আমায় একটু ভালবেসো পর্ব-১৮

0
230

#আমায়_একটু ভালবেসো
#জন্নাতুল_ফেরদৌস কেয়া

(১৮)

অর্ণা পিছন ফিরে চাইলো।তাহমিদ এসেছে, বাইক থেকে নেমে এদিকে আসছে। অর্ণাও এগিয়ে গেল।
তাহমিদ এসে অর্ণার হাত ধরলো। লজ্জায়, আড়ষ্ট হয়ে গেল সে। তা দেখে তাহমিদ ভ্রু কুঁচকে ফেলল।
,কি ব্যাপার?এমন মোচড়ামুচড়ি করছো কেন?
,না কিছু না।
,হুম চলো!
,কোথায়?
,আগে চলো, তারপর নিজের চোখেই দেখো।
অর্ণা কিছু একটা ভেবে বলল,
,আচ্ছা আপনি দাঁড়ান, আমি মাকে বলে আসছি।
অর্ণা মলের ভিতর ঢুকে গেল, তার মাকে বলার জন্য। পাপিয়া বেগমের থেকে অনুমতি নিয়ে, অর্ণা বাইরে এলো।তাহমিদ আগে থেকেই বাইকে বসেছিল।অর্ণা গিয়ে বসতেই বাইক স্ট্যার্ট দিল।অর্ণা অস্বস্তি নিয়ে বসে আছে। দুহাত দিয়ে পিছনের দিকে ধরে রেখেছে। ফলস্বরূপ, একটু ধাক্কা খেলেই তাহমিদের শরীর সাথে শরীর লেগে যাচ্ছে। তাহমিদ বিরক্ত হয়ে বলল,
,তুমি ঠিক আছো অর্ণা?এমন করে বসেছো কেন?
অর্ণা কাচুমাচু করে বলল,
,কীভাবে বসবো?
তাহমিদ কিড়মিড় করে বলল,
,আমার কাঁধে হাত রেখে বসো। তাহলে ধাক্কা খেলে ও, আমার সাথে লাগবে না।
অর্ণা ঠিক বুঝলো না,তাহমিদ কি বুঝাতে চাইছে।ঠেশ মে রে বলল নাকি!

বাইকের স্প্রিড এত বেশি যে, অর্ণার চোখে মুখে চুল এসে আছড়ে পড়ছে। এপাশের চুল গুলো গুঁজলে, ওপাশের গুলো বের হয়ে যায়। এ নিয়ে মহা যন্ত্রণায় পড়েছে অর্ণা।তাহমিদ কে ও কিছু বলতে পারছে না। প্রায় বিশ মিনিট পর বাইক এসে থামলো,একটা পার্কের সামনে। তারা দুজনেই নেমে পড়লো।
পার্কটা বেশ বড় আর নিরিবিলি। তাহমিদ আর অর্ণা একটা লেকের পাড়ে গিয়ে বসলো।বিকেলের নরম রোদ,ধূসর রাঙা আকাশ।সব মিলিয়ে পরিবেশ টা বেশ সুন্দর। অর্ণা আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো অনেকক্ষণ। কেউ কোনো কথা বলছে না।তাহমিদ একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অর্ণা দিকে। মেয়েটা কি সুন্দর! হলুদ রঙের সূর্যের আলো এসে, অর্ণার মুখের উপর পড়েছে। ফর্সা মুখে, হলুদ রঙ পড়ায় মুখটা ভিষণ মায়বী লাগছে।
তাহমিদের মনে পড়লো, যখন সে অর্ণাকে প্রথম দেখেছিল তার কথা।তাহমিদ যখন এ ক্সিডেন্ট করে রাস্তায় পড়ে ছিল,তার কিছুক্ষণ পরই অর্ণাদের গাড়িটা সামনে আসে।তাহমিদের তখন জ্ঞান ছিল ঠিকই, তবে কথা কিংবা চোখ কোনোটায় খুলতে পারছিল না।অর্ণা যখন ফাস্ট এইড বক্স নিয়ে এসে, তার ক্ষ ত স্থানে ঔষধ লাগায়, তখন মিটমিট করে চোখ খুলে।আর চোখের সামনে ভেসে ওঠে, এক মায়াবতীর চেহারা।যে অতি মায়া নিয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে। তার রেশমি কোমল চুল, তাহমিদের নাক,মুখ গলা বারবার ছুঁয়ে দিচ্ছে। সেদিনই প্রেমে পড়ে তার।অর্ণা বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানতে পারে, মেয়েটার অন্য একটা ছেলের সাথে প্রেম ছিল। তবে ছেলেটার, তারই ছোটবোনর সাথে বিয়ে হয়ে গেছে। একবার খারাপ লাগলে ও পড়ে খুশি হয়।এই ভেবে যে,অর্ণার তো আর বয়ফ্রেন্ড নেই। এখন সে অর্ণাকে রাজি করাতে পারবে।

