আমার খাঁচায় তুমি বন্দি পর্ব-১৯

0
2865

#আমার_খাঁচায়_তুমি_বন্দি
#Avigya_Ayaat
#পর্ব:১৯

দুদিন পর….
রাহি নিজের রুমে রিফাতের আসার অপেক্ষা করছে আর কান্না করছে বসে।
রাহি নিজে নিজেই বলছে…
রাহি: রিফাত কোথায় তুমি। আমার যে তোমাকে বলার অনেক কিছু আছে। তুমি সত্যি বলেছিলে তুমি কোনো খারাপ কাজ করোনি। আমি তোমাকে বিশ্বাস করেনি, রিতার কথায় বিশ্বাস করে ছিলাম। কিন্তু রিতা আমার সাথে বেয়মানি করছে। রিতার জন্য তোমাকে আমি কতো কষ্ট দিয়েছি। আমি তোমার কাছে অপরাধী। আমাকে তোমার কাছে মাফ চাইতে হবে । আমাদের জীবনটা নষ্ট করে দিলো। রিফাত তুমি তো জানো না রিফাতের সাথে আরো লোক আছে আমাদের এই বাড়িতে ও আছে একজন সে ও রিতার সাথে জড়িত আর তোমার বাবা-মাকে ও সে মেরেছে। রিফাত তুমি তাড়তাড়ি আসো তোমাকে আজ আমি সব বলবো।
এসব বলছে আর রাহি কান্না করছে। এমন সময় রাহির ফোনে একটা কল আসে। রাহি ফোন রিসিভ করার পর
রাহি: হ্যালো, কে বলছেন?
অপর পাশের জন: আপনার হ্যাজবেন্ড এক্সিডেন্ট করেছে হাসপাতালে ভর্তি।
এক্সিডেন্টের কথা শুনের রাহির মনে হচ্ছে তার পায়ের নিচের মাটি সরে গেছে।
রাহি কান্না করতে করতে বলে
রাহি : কোন হাসপাতালে?
অপর পাশের জন: ঠিকানাটা মেসেজ করে দিচ্ছি তাড়তাড়ি চলে আসুন।
এরপর লোকটা ফোন কেটে দেয়।
রাহি রিফাত এমন অবস্থার কথা শুনে পাগলের মতো কান্না করছে।
অপর পাশের লোকটি ফোন কেটে দিয়ে রাহির ফোনে একটা মেসেজ দেয়।
রাহি মেসেজটা দেখে সাথে সাথে বাসা থেকে কাউকে কিছু না বলে দৌড়ে বের হয়ে যায়।
রাহি রিকশা নিয়ে হাসপাতালের দিকে যাচ্ছে তখনি হঠাৎ একটা গাড়ি এসে রিকশার সামনে থামায়।
রাহি কিছু বুঝার আগেই গাড়ি থেকে তিনজন লোক এসে রাহিকে জোর করে গাড়িতে ওঠিয়ে নিয়ে যায়।
রাহি জোরে জোরে চিৎকার করে বলছে কে তোমরা ছারো আমাকে।
রাহি চিৎকারের জন্য সেই লোকেরা রাহির মুখে স্প্রে করে অজ্ঞান করে দেয়।

