#আমার_আসক্তি_যে_তুমি
#Part_55
#Writer_Asfiya_Islam_Jannat
.
?
আবির আর আমি মুখোমুখি বসে আছি। ওর হাতে একটি রিভলভর। যা সে বার বার উঁচু করে ঘুরাচ্ছে আর কেমন রহস্যময় হাসি হাসছে। আমি পলকহীনভাবে ওর দিকে তাকিয়ে আছি আর বুঝার চেষ্টা করছি যে ওর মনের ভিতরে ঠিক কি চলছে। ও এখানে ঠিক করতে এসেছে। ও আশার পর পরই আমি হাজার রকমের প্রশ্ন ওর দিকে ছুঁড়ে মারি। কিন্তু ও কোন কথার এই জবাব দেয় নি। শুধু মুচকি হেসে চলেছিল। তখন আমার মনে পড়লো যে আবির এখন আর কথা বলতে পারে না। তখন আমি চুপ হয়ে যাই৷ আবির তখন একটি রিভলভর বের করে তা ঘুরাতে ঘুরাতে ভিতরে ঢুকে সোফায় গিয়ে বসে পড়ে। তখন আমি কিছুটা ভয় পেলেও পরে জুটিয়ে ওর পিছু পিছু যাই দেখার জন্য ও এইখানে কি করতে এসেছে। কিন্তু সে তো একদম শান্ত হয়ে বসে থাকে।
এইসব ভেবে ওর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। কিন্তু তাতেও ওর মধ্যে কোন ভাবান্তর নেই। আমি এইবার হাল ছেড়ে উঠে দাড়াতে নিলেই কাউরো আওয়াজে থমকে যাই।
.
— আরেহ আরেহ কোথায় যাও? এখনো তো ছবি শুরুই হলো না তার আগেই দেখি দর্শকরা নিজের স্থান ত্যাগ করা শুরু করে দিয়েছে। দ্যাট ইজ নোট ফের। মুচকি হেসে।
.
আমি এইবার সাথে সাথে পাশে ফিরে তাকাই। আবিরকে কথা বলতে দেখে আমি অবাকের শেষ পর্যায়ে পৌঁছে যাই। মুখ দিয়ে অস্পষ্ট সুরে বেরিয়ে আসে,
— এইটা কিভাবে সম্ভব?
.
তখন আবির উঠে এসে আমার সামনে এসে দাড়িয়ে বলে,
— এভরিথিং ইজ পসিবল রিয়ানা। উপস সরি রিয়ু!
.
— তুমি কথা বলতে পারো? কিন্তু..
.
আমাকে আর বলতে না দিয়ে আবির বলে উঠে,
— আনফোরচুনেটলি ইয়েস! আই কেন স্পিক নাও। তোমার স্বামী তো আমার গলার স্বর নিয়েই নিয়েছিল কিন্তু আল্লাহ ঠিকই আমার প্রতি সহয় ছিল যার জন্য আমি আবার আমার কন্ঠ ফিরে পেতে পেরেছি। কেন আমি যে আওয়াজ ফিরে পেয়েছি তার খুশি কি তোমার হয় নি?
.
— না না হয়েছে। হবে না কেনো? কিছুটা অপ্রস্তুত কন্ঠে।
.
— কিন্তু তোমার খুশি হওয়াটা আমার পছন্দ না। কেন জানো?
.
— না। কৌতূহল দৃষ্টিতে তাকিয়ে।
.
— কারণ তুমি খুশি থাকলে যে রিয়ানও খুশি থাকে। আর তা আমার একদম সহ্য হয় না। আমার সকল খুশি কেড়ে নিয়ে রিয়ান কিভাবে খুশি থাকতে পারে বলো? ওর খুশি যে আমার সহ্য হয় না। তাই তো আজ চিরতরের জন্য ওর খুশি আমি কেড়ে নিয়ে যেতে এসেছি। পৈচাশিক হাসি দিয়ে রিভলভরটি ঘুরাতে থাকে। ।
.
