আমার আদরিনী পর্ব-৩৯ এবং শেষ পর্ব

0
1140

#আমার_আদরিনী
#আশুথিনী_হাওলাদার (ছদ্মনাম)
শেষ পর্ব
__‘এসব কী তিনু? তোর এসব কত দিন চলবে?’
মেঘালয়ের প্রশ্নের কোনো উত্তর দেয় না। রাগ উঠে যায় মেঘালয়ের। ড্রেয়াইং টেবিল ধাঁক্কা দিয়ে ফেলে দেয় সে। ভয়ে কেঁপে ওঠে তিয়ানা। তবে ভাবমূর্তি পালটায় না। রেগে মেঘালয় তিয়ানার বাহু চেপে ধরে বলল,
__‘আমাকে ইগ্নোর করছিস কেন? কেনো এসব করছিস?’
তাচ্ছিল্য হাসে তিয়ানা। বলল,
__‘এই কাজটা আপনিও একদিন আমার সাথে করতেন।’
চোখের দৃষ্টি শীতল হয় মেঘালয়ের। আলগা হয় হাতের বাঁধন। তিয়ানা বলা কথাটা বুকে গিয়ে বাঁধলো যেন তার। আচ্ছা! তিয়ানা কি খুব বেশি’ই কষ্ট পেয়েছিল? সে খুব বেশি পাষান হয়ে গিয়েছিল? উত্তর জানা নেই মেঘালয়ের। কাঁপা কাঁপা স্বরে বলে,
__‘তিনু আমি!’
মেঘালয়কে থামিয়ে দেয় তিয়ানা। মেঘালয়ের চোখে চোখ রেখে বলল,
__‘আমাকে কোনো অজুহাত দিতে হবে না মেঘ ভাইয়া।’
__‘তিনু! আয়াম্মম,
__‘বললাম না আমাকে কোনো অজুহাত দিতে হবে না।’
তিয়ানা নিজেকে ছাড়িয়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে যেতে নেয়। মেঘালয় পিছন থেকে ডেকে বলল,,
__‘আমি তোকে ভালোবাসি তিনু!’
থমকে দাঁড়ায় তিয়ানা। বিস্মিত চোখে পিছন ফিরে মেঘালয়কে দেখে। দু’জনের দৃষ্টি বিনিময় হয়। খানিকক্ষণ থম মেরে তাঁকিয়ে থেকে হো হো করে হেসে দেয় তিয়ানা। তিয়ানকে এভাবে হাসতে দেখে হতবাক হয়ে যায় মেঘালয়। তিয়ানা হাসতে হাসতে বলল,,
__‘এটা আবার আপনার কোন নতুন চাল মেঘ ভাইয়া?’
মেঘালয় অস্ফুট স্বরে বলল,
__‘তিনুউউ!
থামিয়ে দেয় তিয়ানা। বলে,
__‘আমাকে ছেলে ভুলানো বুলি বোঝাতে হিবে না মেঘ ভাইয়া। আমি সব বুঝি।’
ব্যাথিত হয় মেঘালয়। করুণ চোখে দেখে তিয়ানাকে। তবে তিয়ানা পাত্তা দেয় না। বলে,
__‘আপনি আবার আমাকে ভুলাতে চাচ্ছেন মেঘ ভাইয়া। আর সেটা কেন সেটাও আমি খুব ভালো করে জানি।’
__‘আমি তোকে ভালোবাসি তিনু। সত্যি বলছি।’
ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসে তিয়ানা। বলে,
__‘তাহলে আপনার সাবেক প্রেমিকা বৃষ্টি আওউর সাথে কেন যোগাযোগ রেখেছেন? তাছাড়া, আপনি তো তাকে ভালোবাসতেন হঠাৎ ঘোল অয়াল্টে ভালোবাসাটা আমার কাছে ট্যানেস্ফার করলো? ক’দিম পর তো তাহলে অন্য কারো কাছে ট্যানেস্ফার করবে আপমার সো কলড ভালোবাসা।’
__‘তিনুউউ’ ( ধমকে ওঠে মেঘালয়)
__‘আমাকে ধমকে লাভ নেই ভাইয়া। আমি আপনাকে আর ভয় পাই না।’
রক্ত চক্ষু নিয়ে তাঁকায় মেঘালয় । সেটা দেখে তিয়ানা হেসে বলল,
__‘দেখলেম তো! ঘোল পালটে আবার নিজের রুপে ফরে আসলেন।’
চোখহের দৃষ্টি শান্ত হয় মেঘালয়ের। ব্যাথি কন্ঠে বলল,
__‘আমাকে বলার সুযোগ দে।’
মুখ ঘুড়িয়ে উত্তর দেয় তিয়ানা,
__‘আট টা মাস তো দিয়েছিলাম। আর পারছি না।’
তারাহুরো কন্ঠে বলল মেঘালয়,
__‘পাঁচ মিনিট দে।’
উত্তর দেয় না তিয়ানা হেটে গিয়ে। গেস্ট রুমে ঢুকে দরজার খিল আঁটকে দেয় সে। তবে খিল আঁটকানোর আগে বলে যায় সে,
__‘আমার প্রতু হঠাৎ ভালোবাসার নাটকটা আমার বাচ্চা কে কেঁড়ে নেয়ার জন্য সেটা আমি খুব ভালো করে জানি মেঘঘ ভাইয়া। কিন্তু আপনাকে আমি সেই সুযোগ দেবো না।’

