#আপনিময়_তুমি?[ An unbearable Crazy love]
#Season: 02
#Written_By_Åriyâñà_Jâbiñ_Mêhèr[Mêhèr]
#Part: 19…
দোতলা দালানকোঠার শেষ কর্ণারের রুমটা তালাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে আছে৷ সেই ঘরের ভেতরে বক্স খাটে জানালার পাশে হাঁটুতে মুখ গুঁজে বসে আছে আনহা। এই সময় হয়তো ওর কাঁদার কথা ছিল। হয়তো কখনো কেঁদেছিল৷ খুব কেঁদেছিল। কিন্তু আজ আর কাঁদতে ইচ্ছে করেছে না৷ ভেবেছিল আগের মতো ভয় পাবে। কিন্তু অনুভূতিহীন মন যেন তাও হতে দিল না। ভয় লাগছে না ওর। নির্লিপ্ত দৃষ্টিতে তাকায় বাইরের দিকে। জানালার বাইরে পুকুর দেখা যাচ্ছে। রাতের আকাশে পরিপূর্ণ জোসনার কারণে পুকুরখানি স্পষ্ট বোঝা গেলেও বোঝা যাচ্ছে না তার আশেপাশে থাকা সবুজাভ গাছ-গাছালি। কালো কালো দৈত্যের বেশে দাঁড়িয়ে আছে একেকজন। ঝিঝি পোকা চি চি ডাক আসছে কানে। রুমটা অন্ধকার। অন্ধকার বাইরের পরিবেশটাও। কেমন স্তব্ধ-নিবিড় গুমোট ভাব। স্তব্ধতা আজ আনহার মাঝেও।
আনহা অন্ধকার রুমটায় একবার চোখ বুলিয়ে নেয়। কোনোকিছুই স্পষ্ট নয়৷ কিন্তু কেন জানি জানতে ইচ্ছে করছে—ঘরটা কি সেভাবেই সাজানো আছে; যেভাবে ও রেখে গিয়েছিল? নাকি নতুন করে কেউ সাজিয়েছে? হয়তো হ্যাঁ, হয়তো না। প্রশ্ন জানার অভিপ্রায় হলেও, অভিলাষে কোনো ভালোবাসার ছোঁয়া পেল না। হয়তো মায়া তাই।
মায়া জিনিসটা বড্ড খারাপ। কখনো কাটতে চায় না। কিন্তু ও কাটিয়েছে। কিন্তু এই ঘরটার জন্য রয়ে গেছে। কত স্বপ্ন ছিল ওর। কিন্তু এক নিমিষেই তা ভেঙে-চুড়ে গুড়িয়ে দিয়েছে কেউ।
কথাগুলো ভেবে চোখ বন্ধ করে নেয়। তখনি অতীতের কিছু স্মৃতি ভেসে ওঠে মানসপটে। শিউরে ওঠে আনহা। অজান্তেই একটা ভয় বাসা বাঁধে মনে। গলা শুকিয়ে আসছে। শুকনো গলা ঢোক গিলে ভেজানোর চেষ্টা করতেই সহসা দরজা খোলার চড়াৎ শব্দ ভেসে আসে। এতক্ষণ ভয় না লাগলেও এখন মস্তিষ্ক ভয়ের আভাস দিচ্ছে। আনহা দ্রুত দেয়ালে চেপে গুটিশুটি মেরে চেপে যায়। বুঝতে পারে রুমে কেউ প্রবেশ করেছে।
সে রুমে এসে আলো না জ্বালিয়েই খাটের ওপর শুয়ে পড়ে। দু’হাত বালিশের মতো মাথার নিচে দিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে, ‘বিগত একটা বছর ধরে তোমাকে খুঁজছি। পাগলের মতো খুঁজছি। কিন্তু না পেয়েছি তোমার খবর, না হয়েছে আমার কাজ। তবে একটা কথা বুঝতে পারছি না—তুমি এতটা পাষাণ হলে কবে থেকে আনু। আমার প্রতি একটুও মায়া হয়নি। তাই বলে কি নিজের মায়ের প্রতিও হয়নি। জানো তোমার মা আমার বাড়িতে কত কষ্ট ছিল। ইসস! তা যদি তুমি নিজে চোখে দেখতে!’
