পর্ব ২৫+২৬
#আমার_আসক্তি_যে_তুমি
#Part_25
#Writer_Asfiya_Islam_Jannat
.
?
এলোমেলো ভাবে দৌড়ে চলেছি আমি। বার বার পিছে তাকিয়ে দেখছি সে পিছে আসছে কিনা। প্রতিটা কদমে আমার পা নড়বড় হয়ে আসছে। মনে হচ্ছে এই বুঝি আমি পড়ে যাব আর সে আমার কাছে চলে আসবে।
একসময় দৌড়াতে দৌড়াতে আমি গিয়ে রিংকি আর আরিশার সাথে ধাক্কা খাই। ওরা দুইজন আমায় দেখে বলে,
.
— কিরে এইভাবে দৌড়াচ্ছিস কেন? আর ওইদিকে কোথায় গিয়েছিলি? (আরিশা)
.
— তোর মুখ এমন লাগছে রিয়ানু? কি হয়েছে? (রিংকি)
.
আমার গলা দিয়ে এখনো কোন কথা বের হচ্ছে না। হাত পা এখনো সমানে কেঁপে চলেছে। চোখ মুখে এক রাশ আতঙ্ক। আমি কোন মতে সাহস সংচয় করে কাঁপা কাঁপা গলায় বলতে শুরু করি।
.
— ও..ও..ওও ফফফিরে এএসেছে! ওও ফিরে এসেছে!! ও আমায় ছাড়বে না রে! ছাড়বে না!
.
— কার কথা বলছিস তুই? কে এসে পড়েছে? (রিংকি)
.
— ও..ও..ওও। কাঁপা কাঁপা গলায়।
.
— রিয়ানু শান্ত হো! দেখ আমরা আছি তোর ভয় পেতে হবে না। প্লিজ শান্ত হো। আচ্ছা তুই না পানি কিনতে গেলি পানি কই? (আরিশা)
.
— জজানি ননা! ককিছু জজানি ননা!!
.
— আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে। হাইপার হতে হবে না। রিংকু যা তো এক বোতল পানি নিয়ে আয়।( আরিশা)
.
— দাড়া আনছি। (রিংকি)
.
রিংকি দৌড়ে দোকানে যায় আর পানি বোতল কিনে নিয়ে আসে। আমাকে পানিটা দিতেই আমি এক ঢোকেই পুরো পানির বোতল শেষ করে ফেলি।
.
— এইবার বল কি হয়েছে? (আরিশা)
.
আমি কিছু বলতে যাব তার আগেই সামনে থাকা মিরোর গ্লাসে আমি সেই ব্যক্তিটির অবয়ব দেখতে পাই। সাথে সাথে আমি ভয়ে জমে যাই। কোন মতে ওদের বলি।
.
— আআমি ববাসায় যাব। বাসায় যাব আমি। আমায় এইখান থেকে নিয়ে চল প্লিজজ!
.
— আচ্ছা আচ্ছা চল। (আরিশা)
.
অতঃপর আরিশা আর রিংকি আমায় ধরে নিয়ে চলে যেতে শুরু করলো। আমি একবার পিছে তাকিয়ে দেখি সেই ব্যক্তিটি আমায় দেখে বিশ্রী হাসি হেসেই চলেছে। যা বরাবর এর মতোই আমার গায়ে কাটার মত বিদে চলেছে।
রিংকি ওর ড্রাইভারকে ফোন করে আসতে বলে। গাড়ি আসার সাথে সাথেই আমরা তাতে বসে পড়ি। গাড়িটাও শা শা শব্দ করে ছুটে চলে আপন গতিতে।
আমি এখনো ভয়ে কেঁপেই চলেছি। গাড়িতে এসি চলা সত্তেও কপালে বেয়ে টুপ টুপ করে ঘাম ঝড়ে পড়ছেই। চোখ জোড়া দুটোতে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট।
আমার এমন অবস্থা দেখে আরিশা আমার কাধে হাত রাখে। সাথে সাথে আমি সেই হাত ছিটকে দিয়ে দূরে সরে যাই। আর চেঁচাতে থাকি।
.