আবিরের এমন কথায় আমি কিছুটা ভয় পেয়ে যাই। সে কি বুঝাতে চাচ্ছে তা আমি একটু হলেও অনুমান করতে পাচ্ছিলাম। তাও আমি সাহস জুটিয়ে জিজ্ঞেস করি,
— মানে!
.
— মানে অনেক সিম্পল। তোমাকে মরতে হবে আজ। ও যেমন আমাকে নিঃস্ব করেছিল আজ ঠিক ওকে নিঃস্ব হতে হবে। সব কিছু পেয়েও আজ সে সব হারাবে। জীবন্ত লাশ বানিয়ে দিব আমি আজ ওকে। বেশ হিংস্রভাবে।
.
— দেখ আবির তুমি ভুল বুঝছো। রিয়ান তোমার থেকে কিছু কেড়ে নেয় নি।
.
— অহ তাই!
.
— হ্যাঁ।
.
আবির রাগান্বিত হয়ে আমার গলা চেপে ধরে বলে,
— রিয়ান আমার থেকে যা যা কেড়ে নিয়েছে,তার কোন হিসাব নেই। আর তুমি বলছো ও আমার থেকে কিছুই কেড়ে নেয় নি? বাহ!
কিছু না জেনে কেন কথা বলতে আসো? হ্যাঁ কেন আসো? এই বলে আরও জোরে আমার গলাটা চেঁপে ধরে।
.
আমার এইবার ধমবন্ধ হয়ে আসে আর আমি গোঙাতে শুরু করি। চোখ দিয়ে অনাবরত পানি গড়িয়ে পড়তে থাকে। এ দেখে হয়তো আবিরের আমার উপর কিছুটা মায়া হলো আর আমায় ছেড়ে দিয়ে দূরে গিয়ে দাড়ায়। আমি এইবার ছাড়া পেয়ে কাশতে থাকি।
তারপর আবিরের দিকে তাকাই আর কাঁপা কাঁপা গলায় বলি,
.
— আআমি সসব জজানি। ততোমাদের মধ্যে ঠিক ককি হহয়েছে ততা সব জজানি। তাই ববলছি তুমি ভভুল। রিয়ান ততোমার থেকে ককিছু কেড়ে ননেয় নি। সবই ততোমার ভুল ধারণা ননা।
.
— কিভাবে শুনি?
.
তারপর আমি ওকে রিয়ানের দিকটা তুলে ধরি। আর শেষে বলি,
.
— রিয়ান এতিম ছিল বলেই তোমার বাবা-মা ওকে বেশি দেখে শুনে রাখতো। রিয়ান তো এইভাবেই নিঃস্ব ছিল সব হারিয়ে তখন ওর কাউরো সাপোর্টের দরকার ছিল যা তোমার বাবা-মা হয়েছিল। আর তুমি নিজেই ভেবে দেখো একবার। রিয়ান যে বয়সে এইসব হারিয়ে ছিল তখন কি ওর নিজেকে ঠিক রাখার মত অবস্থায় ছিল?
আবির বাবা-মা কখনো নিজের সন্তানকে কম ভালবাসতে পারে না। এইটা সবই আমাদের মনের খেলা। ছোটবেলায় আমার যেটা ভাবি আমাদের কাছে সেটাই ঠিক মনে হয়। আর ঠিক সময়ে যদি সেই ধারণা না ভাঙ্গা হয় তাহলে তা ভয়ংকর রুপ নেয়। যেমনটা তোমার বেলায়ও হয়েছে।
.
— সবই মানলাম কিন্তু আমার সাথে যা করেছ ও তার বেলায় কি? আমার কন্ঠ চিরতরের জন্য নিয়ে নিয়েছিল সে। আমার কেরিয়ার, আমার স্বপ্ন সব শেষ করে দিল সে। এর কি যুক্তি দিবে শুনি? নেই তো কোন যুক্তি।
ড. আজিজ মেহরুব যদি না থাকতেন তাহলে হয়তো বা আমি কখনোই নিজের কন্ঠ স্বর ফিরে পেতাম না। তিনি আমার কন্ঠ ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে এবং আমাকে এই পর্যন্ত সাহায্য করে আসতে।
.
