আমার আসক্তি যে তুমি Part-31+32

0
4169

পর্ব ৩১+৩২
#আমার_আসক্তি_যে_তুমি
#Part_31
#Writer_Asfiya_Islam_Jannat
.
?
খাওয়া দাওয়া শেষে আমি যখন ওয়াশরুম থেকে হাত ধুয়ে বের হতে যাব তখনই আমার চোখে কেউ কালো কাপড় বেধে দেয়। আর আমার মুখে হাত দিয়ে টেনে কোথাও নিয়ে যেতে থাকে। আমি হাত পা ছুড়াছুড়ি করতে থাকি। কিন্তু তার সাথে পেরে উঠতে পারছিলাম না। কি করবো কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না! তখনই সে আমায় ছেড়ে দেয়। আমি ছাড়া পেয়ে দ্রুত নিজের চোখ থেকে কাপড়টা খুলে ফেলি।
এতক্ষণ চোখটা বেঁধে থাকার কারণে সব কিছু আবছা দেখতে শুরু করি।
আমি আবছা চোখেই চারকদিকটা বুঝার চেষ্টা করি। ধীরে ধীরে সব কিছুই আমার কাছে পরিষ্কার হতে শুরু করে। আমি একটা বাগানের মধ্যে আছি। সম্ভবত এইটা সেন্টারের পিছনের দিকটা। আমি আশে পাশে খুঁজতে থাকি কে আমায় এইখানে এনেছে।
তখন হুট করেই কেউ আমায় পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে আর আমার কানের সামনে মুখ এনে লো ভয়েসে বলতে থাকে।
.
— ?তোমাকে ভালবাসবো বলে,
নিজেকে গড়ি শত বার।
তোমাকে পাবো বলে,
নিজেকে আসক্ত করে রাখি শতবার।?(রিয়ান)
.
রিয়ানের কণ্ঠ কানে আসতেই আমি স্বস্তির নিশ্বাস নেই। তারপর নিজেকে সামলিয়ে বলি।
.
— উফফ রিয়ান আপনি!!
.
— হু আমি! কেন অন্য কাউকে আশা করেছিলে বুঝি? (রিয়ান)
.
— ননা ততেমন কিছু না। এইভাবে চোখ মুখ বেঁধে কেউ নিয়ে এসেছে বলে আমি একটু ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। কে না কে!
.
— রিয়ান থাকতে কেউ তার রিয়ুপাখির দিকে চোখ তুলেও তাকাতে পারবে না। ছুঁয়া তো দূরের কথা। (রিয়ান)
.
— আচ্ছা রিয়ান আপনি কোন জিনিসটা সবচেয়ে বেশি অপছন্দ করেন?
.
— বিশ্বাসঘাতকতা আর সত্য লুকানো। আমি সব কিছুর জন্য সহ্য করতে পারি কিন্তু আমার সাথে যদি কেউ বিশ্বাসঘাতকতা করে বা আমার থেকে সত্যটা লুকায় যেটা আমার জানার দরকার তাহলে আমি আর সহ্য করতে পারি না। আর না তাকে ক্ষমা করতে পারি। (রিয়ান)
.
— আমাকে তো অনেক বেশি ভালবাসেন তাই না?
.
— কোন সন্দেহ আছে তাতে? নিজের থেকেও বেশি ভালবাসি। তুমি ছাড়া আমি যে নিঃসঙ্গ। (রিয়ান)
.
— মনে করেন, যদি কখনো জানেন যে আমার কোন এক অনেক বড় সত্য আপনার থেকে গোপন করে রেখেছি, যেটা জানার পর হয়তো আমাদের অবস্থান পরিবর্তন হতে পারে তখনও কি এমন করেই ভালবাসবেন?
.
— কেন নয়। তোমাকে আমি এখন যতটা ভালবাসি ঠিক পরবর্তীতেও এমন করেই ভালবাসবো। আর এমনেও আমি জানি আমার রিয়ুপাখি আমার থেকে কখনো কিছু লুকাবে না। আই ট্রাস্ট হার আ লোট। (রিয়ান)
.
আমি প্রতিউত্তরে কিছু বললাম না। শুধু নিরবে এক দীর্ঘ শ্বাস নিলাম। রিয়ান তা দেখে বলে।
.
— বাদ দাও তো এইসব। আজকে আমাদের লাইফের অনেক স্পেশাল একটা ডে। তাই আমি একে আরও স্পেশাল করতে চাই। (রিয়ান)
.
আমি এইবার কৌতূহলী চোখে তার দিকে তাকাই। সে মুচকি হেসে আমাকে ছেড়ে দিয়ে আমার হাত ধরে সামনের দিকে নিয়ে যায়। তারপর আমায় বলে।
.
— সামনে একবার তাকাও। (রিয়ান)
.
আমি সামনে তাকাতেই চমকে যাই। তারপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চারদিক পর্যবেক্ষণ করতে থাকি। সামনে একটা টেবিল রাখা। তার চারপাশেটা লাইটিং করা। টেবিলের উপরে একটা মিনি ডার্ক চকলেট কেক রাখা আর তার চারপাশে লাল গোলাপের পাপড়ি ছড়ানো। কেকটির উপর লিখা ( ❤ Mr And Mrs ❤)।
আমি এইবার মুদ্ধ চোখে রিয়ানের দিকে তাকাই। রিয়ান এইবার আমায় পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে আমার হাতে ছুড়ি ধরায়। তারপর বলে,
.
— Let’s cut the cake. (রিয়ান)
.
অতঃপর আমিও সমতি জানাই। দুইজনেই এক সাথে কেক কাটি। রিয়ান একটা পিস নিয়ে আমাকে খায়িয়ে দেয়। আমিও তাকে খায়িয়ে দেই। রিয়ান আমার হাতে একটা পিস ধরিয়ে দিয়ে বলে।
.
