#আমার_প্রিয়দর্শিনী_তুমি(১৫)
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)
(কার্টেসি ছাড়া কপি নিষিদ্ধ)
কাকলী কে প্রথম থেকেই সন্দেহ করে ইসরাক। আর তাই কাকলীর সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে জানতে পারে কাকলী তার মেজ মায়ের খালাতো বোন!যার ডাক নাম ছিল লতিফা।এর থেকে সন্দেহ আরো জোরালো হয়। নিজের চাচাতো বোন ইসরাত হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা সামনে আসে। এবং এটাও জানতে পারে ঐ দিন ট্যুরের বাসে কাকলী এবং ইসরাত ছিলই না,মৃ’ত্যু তো অনেক দূরের কথা! আর তাই কাকলী কে সবার সামনে হাজির করার জন্য তাকে জানানো হয় যে তার মেয়েকে শ্বশুরবাড়ির লোকজন অত্যা’চার করে মাথা ফা’টিয়ে দিয়েছে!
সেই ফাঁদ মত কাকলী হাজির ব্যাপারি বাড়িতে।মূলত তিনি নিসন্তান বলে এ কাজটা করেছেন ইসরাত কে চুরি করে নিজের সন্তানের মতো বড় করে তুলেছেন।
অপরদিকে ইসরাক এর কথা মতো তাকিয়ার বান্ধবী সুমাইয়া তাকিয়া কে কল করে বলে,
-“তাকিয়া তুই স্বপ্নে যাকে দেখতে পাস,মিমা
বলে যাকে ডাকিস তিনি তোর শ্বশুরবাড়িতেই আছেন!
তাকিয়া উরুফে ইসরাত বিষ্ময়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে বললো,
-“কি বলছিস?
-“সত্যি বলছি,তুই বসার ঘরে গিয়ে মিমা বলে ডাক দে গিয়ে!
এরপর ই ইসরাত হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসে।
সবটা ইসরাক এর পরিকল্পনাতেই হয়েছে।
____
একে একে পরিবারের সবাই এসে তাদের হারিয়ে যাওয়া ধন কে জড়িয়ে ধরে কাঁদে। ইসহাক ব্যাপারি বাচ্চাদের মত করে কাঁদতে শুরু করেন, এতো বছর পর মেয়েকে কাছে পেয়ে। বাড়ির ছোট গুলো কিছুটা দূরত্বে দাঁড়িয়ে আছে এ.বি. তার পাশে আনাস,আরিসা এবং আনিসা। সবকিছু যেন মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে তাদের।
এর মধ্যে কাকলী গলা উঁচিয়ে বললেন,
-“মিথ্যে মিথ্যে সব মিথ্যে!ও আমার মেয়ে তাকিয়া রহমান। অফিসার এরা আমার মেয়েকে কেড়ে নিতে এসব নাটক করছে। আপনি প্লিজ এদের কে এ্যারেস্ট করুন। তাকিয়ার বাবা তুমি কিছু বলছো না কেন?
মুহিব রহমান থমথমে মুখে বললেন,
-“আমার কিছু বলার মত ভাষা নেই কাকলী।আর কত?এবার সবটা মেনে নাও।মেনে নাও তোমার কোন সন্তান ছিলই না!আর না আছে।
মুহিব রহমান এর কথায় ইন্সপেক্টর মাহফুজুর রহমান ব্যাপারটা বুঝতে পেরে বললেন,
-“একটা কেস সমাধান করতে এসে এখন আরো একটি কেস সামনে চলে এলো? হচ্ছে টা কি?
তখন ইসরাক এসে বললেন,
-“শুধু একটা কেস নয় অফিসার! বলেন আরো দুটি কেস!
সবার নজর ইসরাক এর উপর আবদ্ধ হয়। অফিসার বললেন,
-“কি বলতে চাইছেন?
ইসরাক তার কার্ড দেখালে পুলিসটি তাকে সেলুট করে বললেন,
-“ঘটনা ঠিক কি খুলে বলুন তো স্যার?
তারপর,
ইসরাক তার চাচাতো বোন ইসরাত বিনতে ইসহাক এর চুরির ঘটনা বলে আরো একটি মর্মান্তিক ঘটনা বললো।তা হলো,ইসরাত এর প্রিয় শিক্ষক ফখরুল আলম যিনি রাস্তায় ট্রাক চাপায় মা’রা গিয়েছিলছন।তাকে পূর্ব পরিকল্পনা করে হ’ত্যা করা হয়!আর তার হত্যাকারী আর কেউ নয় বরং কাকলী!
ইসরাত বাসা থেকে পালিয়ে যখন ইসরাক মুনতাসীর কে বিয়ে করে আলিয়ার বাড়িতে থাকে তখন ইসরাত কে খুঁজে বের করার এই নির্মম পরিকল্পনা করেছেন কাকলী।কিন্তু সফল হতে পারেনি সেদিন। ইসরাত কে সুমাইয়া কল করে আগেই সতর্ক করে দিয়েছিল।আর তাই সেদিন স্যার’কে শেষ দেখা দেখতেও যায়নি ইসরাত।
এসব কিছুর প্রমাণ ইন্সপেক্টর মাহফুজুর রহমান এর হাতে তুলে দেয় ইসরাক মুনতাসীর। অতঃপর, অফিসার কাকলী কে এ্যারেস্ট করে নিয়ে যান!