কথাটা শুনে আনহা নিজের ঠোঁট কামরে ধরল। কান্নার আওয়াজটা ওকে শুনতে দিতে চাইল না। কিন্তু সে ঠিকি তা আভাস করে নিল। তাচ্ছিল্য গলায় বলল, ‘এখন কান্না করে কি করবা? তখন তো ভাবো নাই।’
এবার আনহা মুখ খুলল। ক্রোধিত কণ্ঠে অন্ধকারে পাগলের মতো হাত-পা ছুড়ে উত্তেজিত হয়ে বলল, ‘সব কিছুই তো দিয়ে গিয়েছিলাম তোমায়। তাহলে আবার কেন ফিরিয়ে এনেছ। প্লিজ আমাকে যেতে দেও। সবটা তোমাকে এমনি…’
তখনি সে শোয়া থেকে উঠে ডান হাতে আনহার মুখ চেপে ধরল। জানালা দিয়ে চাঁদের আলো আসার কারণে অস্ফুটে তার চেহারা ফুটে উঠল। সুদর্শন মুখশ্রীর এক ব্যক্তির আভাস পেল। কিন্তু এই সুদর্শন মানুষটিই আনহার কাছে সূর্যশিশির গাছের মতো মনে হয়। হ্যাঁ, সূর্যশিশির গাছ। একটি মাংসাশী উদ্ভিদ। যে নিজের সৌন্দর্যের মোহে গেলে স্বীকারকে আকৃষ্ট করে। পরবর্তীতে তাকেই শুষে নিতে চায়। প্রয়োজন মেটাতে চায়। নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে অন্যকে নিগড়ে শুষে নেয়। সেই রকম একটা মানুষই সে।
আনহা মুখ থেকে হাত সরাতে চাইল। কিন্তু পারল না। সে কণ্ঠে কঠোরতা এনে বলল, ‘অনেক সহ্য করেছি আর না। তোমাকে এমন ভালো লাগে না। কেমন একটা বেমামান তোমার মুখের চড়াৎ চড়াৎ কথা গুলো। এক বছর দূরে থেকে সাহস বেড়েছে বোঝাই যাচ্ছে। কিন্তু কোনো সমস্যা নেই। আমি সব আগের মতো করে দেব। হয়তো আগের মতো ভালোবাসতে পারবে না। কিন্তু কথা দিচ্ছি আগের মতো ভয় ঠিকি পাবে আমাকে।’
মুখটা ছেড়ে দেয় আনহার। আনহা এবার হু হু করে কেঁদে ওঠে। মিনতি করে বলে, ‘কেন করছ? যা চেয়েছ তা তো আমি দিয়েই গেছি। তাহলে আবার কেন?’
বিরক্ত হয় সে। বলে, ‘দেখো আনু, যা হওয়ার হয়েছে। আমি পুরনো সব ভুলে যেতে চাই। তোমাকে সত্যি বিয়ে করতে চাই। সংসার করার জন্যই বিয়ে করতে চাই। ট্রাস্ট মি ইয়ার। তোমাকে বিয়ে করা নিয়ে আমার কোনো মতলব নেই। বরং যা করেছি বিয়ের জন্যই করেছি।’
‘চুপ করো তুমি। তোমার মতো লোকের মুখে এই কথা শুনতে চাই না আমি। তোমাকে বিয়ে করার চেয়ে সুইসাইড করতে আমার কম কষ্ট হবে।’
এ-কথায় হাতের থাকা গ্যাসলাইটের আগুনটা জ্বালায় সে। দৃশ্যমান হয় আনহার মুখ। কান্নায় বিধ্বস্ত হয়ে আছে। বাতাসে হিম থাকলেও উত্তেজিত হওয়ার কারণে বেশ ঘেমেছে মেয়েছে। ও খাট থেকে নেমে লাইট জ্বালিয়ে ফ্যান ছেড়ে দেয়। অতঃপর আয়নায় দিকে তাকিয়ে আয়নাতেই খাটে বসে থাকা আনহাকে দেখে। শিষ বাজাতে বাজাতে বলে, ‘মরতে চাইলে নিষেধ করব না। কেউ মরতে চাইলে আর কি করার আছে বলো। কিন্তু বাঁচা-মরা সব হবে। কিন্তু বিয়ের পর। বিয়ের পর তোমার ইচ্ছে হলে তুমি মরতেই পারে। আমি কিছু মনে করব না। বরং নিজে তোমার মরার দাওয়াত করে গ্রামবাসীদের খাওয়াব। যাতে আল্লাহ তোমাকে জান্নাত দান করে।’
এ-কথায় আনহা চুপ। সে হেসে বলল, ‘শুনেছি স্বামীর দোয়া কাজে লাগে। স্বামী যতই খারাপ হোক তার সেবায় স্ত্রী জান্নাতে যেতে পারে। বিশ্বাস করো তোমার জন্য আমি মন ভরে দোয়া করব। যাতে তুমি জান্নাতে যেতে পারো। আমি কত মহান তাই না?’
