আমায় একটু ভালবেসো পর্ব-১১

0
222

#আমায়_একটু_ভালবেসো
#জান্নাতুল_ফেরদৌস_কেয়া

(১১)

,চিঠিটা পড়ে অর্ণার মেজাজ খা রা প হয়ে গেল।কে এই লোক? যে আড়াল থেকে এভাবে চিঠি দিচ্ছে। রাগে অর্ণা চিঠিটাকে সেখানেই, ছিড়ে টুকরো,টুকরো করলো।

কে এসেছে দেখার জন্য মারিয়া বেগম রুম থেকে বের হলো।
,কি রে অর্ণা কে এসেছে? একি! তুই এই কাগজটা এমন ভাবে ছিড়েছিস কেন?কি লেখা এই কাগজে।
,দেখ না ফুপি!কদিন ধরে কে যেন আমাকে চিঠি লিখছে। ভেবেছিলাম তোমাকে জানিয়ে অহেতুক চিন্তা দেব না। কিন্তু এখন যা দেখছি”
এই লোক চব্বিশ ঘণ্টা আমাকে ফলো করছে। কোথায় যাই,কি করি,কি খাই।এসব ইনফরমেশন তার কাছে আছে।
অর্ণার কথা শুনে অবাক হলো মারিয়া বেগম। তিনি ভাবতেই পারছে না। তার অগোচরে এতো কিছু হয়ে গেছে।
,তুই আমাকে আগে জানাবি না। কে এই ছেলে?তুই শুধু নামটা বল’ বাকিটা আমি দেখছি।
,নাম জানিনা ফুপি। চিঠির মধ্যে, তার নাম পরিচয় কিছুই লেখা নেই।
মারিয়া বেগম দুশ্চিন্তায় পড়ে গেল।কে এমন করতে পারে তা ভাবনায় আসছে না তার।

পরদিন বেশ স্বাভাবিক ভাবেই কলেজে রওনা হলো অর্ণা। মারিয়া বেগম কে বলে গেল,আজ ফিরতে একটু দেরি হবে। চিন্তা যাতে না করে।
কলেজে ঢুকতেই জুথি আর নাঈমকে দেখা গেল।আগের জায়গায় বসে আছে। অর্ণাকে দেখতেই দৌড়ে তার কাছে এলো জুথি।
,কি অর্ণা। আজ এতো দেরি করে এলে যে।
‌,দেরি কোথায়। ঠিক সময়েই তো এসেছি।
‌,হ্যা।কিন্তু কাল তো তাড়াতারি এসেছো। তাই বললাম আরকি। তাহলে চলো আমরা বেরিয়ে পড়ি!
অর্ণা অবাক হলো।
,কোথায় বেরিয়ে যাব? মাত্রই তো কলেজে এলাম। এখন আবার কই যাব?
,ওমা! কালকের কথা ভুলে গেছ। আমাদের না ঘুরতে যাবার কথা ছিল আজ।
,হ্যা কিন্তু সেটাতো বিকেলে?
,আরে ধুর। কিসের বিকেল।চলো এখনি বেরিয়ে পড়ি।সারাদিন ঘুরবো আজ।
অর্ণা নাকচ করলো।
,না জুথি।পড়া ফাঁকি দিয়ে, ঘুরতে যাবার কোনো ইচ্ছে নেই আমার। সবার আগে লেখাপড়া। তারপর অন্যকিছু।তোমরা তাহলে ঘুরে এসো। আমি যাব না।
,এই না,না।তুমি যখন বলবো তখনই। তাহলে চলো ক্লাসে যায়।
,,হুম চলো।