— ছুবে না আমায়!! ছুবে না!!
.
ড্রাইভার চাচা এইবার আমার চেঁচামেচিতে লুকিং গ্লাস দিয়ে পিছে তাকায়। আরিশা আর রিংকি আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।আরিশা কিছুটা আন্তাজ করতে পেরে আমায় ঝাপটে ধরে বলে।
— রিয়ানু শান্ত হো! এইটা আমি আরু। তুই এমন কেন করছিস বল! কি হয়েছে তোর? কাকে দেখেছিস তুই তখন যে এখন এমন করছিস। বল আমায়। (আরিশা)
.
আমি এইবার আরিশাকে ধরে কেঁদে দেই। আর অস্পষ্ট সুরে বলতে থাকি।
.
— ওও এএসে পপড়েছে আরু। ও এসে পড়ে! আমায় ও ছাড়বে না এইবার। আমার লাইফ নষ্ট না করা পর্যন্ত ও শান্ত হবে না।
আমার সব ও কেড়ে নিবে। রিয়ানকেও কেড়ে নিবে। আমাকে ভালো থাকতে দিবে না ও।
.
— বাই এনি চান্স তুই কি ওর কথা বলছিস? (আরিশা)
.
কাঁদতে কাঁদতে এইবার হিচকি উঠে যায় আমার। কিছু বলতে না পেরে মাথা দুলাই। যার মানে “হ্যাঁ”। আরিশা এইবার আমায় ছেড়ে মাথায় হাত দিয়ে বসে। রিংকি বিষয়টা ধরতে না পেরে জিজ্ঞেস করে,
.
— কার কথা বলছিস তোরা?
.
আরিশা এইবার ব্যর্থ চোখে রিংকির দিকে তাকায়। তারপর অস্পষ্ট সুরে বলে।
— আআরিয়ান!
.
নামটা শুনার সাথে সাথে রিংকি হকচকিয়ে উঠে। ওর কপালেও এইবার চিন্তার রেখা ফুটে উঠে।
.
.
??
.
অনেকক্ষণ ধরেই রিয়ান রিয়ানাকে ফোন করেই চলেছে। কিন্তু রিয়ানা ফোন তুলছেই না। এইবার সে বেশ চিন্তিত হয়ে উঠে।
তাই সে সিসিটিভি ফুটেজটা অন করে দেখার জন্য যে রিয়ানা কি করছে। কিন্তু একি রিয়ানা তো বাসায় এই নেই।
রিয়ান বুঝে উঠতে পারছে না রিয়ানা কোথায়। তখন রিয়ানের মোবাইলে একটা মেসেজ আসে। রিয়ান চেক করে দেখে রিয়ানার মেসেজ,
.
” আমি আরিশা আর রিংকি এর সাথে বাইরে এসেছি। ফ্রি হলে কল করছি। ”
.
এইবার রিয়ান একটু স্বস্তির নিশ্বাস নেয়। কিন্তু তাও রিয়ানার জন্য মনটা কেমন যেন ছটফট করেই চলেছে। মনে হচ্ছে যেন তার রিয়ুপাখি ভালো নেই। কথা বললে হয়তো ভালো হতো। এইসব ভেবেই রিয়ানের ভিতর থেকে এক দীর্ঘ শ্বাস বেরিয়ে আসে না।
কিছুক্ষণ তার বা হাতে লিখা “রিয়ানা” নামটি দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে থাকে। তারপর বলে,
.
— ” ?অপেক্ষার এই প্রহরে
জ্বলে পুড়ে মরছি আমি।
এই প্রহরে তুমিও জ্বলবে
নিজেকে ভুলে আমার হয়ে।?”
.
.
তখনই একটা ওয়ার্ড বয় এসে বলে যে বোর্ড মিটিং এর টাইম হয়ে গেছে। সবাই তার জন্য অপেক্ষা করছে। রিয়ান তাকে বলে,
.
— আপনি যান আমি আসছি।
.