— নাও খাও। আমি জানি তোমার ডার্ক চকলেট কেক ফেভরিট। (রিয়ান)
.
আমি এইবার কেকটা হাতে নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকি। তারপর হাল্কা কামড় দিয়ে খেতে থাকি আর ভাবতে থাকি।
.
— রিয়ান আমায় এত ভালবাসে এত টাস্ট করে। তার ট্রাস্ট ভাঙাটা কি ঠিক হবে? নিজের অতীত লুকাতে গিয়ে তাকে ঠকাচ্ছি না তো! আমাকে তাকে আরিয়ানের ব্যপারে সব বলে দেওয়া উচিৎ। পরে যা হবে দেখা যাবে। ( মনে মনে)
.
আমি কিছুটা সাহস জুগিয়ে বলে উঠি।
— রিয়ান আমায় না আপনাকে কিছু বলার আছে।
.
— হুম বলো। আমার দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে। (রিয়ান)
.
— আসলে রিয়ান না মানে আমি! আর বলতে পারলাম না।
.
— হুসস! (রিয়ান)
এই বলে রিয়ান আমার গালে হাত রেখে বৃদ্ধা আঙুল দিয়ে আমার ঠোঁটের কোনে লেগে থাকা চকলেটটা মুছে দিয়ে ঠোঁটের কোনে টুপ করে কিস করে বসে। আমি এইবার অবাক চোখে তার দিকে তাকিয়ে থাকি। রিয়ান মুচকি হেসে বলে।
.
— অনেকক্ষন ধরে এইটা আমায় টানছিল। শেষে আর নিজেকে সামলিয়ে রাখতে পারলাম। মুচকি হেসে। তারপর বলে।
— এখন বলো কি বলছিলে? (রিয়ান)
.
আমি এইবার এক দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে বলতে শুরু করি।
— আমি আগে থেকেই…
.
আর বলতে পারলাম না। তখনই রিয়ানের ফোন বেজে উঠলো। রিয়ান ফোন বের করে দেখে আরিয়ান ফোন করেছে। রিয়ান ফোন ধরতেই আরিয়ান বলে উঠে।
.
— ব্রো তুই কই? দীদা চেয়ার থেকে পড়ে গিয়েছে। কোমরে নাকি অনেক ব্যথা পেয়েছে। তুই একটু তারাতাড়ি আয়।
.
— কি বলছিস এইসব! ওয়েট আমি এখনই আসছি।
এই বলে ফোন রেখে দেয়। আমি তার দিকে তাকিয়ে বলি। (রিয়ান)
.
— কি হয়েছে?
.
— দীদা চেয়ার থেকে নাকি পড়ে গিয়েছে। তারাতারি যেতে হবে। চল! (রিয়ান)
.
এই বলে রিয়ান ভিতরের দিকে দৌড়ে যায়। আর আমি তার যাওয়ার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি। তখনই কাউরো হাত তালির আওয়াজ কানে আসতেই আমি সেদিকে তাকাই। দেখি আরিয়ান। আরিয়ানকে দেখার সাথে সাথে আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসে। চোখ মুখে ভয়ের রেখা ফুটে উঠে। কিন্তু তাও নিজেকে শক্ত রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাই। আরিয়ান আমার সামনে এসে বলে।
.
— আহ! কি ভালবাসা! দেখে না হিংসে হচ্ছে। তোমাদের মধ্যে যে এত ভালবাসা আগে জানতাম না। কিন্তু যখন সে সত্যি জানবে তখন কি এই ভালবাসাটা থাকবে? (আরিয়ান)
.
— আমারটা জানি না কিন্তু তোমার যে অবস্থা খারাপ হবে তা জানি। দোষী তুমি হবে আমি না।
.
— Ops! I am scared. হাহা!! ঠিকই বলেছো, সত্যিটা সবাই জানবেই ঠিকই কিন্তু আমার বলা সত্যিটা সবাই জানবে৷ যেখানে দোষী তুমি! চরিত্রহীনা তুমি!সবাই জানবে কিন্তু তা এখন না, সঠিক সময় হলে। (আরিয়ান)
.
— আমি এর আগেই রিয়ানকে সব বলে দিব।
.
— আ’ম ইম্প্রেসড বেব!! আমার সাথে টকর দিতে চাচ্ছো। গুড! বাট আফসোস! তুমি রিয়ান ভাইকে কিছুই বলতে পারবে না। কেন না আমি বলতে দিব না। যেমনটা এখন দেই নি। (আরিয়ান)
.
— তার মানে এইসব তোমার কারসাজি।
.
— ইয়েস বেব!! তুমি দেখি আগের থেকে অনেক বুদ্ধিমতি হয়ে দিয়েছ। এই বলে আমার চুলে হাত দিতে নিলে আমি ছিটকে দূরে সরে যাই। (আরিয়ান)
.
— Don’t you dare! Stay away from me. রিয়ান যদি একবারও জানতে পারে না তোমার সম্পর্কে তাহলে দেখ তোমায় তিনি কি করে!
.
— বাহ! এত ট্রাস্ট, এত ভালবাসা। বাট একদিক দিয়ে ভালোই হয়েছে এখন তোমাদের আলাদা করতে আরও বেশি মজা পাবো আমি। ভালবাসা যত বেশি কষ্টও ততো বেশি। Uff! It is going to be interesting. এই বলে পৈচাশিক হাসিতে মেতে উঠে। (আরিয়ান)
.
তার এই হাসিটা আমার শরীরে কাটার মত বিধছিল। আমি কোন মতে নিজেকে সামলিয়ে বলি।
.
