আপনিময়?তুমি Part-15

0
1655

#আপনিময়?তুমি [ An unexpected crazy love ]
#Written By: Åriyâñà Jâbiñ Mêhèr [ Mêhèr ]
Part: 15………
.
.
.

অফিসে গিয়ে ইহান আনহার চিন্তায় ডুবে আছে। ঠিক তখনি ওর ফোনে একটা কল আসে। আর ওর মাথায় রক্ত চরে বসে…….

ইহান: What….. তুমি কি sure…. [ প্রচন্ড রেগে ]

……… Yes sir……

ইহান: ok আমি আসছি…….

[ বলে ফোনটা কেটে দেয় ]

ইহান: অনেক হয়েছে আর না। আজ এর শেষ দেখে ছাড়ব আমি….. [ তারপর অফিস থেকে বেড়িয়ে যায় ]
,
,
,
,
,
,
,

,
,,

,কিছুক্ষন আগের ঘটনা………
ইহান অফিস যাওয়ার পর আনহা বিছানায় বসে আছে…… তখনি স্টাফ এসে বলে আনহার সাথে কেউ দেখা করতে এসেছে। আনহা বুঝতে পারে না কে এসেছে???

আনহা: আচ্ছা যাও আমি আসছি……

আনহা নিচে গিয়ে দেখে আদ্র দাঁড়িয়ে আছে। আদ্রকে দেখে আনহার কলিজার পানি শুকিয়ে যায়। ইহান যদি জানতে পারে তাহলে। ব্যাপারটা ভাবতেই ওর মনের মধ্যে কামর দেয়…….

আনহা: আদ্রো তুমি……. তুমি এখানে কি করছ…..

আদ্র: হুমম…. আমি। ৩ মাস ধরে না তোমার কোনো খবর না অন্য কিছু। এমনকি তোমার মোবাইলটাও বন্ধ। তুমি কেমন আছো একবার জানানোর প্রয়োজন পরে নাকি তোমার………

আনহা: এসব কেন বলছ তুমি??? আমি ইহানের কাছে আছি তুমি ভাবলেও বা কি করে ও আমাকে খারাপ রাখবে….???

আদ্র: ওকে নিয়ে আমার কোনো চিন্তা নেই আমি তোমাকে নিয়ে ভাবছি…..

আনহা: হবে না ভাবতে। আমি ভালো আছি। এখন বলো এখানে এসেছ কেন???

আদ্র: কেন আনহা আমি কি তোমার কাছে আসতে পারি না।

আনহা: আসতে পারো কিন্তু অন্য কারো বউয়ের কাছে আসতে পারো না। আর আমি এখন অন্য কারো বউ আশা করি বুঝতে পারছ…….

আদ্র: তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।

আনহা: আর কি কথা যা বলার তা তো শেষ আর কি????

আদ্র: প্লিজ আনহা আর শুনতে বলব না। আজকেই শেষ বার। আমার কথা যদি তোমার ভুল মনে হয় তবে আমি কোনোদিন তোমার দার হবো না।

আনহা: সত্যি বলছ আর কোনোদিন আসবে না। ছেড়ে দেবে আমাকে…..

আদ্র: হুমম প্রমিস……..

আনহা: হুমম বলো.।।।।

আদ্র: এখানে না আনহা….. আমার সাথে তোমাকে যেতে হবে। প্লিজ না করো না আজকেই শেষ………

আনহা: কিন্তু……

আদ্র: প্লিজ……

আচ্ছা তুমি দাড়াও আমি আসছি। তারপর আনহা রেডি হয়ে আদ্রের সাথে বাইরে যায়……….
,
,
,

,
,
,
,
,
,
ইহান: ওরা এখন কোথায়…..???

….. স্যার ওরা এখন একটা রেষ্টুরেন্টে ডুকেছে…..

ইহান: ঠিকানাটা আমাকে টেক্সট করো।

….. ওকে স্যার…….