ওয়ার্ড বয় চলে যেতেই রিয়ান তার ফ্যাক স্কিন নিজের হাতে লাগিয়ে নেয়। শার্টের হাতা ঠিক করে হাতে এপ্রোন নিয়ে চলে যায় মিটিং এটেন্ড করতে।
.
.
??
.
বাসার সামনেই একটা পার্কে বসে আছি। আরিশা আর রিংকি আমায় বিভিন্ন ভাবে বুঝিয়েই চলেছে। কিন্তু তাও আমার মন মানতে নারাজ। আমি পারছি না নিজেকে ঠিক রাখতে।
বার বার ভেঙে পড়ছি।
.
— দেখ রিয়ানু ভয় পেয়ে লাভ নেই। যা ছিল তা সব অতীত। অতীতকে কেন আবার নিজের জীবনে জায়গা দিচ্ছিস?
অতীতকে ভুলে বর্তমানকে নিয়ে ভাব। (আরিশা)
.
— ভুলেই তো গিয়েছিলাম। সব ভুলে নতুন করেই তো শুরু করেছিলাম। কিন্তু কি হলো আজ সেই কালো অতীত আবার আমার সামনে এসে দাড়ালো।
ও আমায় কোন মতেই ছাড়বে না এইবার। আমাকে ধ্বংস না করা পর্যন্ত ওর যে শান্তি হবে না।
.
— তুই আগে ভয় পাওয়া বন্ধ কর। ও তোর কিছু করতে পারবে না। আমরা আছি তো। আমি বাবাকে বলে কিছু একটা ব্যবস্থা করেই নিব। (রিংকি)
.
— কোন লাভ হবে না। যত ওকে দূরে সরাবো ও তো তো কাছে চলে আসবে। আমার পিছু ও ছাড়বে না।
.
— ড. রিয়ানকে না হয় সব দে। তিনি এই ওর একটা ব্যবস্থা করবে নে। (আরিশা)
.
— আমার মতেও তোর ড. রিয়ানকে সব বলে দেওয়া উচিৎ। ( রিংকি)
.
— না আমি পারবো না। এইসব জানার পর রিয়ান আমাকেই ভুল বুঝবে। ঘৃণার মানুষ হয়ে যাব আমি তার কাছে। হারিয়ে ফেলবো তার ভালবাসাকে। আহত চোখে আরিশার দিকে তাকিয়ে।
.
— তোর এমন কেন মনে হয় যে ড. রিয়ান তোকে ভুল বুঝবে? তুই কেন তোর মনে আগে থেকেই নেগেটিভ ভাবনা আনছিস?
নিজের ভালবাসার উপর বিশ্বাস রাখ। ড. রিয়ান তোকে অনেক বেশি ভালবাসে। তা না হলে এত কম সময় বিয়ের জন্য এত তোরঝোর করতো না৷ বুঝায় যাচ্ছে সে তোকে হারাতে চায় না।
সেখানে তোকে ভুল বুঝার কথায় আসে না। এইখানে তো তোর কোন দোষ ছিল না। তাহলে তুই কেন এত ভয় পাচ্ছিস? (আরিশা)
.
— সে যদি আমার অতীত জানার পর আমার চরিত্রের উপর আঙুল উঠায় তখন? কিভাবে সহ্য করবো এই অপবাদটা আমি? কান্না মিশ্রিত কণ্ঠে।
.
— রিয়ানু তুই কি পাগল? এই যুগে এসে তুই কিভাবে ভাবলি যে ড. রিয়ানের চিন্তা ভাবনা এত নিচু হবে? তুই খামাখা ভয় পাচ্ছিস। (আরিশা)
.
— সেটাই। ভয় পেয়ে কোন লাভ নেই। তোকে আগের ন্যায় শক্ত হতে হবে। তুই ভয় পেলেই ও তোকে জব্দ করার মন্ত্র পেয়ে যাবে। তোকে ওর সামনে শক্ত হতে হবে। এমন ভ্যান করতে হবে ও সামনে থাকলেও তোর কিছু যায় আসে না। হি ইজ নাথিং টু ইউ। (রিংকি)
.
