর মনে একটু হলেও সে থেকে যেতে চায়, চুল কেটে দেওয়া অয়নকে ঘৃণা করে হলেও যেন মনে রাখে অভিমানী মেয়েটা। কিন্তু পাছে অবন্তী আরও দ্বিধায় পড়ে যায়, এই শঙ্কায় বলা হয় না।

অবন্তীর অনেককিছু বলতে ইচ্ছে করল, আরেকবার গভীর আলিঙ্গনে আবব্ধ হতে ইচ্ছে করছে, শেষবার। কিন্তু তখনই অয়নের ফোনটা নীরবতা খানখান করে সশব্দে বেজে উঠল। অয়ন ধরার সাথে সাথে ছোটচাচীর উৎকণ্ঠিত চাপা গলা শোনা গেল,

“অয়ন, তোরা কই? কোনো ভুলভাল সিদ্ধান্ত নেস নাই তো?”

“তুমি চিন্তা কইরো না চাচী৷ আমরা নদীর পারে আসছিলাম একটু। এখন বাসায় আসতেছি।”

“তাড়াতাড়ি আয়, সাড়ে আটটা বাজে। অন্তির রেডি হওয়া লাগব। কত সময়ের ব্যাপার। তোরা কী যে করিস! আজকে বাইরে যাওয়া লাগব কী জন্যে?”

ছোটচাচীর কথা শেষ হবার আগেই অয়নের কান থেকে ফোনটা অবন্তী নিয়ে নিয়েছিল।
“আম্মু, তুমি কী ভাবছিলা আমরা পালাইয়ে গেছি? নিজের মেয়ের প্রতি এই বিশ্বাস তোমার?”

“আজ কোন আক্কেলে বাইরে গেছিস? মা হইলে বুঝতি কেমন লাগে। এখন তাড়াতাড়ি বাসায় আয়। পরে কথা বলব তোর সাথে। তোর ফোনটাও নেস নাই।”

অবন্তী ফোনটা অয়নের হাতে দিয়ে হনহনিয়ে হাঁটতে থাকে, অয়ন তড়িঘড়ি করে পিছু নিল। একটু এগুনোর পরে বড় রাস্তায় আসার আগে একটা সরু গলি পড়ে, সেখানে আসতেই দেখল জুনায়েদ দাঁড়িয়ে আছে, সাথে দু’জন সাগরেদ।

অবন্তী স্তব্দ হয়ে দাঁড়িয়ে গেছে ততক্ষণে, অয়ন থমকে দাঁড়ালো। হাতের ফোনটায় দ্রুততার সাথে রনির নাম্বারে ডায়াল করে, আসতে বলে কল কেটে এগিয়ে গেল।

জুনায়েদ তার পাশে দাঁড়ানো একজনকে বলল, “ঠিক সময় খবরটা দিসিলি রে। তোরে ট্রিট দিমু। কই খাইতে চাস, কী খাবি আমারে বলবি, বুঝলি?”

“আরে ভাই এইটা আমি খুশি মনে করসি।”

অয়নের দিকে তাকিয়ে অবন্তীর উদ্দেশে জুনায়েদ বলল, “যখন শুনছি তোমার বিয়ে তখন থেকেই তক্কে তক্কে আছিলাম, কিন্তু ঠিকমতো পাইতাছিলাম না। আইজ পাইসি৷ তুমি আমারে রিজেক্ট করছো, তারপর সুখে সংসার করবা এইটা তো হইতে পারে না, তাই না? তুই কী কস অয়ন?”

অয়নের রাগে বরাবরের মতোই মাথা ফেটে যাবার জোগাড় হলো। তবে কিছুটা ভয় পেল, নিজেকে নিয়ে কোনো পরোয়া নেই, অবন্তী সাথে বলেই অকতোভয় অয়ন ভীষণ ভয় পেল, অবন্তী তো ওর জীবন জুড়ে। ভয়ের একটা শীতল স্রোতের ধারা যেন ওর মেরুদণ্ড বেয়ে নেমে গেল!

***
“অন্তি, তুই যা। আমি দেখতেছি।” অয়ন গলায় কাঠিন্য ঢেলে বলল। চোখ ক্রোধে জ্বলছে।

“এক পাও নড়বা না অন্তি।” জুনায়েদ হুমকির সুরে বলল।

“তুই যা এখান থেকে, আমি দেখতেছি বললাম তো। যাস না কেন? খাড়ায়া খাড়ায়া কী দেখস?”