তারপর ইহান ওই রেষ্টুরেন্টে যায়…….. ভিতরে ডুকতেই ইহানের বুকের মাঝে একটা মোচর দেয়। কারন ওরা দুজন একে অপরের হাত ধরে বসে আছে তবে আদ্র নয় আনহা আদ্রোর হাত ধরেছে…… আদ্রোর দুহাত আনহার হাতের মুঠোয় বন্দি…… দৃশ্যটা দেখে ইহানের মাথায় চক্কর দিল….. তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে আনহার কাছে যেতে গিয়েও থেমে যায়……..

আনহা: এত কেন ভাবছ আদ্র….. সবার জীবন তো একরকম ভাবে কাটে না। আমি জানি এখন তোমার খারাপ লাগবে কিন্তু দেখবে পরে সবটা ঠিক হয়ে যাবে…… [ আদ্রের হাত ধরে ]

আদ্র: তুমি সত্যি বলছ আনহা……..

আনহা: হুমম…. কারন ইহানকে আমি মেনে নিতে পারিনি আর এই জন্য ওর থেকে দুরে সরে…….

,
,
আর শুনতে পারল না ইহান। খুব দ্রুত ওখান থেকে বেড়িয়ে এলো।

ইহান: আপনি আমার সাথে থাকতে চান না আমি জানি। বলেছিলাম তো শুধু ১ টা বছর আমাকে সময় দিতে কিন্তু আপনি….. [ চোখ বন্ধ করতেই দু ফোটা পানি পরে ] এভাবে আমাকে আমাদের সম্পর্ককে সবার সামনে অপমান করলেন। ১ বছর পর তো আমি নিজেই আপনাকে মুক্তি দিতাম দরকার হলে নিজে আপনাকে আদ্রোর কাছে দিয়ে আসতাম কিন্তু আপনি আজ আমার বিশ্বাস ভরসায় আঘাত করেছেন। এর জন্য কোনোদিন ক্ষমা করব না আপনাকে…….

ইহান গম্ভীরভাবে নিজের রুমে বসে আনহার জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু আনহার কোনো খবর নেই। সন্ধার পর আনহা বাড়ি ফেরে। বাড়ি ফিরে আনহা বেশ অবাক হয়ে যায়….. কারন সবকিছুই জেন নিঃস্তব্ধতার জুরে রয়েছে ঝড় আসার আগে প্রকৃতি যেমন নিরব থাকে ঠিক তেমন….. আনহা নিজের রুমে গিয়ে লাইট অন করতেই কেপে উঠে….

ইহান রক্তলাল চোখ নিয়ে সোফায় বসে আসে। আনহা এতদিনেও মনে হয় ইহানের এমন অবস্থা দেখেনি। আনহা বুঝতে পারছে খুব ভালো করে আদ্রের সাথে যাওয়ার কথা ইহান বুঝতে পেরেছে…..

আনহা: তুই এখন….. [ কাপা গলায় ]

ইহান: আপনি জানেন আনহা আপনি এখনো কেন আমার সামনে দারিয়ে আছেন…..

আনহা:…….

ইহান: কিহল কথা বলছেন না কেন??? [ শান্ত গলায় ]

ইহানের গলার আওয়াজ শুনে আনহা শিউরে উঠছে……. আনহার মুখের কোনো কথা না শুনে ইহান উঠে দাঁড়িয়ে ধীর পায়ে আনহার খুব কাছে গিয়ে দাঁড়ায়……..

ইহান: কিহল কথা বলছেন না যে…..

আনহা:……..

