#আমার_আসক্তি_যে_তুমি
#Part_45
#Writer_Asfiya_Islam_Jannat
.
?
আমি কিছু না বলে একটানে ফেক স্কিনটা খুলে ফেলি। সাথে সাথে আমার চোখের সামনে সেই ছুড়ি দিয়ে লিখা “রিয়ানা” নামটি ভেসে উঠে। আমি এইবার অবাক চোখে রিয়ানের দিকে তাকিয়ে। রিয়ানের চোখ মুখ দেখে তার হাবভাব বুঝা যাচ্ছে না। তার বর্তমান অবস্থা এখন কেমন তা বুঝতে না পেরে আমি এইবার চোখ নামিয়ে নেই। তারপর কাঁপা কাঁপা হাতে রিয়ানের বা হাতে লিখা আমার নামটি আলতোভাবে স্পর্শ করি। ক্ষতটা যে বেশ পুরনো তা না, আবার বেশ নতুনও না। মাঝামাঝির অবস্থায়।
তার হাতে আমার নামটি ছুঁয়ে দিতেই আমার বুক কেঁপে উঠে। ক্ষতটা বেশ গভীর। হুট করে আমার চোখ বেয়ে পানি পড়তে থাকে। তা দেখে রিয়ান উত্তেজিত হয়ে পড়ে আর ঝটপট আমার চোখের পানি মুছে দিতে থাকে,
.
— এই তোমাকে না বলেছি তোমার চোখে যাতে আমি আর কখনো পানি না দেখি। বার বার আমার বলার সত্তেও তুমি কেন আমার কথা শুনো না।
.
আমি কিছু না বলে রিয়ানকে টেনে নিয়ে গিয়ে বিছানায় বসাই আর দ্রুত ফাস্ট এইড বক্স বের করে তার সামনে গিয়ে বসি। তারপর তার হাত আমার কোলে নিয়ে হ্যক্সিসোল বের করে তা হাল্কা তুলায় লেগিয়ে আলতো ভাবে রিয়ানের হাতটা ক্লিন করতে থাকি। মাঝে মধ্যে দুই এক ফোটা জল গড়িয়ে পড়তে থাকে। নিজের ভিতরটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে। বুকের বা পাশে কেমন এক চিনচিন ব্যথা অনুভব করছি। কিন্তু মুখে আমার টু শব্দ পর্যন্ত নেই। রিয়ান এইবার কিছুটা ধমকের সুরে বলে,
.
— কথা বলছো না কেন? স্পিক আপ ডেমিট!
.
আমি এইবার রেগে গিয়ে কান্না মিশ্রিত কণ্ঠে বলি,
— কি বলবো আমি হ্যাঁ? কি বলবো! নিজেকে আঘাত দিয়ে আমার নাম লিখার মানেটা কি? বলুন!
.
রিয়ান এইবার ছোট ছোট চোখ করে শান্তভাবে বলে,
— তোমাকে কষ্ট দেওয়ার শাস্তি এইটা।
.
— মানে? আমাকে আপনি আবার কবে কষ্ট দিলেন? অবাক হয়ে।
.
— তোমার গায়ে আমি হাত তুলেছিলাম। কষ্ট দিয়েছিলাম। আমার জন্য তোমার চোখে পানি এসেছিল এর শাস্তি তো আমার প্রাপ্য ছিলই। কিন্তু শাস্তিটা আমি তোমার নামে নিজেকে দিতে চেয়েছিলাম। চেয়েছিলাম যাতে শাস্তিটা এমন হোক যা বার বার আমাকে আমার ভুলের কথা মনে করিয়ে দিক। আর তাই আমি এই শাস্তিটাই বেছে নিয়েছিলাম। কিন্তু এইটির একটি ভালো দিক আছে। জানো তা কি?
তা হলো তোমার নামটি এখন তুমি হয়ে চিরতরের জন্য আমার শরীরের সাথে মিশে গিয়েছে। যা চাইলেও কেউ মুছে ফেলতে পারবে না। হৃদয়ে তো তুমি আছোই সাথে এখন পুরো আমিটাতেও তুমি। ভালবাসি তোমায় রিয়ুপাখি।
.
— এইটা ভালবাসা নয় পাগলামি। সাইকোনেস!
.
