আমার একটাই যে তুই ২ পর্ব-১৭

0
2122

#আমার_একটাই-যে-তুই❤️
#সিজন-২
#সুরাইয়া_সাত্তার_ঊর্মি

১৭
হসপিটালের সাদা চাদরে মুড়ানো বিছানায় নিস্তেজ ভাবে শুয়ে আছে। রাগ, তেজ নেই দাম্ভিক মুখখানা গাম্ভীর্য হারিয়ে গেছে। সুশ্রি মুখখানা ফ্যাকাশে লাগচ্ছে। চোখের নিচে পড়া কালো দাগ জানান দিচ্ছি ইউসুফে নির্ঘুম কটানো রাত গুলো। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে কুহু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে ইউসুফের ঘুমন্ত মুখখানা। ছোট বাচ্চাসুলভ মুখখানায় আজ কেমন প্রাণহীন। কি এমন ভাবে তার নেতা সাহেব? পর পর কবার মনের মাঝে প্রশ্নটি উঁকি দিচ্ছে কুহুর।

ইউসুফ হাত দুটি তার হাতের ভাঁজে ভরে নিলো কুহু। উল্টো পিঠে ঠোঁট ছুঁয়ে কাঁদো কাঁদো স্বরে ফিসফিস করে বলল,,

—” আপনার কি হয়েছে নেতা সাহেব? আপনার কিসের এতো টেনশন?? ”

ইউসুফ নড়ে,চড়ে উঠলো। পিটপিট করে চোখ জোরা মেললো। ডান হাতে তীব্র ব্যাথায় কুকিয়ে উঠতেই কুহু বলল,,

—” আস্তে ব্যথা পাবেন। আপনার হাতে ক্যানুলা লাগানো স্যালাইন চলছে। এতটা দূর্বল হলেন কিভাবে বলুন তো?”

ইউসুফ প্রতিউত্তর হাসলো। কুহুর লাল মুখখানি দেখে বুঝতে বাকি নেই মেয়েটি কেঁদে কুটে এ হাল করছে। ইউসুফের বুকে মোচড় দিয়ে উঠলো। ম্লান হেসে বলল,,

—” খুব কাঁদাই তোরে তাই না বাবুইপাখি? ”

কুহু চেয়ে রইলো ইউসুফ দিক। ইউসুফ আবার বলল,,

—” তোকে কষ্ট দিলে আমার বুকটাও না বন্দুকের গুলির মতো ঝাঝড়া হয়ে যায়! ”

কুহুর কান্না পেলো লোকটি তাকে কত ভালোবাসে। আর কুহু কত অভাগা লাথি মেরে ঠেলে দিচ্ছিলো ইউসুফের ভালোবাসাকে। লোকটি তার ভালবাসায় কতটাই না কাতর? এই যে নিজে শয্যাশায়ী অথচ কুহুর চিন্তায় মরে যাচ্ছে?

ডাক্তার আয়ান রুমে ঢুকলেন হালকা কেশে। লোকটি মুখে চকচক হাসি। বয়স ৪৫ এর কোঠায় হলেও বোঝার উপায় নেই। তিনি ইউসুফের চেক আপ করে বললেন,,

—” কি ইয়ং মেন? এখন কি হাল? খেলার মাঠে নামলেই মাত্র পরপর ছক্কা না মেরেই নিজেই ছিটকে গেলে হবে?? তোমার মতো নওজোয়ানের খুব প্রয়োজন আমাদের দেশে।”

ইউসুফ হাসলো। বলল,,

—” আমি সব টাইমটেবল মেনেই করি! তারপরেও যে কেন এমন হলে বুঝতে পারছি না। ”

ডাক্তার ইউসুফের রিপোর্ট চেক করতে করতে বলল,,

—” আপনি ঘুম কম ঘুমাচ্ছেন! আর টেনশন করছেন প্রচুর। বিপি একদম লো!প্রপার বেড রেস্ট দরকার একটা আপনার।”

ইউসুফ মাথা নাড়ালো,,

—” হে চেষ্টা করবো!”