তিয়ানাকে মানাতে না পেরে ফ্লাট থেকে বের হয়ে যায় মেঘালয়। তিয়ানা মেঘালয়ের বের হওয়ার অপেক্ষাতে’ই ছিল। মেঘালয় ফ্লাট থেকে বের হওয়া মাত্র গেস্ট রুম থেকে বের হয় সে। রুমে গিয়ে আলমারিতে জামা-কাপড় এর ভিতর থেকে লুকিয়ে রাখা মেঘালয়ের ওয়ালেট থেকে চুরি করা ফ্লাটের চাবি বেড় করে নেয় সে। কিছুক্ষন ঘুরে ফ্লাটটা দেখে। কিছু টাকা নিয়ে ফ্লাট থেকে বের হয়ে যায় সে। আর যাই হোক তার বাঁচ্চা সে মেঘালয়কে দেবে না তাতে। যদি তাকে পালাতে হয় তো সে পালাবে। এ ছাড়া কোনো উপায় তার জন্য রাখেনি মেঘালয়। আজ কিনা তার বাঁচ্চা কে তার থেকে দূরে সরানোর জন্য মিথ্যে ‘ভালোবাসি’ বলার নাটকও করলো মেঘালয়। নতুন রুপি মেঘালয় কে চিনতে পারছে না তিয়ানা। মনে হচ্ছে নতুন কেউ। ছোটো থেকে বড় হতে দেখা মেঘালয় যেন এটা নয়। এ যেন অন্য কেউ। এই মেঘালয়কে সে চিনে না। ফ্লাট থেজে বেড়িয়ে মেইন রোডে এসে সিএনজি নিয়ে বাড়ির পথ ধরে তিয়ানা।

“গত কাল রাতে তিয়ানার ব্যাপার নিয়ে তুলিকার সাথে বেশ রাগারাগি করেছে সাদিদ। সেই রাগের রেশ ধরে ভয়েও সাদিদের ঘিরে যেতে পারছে না তুলিকা। সব সত্যি জানার পর থেকে সাদিদ নিজেকে তুলিকার থেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছে। এমনকি এক ঘরে অব্দি থাকে না। কিছু বলতে অয়ারে না তুলিকা কারণ সব দোষ তার। মানুষটাকে সে খুব বাজে ভাবে ঠকিয়েছে। কি করে সেটা ভুলবে মানুষটা। কিন্তু! বেশ বেকা হয়ে গিয়েছে অফিসেরও সময় হয়ে আসছে এরপর দেরী হলে তাকে’ই বকাবকি করবে। ছেলেটাকে দিয়ে যে ডাকাবে। ছেকেটাও আজকাল অবাধ্য হয়ে গিয়েছে। ভারী কষ্ট হয় তুলিকা। সাদিদের পাশাপাশি তার সন্তানরা অব্দি তাকে ভুল বুঝলো। কিন্তু সে কি করতো নিজের আপন বোনকে মরতে দিতো? সে কি পারতো! বোনের লাশের উপর দিয়ে সাদিদ কে বিয়ে করতে। কোনো বোন কী সেটা পারে? কেন এটা বুঝলো না সাদিদ। তিয়ানাটাও তার সাথে কথা বলে না। কল দিলেও ধরে না। দীর্ঘশ্বাস ফেলে সাদিদের ঘরের দিকে এগিয়ে যায় তুলিকা। ঘরে গয়ে ভয়ে ঢাকে সাদিদকে। সাদিদ ঘুম থেকে না উঠায় কিছুটা বিরক্ত হয় সে। এই লোকটা আবার কবে থেকে এত ঘুম কাতুড়ে হলো ভেবে পায় না সে। বিরক্তি নিয়ে এগিয়ে গিয়ে খাটে বসে সে। বসে সাদিদের পাঞ্জাবি উপর হাত দিয়ে কিছুটা ধাঁক্কা দিয়ে তাকে ঘুম থেকে তোলার চেষ্টা করে তুলিকা। সাদিদের ঘুম না ভাংগায় কিছুটা অবাক হয় সে। সাদিদের হাত ধরে দেখে হাত ঠান্ডা। বুকের ভিতর ধক করে উঠে তুলিকার। সাদিদের কপাল গলায় হাত দেয় সে। না গরম না! সব ঠান্ডা! কাঁপা কাঁপা হাতে সাদিদের হাতের প্লাস চেক করে সে। রক্ত চলাচল বন্ধ। তুলিকা উদভ্রান্তের মতো সাদিদের মুখের দিকে তাঁকায়। বালিশের পাশে একটা চিরকুট রাখা। কাঁপা হাতে চিরকুট তুলে পড়ে সে,