— হ্যাঁ এইটা পাগলামি কিন্তু ভালবাসার পাগলামি। যে ভালবাসায় পাগলামি নেই সেটা ভালবাসার কাতারে পড়ে না। আর এইখানে তো আমার এইটি আসক্তিময় ভালবাসা। এইখানে তো শত গুন বেশি পাগলামি থাকবে। আমার ভালবাসা যে সাধারণ নয় এইটি সবার থেকে আলাদা। আমার ভালবাসার সকল পাগলামি তোমার প্রতি আমার ভালবাসাকে নির্দেশনা করে। তোমার জন্য আমি পাগলামির সকল মাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পারি। শান্ত ভঙ্গিতে কথাটি বললেও এর মধ্যে লুকিয়ে ছিল এক রাশ হিংস্রতা। যা রিয়ানার ধারণার বাইরে।
.
— পাগলামো ছাড়া যদি ভালবাসাই না হয় তাহলে তো আমার ভালবাসাও ভালবাসা নয়। আপনি যেহেতু আমায় ভালবেসে পাগলামির সকল মাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পারেন সেহেতু আমিও পারবো। আপনার মত এত ভালবাসতে না পারলেও কম বাসবো না। মুচকি হেসে।
.
এই বলে আমি ফাস্টএইড বক্স থেকে একটা ছোট ছুড়ি বের করে হাতে নিয়ে নেই তারপর আমার বা হাতে ধরি।। রিয়ান তা দেখে কিছু বলতে নিবে তার আগেই আমি কাঁপা কাঁপা হাতে ছুড়িটি নিজের বা হাতে চালিয়ে দেই আর “R” লিখতে শুরু করি। রিয়ান দ্রুত এসে আমার কাছ থেকে ছুড়িটি নিয়ে দূরে ফালিয়ে দেয় আর উত্তেজিত হয়ে উঠে। আমাকে টেনে বিছানায় বসিয়ে আমার হাতটা তার কোলে নিয়ে রক্ত পরিষ্কার করতে থাকে। রিয়ান এমন প্রতিক্রিয়া করছে যেন আঘাতটা আমি না সে নিজে পেয়েছে। তার চোখে মুখে কষ্টের ছাপ স্পষ্ট। সে ধরা কণ্ঠে বলে,
.
— এইটা তুমি কি করলে রিয়ুপাখি? হ্যাভ ইউ লোস্ট ইউর মাইন্ড! এইসব পাগলামি তোমায় করতে কে বলেছে? তোমার ভালবাসাই আমার জন্য যথেষ্ট। এর চেয়ে বেশি আমি কিছু চাই না। জানো তোমার এই আঘাত আমার হৃদয়ে হাজারো আঘাত করে চলেছে। আঘাত তোমার হাতে হলেও ব্যথাটা আমার করছে। সহ্য হচ্ছে আমার এইসব।
.
— এতই যখন বুঝেন তাহলে আপনি কেন এমনটা করলেন? কাউকে শুধু নিজের সবটা দিয়ে ভালবাসলেই হয়। এমন পাগলামোর প্রয়োজন হয় না। আর আপনার ভালবাসা আমার কাছে এইভাবেই সকলের থেকে আলাদা। এর জন্য আপনাকে পাগলামো করে নিজের ভালবাসাকে আলাদা করতে হবে না।
আপনি কি জানেন আপনার হাতে সেই ক্ষতটা দেখে ঠিক এমনই অবস্থা হয়েছিল। আপনি এখন যে অবস্থায় আছেন ঠিক তেমন অবস্থায় আমি একটু আগে ছিলাম। সেই ক্ষতটা আপনার হাতে হলেও আমার বুকের ভিতর সেটির রক্তক্ষরণ হচ্ছিল।
.
রিয়ান কিছুক্ষণ আমার মুখের পানে তাকিয়ে থাকে। তারপর মনে মনে বলে,
— তুমি আর আমি এক না রিয়ানা। তোনার ভালবাসা সাধারণ হলেও আমারটা সাধারণ নয়। কেন আমার ভালবাসা আসক্তিময়। আর আমার এই আসক্তি ভালবাসা যে কেমন তা বুঝা বড় দায়। আমার ভালবাসা যেমন বিষাক্ত তেমনই অমৃতও। আমার ভালবাসার ধরণ যে সকলের ধারণার বাইরে।
.
রিয়ানকে কিছু না বলতে দেখে আমি বলি,
— কি হলো রিয়ান কিছু বলুন!
.
রিয়ান এইবার এক দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে বলে,
— কিছু না। তুমি যা বলেছ বুঝতে পেরেছি। এখন তোমাকে আর এইসব নিয়ে ভাবতে বলে না। যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে এখন তুমি তা সব ভুলে যাও আর শুয়ে পড়। এই বলে রিয়ান আমার হাতে সেভলন ক্রিম লাগিয়ে উঠে বারান্দায় চলে যায়। আর আমি তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস নেই।
.
.
#চলবে