— তুমি কিছু করতে পারবে না। আমাদের আলাদা করতে পারবে না তুমি। দেখে নিও।
.
এই বলে আর এক মিনিটও সেখানে দাড়িয়ে না থেকে দ্রুত পা চালিয়ে সেখান থেকে চলে আসি।
ভিতরে ঢুকতেই হাত পা কাঁপা কাঁপি শুরু হয়ে যায় আমার। যতই বাইরে দিয়ে নিজেজে শক্ত দেখাই না কেন ভিতরে আমি ভয়ে জমে যাচ্ছি।
আমি এক দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে সামনে যেয়ে দেখি সবাই গোল হয়ে আছে। দীদাকে রিয়ান কোলে নিয়ে বাসায় যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
আমি গিয়ে রিংকি আর আরিশার পাশে দাড়াই। তারা দুইজন আমায় দেখে চোখের ইশারায় জিজ্ঞেস করে সব ঠিক আছে কিনা! আমি হ্যাঁ সূচক উত্তর দেই।
অতঃপর রিয়ান আমার দিকে তাকিয়ে বলে যেন আমরাও তাদের সাথে এখনই বেড়িয়ে পড়ি। রিয়ানের কথা অনুসারে আমরা সকলেই একসাথে বেড়িয়ে পড়ি।
.
.
??
.
— এই আরিয়ানের বাচ্চাকে তো আমি জানে মেরে ফেলবো। ওর সাহস তো কম তোকে থ্রেড দেয়। ( আরিশা)
.
— তার উপর ওকে ড. রিয়ানের ফুপাতো ভাই হতে হলো! দুনিয়াতে কি ভাইয়ের অভাব পড়েছিল নি যে ড. রিয়ানকেই ওর ভাই হতে হলো। ( রিংকি)
.
বাসায় এসে ফ্রেশ হওয়ার পর আমি ওদেরকে শুরু থেকে সব বলি। আর সব শুনার পরে তাদের রিয়াকশনই এইটা।
.
— তুই যত তারাতারি সম্ভব ড. রিয়ানকে সব কিছু বলে দে। তা না হলে পরে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাবে। তখন চাইলেও তুই সামাল দিতে পারবি না। (আরিশা)
.
— আমি জানি। আজ আরিয়ান মাঝে ওই কারসাজি না করলে আমি তাকে সব বলে দিতাম। আমাকে এখন যেভাবেই হোক তাকে সব জানাতে হবেই।
.
— এইটাই ভালো হবে। (আরিশা)
.
— রিয়ানু তুই ঠিক আছিস তো? (রিংকি)
.
— হুম। অনেক কষ্টে নিজেকে ঠিক রেখেছি। যদি তোরা আগে থেকে আমায় শক্ত না করতি তাহলে হয়তো আমি এখন পুরোপুরি ভাবে ভেঙে পড়তাম।
এই বলে ওদের দুইজনকে জড়িয়ে ধরি। এখন শুধু কালকের অপেক্ষা। কালকে আমি সব সত্যি বলে দিব তাকে।
.
.
??
.
সারা রাতটিই নির্ঘুমে কাটিয়ে দেই আমি। ভোরে ফজরের নামাজ সেরে যখন একটু শুই তখন ঘুম এসে ভোর করে আমার দুই নয়নে।
সকালে ফোনের রিংটনের আওয়াজে ঘুম ভেঙে যায়। আমি ঘুম ঘুম চোখে ফোন কানে নিয়ে যা শুনি তাতে আমার ঘুম উড়ে চলে যায়। চোখ দিয়ে অনাবরতো পানি পড়তে থাকে। আমি লাফ দিয়ে উঠে বসে পড়ি। আমার কাঁন্নার আওয়াজে রিংকি আর আরিশাও ঘুম থেকে জেগে উঠে। তারা আমাকে ঝাঁকিয়ে জিজ্ঞেস করতে থাকে ” কি হয়েছে? কান্না করছি কেন?” আমি কাঁন্নার জন্য কিছু বলতে পারছিলাম না। অতঃপর কোন মতে অস্পষ্ট সুরে বলে উঠি।
.
— রররিয়ান এএএকক্সিডেন্ট কককরেছে!

#Part_32
#Writer_Asfiya_Islam_Jannat
.
?
একটা অতি পুরানো গোডাউনের সামনে দাড়িয়ে আছি। চারদিকটা পুরো নিস্তব্ধ। দূর দুরান্ত পর্যন্ত কোন গাড়ি নেই। একদম মানব শূন্য।
প্রথমত এমন এক জায়গায় দেখে কিছুটা অবাক হই। কিন্তু তখন আমার মস্তিষ্ক বার বার এইটা মনে করিয়ে দিচ্ছিল যে ” আমার রিয়ানে এক্সিডেন্ট হয়েছে। তাকে যে করেই হোক রিয়ানের কাছে যেতে হবে। ”
আমি সেই নাম্বারে আবার ফোন করি। ফোনটি ৩-৪ বার রিং হতেই ফোন রিসিভ করে। তারপর আমি বিচিলিত কণ্ঠে তাকে জিজ্ঞেস করি “রিয়ান কোথায়?” সে প্রতিউত্তরে বলে,
“গোডাউনের ভিতরে।” আর সাথে সাথে ফোনটি কেটে দেয়।
তখন আমার মাথায় শুধু রিয়ানই ঘুরছিল যার ফলস্বরূপ আমার মনে একবারের জন্যেও এই কথাটি মস্তিষ্কের তীর সীমানায় আসে নি যে, “রিয়ান এইখানে কি করতে এসেছিল? বা কেন এসেছিল?”