— এইসব এত সহজ না। ওকে যতবার দেখি ততবারই আমার সেই অতীতের কথা মনে পড়ে যায়। চোখের সামনে ভেসে উঠে সেই সব কিছু যা আমার সাথে হয়েছিল।
.
— জানি তোর সাথে যা হয়েছিল তা ভুলার মত নয়। বলতে গেলে কোন মেয়ের জন্যই না। কিন্তু এইভাবে ভয় পেয়ে থাকলে তো চলবে না। ভয়কে দূর কর। ড. রিয়ানকে সব বলে দে। (আরিশা)
.
— হ্যাঁ বলে দে রে। পরে এমন না হয় যে অনেক দেরি হয়ে যায়। (রিংকি)
.
আমি আর কিছু বললাম না চুপচাপ বসে রইলাম। বুঝতে পারছিলাম না কি করবো আর কি না? সব কিছুই যেন ধোঁয়াশা লাগছিল আমার কাছে। নিজের প্রতি এক ঘৃণা জমে যাচ্ছিল।
.
.
??
বাসায় এসে আমি সোজা ওয়াশরুমে চলে যাই আর শাওয়ারের নিচে দাড়িয়ে নিজের শরীর ঘষতে থাকি। বার বার চোখের সামনে সেই বিশ্রী হাসিটি ফুটে উঠছে সাথে সেই চাহনিটি। শরীরটা বার বার ঘিন ঘিন করে উঠছে।
ফ্লোরে বসে কান্না করতে থাকি। আর বলতে থাকি।
— আমার সাথেই এমন কেন হলো? কেন কেন? কি দোষ ছিল আমার? এমনটা হওয়া কি বেশ জরুরি ছিল? আল্লাহ তুমি কেন আমার সাথে এমন করলে কেন??
বলে হাটুতে মুখ গুজে কাঁদতে শুরু করি।
.
.
রাত ১ টা।
রিংকি আর আরিশা ঘুমিয়ে পড়েছে। ঘুম নি নেই শুধু আমার চোখ। কিছুই ভালো লাগছে না। বড্ড অশান্ত হয়ে আছে মনটা। কিছুটেই মনটাকে শান্ত করতে পারছি না।
তাই উঠে বসি আর গায়ে ওড়না জড়িয়ে ছাদে চলে আসি। চারদিকে হীম শীতল বায়ু বয়ে চলেছে। আকাশ ভরা কালো মেঘ। মাঝে মাঝে মেঘ গর্জন করে উঠছে। হয়তো আজ আমার মতোই তারও আজ মন খারাপ। তাই হয়তো নিজের কষ্ট ভুলাতে বর্ষন নেমে আসতে চায় এই ভূ-পৃষ্ঠের বুকে। হয়তো ভুলে যেতে চায় সকল গ্লানি।
আমিও যদি পারতাম এই বর্ষনের সাথে নিজের সকল দুঃখ, কষ্টকে বিসর্জন দিতে। ভুলে যেতে জীবনের সেই কালো অধ্যায়কে।
ছাদের এক কিনারে দাড়িয়ে আছি। বাতাসের এই স্রোতে চুল গুলো কানামাছি খেলতে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে। গায়ে থাকা ওড়নাটাও যেন বাসাতের সাথে তাল মিলিয়ে উড়ে যেতে প্রস্তুতি নিচ্ছে।
আমি এক ধ্যানে তাকিয়ে আছি আকাশের পানে। নিজের অভিযোগ গুলো শেষ করার বৃথা চেষ্টা করছি। চোখ বন্ধ করে সব ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করছি।
এমন সময় কোমরে কাউরো শীতল হাতের স্পর্শ পেয়ে কেপে উঠি আমি। সাথে সাথে মনের মধ্যে ভয় জাগ্রত হতে শুরু করে। পিছে কাউরো উপস্থিতি বুঝতে বেশ বেগ পেতে হলো না আমার।
সেই ব্যক্তির হাত দুটো ক্রমশ এগিয়ে চলেছে। আমি আর থাকতে না পেরে পিছে ঘুরেই সেই ব্যক্তির গালে কষিয়ে চড় মেরে দেই।
.