অর্ণা তাহমিদের উদ্দেশ্যে বলল,
,আকাশ টা কি সুন্দর, তাই না?
তাহমিদ এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে অর্ণার দিকে।অর্ণা তুড়ি মারলো তাহমিদের চোখের সামনে,
,কি হলো,কি ভাবছেন?
তাহমিদ বার কয়েক চোখের পলক ফেলে বলল,
,নাহ্ কিছু না! কিছু বলছিলে?
,হুম, বলছিলাম আকাশটা আজ অনেক সুন্দর। তাই না?
,হুম, তোমার মতো ।
তাহমিদ কিছু একটা মনে পড়তেই জিজ্ঞেস করলো,
,অর্ণা তোমার, ঐ জুথি আর নাঈমের কথা মনে আছে?
তাহমিদের মুখে ওদের নাম শুনে, গা কেঁপে উঠল অর্ণার।মনে, মনে বলল,ওদের কে কি করে ভুলি। নিজের জীবনের সবচেয়ে বড় বিশ্বাসঘাতক ছিল ওরা। সেদিন ঐ রাতটা দুঃস্বপ্নের মতো কেটেছে। অর্ণার সারাজীবন মনে থাকবে। কিন্তু তাহমিদ জানলো কিভাবে ওদের কথা।অর্ণা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
,হ্যা মনে আছে। কিন্তু আপনি ওদের নাম জানলেন কীভাবে?
তাহমিদ মুচকি হাসলো। লেকের মধ্যে একটা ঢিল ছুড়ে বলল,
,ওদের কি শাস্তি হয়েছিল, তা তোর আর জিজ্ঞেস করোনি?
,আসলে আমি ভুলে গিয়েছিলাম তাদের বিষয় টা।তাই আর জিজ্ঞেস করিনি।আর তাছাড়া এদের তেমন গুরুতর শাস্তি হয়না। যেখানে মেয়েদের রে প করে, হ ত্যা করে ফেলা হয়,তবুও মৃ ত্যু দন্ড হয় না।সেখানে তো আমার কোনো ক্ষ তি হয়নি।আচ্ছা এতদিন পর এই কথাগুলো কেন তুললেন?
, অর্ণা, ছোটবেলা থেকেই আমি একরোখা, জেদি।আমার জিনিস আমি কখনোই কাউকে ভাগ দেই না।হোক সেটা চুল পরিমাণ। আর তুমি হচ্ছো আমার জীবন সঙ্গী,ভালবাসা,মানষিক শান্তি। তোমার ওরা ক্ষ তি করতে চাইবে, আর আমি ছেড়ে দেবো!
অর্ণা অবাক হচ্ছে, তাহমিদের কথা শুনে। কি বলছে লোকটা,
,আপনি কি করেছেন, ওদের সাথে?
তাহমিদ অসহায় মুখ করে বলল,
,বেশি কিছু করতে পারিনি জান।ওরা সংখ্যায় অনেক জন তো, তাই প্রত্যেকের একটা করে হাত, পা কনুই আর হাটু থেকে কে টে দিয়েছি।এখন বাকি জীবন ভিক্ষা অথবা ঘরে বসে খেতে হবে।
তাহমিদের কথা শুনে চোখ বড়,বড় করে ফেলল অর্ণা।বলে কি এই লোক?হাত আর পা কেটেছে মানে? অর্ণা চেঁচিয়ে বলল,
,কি বলছেন আপনি এইসব?ওদের আপনি পেলেন কোথায়, আর হাত, পা যে কেটেছেন ভ য় পাননি?
,আমার বাবা রাজনীতিতে আছে। তাই পুলিশকে হাতে আনা, বা হাতের খেল।পুলিশের সাথে হাত মিলিয়ে, ওদের কে আমার আন্ডারে নিয়ে এসেছি।আর ভয় পাবার কথা বলছো,রাজনীতি করতে গেলে, এসব খু ন,র ক্ত এসব দেখে অভস্থ হতে হয়।আর নয়তো রাজনীতি করা যাবে না। আর ওদের কে তো আমি নিজ হাতে শাস্তি দেয়নি আমার লোক দিয়ে করেছি।