আমি ধীর পায়ে ভিতরের দিকে অগ্রসর হই। ভিতরটা আবছা অন্ধকারে ঘেরা। তার উপর নাকে বার বার কেমন এক উটকো গন্ধ এসে বারি খাচ্ছে। বুঝাই যাচ্ছিল যে এই গোডাউনটি হয়তো বা অনেক দিন ধরে বন্ধ হয়ে পড়ে আছে। আমি এইসব তোক্কোয়া না করে কান্না মিশ্রিত কণ্ঠে ” রিয়ান, রিয়ান” বলে ডাকতে থাকি। কিন্তু প্রতিউত্তরে কোন সারাশব্দ পাই না। আমার এইবার ভয় করতে শুরু করে। তাও সাহস জুগিয়ে রিয়ানের নাম অনাবরত নিতে থাকি। তখনই চারদিকে লাইট জ্বলে উঠে। আমি এইবার আলো রশ্মি প্রতিফলিতর ফলে চোখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলি। কিছুক্ষণ পর ধীরে ধীরে চোখ খুলতে শুরু করি। চোখ খুলে সামনে আরিয়ানকে দেখে চমকে যাই। আরিয়ান আমার দিকে তাকিয়ে বিশ্রী হাসি দিচ্ছে। যা আমার শরীরে কাটার মত বিদছে। কিন্তু তখনও আমার মাথায় শুধু রিয়ানই ঘুরছিল তাই আমি আরিয়ানের মুখভঙ্গি এড়িয়ে তার উপর প্রশ্ন ছুঁড়ে মারি,
.
— রিয়ান কোথায়? রিয়ানের সাথে কি করেছো তুমি??
.
— উফফ হো সুইটহার্ট!! ইউ আর সো ডাম! কেউ তোমায় ফোন করে বললো রিয়ান ব্রো এর এক্সিডেন্ট হয়েছে আর তুমি তা বিশ্বাস করেও ফেললে?? কোন যাচাই-বাছাই না করেই? আর এইখান পর্যন্ত এসে পড়লে! হাইরে ভালবাসা! মানুষ ঠিকই বলে ভালবাসা অন্ধ হয়। আজকে দেখেও নিলাম। মুখ বেকিয়ে।
.
— কি বুঝাতে চাচ্ছো তুমি??
.
— উফফ ডামবো! ফোর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন রিয়ান ব্রো একদম ঠিক আছে। তার কোন এক্সিডেন্ট হয় নি। তোমাকে এইখানে আনার জন্য এইসব কারসাজি করা।
.
— ইউউউ বাস্টার্ড!! (সরি ফোর দ্যা গালি)
.
— এতটুকুতেই হাইপার হয়ে যাচ্ছো সুইটহার্ট? তাহলে পরবর্তীতে যা হতে চলেছে তা কিভাবে সইবে তুমি?
.
আমি নিজের রাগ কোন মতে সংযত রেখে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করি। তারপর কিছু সাহস জুগিয়ে বলি।
— এর আগের বার তো কিছু করতে পারি নি কিন্তু এইবার তোমার এমন অবস্থা করবো যে পানিও নসীব হবে না তোমার। সবাই জানবে এই ভালো মানুষ রুপে নরপশুকে।
.
— হাহ!! নাইচ জোক! তুমি না আমার আগে কিছু করতে পেরেছ না এখন কিছু পারবে। কিন্তু আমি তোমার সব কিছুই করতে পারবো। রাস্তার মেয়ের চেয়েও বাজে অবস্থা হবে তোমার। দেখবে কিভাবে? ওয়েট আ ফিউ সেকেন্ড!
.
এই বলে পকেট থেকে মোবাইল বের করে কি যেন বের করতে থাকে। তারপর তা আমার সামনে ধরে। তারপর আমি যা দেখি তাতে আমার মাথার উপর আসমান ভেঙ্গে পড়ে।
মোবাইল স্ক্রিনে আমার আর আরিয়ানের ছবি। ছবি গুলোতে বুঝা যাচ্ছে যে আমরা অতি ঘনিষ্ঠ হয়ে আছি। আরিয়ান একের পর এক ছবি দেখিয়ে চলেছে। সব গুলোতে আমরা খুব ঘনিষ্ঠ হয়ে আছি। এইসব ছবি যে কেউ দেখলে চোখ বন্ধ করে বলে দিবে যে আরিয়ানের সাথে আমার কোন ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। আমি এইসব দেখে বলি।
.
— মিথ্যে! সব মিথ্যে! এই ছবিগুলোতে থাকা মেয়ে আমি না। কান্না করতে করতে।
.
— হ্যাঁ জানি এই ছবিতে থাকা মেয়ে তুমি না। অন্য কেউ। তার জায়গায় শুধু তোমার চেহারাটা বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাট কথা হলো এইটা শুধু আমি আর তুমিই জানি এইটা তুমি না। বাকিরা তো আর জানে না। আর তারা জানবেও না।
যখন সকলের সামনে আমি এইসব ছবিগুলো ভাইরাল করবো তখন তোমার ইমেজটা গিয়ে কোথায় দাড়াবে ভেবেছ? রিয়ান ব্রো এই তোমার বেপারে কি ভাববে?
যে তার হবু বউ আগেই তার ফুপাতো ভাইয়ের সাথে…
.
— চুপ একদম চুপ। আর একটাও বাজে কথা বলবে না! কেন করছো এইসব? কি চাই তোমার? কান্না করতে করতে।
.
— এইতো মূল কথায় এসেছ! সো দ্যা ফ্যাক্ট ইজ আই ওয়ান্ট ইউ। যে কাজ ৬ বছর আগে পূরণ হয় নি তা এখন পূরণ করতে চাই। আই সোয়ের এই ছবি গুলোর কথা কেউ জানবে না।
.
— এইটা কোন দিনও সম্ভব না। আমি পারবো না।
.