পানির ছিটা মুখে পরায় রাহির জ্ঞান আসে আর মিটিমিটি চোখে তাকিয়ে দেখে রিতা সামনে দাড়িয়ে আর আশে পাশে তাকিয়ে দেখে তাকে চেয়ারের সাথে বেধে রেখেছে।
রিতা: হ্যালো আমার রাহি বান্ধবী।
রাহি: তুই আমাকে বান্ধবী বলবি না। তোর চেহারা দেখেই আমার ঘৃনা হচ্ছে।
রিতা: আহারে…
এই বলে জোরে একটা হাসি দেয়।
রিতার হাসি দেখে রাহির রাগ হচ্ছে অনেক।
রাহির ইচ্ছে করছে রিতাকে খুন করতে।
রাহি: এই সয়তানি তোর হাসি বন্ধ কর। তোকে দেখতে একদম বানোরের মতো লাগছে।
রাহির কথা শুনে রিতার রাগ হয়। তাই রাহির কাছে গিয়ে তার গাল জোরে চেপে মুখের কাছে মুখ নিয়ে বলে…
রিতা: মরার আগে মুখে অনেক কথা ফুটছে না।
রাহি: হাত- পায়ের বাধন খুলে দেয় তারপর দেখ কার মরন এসেছে।
পিছন থেকে সিয়াম বলে ওঠে…
সিয়াম: ভাবীর দেখি অনেক সাহসী।
রাহি: সিয়াম তুই।তোকে যে মাইর দিছিলাম মনে নেয়।
সিয়াম রাগি ভাবে বলে..
সিয়াম: সব মনে আছে আমার। তাই তো তার প্রতিশোধ এইবার নিবো তোকে মেরে।
রাহি : আমার কিছুই করতে পারবি না তোরা।
সিফাত: তুই বুঝেছিস রিফাত আসবে তোকে বাঁচাতে।
রাহি: রিফাত আমাকে কখনো দূরে রেখে ভালো থাকবে না তাই তো সবসময় পাসে পাশে থাকছে এই বারো ঠিক আমাকে তার কাছে নিয়ে যাবে আমি জানি।
রাহির কথা শুনে সিফাত জোরে হেসে দেয়…
সিয়াম: আচ্ছা ভাবী আপনি রিফাতের কাছে যাবেন। তবে রিফাত নিয়ে যেতে পারবে না, সেখানে আমাদেরই পাঠাতে হবে।
রাহি: মানে…
রিতা: তুই বাসা থেকে রিফাতের এক্সিডেন্টের কথা শুনে বের হয়েছিলি না।
রিতার কথা রাহির রিফাতের হাসপাতালে থাকার কথা মনে পরে যায় ওদের কারনে রিফাতের কথা মাথায় ছিলো না।
রাহি কান্না করতে করতে বলে…
রাহি: আমার রিফাত ঠিক আছে তো, তোরা আমাকে যেতে দেয়।
সিয়াম: ভাবীজি এমন করে না আমরা তো রিফাতের কাছেই তোমাকে পাঠাইতাছি।
রাহি: কি সব বলছিস?
রিতা: রিফাত তো মরে গেছে এখন তার কাছে যেতে হলে তোকে ও তো মরতে হবে।
রিতার কথা শুনে রাহি জোরে চিৎকার করে কান্না করে আর বলতে থাকে…
রাহি: আমি বিশ্বাস করি না, আমি জানি রিফাতের কিছুই হয়নি, আমার ফাজিলটা সুস্থ আছে, সে আমাকে ছেরে কোথাও যায়নি আমি জানি।
রাহি একদম পাগলের মতো করতে থাকে।
সিয়াম: রাহি ভাবী এমন করে না। তোমাকে ও তো রিফাতের কাছেই পাঠাবো।
সিয়াম তারপর একটা বন্দুক নিয়ে রাহির সামনে এসে তার কপালের দিকে বন্দুক ধরে।
রাহির সে দিকো কোনো খেয়াল নেই। সে পাগলের মতো রিফাত রিফাত বলে কান্না করছে।
সিয়াম যেই গুলি করতে যাবে তখনি রিতা তাকে থামিয়ে দেয়।
সিয়াম: থামতে বললে কেনো?
রিতা: রাহির এমন অবস্থা দেখে আমার খুব ভাল লাগচ্ছে আর একটু উপভোগ করি।
সিয়াম: কিন্তু….
রিতা: আরে রিফাতের মরার খবর শুনে রাহি একা একাই তিলে তিলে মরে যাবে তোমাকে কিছু করতে হবে না। আমরা এখন শুধু বিনোদন দেখবো।
সিয়াম: সত্যিই তো, আচ্ছা তাই হবে।
রিতা রাহিকে উদ্দেশ্য করে বলে…
রিতা: তুই এখানে থাক। আমরা রিফাতের লাশ দেখে আসি। টা… টা….