.
.
সবশেষে ইসরাক মুনতাসীর ধন্যবাদ জানায় মুহিব রহমান কে!তার কারণ মুহিব রহমান প্রথম থেকেই অনেক চেষ্টা করেও স্ত্রীকে এমন নির্মম ঘটনা ঘটাতে বাঁধা দিয়েছিলেন। তখন কাকলী ইসরাতের ক্ষ’তি করবে বলে ভ’য় দেখিয়ে চুপ করিয়ে রাখেন।আর তাই স্ত্রীর আড়ালে সুমাইয়ার সাথে পরিকল্পনা করে তিনি ইসরাত কে দু-দুবার সাহায্য করেছেন। এবং ইসরাক মুনতাসীর যে ইসরাত এর জেঠাতো ভাই তা-ও জানতেন তিনি! তিনি চেয়েছিলেন এই নতুন সম্পর্কের মধ্য দিয়ে হলেও ব্যাপারি পরিবার যেন তাদের মেয়েকে ফিরে পান।
.
মুহিব রহমান চলে যেতে নিলে ইসরাত দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে বললো,
-“বাবা তোমার মেয়েকে রেখে কোথায় যাচ্ছো তুমি?
-“আমার মরুভূমিতে পরিণত হওয়া বাসায় ফিরে যাচ্ছিরে মা। তুই পরিবার নিয়ে সুখী হ এই দো’আ রইলো।
-“না বাবা তুমি কোথাও যাবে না আমার সাথে এখানে থাকবে!
-“তা কি করে হয় মা?
ইসরাতের কথায় বড়রাও সম্মতি দিয়ে বললেন, মুহিব রহমান যেন এখানেই থেকে যায়। শেষে সবার অনুরোধে মুহিব রহমান থাকতে রাজি হন।
____
দুই দিন পর,
ইসরাত এর ক্ষ’ত স্থান ড্রেসিং করে দেয় সোহেল। আগের থেকে অনেকটা শুকিয়ে এসেছে ক্ষ’ত স্থান। এখন আর ব্যথা হয় না।
আজকে নতুন করে মসজিদের ইমাম সাহেব কে ডেকে বিয়ে পড়ানো হবে ইসরাত আর ইসরাক এর!
সময়ের পূর্বে অভিভাবকের অজান্তে
বিয়ে করা একেবারেই অনুচিত। এর কারণ হলো, পারিবারিক মূল্যবোধের জায়গা থেকে পরিবারের সদস্যদের অভিমত ও বংশীয় মর্যাদা পারিবারিক বন্ধনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। আবার অভিভাবকহীন
বিয়েতে কখনো কখনো ‘কুফু’ (সমতা) রক্ষা হয় না। সে ক্ষেত্রে বংশের অপমান হয়
মা বাবা কত মায়া মমতার সাথে সন্তানকে মানুষ করে, সেই মা বাপের মাথায় লা’থি মেরে চোরের মতো পালিয়ে গিয়ে যারা লাভ ম্যারেজ বা কোর্ট ম্যারেজ করে, তাদের দাম্পত্য জীবন হবে ব্যভিচারী জীবনের মত। তাদের অর্জিত সন্তান সন্ততি জারজ হিসেবে পরিগণিত হবে। যেহেতু মেয়ের অভিভাবক ছাড়া তাদের বিবাহ শুদ্ধ নয়।[১]
.
এ অভিশপ্ত জীবন থেকে পরিত্রাণের জন্য তাদের বৈধ অলীর মাধ্যমে পুনর্বিবাহ পড়াতে হবে। অনেক সময় দেখা যায় অলী বর্তমান থাকা সত্বেও তাকে গুরুত্ব না দিয়ে এবং তাঁর নির্দেশ ও সম্মতি ব্যতিরেকে অন্য কোন লোককে অলী হিসেবে দাঁড় করিয়ে বিবাহ কার্য সম্পন্ন করা হয়, এটা না-জায়িয। বরং মূল অলী নিজেই অথবা তার অবর্তমানে যাকে দায়িত্ব দিবে সে অলী হিসেবে বিবাহ কার্য সম্পাদন করবে।
.
মেয়ের বাপ থাকতে ভাই শরয়ী অলী বা অভিভাবক হতে পারে না। বিয়েতে বাপ রাজী না থাকলে বিয়ের পরবর্তীতে রাজী হলেও পুনরায় বিয়ে পড়াতে হবে।[২]
.
