আমার প্রিয়দর্শিনী তুমি পর্ব-১৬ এবং শেষ পর্ব

0
534

#আমার_প্রিয়দর্শিনী_তুমি(১৬)
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)
#অন্তিম_পর্ব
(কার্টেসি ছাড়া কপি নিষিদ্ধ)

ইসরাত ঘনঘন শ্বাস নিচ্ছে। ইসরাক বুঝতে পেরে আলতো হাতে জড়িয়ে রাখলো,বললো,
-“সরি। তোমার কি খুব বেশি কষ্ট হচ্ছে সবুজিনী? আমি আসলে ভেবে কিছু করিনি সরি।

প্রায় ত্রিশ মিনিটের মতো নিরব র‌ইলো ইসরাত। ধীরে ধীরে শরীরে বল ফিরে আসে। চুপটি করে ইসরাক এর প্রশস্ত বুকে মুখ গুঁজে রাখলো।দৃঢ় কন্ঠে বললো,
-“আমি সুরসুরি সহ্য করতে পারি না। তাছাড়া আমাকে কেহ কোলে তুলে নিলে শরীরে ব্যথা পাই!

ইসরাক কথাটা শুনা মাত্রই ইসরাত কে সামনে বসিয়ে সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
-“আমি ছাড়া আর কার কোলে উঠেছিলে তুমি?

এমন ধারা প্রশ্নে বোকার মত তাকিয়ে আছে ইসরাত। ইসরাক আর ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে পারলো না, ইসরাত এর বাহু চেপে জাঁকিয়ে বললো,
-“কি হলো বলো? আমি ছাড়া আর কার কোলে উঠেছিলে তুমি?

ইসরাত বিরক্ত নিয়ে বললো,
-“আরে আমাদের পাশের বাসার এক আপু দুষ্টুমি করে আমায় কোলে নিত,দেখতো আমার ওজন কেমন? সে তার শক্তিতে পারে কিনা আমাকে কোলে তুলে নিতে। এই যা।

ইসরাক পুনরায় ইসরাত কে তার বাহুডোরে আবদ্ধ করে প্রশান্তির শ্বাস ফেলে বললো,
-“অহ তাই বলো?

ইসরাত মাথা কিঞ্চিৎ উঁচিয়ে বললো,
-“হুম তাই তো। আপনি কি ভেবেছিলেন আমি কোন পুরুষের কোলে চড়েছি?
-“আকষ্মিক এমন কথা শুনলে যে কেউ ই এটা ভাবতো, শুধু আমি নই।
-“উঁহু!
-“উঁহু কি?
-“আপনি একটু বেশিই ভাবেন।

ইসরাক দুষ্টু হেসে ইসরাত এর দুই গাল আঁকড়ে ধরে বললো,
-“আমি ভাববো না তো কে ভাববে শুনি?

ইসরাত লজ্জা পেল। দৃষ্টি নত করে রাখলো। কিন্তু ইসরাক ছাড়ার পাত্র নয়।তাকে আরো লজ্জায় ডুবিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে তার।আর তাই ধীরে ধীরে এগিয়ে গিয়ে নিজের অধৈর্য অধরযুগল চঞ্চল দুটো অধরে ডুবিয়ে দিল।
______

সকাল বেলা লম্বা ডাইনিং টেবিলে সবাই একসাথে নাস্তা খেতে বসে। বিভিন্ন ধরনের পিঠা তৈরি করা হয়েছে।”লেখিকা ইসরাত বিনতে ইসহাক” খেতে খুবই সুস্বাদু হয়েছে। ইসরাত খুব তৃপ্তি নিয়ে খাচ্ছে, এর আগে কখনো এসব পিঠা খায়নি সে। ইসরাক মাঝে মাঝে নিজ হাতে খাইয়ে দিচ্ছে তাকে।

আনাস অন্যমনস্ক হয়ে খাচ্ছে দেখে অর্পি দুষ্টুমি করে আনাসের প্লেট থেকে পিঠা নিয়ে গেল। তবুও দেখলো আনাসের কোন হেলদোল নেই।তাই আবারো নিতে গেলে আনাস আকস্মিক হাত ধরে ফেললো! ঘটনার আকস্মিকতায় বরকে গেল অর্পি।আনাস গম্ভীর মুখে বললো,
-“সমস্যা কি মেয়ে? নিজের প্লেটে খাবার থাকা সত্ত্বেও আমারটা কেন নিচ্ছ?