ডাক্তার আয়ান এবার উপদেশ দেয়ার মতো করে বলল,,

—” শুনো ছেলে! আগে শরীর পরে সব। শরীর, মনে বিস্বাদ থাকলে কোনো কাজেই ঠিক করতে পাড়বে না। তাই বলি কি কদিন রেষ্ট করে নাও বরং!”

ডাক্তার আয়ান আরো কিছু হেলথ বিষয় কথা বলে চলে গেলেন। এতক্ষণ নিরবতা পালন করা কুহু কথা বলল। মুখটি তার থমথমে বিরাশ কন্ঠে বললো,

—” আপনি কি নিয়ে এতো চিন্তিত ইউসুফ ভাই?”

ইউসুফ কুহুর দিক তাকিয়ে হেসে ফেললো। কৌতুক সুরে বলল,,

—” তুই দিন রাত আমায় ভাই ডেকে মাডার করার পাঁয়তারা করছিস। সেই টেনশনে আমি মারা যাচ্ছি। কবে প্রাণ বেরিয়ে যায়!”

ইউসুফ শব্দ করে হাসতে লাগলো। কিন্তু কুহুর মুখে রা নেই! ইউসুফ কুহুর বিমর্ষ মুখ দেখে চুপ হয়ে গেলো। কুহু তাকিয়ে রইলো ইউসুফের দিক। তার চোখ বাহিরে। ইউসুফ হা করে শ্বাস ছাড়লো। কুহু বলল,,

—” আপনি কি আমার থেকে কোনো কিছু লুকাচ্ছেন??”

ইউসুফ তার ভাবনার ভুবনে ডুবে ছিলো। কুহুর কথায় চকিতে তাকালো। ভাবলো কুহু কিছু আঁচ করতে পেরেছে নাকি??ইউসুফের চোখ মুখে অস্থিরতা। কুহুর হাতটি তার বুকের মাঝে রাখলো ইউসুপ। কুহুর মুখপানে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলল,,

—“আমাকে বিশ্বাস করিস কুহু? ”

কুহু মাথা নাড়ালো “হে” বুঝালো। ইউসুফ এবার উঠে বসতে চাইলো। কুহু ধরে উঠলো। পিছনের সাইডে বালিশ চাপিয়ে আরম করে বসলো। ইউসুফ কুহুর চোখে দিক তাকিয়ে বলল,,

—” বাবুইপাখি একটা কথা সবসময় মনে রাখবি, তোর ইউসুফ ভাই এক মাত্র তোকে, আর তোকেই ভালোবাসি। জম্ম যেমন সত্য, মৃত্যু যেমন সত্য আমি তোকে ভালবাসি একথাটি তেমন সত্য। আমাকে ভালো নাই বাসিস আমি সয়ে নিবো। কিন্তু আমার উপর অবিশ্বাস করিস না তাহলে আমি বাঁচবো নারে কুহু!”

কুহু আত্মাকে উঠলো। হঠাৎ এমন কথায় বুকের মাঝে তীক্ষ্ণ ব্যথা অনুভব করলো কুহু। মনের মাঝে আগাম জানান দিচ্ছে কিছু হবে, হচ্ছে, হতে চলেছে..??

———————–

ইউসুফ আজ দুদিন যাবত বাসায় এসেছে। কুহু ইউসুফ যত্নের কোনো ত্রুটি রাখছে না। ইউসুফ তো পুরো দমে অবাক হচ্ছে। আজ থেকে দু মাস আগেও যে কুহু তার সাথে থাকবে না বলেছে? সে আজ ইউসুফের জন্য এতোটা পাগল??যে রাত, দিন এক করে তার সেবা করে যাচ্ছে। বাচ্চা মেয়েটি মাঝে বড় বড় একটা ভাব চলে এসেছে যেন।