#Part_26
#Writer_Asfiya_Islam_Jannat
.
?
সেই ব্যক্তির হাত দুটো ক্রমশ এগিয়ে চলেছে। আমি আর থাকতে না পেরে পিছে ঘুরেই সেই ব্যক্তির গালে কষিয়ে চড় মেরে দেই।
চড় খাওয়ার সাথে সাথে সে আমার থেকে দূরে সরে যায়। এইবার আমি তার চেহারার দিকে তাকাই। বাইরের কৃত্রিম আলোয় তার চেহারাটা আমার চোখের সামনে স্পষ্ট ভেসে আসে। সে আর কেউ নয় বরং রিয়ান। রিয়ানকে দেখে আমি অবাকের শেষ সীমায় পৌঁছে যাই।
অতীতের কথায় বিভোর হয়ে আমি বর্তমানকে সেই অতীতের সাথে গুলিয়ে ফেলেছিলাম। যার ফল স্বরুপ আমি রিয়ানকে থাপ্পড় দিয়ে বসি। রিয়ানের স্পর্শ চিনতে ভুল করি। এত বড় ভুল কিভাবে করলাম আমি? কিভাবে!
আমি এইবার আহত চোখে রিয়ানের দিকে তাকাই। রিয়ান গালে হাত দিয়ে অবাক চোখে আমায় দেখেই চলেছে। আমি রিয়ানের কাছে আসতে নিলে রিয়ান তার হাত সামনের দিকে তুলে আমায় থামিয়ে দেয়। তারপর ধরা কণ্ঠে বলে,
.
— এমনটা না করলেও পারতে। আগে বললেই পারতে আমার কাছে আশা তোমার পছন্দ নয়। আমি আর তোমার কাছে আসতাম না।
আমার বুঝা উচিৎ ছিল যে তুমি হয়তো আমাকে পুরোপুরিভাবে স্বামী হিসাবে মেনে নিতে পারো নি।
অবশ্য ভুলটা আমারই! আমার তোমার থেকে দূরত্ব বজিয়ে রাখা দরকার ছিল। তোমাকে স্পেশ দেওয়ার দরকার ছিল।
কিন্তু চিন্তা করো না, এখন থেকে আমি আর তোমার কাছে আসব না। যতদিন না তুমি বলবে।
.
এই বলে রিয়ান উল্টো পথে চলা শুরু করে। আমি এতক্ষণ মূর্তির ন্যায় দাড়িয়ে ছিলাম। রিয়ান আমায় এইভাবে ভুলটা বুঝবে বুঝতে পারি নি।
রিয়ানকে যেতে দেখে আমার হুস হয়। আমি দৌড়ে গিয়ে ওকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরি। আর বলতে থাকি।
.
— আপনি আমায় ভুল বুঝছেন রিয়ান। আমি আপনাকে চড় মারতে চাই নি। আমি বুঝি নি যে তা আপনি। যা হয়েছিল তা অনিচ্ছাকৃত। সরি রিয়ান! আ’ম রেলি ভেরি সরি।
আপনি আমার সব রিয়ান। সব! আপনার নিকট তো আমি কবেই নিজেকে সপে দিয়েছিলাম। স্বামী বলে তো সেইদিনই স্বীকৃতি দিয়েছিলাম যেইদিন আমি কবুল বলেছিলাম।
আজকে দেওয়া চড়টা আমি সত্যি আপনাকে দিতে চাই নি। আমি আপনাকে কষ্ট দিতে চাই নি।সরি রিয়ান! আ’ম সরি। আমি তো.. আমি তো..
.
আর বলতে পারলাম না। কাঁদতে কাঁদতে আমার হিচকি উঠে গিয়েছে। পারছিলাম না এইসব সহ্য করতে। রিয়ানের অভিমান যে আমি গ্রহণ করতে পারছিলাম না।
আমার কান্না শুনে রিয়ান সাথে সাথে ঘুরে দাড়ায়। তারপর আমার দুইগালে হাত রেখে আমার চোখের নোনা জল গুলো মুছে দেয়। আর উত্তেজিত কণ্ঠে বলতে থাকি।
.
