আমার শুধু তোমাকেই চাই পর্ব-১৮

0
3329

#আমার_শুধু_তোমাকেই_চাই🍁🍁
#লেখিকা;সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#পর্ব;১৮

৫৫,,,,
হসপিটালের করিডর ধরে টেনসনে পাইচারি করছে মহসীন,,, আর মেহরাবের মা তো সেই কখন অঙ্গান হয়ে গেছে তাকে পাশের কেবিনে রাখা৷ হয়েছে যতই হোক একটা মাএ ছেলে কোনো মা ই এই অবস্থায় দেখতে পারবেনা। সবাই OT বাইরে বসে আছে শিমুল,, জয়,,শান্ত,,মুনিরা সহ আরো অনেকেই,,, মাহি তো সেই একি সাজে দরজার এক কোনায় চুপ করে বসে আছে,,, কিছু বলছেই না, যেনো নির্জীব একটা প্রাণী,,,, আর মেঘ এক সাইড এ পাথর এর মতো দাড়িয়ে আছে। তার মাথায় একটা কথা ঢুকছে না যে মেহরাব এমনটা কেনো করলো।

হয়েছে?? এবার আপনার শান্তি হয়েছে??(মেঘলা মেঘের সামনে গিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল)

মানে?? এসব তুমি কি বলছো মেঘলা??(মেঘ না বুঝে বলল)

কেনো আপনি তো এটাই চেয়েছিলেন যাতে ভাইয়া মাহির জীবন থেকে চলে যাক এখন তো সেটাই হচ্ছে আপনারা দু ভাইবোন খুশি তো?? (মেঘলা)

ভাইয়া?? মেহরাব তোমার(মেঘ)

হ্যাঁ মেহরাব আমার ভাই হোক না সে খালাত ভাই তবুও আপন ভাইয়ের থেকেও বেশি। আরে কখনো কখনো নিজের চোখের দেখাও ভুল হয়ে থাকে। আমি খুব ভালোভাবেই আমার ভাইকে চিনি ও কখনো কোনো খারাপ কাজ করবেনা (মেঘলা)

হ্যাঁ স্যার মেহরাব খারাপ ছেলে নয় (শিমুল এগিয়ে এসে বলল)

কিন্তু আমি যে ওইদিন ওকে দেখলাম (মেঘ)

মেঘলা তো বললো স্যার কখনো কখনো চোখের দেখাও ভুল হয়।সেদিন আমার বোন হসপিটালের বেডে মৃত্যুর সাথে লড়ছিলো,, রক্তের খুব প্রয়োজন ছিল আমি কোথাও একটুও রক্ত পাইনি তারপর মনে পড়ল মেহরাব এর কথা কেননা ওর রক্তের সাথে আমার বোনের রক্ত মিল ছিল। সময় খুব কম ছিলো তাই ওকে ফোন দিয়ে যলদি আসতে বলি আর ও যলদি আসার জন্যই ট্রাফিক সিগনাল মেনে ছিলো না। (তারপর সে দিনকার যটনাও সব খুলে বলল শিমুল মেঘকে)

এবার বুঝেছেন আমার ভাই খারাপ না।। ও শুধু নিজের সব টুকু দিয়ে আপনার বোনকে ভালোবাসে,,, আর আপনার বোনও,, দেখতে পাচ্ছেন ওকে(মাহিকে উদ্দশ্য করে)
নিজের সব থেকে প্রিয় জিনিস নিজের ভালোবাসা কে দূরে ঠেলে দিয়েছে শুধু আপনার জন্য।। কারন ও তার ভাইকে ভীষণ ভালোবাসে তার ভাইয়ের মুখে হাসি ফুটাতে সব কিছু করতে পারবে (মেঘলা)

সব কিছু শুনে মেঘ ওখানে বসে পড়ল,, তারপর মেঘলাকে বলল।

তুমি এসব আমাকে আগে বলোনি কেনো??(মেঘ)

আমি তো সবকিছু বলতেই চেয়েছিলাম কিন্তু মাহি আমাকে বলতে দেয়নি,,, যদি সব কিছু শুনে আপনি কষ্ট পান তাই (মঘলা)

৫৬,,,,,
মেঘ মেঘলার কাছ থেকে সরে গিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে আস্তে আস্তে মাহির কাছে গেলো তারপর আস্তে করে মাহির সামনে হাটু গেরে বসে বলল।

হ্যাঁরে আমি কি ভাই হিসেবে খুব খারাপ?? সেই ছোট বেলা থেকে তোর সাথে বন্ধুর মতো থেকেছি নিজের সব কিছু তোর সাথে শেয়ার করেছি,,, আর তুই আমাকে এতোটাই পর ভাবিস যে নিজের ভালোবাসার কথা,, আমায় বলতে পারিসনি?? নিজের বুকের মধ্যো এতো কষ্ট চেপে রেখে শুধু আমার খুশির জন্য এভাবে সব কিছু শেষ করে দিচ্ছিলি?? বিশ্বাস কর বোন আমি এতোটাও সার্থপর নয়,, হ্যাঁ মানছি আমি মেহরাব কে ভুল ভেবেছিলাম আমার চোখের উপর একটা কালো পর্দা পড়া ছিলো তাই সত্যটা দেখতে পাইনি তাই বলে কি তুই আমার ভুলটা ভাঙ্গাবি না???(মেঘ)

মেঘের এসব কথা শুনে মাহি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না মেঘকে জরিয়ে ধরে হাওমাও করে কেঁদে উঠলো তারপর কাঁদতে কাঁদতে বলল।

