আমার খাঁচায় তুমি বন্দি পর্ব-২০

0
3055

#আমার_খাঁচায়_তুমি_বন্দি
#Avigya_Ayaat
#পর্ব:২০

অন্যদিকে রিফাতের বাড়ি…
রিফাত বিকেলের দিকে বাসায় এসে তাড়াতাড়ি রাহি রুমের দিকে যায়। রিফাত রিতার বিরুদ্ধে সব প্রমান নিয়ে এসেছে রাহিকে দেখাবে বলে।
রাহির রুমে গিয়ে রিফাত দেখে কেউ নেয়।
রাহিকে অনেক ডাকে তুুবু রাহির সাড়া শব্দ নেই। রিফাত সারা বাড়িতে খুজে রাহিকে। কিন্তু কোথা ও না পেয়ে রেগে যায়।
রিফাত তাড়াতাড়ি ড্রইংয় রুমে এসে বাসার সবাইকে জোরে জোরে ডাকে।
বাসার সবাই দৌড়ে রিফাতের কাছে আসে।
রিফাত: রাহি কোথায়?
কেউ জানে না রাহি কোথায় তাই সবাই চুপ করে আছে।
রিফাত: সবাই চুপ করে আছো কেনো? রাহি কোথায় আমাকে তাড়াতাড়ি বলো।
কেউ কিছু বলছে না তাই রিফাত রাগে সোফায় জোরে লাথি মারে।
রিফাত: এতো গুলো মানুষ থাকতে রাহি কোথায় গেলো কেউ বলতে পারছো না। আমার মন বলছে সব গুলো কে মেরে ফেলি।
তখনি রিফাতের বাসার দারোয়ান আসে।
দারোয়ান : স্যার…
রিফাত: কি?
দারোয়ান : স্যার, রাহি ম্যাডাম দুপুরবেলা বাসা থেকে বের হয়ে গেছে। আমি বাধা দিছিলাম তাই আমার ওপর রাগ করে আমার গালে জোরে চড় মারছে আর বলছে সে এই বাড়ি থেকে চলে যাইতাছে। আপনার সাথে সে থাকবে না।
দারোয়ানের কথা শুনে রিফাত ঠাস করে সোফায় বসে পরে।
রিফাতের খালা: তোমরা সবাই এখান থেকে যাও।
এরপর সবাই সেখান থেকে চলে যায়।
রিফাতের খালা: রিফাত এমন করে ভেঙ্গে পরে না। রাহি তোমার কাছে থাকতে চায় না। তাকে তো আর তুমি জোর করে তোমার কাছে রাখতে পারো না তাই না। রাহি তোমার থেকে দূরে গিয়ে ভাল থাকবে তা তুমি জানো তাহলে তুমি তাকে দূরে যেতে দাও তাকে ভাল থাকতে দাও।
রিফাত: খালামুনি তুমি এখান থেকে যাও।আমাকে একটু একা থাকতে দাও।
রিফাতের কথায় তার খালা সেখান থেকে চলে যায়।
রিফাত কিছু সময় সেখানে চুপ করে বসে থাকে। তারপর নিজের রুমে চলে যায়।

রিফাত নিজের রুমে গিয়ে রাগে বিভিন্ন জিনিস ভাংচুর করে এরপর বিছানায় পাশে হেলান দিয়ে বসে। বিছানার পাশে রাখা টেবিল থেকে রাহির ছবিটা নিয়ে তাতে হাত বুলাতে বুলাতে বলে…
রিফাত: রাহি তুমি বারবার এমন কেনো করো? আমি তোমার কাছে দুই দিন সময় চেয়েছিলাম সব প্রমান দেখানোর জন্য। রাহি আমি তো সব প্রমান নিয়ে এসেছি। আমি খুশি মনে আজ তোমার কাছে এসে ছিলাম। আমি বুঝেছিলাম যে তোমার সব ভুল আর ভেঙ্গে গেলে আমরা আবার সেই আগের মতো হয়ে যাবো। তুমি এই বারো আমার বিশ্বাস ভেঙ্গে আমাকে একা করে চলে গেলে। একটা বার সুযোগ দিলে না আমাকে তোমার ভুল ভাঙ্গাবার। আচ্ছা তুমি যদি আমার থেকে দূরে গিয়ে ভালো থাকো তো তাই হোক। আমি আর তোমাকে খুজতে যাবো না, তোমাকে আমার কাছে আর আনবো না। তোমাকে আমার খাঁচায় আর বন্দি করবো না। আজ থেকে তুমি মুক্ত।
এসব বলছে আর কান্না করছে রিফাত।

