#আমায়_একটু_ভালবেসো
#জান্নাতুল_ফেরদৌস_কেয়া
(১৪)
গোলাপি রঙের একটি শাড়ি, খোঁপা করা চুলে গাজরা।চোখে কাজল। অর্ণাকে যেন অপ্সরা লাগছে। মারিয়া বেগম নিজেই, মুগ্ধ হয়ে গেলেন। অর্ণার রূপ দেখে। এতদিন তো এতো সুন্দর লাগেনি অর্ণাকে। আবার হয়তো লাগতো। খেয়াল করা হয়নি।
অর্ণার চোখে জল চকচক করছে। পলক ফেললেই পড়ে যাবে। মা-বাবা কে ছাড়ে সারাজীবনের জন্য, চলে যেতে হবে। তা ভাবতেই, বুক ভেঙে কান্না আসছে।
মারিয়া বেগম ভাইজীর কষ্ট বুঝতে পারলো। তিনি ও তো একসময় এই সময়টা পার করে এসেছে। অর্ণাকে জরিয়ে ধরে, সান্ত্বনা দিল।
,থাক মা! মন খারাপ করিস না। মেয়েদের জীবন এইরকম হয়। তাদের নিজের কোনো ঘর হয়না। যেখানে যায় সেখানেই মানিয়ে নিতে হয়। ওরা সবাই অনেক ভালো। তোকে অনেক আদরে রাখবে।আমরা তো তোর খারাপ চায় না।
নিচ থেকে আশোক সাহেব, মারিয়া বেগম কে ডাকছে। অর্ণাকে নিয়ে যাবার জন্য। মারিয়া বেগম দীর্ঘ শ্বাস ফেলে, অর্ণা নিয়ে নিচে গেল।
বড়রা কথা বলছে সবাই। অর্ণা মাথা নিচু করে বসে আছে। তার এখন ওদের কথায় মনযোগ নেই। সে একমনে ভেবে চলছে,অন্য কিছু। যার সাথে বিয়ে হবে সেই মানুষ টা, জানি কেমন হবে? তার মনমানসিকতা কেমন হবে?এসব।
একটা সময় ছেলে এবং মেয়েকে আলাদা কথা বলার জন্য, অন্য রুমে নিয়ে যাওয়া হলো।
অর্ণা সেই যে মাথা নিচু করেছে। আর উপরে তুলেনি। তার হাত-পা কাঁপছে। অচেনা একটা ছেলের সামনে, ভিষণ আনইজি ফিল করছে।
, আপনি প্লিজ নর্মাল হোন।এত অস্থির হওয়ার কিছুই নেই। আমরা বসে কথা বলি!
অর্ণা জোরে, জোরে শ্বাস নিলো।মনে, মনে নিজেকে গা লি দিল।এত অস্থির হওয়া কি আছে। তার তো আর বিয়ে হয়ে যাচ্ছে না। আর সে,ছোট নেই। যে হাত-পা
কাঁপা-কাঁপি করবে।
অর্ণা এবার সাহস করে চোখ তুলে তাকাল। চোখের সামনের মানুষ টাকে দেখে, আকাশ থেকে পড়লো।
মৃদু চিৎকার দিয়ে বলল,
,আপনি??
তাহমিদ মুচকি হাসলো।
,চমকালেন কেন? অন্য কাউকে আশা করেছিলেন৷ নাকি?
অর্ণা থমথমে খেয়ে গেল।
,না, তা কেন মনে করবে। তবে অন্য কেউও তো হতে পারতো। তাই না!
,হুম তা ঠিক। তবে আমার জিনিসে, অন্য কেউ নজর দেওয়ার সাহস দেখাবে না।
অর্ণা অবাক হলো।
,আপনার জিনিস মানে?
,না কিছু, না। তো এইবার প্রশ্ন করতে পারি?
অর্ণা ভ্রু কুঁচকে তাকালো। লোকটার কথাবার্তা কেমন যেন।
,হুম।
,আপনার নাম তো জানি।এবার আমার নামটা বলি,আমি তাহমিদ আহমে,,
অর্ণা হাত উঁচিয়ে থামিয়ে দিল।
,থাক,থাক। আপনার পরিচয় আমি জানি। তাই নতুন করে আর দিতে হবে না। আপনি বরং আমাকে কি জিজ্ঞেস করবেন।সেটা তারাতাড়ি বলুন।
,বাব্বাহ্। আগে থেকেই বরের সব ডিটেইলস জেনে রেখেছেন। ভালো, খুব ভালো।
,এক্সকিউজ’মি!কাকে আপনি বর বলছেন?
তাহমিদ শার্টের কলার উঁচিয়ে বলল,
,কেন আমাকে কি, তোমার চোখে পড়ে না?