ভাইয়া আমি মেহরাব কে ছাড়া বাঁচতে পারবো না,, বিশ্বাস করো ভাইয়া আমি বুঝতে পারছিলাম আমি কি করবো একদিকে তুমি একদিকে মেহরাব আমি কাকে বেঁচে নিবো,,,আর আমি তোমাকেও সব কিছু বলতে পারছিলাম না খুব ভয় পেয়ে গিছিলাম,, বুঝতে পারছিলাম না কি করবো,,, কিন্তু বিশ্বাস করো আমার বিয়ে অন্য কারো সাথে হলে আমি ওই দিনই কিছু একটা করে ফেলতাম নিজের ক্ষতি করে ফেলতাম কারন আমি তোমাদের দুজনকেই চাই,,, দুজনকেই আমি ভীষন ভালোবাসি (কাঁদতে কাঁদতে বলল মাহি)

এখন কাঁদছিস কেনো,, এখন কাঁদলে কি আর সব কিছু ঠিক হবে এখন যদি ভাইয়ার কিছু হয়ে যায় তো পারবিতো নিজেকে ক্ষমা করতে বল,?? (মেঘলা)

মেঘলার কথা শুনে মাহি আরো জোরে জোরে পাগলের মতো কাদতে লাগলো।

আহ মেঘলা এসব কি বলছিস তুই দেখছিস না মেয়েটা কেমন কাঁদছে (মহসীন)

মেঘ মাহিকে ছেড়ে মহসীন এর কাছে গেলো৷ আর মেঘলা মাহির কাছে বসে মাহিকে ধরে বলল।

দেখলি তো কি হলো আমার কথা যদি শুনতি সব যদি মেঘ কে বলতি তাহলে সব ঠিক থাকতো কারোর এতো কষ্ট পেতে হতো না।। আর মেঘ ও নিজেকে দোষী মনে করত না (মেঘলা)

আমার ভুল হয়ে গেছে,,, বিশ্বাস কর আমি মেহরাবকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না,,, (কেঁদে বলল মাহি)

আচ্চা হয়েছে আর কাদতে হবে না,,, শুধু আল্লাহকে ডাক আল্লাহ যেনো ভাইয়াকে ঠিক করে দেয় (মেঘলা)

হুম।

৫৭,,,,
আংকেল আমায় ক্ষমা করে দেন না জেনে আপনাকে অনেক খারাপ কথা বলে ফেলেছি কষ্ট দিয়েছি প্লিজ আমায় মাফ করে দেন (বলে মেঘ মহসীন এর পা ধরতে গেলো তখনি মহসীন বলল)

আরে একি করছো তুমি মেঘ,,, আসোলে কি বলোতো এখানে তোমার কোনো দোষ নেই, তুমিও তো কিছু জানতে না না জেনেই এসব করে ফেলেছো আর কোনো ভাই তার বোনকে কোনো খরাপ ছেলের হাতে তুলে দেবে না,,, সে বরাবরই ভাববে যাতে তার বোন সুখে থাকে তেমন একটা ছেলের হাতে তুলে দিতে তুমিও সেটাই করতে চেয়েছো এখানে তোমার কোনো দোষ নেই সবি বোঝার ভুল (মহসীন)

ওরা যখন কথা বলছিলো তখনি ভিতর থেকে ডাক্তার বেরিয়ে আসলো।

ডাক্তার আমার ছেলে কেমন আছে (মহসীন)

ডাক্তার মেহরাব ঠিক আছে তো?? ওর কিছু হয়নি তো???(মেঘ)

ডাক্তার আসা দেখে মাহি আর মপঘলাও ওকান থেকে উঠে মেঘদের কাছে আসলো তারপর বলল।

ডাক্তার আমার মেহরাব কেমন আছে বলুন ওর কিছু হয়নি তো?? ওর কিছু হলে কিন্তু আমি নিজেকে শেষ করে দেবো?? বলুন না ডাক্তার(কাঁদতে কাঁদতে বলল মাহি)

আরে আপনারা শান্ত হোন সবাই আমাকে বলতে দেন আগে,, আপনারা যদি না চুপ থাকেন তো আমি বলবো কীভাবে??(ডাক্তার)

আচ্ছা আপনি বলুন আমরা আর কেউ কোনো কথা বলবো না আপনি বলুন(মেঘ).

আচ্চা রোগী এখন সম্পূর্ণ বিপদ মুক্ত টেনসন করার কোনো কারন নেই,,, ওনাকে কেবিনে দেয়া হচ্ছে আপনারা চাইলে দেখা করতে পারেন। (এই বলে ডাক্তার চলে গেলো)

কিছুক্ষণ পর,,,,,

চোখ বন্ধ করে বেডে শুয়ে আছে মেহরাব আস্তে আস্তে সবাই কেবিনে ঢুকল তারপর মেঘ গিয়ে মেহরাব এর পাশে বসে মেহরাব এর হাত ধরে বলল।

আমি জানি মেহরাব আমি অনেক বড় ভুল করে ফেলেছে না জেনে অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছি তোমাকে,,, আমি হাজার বার তোমার কাছে ক্ষমা চাইলোও কম হবে,, তাও আমি তোমার কাছে হাত জোর করে বলছি প্লিজ এই শেষ বারের মতো আমায় ক্ষমা করে দাও,, দাখো(মাহি কে উদ্দেশ্য করে) আমার বোনটা তোমার জন্য কেঁদে কেঁদে নিজের কি অবস্থা করছে আমি জানি ও অনেক বড় ভুল করেছে তুমি প্লিজ আমাদের ক্ষমা করে আমার বোনকে আপন করে নাও(মেহরাব এর হাত ধরে বলল(মেঘ)

আম সরি আমি আপনার বোন কে আর মেনে নিতে পারবো না ক্ষমা করবেন আমায় (মেহরাব)

চলবে,,,,