‘ছিঃ!’ ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নেয় আনহা। এ দৃশ্য আবার হাসে সে। বলে, ‘তাই তোমাকে আমাকে বিয়ে করতেই হবে। ভেবেছিলাম তোমাকে হাতে পেয়ে পালানোর মজা বুঝিয়ে দেব। কিন্তু নাহঃ ডিসিশন চেঞ্জড। আমাকে বিয়ে করবে না বলে পালিয়েছিলে তো। তাই বিয়েটাই তোমার শাস্তি হবে।’
‘করব না তোমাকে বিয়ে। শুনেছ তুমি।’
সে বাঁকা হেসে আনহার কাছে গেল। চুপসে গেল আনহা। থুতনি সমেত আনহার গাল ধরে বলল, ‘এখনো পুরোপুরি ভয় কাটেনি তাহলে। ভালো। হ্যাঁ, কী বলছিলে? কী বলছিলে?’ ভাবান্বিত হলো লোকটটি। কিছুটা ভেবে বলল, ‘হ্যাঁ, মনে পড়েছে। বিয়ে করব না।’
নিশ্চুপ আনহা।
মুহূর্তে তার চোয়াল শক্ত হয়ে আসে। বলে, ‘করতে হবে না বিয়ে। এমনিতেও এসব বিয়ে-টিয়ে আমার কাছে ম্যাটার করে না। আর যতদূর লোকের কথা। সবাই জানে তোমার সাথে আমার বিয়ে হয়ে গেছে।’
সচকিত হয় আনহা।
সে বাঁকা ঠোঁটে হেসে বলে, ‘হ্যাঁ, সবাই এটাই জানে, তুমি আমার ওয়াইফ। যে সংসার করবে না বলে মাকে নিয়ে পালিয়েছে। এখন কী বলত? তুমি বিয়ে করো বা না করো তাতে কিছু আসে যায় না। বাকিটা তোমার উপর। তুমি কী করবে?’
‘মানে?’
‘মানে, বিয়ে করে বাসর করবে। নাকি বাসর হওয়ার পর বিয়েতে রাজি হবে? আশা করি বুঝতে পারছ—কী বোঝাতে চাইছি আমি।’
কথাটা শুনেই ঠাস করে থাপ্পড় বসিয়ে দেয় আনহা সামনে থাকা মানুষটার গালে। বিস্ফোরিত চোখে তাকায় আনহার দিকে। চোখে ক্রোধ থাকলেও মুখে হাসির রেশ ফুটিয়ে বলে, ‘এইটা তোলা থাক। সময় মতো শোধ দিয়ে দেব।’
জড়সড় হলো আনহা। কিন্তু কিছু বলার আগেই সজোরে আনহার দু’গালে দু’টো ছড় বসিয়ে দেয়। মুহূর্তে গালে রক্ত জমাট বেঁধে যায়। তা দেখে সে আক্ষেপের সুরে বলে, ‘ইসস কতটা লেগেছে রে। সমস্যা নেই। আমি সবকিছুই ডাবল ফিরিয়ে দেই কিনা? তাই দেওয়ার আগে বুঝে-শুনে দেবে।’
বলেই আনহাকে ধাক্কা দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। আনহা ওনাকে বসেই কাঁদতে থাকে। নিজের ভাগ্যকে নিজেই দোষে। কয়েকঘন্টার ব্যাপার ছিল। আর কয়েকঘন্টা পর ও শহর ছেলে চলে যেত। ওকে আর কেউ খুঁজে পেত না। কিন্তু কী থেকে কি হয়ে গেল। যেখান থেকে আনহা শুরু করেছিল, সময়টা যেন সেখানেই থেমে গেল। ভাবতেই বুক ফেটে কান্না আসছে।
হঠাৎই আনহার গলার লকেটের দিকে। বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে থাকার কারণে লকেটটা নাকের কাছে এসেছে। আনহা উঠে বসে। লকেটটা হাতে নিয়ে চোখটা মুছে নেয়। লকেটটা ইহানকে আর ফিরিয়ে দেওয়া হলো না। যাওয়ার সময় দিয়ে আসতে চেয়েছিল। কিন্তু এখানে যে আসতে হবে ভাবেনি। তাই সুযোগও হয়নি ফিরিয়ে দেওয়ার। ভাবতেই লকেটটা দু’হাতে পুরে কাঁদতে লাগল আনহা। একটা বছর স্বপ্নের মতো কেটে গেছে। কোথা থেকে সময় পেরিয়েছে বুঝতেই পারেনি। একটুও শান্তি পায়নি ইহানের জন্য। কিন্তু তাতে একরাশ শান্তি ছিল। স্বস্তি ছিল। যা এখন নেই। কয়েক মুহূর্তে ওর দম বন্ধ হয়ে আসছে। মরে যেতে ইচ্ছে করছে।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
জিহাম আর ইহান পাথরের উপর নদীর পাড়ে বসে আছে। বসে বসে বিয়ার খাচ্ছে। তখনি জিহাম ইহানকে উদ্দেশ্য করে বলে, ‘আমার না খুব কষ্ট হচ্ছে।’
ভ্রু-কুটি কুঁচকে জিহামের দিকে তাকায় ইহান। বিয়ের বোতলে চুমুক দিতে দিতে বলে, ‘তোর কেন কষ্ট লাগছে?’