আমি অবাক হয়ে আবিরের দিকে তাকিয়ে থাকি। তারপর জিজ্ঞেস করি,
— তাঁকে তুমি পেলে কোথায়? আর তিনি তোমাকেই বা কেন সাহায্য করেছে? কেন?
.
— প্রতিশোধ নিতে। তার ছেলে রকিকে যে রিয়ান মেরেছিল তা আমি জানতাম। তাই যখন আমি তাকে নিউইয়র্কে দেখলাম তখনই আমার মাথায় প্রতিশোধের আগুন জ্বলে উঠে। আর তাই আমি তাকে খাতায় লিখে সব বলে দেই আর তার সাহায্য চাই। এর পর তিনিও আমায় সাহায্য করলেন এবং আমার আওয়াজ ফিরিয়ে আনলেন। তারপর আমি আর তিনি মিলে প্লেন করলাম তোমাকে মেরে রিয়ানকে কষ্ট দিব। তারপর ওকে মারবো। তাই তো বিয়ের আগে থেকেই তোমাকে মারার জন্য লেগে পড়ি। কিন্তু বার বার তুমি বেঁচে যাচ্ছিলে। তাই সুযোগের অপেক্ষা করছিলাম। আর দেখ আজ পেয়েও গেলাম।এখন আমাকে আমার প্রতিশোধ নিতে দাও।
এই বলে আবির আমার দিকে রিভলভরটি ঠিক করে। আর চালাতেই নিবে তখন আমি বলে উঠি,
.
— আমার কাছে যুক্তি আছে।
.
আবির এইবার আমার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে। আমি এইবার ওকে একটু দাড়াতে বলে দ্রুত রুমে গিয়ে সেই ডাইরিটি নিয়ে আসি আর ওর হাতে ধরিয়ে দেই। তারপর সেই পৃষ্ঠা বের করে ওকে পড়তে দেই।
আবির এইবার পড়তে শুরু করে। পড়তে পড়তে ওর চোখ দিয়ে এইবার পানি গড়িয়ে পড়ে। আমি এইবার বলি,
.
— ভুলটা কি তোমার ছিল না? যার জন্য শাস্তিটা তুমি এই পেয়েছ। তুমি ভালো করেই জানতে যে রিয়ান আমার প্রতি ঠিক কতটা ভালবাসে। আমার কোন কষ্ট ও কখনোই সহ্য করবে না। তাহলে তুমি কেন এমন করলে?
আর রিয়ান তো তোমার কন্ঠ একবারে নেয় নি। ও ঠিকই ফিরিয়ে দিত। তুমি শুধু ওর হিংস্রতাই দেখেছ ওর ভালবাসা না।
সে সবসময় তোমাকে আগলে রাখার চেষ্টা করেছে কিন্তু তুমি তা বুঝো নি। তোমার জান বাঁচিয়েও তোমাকে বলে নি। বল এমন কতজনে করে?
রিয়ানকে তুমি সবসময়ই ভুল ভেবে এসেছিলে। তার জন্য তোমার মনে ঠিক এতটাই ঘৃণা ছিল যে তুমি তাঁকে কখনো আপন করতেই পারো নি। তার সাথে বুঝার চেষ্টাই করো নি।
.
ড. আজিজ এইবার হো হো করে হাসতে থাকে আর বলে,
— তা আর হচ্ছে না। কেন..
.
আর কিছু বলতে যাবে তখনই বাইরে থেকে কিছু শব্দ কানে আসে তার। ড. আজিজ এইবার পিছে ঘুরে তাকায়। তারপর বাইরের দিকে অগ্রসর হয় দেখার জন্য ঠিক কি হচ্ছে বাইরে। কিন্তু এর আগেই রিয়ানা আর আবির রুমের ভিতর প্রবেশ করে। ড. আজিজ তা দেখে অবাক হয়ে যায়। আমি দ্রুত তার পাশ কাটিয়ে রিয়ানের কাছে চলে যাই। রিয়ানের এমন অবস্থা দেখে আমি এইবার কেঁদে দেই কোনো মতে নিজেকে সংযত রেখে রিয়ানের হাত পায়ের বাধন খুলতে থাকি।
এইদিকে ড. আজিজ আবিরের সামনে গিয়ে দাড়ায়। ওর দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে ওর উপর প্রশ্ন ছুঁড়ে মারে,
.