— আমার কথা যদি না মানো তাহলে একবার ভেবে দেখ কি হবে? যখন এই ছবি গুলো রিয়ান ভাই দেখবে তখন কি হবে! তোমাকে নষ্টা বলে দূরে সরিয়ে দিবে। তোমাকে ছুঁড়ে ফেলে দিবে। তোমার গলায় চরিত্রহীনা ট্যাগটা লেগে যাবে। কোথাও মুখও দেখাতে পারবে না। ঘৃণা করবে তোমায় শুধু ঘৃণা।
তখন তোমাকে আমি এমনেও মিসইউস করতে পারবো। আমার কাছে তো তোমাকে ধরা দিতেই হবে। ইউ হ্যাভ নো আদার চয়েস।
.
আমি কিছু না বলে মূর্তির ন্যায় চুপচাপ বসে থাকি। নিতে পারছিলাম না এইসব কিছু। অবশ্য আমার জায়গায় অন্য যেকোনো মেয়ে থাকলেও হয়তো সহ্য করতে পারতো না।
একটা মেয়ের যখন আপত্তিকর ছবি বের হয় তখন তাকে যে কি পরিস্থিতিতে পড়তে হয় তা শুধু একটা মেয়েই বুঝতে পারবে। চারদিকের মানুষ আর সমাজ একজোট হয়ে মেয়েটির উপর এক গাধা অপবাদ আর অপমান ছুঁড়ে মারতে পারে। কেউ জানতে চায় না সেটা মিথ্যা কি না। চারদিকে তাকে নিয়ে খালি হাসি তামাশাই করতে থাকতে। অথচ তারা সেই ছেলেটির দিকে আঙুল তুলেও কথা বলবে না। সে আগের ন্যায় খোলামেলা ভাবেই চলাফেরা করতে পারবে। আসলে আমাদের সমাজই এমন। যত যাই হোক দোষ মেয়েরই হবে।
আমার চোখ দিয়ে অনাবরত অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। কেন না আমি যে এই সমাজের এই রুপ থেকে বেশ পরিচিত। ৬ বছর আগে যে আমি এই সমাজ নামক জাতির অপমান আর অপবাদের স্বীকার হয়েছি।
আমাকে কিছু বলতে না দেখে আরিয়ান বলে উঠে ।
.
— উফফ দিস মেলোড্রামা। আচ্ছা যাও ২ দিনের টাইম দিলাম। এই ২ দিনের মধ্যে যদি তুমি তোমার সম্মতি আমাকে না জানাও তাহলে এই ছবিগুলো সকলের কাছে পৌঁছাবে। আর সবার আগে রিয়ান ব্রো এর কাছে যাবে৷ এখন তুমি যেতে পারো। আমার এখন আরও কাজ আছে।
.
.
আমি একবার আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে দেখি। সে তৃপ্তির হাসি হাসছে। আমার এখন নিজের প্রতি নিজের এই ঘৃণা লাগছিল। আমি কিছু না বলে দ্রুত পায়ে সেখান থেকে চলে আসি।
আমার এইবার নিজের প্রতি রাগ হতে লাগলো। ভীষণ রাগ! নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছে করছে। এই আরিয়ান নামক কালো ছায়া আমার জীবন একদম অভিশাপ স্বরুপ। যে প্রত্যেক বার আমায় ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়ে যায়।
.
.
??
.
বাসায় আসতেই রিংকি আর আরশি এক গাদা প্রশ্ন আমার দিকে ছুঁড়ে মারে। তখন আমি রিয়ানের এক্সিডেন্টের কথা শুনে এতটাই বিচলিত ছিলাম যে ওদেরকে কিছু না বলেই দৌড়ে বেরিয়ে যাই।
তারা এড্রেস না জানায় আমার পিছু পিছু আসতে পারে নি। আর না পেরেছিল কাউরো সাথে যোগাযোগ করতে।
.
— বল ড. রিয়ান কেমন আছে? (আরিশা)
.
— তিনি ঠিক আছে। আর তার কিছু হয় নি। কেউ মজা করেছিল।
.
— হোয়াট দ্যা হেল! এইসবের মানে কি? কে করেছিল এইসব জানিস? (রিংকি)
.
— না জানি না।
.
— তোকে এমন লাগছে কেন? সব ঠিক আছে তো? (আরিশা)
.
— জানি না।
.
বলেই রুমে চলে যাই আর ওদের মুখের উপর দরজাটা বন্ধ করে দেই। রিংকি আর আরিশা দুইজন দুইজনের মুখের দিকে চাওয়া চাওয়ি করতে থাকে।
.
.
রাত ১০ টা বাজে,
রিংকি আর আরিশা অনাবরত দরজা ধাক্কিয়ে চলেছে। আজ সারাদিন আমি রুম থেকে বের হয় নি। যার জন্য তারা এখন না পেরে আমাকে রুম থেকে বের করার জন্য উঠে পরে লেগেছে। আমি এইবার না পেরে দরজা খুলে দেই।
দুইজন রুমে এসে আমায় দেখে অবাক হয়ে যায়। আমার চোখ দুটো লাল হয়ে একদম ফুলে আছে। চুল গুলো এলোমেলো হয়ে আছে। মুখটা ফুলা। রিয়ানা কেমন করে যেন ঢুলছে।
.
— তুই তোর এই কি হাল করেছিস? কি হয়েছে রিয়ানু বল? (আরিশা)
.
— কিছু না। তোরা শুধু আমায় একা থাকতে দে প্লিজ।
.
এই বলে আবার দরজা বন্ধ করে দেই। ওরা এইবার না পেরে এইবার রিয়ানকে ফোন দেয়।
.
.
??
.