‘জানিনা। আনহা চলে যাওয়াতে নাকি আনহার বিয়ে হইছে সেই দুঃখে।’
কথাটা শুনেই কাশি উঠে ইহানের মুখ থেকে বিয়ার পড়ে যায়। বিস্মিত চোখে তাকায়। ডানা দিয়ে জিহামকে ধাক্কা মেরে বলে, ‘কেন তোর কী হইছে?’
‘আর কী হবে?’ দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল জিহাম। ‘তবে কেন জানি কষ্ট লাগতাসে।’ বলেই হা হা করে কান্না শুরু করে।
বিরক্ত হয় ইহান। বলে, ‘ঐ সালা তোর কান্নার কী আছে?’
‘ধুরঃ বালডা। কইছি তো জানিনা।’
বলেই দু’জনে কিছুক্ষণ চুপ থাকে দু’জন। ইহান নির্লিপ্ত চোখে নদীর দিকে তাকায়। চুমুক দেয় বিয়ারে। তখনি জিহাম বলে, ‘আচ্ছা জিহাম তোর মনে হয় ঐ লোকটা যা বলছে সত্যি বলছে?’
জিহামের এ-কথায় দ্বিধান্বিত দৃষ্টিতে তাকায় ইহান। ‘কী বলতে চাইছিস?’
‘না তেমন কিছু না। কিন্তু আমার কেন জানি মনে হচ্ছে লোকটার কথা বিশ্বাসযোগ্য নয়।’
‘মানে?’
‘আরে দেখনা লোকটা নিজেকে আনহার মামা পরিচয় দিল। ঠিক আছে। ওর মামা হতেই পারে। কিন্তু কোন মামা নিজের ভাগ্নী সম্পর্কে এমন বিশ্রি কথা বলতে পারে! আর কী বলল আনহা নাকি স্বামী ঘর থেকে চলে এসেছে? একটা কথা ভাব, যে মেয়ে ভার্সিটিতে কোনো ছেলেদের মেশা তো দূরস্থ, কথা পর্যন্ত বলত না। আর আমাদের কথা যদি বলিস তাহলে তো জানিস আমরা কেমন গায়ে পড়া।’
ভ্রু কুঁচকায় ইহান। ‘ঐ তুই কি আমাকে নির্লজ্জ বলছিস?’
‘আরে না রে? আমি তো…’
‘ধুরঃ সালা আমি তো নির্লজ্জই। এতে বলার কি আছে?’ বলেই আবার বিয়ারে চুমুক দেয়।
জিহাম বলে, ‘সেই টাই ভাব। আমাদের সাথে বাধ্য হয়েই কথা বলত। কিন্তু খেয়াল করেছিস—সবসময় মন মরা চুপচাপ বসে থাকত।’
কপালে ভাজ পড়ে ইহানের। আসলেই তো বিগত এক বছরে আনহাকে কখনো ঠিকভাবে হাসতে দেখেনি। ঐ যতটা সম্ভব হাসাতে চাইত ওকে। এছাড়া সবসময় কেমন একটা অন্য মনস্ক থাকত।
‘দেখ ইহান আমি জানিনা ওর বিয়ে হয়েছে কিনা? কিন্তু যেহেতু ওর মামা কথা অনুযায়ী ও পালিয়ে এসেছে। তারমানে এমন মারাত্মক কিছু হয়েছে যার জন্য ওকে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছে। নাহলে আনহার মতো এমন ধৈর্যশালী মেয়ে কেন নিজের সংসার ছেড়ে পালিয়ে আসবে। তাছাড়া আনহার বাড়ির লোকের তো কোনো কথা আমরা জানিনা। ওর মা-বাবা কোথায় ওনারা?
