আমায় একটু ভালবেসো পর্ব-১৩

0
227

#আমায়_একটু_ভালবেসো
#জান্নাতুল_ফেরদৌস_কেয়া

(১৩)

পরদিন সকালে অর্ণারা তাদের বাড়িতে ফিরলো। অর্ণা আর মারিয়া বেগম যখন গেট দিয়ে বের হচ্ছিল। তখন তাহমিদ কে দেখা যায় বাড়িতে প্রবেশ করতে। অর্ণাদের দিকে একবার তাকিয়ে, তারপর গটগট করে বাড়ির ভিতরে চলে গেল।

অর্ণার আজকাল কিছুই ভালো লাগে না। বাড়ি থেকে বের হয়না আর। কলেজে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। বাড়িতে যা পড়ার পড়ে। অর্ণা বিষন্ন মুখে ছাদে বসে আছে। এখান থেকে পাহাড়ের সারিগুলো দেখা যায়। দেখতে চমৎকার লাগে। তবে এইসবে আর মন ভালো হয় না অর্ণা। নিজের প্রতি বিরক্ত এখন। মাঝে মাঝে মনে চাই, শেষ করে দেই নিজেকে।

নিচ থেকে মারিয়া বেগম চেঁচিয়ে ডাকছে। অর্ণা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে ওঠে দাঁড়ালো। নিচে যেতে হবে।
নিচে নামতেই বেশ অবাক হলো অর্ণা। আশোক সাহেব আর পাপিয়া বেগম এসেছে। মা-বাবা কে দেখে,দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো তাদের।
আশোক সাহেব মেয়ের মাথায় হাত রেখে বলল,
,কেমন আছো মা?
বাবার স্নেহময় আদরে হু,হু করে কেঁদে ফেলল অর্ণা। পাপিয়া বেগম মেয়ে কে জড়িয়ে ধরলো।
,কাঁদছো কেন অর্ণা! আমরা তো এসে পড়েছি তাই না। কান্না থামাও! একটু হাসো।
অর্ণা হাসলো। প্রান খোলা হাসি। কতদিন পর যে এমন করে হাসছে, তা অর্ণা নিজেও জানে না।
সারাদিন বাবা-মায়ের সাথে গল্প করেই দিন গেল অর্ণা।
রাতে ঘুমুতে যাবে এমন সময় আশোক সাহেব এলো মেয়ের রুমে।
,অর্ণা মা কি করছিস?
,কিছু না বাবা। ব্যস্ ঘুমানোর জন্য বিছানা তৈরি করছি।
,ওহ আচ্ছা।
অর্ণা বিছানা ঝাড়তে,ঝাড়তে বলল,
,কিছু বলবে বাবা?
আশোক সাহেব কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে । তা দেখে অর্ণা বলল,
,এমন করছো কেন বাবা?বল না কি হয়েছে!
,না আসলে, আমাদের তো বয়স হয়েছে রে মা। আমরা তো আর সারাজীবন বেঁচে থাকবে না, তোদের দেখে রাখার জন্য। তাই না?
,হ্যা! কিন্তু এই কথা এখন বলছো কেন?
আশোক সাহেব ঘামতে লাগলো। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। তিনি পানি খেয়ে গলা ভিজালো।অর্ণা বাবার এহেন আচরণ দেখে, অবাক না হয়ে পারলো না। আশোক সাহেবের হাত ধরে বিছানায় বসালো। তারপর নরম সুরে বলল,
,ও বাবা!তুমি এমন করছো কেন?আমায় বলো কি হয়েছে। কারো কি কিছু হয়েছে। বাড়ির সবার শরীর ভালো তো। তখন তোমায় জিজ্ঞাসা করলাম, হঠাৎ কি কারণে এসেছে! তুমি তো কিছু বললে না।
আশোক সাহেব এবার ভরসা পেলেন। মেয়ের হাতটা শক্ত করে ধরে বলল,
,অর্ণা, সেই ছোট থেকে আজ অব্দি তোমাদের কোনো ইচ্ছে অপূর্ণ রেখেছি?অর্ণা মাথা দুলালো। যার অর্থ,না।
,আমি আজ তোমার কাছে একটা জিনিস আবদার করবো।তুমি কি আমার সেই আবদার রাখবে?
,কি আবদার বলো না বাবা?
,না আগে বল রাখবে?
,আচ্ছা ঠিক আছে রাখবো! এবার তো বলো কি?
,দেখো মা,তোমার মায়ের শরীরটাও ভালো না। হার্টের প্রব্লেম দেখা দিয়েছে। এদিকে আমার শরীরও ভালো থাকে না। পর্ণাকে তো বিয়ে দিয়ে ফেলেছি।এবার তোমার পালা। আমি চাই এখন তোমাকে একটা যোগ্য পাত্র দেখে বিয়ে দিতে।
আশোক সাহেবের কথা শুনে, স্তব্ধ হয়ে গেল অর্ণা। কি বলবে ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না। বাবার মুখের উপর কোনো কথা বলার সাহস হচ্ছে না অর্ণার। সে মাথাটা নত করে ফেলল।আশোক সাহেব বিচলিত কন্ঠে বলল,
,না মা। তুমি যদি না চাও, তবে জোর করবো না আমি। আমি তো প্রথমেই বলেছি,যে আমি একটা আবদার রাখবো। এর বেশি কিছু না।
অর্ণা নিজেকে শান্ত করলো। বাবা-মা যে তার খা রা প চায় না। তা সে ভালো করেই জানে । তাই কম্পিত কণ্ঠে বলল,
,তোমার আবদার আমি রাখবো বাবা! তুমি যা বলবে তাই।
আশোক সাহেব যেন এই কথারই অপেক্ষায় ছিল। মেয়ের কথা শুনে, খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেলেন।
,কই গো অর্ণা মা। দেখে যাও, আমার অর্ণা আমার কথা রেখেছে। তুমি তো বলেছিলে, মেয়ে আমার কথা রাখবে না। এখন দেখো কি হয়েছে।
পাপিয়া বেগম, আর মারিয়া বেগম দরজার আড়ালেই ছিল। অর্ণার কথা শুনে তারাও বেরিয়ে এলো। মারিয়া বেগম অর্ণাকে জড়িয়ে ধরলো। আজ সবাই খুশি। বিয়ে দিলে অন্তত মেয়েটা সুখে থাকবে।