ইউসুফ ঠিক করলো।এ বাচ্চা মেয়েটি সে প্রপোজ করবে। খুব ঘটা করে করবে। এবার আর বাচ্চা মেয়েটি তাকে ফিরে দিতে পারবেনা। ভালবাসা টা এমনি হয়তো? মাখো মাখো। ইউসুফ প্ল্যানিং শুরু করলো। কবিরকে ফোন দিয়ে সব অ্যারেঞ্জমেন্ট করতে বললো।

এভাবেই আরো তিনটে দিন কেঁটে গেলো। ইউসুফ তার কাজেও যেতে শুরু করছে এখন। একদিন সন্ধ্যা কুহু পড়তে বসেছে। তখন কবির এসে হাজির। কুহু হাতে কত গুলো ব্যাগপত্র ধরিয়ে দিয়ে বলল,,

—” স্যার পাঠিয়েছে। ভিতরে একটি খাম ও আছে। আপনাকে পড়তে বলেছে!”

কুহু অবাক হয়ে গেছিলো। মাথাটা কাত করে বুঝালো আচ্ছা।

ইউসুফ দেয়া ব্যাগ গুলো দেখে কুহু এবার খুশিতে আত্মহারা হয়ে লাফিয়ে উঠলো। ইউসুফের দেয়া কালো শাড়িতে নিজেকে জড়িয়ে নিলো কুহু। ইউসুফ দেয়া খামটি খুলতেই গোটা গোটা অক্ষরে মেলা ভেসে উঠলো,,

বাবুইবউ,

জানি আমার চিঠি পেয়ে খানিকটা অবাক হচ্ছো। ভাবচ্ছো ফোন থাকতে চিঠি কেন? আসলো মনের কথা বুঝানোর মতো ক্ষমতা আল্লাহ আমাকে কম দিয়েছেন। তাই লিখিত ভাষা মনে ভাব, আবেগ, অনুভূতি ঢেলে এই চিঠি লিখা। আজ আমার জন্য একটি বিশেষ রাত। এ রাত তুমি ছাড়া ফিকে। আমার হযবরল জীবনের এক মাত্র “আমার একটাই যে তুই!” আমার পাশে, সুখ, দুঃখে প্রতিটি পদক্ষেপে তোকে চাইরে বাবুইপাখি। আই নিড ইউ। আই মেডলি নিড ইউ। ইউ আর মাই হার্ট। তোকে ছাড়া আমার হৃদয় হৃদছন্দ তুলতে ভুলে যায়। তোর আসায় এ পরাম পাখি ডুবে যাচ্ছে অতল সাগরে? আসবি তো? আয় না আমার কাছে? একটি বার আয় আমার বুকের মাঝে দেখবি কানের মাঝে গুঞ্জন তুলে বলছে ” আমার একটাই যে তুই”

ইতি,
তোর আশায় প্রহর গুনা তোর
নেতা সাহেব

কুহুর চোখো জল ভড়ে গেলো। চিঠিতে বার কয়েক চুমু খেয়ে ইউসুফের রঙ্গে রাঙ্গিয়ে নিলো। কালো শাড়ি সাথে কালো চুড়ি মাথার খোপায় সাদা গাজরা পরে নিলো। কঁপালের কাছে কিছু চুল বের করলো। ঠোটে হালকা লাল লিপস্টিক। কুহু নিজেকে আয়নায় দেখলো। ভাব ধরে বলল,,

—” কি আয়না হিংসে হচ্ছে তোমার? ”

আয়না যেন হেসে বলছে,,

—” হে হচ্ছি বড্ড সুন্দর লাগচ্ছে তোমায়!”

কুহু হাসলো। ইউসুফ তাকে দেখে কি বলবে? তাই ভেবে লজ্জা পেলো। যখন টং টং করে ঘন্টার কাঁটা জানান দিচ্ছে ৭ টা বেজে গেছে তখনি তড়িঘড়ি করে বেড়িয়ে গেল কুহু। গাড়িতে উঠতেই আনানোন নাম্বার থেকে একটি মেসেজ এলো কুহুর ফোনে। কুহু ভ্রু কুচকে তাকাতেই…..

চলবে