তখনি ইহান শঙ্কিত হয়। এক বছর আগের কথা মনে পড়ে। সেদিন আনহাকে রাতে ও অন্তির বাড়ি তুলে দিয়েছিল। কিন্তু এত রাতে আনহা বাড়ি খুঁজছিল কেন? আর সাহানা আন্টি ওনি কই? আনহার বাবাই বা কোথায়? এই একবছরে ওনাদের কোনো কথাই তো আনহা বলেনি। তাহলে…? তখনি আরেকটা কথা ভেবে নড়েচড়ে ওঠে ইহানের মাথার পোকাগুলো—আনহা কী কোনো বিপদে পড়েছে? যতদূর ইহান জানে সাহানা আন্টির তো কোনো ভাই ছিল না। তাহলে আরমান কীভাবে আনহার মামা হয়? কিছুতেই কিছুর হিসেব মিলছে না। উত্তেজিত ইহান উঠে দাঁড়ায়।
জিহাম বিয়ার চুমুক দিতে গিয়ে থেমে যায়। ইহানকে দাঁড়াতে দেখে বলে, ‘কি রে দাঁড়িয়ে গেলি যে?’
‘আনহা বিপদে আছে জিহাম। ড্যাম…’ বলেই পাথরে একটা লাথি মারে। হাতের থাকা বিয়ারের বোতলটা প্রচন্ডে জোরে ছুড়ে মারে। বলে, ‘এতদিন ধরেও আমি বুঝতে পারিনি আনহা কোনো বিপদে থাকতে পারে। আনহা ছোটবেলা থেকেই চুপচাপ। কাউকে কিছু বলে না। আর আমি… শিট।’
‘সেটা ঠিক আছে। কিন্তু ওকে কিভাবে খুঁজে পাবি? আনহা তো যাওয়ার সময় কিছুই বলে যায়নি। তাছাড়া আমরা তো জানিনা ও কোথায় গেছে।’
কথাটা শুনে ইহান নিরাশ হয়ে পাথরে বসে পড়ে। জিহাম কপাল কুঁচকে বলে, ‘কি রে বসে পড়লি যে?’
ইহান ভাবান্বিত হয়ে বলে, ‘ভাবছি…’
‘কী?’
‘আমার দুলাভাইয়ের কথা?’
‘মানে?’ সন্দিহান হয়ে জানতে চাইল জিহাম।
ইহান কিছুটা লজ্জা পেয়ে বলল, ‘হয়তো আনহার হাজবেন্ড অত সুন্দর নয়। তাই আনহা পালিয়ে আসছে। মানে বলতে চাইছি আমার মতো লম্বা, চওড়া, হ্যান্ডসাম নয়।’
নাক ছিটকায় জিহাম। মনে মনে বলে, ‘সালা নিজের প্রশংসা নিজেই করে। দুনিয়ায় ওর চেয়ে হ্যান্ডসাম আর কেউ নেই।’
‘আমি জানি রে আমি অনেক হ্যান্ডসাম। তাই হয়তো আমাকে দেখে আনহার নিজের বরকে ভালো লাগে নাই। তাই চলে আসছে।’
এবার জিহাম মুখ খোলে। ক্রোধিত কণ্ঠে বলে, ‘সালা ওর বিয়ের আগে যদি তোরে দেখে থাকে তাহলে তোরে ৯বছরের পিচ্চি দেখছিল। তখন তোর উপর ক্রাশ খাইছে নারে। তাই বুঝি ওর প্রাপ্তবয়স্ক জামাইরে ওর মনে ধরে নাই। সিরিয়াসলি ইয়ার…! খেয়ালি পোলাও পাকানো বন্ধ কর।’
‘ধুরঃ বাল। তুই সালা মন বুঝোস না। এখন চল আনহার বর দেখমু।’
‘কিন্তু ওরে পাবি কই?’
কথাটা শুনে কিছুটা চুপ হয়ে যায় ইহান। নিচের দিকে তাকিয়ে আকাশ-পাতাল ভেবে কিছু একটা আওড়ে নেয়। অতঃপর জিহামের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘এই পৃথিবীর বুকে আছে তো?’
‘হ্যাঁ, কিন্তু কেন?’
‘ব্যাস, আনহাকে খুঁজতে আমার এইটুকুই যথেষ্ট।’
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
[ বাকিটা পরের পর্ব গুলোতে জানবেন ]