রাহি: আমাকে যেতো দেয় রিফাতের কাছে, আমি রিফাতের কাছে যাবো। রিফাতকে আমার অনেক কিছু বলার আছে।
রাহির কথা না শুনে রিতা আর সিফাত সেখান থেকে চলে যায়।
রাহি একটা রুমে আটকা। সেই রুমে বসে জোরে জোরে কান্না করছে। কান্না করতে করতে রাহি একটা সময় ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পরে…

কিছু একটা শব্দ রাহি শুনতে পাচ্ছে। ভাল করে খেয়াল করে দেখে কেউ একজন তার নাম রাহি বলে ডাকছে। রাহি তার নাম শুনে জোরে শব্দ করে।
রাহির শব্দ শুনে সেই রুমে একজন আসে। রাহি ভাল করে তাকিয়ে দেখে রিফাত।
রাহি: রিফাত তুমি,তুমি বেঁচে আছো, ওরা আমাকে মিথ্যে বলছে। ওরা বলেছে তুমি মারা গেছো। কিন্তু তুমি ও সুস্থ আছো আমাকে নিতে এসেছো।
রিফাত কোনো কথা না বলে রাহির হাত-পায়ের বাধন খুলে দেয়।
রাহি: তুমি কিছু বলছো না কেনো?
রিফাত: এখান থেকে চলো তাড়তাড়ি ।
এরপর রাহি আর রিফাত সেই রুম থেকে বের হয়ে বাহিরে চলে আসে।
রাহি: রিফাত তোমাকে আমার অনেক কিছু বলার আছে।
তোমাকে ভুল বুঝেছিলাম তাই আমাকে মাফ করে দিও।আমি আর কখনো তোমাকে ছেরে যাবো না। তুমি আমাকে জিঙ্গেস করেছিলেনা আমি তোমাকে একটু ভালবাসি কি না? রিফাত আমি তোমাকে আমার থেকে ও অনেক ভালবাসি।
রিফাত: তাড়তাড়ি গাড়িতে ওঠো।
রাহি আর রিফাত গাড়িতে ওঠে।
রিফাত গাড়ি চালাচ্ছে।
রাহি: আমার ভয় করছে, আমি কি তোমাকে হারিয়ে ফেলবো রিফাত? আমি আর তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবো না তুমি ও আমাকে ছেরে কোথাও যেয়ো না।
রাহির কথা শুনে রিফাত মুচকি হাসি দিয়ে বলে…
রিফাত: হারিয়ে ফেলে এখন হারানোর ভয় করছো,ছেরে গিয়ে আবার এখন বলছো ছেরে যাবে না। রাহি এখন যে অনেক দেড়ি হয়ে গেছে। তোমাকে একদিন বলেছিলাম যে আমি হারিয়ে গেলে বুঝবে তুমি আমি কতোটা ভালবাসি তোমায়।
রাহি: তুমি এমন করে কথা বলছো কেনো?
রিফাত কোনো উওর না দিয়ে রাহির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দেয় তখনি অন্যপাশ থেকে একটা গাড়ি এসে রিফাতের গাড়ির সাথে ধাক্কা খায়।
রাহি জোরে চিৎকার করে রিফাত বলে ডাক দেয়।
তখনি রাহির ঘুম ভেঙ্গে যায়। আশে পাশে তাকিয়ে দেখে যে সে সেই রুমেই আছে।

রাহি বুঝতে পারে যে এতো সময় সে স্বপ্ন দেখছিলো।
কিন্তু রিফাতের কথা গুলো তার এখনো মনে পরছে। রাহি ভাবছে..
রাহি: সত্যিই কি আমি রিফাতকে হারিয়ে ফেললাম।তাহলে কি আমার রিফাত আর নেই। রিফাত না থাকলে আমি ও আর বাঁচবো না।
রাহি আবার পাগলামো করতে শুরু করে।
রিতা আর সিয়াম অন্য রুমে বসে সিসি ক্যামেরায় রাহি সব কিছু দেখছে আর হাসছে।
রিতা: সিয়াম তাকে একটা ফোন দিয়ে বলো যে রাহি কি কি করছে। সে তো রিফাতদের বাসা থেকে বের হতেই পারছে না আজ। সে থাকলে তিনজন মিলে রাহির কান্ড দেখে মজা করতে পারতাম।
সিয়াম: ফোন করে বলে দিতেছি।
এরপর সিয়াম তাকে ফোন দিয়ে সব বলে।
সিয়াম: সে বাসা থেকে বের হতে পারতেছে না। তাই আমাকে আজ রাতে যেতে বলেছে।
রিতা: আচ্ছা যাবে।

অন্যদিকে রিফাতদের বাড়ি…..
চলবে…