ইহান: Speak up dram it….. [ খুব জোরে চিল্লিয়ে উঠে পাশে থাকা টেবিলটাকে লাথি দেয় ]

আনহা: ইহান….. [ ভয় পেয়ে ]

ইহান আনহার ডাকটা শুনেই আনহার গলাটা চেপে ধরে। ইহানের এমন ব্যাবহারে আনহা আকাশ থেকে পরে।

আনহা: ছাড় আমাকে [ ইহানের কাছে থেকে নিজেকে ছাড়ানোর প্রচেষ্টায় ]

ইহান: কষ্ট হচ্ছে তাই না। আমারও হচ্ছে বরং এর চেয়ে বেশি কষ্ট হয়েছিল যখন আপনি আদ্রোর হাত ধরে ছিলেন…..

এইটা শুনে আনহা অবাক চোখে ইহানের দিকে তাকায়…… কিন্তু ইহান এতটাই জোরে ধরেছে যে আনহার প্রান বেড়িয়ে যাবার উপক্রম….. কিন্তু ইহানকে ছাড়াতে পারছে না। এটা বুঝতে পেরে ইহান আনহার গলা ছেড়ে দেয়….. আর আনহা হাপাতে থাকে….

আনহা: তুই কি পাগল হয়ে গেছিস……

ইহান: হ্যা হ্যা পাগল হয়ে গেছি। নিজের স্ত্রীকে যখন আরেকজনের হাত ধরে নিজের স্বামীর…. [ আর বলতে পারল না ] তখন আমার না যেকোনো পুরুষ পাগল হয়ে যায়।

আনহা: ইহান….

ইহান গিয়ে আনহাকে থাপ্পড় মারতে গিয়েও মারে না। ও গিয়ে আনহার গাল চেপে ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসে…..

ইহান: কসম কেটে বলছি আনহা যদি আপনার ভিতরে যদি অন্য কোনো প্রানের অস্তিত্ব না থাকত তবে আজ এই মুহূর্তে আমি আপনাকে এখানেই মাটিতে পুতে দিতাম। শুকরিয়া করুন আপনি আমার সন্তানের মা হতে চলেছেন তাই এখনো জীবিত আছেন……..

আনহা: আমার কথাটা তো একবার শোন….. [ কান্না করতে করতে ]

ইহান: কি শুনব। এটাই আপনি আপনার এক্স বয়ফ্রেন্ড এর কাছে গিয়েছিলেন নিজের হাসবেন্ড এর সাথে থাকবেন না সেই খবর দিতে……

আনহা:….. আ….মি… [ কাদতে কাদতে ]

ইহান: কেন গিয়েছিলেন আদ্রোর কাছে…. বলেছিলাম না জাস্ট ১ টা বছর আমাকে দিতে তাও আপনার সহ্য হলো না। আপনার প্রতি আমার যে সন্মান শ্রদ্ধা ছিল তা এক নিমিষেই শেষ করে দিয়েছেন আপনি। আপনাকে আপনি বলে সন্মান করতে বাধছে আমার…….

আনহা: তুই আমাকে এভাবে বলতে পারিস না।

ইহান: আপনি এই সন্মানটাও ডিজাভ করেন না আনহা….. আপনি নিজেকে আমার চোখে আজ কতটা নিচে নামিয়েছেন তা আপনি নিজেও জানেন না। পদ্দ পাকে ফুটলেও তা দিয়ে পুজো করা যায়। কিন্তু আমি ভুলে গিয়েছিলাম আপনি পদ্দ নন সেই কচুরিপানা যা বিলের মধ্যে সুন্দর লাগলেও তা দিয়ে ঘর সাজানো যায় না।

ইহানের মুখে এমন কথা শুনে আনহার যেন চোখের স্রোত থামছেই না…….

ইহান: আপনাকে আমি আমার জিবনের আশির্বাদ মনে করতাম কিন্তু এখন বুঝতে পারছি আপনাকে ভালোবাসা আমার জিবনের সবচেয়ে বড় ভুল হয়ে দাড়িয়েছে….. I jusu hate u anha…….শুধু মাত্র আমার বেবি নাহলে এতক্ষনে আপনি আর আপনার এসব আমার জীবন থেকে আমি ছুড়ে ফেলতাম। you know what আমি মেয়েদের সন্মান করি আর সেই সন্মানের জন্যই আপনাকে কিছু বলিনি….