অয়নের ধমকে অবন্তী বেশ চমকে গেল, এমন আগ্রাসী অয়নকে কোনোদিন দেখেনি সে। কিন্তু অয়নকে এভাবে একলা রেখে যেতে মন সায় দিচ্ছে না। অবন্তীর হঠাৎ করে আফসোস হলো সেলফ ডিফেন্স শেখেনি বলে।

জুনায়েদ একেবারে আচমকা একটা পিস্তল বের করে অবন্তীর দিকে তাক করল।
“এক পাও আগাইলে স্ট্রেইট গুলি করে দিমু। দাঁড়াও এইখানে।”

অবন্তীর মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেছে, অয়নের চোখমুখও শক্ত হয়ে গেছে। জুনায়েদের পুরো নজর অবন্তীর উপরে থাকায় তার চোখ এড়িয়ে পিস্তলটা বের করে এনেছে অয়ন। সেফটি ক্যাচ তুলে দিয়েছে। সেটা জুনায়েদের দিকে তাক করে অয়ন বলল,
“আমার হাতের টিপ ভালো না, কয়দিন প্র‍্যাকটিস করছিলাম মাত্র। খুন হয়ে যাইতে না চাইলে ওরে যাইতে দে।”

জুনায়েদ বিশ্রীভাবে হাসল, “ওরে, লুজার দেখি সাহসী হইসে। পিস্তল ওইটা, বাচ্চাগো খেলনা না। নামা ওইটা। আমি পুরান খিলাড়ি, অন্তিরে গুলি চালাইয়ে দিব।”

পিস্তলের ট্রিগারে হাত চেপে বসেছে অয়নের, “অন্তিরে গুলি করলে তুই জ্যান্ত যাইতে পারবি ভাবছিস?”

জুনায়েদের অভিব্যক্তি দেখে বোঝা যাচ্ছে অয়নের হাতে পিস্তল থাকতে পারে এটা সে আন্দাজ করেনি। কেমন যেন বিভ্রান্ত চাহনি। সাথের দুই জনের উপরে বিরক্ত হয়েছে।

“আমারে অপমান করে সে কোনোভাবেই সংসার করে সুখে থাকতে পারব না। অপমানের বদলা তো আমি নিয়াই ছাড়ব। তুই কিচ্ছু করতে পারবি না, অয়ন।”

এভাবেই বাদানুবাদ, হুমকি, পাল্টা হুমকি চলতে থাকল। এরই মাঝে অয়ন রনিকে হন্তদন্ত হয়ে আসতে দেখল। সাথে মহিউদ্দিনের দলের আরও দুইজনকে নিয়ে এসেছে। জুনায়েদ হুট করে মরিয়া হয়ে গেল, নিমিষেই অবন্তীর কাছে এসে ওর একটা হাত ধরে হ্যাচকা টান দিয়ে নিজের দিকে নিয়ে গেল। এরপর পিস্তলটা অবন্তীর মাথায় চেপে ধরল। অয়নের বুক কেঁপে উঠল আশঙ্কায়।

“বললাম না, কিচ্ছু করতে পারবি না। তবে তুই লোক জানাজানি করে খুব খারাপ কাজ করছস। পারলে ঠেকায়ে দেখা। ওর যাতে কোনোদিন বিয়ে না হয় সেই ব্যবস্থা করমু আমি।”

সেভাবেই পিছিয়ে যাচ্ছিল জুনায়েদ, অয়নের মাথা অকেজো হয়ে গেছে। কী করবে কিচ্ছু মাথায় আসছে না। এরইমধ্যে অবন্তী একটা ভয়াবহ দুঃসাহসিক কাজ করে বসল, যেটা প্রায় আত্মঘাতি। জুনায়েদের সতর্কতায় কিছুটা ঢিলে পড়তেই পা দিয়ে পেছন দিকে চালিয়ে দিয়ে হাত দিয়ে ধাক্কা দিয়ে সামনে এগিয়ে এলো। জুনায়েদ পিস্তলটা যতক্ষণে আবার চেপে ধরে অবন্তীর দিকে তাক করে গুলি চালাতে যাবে, ততক্ষণে অয়ন হিতাহিতজ্ঞান হারিয়ে গুলি চালিয়ে দিয়েছে। অবন্তীকে বাঁচানোর আর কোনো উপায় ওর হাতে ছিল না। জুনায়েদের হাতকে টার্গেট করেছিল। কিন্তু ভীষণরকম নার্ভাসনেসের কারণে হাত কাঁপছিল অনবরত। সাথে এমন পরিস্থিতিতে এই প্রথমবার পড়েছে। ফলে গুলিটা লক্ষ্যচ্যুত হয়ে গিয়ে লেগেছে জুনায়েদের বুকের পাশে।