“গত ন’দিন আগে আমার শেষ সময়ের তারিখ ছিল। সেদিন থেকে’ই আমি প্রতিদিন একটা করে চিরকুট লিখে রাখি তুলি। যদি’ আমার ঘুম আর যদি কখনো না ভাংগে তাহলে এই চিরকুট তোমার হাতে পৌঁছাবে আর প্রতিদিন ভোরের মতো ঘুম ভাংলে চিরকুট সরিয়ে ফেলবো আমি। যাক! কাজের কথায় আসি।
আমার ব্রেন টিউমার হয়েছিল। গত মাস দু’য়েক আগে জানতে পারলাম। লাস্ট স্টেইজ বাঁচার সম্ভাবনা ছিল না। বলতে পারো, তোমাকে কেন জানাইনি? এটা’ই তোমার শাস্তি আমার জীবনকে নরকে পরিনত করার। একদিন তুমি আমাকে না জানয়ে আমায় ফেলে রেখে গিয়েছিল আর আজ আমি। অবশেষে প্রতিশোধটা আমি নিয়ে’ই নিলাম। ভালো থেকো! সবশেষে, আমার তোমার প্রতি ভালোবাসাটা মিথ্যে ছিল না। কিন্তু! তোমার অলরাধ এত’ই বেশি ছিল যে তোমাকে আমি ক্ষমা করতে পারলাম না। এখানে তো আমাদের সুখের সংসার বা মিলন হলো না উপরে তোমার অপেক্ষা করবো আমি সেখানে’ই না হয় আমরা মিলিতো হবো ভালোবেসে। ও হ্যা! তখনও আবার বোনের হায়ে তুলে দিও না হাহাহা!'”

চিঠি পড়া শেষে চিৎকার করে ‘সাদিদ্দদ্দ’ বলে ওঠে তুলিকা। তুলিকার চিৎকার শুনে নিজ ঘর থেকে দৌঁড়ে বানার ঘরে আসে তিলাত। সিএনজি থেকে বাসার সামনে নেমে সবে দাঁড়িয়েছিল তিয়ানা মায়ের চিৎকারের শব্দে দৌঁড়ে ঘরে চলে আসে সে। ঘরে এসে বাবার লাশ দেখে সে!

“সমাপ্ত”
(আমি যখন পাঠিকা ছিলাম তখন গল্পের নায়কদের প্রতি খুব ক্রাশ খেতাম পরে খারাপ লাগতো তাই ঠিক করে নিয়েছিলাম আমি গল্প লিখলে নায়ক চরিত্রটা এমন করবো যেন সবার তার প্রতি বিরক্তি আসে। এন্ড আমি সফল।৷ আর হ্যা চরিত্র গুলো আমি এমন’ই সাজাতে চেয়েছি যাতে তাদের প্রতি সব ধরনের অনুভূতি হয় আপনাদের। কজ কোনো মানুষ’ই পার্ফেক্ট না।)
(সব শেষে, আমি নতুন বাসায় আলাদা উঠেছি সিটিতে আমার ক্লাস শুরু,, নতুন বাসা জীবনে প্রথম মা-বাবা ছাড়া থাকছি। ঘর ঝাড়ু, মোছা রান্না বান্না, বাজার করা সব আমাকে’ই করতে হচ্ছে। সাথে ক্লাস আছে। তাই গল্প লেখার সময় পাচ্ছি না। তাই আপাতত কিছু দিন অফ থাকবে লেখালেখি যতদিন না নতুন পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারছি। আর হ্যা! এই গল্প টআ এখানে’ই শেষ না সিজন২আসবে। আমার একটু স্পেস দরকার তাই বন্ধ করলাম। এই গল্পটা ক্ষাপছাড়া হয়ে যাচ্ছিলো তাই এন্ড করলাম। যদি ভালো লাগে তাহলে সিজন২ আনবো কজ আমার মনে হয় অসমাপ্ত ভাবে শেষটাই বেটার। যাক আপনাদের ভালো না লাগলে সিজন২ দেব)