উল্লেখ্য অলী কর্তৃক মেয়ের পক্ষ থেকে পূর্ব অনুমতি বা সমর্থন নিতে হবে ঠিক আছে। কিন্তু বৈধ অলীর সমর্থন ও অনুমতি ব্যতীত কোন মেয়ের বিয়েই বৈধ হবে না। কারণ নবী (সাঃ) বলেছেন, “যে নারী তার অভিভাবকের সম্মতি ছাড়াই নিজে নিজে বিবাহ করে, তার বিবাহ বাতিল, বাতিল, বাতিল।”[৩]
______
বিয়ের পর প্রথম রাতের মতো করে বাসর ঘর সাজাতে ব্যস্ত হয় ব্যাপারি বাড়ির গেরিলা বাহিনী গুলো। তাদের সাথে আছে অর্পি আর
অনিতা!
ইসরাক আলিয়া এবং তার মেয়েদের নিয়ে এসে সারপ্রাইজ দিয়েছে ইসরাত কে।
ঘর সাজানো শেষে গেরিলা বাহিনী দরজা আটকে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের দাবি দশ হাজার টাকা নগদ দিতে হবে! না হয় আজকে ঢুকতে দেওয়া হবে না।বড়রা সবাই নিজেদের ঘরে অবস্থান করেছেন। সারাদিন অনেক ধকল কাটিয়ে একটু ঘুমের সন্ধানে আছেন তারা।আর এই পিচ্চি বাচ্চা গুলো কিছুতেই দশ হাজার এর নিচে ছাড়বে না বলে গো ধরে দাঁড়িয়ে আছে।
সেই মুহূর্তে আনাস এসে বললো,
-“ভাইয়ের হয়ে টাকাটা আমি দিচ্ছি!
পিচ্চি গুলো আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে বললো,ইয়ে কি মজা!
তাদের টাকা পেলেই হলো।কে দিয়েছে তা দেখার প্রয়োজন নেই। কিন্তু ইসরাত আর ইসরাক দু’জনেই সম পরিমাণ চমকে উঠে তাকিয়ে রইল।আক্ষি গুলো কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম যেন।
আসলে ঘটনা হয়েছি কি যবে থেকে আনাস জানতে পেরেছে ইসরাত তার চাচাতো বোন হয় তবে থেকে ইসরাত কে মনে কোণ থেকে বের করে দেওয়ার চেষ্টায় নেমেছে।আর তারই প্রমাণ এই টাকা দেওয়া। অতঃপর টাকা দিলে গেরিলা বাহিনী দৌড়ে চলে যায় দরজার সামনে থেকে। এদিকে ইসরাক আর ইসরাত হাঁ করে তাকিয়ে থাকলে আনাস কাছে এসে ইসরাক এর কাঁদে হাত রেখে বললো,
-“নতুন জীবনের জন্য শুভ কামনা রইল ভাই এবং ভাবীমণি।
এই বলে চলে গেল আনাস। ইসরাক আর ইসরাত ভিশন খুশি হলো।দো’আ করলো আনাস যেন তার জীবন সঙ্গিনীকে খুঁজে পায় খুব শীঘ্রই।
.
.
আনাস যেতেই ইসরাক তার সবুজিনী কে পাঁজা কোলে তুলে নিল। রুমে ঢুকে দু’জনেই চমকালো। এত্ত সুন্দর করে সদ্য ফোটা গাঁদা ফুল এবং গোলাম ফুল সাজানো হয়েছে সাড়া ঘর জুড়ে ফুলের ঘ্রাণে মই মই করছে।
তাকিয়া ইসরাক কে অবাক করে দিয়ে বললো,
-“উফ! আমাকে নিচে নামিয়ে দিন। একদম ভালো লাগে না আমার কোলে!
ইসরাক তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
-“মেয়েরা তাদের স্বামীর কোলে উঠতে অজ্ঞান আর তুমি এভাবে বলছো?
-“হয় আমি এমনি দুনিয়াতে এক পিস ই আছি! মিষ্টার ভ’ন্ড এবার আমাকে নামান কইতাছি? না হয় আপনার চুল একটাও মাথায় থাকবে না।
ইসরাক ও ছাড়ার পাত্র নয়,ইসরাত কে ঠা’স করে ফেলে দিল বিছানায়!ফেলে দিয়ে বললো -“বয়েই গেছে তোমার মতো ধানি লঙ্কাকে কষ্ট করে কোলে তুলে রাখার।
ব্যাস ইসরাত রে’গে গেল! রে’গে গিয়ে ইসরাক এর চুল টেনে ধরলো। অপরদিকে ইসরাক নিজেকে বাঁচাতে ইসরাত কে সুরসুরি দিতে শুরু করে।এর ফলে ইসরাত এর অবস্থা করুণ পরিণতি হয়। হাসতে হাসতে দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম। শেষে নিজেকে বাঁচাতে ইসরাক কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।যার ফলে ইসরাক শান্ত হয়ে যায়…
______
রেফারেন্স:
[১](আবু দাউদ ২০৮৩)
[২](মুহাম্মাদ বিন ইব্রাহীম)
[৩](আহমাদ ২৩৮৫১, আবূ দাঊদ ২০৮৩, তিরমিযী ১১০২, ইবনে মাজাহ ১৮৭৯, দারেমী ২১৮৪, মিশকাত ৩১৩১, হাদিসের মানঃ সহীহ হাদিস)
______
#চলবে.. ইনশা আল্লাহ।