আমার খাঁচায় তুমি বন্দি পর্ব-২১

0
4026

#আমার_খাঁচায়_তুমি_বন্দি
#Avigya_Ayaat
#পর্ব:২১

পরের দিন….
রিফাত অন্যদেশে চলে যাবার জন্য রেড়ি হয়ে ব্যাগপত্র নিয়ে বাসা থেকে বের হয়।
রিফাত: দাদু তুমি ভাল থেকো। নিজের স্বার্থের জন্য তোমাকে ছেরে চলে যাচ্ছি। তা না হলে আমি ভাল থাকতে পারবো না।
দাদু : হুমম যা এখান থেকে দূরে চলে যা। আর তোর জীবনটা নষ্ট করার জন্য পারলে আমাকে মাফ করে দিস।
রিফাত: দাদু এসব বাদ দেও। বুলি…
বুলি: হুমম ভাই,
রিফাত: দাদুর খেয়াল রাখিস।
বুলি: আচ্ছা ভাইজান।
রিফাত: খালামুনি ভাল থেকো।
এরপর রিফাত বাসা থেকে বের হয়। গাড়িতে ওঠার আগে রিফাত আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে…
রিফাত: চলে যাচ্ছি বহুদূর তোমার থেকে যেখানে তুমি থাকবে না। তবে আমি জানি তোমার স্মৃতি সবসময় আমার সাথে থাকবে।
এরপর রিফাত বড় একটা নিঃশ্বাস ছেরে গাড়িতে ওঠে পরে আর গাড়ি এয়ারপোটের জন্য বের হয়ে যায়।

সিয়াম আর রিতা এতো সময় রাহিকে রিফাতের দেশ থেকে চলে যাওয়ার ভিডিও দেখালো ভিডিও কলে।
রাহি রিফাতের এমন ভুল বুঝে চলে যাওয়াতে অনেক কষ্ট লাগছে। রাহি পাগলের মতো কান্না করছে।
রাহি: কেউ রিফাতকে আটকাও। রিতা দয়া করে আমাকে ছেরে দেয়।
সিয়াম: আহারে…. তোকে ছেরে দেয় তারপর রিফাত আবার এই দেশেই থাকুক তা আর হবে না।
রিতা: তুই তো খুব করে বলেছিলি রিফাত তোকে নিতে আসবে। কিন্তু দেখ সে তো চলে যাচ্ছে অন্য দেশে তোর থেকে দূরে।
রাহি রিতাকে কোনো কিছু না বলে শুধু কান্না করছে।
সিয়াম: রিতা তুমি আর ভাবীকে কষ্ট দিয়ো না তো, এমনি একটু পর মারা যাবে।
এরপর দুজনে হাসতে থাকে।
রাহি কান্না করতে করতে বলে…..
রাহি: রিফাত কেনো চলে যাচ্ছো। আমি তোমার অপেক্ষা করছি। রিফাত তুমি আসো এখান থেকে আমায় নিয়ে যাও। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে তুমি বুঝতে পারছো না কেনো?
রিতা: আসবে না।
সিয়াম: রাহি তোর মৃত্য অাসতেছে একটু অপেক্ষা কর।
রাহি: তোরা এমন করছিস কেনো?
সিয়াম: সব বলবো আগে সে আসুক।