— তুমি এইখানে কি করছো? আর এই মেয়েকে এখনো মারো নি কেন?
.
— কারণ আমি মারতে পারবো না তাই। আর না আপনাকে রিয়ানকে মারতে দিব।
.
— হোয়াট রাবিশ ইজ ওল দিস। আর ইউ আউট অফ ইউর মাইন্ড। কি যা তা বলছো?
.
— আমি একদম ঠিকই বলছি। আর নিজের সজ্ঞানেই আছি।
.
— তাহলে? কোন হিসাবে বলছো ওকে ছেড়ে দিতে।
.
— কারণ এখন আমি সত্যিটা জানি। সে যা করেছে একদম ঠিক করেছে। তাই এখন বলছি তাকে ছেঁড়ে দিন এইটাতেই সবার ভালো হবে।
.
— দেখে তো মনে হচ্ছে ভাইয়ের জন্য লুকিয়ে থাকা প্রেম জাগ্রত হয়ে উঠেছে।
.
— ঠিক তাই। আজ এত বছর ভাইকে জানতে পেরেছি, বুঝতে পেরেছি। তো এখন প্রেম জাগ্রত না হয়ে কোথায় যাবে?
.
— তাই না। যখন ভাই এই থাকবে না তখন এই প্রেম জাগিয়ে লাভ কি?
.
— তা আর হচ্ছে না।
এই বলেই আবির ড. আজিজকে মারতে শুরু করে। আমি ততক্ষণে রিয়ানের সকল বাঁধন খুলে দিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেই। রিয়ান আমায় শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকে। রিয়ান আমায় কিছুটা শান্ত করে সাইডে সরিয়ে রেখে আবিরের কাছে যেতে নেয় তখনই ড. আজিজ আবিরকে ধাক্কা মেরে রিয়ানের উপর ফেলে দেয়। আর দ্রুত নিচ থেকে আবিরের রিভলভরটি উঠিয়ে নেয়। মারামারির সময় আবিরের রিভলভরটা তখন মাটিতে পড়ে যায় আর সেই দিকে ড. আজিজের নজর যায়।
ড. আজিজ এইবার বলে উঠে,
.
— যেও এখন সামনে এগুবে তার উপরই এখন গুলি বর্ষন হবে। সো ডোন্ট মুভ।
.
রিয়ান, আবির আর আমি এইবার জমে যাই৷ ঠিক কি করবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না। ড. আজিজ এইবার একবার আমার দিকে রিভলভরটি তাক করছে তো একবার রিয়ানের দিকে তো একবার আবিরের দিকে।
তারপর সে পৈচাশিক হাসি দিয়ে বলে,
.
— আজ এইখানে কেউ একজন তো মরবেই। এখন তা কে তা দেখার বিষয়। এই বলে রিভলভরটি আমাদের তিনজনের দিকে ঘুরাতে থাকে। অবশেষে আমার দিকে রিভলভরটা সে স্থির করে এবং পৈচাশিক হাসি দিয়ে বলে,
.
— তুই তো সব নষ্টের মূল। তো তোকেই মেরি ফেলি কি বল? ভালো হবে না অনেক।
.
আমি এইবার ভয়ে কাঁপতে থাকি। সে এক পৈচাশিক হাসি দিয়ে রিভলভরটি লোড করে নেয়। তখনই রিয়ান আর আবির চেঁচিয়ে উঠে,
.
— নায়ায়া!
.
হুট করেই গুলির আওয়াজে সব একদম নিস্তব্ধ হয়ে উঠে। চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে এক নিরবতা। মেঝেতে বয়ে যেতে থাকে রক্তের সরু রেখা।
.
.
.
.
#চলবে