অর্ণা অবাকের চরম সীমায় পৌঁছে গেল।লোকটা আপনি থেকে তুমিতেে নেমে গেছে। কি হচ্ছে এসব? অর্ণার ইচ্ছে করছে, লোকটাকে কড়া কিছু কথা বলতে। কিন্তু তা সম্ভব নয়। বাবার দিকে তাকিয়ে, দাঁতে দাঁত চেপে সব সহ্য করছে। অর্ণা দীর্ঘ শ্বাস ফেলল।
,আপনার আর কিছু বলার আছে? আর নয়তো আমি যাচ্ছি।
এই বলে অর্ণা যাওয়ার জন্য উদ্যেৎ হলো। তাহমিদ অর্ণা হাত ধরে আঁটকে ফেলল।অর্ণার সর্বাঙ্গে শীতল বাতাস বয়ে গেল। সে হাত গুটিয়ে নিতে চাইলো।কিন্তু তাহমিদ জোর করে নিজের দিকে ঘুরালো।দেয়ালের সাথে অর্ণাকে মিশিয়ে। তাহমিদ তার দিকে ঝুকলো।
,কোথায় পালাচ্ছেন প্রেয়সী?
অর্ণা চোখ বড়,বড় করে তাকালো।
,আপ,আপনি কি বলে ডাকলেন?
তাহমিদ বাঁকা হাসলো। অর্ণার সামনে আসা চুলগুলোকে পিছনে গুঁজে দিল।চোখে,চোখ রেখে বলল,
,যেদিন প্রথম দেখিছিলাম, সেদিনই প্রেমে পড়ি। তোমার সম্পর্কে খোঁজ খবর নিয়ে দেখি। কলেজের স্যারের প্রেমে পড়েছিলে।কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত, তার সাথে তোমার বোনের বিয়ে হয়। তারপরই মানষিক ভাবে ভেঙে পড়ো। নিজের পছন্দের মানুষকে অন্য পাশে দেখে, সহ্য করতে পারছিলে না। তাই এসে পড়ো এখানে। ভেবেছিলাম, তোমাকে আরো সময় দিব। নিজেকে শক্ত করার জন্য। আর চিঠিতে নিজের মনের কথা গুলো লিখি।আস্তে, আস্তে তোমার মন জয় করব।কিন্তু চারিদিকে শকুনেরা নজর দিয়ে আছে, তোমার দিকে। তাই আর দেরি করতে চাই না। আমার জিনিস আমার কাছে, নিয়ে যেতে চাই!
সমস্ত কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে গেল অর্ণা। চোখের পলক পড়ছে না। কানগুলো ঝা,ঝা করছে।
তাহমিদ হাঁটু গেড়ে নিচে বসে পড়লো। হাতের মধ্যে একটা আংটি নিয়ে, সেটা অর্ণার সামনে ধরলো।কাতর কন্ঠে বলল,
,জানো অর্ণা! আমার মা নেই। জন্মের পরপরই মাকে হারায়। বাবা সবসময় কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতো। তাকে দোষ দেই না। যদি কাজ না করতো, তবে ইচ্ছে গুলো কে পূরণ করতো।ভাইয়াও তার লেখা-পড়া নিয়ে ডুবে থাকতো। আমি বড় হয়েছি নার্সের কাছে। কাকা-কাকিরা ছিল। তবে তাদের ও তো সন্তান ছিল। আমি এভাবেই বড় হয়। দিনগুলো ভালোই যেত। কিন্তু রাত হলো একাকিত্ব চেপে ধরতো। জীবনে ভালবাসা আসেনি। অনেক মেয়ে প্রপোজ করেছিল। কিন্তু কাউকে ভালো লাগেনি। যেদিন তুমি যত্ন করে আমার কা টা জায়গায় ঔষধ লাগিয়ে দিচ্ছিলে।তখন উপলব্ধি করি তোমার প্রেমে পড়েছি। আমি ভালবাসায় কাঙাল অর্ণা।বেশি কিছু চায়না অর্ণা।শুধু #আমায়_একটু_ভালবেসো। এতেই চলবে। বিনিময়ে পৃথিবীর সব সুখ তোমায় এনে দেব।
অর্ণার চোখ থেকে পানি ঝরছে। সে কোনো কথা বলতে পারছে।
তাহমিদ আবার ও বলল,
,উইল ইউ মেরি মি অর্ণা?প্লিজ!
অর্ণা কম্পনরত থাকা হাতটা এগিয়ে দিল। যে মানুষটা এত দুঃখর সম্মুখীন হয়েছে। সে নিশ্চয়ই খা রাপ হতে পারে না। তাহমিদ হাসলো। অর্ণার অনামিকা আঙ্গুলে আংটিটা পড়িয়ে দিল।
চলবে,,,,,,