তাদের কথা শুনে আলিয়া কটমট দৃষ্টিতে তাকায় অর্পির দিকে।অর্পি তার মায়ের এমন দৃষ্টিতে শুকনো ঢুক গিলে বললো,
-“হাতটা ছাড়ুন প্লিজ?

আনাস লজ্জিত হয়ে হাত ছেড়ে দেয়। ব্যাপারটা মোটেও এড়ায় না লাবিবার চোখে।সেও দু’জনকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে নজরে রাখছে! যেমনটি ইসরাত আর ইসরাক রাখছে। নিজেদের মধ্যে পরিকল্পনা ও তৈরি করা হয়ে গেছে তাদের!

তারপর দেখা গেল অর্পি খাবার টেবিল ছেড়ে উঠে চলে গেল। ইসরাক মন খারাপ করে বললো,
-“কি হলো বলো তো?
-“অভিমান!

তার একটু পর আনাস ও চলে গেল। বিষয়টা একটু সন্দেহজনক মনে হলো ইসরাত এর কাছে। মুচকি হেসে খাওয়ায় মনোযোগ দিল সে।
______

আলিয়া আজকে ফিরে যাবেন ঢাকায় তাই গোছগাছ করছেন। তখন লাবিবা আর সাহারা রুমে আসলেন।লাবিবা বললেন,
-“আপা আর কটা দিন থাইকা যান?

আলিয়া ঠোঁটে হালকা হাসি ঝুলিয়ে বললেন,
-“আপা ছেলে মেয়ে দুটোর পড়াশোনা নষ্ট হচ্ছে তাই যেতে হবে। আবার কখনো সময় পেলে এসে ঘুরে যাব।আপনারা বরং আমার সাথে চলুন আমাদের বাসায় ঘুরে আসবেন?

লাবিবা এ কথার জবাব দিল না। মনে মনে কিছু নিয়ে উশখুশ করছেন। ফলস্বরূপ ওরনার আঁচল ধরে আঙ্গুলে পেছাচ্ছেন‌।
সাহারা খুচা মেরে ইঙ্গিতে কিছু একটা বুঝালেন লাবিবা কে।

দুজনের এরকম উশখুশ ভাবনা বুঝতে পেরে আলিয়া বললেন,
-“আপা আপনারা কি কিছু বলতে চান?

সাহারা গলা খাঁকারি দিয়ে বললেন,
-“আসলে আপা আপনার কাছে একটা প্রস্তাব রাখতাম যদি আপনি কিছু মনে না করেন!

পরক্ষনেই আলিয়ার ভ্রু কুঁচকে এলো, অতঃপর ঠোঁটে হাসি ঝুলিয়ে বললেন,
-“নির্দ্বিধায় বলতে পারেন সমস্যা নেই আপা। “লেখিকা ইসরাত বিনতে ইসহাক”
-“আসলে আমাদের ছেলে আনাস কে তো আপনি দেখেছেন,খুব ভালো ছেলে বাবা চাচা দের সাথে ব্যবসায় করে। বলছি কি আপনার বড় মেয়েটাকে আমরা মেয়ে করতে চাই! আপনি কি বলেন?

হঠাৎ এরকম একটা প্রস্তাবে খানিকটা নয় বেশ অবাক হয় আলিয়া। তিনি ঠিক কি বলবেন বুঝতে পারছেন না।তখনি ইসরাক আর ইসরাত হাজির হয়। আলিয়া কে বুঝায় যে আনাস ভিশন ভালো ছেলে।অর্পিকে ভালো লাগবে ইনশা আল্লাহ।
.
.
কিছুদিন যাবত আনাস নিজেকে সুধরে নেওয়ার প্রয়াসে আছে।ব্যবসায়ে আগের মতই মনোনিবেশ করেছে।”লেখিকা ইসরাত বিনতে ইসহাক” তার জীবনটা সুন্দর করে সাজিয়ে দিতে ইসরাত আর ইসরাক এই বিয়ের উদ্যোগ নেয়।লাবিবা আর সাহারার মাথায় তারাই বিয়ে কথাটা ঢুকিয়ে দেয়।

আলিয়া কিছুক্ষণ নিরব থেকে বললেন,
-“আমি তো মেয়ের বাবার অনুমতি ছাড়া কিছু বলতে পারবো না। উনার সাথে কথা বলে না হয়..