কিছু সময় পর…
রাহির রুমে রিতা আর সিয়াম আসে।
সিয়াম: রাহি ভাবী দেখো কে আসছে?
রাহি মিটমিট চোখে সামনের দিকে তাকায়।
-হ্যালো বউরানী।
রাহি: আমি আগেই জানতাম আপনিই এই সব কিছুর পিছনে। আপনি এইসব কেনো করছেন। রিফাত আপনাকে খালামুনি বলে আর আপনি। আপনি তো একটা খারাপ মহিলা। থু….। রিফাত যদি জানতো তোদের এই মুখোশ তাহলে তোদের মেরে ফেলতো।
রাহির কথায় রিফাতের খালার রাগ হয় তাই রাহির কাছে গিয়ে রাহির গালে ঠাস করে একটা চড় মারে।
রাহি জোরে আহ্ বলে।
সিয়াম: আরে মা রাগ করো না তো। বেচারি এমনি একটু পর মরে যাবে।
রিফাতের খালা: হুমম তাইতো।
তখনি পিছন থেকে রিফাত বলে…
রিফাত : রাহির কিছু করার আগে তোমাদের যে মরতে হবে।
রিফাতের কন্ঠ শুনে সবাই পিছনে তাকায়।
সিয়াম: রিফাত তুই!
রিফাত: আমার সাথে বেয়মানি করছিস আবার আমার কলিজা রাহিকে তুলে এনেছিস আর আমি আসবো না।
রাহি: দেখেছিস তোরা। আমি বলেছিলাম আমার রিফাত ঠিকি আসবে।
রিফাতের খালা: এসেছে তো ভালো হয়ছে এখন একসাথে দুজন মরবি।
রিফাত: ওরে আমার কালনাগিনী খালা। স্যরি খালা ও বলতে ইচ্ছে করছে না। আমার পিছনে একটু তাকিয়ে দেখো তো…
সবাই রিফাতের পিছনে তাকায়।
রিফাতের পিছনে অয়ন তার লোকদের নিয়ে বন্দুক হাতে দাড়িয়ে আছে।
সিয়াম,রিতা,রিফাতের খালা ভয় পেয়ে যায়।
রিফাত: চুপ করে দাড়িয়ে থাক তোরা না হলে গুলি করে দিবে।
রাহি: ফাজিল ছেলে আমার হাতের বাধন খুলে দাও।
রিফাত তাড়াতাড়ি রাহির কাছে গিয়ে তার বাধন খুলে দেয়।
রাহি: রিফাত আমাকে মাফ করে দাও। আমি ভুল বুঝে তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলছি।
রিফাত: আরে পাগলী আর কান্না করো না। দেখি তোমার হাত দেখি।
রাহির হাত গুলোই দড়ির দাগ হয়ে গেছে।
রিফাত: অনেক কষ্ট হয়ছে না তোমার।
রাহি: হুমমম।
রিফাত রেগে বলে…
রিফাত: এই তিনটাকে আমি আজ মেরে ফেলবো।
অয়ন: তুই শান্ত হ। এদের কে আমরা দেখছি।
রাহি: ভাইয়া তুমি পুলিশ মানুষ। তুমি পরে দেইখো আগে আমার হিসাবটা আমি করে নেয়।
অয়ন: আচ্ছা ভাবী।
রাহি: তিনটাকে চেয়ারে বাধো কেউ।
এরপর তিনজনকে চেয়ারের সাথে বেধে দেয়।
রিতা,সিয়াম,খালা তিনজন রাগে ফুসছে।
রাহি রিতার কাছে গিয়ে তার দুগালে ঠাস ঠাস করে কয়টা চড় মারে।
রাহি: তোকে আমার ফ্রেন্ড ভেবেছিলাম। কিন্তু তুই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় শুত্র। তুই আমাকে আর রিফাতকে আলাদা করেছিলি। তার জন্য এতো বাজে গেম খেললি। আমার মন বলতাছে তোরে খুন করে ফেলি।
তারপর রিফাতের খালার কাছে গিয়ে বলে….
রাহি: আপনাকে আর কি বলবো। রিফাতের খালা হয়ে এমন জঘন্য কাজ করছেন ছি….। আমার তো আপনাকে দেখে ঘৃনা হচ্ছে। আল্লাহ জেনো আপনাকে শাস্তি দেয়।
সিয়ামের কাছে গিয়ে তার গালে কয়টা চড় মারে
রাহি: তোর তো সেদিনের মাইর খেয়ে হয়নি অবশ্য তোর দোষ কোথায় যার মা এমন তার ছেলে আবার কি হবে?
রিফাত: এখন তোরা ১ম থেকে বল এসব কেনো করলি।
কেউ কিছু না বলে চুপ করে আছ তা দেখে রিফাত জোরে চিৎকার করে বলে