রনি অবন্তীকে টেনে সরিয়ে নিয়েছে, আশেপাশে লোকজন জমে যাওয়ায় জুনায়েদের দুই সাগরেদ পালিয়ে গেছে। কিন্তু অয়নের সময়টা যেন স্তব্ধ হয়ে গেছে। এই হাত দিয়ে বল করে প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানের উইকেট উপড়ে ফেলার স্বপ্ন দেখেছিল, আবার ব্যাট ধরে সিঙ্গেল, ডাবলস, বাউন্ডারি, ওভার বাউন্ডারিতে প্রতিপক্ষের বুকে কাঁপন ধরাবার স্বপ্ন ছিল। দুঃস্বপ্নের মাঝেও কোনোদিন মানুষের উপরে গুলি চালাবার কথা ভাবেনি। ভয় দেখিয়ে কাজ হাসিল করতে চেয়েছিল, একান্ত বাধ্য হলে ।

রনি আর অবন্তী টেনে হিঁচড়ে অয়নকে নিয়ে যেতে লাগল। অয়নের চোখে শূন্য দৃষ্টি, এখনো তড়পাতে থাকা জুনায়েদের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। এখানে থাকলে গণধোলাই খেয়ে মরতে হবে বলে ওরা সর্বশক্তি প্রয়োগ করল। ততক্ষণে লোকজন কেউ ঝামেলায় জড়ানোর ভয়ে পাশটান দিচ্ছে, কেউ আবার মারমুখী ভঙ্গিতে এগিয়ে আসছে। তবে ঘটনা এখনো বুঝে উঠতে পারেনি। সাধারণ মানুষরা এসব এড়িয়েই যেতে চাইছে।

অয়ন বলে উঠল, “রনি, তুই জুনায়েদরে হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা কর ভাই। আমি খুনী হতে চাই না। কোনোভাবে ব্যবস্থা কর।”

“আমি দেখতেছি, তুই অন্তিরে নিয়ে পালা। পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করে ওরে হসপিটালে নেওয়ার চেষ্টা করি আমি।”

অয়ন এতক্ষণ পরে আবার অবন্তীর দিকে তাকালো। কী থেকে কী হয়ে গেল এখনো ঠিকঠাক বুঝে উঠতে পারছে না যেন। মনে হচ্ছে একটা খুব বাজে দুঃস্বপ্ন, ঘুম ভাঙলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। অবন্তীর শরীর এখনো কাঁপছে, তবুও অয়নের হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। অয়ন এবার যেন কিছুটা সচকিত হলো। অবন্তীকে নিরাপদে বাসায় পৌঁছে দেবার তাড়ায় সেও তাল মিলিয়ে প্রায় দৌড়ে চলতে লাগল তবে কারোর সন্দেহ এড়িয়ে।

***
বাসায় এসে এত সকাল সকাল আজকের দিনে কোথায় বেড়িয়েছিল সেটা নিয়ে প্রশ্নের মুখোমুখি হলো। ততক্ষণে সকাল নয়টা তেপ্পান্ন বেজে গেছে। অবন্তী কিছু বলার আগেই ওকে গোসল করে আসার জন্য তাড়া দেয়া হলো, সে-ও কথা না বাড়িয়ে অয়নের দিকে একবার তাকিয়ে পা বাড়ালো। সে নিজে জেদ করেছিল বলেই তো আজ বের হতে রাজি হয়েছিল। আর এমন একটা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটল। নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে সবকিছুর জন্য। কিন্তু এখন, এই মুহূর্তে বিয়ে ভেঙে দেবার মতো হঠকারিতা কি করা যায়! ভাবনাটা মাথা চাড়া দিয়ে উঠল অবন্তীর।

***
অয়ন নিজের বাবা, মা, চাচা আর ছোটচাচীকে নিয়ে বাবার ঘরে গেল। আজকের সকাল দেখতে বাইরে যাওয়ার কথা বলল, বাকিটা সত্যি কথাই বলল। সময় সেভাবে নেই, জুনায়েদের বাবা অত্যন্ত প্রভাবশালী মানুষ। পুলিশ আসবে হয়তো যেকোনো সময়। ছোটচাচা বিয়ে পিছিয়ে দেবার কথা বললে অয়ন তার হাত ধরে অনুরোধের সুরে বলল,