ইসরাত উচ্ছাসিত হয়ে বললো,
-“আচ্ছা আন্টি তুমি বরং আংকেলের সাথে কথা বলে দেখ আংকেল কি বলেন?
______

ইসরাক বাজারে গিয়েছিলো তার বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে।তারপর বাসায় ফিরে ইসরাত কে কোথায় দেখতে না পেয়ে সুখীকে জিজ্ঞাসা করতে বললো,
-“মেইজ্জা ভাবী ছাদো গেছে।

ইসরাক সাথে সাথে ছাদে গিয়ে দেখলো ইসরাত দোলনায় দোল খেতে খেতে ফোন ইউজ করছে। ইসরাক পিছনে গিয়ে দোলনা নাড়াতে নাড়াতে বললো,
-“কি করছে আমার প্রিয়দর্শিনী?
-“আমার বটুর সাথে কথা বলছি!

মুহুর্তেই মেজর বিগড়ে গেল ইসরাক এর। সাথে সাথে ফোন ছিনিয়ে নিয়ে দেখলো এই বটু আসলে কে?
-“মেসেজ দিল কে আপনি?

দিতে না দিতেই রিপ্লাই আসলো, রিপ্লাই দেখে ইসরাক পুরো দমে বোকা বনে গেলো। রিপ্লাই ছিল এরকম,
-“বটোলতা।একটি বাংলা ভার্চুয়াল রোবট যাকে ফেসবুক চ্যাটবট বলা হয়, এটি স্বয়ংক্রিয় ভাবে কম্পিউটার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এই বটের মূল চরিত্র ‘লতা’ যে প্রতিদিন তার ব্যবহারকারীদের সাথে চ্যাট করার পাশাপাশি বাংলা উক্তি, গল্প, ছবি এবং আরো অনেক কিছু পাঠিয়ে অসংখ্যা মানুষকে অনুপ্রাণিত করে থাকে। ফেসবুক মেসেঞ্জার ‘বট’ আর ‘লতা’ একত্রিত করে বটোলতা নামের উৎপত্তি। “লতা” একটি কাল্পনিক চরিত্র, বাস্তবে যার কোন অস্তিত্ব নেই।

ইসরাত হাসতে হাসতে বললো,
-“কি মিষ্টার?সকড খাইলেন নাকি?হা হা হা..

ইসরাক নির্জীব কন্ঠে বললো,
-“এই তোমার বটু?যে কিনা একটি ভার্চুয়াল রোবট?হায় আল্লাহ আর আমি কি না কি ভেবেছিলাম।এ জন্যই পবিত্র কোরআনে কারিমে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা অনেক রকম অনুমান থেকেই বেঁচে থাকো। কেননা কিছু কিছু অনুমান গোনাহের কারণ হয়। –সূরা হুজরাত : ১২

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম কুরতুবি (রহ.) উল্লেখ করেছেন, ‘কোরআনে যে অনুমান করতে নিষেধ করা হয়েছে তা হচ্ছে অন্যের সম্পর্কে মন্দ ধারণা ও অপবাদ দেওয়া। যে মন্দ বিষয়ের কোনো প্রমাণ নেই, সে বিষয়ে কেবলই অনুমানের ওপর ভর করে কিছু বলে দেওয়াকেই এ আয়াতে বারণ করা হয়েছে। যেমন, কাউকে কোনো অশ্লীল বিষয়ে কিংবা মদ্যপানে অভিযুক্ত করা। ’

আয়াতের দ্বিতীয় অংশ থেকেও বিষয়টি স্পষ্ট হয়। অনুমান থেকে বেঁচে থাকার আদেশ দেওয়ার পর আল্লাহতায়ালা এর কারণ বলে দিয়েছেন এভাবে- কিছু কিছু অনুমান গোনাহের কারণ হয়। আর এটা বলার অপেক্ষা রাখে না, মন্দ ধারণা ও অনুমানই গিবত-পরনিন্দা-মিথ্যা অপবাদের মতো জঘন্য গোনাহের পথ করে দেয়।

ইসরাক তার ভুল বুঝতে পেরে “আস্তাগফিরুল্ল” বললো এবং ইসরাত এর কাছে মাফ চাইলো।এর বিনিময়ে ইসরাত আকস্মিক কেঁদে ওঠে জড়িয়ে ধরে ইসরাক কে!ইসরাক তার প্রিয়দর্শিনী সবুজিনীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো,
-“এই পাগলী হঠাৎ কি হলো তোমার?