আশোক সাহেব, তার তিন ভাই কে ফোন করে আসতে বলে দিয়েছে। কাল অর্ণাকে পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে। অর্ণা অবাক হচ্ছে এদের কর্মকান্ড দেখে। এখন বুঝতে পারছে, যে এসব আগে থেকে প্ল্যান করা। শুধু অর্ণার মতামতের জন্য এসব।
রাত বাড়তেই সবাই যে যার রুমে চলে গেল। মারিয়া বেগম থাকতে চেয়েছিল, অর্ণার সাথে। কিন্তু সে মানা করে দিয়েছে।
গভীর রাত। অর্ণার চোখে ঘুম নেয়।সে বারান্দার দোলনায় বসে, আকাশের তারা দেখছে। হঠাৎই তার মাথায় এলো, সেদিনের চিঠিটার কথা। ওই দিনের পর আর চিঠি আসেনি। অর্ণা ভেবেছিল, লোকটা হয়তো মজা করছিল। কিন্তু এখন বুঝতে পারছে সব। আচ্ছা ঐ লোকটার সাথেই কি বিয়ে হবে আমার? অর্ণা চিন্তায় মশগুল। দুইয়ে, দুইয়ে চার যেন মিলে গেল।

পরদিন খুব ভোর থেকে, কাজ শুরু করে দিল পাপিয়া,ও মারিয়া বেগম। বিভিন্ন পদের রান্না হচ্ছে। বাড়িতে উৎসব, উৎসব আমেজ।মারিয়া বেগমের মেয়ে ও এসেছে বিদেশ থেকে। আসলে তার বাড়িতে আসার তারিখ আজকেই ছিল।
অর্ণার ঘুম ভাঙলো নয়টায়। ঘড়িতে নজর দিতেই তার চোখ চড়কগাছ। এত বেলা হয়ে গেছে, তা খেয়াল করেনি। দ্রুত তৈরি হয়ে নিচে এলো। নিচে আসতেই দেখলো, তার কাকা-জেঠারা নিচে বসে আড্ডা দিচ্ছে। অর্ণার মন ভালো হয়ে গেল । আজ কতদিন পর সবাই কে একসাথে দেখছে।
হঠাৎই কেউ পেছন থেকে চোখ বন্ধ করে ধরলো অর্ণার,,,

চলবে,,,