রাহি কান্না করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গেছে। রাহির মনে হচ্ছে সে নিঃশ্বাস নিতে পারছে না। অনেক কষ্ট হচ্ছে রাহির। হাত- পায়ে বাধন থাকার কারনে নড়তে ও পারছে না।
রাহির এমন অবস্থা দেখে সিয়াম আর রিতা হাসছে।
রিতা: বেচারির অনেক কষ্ট হচ্ছে। মন বলছে এখনি মেরে ফেলি। কিন্তু তার এমন অবস্থা দেখে আমাদের খুব ভাল লাগছে।
সিয়াম: এখনকার থেকে তখন বেশি মজা লাগছে। রাহি তো এখন পাগলামি কম করছে। ওরে কে আছিস শুন তো..
একটা ছেলে আসে সিয়ামের কাছে আর বলে…
ছেলে: স্যার কিছু বলবেন?
সিয়াম : যা রাহি ভাবীকে একটু পানি খাইয়ে দিয়ে আয় যাতে আবার জোরে জোরে চিৎকার শুনতে পায়।
ছেলেটি: ওকে স্যার।
এই বলে পানি নিয়ে রাহিকে যে রুমে বেধে রাখা হইছে সেইখানে যায়।
রুমের ভিতর কারো আসার শব্দে রাহি মিটিমিটি চোখে দরজার দিকে তাকায়। রাহি হালকা আলোতে দেখে একটা ছেলে তার দিকে আসছে।
রাহি: কে?
ছেলে: আমি যে কেউ হই তা জানতে হবে না। এই পানিটুকু খেয়ে নে।
রাহি: আমি কিছুই খাবো না।
ছেলে: খেয়ে নে বলছি।
রাহি: খাবো না বললাম না।
ছেলেটি জোর করে রাহির মুখে পানি ঢেলে দেয়।
এরপর ছেলেটি রুম থেকে বের হয়ে যাবে তখনি রাহি বলে…
রাহি: তোর কন্ঠ আমার চেনাচেনা লাগছে।
ছেলেটি খাবড়ে যায়। তাই তাড়াতাড়ি বলে…
ছেলে: কোথাও শুনোস নাই।
রাহি: তুই দুপুরে আমাকে ফোন করেছিলি না।
ছেলে: আমি কেনো তোকে কল দিতে যাবো।
রাহি: তুই দিছিলি, রিফাতে এক্সিডেন্টের কথা তুই বলছিলি। তারমানে আমাকে বাসা থেকে বের করার জন্য এমন মিথ্যা বলেছিলি। আমার রিফাতের কিছু হয়নি তাহলে,আমার রিফাত ঠিক আছে।
এই বলে রাহি একটু হাসি দেয়।
তখনি সিয়াম আর রিতা রাগে ফুসতে ফুসতে সেই রুমে আসে।
দুজনকে দেখে রাহি বলে…
রাহি: তোরা আমাকে দূর্বল করার জন্য রিফাতের মরে যাওয়ার কথা বলেছিলি তাই না। তবে আমি সব বুঝেগেছি।
রিতা: বুঝেগেলে কি হবে রিফাত কখনো তোকে খুজবে না আর খুজলে ও এখানে আসতে পারবে না।
রাহি: আমার রিফাত ঠিক আসবে।
সিয়াম: তোর এতো বিশ্বাস। আচ্ছা যা তোকে কালকের দিন পর্যন্ত সময় দিলাম। এর মধ্যে রিফাত এখানে আসলে দুজনকে এক সাথে মারবো আর না আসলে তোকে একাই মারবো।
এই বলে সিয়াম আর রাহি জোরে জোরে হাসতে থাকে।
রাহি: যা হাসার হেসে নেয়। আমার রিফাত এখানে আসলে তোদের একটা ও বেচে থাকা হবে না দেখে নিস।
সিফাত: তোর মুখে অনেক কথা ফুটেছে আবার।
রাহি: তোদের ওপর দয়া লাগছে। রিফাত আসার পর তোদের অবস্থা যে কি হবে তাই ভেবে।
রিতা রাহির গালে জোরে একটা চড় মেরে বলে
রিতা: চুপ কর। তোর মরার সময় হয়ে এসেছে। কাল তোর মরন হবে তাই চুপ করে থাক।
রাহি: দেখা যাবে কার মরন হয়।

রিফাত নিজের রুমে বিছানায় হেলান দিয়ে রাহির ছবি সামনে নিয়ে আধো শুয়ে আছে।
রিফাতের দাদু: রিফাত…
রিফাত: দাদু,ভিতরে আসো।
দাদু: খাবার খেয়ে নাও দাদু।
রিফাত: খাবো না দাদু।
দাদু: রিফাত আমাদের জীবন থেকে অনেক মানুষ হারিয়ে যায় আবার অনেকে নতুন করে জীবনে আসে। দাদু যারা জীবন থেকে হারিয়ে যায় তাদের ছেরে ও জীবন চলতে হয়। হারিয়ে চাওয়া মানুষের জন্য জীবন থামিয়ে রাখা যাবে না
রিফাত: দাদু রাহিকে ছারা আমি কি বেঁচে থাকতে পারবো?
দাদু: কেউ জীবন থেকে চলে গেলে মানুষ মরে যায় না,হয়তো তার জীবনে চলতে কষ্মট হয়।
রিফাত: দাদু কাল আমি অন্য দেশে চলে যাবো। এখানে থাকলে বারবার রাহির কথা মনে পরবে। আমি ভাল থাকতে পারবো না।
দাদু: তোর জীবনটা আমি নষ্ট করে দিলাম।
রিফাত: তুমি করো নাই দাদু আমি নিজেই করেছি, রাহিকে আমার জীবনের থেকে বেশি ভালবেসে।
দাদু: আচ্ছা তোর যা ভাল লাগে তাই কর। এখন কিছু খেয়ে ঘুমিয়ে পর।
রিফাতের দাদু রিফাতকে একটু খাবার খাইয়ে দিয়ে। রিফাতকে শুয়ে দিয়ে চলে যায়।
রিফাতের ঘুম আসছে না তাই বিছানা থেকে ওঠে বেলকনিতে যায়।

রিফাত আকাশের তারার দিকে তাকিয়ে বলে….
রিফাত: জানি না রাহি তুমি কোথায় আছো। ভাল আছো হয়তো আমার থেকে দূরে গিয়ে। আমি ও কাল চলে যাবো অনেকটা দূরে একটু ভাল থাকার জন্য। হয়তো আর কখনো দেখা হবে না তোমার সাথে।
বড় একটা নিঃশ্বাস ছেরে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে রিফাত।

পরেরদিন…..
চলবে……