#আমার_একটাই_যে_তুই❤️
#সিজন-২
#সুরাইয়া_সাত্তার_ঊর্মি
১৬
ভার্সিটির কেন্টিনের এক কোনায় জালানার ধারে বসে আছে কুহু। সূর্য তখন মাথা বরাবর। জানালা দিয়ে তপ্ত রোদ প্রবেশ করে ঝিলমিল দিচ্ছে। মাথার উপর ফ্যানটি প্যাচ প্যাচ করে চলছে। সূর্যের তাপে ঘাম পড়চ্ছে কুহুর ঘাড় গলা বেয়ে। ওড়নার আঁচল টেনে মুছে নিলো কুহু। সামনের ব্যক্তিটির দিক কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই তার। সামনের ব্যক্তটিও দু হাত বুকের মাঝে ভাজ করে সুক্ষ্ম ভাবে পর্যবেক্ষন করে যাচ্ছে কুহুকে।
বেশ কিছু সময় যাবার পর প্রথম কথা বললো ব্যক্তিটি।
—” কেমন আছো? কায়নাত?”
কুহুর চোখে মুখে বিরক্তি ফুটলো। কাট কাট গলায় বলল,,
—” কেন এসেছ আবার ফিরে? দেখতে? আমি তোমার শোকে মারা যাচ্ছি কিনা! তো বলে দিচ্ছি আমি পুরোটাই ভালো আছি। ফিট এন্ড ফাইন!”
আশিক হেসে ফেললো। আশিকের হাসি শব্দে কুহুর মনে পড়লো ইউসুফের কথা। ইশ! লোকটা কি নয়নাভিরাম হাসি।কুহু তো তাকিয়েই থাকে শুধু বেহায়ার মতো। আহারে ইউসুফের হাসিটা যদি মাখনের মতো হতো না জানি কবেই খেয়ে ফেলতো।
কুহু হাসলো। আশিক ভ্রু কুচকে বললো,,
—” আর ইউ ওকে?”
কুহু গম্ভীর রূপ নিলো সাথে সাথেই। এ ব্যক্তটির সাথে কোনো রকম কথা বলার ইচ্ছে নেই তার। অনেক জোড়াজুড়ির পর সে এখানে এসেছে। পাঁচ মিনিট কি কথা যেন বলবে। কুহু হালকা কেশে গলা পরিস্কার করে বলল,,
—” পাঁচ মিনিট শেষ হতে আর কিছু সেকেন্ড বাকি।”
আশিক এবার অনুনয় করে বলল,,
—” আমি তোমার বেশি সময় নিবো না কুহু। আমি শুধু আমার দিকটা তোমার কাছে তুলে ধরতে চাইছি।”
—” আমি জাজ নই! যে আমাকে সাফাই দিতে হবে।”
চকিতে বলল কুহু।আশিক আহত স্বরে বলল,,
—” একটি বার আমার কথা শোনো!”
কুহু উঠে দাঁড়িয়ে পড়লো। আশিকও দাঁড়ালো। কুহু দুকম এগিয়ে গিয়েও কাঁধ কাত করে মিষ্টি করে হাসলো।বলল,,
—” যা করেছো ভালো করেছো। তোমার জন্য আজ আমি আমার কাঙ্খিত মানুষটিকে পেয়ে গেছি। তোমার প্রতি থাকা রাগ, অভিমান, অভিযোগ আমি কবেই ভুলে গেছি। তুমি সেদিন না এসে আমার অনেক বড় উপকার করেছে। এর বদলে তোমার সাত খুন মাফ!”
কুহু কেন্টিনের দরজা অতিক্রম করে হারিয়ে গেলো। আশিক হতবিহ্বল হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। কিছুতেই বুঝতে পাচ্ছে না। যে মেয়েটি তার একটি ফোন কলের জন্য কেঁদে কুটে এক করতো। অথচ আজ দেখে মেয়ে কি সাবলীল ভাবে কথা বলে চলে গেলো। আশিক মনে মনে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। চোখের কোনের জল চিকচিক করছে। কুহুকে না চাইতেও সে ভালবেসে ফেলেছে।এই মেয়েটি ধীরে ধীরে তার নেশায় পরিনত হচ্ছে। কি করবে আশিক? এভাবেই যেতে দিবে কুহুকে? ইউসুফের কাছে কি তাহলে সে হেরে গেলো?
—————–
কঁপালের রগ দুটি ফুলে উঠেছে ইউসুফে। ডান হাতে দু আঙ্গুল দিয়ে কঁপাল ঘসে যাচ্ছে সে। চারিদিক তখন গিজ গিজ করছে মানুষ। একটি স্কুলের প্রধান অতিথি হিসেবে ডাকা হয়েছে তাকে। স্কুলে ছেলেপুলে সহ এলাক না-ও জোয়ানরাও ভির করেছে চারপাশে। সবাই ইউসুফকে আইডল ভাবে।ইউসুফ না চাইতেও এখানে উপস্থিত হয়েছে।
কবির দূর থেকে ইউসুফের অবস্থা দেখে এগিয়ে এলো। পানির বোতল ইউসুফের দিক এগিয়ে দিয়ে নতজানু হয়ে বলল,,
—” স্যার আপনার শরীর কি বেশি খারাপ লাগচ্ছে?”