— তুমি কান্না করছো কেন? তোমার কান্না আমার সহ্য হয় না। প্লিজ ডোন্ট ক্রায়! তোমার কান্না আমার হৃদয়কে ক্ষতবিক্ষত করে দিচ্ছে।
.
— সরি রিয়ান, আ’ম সরি। আমি সত্যি আপনাকে চড়টা মারতে চাই নি। বিশ্বাস করেন! আমি ভেবেছিলাম অন্য কেউ তাই আমি চড়টা মেরে বসি।
.
— কার এত বড় সাহস আছে যে আমার জানের দিকে হাত দিবে শুনি! আমার জানের দিকে যদি কেউ হাতও বাড়ায় তাহলে তাকে আমি শেষ করে দিব।
তুমি আমার বুঝেছ! আমার আসক্তি! যা আমি ব্যতীত আর কাউরো নয়।
.
এই বলে আমার দুই চোখের পাতায় চুমু দেয়।
.
— তাও আ’ম সরি। অনিচ্ছাকৃত হলেও আমি আপনাকে অনেক বড় আঘাত করে বসেছি। সরি!
.
— ইট ইজ ওকে রিয়ুপাখি। আমি বুঝতে পেরেছি তুমি এইটা ইচ্ছাকৃত ভাবে করো না। সো ডোন্ট বি সরি। আর এমনেও আমাকে দেওয়া এই চড়ে কারণে তোমার চোখে পানি এসেছে। আমার ব্যবহারের জন্য তোমার চোখে পানি এসেছে। যার জন্য আমি নিজেকে কখনো ক্ষমা করতে পারবো না। কখনো না!
.
— না আপনার কোন দোষ নেই। আপনি যা বুঝেছেন তাই বলেছেন। এতে আপনার কোন দোষ নেই। আমারই ভুল হয়েছে। আমি অন্য কেউ ভেবে আপনাকে চড়টা মেরে বসি।
.
— কিন্তু তুমি এত রাতে কাকে মনে করেছিলে যে তোমাকে স্পর্শ করার স্পর্ধা দেখাবে?
.
— ককেউ ননা মমানে.. তোতলিয়ে।
.
(মনে মনে– আপনাকে এখন আমি এইসব বলতে পারবো না। আমি চাই না আপনি আবার আমায় ভুল বুঝুন। তার উপর আপনাকে এই সত্যটা বলার সাহসও আমার নেই। আপনকে এই সত্যিটা জানানোর আগে আমার সাহস সংচয় করতে হবে। এইভাবেই আপনাকে আমি এই সত্যিটা বলতে পারবো না।)
.
— মানে কি? আর তুমি এইভাবে তোতলাচ্ছো কেন?
.
— না মানে আসলে, এত রাতে তো আর আপনার আশার কথা না। তাই ভেবেছিলাম অন্য কেউ হয়তো আমার সাথে অসভ্যতামি করছে।
.
— না এসে কি উপায় ছিল? সকাল থেকে আজ একবারও ফোন দাও নি আমায়। তারউপর আমি যখন ফোন দিলাম তুমি তুললে না। উল্টো মেসেজ করে বললে পরে ফোন দিবে। আর তো দিলেই না৷
তাই আমার আসতে হলো। যখন উঠছিলাম তখন তোমায় দেখলাম ছাদের দিকে যেতে। তাই তোমার পিছু পিছুই চলে আসলাম। আর এসেই তো এইসব হয়ে গেল।
.
— সরি!!
.
— হুহ! এতই যখন সরি বলছো তাহলে এখন আমার রাগ ভাঙতে ঘুষ চাই।
.
— আচ্ছা বলুন কি ঘুষ চাই আপনার?
.
— যে গালে মেরেছ তা অনেক ব্যথা করছে। তাই সেই গালে একটা কিস চাই। দুষ্টুমির ছলে।
.
রিয়ান জানে আমি এমন কখনো করবে না। কিন্তু রিয়ানকে আমি অবাক করে তার গালে কিস করে দেই। রিয়ান এইবার অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি মুচকি হেসে বলি,
.