সারাদিন দৌড়াদৌড়ির মাঝে আজ রিয়ান একবারও রিয়ানা খোঁজ নিতে পারে নি। সামনে হলুদ। রিয়ান দুইপক্ষের দিকটা একসাথেই সামলাচ্ছে। যার জন্য কাজ দ্বিগুন। যেহেতু রিয়ান একা হাতে সব সামলাচ্ছে সেহেতু তার উপর কাজের চাপ একটু বেশি। স্বস্তির নিশ্বাস নেওয়ারও সময় নেই।
রিয়ান ব্যাস দিন ভর ক্লান্তি নিয়ে একটু শুয়েছিল ঠিক তখনই রিয়ানের মোবাইলটা বেজে উঠে। রিয়ান বেশ বিরক্তিকর একটা ভাব নিয়ে মোবাইলটা হাতে নেয়। তারপর আরিশার নাম্বার দেখে তার ভ্রুটা কুচকে আসে।
রিয়ান ফোন ধরতেই আরিশা বলে উঠে।
.
— ড. রিয়ান আপনি প্লিজ একটু তারাতারি আসেন। রিয়ানা সেই দুপুরে বাসায় এসে নিজেকে ঘর বন্দি করে ফেলেছে। কিছুতেই দরজা খুলছে না। আপনি প্লিজ একটু জলদি আসেন।
.
রিয়ান কিছু বুঝতে না পেরে ফোন রেখে সিসিটিভি অন করে৷ রিয়ান দেখতে পায় রিয়ানা এলোমেলো ভাবে শুয়ে আছে। রুমে হাল একদম নাজেহাল। রিয়ানাকে দেখতে কেমন যেন অসাভাবিক লাগছে। রিয়ান আর দেরি না করে তারাতারি গাড়ির চাবি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে।
.
.
??
.
রিয়ান এসে অনাবরত দরজা ধাক্কিয়ে চলেছে। কিন্তু রিয়ানা কোন রেসপন্স করছে না। তাই রিয়ান বাধ্য হয়ে দরজাটা ভাঙ্গে। গিয়ে দেখে রিয়ানা সেই এলোমেলো হয়েই শুয়ে আছে। রিয়ান তার কাছে দিয়ে অনাবরত রিয়ানাকে ডেকে চলেছে। আরিশা আর রিংকিও সমান তালে ডেকে চলেছে। কিন্তু রিয়ানার কোন হেল-দুল নেই। এইবার রিয়ানের চোখ যায় পাশে পড়ে থাকা একটা ঔষধের পাতার দিকে। রিয়ান সেটা হাতে নিতেই বুঝে যায় যে সেটা কি!
রিয়ান আর দেরি না করে রিয়ানাকে পাজাকোল করে নিয়ে বেরিয়ে যায়। আরিশা বের হলে নিলে তার নজর যায় সাইডের টেবিলে পড়ে থাকা একটা সাদা কাগজের দিকে। সে সেটা হাতে নিয়ে দেখে এইটা রিয়ানার চিঠি। আরিশা সেটা নিয়ে রিংকির সাথে বেরিয়ে পড়ে।
রিয়ানার মুখের পাশ দিয়ে একবার সাদা ফেনার মত বের হতে শুরু করেছে। যা দেখে রিয়ান আরও দ্রুত ভাবে গাড়ি চালানো শুরু করে।
.
.
??
.
হসপিটালের করিডোরের একটা চেয়ারে রিয়ান মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। চোখ দুটো তার এক রক্তিম লাল হয়ে আছে। সাথে এক রাশ ভয়ও ফুটে উঠেছে তার চোখে। রিয়ানাকে হারানো ভয়!
রিয়ানা এখন ভিতরে অপারেশন থিয়েটারে। ওর অপারেশন হচ্ছে। যেহেতু রিয়ান একজন অনেক বড় আর নাম করা ডাক্তার তাই তার কথাতে কেউ পুলিশকে কল করে নি। রিয়ান বিষয়টাকে ধামাচাপা রাখারই চেষ্টা করেছে।
.
.
?
.
কিছুক্ষণ আগেই ডাক্তার এসে বলে গিয়েছে যে রিয়ানা এখন বিপদমুক্ত। তার পেট ওয়াস করে সকল স্লিপিং পিলস বের করা হয়েছে।
কিন্তু তাও রিয়ানের মনের মধ্যে রিয়ানাকে হারানোর ভয় যেন একদম গেধে গিয়েছে।
কিন্তু এখন রিয়ানের মনের মধ্যে বার বার একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে যে, “রিয়ানা কেন সুসাইড এটেম্পট করলো।”
তখনই আরিশা এসে রিয়ানের পাশে বসে। তারপর বলে।
.
— এইটাই তো ভাবছেন যে রিয়ানা কেন এমন করলো তাই তো?
.
রিয়ান এইবার মাথা তুলে তাকায়। তারপর কৌতুহলি চোখে আরিশা দিকে তাকায়। আরিশা এইবার বলা শুরু করে।
.
.
.