,তা নাহয় বুঝলাম। কিন্তু আপনি এসব জানেন কিভাবে? কে বলেছে এসব?
তাহমিদ বাঁকা হাসলো।
,অর্ণা তুমি ভুলে যাচ্ছো,যেদিন তুমি ওদের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলে,সেদিন তোমাকে আমি চিঠিতে না করেছিলাম যাওয়ার জন্য। কিন্তু তুমি শোননি।প্রথমে ভেবেছিলাম, ওদের শুরুতেই ধরে ফেলি।কিন্তু পড়ে ভাবলাম তোমাকে একটা শাস্তি দিতে হবে। কারণ তুমি আমার কথা না শুনে ওদের কাছে গিয়েছো। তাই ভাবলাম, ওরা যখন তোমায় ওরা গাড়িতে তুলবে, তখন গিয়ে ওদের চমকে দিবো। বিকেল পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করছিলাম। কিন্তু সবকিছু , ব্যর্থ হয়ে গেল একটা ফোনে।ঐদিন বাবা গিয়েছিল একটা সভায়,কিন্তু সেখানে কি নিয়ে যেন গন্ডগোল লাগে।বাবা যেখানেই যায় আমাকে সাথে করে নিয়ে যায়। কিন্তু সেদিন তোমার কারণে,আমি বাবাকে বলি, যে বাবা তুমি আজকে একা যাও।আমার একটা জরুরী কাজ আছে। বাবা ও আর কিছু বলেনি।কিন্তু সেখানের অবস্থা বেগতিক দেখে, বাবার সেক্রেটারির আমাকে জানায় বাবার উপর এট্যাক করেছে, কিছু লোক।উপায়ন্তর না পেয়ে আমি তারাতাড়ি সেখানে যায়।আর কিছু লোক রেখে যায় এখানে, তোমাকে দেখার জন্য। সেখানে গিয়ে বাবাকে পাঠায় তোমার কাছে। যাতে তোমাকে বাঁচাতে পারে। কারণ ওদের উপর বিশ্বাস হচ্ছিল না আমার।যদি একটা ভুল করে, তাহলে তোমাকে সারাজীবনের মতো হারিয়ে ফেলব।
তাহমিদের কথাগুলো অর্ণার মাথার উপর দিয়ে গেল।তার অগোচরে যে এতো কিছু হলো,সে কিছুই জানে না। লোকটাকে যত দেখছে, ততই মুগ্ধ হচ্ছে অর্ণা।
তাহমিদ অর্ণার হাত ধরে বলল,
,আচ্ছা বাদ দাও ওসব।যা চলে গেছে, তা নিয়ে আর ভাবার দরকার নেই।এখন বলো তোমাদের বাড়িতে আজ কি হয়েছে?
,কই বাড়িতে কি হবে?
,তবে যে মিতু আমাকে ফোন দিয়ে বলল,যে পর্ণাকে নিয়ে নাকি ঝামেলা হয়েছে।
,ওহ্ মিতু আপনি সব বলে দিয়েছে?
,না সব বলেনি, তবে কিছু, কিছু বলেছে। এখন তুমি পুরোটা বলবে।
অর্ণা দীর্ঘশ্বাস ফেলে, সব খুলে বলল তাহমিদ কে।সব শুনে তাহমিদ অবাক হলো। কেউ যে এতটা খা রা প হতে পারে, তা জানা ছিল না। সে রাগী সুরে বলল,
,তোমাকে এত উদার হতে, কে বলেছে। কেন ঐ বদজাত মেয়ে কে ক্ষমা করলে?
,ওমা আপনি রাগ করছেন কেন?ওর জন্যই তো আজ আপনি আমাকে পাচ্ছেন। ও যদি আদনান স্যারকে, বিয়ে না করতো। তাহলে তো আমার সাথে বিয়ে হয়ে যেত!তখন কি আপনি আমাকে বিয়ে করতে পারতেন?

চলবে,,,,