— নেন দিয়ে দিলাম আপনার ঘুষ।
.
রিয়ান কিছু না বলে শুধু মুচকি হাসে। তারপর বলে,
.
–অবশ্য এইখানে আশার আরেকটা রিজন আছে।
.
— কি?
.
— তোমাকে কিছু জানানোর ছিল।
.
আমি এইবার কৌতূহলি চোখে তার দিকে তাকাই। সে আমার কৌতূহল বুঝতে পেরে বলে।
.
— Tomorrow is our engagement!
.
— আর ইউ সিরিয়াস? মানে কালকে? সত্যি!
.
— ইয়েস মাই লাভ। সত্যি! কালকে সকালেই তোমার ড্রেস, অর্নামেন্টস সব চলে আসবে। দুপুরে মেকাপ আর্টিস আসবে তোমাদেরকে সাজাতে। সন্ধ্যার দিকে একটা কার তোমায় আর আমার শালীদেরকে পিক করতে আসবে।
জায়গা আর বাকি ডিটেইলস আমি পরে ইনফর্ম করে দিব কেমন।
.
— হু। মুচকি হেসে।
.
আমায় কপালে একটা ভালবাসার এক স্পর্শ একে বলে,
— সবসময় যেন তোমায় এমনই খুশি দেখি বুঝলে। আর যেন তোমায় কাঁদতে না দেখি।
.
— হু।
.
— এখন চল। অনেক কাজ আছে কালকে।
.
আমি কিছু না বলে শুধু মাথা দুলাই।
.
.
??
.
ধারালো এক ছুরি হাতে নিয়ে বসে আছে রিয়ান। সামনেই রিয়ানার সেই ছবিটি।
.
— কিভাবে পারলাম আমি তোমায় কষ্ট দিতে? কিভাবে! আজ আমার জন্য তোমার চোখ দিয়ে পানি পড়েছে। তার মূল্য তো আমায় দিতেই হবে।
.
এই বলে আয়নার সামনে গিয়ে দাড়ায় সে। হাতে থাকা সেই ধারালো ছুরিটা নিজের বুকের বা পাশে চালাতে শুরু করে। বুকের বা পাশে হার্ট সেপ এঁকে তার মধ্যে R+R লিখে সে।
রক্ত ঝড়ে পড়ছে সমানে। কিন্তু তার সেইদিকে খেয়াল নেই।
সে আয়নার মধ্যেই তাকিয়ে বলে।
.
— আজ এই প্রথমবার তোমার চোখে আমি ঘৃণা দেখি। তাও এমন তেমন নয় মাত্রাতিরিক্ত ঘৃণা। সাথে ছিল রাগ, ক্রোধ আর ভয়।
তোমার চোখ আজ অন্য কথা বলছিল। মনে হচ্ছিল কিছু একটা লুকাচ্ছো তুমি। কেন বার বার মনে হচ্ছে এই চড়ের পিছের রহস্য যেন অন্য কিছুই। কিন্তু তা কি?
.
.
??
.
মনের মধ্যে খুশির স্রোত বয়ে চলেছে। বিশ্বাসই হচ্ছে না কাল আমার এংগেইজমেন্ট। অতীতকে ভুলেই গিয়েছিলাম প্রায়। নিজের বর্তমান নিয়ে ব্যস্ত হয়ে উঠেছিলাম। কিন্তু এই খুশিটা যেন আর থাকতে চাইলো না। খুশি চলে গিয়ে আবার নেমে আসলো সেই অন্ধকার।
বাইরে ঝুম বৃষ্টি। শীতল হাওয়া বয়েই চলেছে। হুট করে তখনই আমার মোবাইল টুং করে উঠলো। আমি মোবাইল হাতে নিয়ে দেখি অপরিচিত নাম্বার থেকে একটি মেসেজ। মেসেজটি ওপেন করতেই আমার হাত পা কাঁপা শুরু হয়ে গেল। ভয় যেন আবার ঝেঁকে ঝরলো আমায়। মেসেজটিতে লিখা।
.
” I’m back, to make your life hell.I will never let you be happy.”
.
.
#চলবে