— এই ঘটনার মূল হচ্ছে আরিয়ান। হ্যাঁ ঠিক শুনেছেন আরিয়ান। যে আপনার ফুপাতো ভাই। এখন আরিয়ানের সাথে আমাদের কিভাবে পরিচয় কি তাই তো ভাবছেন? তাহলে শুনুন,
এই কাহিনি এখনকার না। আরও ৭-৬ বছর পুরানো। যখন আমরা সবে মাত্র এইচএসসি পাশ করে মেডিক্যালে চান্স পাওয়ার জন্য কোচিং এ ভর্তি হই।
রিয়ানা, আমি আর রিংকি সেই কলেজ কালিন থেকে বন্ধু। সেই থেকে সব কিছুতেই আমরা একসাথে ছিলাম।
আমরা যখন মেডিক্যালে পরিক্ষা দেওয়া শেষ করে একটু রিলেক্স হই। সকলের এক্সামই ভালো হয়েছিল। এতদিন পড়াচাপে একদম আধপাগল হয়ে গিয়েছিলাম। তাই আমরা ঠিক করলাম কোথাও ঘুরতে যাওয়া যাক। যেই কথা সেই কাজ। সেই সপ্তাহেই আমরা বেরিয়ে পড়ি সিলেটের উদ্দেশ্যে।
সিলেটে আমরা গিয়ে রিংকির এক আত্মীয় এর বাসায় উঠি। তারপর শুরু হয় আমাদের ঘুরাঘুরি। সেখানেই দেখা হয় আরিয়ানের সাথে। সে নাকি লন্ডন থেকে এইখানে ঘুরতে এসেছিল। প্রথম দেখাতেই আরিয়ানকে আমাদের তেমন সুবিধার মনে হয় নি। কেমন গা লাগা টাইপ ছিল। তাই দূরে দূরেই থাকলাম আমরা। কিন্তু সে আমাদের পিছু ছাড়ে নি। সে নাকি শুধু আমাদের সাথে ফ্রেন্ডশিপ করতে চায়৷ আমরাও পরে কিছু একটা ভেবে তার সাথে ফ্রেন্ডশিপ করে নেই। যা ছিল আমাদের সবচেয়ে বড় ভুল।
আরিয়ান শুরু থেকেই রিয়ানার সাথে ফ্লার্ট করার চান্স খুঁজতো। তাকে ইম্প্রেস করার ট্রাই করতো। কিন্তু রিয়ানা পাত্তা দিত না। তার এইসবের প্রতি কোন ইন্টেরেস্ট ছিল না বলে। কিন্তু আরিয়ান হার মানে নি।
সে আমাদের পিছু নিতে নিতে ঢাকায় চলে আসে। দেখতে দেখতে বেশ কয়েকদিন পার হয়ে যায়। আরিয়ান কিছুতেই রিয়ানার পিছু ছাড়ছিল না। রিয়ানা অনেকবার তাকে না করে কিন্তু সে শুনে না। একদিন সে সকলের সামনে রিয়ানাকে প্রপোস করে৷ আর রিয়ানা রেগে গিয়ে ওকে থাপ্পড় মেরে দেয়। যার জন্য আরিয়ানের মনে রিয়ানার জন্য রাগ আর ক্রোধ সৃষ্টি হয়। তার মধ্যে প্রতিশোধের আগুন ধাও ধাও করে জ্বলছিল। কিন্তু সে তা আমাদের বুঝতে দেয় নি।
সে রিয়ানা থেকে সরি বলে আবার ফ্রেন্ডশিপ ঠিক করার কথা বলে আর অনেক রিকুয়েষ্ট করে। যার জন্য রিয়ানাও রাজি হয়ে যায়।
অতঃপর আরিয়ান আমাদের একদিন এক পার্টিতে ইনভাইট করে। আরিয়ান জানতো যে সে যদি রিয়ানাকে একা দাওয়াত দেয় সে আসবে না। তাই সে আমাদের সবাইকে দাওয়াত দেয়। আমরাও খুশি মনে যাই।
.
এই বলে আরিশা একটু থামে। তারপর বলা শুরু করে।
.
.
.
— পার্টিটা বিকেল বেলা ছিল। আমরা সেখানে গিয়ে সকলেই ইনজয় করতে থাকি। আমি আর রিংকি একটু অন্য দিকে গিয়েছে তখন রিয়ানা একা হয়ে যায়। সেই সময় আরিয়ান এসে রিয়ানা সাথে কথা বলতে শুরু করে আর কথায় কথায় ওর জামাতে সোফট ড্রিংকস ঢেলে দেয়। তার সে সরি সরি বলে তাকে উপরের দিকে রুমে যেতে বলে। পার্টিটা একটা বাসা বাড়ির মধ্যেই ছিল। তাই রিয়ানা কিছু না বলে সেইদিকে চলে যায়। রিয়ানা যখন তার জামা পরিষ্কার করছিল তখন আরিয়ান সেই রুমে আসে। তারপর..
.
.
— তারপর কি আরিশা?? স্পিক আপ!!
.
.
আরিশা এক দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে বলা শুরু করে।
.
.