কলেজ ছুটি হলো চারটায়। অর্ণা,জুথি আর নাঈম। বেরিয়ে পড়লো শহরটা ঘুরতে।
প্রথমে তারা একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকলো।সেখানে দুপুরের খাবার খেয়ে। গেল একটা নিরিবিলি পার্কে। সেখানে বেশ কিছুক্ষণ বসে রইল ওরা।
সন্ধ্যাবেলা হয়ে এসেছে।পশ্চিম আকাশে কোলে সূর্যমামা ঢলে পড়েছে। অর্ণা কথার পালায় পড়ে, কখন যে সন্ধ্যা হয়ে গেছে। খেয়ালই করেনি। যখন বাড়ির কথা মনে পড়লো।চারিদিকে তখন অন্ধকার বিরাজমান।
অর্ণা তড়িঘড়ি করে বলল,
,একি!রাত হয়ে গেছে। আমি তো খেয়ালই করেনি। জুথি তারাতাড়ি চলো। বাড়িতে ফুপি নিশ্চয় চিন্তা করছে।
,আরে কিচ্ছু হবে না অর্ণা। তুমি শুধু, শুধু চিন্তা করছো। এসো বসো।আমরা তোমাকে বাড়িতে পৌঁছে দেব। আর একটু আড্ডা দেই।তারপর নাহয় যাব।
,না, না জুথি। আমি এক্ষুনি বাড়ি যাব।
,বললাম না। এখন যাওয়া যাবে না।চুপচাপ এসে এখানে বসো।আমাদের সময় হলেই, তোমাকে তোমার বাড়ি পৌঁছে দেব।
অর্ণা বুঝলো এদের মতিগতি ভালো না। তাই ব্যাগটা হাতে নিয়ে দৌড় লাগালো।
দৌড়েও বেশি দূর যেতে পারলো না। অন্ধকার রাস্তায় হোঁচট খেয়ে পড়ে গেল মাটিতে। তখনই কতগুলো ছেলে অর্ণা ঘেরাও করে ফেলল।তারমধ্য নাঈম আর জুথিও আছে।
জুথি এগিয়ে এসে গাল চেপে ধরলো অর্ণা।
,কি রে মা****।পালাতে চেয়েছিলি না। নে এবার পালা।দেখি তোর কতো জোর।
ভ য়ে অর্ণা থরথর করে কাঁপছে। তার এই জীবনে কোনোদিন। এমন পরিস্থিতির স্বীকার হয়নি।
মুখ দিয়ে কোনো শব্দ বের করতে পারছে না। তবুও টেনে, টেনে বলল,
,ক,,ক,কি করছো জুথি।আমার লাগছে।আর এই ছেলেগুলো কে?
জুথির হাতের বাঁধন আরো শক্ত হলো।ব্যাথায় ককিয়ে উঠলো অর্ণা।তাতে যেন খুশি হলো সবাই।
,হা,হা,হা। ইশ্ যেন ভাজা মাছটা উল্টে খেতে জানেনা। তুমি আমাদের ফাঁদে পা দিয়ে ফেলেছো মামুনি। এখন এরা তোমাকে নিয়ে যাবে। তুমি চিন্তা করো না। ওরা তোমাকে বেশি কষ্ট দেবে না। আমি বলে দিয়েছি।শুধু এই নয়জন মিলে প্রথমে তোমাকে “গ ন” ধ”র্ষ”ন করবে। দেন পাথর দিয়ে তোমার মুখটাকে
থেঁ ত লি য়ে কোন এক পাহাড়ের খাদে ফেলে দেবো।
‌জুথির কথা শুনে গাঁ শিউরে ওঠলো অর্ণা। হাত পা বরফ হয়ে গেছে। পরবর্তীতে তার সাথে কি কি হবে। তা ভাবতেই আত্মা পানি শুকিয়ে গেল।
জুথির পায়ে ধরলো অর্ণা।
,প্লিজ জুথি। এমন করো না৷ আমি না তোমার বোনের মতো। আমার এতো বড় ক্ষ তি তুমি করতে পারো না। দেখ তোমার যত টাকা লাগে আমি দেব।শুধু আমাকে বাড়ি ফিরতে দাও। কথা দিচ্ছি কাউকে কিচ্ছু বলব না। এই শহর ছেড়ে যাব। শুধু একবার বাড়ি ফিরতে দাও। দয়া করো প্লিজ।
অর্ণার আ র্ত নাদ করুণ শুনালো। তবে তা মন গলাতে পারলো না ওদের। জুথি অর্ণার চুলের মুঠি ধরে টেনে দাঁড় করালো।হাসতে, হাসতে বলল,
,তোর মতো এমন ডায়লগ অনেকেই বলেছে।তবে কাজ হয়নি। তাই যা বলছি তাই করো। অন্তত তাড়াতাড়ি ম রতে পারবি। এই ওকে গাড়িতে তোল। আর মুখের মধ্যে টেপ দিয়ে দে।
মুখ বন্ধ করার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত প্রানপন, চিৎ কার দিলো অর্ণা। কিন্তু দূরভাগ্য। জায়গাটা এতোই নিরব যে, সেই আওয়াজ কেউ শুনতে পেল না।
জুথি বাইরে দাঁড়িয়ে কথা বলছে একটা ছেলের সাথে। এই ছেলেটায় অর্ণাকে কিনে নেবে।জুথির পেশায় এটা।কলেজ থেকে মেয়েদের এনে এদের কাছে বিক্রি করে দেয়া এইজন্য সে মোটা অংকের টাকাও পায়।
,দেখ জুনায়েদ। এই মেয়েটা কিন্তু হেবি সুন্দরী। তাই এর দামও হবে চড়া। তাছাড়া এরা বেশ বিত্তবান। তাই কেস মামলাতে ও জড়াতে পারি। তাই এর দাম আমাকে পুষিয়ে দিতে হবে।
,আচ্ছা ঠিক আছে । বল কত চাই তো৷র?
,পঞ্চাশ হাজার ।

চলবে,,