আনহা:……..

ইহান: আপনি যতদিন না আমার বেবিকে জন্ম দিচ্ছেন ততদিন কেবল আমার কাছে থাকবেন তারপর আমি নিজে আপনাকে এই বাড়ির থেকে দুর করে দেব তারপর আপনি আপনার লাইফ কোথায় কাটাবেন কার সাথে সেটা একান্তেই আপনার ব্যাপার……..

আনহা:।।।।

ইহান: আমি আর যাই হোক আনহা কোনো self respect less মানুষ নই যে Shameless এর মত নিজের স্ত্রী সব অন্যায় মেনে নেবে। অন্যায় করেছিলেন সুযোগ দিয়েছিলাম। আপনার ইচ্ছার মুল্য ও দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আপনার এসব পাপ্য নয়…..

আনহা: আমি কিছু বলতে চাই ইহান…..

ইহান: কোন কিছু শোনার নেই আমার। এর পর থেকে আমার কথার অবাধ্য হলে চরম মুল্য দিতে হবে আপনাকে….. আরেকটা কথা আমার বেবির যেন কোনো ক্ষতি না হয়। কারন আপনার কাছের মানুষের অভাব না হলেও আমার রয়েছে………

আর কোনো কথা না বলেই আনহা ফ্লোরে বসে পরে…..

আনহা: এ আমি কি করে ফেললাম। নিজের অজান্তেই আমি ইহানের চোখে অপরাধী হয়ে গেলাম। আমার সাজানো সংসার নিজের হাতে শেষ করে দিলাম….. আমি এখন ইহানকে কি ভাবে সামলাব…. ওকি সত্যি সত্যি আমাকে ছেড়ে দেব……. কিন্তু আমি ইহান…….. ইহানননন…………..

আনহা ইহানের পিছনে ছুটে যায়…………
,
,

,,
,
,
,

,
,,
,
ইহান বাড়ি থেকে বেড়িয়েছে প্রায় কয়েক ঘন্টা হয়ে। ইহান একটা নির্জন রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে আর তখনকার রাগের মাথায় বলা কথাগুলো ভাবছে…….

ইহান: আনহাকে এসব বলা আমার উচিত হয়নি…. কারন আমি নিজেই বলেছিলাম ১ বছর পর আমি ওনাকে মুক্তি দিব। কিন্তু কি করতাম আমি আনহাকে আদ্রের দেখে সহ্য করতে পারিনি…… আর এজন্য ওভাবে রিয়েক্ট করিছি। কিন্তু আনহাও তো কাজটা ঠিক করেনি…

কথা গুলো ভেবে ইহান নিজেকে শান্ত করে।

ইহান: ওনি প্রেগনেট তারপরও আমি ওনার সাথে রাফ বিহেভ করেছি আবার গায়ে হাত ও তুলেছি….. আমার সরি বলা উচিত আনহাকে………

ইহান গাড়িতে বসতেই মোবাইলের দিকে নজর যায়। মোবাইলে লাইট জলছে সাইলেন্ট করার কারনে আওয়াজ হচ্ছে না কলের। ইহান মোবাইল চেক করতেই চোখ কপালে মোবাইলে ১৫৭ টা মিসকল দেখাচ্ছে তবে সেটা আনহার নয়। তাদের বাড়ির স্টাফের। ইহান ভেবে পাচ্ছে না এতগুলো কল দিল কেন??? এসব ভাবতে ভাবতে আবার কল আসে….. ইহান কোনো কিছু না ভেবেই ফোন ধরে……

ইহান: হ্যালো……

স্টাফ: thanks god আপনি ফোন ধরেছেন স্যার….. অনেকবার কল করেছি….

ইহান: কি হয়েছে…..

স্টাফ: স্যার প্লিজ দ্রুত আপনি সেইভ লাইফ হসপিটালে চলে আসুন…..