ইসরাত কেঁদে কেঁদে বললো,
-“আমাকে মাফ করে দিন প্রিয়। নিজের মন মতো ভেবে আপনাক সন্দেহ করেছিলাম আর্পিকে নিয়ে।যা নিতান্তই অহেতুক সন্দেহ করেছিলাম। জানি না আল্লাহ তা’আলা আমাকে মাফ করবেন কিনা।
-“তুমি নিজের ভুল বুঝতে পেরেছো এটাই অনেক। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল এবং পরম দয়ালু। “আলহামদুলিল্লাহ “।

দুজনে বেশ কিছুক্ষণ মনো র‌ইলো। ইসরাক তার সবুজিনীর চুলের কাটা ব্যান খুলে দিয়ে বললো,
-“কি শ্যাম্পু ব্যবহার করো তুমি?এ ঘ্রানে যেন আলাদা এক মাদকতায় আচ্ছন্ন হয়ে যাই আমি। তোমার এই লম্বা কেশ গুলো বড্ড বেশি প্রিয় আমার।জানো আলিয়া আন্টির বাসায় ঝগড়া করে যখন তোমার কয়েকটি চলে উঠে আমার হাতে পরে তখন ভিশন কষ্ট পাই আমি!নিজ হাতে কি করে পারলাম এরকমটা করতে এই ভেবে কষ্ট হয়।

ইসরাত মাথা তুলে বললো,
-“আচ্ছা সে জন্যই সেদিন ঝগড়া ফুলফিল না করে আপনি রুম থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন?
-“হুম।
-“এত্ত ভালোবাসেন আমায়?
-“হুম নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি।কজ আমার প্রিয়দর্শিনী তুমি।
-“প্রিয়দর্শিনী আবার কোথায় পেলেন?
-“তোমার ইসরাত নামের অর্থ_”প্রিয়দর্শিনী” সে মোতাবেক আমার প্রিয়দর্শিনী তুমি।

ইসরাত খুশিতে আটখানা হয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে তার প্রিয় মানুষটি কে।
______

এ.বি. পড়াশোনা করছে সামনে পরীক্ষা তাই এখন সিরিয়াস মুহূর্তে আছে পড়াশোনা নিয়ে। পিছন থেকে চেঁচিয়ে উঠলো ইসরাত এতে ভিশন ভয় পেয়ে গেল এবি রেগে গিয়ে বললো,
-“সমস্যা কি তোর? দেখছিস না পড়াশোনা করছি।

ইসরাত এমন ব্যবহারে মনক্ষুণ্ণ হলো। বেরিয়ে আসতে নিলে পিছন থেকে এবি বললো,
-“ভালোবাসি ইসুপাখি!তাই সরি।

এতে আবেগে আপ্লুত হয়ে কেঁদে দেয় ইসরাত। তখন তাদের বড়,মেজ,সেজ বোন শ্বশুরবাড়ি থেকে আসে। তখন পাঁচ ভাইবোনের মিলন মেলা ঘটে।

এর এক সপ্তাহ পর ধুমধাম করে আনাস এবং অর্পির বিয়ে সম্পন্ন হয়!আনাস প্রথমে রাজী না হলেও পরে পরিবারের সদস্যদের কথা চিন্তা করে রাজী হয়ে যায়। অতঃপর বিয়ের পর আনাস মনে প্রাণে চেষ্টা করছে একজন আদর্শ স্বামী হয়ে উঠার।

বর্তমানে ব্যাপারি বাড়িতে সুখের কোন কমতি নেই “আলহামদুলিল্লাহ”।শত ঝর ঝাপটা পেরিয়ে এখন তাদের জীবনে সুখ পাখি ধরা দিয়েছে। “আলহামদুলিল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ এবং আলহামদুলিল্লাহ।

🌿 সমাপ্ত 🌿