— তারপর সে রিয়ানার সাথে জোবরদোস্তি করা শুরু করে। হি ওয়াস ট্রাইয়িং টু মলেস্ট হার। রিয়ানা এইবার চেঁচামেচি শুরু করে কিন্তু বাইরে গানের আওয়াজে পারে না। রিয়ানা যখন জানতে চায় সে এমন কেন করছেন তখন সে জানায় যে সে রিয়ানা থেকে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য এমন করছে। সে যে তাকে সকলের সামনে থাপ্পড় মেরিছিল তার প্রতিশোধ। আর এমনেও তার নাকি আগে থেকেই রিয়ানার উপর নজর ছিল।
আরিয়ান যখন রিয়ানার সাথে অসভ্যতামি করার চেষ্টা করছিল তখন রিয়ানা নিজেকে বাঁচানোর জন্য ওকে আঘাত করে। আরিয়ান তখন ওকে ছেড়ে দেয়। রিয়ানা কোন মতে বাইরে চলে আসে।
সকলেই তখন ওকে দেখে শোকড। ওর জামার হাতা খানিকটা ছিড়া। চুল এলোমেলো। সে পাগলে মত কান্না করছিল। আমি আর রিংকি দ্রুত ওকে কাভার আপ করি। তারপর ওকে জিজ্ঞেস করি কি হয়েছে। সে কিছু বলতে পারছিল না ভয় আর কান্নার ফলে। অনাবরত কেঁপে চলেছিল সে।
তাই আমরা তাকে আমার বাসায় নিয়ে আসি। কিন্তু তাও সে কিছু বলতে পারে নি। সেইদিন রাতে ওর প্রায় ১০৪° জ্বর এসেছিল। সে জ্বরের ঘরে বার বার চিৎকার করছিল আর বলছিল যে, ” কাছে আসবে না, আমার কাছে আসবে না।”
তখনই আমরা বুঝে যাই কি হয়েছে। ৫ পর রিয়ানের জ্বর ঠিক হয় তখন সে আমাদের সিব বলে। আমার আর রিংকির বাবা মা দ্রুত একশন নেয়। পুলিশে রিপোর্ট করে। পুলিশ গিয়ে আরিয়ানকে ধরেও। কিন্তু ৩ দিন বাদেই তার মা এসে আরিয়ানকে ছাড়িয়ে দেশের বাইরে চলে যায়।
রিয়ানা এর মধ্যে একদম চুপচাপ হয়ে যায়। কথা বলাই যেন ভুলে যায়। সারাদিন নিজেকে রুমে বন্দি হয়ে থাকতো সে। মাঝে ডুকরে কেঁদে উঠতো তো কখনো কখনো ভয়ে চিৎকার করে উঠতো। ট্রোমায় চলে যাচ্ছিল ও।
আমরা ওর সাথে কথা বলার অনেক চেষ্টা করতাম কিন্তু সে বলতো না। একদিন আমরা জোর করে ওকে বাইরে নিয়ে যাই।
বাইরে গিয়ে ও একটু ভালো হচ্ছিলও কিন্তু তখনই পাশের কিছু আন্টিরা কানা ঘুষা শুরু করে যে রিয়ানা নাকি বাজে মেয়ে। সে নাকি নষ্টা। ছেলেদের সাথে ঢলাঢলি করে। আরও কত কি! কটু কথার যেন বন্যা বয়ে যায়। অথচ এইখানে রিয়ানা কোন দোষই ছিল না।
রিয়ানা এইসব শুনে তখন আরও ভেঙে পড়ে। আবার নিজেকে রুমে বন্দি করে ফেলে৷ দিন দিন ডিপ্রেশন চলে যাচ্ছিল ও। তারপর আমরা ওকে সাইকেটট্রিসের কাছে নিয়ে যাই। আর ওর চিকিৎসা করাই। এরই মধ্যে জানতে পারি আমাদের একই মেডিক্যালে চান্স হয়ে যায়। কিন্তু রিয়ানা তখনোও স্টেবেল ছিল না যে মেডিক্যালে ভর্তি হতে পারবে।
তাই আমার আর রিংকির বাবা মা মিলে রিয়ানার সব ভর্তির ফি আর বাদ বাকি ফরমালিটিস পূরণ করে। আমরা এইদিকে রিয়ানাকে আগের লাইফে ফিরে আসতে হেল্প করতে থাকি। অবশেষে অনেক কষ্টে ওকে আবার সাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনি। ওকে আরও স্ট্রোং করি। কিন্তু ওর মনে তখন ভালবাসার প্রতি অনিহা জমে যায়। এক প্রকার ঘৃনা যাকে বলে। যা আমরা চেয়েও বের করতে পারি নি।
এইভাবে চলতে থাকে। এরপর ও আপনাকে পায়। আর ভালবাসতে শুরু করে। কিন্তু আবার আরিয়ান ফিরে এসে ওকে ভয় দেখানো শুরু করে। আর আজ ও যা করেছে তার ফলে রিয়ানা এইবার পুরো ভেঙে গিয়েছিল। যার জন্য ও এমন একটা স্টেপ নেয়।
.
.
— মানে? কি হয়েছিল আজ?
.
.
আরিশা একটা কাগজ রিয়ানের দিকে এগিয়ে দেয় তারপর তাকে পড়তে বলে। রিয়ান এইবার কাগজটি খুলে দেখে তা রিয়ানার চিঠি। রিয়ান এইবার তা পড়তে শুরু করে।
.
.
[ চিঠির শুরু দিকে আজকের পুরো ঘটনাটা লিখা। তারপর তার নিচে লিখা। তারপর তার কষ্ট আর ডিপ্রেশনের কথা লিখা। সে কেন এই পথ বেছে নিয়েছে তার কারণও বলা আছে। সে পারবে রিয়ানের ঘৃণার সহ্য করতে পারবে না। পারবে তার জন্য রিয়ানের উপর কেউ আঙ্গুল তুলুক।
শেষ সে রিয়ানের প্রতি তার ভালবাসার কথা বলেছে। আর বিদাই নিয়েছে।]
.
.
রিয়ানের চোয়াল একদম শক্ত যায়। চোখ দিয়ে এখন আগুন বর্ষিত হতে থাকে। পায়ের রক্ত মাথায় উঠে আগুন হয়ে আছে। সে যেন এখনই আরিয়ানকে খুন করে ফেলবে। কি যে করবে সে নিজেও জানে না।
তখনই একজন নার্স এসে জানায় যে রিয়ানার সেন্স এসেছে।
রিয়ান এইবার সেই দিকে যায়। দিয়ে দেখে একজন নার্স রিয়ানাকে উঠে বসাতে সাহায্য করছে। রিয়ান এইবার ধীর পায়ে রিয়ানার সামনে গিয়ে দাড়ায়। নার্স রিয়ানাকে বসিয়ে চলে যায়। রিয়ানা এইবার চোখ তুলে রিয়ানের দিকে তাকায়। তারপর অস্পষ্ট সুরে বলতে শুরু করে।
.
— রিয়ান আ…
.
আর কিছু বলতে পারলো না সে। তার আগেই রিয়ান রিয়ানার গালে স্বজোরে এক থাপ্পড় বসিয়ে দেয়।
.
.
.
#চলবে