ইহান: কিন্তু কেন??? [ তখনি লাইনটা কেটে যায় ]

ইহান দ্রুত হসপিটালে যায়। দেখে ওর বাড়ির কয়েকজন স্টাফ দাঁড়িয়ে আছে……

ইহান: কার কি হয়েছে…..

স্টাফ: আসলে আপনি বাসা থেকে বের হবার পর আনহা মেম দৌড়ে নিচে নামতে যায় আর তখনি………

ইহান: কি….. [ কাপা গলায় ]

স্টাফ: আর তখনি ওনি সিড়ি থেকে পরে যায়। আপনাকে কল করে পাইনি তাই আমরা নিজেরাই নিয়ে এসেছি। ওনি অপারেশন থিয়েটারে….. ডক্টর দেখছেন…

কথাটা শোনা মাত্রই ইহান মাটিতে বসে পরে।

স্টাফ: ডক্টর বলেছে মেমের অনেক ব্লিডিং হচ্ছে তাই হয়ত……

ইহান মূর্তির ন্যায় বসে আছে। কি করবে ও বুঝতে পারছে না…. কি করে ফেলল ও…. হুমম ওই তো দোষ করেছে ও আনহার সাথে ওমন না করলে আনহা……. আর ভাবতে পারছে না। ততক্ষনে আনহার বাবা মাকে খবর দেওয়া হয়েছে…. ওনারাও এসেছে….. আর ইহানের মা বাবাও……

তখনি ডক্টর বের হয়….. ইহান দৌড়ে ডাক্তারের কাছে যায়……

ইহান: আমার ওয়াইফ কেমন আছে???

ডক্টর: ওনার অনেক বেশি ইন্টারনাল ব্লিডিং হয়েছে যার কারনে…. ওনার মিসক্যারেজ হয়ে গেছে। রোগীর অবস্থাও তেমন ভালো না। ওনাকে স্যালাইন আর ব্লাড দেওয়া হচ্ছে।

ইহান: ও ঠিক হয়ে যাবে তো ডক্টর…… [ শান্ত গলায় করুন ভাবে ]

ডক্টর: বলতে পারছি না। আমরা আমাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করব বাকিটা আল্লাহর উপর…..

কথাটা বলে ডক্টর চলে যায়। আর ইহান ওখানেই দেয়াল গেষে দাঁড়িয়ে পরে। ইহানকে সবাই শান্তনা দিচ্ছে। কিন্তু কারো কথাই ইহানের কানে যাচ্ছে না। ও পাথর হয়ে আছে। ও বুঝতেই পারছে না। ওর কার জন্য খারাপ লাগছে কি চাচ্ছে ও আনহার জন্য নাকি বেবির জন্য…..

অপারেশন শেষে আনহাকে আইসিইউতে দেওয়া হয়…….. সাথে স্যালাইন আর ব্লাড চলছে…… ইহান কেবিনের বাইরে থেকে একবার আনহাকে দেখে…… ডাক্তার আনহার কাছে কাউকে যেতে নিষেধ করেছে। তাই কেউ যেতে পারছে না। কিন্তু ইহান একবারও আনহার কাছে যেতে চায়নি। বরং বাইরে দাঁড়িয়ে আনহাকে দেখছে। ও বুঝতে পারছে না কেন ও চেয়েও ওর কাছে যেতে পারছে না রাগ, অভিমান নাকি ঘৃনা। ইহানের অনুভুতি যেন ওর বোঝার উর্ধ্বে চলে গেছে…… শুধু একভাবে বাইরে থেকে তাকিয়ে দেখতে থাকে আনহাকে…..
,
,,
,

,
,
,,
এভাবে চলে যায় কয়েকঘন্টা।

মাঝরাতে দিকে…..