রিফাত: তাড়াতাড়ি বলবি নাকি মরবি।
রিফাতের খালা বলতে শুরু করে।
খালা: সিয়াম আর রিতা জামাই-বউ। আমার আর সিয়ামের বাবার একটা ব্যাবসা ছিলো কিন্তু তাতে লস হয় আর আমদের অবস্থা ও তেমন ভাল ছিলো না। আমাদের রিফাতদের সম্পতির ওপর নজর পরে কিন্তু কোনো বাবে কিছু করতে পারতেছিলাম না তুবু চেষ্টা করতেছিলাম এর মধ্যে সিয়ামের বাবা মারা গেলো আমাকে আর সিয়ামকে রিফাতের মা এই বাসায় নিয়ে আসে। কয়েক মাস পর রিফাতের বাবা-মা মারা যায়। রিফাত তখন প্রায়
বড়। তাই সে তার বাবার ব্যাবসা দেখতে থাকে। সিয়ামের ও রিফাতদের জায়গার দিকে নজর ছিলো তাই দুজনে মিলে রিফাতদের বাড়ি থেকে নিজেদের বাড়ি চলে আসি এর মাঝে সিয়াম রিতাকে বিয়ে করে। আমরা তিনজন মিলে সব প্ল্যান করি যে কিভাবে সব সম্পতি নিজেদের করা যায়। অনেক কষ্ট করে জানতে পারি যে রিফাতের কোনো এক্সিডেন্ট বা খুন হলে, সন্দেহজনক মৃত্যু হলে তার সব সম্পতি গরীবদের দান করে দেয়া হবে। তাই মারতে ও পারলাম না।
আমরা প্ল্যান করে রিতাকে তোর অফিসে চাকরি করতে দেয়। রিতা সেখান থেকে তোর ব্যাপারে সব জানাতো।আমরা তোকে পাগল করার প্ল্যান করি। রিতা অফিসে তোর খাবারের মধ্যে ওষধ দিতো এর মধ্যে রাহি অফিসে জয়েন করে। আমরা একদিন রাহিকে তোর দাদুর সাথে পার্কে দেখি তাই আমাদের একটু সন্দেহ হয়। এইজন্য রিতা রাহির সাথে বন্ধত্ব করে যাতে তোর থেকে রাহিকে দূরে রাখতে পারে। কিন্তু তোদের বিয়ে কোথা দিয়ে ঠিক হয় রিতা বা আমরা জানতে পারি না। তোদের বিয়ে হয়ে যাবার পর তোদের আলাদা করার জন্য সিয়াম আসে কিন্তু রাহি তাকে মেরে বাসা থেকে বের করে দেয়। পরে আমরা সবাই প্ল্যান করে তোদের আলাদা করার জন্য আর রাহি বোকা তাই বিশ্বাস করে ডির্ভোস নেয়। সব প্ল্যান মতো হয়তে ছিলো। আমি ও রাহি চলে যাবার পর তোদের বাসায় আমি। তোদের বাসায় আসার পর তোকে পাগল করার জন্য নিয়মিত ওষধ দুতে থাকি। সব কিছু ঠিকমতো চলছিলো কিন্তু কোথা থেকে আবার তুই রাহিকে বিয়ে করে নিয়ে আসলি। এরপর ও অনেক প্ল্যান করে তোদের আলাদা করবো ভাবছি তার মধ্যে রাহি তোকে সব বলে দেয় আর তোর রিতাকে সন্দেহ হয়।
তুই রিতার বিরুদ্ধে প্রমাণ খুজতে থাকিস। সেইদিন রাতেই আমি আর সিয়াম কথা বলছিলাম রাহি সব শুনে নেয় আর জেনে যায় এর আগে ও একদিন শুনেছিলো কিন্তু বুঝতে পারেনি তবে সে দিন বুঝে যায়। পরেরদিন তোকে সব বলে দিবে তাই আমরা তোর মিথ্যা এক্সিডেন্টের কথা বলে রাহিকে বাসা থেকে বের করে কিডন্যাপ করে এখানে নিয়ে আসি মেরে ফেলার জন্য।
খালার কথা শুনে রিফাত আর রাহি রাগে ফুসছে।
রিফাত: সম্পতির জন্য তোরা রাহির কাছে আমাকে খারাপ বানাছিস। রাহিকে মিথ্যে বলে হোটেলে নিয়ে ভুর জিনিস দেখাইছিস।
রাহি: এসব কেমনে করলো বুঝলাম না।
রিফাত: পরে বুঝায় বলবো।
রাহি: তুমি না দেশের বাহিরে চড়ে যাচ্ছিলে,এখানে কিভাবে আসলে আর জানরে কি করে আমি এখানে?
খালা : তাইতো তুই জানলি কি করে?
রিফাত:…..
চলবে…..