ইউসুফ তার আসনে হেলে বসলো। ডান হাতে এক গাছি চুল মুঠ করে বলল,,
—” মাথাটা ধরেছে খুব।”
কবির কি করবে ভেবে পেলো না। এদিকে ইউসুফে চোখমুখ লাল হয়ে গেছে খুব। ঘাবড়ে গিয়ে ইউসুফকে বলল,,
—“স্যার চলুন ফিরে যাই।”
ইউসুফ নড়লো না। উলটো ভাঙ্গা ভাঙ্গা কন্ঠে বলল,,
—“এত গুলো মানুষ আমায় ভালোবেসে এখানে এসেছে৷ এদের রেখে চলে যাওয়াটা ভাড়ি অন্যায় আমার কাছে।”
কবির মনে মনে গর্ব বোধ করলো। তার স্যার যেমনি হোক। জনগণের জন্য তার অসীম ভালোবাসা সে জানতো। এতোটা যে নিজের অসুস্থের কথা ভুলে যাবে তা তার অজানা ছিলো।
অনেকক্ষন অতিবাহিত হওয়ার ইউসুফকে কিছু মোটিভেশনাল স্পিচ দেয়ার জন্য রিকুয়েষ্ট করলো। ইউসুফ ঘেমে নেয়ে একাকার। শরীরের বল যেন ধীরে ধীরে হারিয়ে ফেলছে। পা দুটো কোনো রকম টেনে মাইকের সামনে এলো। শরীর তখন থর থর করে কাঁপছে। তার সামনে থাকা অসংখ্য মানুষের মিষ্টি করে হাসলো ইউসুফ। শরীর খারাপের কথা ভুলে দু তিন মিনিট এক নাগাড়ে স্পিচ দেয়ার পর চোখের সামনে সব ঘোলাটে হয়ে গেলো। পুরো পৃথিবী গোল গোল করে ঘুরছে। কিছু সময়ের ব্যবধানে ইউসুফ সেখাই পড়ে গেলো। চারিদিকে তখন হৈ-হুল্লোড় শুরু করে দিছে। কবির তাত্ক্ষণিক ইউসুফকে নিয়ে হসপিটালে রওনা দেয়।
——-
কুহু আজ অনেক খুশি। আজ তার সব ভালো লাগচ্ছে। গুন গুন করে গান গাইছে। দূর থেকে ভেসে আসা কোকিলের ডাকের সাথে তাল মিলিয়ে কুহু কু কু ডাকচ্ছে। কুহু বাচ্চামো দেখে রূপা বিস্মিত। ভ্রু কুচকে বলল,,
—” দোস্ত তোর কি হয়েছে? গেলি তুই রণচণ্ডী হয়ে ফিরে এলি এত খুশি খুশি হয়ে? তোদের মাঝে সব ঠিকঠাক?”
কুহু হেসে ফেললো। বলল,,
—” আমি মরতে রাজি তবুও ওই বেটার কাছে ফিরতে রাজি নই!”
রূপা কুহুর সাথে আরো ঘেঁষে বসল। সন্ধিহান দৃষ্টিতে বলল,,
—” তাহলে এতো কেলাচ্ছিস কেন? ”
কুহুর মুখে এবার লজ্জার আভা ফুটলো। নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরলো।ওড়নার আঁচলের কোনা আঙুলে পেঁচাতে পেঁচাতে বলল,,
—” আমি নেতা সাহেবকে আমার মনের কথা জানাবো ভাবছি!”
রূপা খুশিতে লাফিয়ে উঠে জড়িয়ে ধরলো কুহু। বলল,,
—” আমি খুব খুশি কুহু তোর জন্য। ও আশিক বেটাকে কোনো কালেই আমার পছন্দ ছিলো না। তুই মন খারাপ করবি বলেই কিছু বলি নাই। কিন্তু তুই এবার সঠিক পথেই এসে গেছিস ভেবেই বুকের মাঝে শান্তি শান্তি লাগচ্ছে!”
কুহু রূপার মাথায় চাটি মরে বলল,,
—” এত উতলা কেন তুই!”
রূপাও হাসলো। তাদের আরো কিছুক্ষণ কথা চললো। কথার মাঝে কুহুর ফোন বেঁজে উঠলো। আননোন নাম্বার দেখে দ্বিধায় পরে গেলো। এই ফোনটি ইউসুফ তাকে দিয়েছে। হাতে গোনা কিছু মানুষ ছাড়া এ নাম্বার কেউ জানে না। তাহলে?
কুহু ভাবতে ভাবতেই কল কেঁটে আবার বেজে উঠলো। রূপা বলল,,
—“তুলছিস না কেন?”
—“অপরিচিত নাম্বার যে?
রূপা উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলল,,
—” দরকারি কলও আসতে পারে তুলে দেখ।”
কুহু ফোন তুললো। ওপাশ থেকে কারো কন্ঠ কানে ভেসে আসতেই চোখ দিয়ে নোনা জল গড়িয়ে পড়তে লাগলো। রূপার দিক তাকিয়ে অস্পষ্ট স্বরে বলল,,
—-” নেতা সাহবে…!
চলবে,