ইহান দরজার পাশে মাথা হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পরেছে। ঘুমের মধ্যে ওর মনে হলো কেউ ওকে ডাকছে। খুব কাতর কন্ঠে ইহানকে চাইছে। ইহান আর নিজের চোখ বন্ধ করে রাখতে পারেনা। ওর ঘুম থেকে উঠে হাপাতে থাকে। চারপাশে খেয়াল করতেই দেখতে পায় ও দরজার সাথে ঘুমিয়ে আছে। তারপর দরজার কাচ দিয়ে আনহার মুখটা দেখতেই নিজেকে আর আটকে রাখতে পারে না। ইহান দৌড়ে ভিতরে আনহার কাছে ছুটে যায়। যেন আনহার কাছে না গেলেই ও আনহাকে হারিয়ে ফেলবে। ওর মনে হচ্ছে আনহাই বোধহয় ঘুমের মাঝে ওকে ডেকেছে……

ইহান জোরে জোরে নিশ্বাস নিয়ে আনহার সামনে গিয়ে দারায়। চোখ দিয়ে জলের স্রোত বইছে কিন্তু কাদতে ভুলে গেছে ইহান….. ইহান সবটা ভুলে আনহার হাতটা ধরে…… খুব শক্ত করেই ধরে। তারপর ওর হাত ধরে নিজের গালের সাথে মিশায়…..

ইহান: আনহা এতটাই ঘৃনা আমার প্রতি যে আমার উপর প্রতিশোধ নিতে আপনি আমার বেবিকে কেড়ে নিলেন আর এখন নিজেও চলে যেতে চাচ্ছেন… প্লিজ আনহা এমনটা করবেন না….

[ ইহান কাপছে আর কথা গুলো বলছে ]

ইহান: প্লিজ আনহা একবার আমি আপনাকে হারিয়ে বুঝতে পেরেছি আপনি আমার জন্য কি?? আপনার থেকে দুরে থাকা সম্ভব কিন্তু ভুলে থাকা না। আমি আপনাকে নিজের করে চাই না আনহা। আমি শুধু আপনাকে আপনি বলে ডাকতে চাই প্লিজ আমার উপর এতটুকু দয়া করুন……..

কিন্তু আনহা কোন উত্তর দিচ্ছে না। দেবেই না কিভাবে ও তো আর সেই অবস্থায় নেই….

ইহান: আপনি আমার বেবিকে কেড়ে নিয়েছেন। এবার আমার থেকে নিজেকে কেড়ে নেবেন না আনহা…. আপনি যা চাইবেন তাই হবে… আপনি আমার সাথে থাকতে চান না হবে না। আমি নিজে আদ্রের হাতে তুলে দেব তবুও আপনি আমায় ছেড়ে যাবেন না আনহা……. আপনার পিচ্চি যে আপনার জন্য আগের মতই পাগল আনহা…………….

[ আনহার হাতের উপর কাদতে থাকে ইহান কিন্তু আনহা স্বার্থপরের মত ইহানের একটা কথায় ও উত্তর দেয় না। ]

ইহানের রাতটা আনহার আঙুলের ভাজেই কেটে যায়….. পরের দিন আনহার জ্ঞান ফেরে। আনহার জ্ঞান ফিরলে ও ইহানকে দেখতে চায় কিন্তু একবারের জন্য আনহার কাছে যায় না। পরে আনহা জানতে পারে ওর মিসক্যারেজ হয়েছে। তখন আনহা বুঝতে পারে কেন ইহান ওর কাছে আসছে না। আনহা নিজেও এখন কিছু বুঝতে পারছে না। তার বেবি বেচে নেই এটা আনহা ভাবতেই পারছে না। মাতৃত্বের স্বাদ গ্রহন করার আগেই ও সন্তানহারা হয়ে গেল। ও তো এমনটা চায় নি। এটা ঠিক ইহানের উপর অভিমান করেছে তার মানে বাচ্চাটার তো কিছু না।ও নিজেও এই বেবিটা মন থেকে চেয়েছে। কিন্তু ইহানকে কথার কথা বলেছে ও বেবি চায় না। আর আল্লাহ তার শাস্তি ওকে এভাবে দিল। ভেবেই আনহা কান্নার বেগটা বেড়ে গেল……… আর তার চেয়েও বেশি এই মুহুর্তে ইহান ওর কাছে নেই….. তবে কি বেবির সাথে আনহা ইহানকেও….. আর ভাবতেই পারল না আনহা… ওর একটা ভুলের শাস্তি ওকে এভাবে পেতে হলো……..