“তুমি যেভাবেই হোক অন্তির বিয়েটা পেছাতে দিও না প্লিজ। আমার জন্য ভেবো না। আমি তো হিসেবের মধ্যেই পড়ি না৷ যে ফুল ঝরে পড়ে গেছে সেটা এমনিতেই শুকিয়ে মরে যাবে। তার জন্য দুঃখ করার কিছু নেই। আমিও ঝরে পড়া শুকনো ফুল। ক’দিন পরে এমনিতেই কারোর পায়ে পিষে হারিয়ে যাব। অন্তির বিয়ে পিছিয়ে দিলে ও আর বিয়ে করবে না কোনোদিন। ও কেন আমার ভুলের জন্য নিজের জীবনটা একা কাটাবে। আমার যাই হয়ে যাক, বিয়েটা যেন হয় আবারও বলছি।”

ছোটচাচা অয়নের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, “তুই অনেক বড় হয়ে গেছিস অয়ন। কতকিছু বুঝতে শিখেছিস, আজ বিশাল একটা দায়িত্ব পালন করলি। আমরা এখন জুনায়েদের সুস্থতার জন্য দোয়া করব কেবল।”

ঘরে থমথমে গোমট পরিবেশ। বাবা আনোয়ার একটা কথাও বলেননি, কেমন একটা বোবা চাহনিতে নিজের ছেলেকে দেখলেন। সেই চোখে রাগ, ক্রোধ, ক্ষোভ কিচ্ছু নেই কেবল একটা আশঙ্কার ছায়া। যার ছোট ছোট অপরাধ কখনো ক্ষমা পায়নি তার এত বিশাল বড় অপরাধে উনার এই দৃষ্টিতে অয়ন নিজের মনেই কিছুটা সহানুভূতি খুঁজে নিল।

মা আঁচল চেপে ফুঁপিয়ে কাঁদছেন, ভরা বাড়িতে কষ্টটা মন খুলে প্রকাশ করতে পারছেন না। ছোটচাচীর চোখে অনুশোচনা, নিজের মেয়েকে সুস্থভাবে ফিরে পাবার জন্য কিছুটা কৃতজ্ঞতা বোধহয় মিশে থাকল। কিন্তু অয়নের সেসবের মানে খোঁজার সময় নেই।

নিজের ঘরে গিয়ে শাফিনকে কল দিল, ওরা মাঝপথে আছে। শাফিনের সাথে কিছু প্রয়োজনীয় কথা সেরে ওকেও বিয়ে যেন থেমে না যায় সেই ব্যবস্থা করল। রনি জানালো জুনায়েদের অবস্থা ভালো নয়। হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পরিবারের লোক তাকে ঢাকায় স্থানান্তর করছে। অয়নকে পালিয়ে যেতে বলল৷ যেকোনো সময় পুলিশ আসবে। অয়ন পালালো না, যে কাজ সে করেছে সেটার শাস্তি থেকে পালিয়ে বাঁচতে চায় না। নিজের জীবনটাকে ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দিয়েছে। অবন্তী নিরাপদে আছে এটাই স্বস্তির, আর কী বা চাওয়ার আছে!

***
অবন্তীর কান্নায় চিড়ে ভিজল না, অগত্যা বিয়ের পিঁড়িতে বসল। এমন পরিস্থিতিতে বিয়ে করা নিয়ে পুরো পরিবারের উপরে ক্ষোভ তৈরি হলো। অয়ন বিয়ের ভ্যানুতে যায়নি। বাসায়ই থাকল। বিয়েতে কোনো অপ্রীতিকর কাণ্ড ঘটুক এটা সে চায় না। অবাক করা ব্যাপার হলো বাবাও থেকে গেল ওর সাথে।

অল্প সময়ের মধ্যে পুলিশ এসে অয়নকে ধরে নিয়ে গেল। পুলিশের সাথে যাবার সময় সহসা বাবা ওকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে ফেললেন। জীবনে প্রথমবার অয়ন বাবার স্নেহের উষ্ণতা অনুভব করল। কোনো কথা হলো না, কিন্তু সেই কান্না অনেক না বলা কথা বলে দিল।

রাতের মধ্যে জুনায়েদের মৃত্যুর খবরে সবাই মুষড়ে পড়ল। অবন্তী বিয়ের পরে শ্বশুরালয়ে যেতে রাজি হয়নি। বিয়ে সম্পন্ন হবার পরে অয়নের খবরটা ওর কানে এসেছিল। উৎসবমুখর বাড়িটা আজ যেন একটা বিষাদপুরীরে রূপ নিল।
…….