তখনি একজন এসে আনহার কথা বলে। ইহান আনহার কথা শুনে ভিতরে যায়। যতই হোক আনহা এখন অসুস্থ। তাই মানবিকতার জন্য হলেও ইহানকে যেতে হবে……..

ইহান আনহার কেবিনে যেতেই আনহার প্রান ফিরে পায়। ইহানকে দেখে সবাই বেড়িয়ে যায়। ইহান গিয়ে আনহার পাশে বসতেই আনহা ইহানকে জড়িয়ে ধরে। আর ইহান স্থীর হয়ে বসে থাকে। অনেক ইচ্ছে করছে আনহাকে জড়িয়ে ধরে নিজেও একটু কান্না করে হালকা হতে কিন্তু কোথায় একটা বাধা দিচ্ছে……

আনহা: আমায় ক্ষমা করে দে ইহান। আমি ভুল করেছি। আজ আমার ভুলের জন্যই বেবি……..

এইটা শুনে ইহান আনহাকে ছাড়িয়ে নেয়। তারপর আনহার দিকে চোখ বুলিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দেয়। তারপর আঙুল দিয়ে নিজের চোখের কোনের পানিটা মুছে নেয়। তারপর বলে…..

ইহান: আমি কি একবারো আমার বাচ্চার খুনি হিসেবে আপনাকে দায়ী করেছি আনহা। না এটা বলেছি আপনি আমার থেকে দুরে নিজের এক্স এর কাছে যাওয়ার জন আমার বেবিকে….. [ আটকে আশা গলায় ]। যাই হোক ওর ভাগ্যে দুনিয়ার আলো দেখা নেই তাই হয়ত….. এতে কারো দোষ নেই আনহা। যদি কারো থাকে তবে তা আমার কারন আমি আপনার কাছে ভুল কিছু আবদার করেছি…….

আনহা: ইহান……

ইহান তারপর আনহার চোখের পানি মুছিয়ে দেয়।

ইহান: আপনি কাদছেন কেন??? আমি আজ বুঝতে পেরেছি আমার থেকে দুরে যাওয়ার কত তারা আপনার….. আপনি এর জন্য আমার বেবিকে কেড়ে নিয়েছেন আবার নিজেও নিজেকে……

তারপর ইহান স্বাভাবিক ভাবে হাশি দেয়। কিন্তু তার মাঝে আনহা ভয়ংকর রকমের অস্বাভাবিক কিছু খুজে পায়…….

ইহান: আপনার আর কোনো কাজ নেই আনহা। এর পর আপনার কাজ হলো খুব তারাতাড়ি সুস্থ্য হয়ে উঠা যাতে আমার থেকে মুক্ত হতে পারেন। কারন আপনাকে আমি মুক্তি দিতে চাই…..

আনহা ইহানের কিছুই বুঝতে পারছে না।

ইহান: পাগলি একটা শুধু শুধু এমন কান্ড করে…. আচ্ছা অনেক কথা বলেছি আপনাকে খাইয়ে মেডিসিন দিয়ে দি….. After all আপনাকে সুস্থ হতে হবে…..

তারপর আনহাকে ইহান খাইয়ে দেয় আর ও মাথা নিচু করে খায়….. আর ইহান ওকে একদৃষ্টিতে দেখতে থাকে…. যেন আনহার মুখে কয়টা রেখা আছে তা গুনছে……..